সিরিয়ার যুদ্ধে কানা দাজ্জালের আবির্ভাব

লিখেছেন লিখেছেন সালাম আজাদী ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৪:৩৬:৪৫ রাত



সিরিয়ায় যুদ্ধ করতে আমেরিকা, ফ্রান্স বা তুরস্কের কাজ কাম দেখে আমার মনে হয় এই অঞ্চলে দাজ্জালের আবির্ভাব হতে যাচ্ছে। এখানে কে সত্য পথে, কিংবা কে ভুলের মধ্যে তা নির্ণয় যেন দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরব বসন্তের পথ ধরে প্রেসিডেন্ট বাশার সরকারের বিরুদ্ধে নেমে পড়ে ইখওয়ান ও অন্যান্য ইসলাম পন্থী দল সমূহ। বর্তমান প্রেসিডেন্টের বাবা আসাদ ১৯৮২ হামাতে ৪০ হাজারের মত ইসলাম পন্থীদের উপর চালান মর্মান্তিক গণহত্যা।

মূলত এবারের গণ আন্দোলন মনে হচ্ছিলো তারই প্রতিশোধ। কারণ আন্দোলন কর্মীদের অগ্রভাগে ইখওয়ানীরা প্রথম থেকে ছিলো, এখনো আছে।

তুরস্ক আসাদের সাথেও খুব দূরত্ব বজায় রেখেছে, বাশারের সাথেও মারাত্মক দূর। কারণ সীমান্তের কুরদী বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে আগে প্রেসিডেন্ট আসাদ ও পরে তার ছেলে সাহায্য করেই যাচ্ছেন।



প্রেসিডেন্ট আসাদ এবং তার ছেলে শিয়া সম্প্রদায়ের নুসায়রিয়া গ্রুপের সদস্য, যারা মনে করে “আল্লাহ হযরত আলী (রা) এর উপর অবতারিত হয়েছেন”। শিয়াদের মধ্য থেকে এই ধরণের বিশ্বাসির সংখ্যা কমে গেলেও সিরিয়ার এই শাসক গোষ্ঠি এই মারাত্মক মতবাদ গুলো আজো ধরে রেখেছে। এদেরকে এক সময় জাতে উঠানোর জন্য ফ্রান্স “আলাওয়ী” বা আলীর (রা) অনুসারী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। সেই থেকে মারাত্মক আকীদার বিশ্বাসি হলেও তাদেরকে অত বেশী ইসলাম বিদ্বেষী মনে করে না অনেকেই। তার পরেও এদের বিরোধিতা করা সাউদী আরব সরকার ও উলামায়ে কিরাম ধর্মীয় কর্তব্য জ্ঞান করে।



শিয়া রাষ্ট্র হিসাবে সিরিয়া ইরানের খুব প্রিয় পাত্র সেই ১৯৭৯ সাল থেকেই। লিবাননের গৃহযুদ্ধের সময় থেকেই সিরিয়া কে শিয়া পন্থীরা দিয়ে এসেছে তাদের ‘ঘাঁটির’ মর্যাদা। আজও ইরান ও সিরিয়ার ভালোবাসাকে সৌদি ও বাহরাইনের প্রেমের সম্পর্কের সাথে তুলনা করা যায়। ফলে ইরানের প্রাধান্য বিস্তার রোধে যে সৌদি, আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন ও কুয়েত ইখওয়ানীদের পাশে দাঁড়িয়ে আসাদের মুখোমুখি হয়েছে তা অত্যন্ত স্বাভাবিক।



ইরানের বন্ধুত্বে হোক, বা ইরানি তেলের চকচকে ডিপোর লোভে হোক রাশিয়া ও চীন সিরিয়ার বাশারের পক্ষে কথা বলছে। আমেরিকা বিরোধী ভূমিকাও তাদের মনে থাকতে পারে। কিংবা থাকতে পারে সমাজতন্ত্রের পতাকাবাহী আসাদ পরিবারের প্রতি হৃদয়ের টান। যাই হোকনা কেন, এই দুই পরাশক্তির যুদ্ধ বিরোধী অবস্থানের অর্থ নির্ণয় করতে কানা দাজ্জালের সাহায্যই যেন নিতে হচ্ছে আমাদের।

মিশরের মুরসী ছিলেন বাশারের সাংঘাতিক দুষমনদের একজন। সিংহাসনে বসেই মুরসী ইরান ও সিরিয়ার প্রতি খুব বাঁকা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রেখেছিলেন। যায়োনিস্টদের বিরুদ্ধে মুরসীর তর্জন গর্জন, বিশ্ব মোড়লদের বিরুদ্ধে তার বৃদ্ধাংগুলি প্রদর্শন এবং খেলাফাত প্রতিষ্ঠার প্রতি তার হিকমাহ বিহীন ব্যস্ততা সৌদি সহ ধনী আরব রাস্ট্রগুলোকে একদিকে যেমন ভয় ধরিয়ে দেয়। অন্যদিকে নিজদের দেশেও না জানি ওইরকম কিছু আন্দোলন শুরু হয়ে নতুন খিলাফতি জাযবাহের তলানিতে তাদের গদি ডুবে যাক এই ভয়ে তারা ভীত হয়ে পড়ে। ফলে এই কয়টা সুন্নি ও সালাফি বহুল রাস্ট্র অঢেল পয়সা দিয়ে মিশরের ইখওয়ানদের কচুকাটা করলো, সীসী কে সাহায্য করলো ক্ষমতার শীর্ষে যেতে। ইস্রায়েলের এই চরম বন্ধু এখন হলো মিশরের মত এক স্ট্রাটেইজিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্ট্রের সর্বস্বর্বা্। ইসলামের বিরুদ্ধে কী দাজ্জালীয় পদক্ষেপ!!!



আরব বসন্ত কোনদিন সফল হতো না, যদি পাশ্চত্য মিডিয়া গুলো একে সাহায্য না করতো। সিরিয়ার আন্দোলন নিয়ে এই মিডিয়া গুলো সেই প্রথম থেকেই এক ঘোরের মধ্যে ফেলে রেখেছে সারা বিশ্বকে। এখন যখন ইখওয়ান সহ বাশার বিরোধীরা সিরিয়ার দুই তৃতীয়াংশ অধিকার করে ফেলেছে। বাশারকে পতনের খুব দ্বার প্রান্তে নিয়ে এসেছে, এবং হয়ত খুব দ্রুত সময়েই তারা সেখানে একটা ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে যাচ্ছে। তখনই মানবতা বিধ্বংসী গ্যাস ছেড়ে মারা হলো কয়েক শত সিরিয়ান মুসলিম কে। যাদের অনেকাংশই নিষ্পাপ শিশু ও অবলা নারী।



কে এই গ্যাস ব্যবহার করলো তার ইনভেস্টিগেশান টাও শেষ হলোনা। এই গ্যাসের রকম ও প্রকার দেখে যে কেও সহজেই বুঝতে পারবেন কত্থেকে এসেছে তা।



ফিলাস্তিনে গাযার যুদ্ধে রাসয়নিক বোমা, মিশরের রাফাহ সীমান্তে ছোড়া গ্যাস বোমা ও সাদ্দামের ব্যবহৃত গ্যাস বোমার সাথে এর মিল রয়েছে অনেক। বাশার এটা ব্যবহার করেনি, ইখওয়ান এটা হাতেও নেয়নি। তাহলে ইসরায়েলের পাশে কে এটা ব্যবহার করতে যাবে তা জানতে জাতি সংঘের কাছে যেতে হবে না। আর এই গ্যাসের অজুহাতেই সিরিয়াকে ধংশ করতে এগিয়ে আসছে যায়োনিস্টদের একান্ত রক্ষাকারী বাহিনী সমূহ। আমেরিকার নেতৃত্বে, ফ্রান্সের সহযোগিতায় ধেয়ে আসছে যায়োনিস্ট রা। এ যেন কানা দাজ্জালের আবির্ভাব নিয়ে আসছে সিরিয়ার পাশের একটা দেশ।

যুদ্ধ হবে। খুব কম দিনেই যুদ্ধ শেষ হতে পারে। সিরিয়ার ক্ষমতা যাবে ‘মোড়ল’দের পছন্দের হাতে। ভাববেন না ওটা ইখওয়ানীরা পাবে। কারণ সৌদি, কাতার আরব আমিরাত বা বাহরাইন চাইবেনা এখানে ইখওয়ান আসুক। এখানে যায়োনিস্টদের যে কোনো বন্ধু উনাদের কাছে ইখওয়ানীদের চেয়েও বেশী নিরাপদ। আমার মনে হচ্ছে, যে সিরিয়ায় ইসলাম পন্থীদের বিজয় খুব নিকটে চলে আসতে ছিলো, সেই সিরিয়া নিক্ষিপ্ত হচ্ছে এক কানা দাজ্জালের হাতে।



বিষয়: বিবিধ

৭৮৫২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

293488
১১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৪৩
মোতাহারুল ইসলাম লিখেছেন : আসসালামুয়ালাইকুম,

ইরাক ও সিরিয়ার বর্ত্মান পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মূল্যায়নের আপডেট জানতে চাই। কেননা মানুষ এখন সত্যের ব্যাপারে বিভ্রান্ত বলে মনে হচ্ছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File