সাঈদী সাহেবকে ফাঁসি দিলেই জামাআত কে ধ্বংশ করা সহজ হবে

লিখেছেন লিখেছেন সালাম আজাদী ২৩ এপ্রিল, ২০১৪, ০৬:০৬:৩৭ সকাল



আমাদের বর্তমান সরকার স্থূল অথবা সুনিপূন উভয় ভাবেই ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যদিও এই দলের বিরাট একটা অংশ ইসলামকে ধর্ম হিসাবে মানে। বাংলাদেশের মাদ্রাসা মসজিদ বিনির্মানেও রয়েছে তাদের বিরাট অবদান। এমন কি ইসলামের জন্য, তাদের ইচ্ছে থাকুক বা না থাকুক, আল্লাহ তাদের দিয়ে বিভিন্ন ভাবে কিছু কাজ করিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান সরকারের কার্যকলাপ দেখে মনে হচ্ছে তারা হয়ত কোন একটা এসাইনমেন্ট গ্রহন করেছে, অথবা কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। তারা বাংলাদেশের মাটিতে ইসলামি আন্দোলন কে প্রতিহত করতে চায়।

আমি দ্বিতীয় প্রপঞ্চটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি বেশি। তারা মনে হয় ইসলামি আন্দোলন কে শেষ করে দেয়ার ব্যাপারে কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। কারণ অনেক গুলো। পাশ্চত্যের কাছে এখন ইসলামের উত্থান একটা দুঃস্বপ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে। আর তাদের বিভিন্ন উপাত্তে ইসলামি আন্দোলনের শক্তিকেই সবচেয়ে অপ্রতিরোধ্য হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছে। এশিয়া বা দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলোতে যে পাশ্চত্য বিরোধী শক্তিগুলো আছে, তাদের সাথেও রয়েছে এই ইসলামী আন্দোলন গুলোর সুসম্পর্ক। তা ছাড়া চীনের বিপরীতে শক্তিশালী দুশমন তৈরী করতে ভারত কে পাশ্চত্য আজ নতূন “সখী”র মর্যাদা দিচ্ছে। আর এটা তো জানা কথা, নতূন “সখী”র মন পেতে সখীর শত্রু নিধন একান্ত জরুরী হয়ে পড়ে। কাজেই এই অক্ষ শক্তির একমাত্র কাজ হলো ভারত, পাকিস্থান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ সহ সকল দেশের ইসলামী আন্দোলন গুলোকে হয় শেষ করতে হবে। নতুবা এই আন্দোলন গুলোকে কোণ ঠাসা করে এমন ভাবে মার্জিনালাইজড এবং ডেমোনাইজড করতে হবে, যাতে করে একান্ত দগ্ধ হতে ছাড়া এই আগুনে আর কোন পতংগ যেন ঝাঁপ দিতে না আসে।

ভারত, পাকিস্থান ও বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনকে শেষ করার জন্য ঐ অক্ষ শক্তি যে সব পরিকল্পনা ও রোডম্যাপ ধরে এগুচ্ছে তার সব কিছুর পরীক্ষা স্থল হিসাবে যেন বাংলাদেশকে গ্রহন করা হয়েছে। পরীক্ষার পাত্র বা গিনিপীগ হিসেবে যেন বাংলাদেশীদেরকেই বাছাই করা হয়েছে। ৫ই মের রাতের গণ হত্যা ও তার মোটিভ কে যদি মিশরের রাবেয়া স্কোয়ারের সাথে মিলান, এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম ও রায় দেয়ার ভংগিকে মিশরের সাম্প্রতিক ৫২৯ জনের বিরুদ্ধে দেয়া রায়ের সাথে তুলনা করেন, তাহলে হয়তবা আমার কথার সাথে কিছুটা হলেও একমত হবেন। আমি আসলে যেটা বুঝাতে চাচ্ছি তা হলো, ইসলামী আন্দোলনকে শেষ করার ছক বা প্লান যারাই করছে তারা একে অপরের খুব কাছের, এবং তাদের থিঙ্কট্যাঙ্ক গুলো এক এবং অবিচ্ছেদ্য বা অভিন্ন।

যাহোক আল্লামা সাঈদী বাংলাদেশের ইসলামী আইকোন হিসেবে অত বেশী বিবেচিত হতোনা যদি তার মধ্যে নিম্ন লিখিত দোষ (?) গুলো না থাকতো।

১। সেক্যুলারিজমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ থেকে শুরু করে ছাত্র শিক্ষক এমন কি বুদ্ধিজীবি লেভেলেও সাঈদী সাহেবের সুললিত ওয়াজ দারুন প্রভাব ফেলেছে গত ৪০ বছরে। হাজারো মসজিদ মাদ্রাসা যে কাজ করতে পারেনি, সাঈদীর এক তাফসীর মাহফিল থেকে সেই কাজ টি তিনি করতে পেরেছেন। আর তা হলো ইসলামের সাথে সেক্যুলারিজমের কোন সম্পর্ক যে নেই তা কলেমার মত মুখস্ত করিয়ে নেয়া।

২। তার বক্তব্যে সেক্যুলার বুদ্ধিজীবিদের নাম গুলো এমন ভাবে স্থান পেত যেন ওই সব ব্যক্তিত্ব গুলো সাধারণদের হাসির ই খোরাক। সাঈদী সাহেবের আলোচনায় যে সব হাসির গল্প হত, বা ব্যংগ করা হত তা হতো ঐসব নামি দামি লোকেরাই। বুদ্ধিজীবি হোন বা হোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার, সাঈদী সাহেব যাকে সমালোচনা করতেন, তাকে মিশিয়ে দিতেন ধুলোর সাথে। এমন ও হয়েছে, তাদের কেও কেও আক্রমনের শিকার হলে সংগে সংগে ধর্মীয় ব্যক্তিদের কেই আসামী করা হত। অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যেত তারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের স্বজাতীয় কোন ব্যক্তিগত প্রতিপক্ষের দ্বারা।

৩।বাংলাদেশের অস্তিত্বের ক্ষেত্রে ভারত যে একমাত্র শত্রু, তা সাঈদী সাহেব মন্ত্রের মত মুখস্ত করিয়েছেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষদের। পুলিশ, সেনাবাহিনী, ক্ষেত মজুর থেকে শুরু করে এই যিকির যেন চলতো প্রতিটি সচিবের ও ডেস্ক গুলোতে। কাজেই ভারত বিরোধিতার যে মগজ ধোলায়ের কাজ সাঈদী সাহেব একা করেছেন, জামাআত ও অন্যান্য শক্তি সমূহের সমস্ত ম্যাকানিজম তার ধারে কাছেও আসতে পারেনি।

৪।পীরপন্থী, ও মাজার পন্থীদের বিরুদ্ধে একা সাঈদীর যে তর্জন গর্জন গত ৪০ বছরে আমরা দেখেছি তার মত ব্যাপক ঢেও আর কেও তুলতে পারেনি। যদিও তিনি মতিউর রাহমান মাদানী দের দ্বারা বিদআতী ও মূর্খ হিসেবে সমালোচনার শিকার হয়েছেন, কিন্তু পূর্ণ দ্বায়িত্ব নিয়েই বলছি, সাঈদী সাহেব দিয়ে বহু বিদআত সমাজ থেকে বিতাড়িত হয়েছে, কম হয়েছে হয়েছে পীর পূজা বা মাজার পূজার অনুসারীদের সংখ্যা।

৫। তার মাধ্যমে ইসলামি ব্যাংক, ইসলামি শিক্ষা ও অন্যান্য ইসলামি দিক ও বিভাগ কে বাজার জাত করা গেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে তিনি এই গুলোকে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথেই ইসলাম বিরোধী বিষয় সমূহের বিকল্প হিসেবে তুলে ধরতেন।

যাহোক, উপরের প্রতিটি কাজই ছিলো ইসলামী আন্দোলনের জোয়ার সৃষ্টির একেক টি উপাদান। ফলে ব্যক্তি হিসেবে প্রফেসার গোলাম আযম, মাওলানা নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ প্রভৃতি গণের চেয়েও সাঈদীকে আগে হত্যা করার জন্য প্রথম গীনিপীগ হিসেবে গ্রহন করতেই হয়েছে ইসলামের প্রতিপক্ষ শক্তিকে।

এখন সবাই মনে করছে সাঈদী সাহেব সহ জামাআতের অন্যন্য নেতাদের হত্যা করতে পারলেই বাংলাদেশের ইসলামি আন্দোলন কে সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে সাঈদী সাহেব কে বিভিন্ন ভাবে এসাসিন করার চেষ্টাও হয়েছে। তার ক্যারেক্টার নিয়ে ফেইক রেকর্ড বাজারে এসেছে। তাকে হাসির খোরাক বানানোর জন্য চাঁদের গায়েও তাকে দেখানোর জন্য চেষ্টা চলেছে। এখন তাকে ফাঁসিতে ঝুলানোর সমস্ত কিছু সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।



যারা এইসব প্লান গুলো করেছে তারা খুব ভুলের মধ্যে আছে। তারা ইসলামি ইতিহাসের অনেক কিছুই জানেনা। তারা জানতে পরে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের হাতে এক লক্ষ বিশ হাজার মুসলমানকে মারার ইতিহাস। কিন্তু তারা জানেনা ঐ সব মাজলুম সাহাবী ও তাবেয়োদের রক্তের অভিশাপে উমাইয়ার রাজবংশ ধ্বংশের রহস্য। তারা জেনেছে খলীফা মানসূর, খলীফা মামূন ও মু’তাসিম এর হাতে ইমাম মালেক, ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আহমাদের অত্যাচারের গাল গল্প। কিন্তু তারা জানেনা এই সব ইমামদের হত্যার কারণে ঐ সব রাজা বাদশাহদের গদি হারানোর ইতিহাস। মূলত লক্ষ লক্ষ শত্রু ইসলামের যে ক্ষতি সাধন না করতে পেরেছে, তার চেয়ে ক্ষতি করা হয়েছে ঐ সব আলিম উলামাদেরকে কষ্ট দিয়ে বা হত্যা করে।

হাঁ, বাংলাদেশে কিছু আলিম উলামা বা ইসলাম প্রিয় ব্যক্তিদের হত্যার মাধ্যমে হয়ত কিছু রাজনৈতিক ফায়েদা অর্জিত হবে। কিন্তু যে ইসলাম এবং ইসলামের প্রতি টান এই ভূখন্ডকে ভারত থেকে আলাদা করেছিলো সেই শক্তিটা খুব ক্ষীন হয়ে যাবে। এতে করে ক্ষমতার মসনদে ২০৪০ সাল পর্যন্ত থাকার স্বপ্নে বিভোর জনগোষ্টি খুব শীঘ্রই অনেক কিছু হারাতে বসবে। যে শক্তি হায়দারাবাদ কে হজম করে; শিকিম কে আয়ত্ব করে নেয়; কাশ্মীরকে সাপ্রেস করে রাখে; ফিলাস্তিনের মুক্তি কে দীর্ঘায়িত করে; যে শক্তি আজ ক্রিমিয়ার দেশ ও মাটি পেটে পুরে ফেলতে চায় তারা আজ বড় একাট্টা। সাঈদী সাহেব দের হত্যা করে ওদের হাত কে অনেক শক্তিশালী করা হবে, আমাদের সরকার সেটা বুঝতে পেরেছে এবং মেনে নিয়েছে বলে মনে হয়। আরো মনে হয়েছে তাদের চাওয়ার কছে আমাদের সরকার যেন নিজদেরকে খুব হীন ও তুচ্ছ ভাবতে শুরু করেছে।

আমি ক্ষুদ্র মানুষ। এই সব কথা বুঝতে যাওয়া বা বুঝাতে যাওয়া টাকে আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজের খবর নিতে যাওয়ার মত প্রগলভতা দেখানো বলে মনে করি। কিন্তু যারা আজ সাঈদী সাহেবদের হত্যা করতে ফাঁসীর দড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছেন, তাদের বলি, এইসব আলিম উলামাদের রক্ত বড় বেশী কথা বলে। সাঈদী সাহেব কে হত্যা করতে আপনারা সাহসী হয়েছেন। এই সাহস দুনিয়াতেই আপনাদের বোকামি হিসাবে প্রমানিত হবেই। আর সেই বোকামির ফল টা বিচার, প্রশাসন, পুলিশ, তথা বাংলাদেশের সর্বস্তরে অভিশাপ হয়ে ঘুরে বেড়াবে।

সাঈদী সাহেব কে যে যত তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করুন না কেন, ইসলামের কাজ করার কারণে তাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে বিশাল মান মর্যাদা। সেই মর্যাদার পাশে শুধু বাংলাদেশ কেন, অন্য কোন দেশের ও খুব কম লোক পৌঁছতে পেরেছে। এই সব ব্যক্তিদের রক্ত কে যারা ‘ফাও’ মনে করছেন, তাদের কে আমি এক ভয়ংকর আযাবের ভয় দেখাচ্ছি। যে আযাব শুধু ইসলাম বিরোধীদেরকে গ্রাস করবেনা, বরং অনেক মুমিন মুসলমানকেও হয়ত সে আযাব ঘিরে ফেলতে পারে, কারণ সত্য কথা বলতে তারা মুখে কুলুপ আটকে রেখেছে। সে আযাবের প্রাথমিক ধরণ টা হবে, যে জামাআত কে তারা ধ্বংশ করতে চাচ্ছে, আল্লাহ সেই জামাআতকেই হয়ত বাংলাদেশের সার্বিক স্বাধীনতা রক্ষার একক শক্তিতে রূপান্তরিত করবেন। হয়ত জামাআতের এই সব ব্যক্তিরা থাকবেন না সে দিন, কিন্তু এদের রক্তের উত্তরাধিকারদের শেষ করা একদম অসম্ভব হয়ে যাবে। ইসলাম বিরোধীদের উপর এর চেয়ে বড় আযাব আর কী হতে পারে।

বিষয়: বিবিধ

৩৭৯৯ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

212084
২৩ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৬:৫২
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : শাহাদাত মুমিনের জীবন ও সমাজে পরাজয় নয় বিজয়ের সূচনা করে...
212091
২৩ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৭:৩৪

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 8870

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> লিটুয়ারা লিখেছেন : কথামালার ইসলামী বিজয়?
212099
২৩ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৮:১৪
খুঁজে পিরি স্বাধীনতা লিখেছেন : হাজার সাঈদি চলে গেলে ইসলামের কিছু হবেনা!! বরং তাদের আত্মত্যাগে জেগে উঠবে তৈাহিদি জনতা!! Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck
২৩ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৮:২১
160411
হতভাগা লিখেছেন : যে দেশের লোক মসজিদে ১০ টাকা দান করতেও কার্পন্য করে আর এ.আর. রহমানের কনসার্টে ৭৫,০০০ টাকা টিকিট কেনে - সে দেশে তৌহিদি জনতা আছে !!!!

৩১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:০৯
203763
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : চরম সত্যিটা উচ্চারণ করেছেন হতভাগা।
212136
২৩ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:৩৪
ঈগল লিখেছেন : তাওহীদ সম্পর্কে আল্লামা সাঈদী সাহেব এদেশের মানুষকে ততটুকু জ্ঞান দিতে পারেন নি যতটুকু দেওয়ার কথা ছিল। তবুও যা দিয়েছেন খুব কম দেন নি।
তবে সমস্যা হয়ে গেল, যখন তিনি প্রচলিত সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছিলেন। অথচ প্রচলিত সংবিধান স্পষ্টভাবে আল্লাহর আইনের প্রতিস্থাপন করেছে।

================

আল্লাহ আইনের প্রতিস্থাপন করা আর আল্লাহর আইন জারী আছে বটে কিন্তু কোন কারণে কোন আইন বাস্তবায় করতে না পারা' এই দুইটি ভিন্ন জিনিস।
212152
২৩ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:২৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সুন্দর পোস্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
তারা যেভাবেই হোব আল্লামা সাঈদির কন্ঠ স্তব্ধ করতে চায় কারন তারা জানে তাদের সাজান শিক্ষা পদ্ধতির মধ্যেও আল্লামা সাঈদির কন্ঠ ও যুক্তিতে আকর্ষিত হয়ে অনেকেই ইসলামের পথে এসেছে।
223879
২০ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৮
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : একজন অজ্ঞ মানুষের ভোটের মূল্য ও একজন উচ্চ শিক্ষিত মানুষের ভোট যেখানে এক সেই ধরনের নির্বাচনী গনতন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে ইসলাম প্রতিষ্টা অসম্ভব এটা বুঝার জন্য খুব বেশী জ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই।

জামাত যদি তার পলিসির পরিবর্তন না করে তবে ভবিষ্যতে তারা যেভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আরোহনের মাধ্যমে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়বে! স্বপ্নে বিভোড় আছেন তাদের স্বপ্ন হয়তো স্বপ্নই থেকে যাবে। জামাতীদের সাথে মারাত্মক আক্বিদাগত মতভেদের দুরত্ব রয়েছে দেওবন্দীদের সাথে। আবার রাজনৈতিকভাবেই জামাতের সহযোগী অথবা সমগোত্রীয় বলতে প্রকৃত অর্থেই অন্য কোন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে উঠেনি। প্রক্ষান্তরে ভারতে বিজেপির উত্থানের পেছনে কংগ্রেসের হিন্দুত্ববাদী নেতাদের ভূমিকাই ছিল সবচেয়ে বেশী। এ ধরনের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলাকে বরাবরই জামাতীরা পথের কাঠা মনে করেছে। অথচ মিশর, তুরস্ক, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া এমনকি আমাগো প্রতিবেশী ভারতেও রয়েছে বিকল্প ফ্লাটফর্মের উন্মেষ ঘটানোর দূরদর্শি কর্মসূচী। বর্তমানে যাদের সাথে জামাতের প্রকাশ্য সখ্যতা রয়েছে বলে রাজনৈতিক ঐক্য দৃশ্যমান তা প্রকৃত অর্থে কোন ঐক্যই নয়। বরং এ ঐক্য জামাতীদের বাংলাদেশের রাজপথে দাড়ানোর যেমন সার্বিক ক্ষমতা হারিয়েছে, তেমনি আদর্শিকভাবেই জামাত হীনমন্যতায় আক্রান্ত হয়েছে। মাঝখানে হঠাৎ হেফাজতীদের বায়বীয় জজবায় জামাতও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল এই বুঝি দড়িচেড়া হাম্বা বাচুরদের গলায় আবারো দড়ি পড়ানোর মওকা মিলে গেল! অথচ ঐক্যের স্থায়ী বন্ধন রচনা করার যাবতীয় উপদান এবং লজিস্টিক সাপোর্ট ছিল কথিত হেফাজতিদের সাথেই। কিন্তু না, জামাত সেদিকে নজর না দেয়ার অতীতের একগুয়েমী ত্যাগ করার মানসিকতা অর্জন করতে শিখেনি। বাইয়ুনপি এবং হাম্বালীগের মধ্যে আদর্শগত মৌলিক কোন পার্থক্য না থাকলেও জামাতীরাই এই পার্থক্যের রেখা আবিস্কার করে দিয়েছিল। হাম্বার বাচুরা সেকিউলার! আর বায়ুনপির আবালরা নন-সেকিউলার!! কি অদ্ভুত সমীকরণ!
জাতীয় পর্যায়ের কথা বাদ দেন। বাংলাদেশের যেকোন একটি জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের এ দু'দলের নেতা কর্মীদের একটি তুলনামূলক চিত্রের বিশ্লেষণ করে দেখুন তো! তাদের দৈনন্দিন জীবন যাত্রা এবং পাবলিক ডিলিংয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কিনা? পার্থক্য শুধু রাজনৈতিক দলের নাম। চিন্তা চেতনা, রুচিবোধ, শিক্ষা-দিক্ষা ও সামাজিক আচার আচারণে কোথায় পার্থক্য আছে বাইয়ুনপি এবং হাম্বালীগার মধ্যে? অথচ জামাতিরা রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার গরজ অনুভব করেছিল শুধু একটি পক্ষের সাথে! তাও আবার যারা রাজনৈতিক ময়দানে দেলিয়পনার চেয়েও নিকৃষ্টতর! অথচ অন্যদিকে মাঠে ময়দানে প্রবল একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তিকে নিজের শত্রু বানানোর মত বোকামীর পরিচয় দিয়ে আসছে জামাতিরা!
আরেকটি বিষয় হচ্ছে জামাতীদের সাথে দেওবন্দীদের মতবিরোধ। দেশের অধিকাংশ ক্বাউমী মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে দেওবন্দীদের হাতে। দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এসব মাদ্রাসা। হয়তো এসব মাদ্রাসার সংখ্যা কম্পক্ষে দু'লক্ষের কম হবে না। এসব মাদ্রসাগুলো পরিচালিত হয় পয়সাওয়ালা মুসলমানদের দান খয়রাতে। হোক না সে পয়সাওয়ালা মুসলমানরা নামে মুসলমান নতুবা কাজে মুসলমান। এসব মুসলমানদের সাথেই রয়েছে মজবুত কানেকশন বায়ুনপি এবং হাম্বালীগের রাজনৈতিক হোমরা চোমরাদের সাথে। যার ফলে সহজেই এদেরকে টোপ দিয়ে আদার খাওয়ায়ে ব্যবহার করতে পারে যে কোন উসিলায়। এর জলন্ত উদাহরণ হচ্ছে অতি সাম্প্রতিককালের হেফাজতীদের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা।
এ কথা অশ্বীকার করার কোন সুযোগ নেই দেওবন্দীদের আদর্শিক প্রভাব প্রতিপত্তি এদেশের মুসলমানদের অন্তরে কত গভীর! দেওবন্দী আলেম ওলামারাও একটি জিনিস বা আদর্শ বহন করে বেড়ায়। সেটা হয়তো তাদের সহজ সরল মাজারী পর্যায়ের আলেম ওলামারা হয়তো বেখবর। তা হলো এদেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ ইসলাম বলতে যা কিছু বুঝায়, অথবা ইসলামী শরীয়ত বলতে যেসব নিয়ম কানুন রয়েছে তার একমাত্র পেটেন্ট দেওবন্দীদের মধ্যেই রয়েছে। কিন্তু জামাতীরা এই বিষয়টি গভীর অন্তর দৃষ্টি দিয়ে বুঝার চেষ্টা করেন বলে মনে হয় না। জামাতীরা আছেন শুধু মাত্র মওদুদী সাহেব যা কিছু বলেছেন বা মওদুদী সাহেব যা কিছু শিখিয়ে গেছেন তার বাইরে যাওয়া যাবে না। কেন? কি সমস্যা? ইসলাম কি শুধু মওদুদী সাহেব একজনই বুঝেছেন? দেওবন্দী আকাবেররা কি কিছুই বুঝেননি? জামাতীরা পাঠ্যপুস্তক হিসেবে মওদুদী সাহেবের সাহিত্যই রেখেছেন। দেওবন্দীদের কোন মুরুব্বির সাহিত্য পাঠ্য হিসেবে রাখলে হয়তো হেফাজতীদের অন্তরঝালা কিছুটা প্রসমিত হতো।
জামাতিরা অনেক ক্ষেত্রে বোকামির পরিচয় দিয়ে আসছেন সেটা তাদেরকে বোঝানো মুশকিল। দেওবন্দীদের কি কি কারণে হাম্বাবাচুর এবং বায়ুনপি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সে বিষয় নিয়ে স্টাডিও করে না। স্টাডি করলেও তার সমাধানে এগিয়ে আসে না।
অনেক লম্বা হয়ে যাচ্ছে মন্তব্য। তাই আর গ্যাঞ্জাম বাড়াতে চাই। এখানেই শেষ করছি। আপনাকে ধন্যবাদ।
২১ মে ২০১৪ রাত ০৪:১৫
171319
সালাম আজাদী লিখেছেন : একমত, কাজ করে বলেই জামাতের এই ভুল গুলো আমরা ধরতে পারতেছি। এই ধাক্কায় জামাত অনেক শিখেছে আশা করছি। তবে ইসলামি রাজনীতিতে জামাত কে নতুন করে ভাবতে হবে।
আপনি গ্যান্জাম বাঁধানো লোক না, তা বুঝতে পারলাম
259971
৩১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:৩৬
আবু নাইম লিখেছেন :
259988
৩১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:১৮
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : “এই সব ব্যক্তিদের রক্ত কে যারা ‘ফাও’ মনে করছেন, তাদের কে আমি এক ভয়ংকর আযাবের ভয় দেখাচ্ছি। যে আযাব শুধু ইসলাম বিরোধীদেরকে গ্রাস করবেনা, বরং অনেক মুমিন মুসলমানকেও হয়ত সে আযাব ঘিরে ফেলতে পারে, কারণ সত্য কথা বলতে তারা মুখে কুলুপ আটকে রেখেছে।”- অাপনার এ অনুভূতির সাথে আমি শতভাগ একমত।


আরো একটি কথা বলি। ইসলাম ও বাতিল এর সংঘাতে যাদের অবস্থান/কর্ম/বক্তব্য এসব ইসলামের স্বার্থের প্রতিকূল বা বাতিলের স্বার্থের অনুকূল তাদের নামায,রোযা, হজ্ব, যাকাত সকল নেক আমল কবুল হওয়া তো দূরের কথা, তাদের ঈমানই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

সূরা মুহাম্মাদ এর ২৮ হতে ৩৪ নং আয়াতে খুব সুন্দরভাবে মহান আল্লাহ এ বিষয়গুলি বলেছেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File