ইখওয়ানের পতন নিয়ে বারাদেইর মূল্যায়ন
লিখেছেন লিখেছেন সালাম আজাদী ২৭ আগস্ট, ২০১৩, ০৭:৪৩:৪৬ সকাল
ডঃ মুহাম্মাদ বারাদেই তার আকষ্মিক পদত্যাগের কারণ বর্ণনা করতে যেয়ে “শাআব মিসর” পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে বলেনঃ
Click this link
মিশরের মানুষের ধারণা, আমি পালানোর জন্য পদত্যাগ করেছি। আসল ব্যাপারটা মিশর বাসী এখনো জানেনা। আসলে আমি সময় শেষে উপলব্ধি করতে পেরেছি যে এখনো মুবারকের শাসন ই মূলত মিশরে চলছে। এটাও বুঝেছি যে মুরসীই সঠিক পথে আছেন। মিশর এক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার, যেখানে বিদ্যুৎ সমস্যা ইত্যাদি উপলক্ষ্য হিসেবে ধরা হয়েছে। তাছাড়া ইখওয়ান মোটেও মুরসীকে সাহায্য করেনি। উলটো মারাত্মক বোকামি করে মুবারকের হাতকে শক্তিশালী করে মারাত্মক এক ষড়যন্ত্র সফল করতে সাহায্য করেছে। ইখওয়ান মুরসীকে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দেয়নি।
আইন বিভাগের কথাই ধরুন। একে ধুয়ে মুছে সাফ করার সিদ্ধান্ত টাই মুরসীর এক নাম্বার কার্যতালিকায় থাকা উচিৎ ছিল। কারণ রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হলো ইনসাফ তথা ন্যায় বিচার। মুরসীর উচিৎ ছিলো একটা বিশেষ বিপ্লবী আদালাত সৃষ্টি করা, যার মাধ্যমে তিনি মুবারকের সরকারের নানা অনিয়মের বিচার করতে পারতেন। অথচ এই কাজটা তিনি শেষে করতে গেলেন, যখন সময় পেরিয়ে গেছে। তার দ্বিতীয় পদক্ষেপ হওয়া উচিৎ ছিলো মিশরবাসীর সাথে কোমল ব্যবহার করা। আর সমস্ত ক্ষেত্রে মুবারক সরকারের দূর্ণীতির মুখোশ উন্মোচিত করে দেয়া। এটা না করে তিনি মুবারক সরকারের বিভিন্ন পদের দ্বায়িত্বশীলদের সরিয়ে ইখওয়ানের বিশ্বস্ত দেরকে সেখানে বসিয়েছেন।
মিশরে যে দুঃখজনক পরিস্থিতি ঘটছে তা সম্পর্কে সংক্ষেপে বলা যায়ঃ মুবারক সরকারের সেনাবাহিনী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিচার বিভাগ, মিডিয়া, পত্র পত্রিকা, অর্থনীতি, আমেরিকা, ইস্রাঈল...... সবাই চেয়েছিলো প্রেসিডেন্ট ইলেকশানে মুরসী ও ইখওয়ান কে জেতাতে। এরপর তারা সবাই মিলে মুরসীর হাতে ক্ষমতা দিয়ে, সময় মত ষড়যন্ত্র করে এবং কৃত্রিম সমস্যার সৃষ্টি করে সেই সরকারকে উৎখাতকরবে। ৩০শে জুনে যা ঘটলো তা ছিলো অত্যান্ত পরিকল্পিত। মুরসী বিরোধী গণজাগরণ এটা ভালো ভাবে জানে।
নাসর সিটিতে ওদের গোপন বৈঠক গুলোর খবর আমি যখন জানতে পেরেছি তখন সময় শেষ হয়ে গেছে। ওখানে ন্যাশনাল সোসাইটির ব্যানারে মুরসী বিরোধী জাল সাক্ষর নিতে অর্থ সম্পদ বিলানোর কথা অনেক পরে জানতে পেরেছি। আমি ভুলতে পারছিনা ৩০শে জুনে যে সব দেশবাসী মিলিত হয়েছিলো, এরা অনেকেই ছিলো মুরসীর সময়ের কৃত্রিম সংকটের ভুক্তভোগী। ইখওয়ান চাইলে এই ষড়যন্ত্রগুলো সময় মত সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যর্থ করে দিতে পারত।কিন্তু তা তারা করেনি। যখন প্রেসিডেন্ট মুরসী দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কিংবা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করেন নি। আর আজ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নিজেই মিশরে জরুরী অবস্থা জারী করলেন, আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সেনা বাহিনী তা কীভাবে বাস্তবায়িত করছেন তা সবাই জানে।
কিছু কিছু আরবদেশ যে সম্পদ মিশর কে দিয়েছে, তা মূলত মুবারক কর্তৃক চুরি করা মিশরের টাকা। এই অর্থ ওই দেশ গুলোর নয়। ইখওয়ান তাদের প্রতিপক্ষকে ক্ষেপিয়ে দিয়ে এবং আক্রমনাত্মক গালাগালি দিয়ে খুব ভুল করেছে। খোদ আমি এবং কিছু আরব দেশ তাদের এই আক্রমন থেকে রেহায় পায়নি। আফসোস আজ মিশরবাসীকে প্রতারিত করা হলো, আর মারাত্মক ষড়যন্ত্রের দাবার ঘুটি হিসাবে ইখওয়ানকে ব্যবহার ও করা হলো। সবাই আজ ভুলে গেছে জানুয়ারি বিপ্লবের শহীদদের কথা, ভুলে গেছে হত্যাকারীদের কথা, গনহত্যার সেই দৃশ্য আজ ম্লান হয়ে গেছে, স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জুলুমের কথা কারো মনে নেই, মনে নেই মুবারকের অত্যাচার ও স্বৈরাচারের মূর্তি।
জানুয়ারী বিপ্লবের হত্যাকারীরা আজ রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রে নির্দোষ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ইখওয়ান থেকে মুক্ত হলো দেশ। বারাদেই কে মিথ্যা মামলার মুখোমুখী করা হলো। কিছুদিনের মধ্যেই আল নূর ও অন্যান্য ইসলামি পার্টিকেও ব্যান করা হবে। আর এই সব গুলোই করা হাবে ‘আইন’ নামক ব্যবস্থার মাধ্যমে।
বিষয়: বিবিধ
৫২৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন