জামাআত কে ব্যান্ড করলে খুশি

লিখেছেন লিখেছেন সালাম আজাদী ০৩ আগস্ট, ২০১৩, ০৭:২৪:৩৫ সকাল

ইত্তেফাকে শামছুদ্দীন আহমেদ জামাআতের ৭২ বছরের ইতিহাস টেনে এনে আমাদের অনেক কিছু শিখাতে চেয়েছেন।

null

তিনি উল্লেখ করেছেন জামাআত এই নিয়ে ৪ বার নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে। তার ভাষা পড়ে মনে হলো তিনি খুব খুশি। জামাআতে ইসলামি কে ব্যন্ড করলে যারা খুশি হচ্ছেন, তাদের একটা তালিকা এরি মধ্যে বিভিন্ন মিডিয়া থেকে কালেক্ট করা গেল।



১। গণজাগরণ মঞ্চের সবাই। এখানের নেতাদের তো দাবি একটাই, এখানের বক্তাদের তো বক্তৃতা ও বিবৃতির মূল প্রতিপাদ্য একটাই, এমন কি সেই লাকি থেকে শুরু করে পর্দারার অন্তরালের মামাদের শ্লোগানও একটাই। তাহলো বাংলাদেশের জমিন থেকে জামাআতে ইসলামিকে তুলে দিতে হবে। কাজেই তারা হাই কোর্টের এই রায়ে ভীষণ খুশি।



২। আওয়ামি লীগ। আওয়ামি লীগের নেতা ও কর্মি সবাই খুব খুশি হবে জামাআত কে ব্যান্ড করে দিলে। এখনো হাইকোর্ট মাত্র নিবন্ধন বাতিলের রায় দিয়েছে। তাতেই প্রতিমন্ত্রী কামরুল সাহেবের প্রতিক্রিয়া যা দেখলাম তাতে মনে হচ্ছে জামাআত নিষিদ্ধ হলে এরা আনন্দে দিশেহারা হয়ে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীর তনয় ‘শিক্ষিত’ জয় সাহেব ইতিমধ্যে বলেছেন ‘হাই কোর্টের এই রায়ে নাকি আওয়ামি লীগের মহাবিজয় সাধিত হয়েছে’।

null



৩। তরিকাত পন্থীগন। তরীকাত পন্থীগন কখনো জামাআত কে ভালো চোখে দেখেনি। শর্ষিনা, চরমোনাই, মাইজভান্ডারি, দেওয়ান বাগী, জাকের পার্টি কিংবা তথাকথিত আহলে সুন্নাত (যাকে কড়া সুন্নি বলে অনেকেই জানেন) সবাই জামাআতকে কখনো একটা ইসলামি দল হিসেবে মনে করেনি। শর্ষিনা তো আগাগোড়াই জামাআতকে ও এর মতবাদকে বিভ্রান্ত বলেছে। চরমোনায়ের মরহুম মাওলানা ফাজলুল করিম সাহেব তো জামাআত কে ইসলামি দল নয় বলে সারা জীবন চ্যালেঞ্জ করে গেছেন। মাইজভান্ডারি ও জাকের পার্টি জামাআত এর নিবন্ধন বাতিলের রিট কারি বিবাদি। হাই কোর্টের রায়ের পরে টিভি ক্যামেরার সামনে তাদের বক্তব্য ও নিটোল হাসি সাইয়িদুনা হামজা (রা) এর শাহাদাতের পরে হিন্দের (রা) হাসির সাথেই তুলনীয় মনে হয়েছে।



[img]

৪। এতদিন যারা জামাআত ও মাউদূদী ফিতনার বিপরীতে দাঁড়িয়ে ইসলামের সুমহান শিক্ষাকে বাংলাদেশে বিতরণ করেছেন, তাদের বড় একটা অংশও আজ খুব খুশি। ফরীদঊদ্দিন মাসঊদ এর অনুসারি ও তার সহযাত্রীর সংখ্যা তো বাংলায় কম নয়।



৫। নাস্তিক বা আল্ট্রা সেক্যুলার রাও জামাআতের নিষিদ্ধতার জন্য মরণপণ চেষ্টা চালিয়ে সফলতার দ্বারপ্রান্তে এসেছে বলে চিন্তা করছে। কয়দিন আগে মুন্তাসির মামুন সাহেব ও শাহরিয়ার কবিরের হতাশার পর এই রায় তাদেরকে খালি গ্লাসে মদিরার আরেক পাইন্ট সেবন করতে প্রলুব্ধ করবে- এতে সন্দেহ নেই।



৬। তালিকায় আরো কিছু নাম আছে এই মুহুর্তে তা বলার দরকার নেই, শুধু এই সব সাংবাদিকদের কথা বলতে হচ্ছে, যাদের লেখাতেও কেন জানি জামাআতের বিরুদ্ধে গরল ঝরছে। তবে উনাদের জ্ঞাতার্থে মনে হয় জানানো ভালো যে, জামাআত কে যে সব কারণে আগে ব্যান্ড করা হয়েছে তা ছিলো জামাআত যে সত্যিকার ইসলামি দল তার প্রমান। প্রথম বার আইউব সরকার ব্যান্ড করে ১৯৫৯। সে সময় কিন্তু আওয়ামি মুসলিম লীগ ও ব্যান্ড হয়ে যায়। দ্বিতীয় বার ব্যান্ড করা হয় কাদিয়ানি ইস্যুতে ১৯৬৪ তে। কাদিয়ানিকে অমুসলিম ঘোষণার দাবীর সাথে এটা জড়িত ছিলো। আর তৃতীয়বার যারা জামাআতকে নিষিদ্ধ করেছে তারাই এবার নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে। ৭২ এ জামাআত কে নিষিদ্ধ করার একটা অজুহাত ছিলো। কিন্তু এখন যে কারণ দেখিয়ে জামাআতকে নিষিদ্ধ করার দিকে সরকার যাচ্ছে তা কোন ভালো কারণ নয়। একেবারে ইসলামের বিপরীতে দাঁড়ানোর জন্যই সরকার এই নিন্দনীয় কাজের দিকে বাকশালীয় কায়দায় এগিয়ে যাচ্ছে

আম জনতা বুঝে ফেলেছে “আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের” জন্যেই জামাআতের সংবিধান আমাদের দেশের সংবিধানের বিরুদ্ধে গেছে, সেই একই “আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের” কারণেই জামাআত আওয়ামিলীগের ঘাড়ে থাকা নাস্তিকদের রোষানলে পড়েছে।

আজ বিকেলে একটা মারাত্মক হোচট খেলাম যখন একজন শায়খ ফোন করে বললেন, “জানেন ভাই, জামাআত যে নিগড়ের মধ্যে পড়ে গেছে তা থেকে বের হবার জন্য এর চেয়ে বড় সুযোগ আর মনে হয় আসবেনা”। তিনি বড়বড় করে বলে গেলেনঃ “জামাআত কে পছন্দ করি, এবং আমার মনে হচ্ছে বাংলাদেশে ইসলামি আন্দোলনের জন্য আরেকটা মোড় তৈরি হতে যাচ্ছে। জামাআতকে নিষিদ্ধ করলেই সেই মোড়টা অত্যন্ত পরিস্কার হয়ে উঠবে”। মনে হলো জামাআত নিষিদ্ধ হলে তিনিও খুশি।

আমি লম্বা একটা দম নিলাম। এখন লাইলাতুল কদর হবার সম্ভাব্য একটা সময় আল্লাহর কাছে নত শীরে ও অশ্রু সিক্ত নয়নে বাংলাদেশের ইসলামি আন্দোলনের জন্য খাস দুয়া করছি। আল্লাহ মেহেরবান, শাহাদাতের রক্তে ভেজা ইসলামের এই জায়গাটাকে তুমি সেক্যুলারদের স্বর্গরাজ্য বানায়ে দিওনা।ইসলামি আন্দোলন কে তুমি এখানে দূর্বার গতিতে এগিয়ে যাওয়ার তাওফিক দাও।

বিষয়: বিবিধ

৫০৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File