সৌদিতে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিলো ঐ একটিই, কিন্তু আপনাদের দেখার পর ঐ চিন্তা বাদ দিয়েছি
লিখেছেন লিখেছেন সালাম আজাদী ২০ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:২৫:৫১ দুপুর
বছর কয়েক আগে বৃটিশ মিউজিয়ামে বাদশাহ আব্দুল্লাহর অর্থায়নে ইসলাম পরিচিতি মূলক একটা এক্সিবিশান হয়। নাম দিয়ছিলোঃ Hajj: journey to the heart of Islam ওখানে যারা গাইড হিসেবে ছিলেন তার মধ্যে একজন তার অভিজ্ঞতা এই ভাবে শেয়ার করেছেনঃ
আমি সারাদিন বিভিন্ন মানুষের প্রশ্নের জবাব দিতাম। একবার স্কটল্যান্ডের এক ভদ্র লোক বিভিন্ন স্টল ঘুরে ফিরে দেখতে দেখতে আমাকে দেখে মুচকি হেসে সালাম দিলো। তার সুন্দর আরবী সালাম শুনে বিস্মিত হলাম। উত্তর দিয়ে ইসলাম সম্পর্কে তার কিছু জানার আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলাম। বললামঃ ইসলাম সম্পর্কে কি আপনি কিছু জানতে চান? তিনি বললেনঃ না, না, কিছুই জানতে চাইনা। আমি ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছু জানি।
আমি তার দিকে বিস্ময়ের চোখ মেলে তাকালাম। তিনি বললেনঃ আসলে আমি তাত্বিক কোন জিনিষ পছন্দ করিনা। ইসলাম সম্পর্কে খোদ কুরআন ও অন্যন্য বই পড়ার পরে আমার আগ্রহ হয় ইসলাম কি তা সরে জমিনে দেখে আসার। আপনার দেশ সৌদিতে গেলাম চাকুরি নিয়ে। নানা শহরে থাকলাম কয়েক বছর। তার পর ইসলাম কাকে বলে ঢের জেনেছি।
আমি বললামঃ ইসলাম সম্পর্কে আপনি যা জেনেছেন তাকি একটু শেয়ার করবেন?
তিনি বললেনঃ ইসলাম খুব চমৎকার ও সুন্দর একটা ধর্ম। মুসলিম অমুসলিম সবার সাথে সম্পর্ক তৈরিতে ইসলাম দারুন দারুন পথ রচনা করে। আল্লাহকে সুন্দর ভাবে ইবাদাত করার খুব ই ক্লিয়ার পথ দেখায়। বাবা-মার, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, পাড়া-প্রতিবেশী......সবার সাথে সদ্ভাব শিখায়। কিন্তু এটা এমন ধর্ম যা তার অনুসারীদের মধ্যে প্রভাব ফেলেনা।
আমি সৌদী, ইসলামের একমাত্র ঘাঁটি, ঘুরে এসে যা পেলাম, তা হলোঃ
তোমরা প্রচুর মিথ্যা বলো।
নানা রকমের চুরির সাথে তোমরা অভ্যস্ত।
সময়ের মূল্য তোমাদের কাছে একদম নেই।
আইন মানতে তো চাওনা, বিশৃংখলা সৃষ্টি কারী তোমরাই বেশি।
নিজের ক্ষতি তো সহ্যই করতে পারোনা, আবার অন্যকে ঠকানোর প্রবনতা খুব বেশি তো্মাদের।
তোমরা খুব বেশী রেইসিস্ট।
অন্যের জিনিষ খাইতে খুব ভালোবাস।
পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বলতে তোমরা কিছু বোঝই না।
ধনীরা তোমাদের কাছে খুব প্রিয়, দরিদ্ররা তোমাদের কাছ থেকে দাস সুলভ ব্যবহার পেয়ে থাকে।
যত টুকু আইন তোমরা প্রয়োগ কর তা হয় লোক বিশেষে।
এরপর ভদ্র লোক একটু থামলেন। স্মিত হেসে বললেনঃ দুঃখিত, মনে হয় তুমি খুব ক্ষেপেছো। থাক আর.........
আমি তার হাত ধরে বললাম, মিস্টার, এই বই টা নিন, একটু পড়ুন। তার হাতে মার্মাডিউক পিকথালের একটা অনুবাদ কুরআন ধরিয়ে দিলাম। তিনি ওটা আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে বললেনঃ আমার কাছে কুরআনের অনেক অনুবাদ আছে। আর দরকার হবে না। তবে আপনার রাজা কে বলবেন, বৃটেইনে এক্সিবেশন করে কোটি কোটি টাকা খরচ না করে ঐ টাকা টা নিজ দেশে ব্যয় করুন। আর মুসলমানদের জীবন থেকে ইসলাম কিভাবে বিকশিত হতে পারে এই রকম একটা প্রজেক্ট তৈরী করে সেখানেই এই খরচ গুলো করে ফেলুন। দেখবেন আজকের এই পচে যাওয়া সমাজের নিঃস্ব লোক গুলো দলে দলে কিভাবে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে।
আমি বললামঃ আপনি কি মুসলিম হয়েছেন?
তিনি বললেনঃ সৌদিতে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিলো ঐ একটিই, কিন্তু আপনাদের দেখার পর ঐ চিন্তা বাদ দিয়েছি............
বিষয়: বিবিধ
২৪৫৪ বার পঠিত, ৯৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এটা আমারও মনে হয়েছে...জনাব মতিউর রহমান আল মাদানী সাহেবের ওয়াজগুলো শুনে..
আমি তো সাউদিতে গাল্ফ ওয়ারের সময় ছিলাম। প্রায় ১২ হাজার বিদেশী সৈন্য ওখানে ইসলাম গ্রহন করে। শুধু জগলুল নাজ্জারের বক্তৃতা তাদের মুসলিম বানায়নি। সৌদিদের ব্যাবহার ও ছিলো হয়ত।
আসলে স্কটল্যান্ডের এই ভদ্রলোকের কপালে হয়ত হিদায়েত নেই, সে জন্য মুসলিম হয়নি। অথবা হতে পারে আল্লাহ তাকে অনেক ভালো মুসলিম বানাবেন, তাই আরো সময় নিচছেন।
আমার এক শাদা ভগ্নিপতি আছেন। আমার ঐ বোন কে বাংলাদেশ থেকে বিয়ে করে আনেন। আমি একবার তার বাসায় যেয়ে ৭দিন ছিলাম। উনিও আমার বাসায় এসে মাঝে মাঝে থেকেছেন। খুব নাম করা মেরিন ইন্জিনিয়র। ইসলাম গ্রহন করেছেন মদীনার য়ানবু' তে থাকা কালীন। আমি যখন ই তাকে নামাজ পড়তে বলি, সে জবাব দেয়, নামাজ তো গরীব ও ফানাটিক রা পড়ে। আমি যখন তর্কে নেমে পড়লাম, ও বললো: দেখ তর্ক করো না। আমাকে সৌদির যে সব ইন্জিনিয়র মুসলিম বানায়েছেন, তারা কেও নামাজ পড়েন না। তারা তোমার চেয়েও কোন অংশে খারাপ নন।
এখন বলেন!! আমাদের উম্মাতের এসব রোগ আল্লাহ যে কবে সারাবেন......
কথা টা ঠিক ই বলেছেন? আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
২০১২ সালে উমরাহ পালনের সুবাদে আমি ২৯ দিন মক্কা-মদিনা-জেদ্দা অবস্থানের সুযোগ হয়েছিল। জেদ্দাতে দু'দিন অবস্থানকালে আমি চেষ্টা করেছিলাম ওখানখার অভ্যন্তরীণ অবস্থা আসলে কোন পর্যায়ের। কিন্তু আমার সে সুযোগ হলো না।
আমরা হয়তো আরেক জন ভাই থেকে বঞ্চিত হলাম।
আল্লাহই ভালো জানেন।
জাজাকাল্লাহু খায়রান।
আমাদের কাছে তা গা সওয়া হয়ে গেছে। এটা শুধূ তাদের নয় আমাদের ও সমস্যা।
তবে আমার দেখা সাউদি আরবে অনাগত দিনে বড় যে সমস্যা হবে তা হল -
১) দুই ভাগ। এক ভাগ হল নামে মুসলিম। মণনে হল পুরো সেকুলার। আরেক ভাগ হল - সত্যিকার দরদী মুসলিম।
২) প্রথম প্রকার সংখ্যাটা বেশী,এবং তারাই অগ্রসর সকল ক্ষেত্রে। এটা পরিকল্পিত ভাবে ই করা হয়েছে।
৩) ২য় প্রকার মানুষ গুলোকে আস্তে আস্তে একেবারে প্রান্তিক সীমায় পৌছানো হয়েছে বা হচ্ছে।
৪) আর্মী সহ সকল গরুত্বপূর্ণ জায়গায় এবং সম্পদের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ এই শ্রেনীর হাতে।
৫) সকল ক্ষেত্রে একটি বিষয় খুবই ভাল ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। আগে আরবী তার পর মুসলিম।
আপনি নিজে একজন বড় আলেম,আপনার অনেক শিক্ষক আছেন,যাদের বক্তৃতা আপনি শোনবেন - বলেন - উম্মাতুল আরাবিয়া আর উম্মাতুল ইসলামীয়া।
বিষয়টা এমন পর্যায় পৌছেছে - স্কুলের বাচ্ছারাও এই সেকুলার জাতিয়তাবাদি চিন্তায় আচ্ছন্ন।সেখানে আগে তাদের কে আরব তার পর অন্য কিছু।
অথচ
আল্লাহর কোরআন বলছে।
কুল্লু উম্মাতুন ওয়াহিদা - ও আনা রাব্বুকুম ফা'বুদুন।
এটা সত্য - প্রতিষ্ঠিত আলেম আইকনরা ও এখন গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে আছেন।দরবারী আলেমদেরকে খামাখা গালি দিয়ে লাভ নেই।
বেশিরভাগ পশ্চিমা মুসলিম দের দেখেছি ইসলাম গ্রহন করেন পড়াশুনা করে। তারা সাধারনত মুসলিমদের আচরন দেখে ইসলাম গ্রহন করেনননা।
@সিকদারর ভাই ঠিক বলেছেন, ঐ ব্যাক্তির কপালে আসলেই ইসলাম নাই তাই ইসলামের নূর তার চোখে পড়েনি।
জাযাকাল্লাহু খায়রান
আল্লাহ ভাল জানেন।
তবে গল্পটির উৎপত্তি সত্য কিংবা মিথ্যা - যার উপরই ভিত্তি করে গড়ে উঠুক না কেন - উল্লেখিত কু অভ্যাসগুলোর বেশ অনেকগুলো করে আমাদের মুসলিমদের মধ্যে বড় প্রকটভাবেই অবস্থান করছে। আপনার এ লিখনী হতে আশা করি আমরা যে ভাইয়েরা ও বোনেরা পড়েছি - তারা সচেতন হব এবং চেষ্টা করবো নিজেদের মধ্য হতে এ এন্টি ইসলামিক বিষয়সমূহ বিতাড়নের নিমিত্তে স্ট্রাগল শুরু করবো।
আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য করুন। আপনাকে ধন্যবাদ।
সবাই আজ আমরা ভালো হলে আমাদের কোন কিছুর অভাব ছিলোনা। দুনিয়া লীড করার মাল মসলা আমাদের হাতেই আছে।
জাযাকাল্লাহু খায়রান
ধন সম্পদ আর ভোগ বিলাসীতায় আক্রান্ত হয়েছে মুসলিম দেশের শাসক এবং এলিট সোসাইটি। অপর দিকে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার কিছু খান্ডাংশ চর্চিত হচ্ছে যাদের কন্ট্রোলে ধন সম্পদের কোন কর্তৃত্ব নেই। আর্থিকভাবে পশ্চাৎমূখীতার কারণে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার চর্চাকারীরাও কোনঠাশা হয়ে আছে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ প্রয়োগের কারণে। এখানে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ব্যাপারটিই একমাত্র কারণ নয়।
বর্তমান সৌদি শাসক ও এলিট সোসাইটির চিন্তা-ধারা ও ভোগ বিলাসীতার অবস্থা দেখলে আৎকে উঠি। কারণ তাদের শাসনাধীনে রয়েছে মুসলিম জাহানের রাজধানী হওয়ার কথা ছিল যে পবিত্র নগরীটি সে দেশের শাসকদের এমন অধঃপতন দেখে মনে খুবই ভয় জাগে।
জানি না কেয়ামত সংগঠিত হওয়ার পূর্বে যে সব আলামতের কথা রাসুলের (সা) সুন্নাহর মধ্যে নির্দেশিত আছে তার কোন নির্দেশণা কিনা।
মুসলমান এলিটদের জীবন যাপন দেখে অমুসলিমরা কোন যুক্তিতে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হবে? ইসলাম নিয়ে পড়া শুনা করে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হওয়ার জন্য প্রয়োজন একাডেকিম অধ্যবসায়। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ চাই সে যে ধর্মের অনুসারীই হোক না কেন একাডেমিক আলোচনা, গবেষণা নিয়ে সময় ব্যয় করার মানসিকতা তার মধ্যে কত পার্সেন্টই বা ক্রিয়াশীল? কিন্তু মানুষের মধ্যে পড়ে শিখার চেয়েও দেখে এবং বাস্তব অবস্থা বুঝে রিয়ালাইজড করার উপযোগিতা বেশী। হয়তো একারণেই মহান আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা)'র জীবনেই উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন পবিত্র কোরআনে।
রাসূল (সা) এর হাদিসেও মুসলমানদের উদ্দেশ্য বার বার তাগেদা দেয়া হয়েছে রাসুল'র সুন্নাতকেই আকড়ে ধরে রাখার জন্য। রাসুলের সুন্নাতকে নিজের জীবনে ধারণ করলে তিনি হবেন দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ উত্তম মানুষদের কাতারভূক্ত। অপরদিকে রাসুলের সুন্নাতের পরিত্যাগকারী হবেন দুনিয়ার নিকৃষ্টতর মানুষরূপি জানোয়ারতুল্য। মুসলিম এলিটদেরই হাতে রয়েছে প্রচার মিডিয়া থেকে শুরু করে অপর জাতিকে নিজের কৃত কর্মকে দেখানোর মত যাবতীয় সব কিছু। এসব এলিটরা এমন কি অর্জন করলেন বা এমন কি কর্ম সাধন করলেন যে, অপর জাতি তাদের দেখে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হবে?
অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আমি এসেছি বক্ষমান ব্লগটিতে সবার পরে। তাই মন্তব্যের ঘরে এর চেয়ে বেশী কিছু লেখা মুনাসেব হবে কিনা আবার!!
এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী আত্মীয় স্বজন বন্ধুদের কাছ থেকে এরা যে কতো খারাপ তা জেনেছি বেশি।
মাঝে মাঝে কিছু ব্যাতিক্রম যে নেই এমন নয়।
পেট্রডলার এদের অমানুষ বানিয়েছে।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন