অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব কখনও রাজনীতিক ছিলেন না
লিখেছেন লিখেছেন সালাম আজাদী ২৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০৩:২২:০৬ দুপুর
গোলাম আযম নামটা আমাদের প্রজন্মে খুবই বিতর্কিত। তাকে যারা ভালোবাসেন তাদের সংখ্যা যেমন কম নয়, যারা তাকে পছন্দ করেন না তাদের ও সংখ্যা বিপুল। তাকে কাছে পেলে পিটিয়ে হত্যা করবে এমন জানি দুষমন আগে তেমন ছিলো না, তবে এদের সংখ্যা ২০০১ সালের পর থেকে জ্যামিতিক হারে বেড়েছে। কারন টা মিডিয়া। মিডিয়ার বদৌলতে আমরা যারা বেঁচে আছি, গোলাম আযম নাম শুনলেই কেমন এক দোলাচালে পড়ে যাই। ফুটে ওঠে দুই দাঁতের মাঝ দিয়ে রক্ত ঝরা এক রক্ত পিপাসুর এডিটেড ছবি। পাশাপাশি সৌম্য সুন্দর বেহেশতি মানুষের এক প্রোজ্জ্বল ছায়ামূর্তি।
তিনি মেধাবি ছাত্র ছিলেন। ছাত্র জীবন থেকেই দেশ, ধর্ম, সমাজ, সংসার, সংস্কৃতি, চার পাশের পরিবেশ ইত্যাদি নিয়ে ভাবতেন। জীবনের আগা গোড়া ধর্মকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছেন। পীরাকি পরিবারে জন্ম, তাবলীগের সহবতে বড় হয়ে উঠেছেন, বড় বড় আলিমদের আশ পাশে থাকতেন এবং জীবনে যা দেখেছেন, করেছেন, বুঝেছেন তা সবই ধর্ম ই ধর্ম। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়া শুনা করেছেন, সর্বশেষ ডিগ্রী ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকেও নিতে পেরেছেন। ছাত্র জীবনে প্রভাবশালী ছিলেন বলে ডাকসুর জি এস ও হয়তোবা নির্বাচিত হতে পেরেছিলেন।
১৯২২ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি খুব ই সম্মানের আসনে ছিলেন, বিভিন্ন আন্দোলনে তাকে সামনের সারিতে রাখতে কোন মানুষের ই কোন সমস্যা হয়নি। দেখতে ছিলেন রাজপুত্রের মত। কথাও বলতেন খুব দার্শনিক কায়দায়।মানুষকে কনভিন্স করার যাদুকরি শক্তি বোধকরি কিছু ছিলো তার মধ্যে। ফলে তাবলীগ জামাতের মুরব্বিদের সাথে ছিলো গভীর সম্পর্ক। তমদ্দুন মজলিসের অধ্যাপক আবুল কাসেমের সাথে ছিলো সখ্যতা। ভাষা আন্দোলনের সামনের লাইনে তিনি তাই যায়গা করে নিয়েছিলেন। ওই অবস্থায় থাকলে গোলাম আযম সাহেবের জীবন ও কর্মের উপর অনেক গুলো পিএইচ ডি থিসিস হয়ে যেতো। সন্দেহ নেই গাড়ি বাড়ি ও প্রতিপত্তির ক্ষেত্রে তিনি হয়ে উঠতে পারতেন দেশের একজন কেউকেটা। নিদেন পক্ষে তিনি ধর্মীয় সমাজে থাকতেন 'দেশীয় আল্লাহর অলীদের' মত মখমলের বিছানায়। কিন্তু তিনি বেছে নেন আরেক পথ, ইক্বামাতে দীনের কঠিন আন্দোলন ও সবহারানোর পথ। এই পথ তার জীবনে এনে দিয়েছে বঞ্চনা ও বেদনা, তার পরিবারকে দিয়েছে দেশদ্রোহির তকমা, আর তার বার্ধক্যকে করেছে অসহনীয় নির্যাতনের যুপকাষ্ঠে বন্দী।
ইক্বামাতে দীনের আন্দোলনের গোড়ায় ছিলেন মাওলানা মাওদূদী (র)। ১৯৪১ থেকে এই আন্দোলনে যারা শরিক হয়েছিলেন তারা নিজেদের ভাবতেন ভারতীয় মুসলমানদের ত্রাতা হিসেবে। তাদের ভাবনা ছিলো ‘খিলাফাতে রাশেদার’ আদলে একটা ইসলামি রাস্ট্র গড়ে তোলার ক্ষেত্র তৈরি করা।বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিত্ব এই আন্দোলনে শরিক হন। মাওলানা আব্দুর রহীম, আব্দুল জাব্বার, আব্দুল খালেক রাহিমাহুমুল্লাহ গন ছিলেন পুরধা হিসেবে। আব্দুল খালেক সাহেব খুব বড় প্রথিতযশা কেও ছিলেন না, তবুও তিনি গোলাম আযম সাহেবের মত কলেজ শিক্ষক কে এই আন্দোলনে আনতে পেরেছিলেন। ১৯৫৪ সালে জামাআতে যোগদান করার পর থেকে আর থেমে থাকেন নি গোলাম আযম সাহেব। তার ভাষায় ‘খিদমাতে দ্বীনের’ মখমলে পথ ছেড়ে দিয়ে ইক্বামাতে দ্বীনের সংকীর্ণ ও কণ্টকাকীর্ণ পথ ধরে চলার বাইয়াত গ্রহন করলেন তিনি, এবং পাকিস্থান আমল থেকে, ১৯৬৫, ১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৭৮, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ইত্যাদি ঐতিহাসিক সনগুলোতে ব্যাপক আলোচিত ব্যক্তি হিসেবে নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়েছেন।
তিনি রাজনীতি বিজ্ঞানে সর্বোচ্চ ডিগ্রী পাওয়া ব্যক্তি। রাজনীতি জানতেন, বুঝতেন, পড়তেন আর পড়াতেন। রাজনীতির প্রতিটি প্লাটফর্মে তার উজ্জ্বল ছবি এলবাম, ডান বাম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কাছে বসার দিনপঞ্জি গুলো, পত্র পত্রিকা সমূহের রাজনৈতিক রিপোর্ট গুলোতে তার নাম বেশ যুতসই। ভারতের বাংলা এলাকায় ও পাকিস্থানের বিভিন্ন যায়গাতে তার নাম বলতে পারে এমন অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আজো পাওয়া যাবে ঢের। এত কিছু জানার পরেও আমি আমার লেখার শীরোনাম দিয়েছি ‘অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব রাজনীতিক ছিলেন না’। কেন? এই প্রশ্নের উত্তর আমি আজ দেবোনা। বরং আল্লাহর কসম করে বলি তিনি রাজনীতিবিদ হতে পারেন, রাজনীতি বিজ্ঞানের একজন শিক্ষক হতে পারেন, কিন্তু তিনি কখনো ‘রাজনীতি’ করেন নি। করতে জানতেন না। তিনি ছিলেন ইসলামের খাঁটি দ্বায়ী ইলাল্লাহ। একজন আল্লাহর অলি।
আজ শুধু দুয়া করি তার জন্য। কাল সারা রাত তার কথা ভেবেছি, দুয়া করেছি, সামান্য ঘুমের মাঝেও স্বপ্ন দেখেছি তিনি আমাদের পড়াচ্ছেন। আজ শুধু ভাবছি তিনি লক্ষ লক্ষ মুত্তাক্বীনের ইমাম কিভাবে হতে পেরেছিলেন!
বিষয়: বিবিধ
৬৭৩৯ বার পঠিত, ৪৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুব ভালো লাগলো।
আল্লাহ ওনাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন।
আল্লাহ্ পাকের নিকট তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবার সহ দেশে বিদেশে ইসলামী আন্দোলনের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের ধৈর্য্য ও সাহসের সাথে সর্বাবস্থার সঠিক মোকাবিলা করার প্রত্যয় ও বুদ্ধির জন্য প্রার্থনা জানাই। আল্লাহ তুমি আমাদের মরহুম নেতাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের সর্বোচ্চ আসনে আসীন করে নিও, আমীন, ইয়া রাব্বাল আ'লামীন।
নিদেন পক্ষে তিনি ধর্মীয় সমাজে থাকতেন 'দেশীয় আল্লাহর অলীদের' মত মখমলের বিছানায়। কিন্তু তিনি বেছে নেন আরেক পথ, ইক্বামাতে দীনের কঠিন আন্দোলন ও সবহারানোর পথ। এই পথ তার জীবনে এনে দিয়েছে বঞ্চনা ও বেদনা, তার পরিবারকে দিয়েছে দেশদ্রোহির তকমা, আর তার বার্ধক্যকে করেছে অসহনীয় নির্যাতনের যুপকাষ্ঠে বন্দী।
আমরা জানি আমরা কি হারিয়েছি ! দ্বীন ও দেশের মহান এই অভিভাবক আমাদের সবার সর্বোত্তম অভিভাবকের সান্নিধ্যে আবার যাত্রা শুরু করেছেন। হৃদয় জুড়ে হাহাকারের অনুভব , তবুও স্বান্তনা , জালিমের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন , চলে গেছেন চির শান্তিময় স্থায়ী ঠিকানায়। দেখিয়ে গিয়েছেন আলোভরা গন্তব্য , আমরাও একদিন যাত্রী হব চূড়ান্ত গন্তব্যের পথে , দয়াময় প্রভু যেন সেদিন আমাদেরকে ক্ষমা ও মর্যাদার স্থানে একই সাথে রাখেন , এই মিনতি ভরা মুনাজাত আমার মহামহিমের দরবারে ....
দুআ চাই
জাযাকাল্লাহু খায়রান
যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সময় প্রভাবশালী মেধাবী ছাত্র হবার কারণে ছাত্রসংসদের জি এস হয়েছিলেন মরহুম গোলাম আযম, আজ তারই মৃত্যুর খবরে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দ মিছিল হোল। ধিক্কার সেসব মানবতাবাদী,সুশীল ছাত্র নামের কসাই গুলোকে যারা একজনেরে মৃত্যুর পর ও ফাঁশি না দিতে পারার ব্যাথায় ব্যাথীত।ধিক্কার সে বিচার ব্যাবস্থাকে যেখানে চলে বিচারের নামে অবিচার, মানবতাবাদ নামে চালায় মানবতাবিরধী কার্যকলাপ ।
অত্যন্ত সত্য কথাগুলো।
আল্লাহতায়লা তাকে বেহেস্তে নসিব করুন। মিডিয়ার হাজার অপপ্রচারও সত্যকে মিথ্যায় পরিনিত করতে পারেনা। হিটলার কে মহামানব বানাতে পারেনি গোয়েবলস এর মিডিয়া। আর ৬৪ বছর ধরে প্রচার চালিয়েও তার দা্নবিক রুপ কে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি ইহুদি মিডিয়া।
ভাইরে, আপনি কোথায়? কোথায় থাকেন এখন? এ আপনার ফোন নাম্বার টা পাঠাবেন
দালিলিকভাবে জামাআত একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন । এর কাজ ব্যক্তি সংশোধন, পরিবার সংশোধন, ইসলামের আহবান চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়া, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায়ের প্রতিরোধ, ইসলামের আলোয় সমাজ সংশোধন এবং শেষে ইসলামের আলোয় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পুনর্গঠন । যারা জামাআতকে রাজনৈতিক দল মনে করেন, তারা ইসলামকেও ভালভাবে বুঝেননি, জামাআতকেও বুঝেননি ।
জামাআত যে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে, এটা মোটেও তার মূল কাজ নয় । এটা 'ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায়ের প্রতিরোধ', জুলমের প্রতিরোধ, রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংশোধন---এর অংশ মাত্র । জামাআতের মূল কাজ ইসলামের দিকে আহবান এবং প্রশিক্ষণ দান --এর মাধ্যমে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সংশোধন । মূল কাজ বাদ দিয়ে বা একে গৌণ মনে করে যারা শুধুমাত্র রাজনৈতিক কার্যক্রমকে আসল কাজ মনে করে, তারা ভুল করছে ।
গোলাম আজম সাহেব মরিয়া বাচিয়াছেন।
জাতিকে বাচিয়া মরিবার কৌশলও দেখিয়ে গেছেন!
বাবার কপালে শেষ চুমু খাচ্ছেন ছেলে।
#অধ্যাপক_গোলাম_আযম
একটি নাম,
একটি ইতিহাস।
তা অঅপনি ইদানিং ব্লগে আসেন না কেন ???
মন্তব্য করতে লগইন করুন