তুর্কি পার্লামেন্টে একজনের ভাঙলো নাক, আরেকজনের আঙ্গুল, খুদে খিলাফতের পতন ধ্বনি!!!
লিখেছেন লিখেছেন সালাম আজাদী ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৪:১৮:৫৮ বিকাল
হাসবো না কাঁদবো বুঝছিনা!! তবে হৃদয়ে আমার রক্ত ক্ষরণ। কাল তুর্কি পার্লামেন্টে ঘটে গেলো তুলকালাম ঘটনা। কারণ হলো জুডিসিয়ারি আগের মত স্বাধীন থাকবে, নাকি আইন মন্ত্রণালয়ের আন্ডারে আসবে এই নিয়ে এক ডিবেইট। ব্যাপারটা হাতাহাতি, মারামারি, ফাটাফাটি এবং শেষ তক ভাংগাভাংগিতে রূপান্তরিত হলো।Click this link আর এই মারামারিটা হয়েছে সরকারি দলের খুব ঘনিষ্ট এক মিত্র দলের সাথে, যারা এরদোগানকে সাহায্য করেছে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ভাবে, এবং ভালো মন নিয়ে।
ঘটনা টা একটু তলিয়ে বলি। মুহাম্মাদ ফাতহুল্লাহ গুলেন হলেন ৭২ বছরের এক জন শায়খ। আল্লামা সাঈদ নুরসীর ছাত্র এবং খুবই প্রভাবশালী ইসলামি পন্ডিত। ৬০ টার ও বেশি বই লিখেছেন, এবং আধুনিক তুরস্ক কে যারা ইসলামাইজড করেছেন তাদের অন্যতম পথিকৃত। তিনি তার আন্দোলনের নাম দিয়েছেন ‘হিযমাত’। গুলেন মুভমেন্ট নামে যেটা এখন পরিচিতি পাচ্ছে। ইসলামি আন্দোলনের একজন সিপাহসালার হলেও কয়েকটা জিনিষ তিনি পছন্দ করেন না।
১। তিনি খুব ই রাজনীতি বিমুখ। ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তিনি ভারতের মুজাদ্দিদ আলফে সানি শায়খ আহমাদ ফারুকির নীতির অনুসারি। তাহলো, ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নিজে সরকার প্রধান বা সরকার গঠনের দিকে না যেয়ে সরকারের মধ্যে ঢুকে পড়তে হবে। এবং সরকারী লোকদের ইসলাম প্রিয় বানানোর মাধ্যমে দেশকে ইসলামি করণ করতে হবে।
এই নীতি বর্তমান যুগে দুটি ইসলামি আন্দোলন গ্রহন করেছে, একটা হলো তাবলীগ। আরেকটা হলো গুলেন মুভমেন্ট। গুলেন কিনতু তাবলীগের চেয়ে অনেক ধাপ এগিয়ে গেছে। আজ তুরস্কে প্রাইমারী, সেকেন্ডারি এবং প্রি-ইউনিভার্সিটী স্কুল গুলো এদের হাতে। হাজার হাজার স্কুল যেমন তুরস্কের অভ্যন্তরে, সারা দুনিয়াতেই তেমনি তারা প্রতিষ্ঠিত করেছে কোয়ালিটি এডুকেশানের রৌল মডেল হিসেবে ৫০০ টি জননন্দিত স্কুল ও কলেজ। ‘তার্কিশ হোপ’ স্কুলের নাম মনে হয় আপনারা অনেকেই শুনে থাকবেন। তুরস্কে ভালো স্কুল বলতেই আসলে তাদের স্কুল কেই বুঝানো হয়।
এরপর তার নযর পড়ে মিডীয়া, জার্ণালিজম ও গ্রন্থ প্রনয়নের দিকে। গঠন করেন the Journalists and Writers Foundation ১৯৯৪ এ এবং তুরস্কের সেরা পত্র পত্রিকা সমূহ, সেরা টিভি চ্যানেল গুলো, শতের কাছে রেডিও, সেরা জার্ণাল ও ভালো লেখা এখন বলা যায় তাদের হাতেই। বিশ্বাস না হলে দৈনিক ‘যামান’ Samanyolu TV এ একটু চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। সেরা বুদ্ধিজীবিরা এখন গুলেনের শুধু ভক্ত না, তার অংগুলি হেলনেই এখন তারা চলাফেরা করেন। হারুন ইয়াহয়া কে মনে হয় আপনারা চেনেন।
এরপর তিনি মুখ ফিরান সেনা বাহিনির দিকে। বাছাই করা লোকদের খুবই সন্তর্পনে সেখানে ঢুকায়ে দেন তিনি। এই যে রজব তাইয়েব এরদোগানের বিরুদ্ধে কয়েকটি সেনাবিদ্রোহের খবর ভিডিও অডিও সহ কারা সরবরাহ করেছে জানেন?? এরা তারাই, যারা ফাতহুল্লাহর হাতে বায়ত গ্রহন করেছেন এবং আজ সেনা বাহিনীর শীর্ষে পৌঁছে গেছেন।
তিনি নযর দেন পুলিস বাহিনির দিকে। এমন তুখোড় কিছু পুলিশ তিনি উপহার দেন, যারা অত্যন্ত কৌশলেই তুরস্ককে ইসলামে প্রত্যাবর্তন করার সহকারী শক্তিতে পরিনত হয়েছে। সত্যি কথা বলতে কি, এদেরই একটা অংশকে এরদোগান গেল সপ্তাহে স্যাক করেছেন।
তিনি নযর দেন ব্যবসা বানিজ্যের দিকে। এবং তার লোকদের অর্থনৈতিক সবালম্বি হবার শুধু তাকিদ তিনি দেন না, প্রতিটি ভালো ভালো কোম্পানি শুরু হলে তিনি স্বশরীরে যেয়ে দুয়া করে আসেন। আর কেঁদে কেঁদে এমন মন কাড়া দুয়া তিনি করেন, বরকত না এসে পারেনা। তিনি গঠন করেন Turkish Confederation of Businessmen and Industrialists (TUSKON) যার মধ্যে রয়েছে শিল্প কারখানা, ব্যাঙ্ক বীমা এবং আন্তর্জাতিক বিজেনেস। Bank Asya এর মত ব্যাংক এখন তাদের হাতে।Click this link
তার সবচেয়ে সফল প্রোজেক্টের একটা হলো তুরস্কের জুডিসিয়ারিতে নিজের গড়া কিছু লোক ঢুকানো। ইদানিং এরদোগান বুঝিয়ে দিচ্ছেন ফাতহুল্লাহ সেখানেও সফল হয়েছেন। এবং গোটা জুডীসিয়ারিতে তার একটা প্রভাব বলয় তৈরিও হয়েছে।
২। তিনি খুব জেনে শুনেই পাশ্চাত্য প্রভাবের বলয়ের মধ্যেই থাকতে চান। এবং এদের সাথে যুদ্ধ করে বা এদের বাইরে যেয়ে সময় নষ্ট করে ইসলামের উন্নয়নে বাঁধা সৃষ্টি করার পক্ষপাতি তিনি নন। তিনি ভূতপূর্ব তুরস্ক সরকারের অত্যাচার থেকে পালিয়ে যেয়ে আমেরিকায় থাকেন। তিনি মনে করেন ইসরায়েলের হাতে আছে সব ধরণের ক্ষমতা, ও সেই জন্য আসা অপ্রতিরোধ্য দাম্ভিকতা, এবং আমেরিকা হলো সে গুলো প্রকাশের রাজনৈতিক টুল। কাজেই এদের বাইরে যেয়ে তুরস্ক ইসলামের দিকে এগোতে তো পারবেই না, বরং তাদের বিরুদ্ধে লড়তে যেয়ে সেখানে কাজের কাজ কিছুই হবেনা। তাই তিনি গাযায় ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে তুরস্কের অপ্রয়োজনীয় বীরত্ব দেখানোর বিরধিতা করেছেন। সমালোচনা করেছেন সিরিয়াতে তুরস্কের অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয় নাক গোলানোর।
৩। তিনি ইসলামি আন্দোলনে রক্তপাত পছন্দ করেন না। যতক্ষন পারা যায় কনফ্লিক্ট পরিহার কর, এটাই হলো তার নীতি। তিনি সুফিজম কে মনে করেন ব্যক্তির মানসিক জগত কে সুন্দর করার সেরা উপায়, কিন্তু বাইরের জগতে তার প্রভাবে নিজকে দুনিয়া থেকে গুটিয়ে রাখা ইসলামের শিক্ষা নয় বলে তিনি মনে করেন। তিনি ধর্মহীন সেক্যুলার জীবন ধারার একনাম্বার শত্রু, কিন্তু যে সেক্যুলারিজম সকল ধর্মকে স্বীকৃতি দেয় তার তিনি আজীবন ভক্ত। ইসলামি গোষ্ঠি চিন্তা তিনি এক্কেবারে শুনতেই পারেন না। তাই যে সব মুভমেন্ট ইসলাম পন্থীদের বিভক্ত করেছে, তার থেকে তিনি অনেক দূরে থেকেছেন।
এই নীতির কারণে তিনি নাজমুদ্দিন আরবাকান কে পছন্দ করতেন না। বলতেন ‘ওর মন আর আমার মন মোটেই এক হচ্ছেনা। ও শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতা চায়, আমি চাই জনগনের শক্তি’। তিনি বলতেন, ‘নাজমুদ্দিনের লক্ষ্য ইসলাম হলেও যে পথে সে যাচ্ছে, তা আমার পছন্দ না, এতে তুরকীরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়বে’। তবে রজব তাইয়িব এরদোগান, গুল এই ধরণের যুবক গ্রুপকে তিনি খুব সহজে আরবাকান থেকে আলাদা করতে সমর্থ হন। তিনি ধর্মীয় ভাবের সাথে সকল মত ও পথের লোকদের কে এক করে নিয়ে তুরস্ক গঠনের প্রয়াসের দিকে এই গ্রুপের নেতাদের চ্যানেল আউট করেন।
৪। তিনি খৃষ্টান, ইয়াহুদি, হিন্দু বৌদ্ধ তথা সমস্ত ধর্মাবলম্বীদের সাথে সহাবস্থানে বিশ্বাসি। তিনি প্রথম মুসলিম ইমাম, যিনি রোমে যেয়ে পোপের সাথে দেখা করে আন্তঃধর্ম ডায়ালগের ব্যবস্থা করেন। ইয়াহুদিদের সাথে অযথা টেনশানের তিনি খুব বিরোধী। তবে সব কিছু করতে যেয়ে তিনি আন্তর্জাতিকার চেয়ে স্থানীয় তুরস্ক নিয়ে ভাবেন বেশি। ফলে আরবাকানের জি-৭, ইসলামী কমন মার্কেট ইত্যাদী আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ সমূহের কঠোর বিরোধিতা করেছেন তিনি। একই ভাবে বিরোধিতা করেছেন এরদোগানের অতি আন্তর্জাতিকতা।
দৃশ্যতঃ মনে হচ্ছে এরদোগানের বহিরশত্রুর বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ শেষ হয়ে গেছে।তার স্ট্রাগল মনে হচ্ছে এখন তুরস্কের পান্ডব সেক্যুলারের বিরুদ্ধে আর নেই। তিনি এখন বলছেনঃ ‘আমি এখন সরকারের প্যারালাল আরেক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছি।যতই পালিয়ে থাকুক আর গা ঢাকা দিক এই সংগঠন কে আমি শেষ করে ছাড়বোই’। এটা কিন্তু তিনি গুলেন মুভমেন্ট ‘হিযমাত’ কেই বুঝিয়েছেন। Click this link
আসলে আল্লামা ফাতহুল্লাহর মুভমেন্টের সাথে এরদোগান সরকারের মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। এবং এর ই একটা রূপ কালকে আপনারা দেখলেন। ফাতহুল্লাহর সমর্থকের নাক ভেঙ্গে দিয়েছে এ কে পার্টির এরদোগানের লোকেরা, আর এরদোগানের দলের এক এম পির আঙ্গুল ভেঙ্গে দিয়েছে আল্লামা ফাতহুল্লার নির্বিবাদি (?) সাংসদেরা। আর এরদোগানের খলিফা হওয়ার চিন্তাটা আপাতত যেন শেষ হয়ে যাচ্ছে, পতনের মুখে পড়তে যাচ্ছে তুরস্কের খুদে খিলাফাত।আল্লাহ যেন তাদেরকেই ডেকে বলছেনঃ
وَأَطِيعُوا اللَّـهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ ۖ وَاصْبِرُوا ۚ إِنَّ اللَّـهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
আর আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ মান্য কর এবং তাঁর রসূলের। তাছাড়া তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হইও না। যদি তা কর, তবে তোমরা ব্যর্থ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা রয়েছেন ধৈর্য্যশীলদের সাথে। (আনফালঃ৪৬)
বিষয়: বিবিধ
৬১৬২ বার পঠিত, ৬১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রথমে বলে নেই আপনি যে- ‘বর্তমান যুগে দুটি ইসলামি আন্দোলন গ্রহন করেছে, একটা হলো তাবলীগ। আরেকটা হলো গুলেন মুভমেন্ট’। আমার দৃষ্টিতে কথাটি শতভাগ ভুল। কারণ তাবলিগ বর্তমান ইসলামি আন্দোলনের জন্য কোন অবদান রাখছেনা প্রতিমান হয়। গুলেন আন্দোলনকে কিছুটা মিসরের ইখওয়ানের সাথে তুলনা করতে পারেন। ফেতুল্লাহ গুলনান ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বিশ্বের প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক বিষয়ের লেখকদের প্রথম ১০০ জনের অন্যতম ব্যক্তি। তিনি শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, বিচারবিভাগ, শাসনবিভাগ, সামরিক বাহিনী, মিডিয়া, শিল্পকলা ও ব্যবসা সর্বত্রই সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে নিজে নিজে এর প্রতি সম্পৃক্ত ছিলেন। সেখানে তাবলিগের বিষয়টি তো নস্যি! তারা সমাজ সংস্কারমূলক কি করেছে। শুধু ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছে যুগ যুগ ধরে। তবে তাদের এই দাওয়াতি কাজকে খাট করে দেখলে হবেনা কিন্তু।
২০০৭ সালে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক শিক্ষা কেন্দ্রের উদ্যোগে গুলান আন্দোলন নিয়ে একটি কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। এই সম্মেলনে তুরস্কের প্রেক্ষাপটে আন্দোলনের ইতিবাচক দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। এর পরে ২০০৯ সালেও প্রায় ৮ মাস প্রস্তুতি নিয়ে আরো বিশালভাবে কনফারেন্স করা হয়। সালটি মনে নেই ১৯ থেকে ২১ অক্টোবর কায়রোর আরব লিগ ভবনে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় তখন ২০ টি দেশের এক হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি এতে অংশ নেন। সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল সংস্কার এবং মুসলিম বিশ্বের ভবিষ্যৎ। শেষ দু’দিনের মূল আলোচনা ছিল তুরস্কের গুলান আন্দোলন এবং মুসলিম বিশ্বের একটি সামগ্রিক সংস্কার নিয়ে। আচ্ছা বিস্তারিত যাচ্ছিনা আমি এ নিয়ে একটি পোস্ট দিব ভাবছি।
তবে কথা হল এরদুগান+গুল এর লোকদের এভাবে মারামারি করা ঠিক হয়নি। কারণ ফেতুল্লা গুলানের বক্তব্য ছিল- ‘মহ্ত্ত্ব দ্বারা হৃদয় জয় কর। খারাপকে খারাপ দিয়ে উত্তর দিয়ে দুর্বলতা প্রকাশ করো না। একে ভাল দ্বারা উত্তরর দিয়েই উত্তরণ সম্ভব। যারা মানব কল্যাণে নিয়োজিত তারা জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে অন্যের মঙ্গল কামনায় থাকে’। তিনি রাজনৈতিক ময়দান দখলের চেয়ে মানুষের চিন্তার জগৎ দখল করার সার্থকতা অনেক বেশি বলে বিবেচনা করতেন। তাহলে কেন তার দল কিলাকিলিতে গেলেন আমার মাথায় কেস করছেনা। খুব কষ্ট পাচ্ছি। কথা হচ্ছে একটি সামগ্রিক পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে এই গুলান আন্দোলন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সব শেষ কথা হল আপনি অনেক সুন্দর লেখছেন। অনেক কিছু জানতে পারলাম। আল্লাহ আপনার নেক হায়াত দান করুন। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি দিয়ে দেখবেন। আল্লাহাফেজ।
আমার যতটুকু বুঝে আসে তাতে এখানেও তৃতীয়শক্তির অনেক শ্রম ও শক্তি কাজ করেছে/করছে!
রাজনীতিবিমুখ প্রাকটিসিং ইসলাম ও রাষ্ট্রশক্তি অর্জনের প্রাকটিসিং ইসলাম এ দুয়ের সহাবস্থান শেষ পর্যন্ত টিকেনা- এটাই ইতিহাস!
ইসলামবিরোধী তৃতীয়শক্তি রাজনীতিবিমুখ পক্ষকে গ্রাস করে ফেলে; রাজনীতিবিমুখতার কারণে এ ফাঁদটা তাঁরা বুঝে উঠতা পারেননা!!
এবং রাজনীতিবিমুখ প্রাকটিসিং ইসলাম পরিণতির দিক থেকে ইসলামের রাষ্ট্রশক্তি অর্জনের বিপরীতে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়!
কিম্বা ঘুরিয়ে বললে-
রাজনীতিবিমুখ প্রাকটিসিং ইসলাম রাষ্ট্রশক্তি ইসলামের শত্রুদের হাতিয়ারে পরিণত হতে বাধ্য হয়!
কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ধার্মিক হলেও অধঃস্তন্দের ধর্মচর্চার চেয়ে ইসলামের সুন্দর বিষয়ে আকৃষ্ট করান যে কারনে ততোটা আনুগত্যশীল কর্মীবাহিনী গড়ে ওঠেনি।
..তারা মিক্সড ভাবে বড় হয়।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ধার্মিক হলেও অধঃস্তন্দের ধর্মচর্চার চেয়ে ইসলামের সুন্দর বিষয়ে আকৃষ্ট করান যে কারনে ততোটা আনুগত্যশীল কর্মীবাহিনী গড়ে ওঠেনি।
ঠিক এ জায়গাটাতেই ইসলামের প্রতিপক্ষ জাল পাতে [একে "তৃতীয় পক্ষ" না হয় না-ই বললাম]
একটা ইস্যু তৈরী করতে পারলেই এসব "ধর্মপ্রাণ" "আনুগত্যের শিকলবিহীন" মানুষগুলো নিজের অজান্তেই খুব ইখলাসের সাথে প্রতিপক্ষাএর ফাঁদে পা দেয়! যখন হুঁশ ফেরে ততক্ষণে লাটাই অন্যের হাতে!!
মিশরে সালাফী নূর পার্টির ভূমিকা একই ছকে বিবেচনা করা যাতে পারে!!
[অ.ট.: আমার ক্ষুদ্র মস্তিস্কের ভাবনা আপনাদের সামনে এভাবে বলাটা বেমানান, তবুও বলে ফেলি যেন ভুলটা শুধরে নিতে সুযোগ পাই]
শেষের ১৭নং মন্তব্যটা মুছে দিলেই ভালো হয়!
অথবা
রাজনীতির ময়দান থেকে নির্বাসিত হয়!
আল্লামা বদিউজ্জামান নুরসীর চিন্তা ও ফিলোসফীর প্রভাব কি শুধু ড. ফাতহুল্লাহ গুলেন এবং তার দলের উপর ছিল? নাকি মরহুম নাজমুদ্দিন আরবাকান এবং তার শিষ্যদের মধ্যেও ছিল তা বুঝার সুযোগ হয়নি কখনো।
তবে স্যারের আজকের এই লেখাটি থেকে বাংলাদেশে যারা ইসলামের রাজনৈতিক উত্থান বলেন অথবা পূণর্জাগরণ যে নামেই বলি না কেন- কামনা করেন তাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিখার ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর বিশাল সুযোগ রয়েছে। তুর্কি বুদ্ধিজীবিরা যেভাবে চিন্তা, গবেষণা ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে নিজ জাতিকে গঠন করতে পেরেছেন তা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এদেশীয় চিন্তাবিদরা তার ধারে কাছেও যেতে পারেনি। কেন পারেনি তাও চিন্তা ও গবেষণা করা উচিত। কিন্তু যারা এ বিষয়টি নিয়ে সামান্য হা হুতাশ করেছে তাদেরকে অনেক সময় বাঁকা চোখে দেখার একটি অভিযোগ ইদানিং বেশ সমর্থন পাচ্ছেন উদীয়মান নবীনদের মাঝে। এখানো সেই বাঁকা চোখকে সোজা করার কোন আগ্রহ নেই।
বর্তমান তুরুস্কের অবস্থার আলোকে বাংলাদেশর পরিস্থিতির তুলনা করা হয় তবে আমাদের দেশে ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের উপর চলমান দমন অভিযানের পটভূমি এবং ইসলামপন্থীদের কোন কোন দূর্বলতার সুযোগ কাজে লাগাতে পেরেছে ইসলামের রাজনৈতিক উত্থানের বিনাশকামীরা তা অনেকটা রিয়েলাইজড করা সহজ হবে। বর্তমানে শুধু ইসলাম বিনাশকারীদের দোষারোপ এবং তাদেরকে ডিফেন্সিভ কায়দায় মোকাবিলা করার রক্ত গরম মার্কা আত্মঘাতি চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে মুক্ত হওয়ার একটা যৌক্তিক ব্যাখ্যাও হয়তো পেয়ে যেতে পারে মিশর ও তুরস্কের বিশেষ করে তুরুস্কের অবস্থা থেকে দরদের সাথে শিক্ষা গ্রহণ করার মানসিকাতায় পাঠ করি।
স্যারকে অনেক অনেক ধন্যবাদ একটি সুন্দর ব্লগ উপহার দেয়ার জন্য।
আমি বিকৃত বলবো না। তবে তথ্যের যা গোলমাল হয় এই আর কি?
ফাতহুল্লার নির্বিবাদি সাংসদেরা।
আমার মনে হয় - আরেকটু সাবধান হওয়া জরুরী ছিল।
ফতহুল্লাহ গুলেন যেভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে তা সবখানে প্রযোজ্য হয়না। যেখানে মোটামুটি উদার গনতন্ত্র আছে সেখানে সম্ভব। এমনকি আমার ধারনা এভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইংল্যান্ড এও ইসলামি শিক্ষা ও অর্থনিতিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে বা মিসরের মত দেশে এগুলি সম্ভব নয়। কারন সামান্যতম ইসলামি ভাব থাকলেই তাকে আক্রমন করা হচ্ছে এসব দেশে। তাই নাজিমুদ্দিন আরবাকান এবং তার উত্তরসুরি হিসেবে এরদুগান সরকারে প্রভাব বিস্তারের যে কেীশল নিয়েছিলেন তাও ব্যর্থ হয়নি। খেয়াল করুন তুরুষ্কে মিল্লি সালামত যখন আরবাকানের নেতৃত্বে কোয়ালিশন সরকারের অংশিদার হয় নব্বই সালের দিকে তখন থেকেই কিন্তু ফতউল্লাহ গুলেন এর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি স্বিকৃতি পায় এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে সুবিধা লাভ করে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি বর্তমান বাংলাদেশে সরকারের অনুসারিরা ছাড়া ব্যবসায় সাফল্য লাভ অতি কঠিন। সুতারাং আমার মনে হয় রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের চেষ্টা ভুল কিছু নয়। তবে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক আধিপত্য মুক্ত আন্দোলন গড়ে তুলা উচিত। আর বর্তমানে যে আইন নিয়ে গুলেন মুভমেন্ট এর সদস্যরা বিরোধিতা করছেন সেটা কিন্তু তুরুস্কের জন্য প্রয়োজনিয়। কারন সেখানে একধরনের বিচারবিভাগিয় এক নায়কত্ব বিদ্যমান। আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে দেখা যাচ্ছে অনির্বাচিত বিচারপতিগন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সিদ্ধানতকে অবৈধ বলছেন। আইন এর দিক দিয়ে ঠিক হলেও তা কতটা নৈতিক দিক দিয়ে ঠিক তা চিন্তার বিষয়।
মিশরে ইখওয়ান শান্তিপূর্ণ ভাবে কাজ করে গত ২০ বছরে অনেক এগিয়ে গেছে। নির্বাচনের পর থেকে তাদের আগের নীতিতে ফিরে যাওয়া ছিলো মহা অন্যায়। ইখওয়ানের ভেতর দুই গ্রুপ হওয়ার পেছনে এটাও ছিলো আরেক কারন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার সুচিন্তিত পরামর্শের জন্য।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ধার্মিক হলেও অধঃস্তন্দের ধর্মচর্চার চেয়ে ইসলামের সুন্দর বিষয়ে আকৃষ্ট করান যে কারনে ততোটা আনুগত্যশীল কর্মীবাহিনী গড়ে ওঠেনি।
ঠিক এ জায়গাটাতেই ইসলামের প্রতিপক্ষ জাল পাতে [একে "তৃতীয় পক্ষ" না হয় না-ই বললাম]
একটা ইস্যু তৈরী করতে পারলেই এসব "ধর্মপ্রাণ" "আনুগত্যের শিকলবিহীন" মানুষগুলো নিজের অজান্তেই খুব ইখলাসের সাথে প্রতিপক্ষাএর ফাঁদে পা দেয়! যখন হুঁশ ফেরে ততক্ষণে লাটাই অন্যের হাতে!!
মিশরে সালাফী নূর পার্টির ভূমিকা একই ছকে বিবেচনা করা যাতে পারে!!
[অ.ট.: আমার ক্ষুদ্র মস্তিস্কের ভাবনা আপনাদের সামনে এভাবে বলাটা বেমানান, তবুও বলে ফেলি যেন ভুলটা শুধরে নিতে সুযোগ পাই]
অনেক মন্তব্যকারীর মন্তব্য হতে হালকা করে হলেও একটি মন্তব্য উঠে এসেছে, যা কিনা আমাদের দেশের কর্মীদের বেলায় প্রযোজ্য, আর তা হলো, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ধর্মভীরু হলেও নবীনদের মাঝে নানা কারণে নিজেকে সেই মাপের ধর্মভীরু বানানোর পরিবর্তে ইসলামী সমাজব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার আগেই (গাছে ফল ধরার আগেই, ফল খাওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া) ইসলামের সুযোগ সুবিধা লাভকেই নিজ জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে ফেলছেন।
এ থেকে এখনই বেরিয়ে না আসলে ইসলামী অন্দোলনের মাঝে দশ বছর আগেও যে আত্মিক ও নৈতিক শক্তি ছিল, সেটা ক্ষয়প্রাপ্ত হতে সময় লাগবেনা। তাই নবীনদের নিজেকে আগে গড়ার প্রতি মনোযোগী হতে হবে এবং নিয়মিত রিপোর্ট রাখা ছাড়া এখনো এর কোন বিকল্প আমি দেখছিনা।
সবারই মঙ্গল কামনায়.....
প্রথমে বলে নেই আপনি যে- ‘বর্তমান যুগে দুটি ইসলামি আন্দোলন গ্রহন করেছে, একটা হলো তাবলীগ। আরেকটা হলো গুলেন মুভমেন্ট’। আমার দৃষ্টিতে কথাটি শতভাগ ভুল। কারণ তাবলিগ বর্তমান ইসলামি আন্দোলনের জন্য কোন অবদান রাখছেনা প্রতিমান হয়। গুলেন আন্দোলনকে কিছুটা মিসরের ইখওয়ানের সাথে তুলনা করতে পারেন। ফেতুল্লাহ গুলনান ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বিশ্বের প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক বিষয়ের লেখকদের প্রথম ১০০ জনের অন্যতম ব্যক্তি। তিনি শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, বিচারবিভাগ, শাসনবিভাগ, সামরিক বাহিনী, মিডিয়া, শিল্পকলা ও ব্যবসা সর্বত্রই সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে নিজে নিজে এর প্রতি সম্পৃক্ত ছিলেন। সেখানে তাবলিগের বিষয়টি তো নস্যি! তারা সমাজ সংস্কারমূলক কি করেছে। শুধু ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছে যুগ যুগ ধরে। তবে তাদের এই দাওয়াতি কাজকে খাট করে দেখলে হবেনা কিন্তু।
২০০৭ সালে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক শিক্ষা কেন্দ্রের উদ্যোগে গুলান আন্দোলন নিয়ে একটি কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। এই সম্মেলনে তুরস্কের প্রেক্ষাপটে আন্দোলনের ইতিবাচক দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। এর পরে ২০০৯ সালেও প্রায় ৮ মাস প্রস্তুতি নিয়ে আরো বিশালভাবে কনফারেন্স করা হয়। সালটি মনে নেই ১৯ থেকে ২১ অক্টোবর কায়রোর আরব লিগ ভবনে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় তখন ২০ টি দেশের এক হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি এতে অংশ নেন। সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল সংস্কার এবং মুসলিম বিশ্বের ভবিষ্যৎ। শেষ দু’দিনের মূল আলোচনা ছিল তুরস্কের গুলান আন্দোলন এবং মুসলিম বিশ্বের একটি সামগ্রিক সংস্কার নিয়ে। আচ্ছা বিস্তারিত যাচ্ছিনা আমি এ নিয়ে একটি পোস্ট দিব ভাবছি।
তবে কথা হল এরদুগান+গুল এর লোকদের এভাবে মারামারি করা ঠিক হয়নি। কারণ ফেতুল্লা গুলানের বক্তব্য ছিল- ‘মহ্ত্ত্ব দ্বারা হৃদয় জয় কর। খারাপকে খারাপ দিয়ে উত্তর দিয়ে দুর্বলতা প্রকাশ করো না। একে ভাল দ্বারা উত্তরর দিয়েই উত্তরণ সম্ভব। যারা মানব কল্যাণে নিয়োজিত তারা জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে অন্যের মঙ্গল কামনায় থাকে’। তিনি রাজনৈতিক ময়দান দখলের চেয়ে মানুষের চিন্তার জগৎ দখল করার সার্থকতা অনেক বেশি বলে বিবেচনা করতেন। তাহলে কেন তার দল কিলাকিলিতে গেলেন আমার মাথায় কেস করছেনা। খুব কষ্ট পাচ্ছি। কথা হচ্ছে একটি সামগ্রিক পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে এই গুলান আন্দোলন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সব শেষ কথা হল আপনি অনেক সুন্দর লেখছেন। অনেক কিছু জানতে পারলাম। আল্লাহ আপনার নেক হায়াত দান করুন। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি দিয়ে দেখবেন। আল্লাহাফেজ।
যাহোক, তাবলীগের কথা শুনে কেন যে আপনি রাগলেন বুঝলাম না। এখন আপনার মাথায় যেমন ক্যাচ করছেনা, আল্লামা ফাতহুল্লার কথা শুনে আমার মাথাও গুলিয়ে যাচ্ছে। তিনি কেন এত রাজনীতি সক্রীয় হলেন, সে কথা ভেবে খোদ এরদোগান ও অভিভূত হয়েছেন। এবং তাকে রাষ্ট্রের ভেতরে তৈরি করা আরেক রাষ্ট্রের কর্ণধার বলে অভিহিত করেছেন। যুদ্ধ ঘোষণা করছেন তার বিরুদ্ধে।
কেন এমন হলো? আমার পরবর্তী লেখা 'তুর্কী ইসলামি আন্দোলনের রোডম্যাপ' হয়ত সেই উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবে।
আবু সাইফ ভাই ও উপরে সুন্দর একটা জবাব দিয়েছেন, আমি কিছু তার মতই ভাবছি বলেই কুরআনের আয়াত টা উল্লেখ করেছি।
গুলেন মুভমেন্টের উপর পড়েছি, আরো পড়তেছি, দুআ করুন জানা ও বুঝার ব্যাপারে আপনাদের কাছাকাছি যেন থাকতে পারি, রাব্বি যিদনী ইলমা।
অনেক ধন্যবাদ
আপনাকে ধন্যবাদ সময় নিয়ে অমন তথ্যবহুল পোষ্ট দেবার জন্য।
এটা ঠিক তিনি ইসলামের আরো কাছে চলে এসেছেন, আমার ভয় ও কিছুটা এখানে।
একটা কথা মনে রাখা দরকার, যারা দ্বায়িত্ব নেন কম্প্রমাইজ করার দরকার তাদের বেশি। আমাদের মহানবী (স) এটাই শিখিয়ে গেছেন। অনেক ধন্যবাদ
অপেক্ষা যেন ফুরাতেই চায়না...
মন্তব্য গুলো পড়ে নিজে কিছু বলার পাচ্ছিনা।
জাজাকাল্লাহ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন