মসজিদ ও মুসলিম জীবন
লিখেছেন লিখেছেন সালাম আজাদী ১৯ মে, ২০১৪, ১১:৩২:০৩ সকাল
মানুষ যখন সাজদারত হয়ে যায়, মহান আল্লাহর খুব কাছে চলে যায়। আমাদের নবী (সা) এর ভাষায় সাজদারত ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার এত নিকটবর্তী হয়ে যায় যে, শায়তানের তা দেখে ভীষণ রাগ হয়ে যায়। বলতে থাকেঃ ‘আহারে এই রকম একটা সাজদার আদেশ পেয়ে আমি করিনি বলে আজ মালঊন বা অভিশপ্ত, অথচ আমার কাছে ঘৃণিত মানুষ আজ সাজদা দিয়ে আল্লাহর কত প্রিয় ব্যক্তিত্ব হয়ে গেল’। শয়তান রেগে যায় সাজদায় পড়ে থাকা মুসল্লিকে দেখে। মুসলামানদের এই কাজটা আল্লাহর প্রিয় হওয়ার কারণেই মনে হয় সাজদা দেয়ার যায়গাটাকে আল্লাহ মসজিদ বলে দিয়েছেন। অন্যান্য ধর্মের লোকদের ইবাদাত গাহের নানা নাম আছে। কিন্তু মসজিদ বলে আমাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাতের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
আমরা যেখানেই সাজদা দেব সেটা আল্লাহর কাছে রেকর্ডেড হয়ে থাকে। আমাদের জন্যই সারা পৃথিবীকে আল্লাহ মাসজিদ ও পবিত্র করে দিয়েছে। আমি যেখানেই সাজদা দিই ওটা মাসজিদের নামেই আল্লাহর কাছে থাকবে। কাজেই আমার একটা সাজদার সাথে আমার মাসজিদের সম্পর্ক। এই সম্পর্ক টা যত নিবিড় হবে, ততই দুনিয়াতে আমার যেমন ভালো হবে, আখিরাতের ভয়াবহ সমস্যায় ও তেমন উপকার হবে। দুনিয়ার উপকার হয় বিভিন্ন ভাবে। যেমন মসজিদে যাতায়াত করলে, কোন মসজিদ নির্মান ও সংরক্ষনের জন্য সময়, শ্রম ও অর্থ দান করলে ঈমানের তেজ বৃদ্ধি পায়। আল্লাহর রেকর্ডে তার নাম ‘ঈমানদার’ বলে গৃহিত হয়ে যায়। আল্লাহর ভাষায় এইটাকে উপস্থাপিত করা হয়েছে খুব সুন্দর ভাবেঃ ‘আল্লাহর মসজিদ গুলো তারাই আবাদ করে, যাদের দিলে আল্লাহর উপর আর আখিরাতের প্রতি আছে প্রগাঢ় বিশ্বাস’।(আলতাওবাহঃ ১৮) এই ধরণের মসজিদ যখন তৈরী হয়, আল্লাহ তাকে আপন ঘরের মর্যাদা দেন। যদিও আল্লাহর ঘর মানে সেখানে আল্লাহ থাকেন না। নাঊযুবিল্লাহ। বরং আল্লাহর ঘরের অর্থ হলো এই ঘরের সাথে যারা জড়িত থাকে তাদের সাথেই থাকে আল্লাহর অবারিত সম্পর্ক। এই ঘরে আসতে কেও বাঁধা সৃষ্টি করলে সে জঘন্য জালিমে পরিণত হয়ে যায়।আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে, তার চাইতে বড় যালেম আর কে? এদের পক্ষে মসজিদসমূহে প্রবেশ করা বিধেয় নয়, অবশ্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়। ওদের জন্য ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে। (আলবাক্বারাঃ ১১৪)
এই সব মসজিদে যেয়ে যে ইবাদাত ই করা হোক না কেন আল্লাহ খুব পছন্দ করেন। মদীনার কুবা মসজিদ তৈরি হয়েছিলো আমাদের নবী ওখানে মাত্র ক’দিন থাকবেন এবং সেখানে রাত কাটাবেন বলে।এটাই ছিলো ইসলামের প্রথম মসজিদ। আমাদের নবী (সা) সেখানে কিছুদিন কা্টালেন, এরপর রেখে আসলেন মুসলমানদের জন্য। একবার তিনি এই মসজিদের প্রশংসায় আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা কুরআনী আয়াত পেয়ে বিস্মিত হয়ে গেলেন। আল্লাহ সেই আয়াতে বলছেনঃ তবে প্রথম দিন থেকে যে মসজিদের ভিত্তি রাখা হয়েছে তাকওয়ার উপর, সেটিই তোমার অবস্থানের যোগ্য স্থান। সেখানে রয়েছে এমন লোক, যারা পবিত্রতাকে ভালবাসে। আর আল্লাহ পবিত্র লোকদের ভালবাসেন। (আলতাওবাঃ১০৮)
এই আয়াত পেয়ে আমাদের নবী (সা) এই মসজিদে গেলেন, জিজ্ঞেস করলেন এর মুসল্লি সাহাবাগণকেঃ এখানে তোমরা কিভাবে পবিত্রতা অর্জন কর, যে স্বয়ং আল্লাহ তোমাদের এত প্রশংসা করলেন? তারা জবাব দিলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমরা তো সাধারণ নিয়মেই পাক সাফ করে থাকি, তবে পেশাব পায়খানার পরে আমরা কুলুখ ব্যবহারের পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলি। আল্লাহু আকবার!! দেখুন, কোন মসজিদ কে যদি আন্তরিকতার সাথে নির্মান করে সেখানে আপনি যে ইবাদাতই করুন না কেন, আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করবেন। এমন কি কুলুখ ব্যবহার, পানির ব্যবহার ইত্যাদি ছোট খাট কাজ ও আল্লাহ পছন্দ করে নেন। আর এই ধরণের মসজিদ যারা নির্মান করে আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতে নিজ হাতে সুন্দর ঘর বানিয়ে দেন। এরচেয়ে উপকারী কাজ দুনিয়াতে আর কী বা আছে?
মসজিদ তাক্বওয়ার উপর নির্মান করার মানে কিন্তু এটা নয় যে ফাউন্ডেশনে কিছু তাক্বওয়া নামক জিনিষ বিছায়ে দিতে হবে। বরং এর মানে হলো যারা এই মসজিদ বানাবেন তারা যেন তাক্বওয়ার মানে অনেক উন্নত হন। মসজিদ বানাবেন অথচ জীবন থাকবে আপনার জাহিলিয়াতের, কাজ থাকবে আপনার তাক্বওয়া বিরোধী, ঈমান থাকবে আমল বিহীন এবং চেতনায় থাকবে শয়তানের ধোঁকা, তা হলে আপনার বানানো সে মসজিদ কিন্তু খুব বেশি ফল আপনার জীবনে বয়ে আনবেনা। আল্লাহ তাআলা তাই বলেনঃ আল্লাহ যেসব গৃহকে মর্যাদায় উন্নীত করার এবং সেগুলোতে তাঁর নাম উচ্চারণ করার আদেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এমন লোকেরা, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামায কায়েম করা থেকে এবং যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে। (সূরা নূরঃ৩৬-৩৭)
দুনিয়ায় এই রকম মসজিদ যদি থাকে এবং সেখানে এমন লোক যদি পাওয়া যায় তাহলে সেখানেই আল্লাহকে অবশ্যই পাওয়া যাবে। কারণ এটা সত্যিকারার্থে আল্লাহর ঘর। আর এর সাথে যাদের অন্তর গেঁথে যায়, এর আশে পাশে যারা সব সময় থাকে, নিজ ঘরের চেয়ে যারা একে বেশি যত্ন করে রাখে, এখানে এসে যারা দ্বীনি ইলম হাসিলের জন্য সর্বত্যাগী হয়, এখান থেকে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিতে যারা নিজের জীবনকেও তুচ্ছ মনে করে, আর ইবাদাতের সময় এখানে আসতে যারা পাগলপ্রায় হয়ে যায়। এই সমস্ত লোকদের আল্লাহ তাআলা কিয়ামতে খুঁজে খুঁজে বের করে আনার জন্য ফিরিস্তা পাঠাবেন। তাদের কে একত্রিত করে নিজের আরশের নীচে আদর করে ছায়া দেবেন। মুসলিম জীবনের সাথে এই হলো মসজিদের সম্পর্ক। আসুন তো ভেবে দেখি আমাদের কয়জনে এই ধরণের মসজিদ বানানোর চেষ্টা করেছি, কিংবা কয় জনের জীবন ও অন্তর এই ধরণের মসজিদের সাথে গাঁথতে পেরেছি??
বিষয়: বিবিধ
১৬৫৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খোদার ঘরে কে লাগায় কপাট,কে দেয় সেখানে তালা
সব দ্বার এর খোলা রবে চালা হাতুরি শাবল চালা।
হযরত শেখ সালেহ ইয়াসিন মুহাম্মদ (দা’মত বারকাতুহুমুল আলিয়া, মাদ্দাজিল্লুহুল আ’লি) এর ফেবু লিংক থেকে নেয়া
যেকোন সম্পর্ক গড়তে হলে এর পেছনে সময় এবং আন্তরিকতা দিতে হয়। আমরা পার্থিব অনেক সম্পর্কের পেছনেই অনেক ত্যাগ স্বীকার করি, অথচ যিনি আমাদের সব তাঁর জন্য আমাদের সময় থাকেনা!
আমার সর্বশেষ লিখিত ব্লগে আপনাকে স্বাগতম জানাচ্ছি। ব্লগিংয়ে আসার প্রেক্ষাপট
মন্তব্য করতে লগইন করুন