জামাআতের বিরুদ্ধে আদালাতের রায়
লিখেছেন লিখেছেন সালাম আজাদী ০৩ আগস্ট, ২০১৩, ০৮:৫২:৫৯ রাত
জন্মের পর থেকে আজ অবধি কখনো আদালাত পাড়ায় যাইনি, আদালাতের বিচার কাজ দেখিনি, আদালাতে যারা থাকেন তাদের চিত্র বিচিত্র জীবন দেখার সুযোগ পাইনি, এমন কি এখানে যারা বিচার করেন, বিচারের রায় লেখেন, যিনি কেইস রেজিস্ট্রেশান করেন, এদের কাওকেও দেখিনি; এরা সাধারণ মানুষ থেকে কতটুকু ভিন্ন তাও দেখার চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা আমার এক্কেবারে নেই।
ঢাকায় থাকতে ইউনি পাড়ায় থাকার সুবাদে হাইকোর্টের সাদা বিল্ডিং দেখেছি। গ্রামে একটা থ্রেইট প্রায়ই শোনতাম। মাঝে মাঝে রেগে গেলে একজন আরেক জন কে বলত ‘দাঁড়া, তোকে হাইকোর্ট দেখায়ে ছাড়ব’। হাইকোর্টের শাদা বিল্ডিং এর মুজেযা তখন বুঝতাম না। আবার বিল্ডিং এর গায়ে যে দাড়িপাল্লা লাগানো ছিলো তার ও হাকিকাত বুঝতাম না। মনে মনে ভেবেছি হয়ত ন্যায়ের প্রতীক হিসাবেই ওখানে দাঁড়িপাল্লা রাখা হয়েছে।
যাহোক, বায়বীয় কিছু ধারণা ছাড়া আদালাত নিয়ে আমার কোন জ্ঞান বা অভিজ্ঞান কিছুই নেই। তবে এটা আমি বুঝতে পেরেছি আদালাতের শক্তি অনেক বেশি। তার হাত খুব লম্বা। এবং হেন ব্যক্তি, গোষ্টি, বা সংস্থা এমনকি শক্তিধর নেই যে আদালাতের চেয়েও শক্তি রাখতে পারে।
পৃথিবীর অনেক বড় বড় রাজা বাদশাহের জীবন ও আদালাত শেষ করে দিয়েছে।সাদ্দাম হোসেনকে কুরবানীর ঈদের দিনেও এই আদালাত ফাঁসি দিয়েছে। আদালাত আমাদের দেশের এককালীন সবচেয়ে শক্তিধর বাদশাহ এরশাদ কে যেমন জেইলের ডাল দিয়ে সমাদর করেছে।
দুই তিন বারের নির্বাচিত প্রধান মন্ত্রী, যিনি রাণীমাও হতে যাচ্ছেন হয়ত, এমন একজন বিশাল শক্তিধরকে ৪০ বছরের স্মৃতি বিধৌত গৃহ থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে দিয়েছে এই আদালত। শুধু তাই কেন বর্তমানের প্রধান মন্ত্রী, যিনি একজন প্রয়াত প্রেসিডেন্টের মেয়ে, যিনি একাধিকবার নির্বাচিত হয়ে প্রধান মন্ত্রী হয়েছেন, এবং ভবিষ্যত প্রধান মন্ত্রীর রাণীমাও হতে যাচ্ছেন হয়ত, তাকেও আদালাত ‘রং হেডেড’ বলে আখ্যায়িত করেছে। আদালাত পারেনা কি?
কিন্তু মাঝে মাঝে আদালাতকে অনেক রক্ত চক্ষু দেখতে হয়। আমরা ছোট বেলায় একটা গান শুনতামঃ
বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা
আজ জেগেছে এই জনতা।
তোমার গুলির, তোমার ফাঁসীর,
তোমার কারাগারের পেষণ
শুধবে তারা ওজনে তার এই জনতা।।
যাহোক আদালাতের বিরুদ্ধে, বিচারকদের বিপক্ষে এই রকম রক্ত গরম করা গান উচ্চারন করাও আমার মত অর্বাচিনের জন্য জায়েয মনে করি না। আমি কেন মনে করি জনতার ঢেও আদালাতের অনেক বিচারের রায় নির্ধারণে নিয়ামক হিসাবে পরিগনিত হয়। কারন বিচার যিনি বা যারা করেন, তারা কখনো ভুল ত্রুটির উর্ধে থাকেন না। বিচারপতি খায়রুল হক একবার বলেছিলেনঃ দেশের বিচার বিভাগ নাকি খুবই করাপ্টেড। তিনি বিচারকদের করাপশন থেকে দূরে থাকতে অর্ডার দিয়েছিলেন।
হাইকোর্ট জামাআতের নিবন্ধন নিয়ে হাইকোর্টের দ্বিধা বিভক্ত রায় ও আমার কাছে কেমন প্রশ্নবিদ্ধ, রাজনীতি প্রভাবিত, আবেগ মোথিত কিংবা এখানে ডোসিয়ে গুলোর ভুল পর্যালোচনা, বা হতে পারে আইনের ভুল প্রয়োগ হয়েছে। কারন দেশের কমপক্ষে ১০% লোক যে পার্টিকে ভোট দেয়, দুই এক জন বিচারক সেই পার্টি সম্পর্কে ভুল রায় দিতেও পারে। এই বিচারক যদি ভুল না করে থাকেন তাহলে বর্তমান প্রধান মন্ত্রীকে যিনি ‘রং হেডেড’ বলে রায় দিয়েছিলেন তাকেও সঠিক বলতে হবে। তাকে সঠিক বললে সিদ্ধান্ত শুনে আদালাতের বিরুদ্ধে যারা লাঠি মিছিল করেছিলো তাদেরকেও আদালাত বিরোধী দল বলতে হবে। আমার মনে হয় কোনটাই করা লাগবেনা যদি সৈয়দ আশরাফ যে ফরমূলা বের করেছেন তা মানা যায়। কারণ তার বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে আওয়ামিলীগ জামাআত কে নিয়ে ‘ইঁদুর বিড়াল’ খেলা শুরু করেছে। সেই খেলার সাথে মানান খেলোয়াড় ও মনে হয় হাই কোর্টে বসানো হয়েছে। তারা সরকারের কথায় কোন ভুল রায় দিয়েও থাকতে পারেন। তা না হলে সৈয়দ সাহেব আজ কেন বললেনঃnull ‘জামায়াত শর্ত পূরণ না করার কারণে আদালত তাদের নিবন্ধনকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। জামায়াত যদি নির্বাচন কমিশন ও আদালতের শর্ত পূরণ করতে পারে এবং নির্বাচন কমিশন ও আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হয় তবে তারা নিবন্ধন ফিরে পেতে পারে।’
বিষয়: বিবিধ
২০৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন