অন্য চোখে বাদশাহ আব্দুল্লাহ
লিখেছেন লিখেছেন সালাম আজাদী ২৩ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৬:৩৯:৩২ সকাল
সৌদির বাদশাহ আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল আযীয (১৯২৪-২০১৫) আজ ইন্তেকাল করেছেন। তার ভাই সালমান বিন আব্দুল আযীয কিং হিসাবে নিযুক্ত হয়েছেন।
ছোট বেলা থেকে বাবার কোলে পিঠে মানুষ হয়েছেন এবং তার রাজনৈতিক ও শাসন কাজে সাহায্য করেছেন। স্কুলে পড়া লেখার পাশাপাশি সে সময়ের ভালো ভালো আলিম উলামাদের কাছে তিনি পড়া লেখা করেছেন।
১৯৬৩ সালে তাকে রয়্যাল গার্ড এর দ্বায়িত্ব দেয়া হয়। এর সাথে মন্ত্রী পরিষদের ও দ্বিতীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন ১৯৭৫ সালে। ১৯৮২ সালে বাদশাহ ফাহাদ ক্ষমতায় এলে তাকে সৌদির যুবরাজ তথা দ্বিতীয় শক্তিধর ব্যক্তি হিসাবে অধিষ্ঠিত করা হয়। বাদশাহ ফাহাদের ইন্তেকালের পর তিনি ২০০৫ সালে ক্ষমতায় আসেন।
১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধে তিনি আমেরিকার অংশ গ্রহন মেনে নিতে পারেন নি, এবং সেখানে তার মতানৈক্য ছিলো। উপসাগরের দ্বিতীয় যুদ্ধে সাদ্দামকে শেষ করে মালিকির ক্ষমতা দখল কে তিনি মোটেই মেনে নেন নি। ফলে আন্তর্জাতিক ভাবে তাকে অনেক হেয় হতে হয়েছে। ইরানের পরমানু কর্মসূচি নিয়ে তিনি উদবিগ্ন ছিলেন খুব বেশি। ইরাকে যুক্তরাস্ট্রের এম্বেসেডর কে তিনি সাপের (ইরান) মাথা কাটতে বলেছিলেন। আরব বসন্ত শুরু হলে তিনি সমস্ত আরব লীডার দের পক্ষ নেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় শেলটার দেন। বিপ্লবীদের শেষ করার জন্য সব ধরণের সাহায্য করেছেন। মুরসী ক্ষমতায় এলে তিনি তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার এমন কোন ফন্দি নেই যার ব্যবহার করতে বাদ রেখেছিলেন। তার দেশে ইখওয়ান নিষিদ্ধ হয়েছে, ইখওয়ানিদের বের করে দেয়া হয়েছে, এবং তাদের কে সন্ত্রাসী তালিকায় আনতে সাহায্য করেছেন। এজন্য মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হন তিনি। এমনেস্টি ইন্টারন্যাশলের মতে তার দেশে ইসলামি আন্দোলন কে বাধাঁ দেয়ার জন্য সন্ত্রাসী উৎখাত করতে যেয়ে তিনি মারাত্মক ভাবে মানবাধিকার লংঘন করেছেন।
তিনি সৌদিদের জীবন যাপনের মান উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন। তার সময়ে কাবা ঘরের সম্প্রসারণের কাজ ব্যাপক হয়।মাসজিদে নবওয়ীতে ১৬ লক্ষ লোক নামাজ আদায় করতে পারে এমন ধারণক্ষম করে তোলেন। অনেক গুলো নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তিনি তৈরি করেছেন। মিনা ও মুযদালিফার উন্নয়ন কাজ চোখে দেখার মত। মক্কার রেইল সার্ভিস তার অবদান। ৬০০ বিলিয়ন রিয়াল ব্যয়ে জেদ্দা ও মক্কার উন্নয়ন কাজ তার শ্রেষ্ঠ কীর্তির মধ্যে গন্য। তিনিই সর্ব প্রথম সৌদিদের জন্য ওয়েল ফেয়ার ফান্ড তৈরি করে তাদের বিভিন্ন ধরণের সুযোগ সুবিধা দেয়া শুরু করেন। তার আমলেই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আইন তৈরি হয়, এবং বেশ কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে।
ইস্রাঈলের সাথে ভেতরে ভেতরে সম্পর্ক থাকলেও তিনি প্রকাশ্যে ফিলাস্তিনের সাহায্য করেছেন। যুদ্ধোত্তর শহর নির্মাণের জন্য গাযা ও অন্যান্য শহরে তার অবদান ভোলা যাবেনা।
২০১০ সাল থেকেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। ২০১২ সালে তাকে কয়েক টি অস্ত্রপোচার করা হয় আমেরিকাতে।
তিনি জীবনে ২১ বিয়ে করেছেন বলে জানা যাচ্ছে।১৩ জন কে বিভিন্ন কারণে তালাক দেন। ৪ জন ইন্তেকাল করেছেন। প্রথম স্ত্রী ছিলেন হিসসা বিনতে আব্দুল্লাহ। সর্বশেষ স্ত্রী ছিলেন আমশা বিনত খালিল। স্ত্রীরা সবাই ছিলেন বিভিন্ন রাজ পরিবার বা খুব ই উঁচু পরিবারের। লিবাননের রাজ পরিবারের ও একজন কে তিনি বিয়ে করেন, নাম আইদাহ ফুসতাক্ব। তাকে অবশ্য শেষ পর্যন্ত তালাক দেন তিনি। তার স্ত্রীদের মধ্যে ডঃ মালিকাহ বিন্ত সাঊদ খুব ই নামকরা। সন্তানের সংখ্যা সঠিক জানা যায়নি, তবে ৩৬ জনের একটা চার্ট দেখা যাচ্ছে, যেখানে ১৬ জন ছেলে, বাকি সবাই মেয়ে।
মদীনায় ছাত্র থাকা কালীন সময়ে রাজপরিবারে খিদমাত করেন এমন একজনের সাথে আমার পরিচয় ঘটে। তখন আব্দুল্লাহ যুবরাজ ছিলেন। এই খাদিমের ভাষায়, তিনি ছিলেন খুব কম কথা বলা মানুষ, এবং তিনি নাকি কখনও মদ স্পর্শ করেন নি। আব্দুল আযীযের সন্তানদের মধ্যে বাদশাহ ফয়সালের পরে তিনিই ছিলেন নামাজ কালামে খুব পাবন্দ।
আল্লাহ তার ভালো কাজ গুলো কবুল করুন, আর ভুল গুলো ক্ষমা করে দিন।
বিষয়: বিবিধ
১৬৭৪ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 10348
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
তিনি এতক্ষনে জান্নতের ৭২ বেশ্যার কোলে ঢো'লে পরেছেন।
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 10348
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> মুক্তিযুদ্ধের কন্যা লিখেছেন : না ভাই, আমি ওসবে নেই। মুমিনা নারীর কি আকাল পড়েছে?তাছাড়া ইহুদী'দের ভয়ে আপনার আল্যা এমনিতেই আমাদের দিকে চাপে না।
মাইনাস || অনেক ধন্যবাদ
রাজিউন।
অনেকেই তার সম্পর্কে অশালিন মন্তব্য করছেন। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে যেখানে ইসলাম থেকে জাতিয়তাবাদ বেশি প্রচলিত সেখানে তার অনেক পদক্ষেপ কে ইসলামের দৃষ্টিতে যাই হোক জাতিয়াতাবাদ এর দৃষ্টিতে ভুল বলা যায়না।
কিন্তু ইসলামের রাজনৈতিক উত্থান দমিয়ে রাখার ক্ষেত্রে এই রাজ বংশের বর্তমান বিলাশী কর্ণধাররা সীমাহীন নির্লজ্জতা এবং নাফরমানীর পরিচয় দিয়ে আসছে। অথচ বিগত শতাব্দীর আশির দশকের আগেও তাদের চিন্তা চেতনাতে এতো উগ্র সেকিউলার চিন্তার অনুপ্রবেশ ছিল না। সর্বশেষ এই রাজ পরিবার সরাসরি হস্তক্ষেপ করে মুসলিম উম্মার খনিজ সম্পদ বিক্রি করে আহরিত অর্থ অবৈধভাবে অভিসপ্ত ইয়াহুদীদের ষড়যন্ত্রে পরিচালিত পূর্ণাঙ্গ ইসলামের রাজনৈতিক উত্থানকে ধ্বংশ করতে হাজারে হাজার মিশরীয় বিপ্লবী জনতার খুন ঝড়িয়েছে। দুনিয়ার যেখানেই ইসলামের রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্থানের মেরুদন্ড সোজা করে দাড়াতে চেষ্টা করেছে সেখানই তারা ইউরোপ আমেরিকা তথা ইয়াহুদী নাসারাদের সহযোগি হিসেবে নিজেদের নাম লিখিয়েছে।
মৃত্যুর পরেই আসল হিসেব নিকেশ শুরু হবে। দুনিয়ায় যে যত বড় দায়িত্বের অধিকারী ছিল মৃত্যুর পরও তার জবাবদিহিতার ফিরিস্তি তত দীর্ঘ হবে। এই ভদ্রলোকটি মসনদে থাকাবস্থায় ইসলাম ও মুসলমানদের কি পরিমান লাভ করেছে তা অনুমান করতে পারছি না। কিন্তু এই লোকটির বিতর্কিত ভূমিকার কারনে মুসলিম বিশ্বের সীমাহীন ক্ষতি হয়েছে। তার পরেও দোয়া করি দয়ালু মহান আল্লাহ বাদশা আব্দুল্লাহর জবাবদিহিতা সহজ করে দিক। তাকে মাফ করে দিয়ে জান্নাত নসীব করুক।
============================
গত দু সপ্তাহ পূর্ব থেকেই সৌদি বাদশা আব্দুল্লাহর মৃত্যু সংবাদ বিভিন্ন অসমর্থিত মাধ্যমে মিডিয়াতে খবর বেরিয়েছিল। অবশেষে গতকাল সৌদি রাজ পরিবার আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছে বাদশা আব্দুল্লাহর মৃত্যুর বিষয়টি। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজেউয়ুন। সৌদি রাজ পরিবার নিজেদেরকে সালাফী মতবাদের অনুসারী দাবী করে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে নিজেদের মতো করে কিছু দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
কিন্তু ইসলামের রাজনৈতিক উত্থান দমিয়ে রাখার ক্ষেত্রে এই রাজ বংশের বর্তমান বিলাশী কর্ণধাররা সীমাহীন নির্লজ্জতা এবং নাফরমানীর পরিচয় দিয়ে আসছে। অথচ বিগত শতাব্দীর আশির দশকের আগেও তাদের চিন্তা চেতনাতে এতো উগ্র সেকিউলার চিন্তার অনুপ্রবেশ ছিল না। সর্বশেষ এই রাজ পরিবার সরাসরি হস্তক্ষেপ করে মুসলিম উম্মার খনিজ সম্পদ বিক্রি করে আহরিত অর্থ অবৈধভাবে অভিসপ্ত ইয়াহুদীদের ষড়যন্ত্রে পরিচালিত পূর্ণাঙ্গ ইসলামের রাজনৈতিক উত্থানকে ধ্বংশ করতে হাজারে হাজার মিশরীয় বিপ্লবী জনতার খুন ঝড়িয়েছে। দুনিয়ার যেখানেই ইসলামের রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্থানের মেরুদন্ড সোজা করে দাড়াতে চেষ্টা করেছে সেখানই তারা ইউরোপ আমেরিকা তথা ইয়াহুদী নাসারাদের সহযোগি হিসেবে নিজেদের নাম লিখিয়েছে।
মৃত্যুর পরেই আসল হিসেব নিকেশ শুরু হবে। দুনিয়ায় যে যত বড় দায়িত্বের অধিকারী ছিল মৃত্যুর পরও তার জবাবদিহিতার ফিরিস্তি তত দীর্ঘ হবে। এই ভদ্রলোকটি মসনদে থাকাবস্থায় ইসলাম ও মুসলমানদের কি পরিমান লাভ করেছে তা অনুমান করতে পারছি না। কিন্তু এই লোকটির বিতর্কিত ভূমিকার কারনে মুসলিম বিশ্বের সীমাহীন ক্ষতি হয়েছে। তার পরেও দোয়া করি দয়ালু মহান আল্লাহ বাদশা আব্দুল্লাহর জবাবদিহিতা সহজ করে দিক। তাকে মাফ করে দিয়ে জান্নাত নসীব করুক।
দোয়া করবেন স্যার।
আল্লাহ তার ভালো কাজ গুলো কবুল করুন, আর ভুল গুলো ক্ষমা করে দিন। আমীন।
সংক্ষিপ্ত অথচ মূল্যবান লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি ব্লগে এমন লেখাটিই খুঁজতেছিলাম। না পেলে আমার লিখার ইচ্ছে ছিল এমন একটি লেখা। এজন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আরবরা আর যাহাই হোক, শিরক থেকে মুক্ত।
আল্লাহ তার ভালো কাজগুলো কবুল করুন। এবং বর্তমান শাসকরা যাতে মুসলিম উম্মাহর ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারেন সে তাওফিক দান করুন।
তবে শেষ কথা হল একটা ইতিহাসের সমাপ্তি হল।
মন্তব্য করতে লগইন করুন