তুরস্কের ফিৎনাঃ ইবলিসের বাহিনী যেন ঘিরে রেখেছে
লিখেছেন লিখেছেন সালাম আজাদী ০৬ মার্চ, ২০১৪, ০৪:৫১:৩১ রাত
২০০২ সালে এরদোগানের ক্ষমতায় আসার পরে যত গুলো রাজনৈতিক ‘ঝামেলা’ বা সামরিক কিংবা গণ অভ্যুত্থানের চেষ্টা চলেছে, এখনকার চলমান অস্বস্থি মনে হয় সবকিছু কে ম্লান করে দিয়েছে। এরদোগানের মুখের ভাষা, চেহারার ভাঁজ কিংবা মন্ত্রীদের কিছুটা ম্রিয়মানতা তুরস্কের রাজনীতিতে ব্যাপক ঝড়ের দাপট দেখিয়েছে মনে হচ্ছে। এরদোগানের এ কে পার্টি ও ফাতহুল্লাহ গুলেনের ‘হিযমাত’ বড় সংগীন সময়ে একে অপরে বন্ধু হয়ে যায়। এবং এমন এক জোট তৈরী করতে তারা উভয়ে সক্ষম হন, যার সুফল ইসলামের জন্য তুরস্ক কে আরেকবার খিলাফাত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করায়। কিন্তু সে সম্পর্কে এখন মারাত্মক চিড় ধরেছে। এদের অসম মিলন যেমন বিস্ময়কর ছিলো, তেমনি তাজ্জব বিষয় ছিল আরবাকানের বিরুদ্ধে এরদোগানের বিদ্রোহ। এরপর ফাতহুল্লাহর ‘হিযমাত’ বা ‘গুলেন মুভমেন্ট’ এর সাথে এরদোগানের জোটবদ্ধ হওয়াটাকে আমার কাছে আরো অলৌকিক মনে হয়েছে। কারণ তার মেজাজ ও আন্দোলনী চেতনার সাথে গুলেনের চিন্তা অনেকটা সাংঘর্ষিক মনে হয়েছে।
এই ‘গুলেন মুভমেন্ট’ শুরু হয়েছে সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনার মধ্য দিয়ে। প্রথমে তারা দা’ওয়াতি কাজে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে। এরপরে প্রাইভেট স্কুল তৈরিতে নিয়ে আসে বর্তমান বিশ্বে চমক সৃষ্টিকারী এক বিপ্লব। এরপর তারা শুরু করে সমাজ কল্যান মূলক কাজ। এখানে সফলতা পেয়ে তারা ঝাপিয়ে পড়ে ব্যাপক নেট ওয়ার্ক তৈরিতে। শিক্ষা, সমাজ কল্যান, মিডীয়া ও ইনভেস্টমেন্টে তারা আজ অপ্রতিরোধ্য। হাজারো স্কুল কলেজ, বেশ কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মিডীয়া নেট ওয়ার্ক, পত্র পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, রেডিও, সংবাদ সংস্থা, সিনেমা ও নাটকের অনেক গুলো প্রতিষ্ঠান এরা আজ দখলে নিয়েছে। আধুনিক তুরস্কের অর্থের চাকা এখন গুলেনের লোকদের হাতেই চলে।
বিশ্বাস না হলে ইস্তাম্বুলের ফাতিহ কলেজ, ফাতিহ বিশ্ববিদ্যালয়, তাদের হাসপাতাল, ‘যামান’ নামক দৈনিক পত্রিকার সুউচ্চ অফিস ভবন গুলো দেখলে যে কেও বুঝতেই পারে এদের চিন্তা শুধু এরদোগানকে ক্ষমতায় বসানো ছিলো না, ছিলো ক্ষমতায় ভাগাভাগি করার একটা প্রবনতা। কিন্তু দুঃখ লাগছে এরদোগান মনে হয় বিষয়টা নিয়ে ভেবেই দেখেননি কোন দিন।
আমার মনে হয় এরদোগান গুলেনকে বুঝেন নি। কারণ গুলে্নের আন্দোলন ভাবনা আর এরদোগানের ইসলামি রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার দর্শন এক ছিলো না। গুলেন ভাবতেনঃ
১। ‘হিযমাত’ আন্দোলনের মূল কথা হবে ইসলামের আলোকে সমাজ সংস্কার, আর তা হতে হবে পরবর্তি জেনারেশান কে জ্ঞানের আলোয় বিকশিত করে, ভবিষ্যতে তাদের কে সঠিক নেতৃত্বদানের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার মাধ্যমে।
২। রাজনীতির ব্যাপারে তিনি আল্লামা বাদীউজ্জামান নূরসীর বক্তব্য ‘আঊযু বিল্লাহি মিনাশশায়তান ওয়াস সিয়াসাহ’ কে আঁকড়ে থাকবেন। রাজনীতিতে তিনি ঢুকবেন ই না। তবে সম্পর্ক রাখবেন সব দল ও মতের সাথে, থাকবেন সবার কাছাকাছি।
৩। অন্যান্য ধর্মের সাথে গড়ে তুলবেন সখ্যতা, করবেন আন্তধর্ম ডায়লগ। যাতে ইয়াহুদি, খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ সব ধর্মাবলম্বীদের একটা সুন্দর সম্পর্ক বিরাজ করে সারা দুনিয়ায়। তিনি পোপের সাথে দেখা করেছেন, অনেক রাব্বাইদের সাথে মুলাকাত করেছেন, অন্যান্য ধর্মের পন্ডিতদের সাথে তৈরি করেছেন একটা ভালোবাসার বলয়। তিনি মনে করেন এভাবে আন্তঃধর্মের সম্মিলনের মাধ্যমে বর্তমান যুগে মুসলিম নিধন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধ্য মোর্চা গঠন করা যাবে।
৪। পাশ্চত্যের সাথে গুলেন তৈরি করতে চেয়েছেন এক নিবীড় সম্পর্ক। তিনি মনে করেন পাশ্চত্যই হতে পারে ইসলামের বা ইসলামি স্বার্থের রক্ষক। আমেরিকা ও পাশ্চত্যকে সাহায্য করা ইসলাম প্রচারের একটা গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি বলে মনে করেন তিনি। আমার মনে হয় গুলেনের এই নীতি পাশ্চত্যে এত বেশি গ্রহন যোগ্য যে, একে পাশ্চত্য মিডীয়া একটা রৌল মডেল হিসেবে তুলে ধরতে চাচ্ছে। তিনি তুরস্কের পররাস্ট্র নীতির ক্ষেত্রে মনে করেন, আরব দেশ গুলো, কিংবা ইরান থেকে তুরস্কের দৃষ্টি উঠিয়ে নিয়ে কোকেশীয় দেশ পুঞ্জ, সেন্ট্রাল এশিয়ার গণপ্রজাতন্ত্র গুলো, কিংবা বলকান এলাকার রাষ্ট্র গুলোতে রাখা উচিৎ। কারণ এখানে তুরস্কে অভিবাসীদের বিরাট অংশ বসবাস করে, এবং তাদের মাধ্যমে তুরস্কের উন্নয়নের নব দিগন্ত খুলতে পারে।
৫। একটা শক্তিশালী ইসলামি সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্যে সমস্ত বুদ্ধি ও কলা কৌশল ব্যবহার করা উচিৎ। এর জন্য মুসলিমদের উচিৎ আধুনিক টেকনোলজির সমস্ত সুযোগ কাজে লাগানো, মিডীয়ার সর্বোচ্চ ব্যবহার। এবং ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক সার্বিক উন্নয়নে পাশ্চত্যের সমান্তরাল থাকা। এর মাধ্যমে ইসলামি বিশ্বের পেছনে পড়ে থাকার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
৬। গুলেন ইস্রাঈলের গাযযা দখলকে আমলে আনতে চাননা। যেখানে একটা দেশ চলে গেলো, সেখানে একটা শহর বাঁচাতে যাওয়া বোকামি বলে এরদোগান কে গাযযায় সাহায্য বহর পাঠাতে নিষেধ করেন তিনি। কঠোর সমালোচনা করেন ফেলিটোলায় তুরস্কের জাহাজে ইস্রাঈলের আঘাতে কয়েকজন তুর্কির নিহতের ঘটনা কে। এটাকে এরদোগানের বোকামি ও স্বাধীন ইস্রাঈলের সাথে অপ্রয়োজনীয় একটা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া বলে মনে করেন গুলেন।
৭। গুলেনের আন্দোলনের মূল ক্ষেত্র হলো তুরস্ক। তিনি অন্য কোন দেশ বা অঞ্চল নিয়ে ভাবতেই চাননা। অন্যদের কে সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রকে তিনি খুব ই সংকুচিত করতে চান। হাত প্রসারিত করতে চাইলে যেখানে তুর্কিরা বসবাস করে সেই সব ভুখন্ডের মধ্যেই থাকতে চান।
এরদোগান সরকারের সাথে বর্তমানে গুলেনের মতপার্থক্যের কারণঃ
গুলেন রাজনীতি করবেন না, তবে রাজনীতির মাঠে এরদোগানকে সাহায্য করবেন। অপর দিকে এরদোগান ইসলামি আন্দোলন বা ইসলামি রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা এই সব নিয়ে ভাববেন না। এটাই ছিলো তাদের তখন কার জোট বদ্ধতার মূল বিষয়। কিন্তু এখন গুলেন তার আগের যায়গা থেকে কিছুটা যেমন রাজনীতিকতার দিকে এগিয়ে আসতে চাচ্ছেন, তেমনি এরদোগান চাচ্ছেন ধর্ম নিরপেক্ষতার খোলশ থেকে বেরিয়ে এসে ইসলামের যে আন্দোলন তার গুরু আরবাকান সহ শুরু করে ছিলেন সেই দিকে দ্রুত গতিতে এগুতে। তাদের মতপার্থক্যের যে সব কারণ গুলো চোখে পড়ার মত তা হলোঃ
১। বেশ কিছুদিন ধরে গুলেনের প্রভাব খর্ব করার জন্য এরদোগান হিযমাতের প্রতিষ্ঠিত স্কুল, কলেজ ও প্রি ইউনিভার্সি্টি কোর্স সাপ্লাই কারী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা আইনের আওতায় আনতে চাচ্ছেন। সরকারি করণের ঘোষণা দিয়ে প্রকারান্তরে এরদোগান এ গুলোকে গুলেন মুভমেন্ট থেকে আলাদা করারই পথে এগিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করেন গুলেনের লোকেরা। অথচ গুলেনের সবচেয়ে প্রভাব হলো তুরস্কের এই সব স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়।
২। এরদোগান সরকারের আগেই গুলেন তার অনুসারীদের বিভিন্ন সরকারী অফিস আদালাত, পুলিশ, আর্মি, ইন্টেলিজেন্ট ও খুব নাজুক অথচ গুরুত্বপূর্ণ পদে ঢুকিয়ে দেন। এরদোগান যতদিন তাদের সাথে ভালো ব্যাবহার করে আসতেছিলেন, ততদিন কোন সমস্যা ছিলোনা। কিন্তু নানাবিধ নীতিতে এদের সাথে এরদোগান সরকারের মতপার্থক্য মারাত্মক হতে থাকে। ফলে এদেরকে নিয়ে একদিকে এরদোগান শংকিত হয়ে পড়েছেন, অন্যদিকে গুলেন ও তার ছুফিয়ানার গন্ডি ছড়িয়ে কেমন যেন বিদ্রোহের দিকে এগুচ্ছেন। এরদোগান সরকার থেকে তার আস্থা, ভালোবাসা এবং ঐকমত্য উঠিয়ে নিচ্ছেন। শুধু তাই না, প্রত্যাহার করেছেন এরদোগান সরকারে থাকা নিজের লোকদের, নির্দেশ দিয়েছেন এরদোগান সরকারের দূর্নীতি খুঁজে বের করতে। যে সব চৌকস ইন্টেলিজেন্ট অফিসাররা ধর্মনিরপেক্ষ অনিসলামি সরকারের অপরাধ খুঁজে বের করে এরদোগানের হাতে দিয়েছেন, তারাই এখন এরদোগানের লোকদের করাপশানের তালিকা একটার পর একটা বের করতেছেন। গত দুই সপ্তাহের ব্যাবধানে এরদোগানের ছেলের সাথে বলা দুইটা রেকর্ড তারা বের করেছে, যেখানে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের দূর্নীতির কথা এখন বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। এরদোগান নিজে, এবং তার পররাস্ট্রমন্ত্রী একে ধর্মনিরপেক্ষদের ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছেন। এরদোগান এর পরে এত ক্ষেপেছেন যে, গুলেনের আন্দোলন এবং তার লোকদের কে 'রাস্ট্রের ভেতরে গজিয়ে ওঠা আরেক রাস্ট্র' বলে অভিহিত করেছেন, এবং জীবন দিয়ে হলেও একে ধ্বংস করে ফেলার বজ্র কঠিন শপথ নিয়েছেন।
৩। কুর্দিদের সাথে সমঝোতার মাধ্যমের এরদোগান যুগ যুগ ধরে চলা সমস্যার সমাধান করতে চাচ্ছেন। অথচ গুলেন এটা মানতেই পারছেন না। তিনি চাচ্ছেন কুর্দিদের সাথে রাজনৈতিক সমাধান, যেখানে তুরস্কের স্বার্থ প্রাধান্য পাবে।
৪। গুলেনের পাশ্চত্য প্রীতি এবং ইস্রাঈলের প্রতি সন্দেহ জনক কোমলতা তুরস্কের সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে। তারা মনে করছে গুলেন কে এইভাবে চলতে দিলে সরকারি অনেক গোপন ডকুমেন্ট চলে যেতে পারে ইস্রাঈলের কাছে, কিংবা পাশ্চত্যের শত্রু ভাবাপন্নদের কাছে।
৫। গুলেনের অনুসারি রা চাচ্ছেন সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে আরো প্রবেশাধিকার, এবং বিভন্ন পদ। এরদোগান এটা মানতেই পারছেন না। তাছাড়া যে পদ গুলো তারা চান তা দেয়া হলে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে মোটেই সময় লাগবে না। তার কিছু আলামত ইতিমধ্যেই দেখা দিয়েছে। তুরস্কে গত দশ বছরে ছোট বড় কিছু দূর্নীতির রেকর্ড হয়েছে। এ ব্যাপারে ইসলাম বিরোধী শক্তি যেমন খুবই তৎপর, গুলেনের আজ্ঞাবাহীরাও সেগুলো নিয়ে খুব নড়াচড়া শুরু করেছেন। ফলে এরদোগানের সামনে গুলেন বিরোধিতা ছাড়া কোন পথ খোলা নেই।
৬। গুলেনের হাতেই রয়েছে এখন মিডীয়া এবং অর্থনীতির চাকা। তিনি তার এক বক্তৃতায় বলেছেনঃ যখন তোমরা দেখতে পাবে সামনে ফেরাউন আছে, বিরুদ্ধে আছে কারূন, তখন ই বুঝবে তোমরা সঠিক পথে আছো'। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ফেরাউন ও কারূন বলতে গুলেন কাকে বুঝাচ্ছেন তা আর এরদোগানের বুঝতে বাকি নেই। ফলে তিনিও হয়ে উঠেছেন অসহিষ্ণু।
৭। শুধু আমি না, আমার মত অনেকেই ভেবেছেন, এবং বুঝেছেন যে তুরস্কের এই ফিৎনা মূলত বাইরের মারাত্মক ষড়যন্ত্রের একটা অংশ। তবে দুঃখ হলো সেই ষড়যন্ত্রের বলির পাঠা হচ্ছে ইসলামের কিছু সেবক, এবং ব্যবহৃত হচ্ছে ইসলামেরই আরেকদল সেবক। আমি মনে করি তুরস্কের এই ফিৎনার পেছনে শয়তানি বাহিনীর রয়েছে ভয়ংকর চক্রান্ত। কারণ দুইটিঃ
১। এরদোগানে তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষতার যুপকাষ্ঠ থেকে রক্ষা করেছেন। ৪০ বিলিয়ন ডলারের ঋণে জর্জরিত তুরস্ককে এরদোগান আজ ঋন মুক্ত করেছেন। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাবের অনুমতি দিয়েছেন তিনি। পাবলিক প্লেসে মদ খাওয়ার নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। উসমানীয় খিলাফতের সমস্ত ঐতিহাসিক স্থান গুলোকে নবনির্মান করে খিলাফতি চেতনা কে চোখের সামনে মূর্তমান করেছেন। মিশরের ইখওয়ানকে সার্বিক ভাবে সমর্থণ করেছেন।আরব বিশ্বের সাথে গড়ে তুলেছেন ভাল সম্পর্ক। সারা দুনিয়ায় মুসলিম নির্যাতনে নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এতে মুসলিম বিশ্ব তাকে ভালো মনে করলেও পাশ্চত্যের চোখে যেন ধুলো পড়ার মতই যন্ত্রণা শুরু হয়েছে।
২। আমেরিকা ও ইস্রাঈলের সাথে মোটামুটি সম্পর্ক রেখে যে তুরস্ক সামনে যাচ্ছিলো। সেই তুরস্ক কয়েকটি ব্যপারে ইস্রাঈলের শত্রুর ভূমিকা নিয়েছে, এবং এই জন্যই আমেরিকাও গিয়েছে বিগড়ে। ফলে তাদের আস্থা ভাজন গুলেন কে হয়ত ব্যবহার করা হচ্ছে। এরদোগান মূলত এই কথাটাই তুরস্ক বাসীদের বুঝানোর চেষ্টা করছেন। জানিনা তিনি কতটুকু সফল হবেন এতে। মূলত তার হাতে শক্তি আছে, কিন্তু মিডীয়া তো তার হাতে নেই ই।
সামনে কি কি ঘটতে পারেঃ
১। এরদোগান শক্ত হাতে হয়ত সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। এগিয়ে নিতে পারবেন তার মিশনকে। আর দেশের ২০% গুলেনের অনুসারিরা হয়ত এরদোগানের সমর্থনে আবার এগিয়ে আসবেন। কারন এরদোগান কে আগে সমর্থন করে তারা ঠকে নি। আমার আশা, এইটাই হোক।
২। আগামি বছরের পার্লামেন্ট ইলেকশানে এরদোগান হয়ত হারতে পারেন। সে ক্ষেত্রে হয়ত তার সরকারের সাফল্য ম্লান করার অনেক কিছুই করা হতে পারে। তবে ইসলাম পন্থীদের যত কাছে টানতে পারবেন এরদোগান, ততই হবে ইসলামের উপকার। এই জন্য এরদোগানের পজিশানকে ছাড়তে হতে পারে। সেই সেক্রিফাইস তিনি করবেন কিনা জানিনা।
৩। বরাবরের মত আর্মি ক্যু ও হতে পারে। আর তাতে তুরস্কে ইসলামের অবস্থা হয়ে যেতে পারে আগের মত। কারণ এরদোগান আর্মিতে শুদ্ধি আনা সত্বেও সেখানে ধর্মনিরপেক্ষদের বিরাট বিরাট ঘুঁটি এখনো রয়ে গেছে।
তবে আমি আল্লাহর সাহায্য সমস্ত ষড়যন্ত্র শেষ করে যে দিতে পারে তা শুধু মনে প্রাণে বিশ্বাস করিনে, সব সময় পড়িঃ এবং কাফেরেরা চক্রান্ত করেছে আর আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ হচ্ছেন সর্বোত্তম কুশলী।
বিষয়: বিবিধ
৫৮৬২ বার পঠিত, ৫৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর আপানার মাধ্যমে আমরা বিষয়টির গভীরের খব্র জানতে পারছি বলে আপনাকে ধন্যবাদ। এরকম ধারাবাহিক ভাবে আমাদেরকে আপডেটেড করবেন এমন আশা রাখতে পারি কি?
জাযাকাল্লাহ।
নিয়মিত সর্বশেষ খবরা খবর নিয়ে লিখে যাওয়ার তাওফীক প্রার্থনা করছি আল্লাহর কাছে স্যারের জন্য।
খুব উপকৃত হলাম, স্বস্তি পেলাম,
আমার বুঝ আপনার গত পোস্টের সাথে যতসামান্য পার্থক্য হওয়াতে চিন্তিত হয়েছিলাম-
এবারে তা পরিস্কার করেই বলেছেন
৭। শুধু আমি না, আমার মত অনেকেই ভেবেছেন, এবং বুঝেছেন যে তুরস্কের এই ফিতনা মূলত বাইরের মারাত্মক ষড়যন্ত্রের একটা অংশ। তবে দুঃখ হলো সেই ষড়যন্ত্রের বলির পাঠা হচ্ছে ইসলামের কিছু সেবক, এবং ব্যবহৃত হচ্ছে ইসলামেরই আরেকদল সেবক। আমি মনে করি তুরস্কের এই ফিতনার পেছনে শয়তানি বাহিনীর রয়েছে ভয়ংকর চক্রান্ত। কারণ দুইটিঃ
১। এরদোগানে তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষতার যুপকাষ্ঠ থেকে রক্ষা করেছেন। ৪০ বিলিয়ন ডলারের ঋণে জর্জরিত তুরস্ককে এরদোগান আজ ঋন মুক্ত করেছেন... সারা দুনিয়ায় মুসলিম নির্যাতনে নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এতে মুসলিম বিশ্ব তাকে ভালো মনে করলেও পাশ্চত্যের চোখে যেন ধুলো পড়ার মতই যন্ত্রণা শুরু হয়েছে।
২। আমেরিকা ও ইস্রাঈলের সাথে মোটামুটি সম্পর্ক রেখে যে তুরস্ক সামনে যাচ্ছিলো। সেই তুরস্ক কয়েকটি ব্যপারে ইস্রাঈলের শত্রুর ভূমিকা নিয়েছে, এবং এই জন্যই আমেরিকাও গিয়েছে বিগড়ে। ফলে [u]তাদের আস্থা ভাজন গুলেন কে হয়ত ব্যবহার করা হচ্ছে। এরদোগান মূলত এই কথাটাই তুরস্ক বাসীদের বুঝানোর চেষ্টা করছেন। [/u]
*****
ইসলামের মূলধারা কখনো রাজনীতিবিমুখ হতে পারেনা- এ মূল কথাটি মনে রাখলা শত্রু-মিত্র চিনতে সহজ হয়!!
আবারো ধন্যবাদ, আল্লাহতায়ালা আপনার কলমকে আরো গতিশীল ও সৃষ্টিশীল করুন
সামনে আরো জানার প্রত্যাশায়..
ধন্যবাদ।
আপনি (আজাদী সাহবে) যদি কাফিরদের সাথে আন্তসহযোগীতার বিষয়টিকে গ্রহণীয় মনে করে থাকেন তাহলে এই ব্যাপারে ভবিষ্যতে একটি পোস্টের আশা করছি।
==============
তবে যে ক্ষতি হবার তা হবেই।
আমি বেশ কিছুদিন থেকে চেষ্টা করছি গুলেন আন্দোলন সম্পর্কে জানার কোন সুযোগ করতে পারছিলাম না।
যদি সম্ভব হয় তাহলে এই আন্দোলনের একটি পোস্টমর্টেম করা যায় কি না -
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
May Allah(swt) unite all muslims across the world!
নুরসি মুভমেন্ট এর শেষের দিক থেকে এবং গুলেন মুভমেন্টের পুরো সময়টাই কিন্তু সরকারী আনুকুল্য পেয়েছে। এর সুনির্দিষ্ট কারণ আছে। ৬০ এর দশক থেকে কমিউনিষ্ট আন্দোলন যখন সবদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল, তখন টার্কিও এই ঝুঁকিতে ছিল। বিশেষত: আর্থসামজিক ভাবে দুর্বল গ্রাম এলাকায় এর প্রসার ঘটছিল দ্রুত। কমিউনিজমের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকরী অস্ত্র হচ্ছে ইসলাম। সেকারণেই, শাষকগোষ্ঠি/পাশ্চাত্যশক্তি চরম সেক্যুলার হওয়া সত্বেও নুরসি আর গুলেন আন্দোলনের প্রসার হতে দিয়েছে সেই সময়টাতে, বিশেষত: টারকির মফস্বল এলাকাগুলোতেও। নুরসি মুভমেন্ট ৫০এর দশক পর্যন্ত যেরকম বিরোধিতার সন্মুখীন হয়েছে, পরে কিন্তু আর ততটা হয়নি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন