ওহাবীদের উপাসনালয়ে কিছুক্ষণ
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ১৩ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৯:২৪:০৮ রাত
ওহাবীদের উপাসনালয় দেখার সুযোগ কয়েক মাস আগে আমার হয়েছিলো । সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মতাদর্শ ওহাবী মতবাদ । বাংলাদেশে ওহাবী সম্প্রদায় রয়েছে । তারা নিজের আহলে হাদিস বলে পরিচয় দেয় । বর্তমানে নিজেদের তারা সহিহ আকিদায় বিশ্বাসী মুসলিম বলে পরিচয় দেওয়া শুরু করেছে ।
ওহাবীদের উপাসনার সাথে বাংলাদেশের সাধারণ মুসলিমদের নামাজের সাথে অনেক মিল আছে । তবে তাদের উপাসনালয়কে বলা হয় আহলে হাদিস জামে মসজিদ ।
এধরনের একটা উপাসনালয় আমাদের বাড়ির কয়েক কিলোমিটার দুরে রয়েছে । কয়েক মাস আগে সেই উপাসনালয়ে আমি গিয়েছিলাম । ওহাবী সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে কথাও বলেছি । তাদের কথা-বার্তা ও চালচলনে বন্ধুভাবাপন্নতা প্রকাশ পায়নি । ওহাবীদের আযানও সাধারণ মুসলিমদের আযানের মতো । তবে তারা বাংলাদেশের মসজিদগুলোর আযানের আগেই আযান দেয় ।
ওহাবীরা তাদের উপাসনার সময় আমীন বলে চিৎকার করে উঠে ও উপাসনা শেষে পাশের জনের সাথে তাকায় ও হাঁসে । অনেক সময় হাত মিলায় । তবে তারা আল্লাহর কাছে দুয়া বা মুনাজাত করে না । কিন্তু নামাজ শেষে মসজিদের বাহিরে যেয়ে মাথা আচড়ায় ।
তারা কখনোই মিলাদ মাহফিল ও শবে বরাত করে না । কয়েক দশক আগেও তারা জুমার নামাজ পড়তো না । তাদের অনেক নেতা রয়েছে । নেতা হিসেবে বেশি জনপ্রিয় আসাদুল্লাহ গালিব ।
আজব হলেও সত্যি, বাংলাদেশের বেশির ভাগ ওহাবী জামায়াতে ইসলামীকে তাদের দল বলে মনে করে । তবে বর্তমানে আহলে হাদিস যুব সংঘ নামক সংগঠণটা তাদের প্রিয় সংগঠণ । তাদের তথ্য মতে এসংগঠণের প্রাথমিক সদস্য সংখ্যা ২ লাখ । ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে ৯০ লাখ ওহাবী রয়েছে । সংখ্যাটা কম নয় ।
বাংলাদেশের অনেক মসজিদ ও টিভি চ্যানেলে ওহাবী মতবাদে বিশ্বাসী অনেক আলেম ওয়াজ করে থাকেন । পিস টিভির অধিকাংশ আলেম ওহাবী মতবাদে বিশ্বাসী । মূলত ওহাবী মতবাদ বাংলাদেশে ১৯৬১ সালের পর সৌদি আরব হতে বিস্তার লাভ করে । মূলত মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় হতে আগত শিক্ষার্থীরাই বাংলাদেশে ওহাবী মতবাদ বিস্তার ঘটাচ্ছেন ।
তাদের কাছে ইসলামের সঠিক শিক্ষা প্রচার করা উচিত বলে মনে করি । কারণ তারা বেঠিক কাজ করে । তাদের উপসনালয়গুলোর সম্মুখভাগই প্রমাণ করছে । কুরআন হাদিসের কোথাও আহলে হাদিস জামে মসজিদ বা সালাফী মসজিদ নামে ভিন্ন ভিন্ন নামাজের স্হান বানানোর কথা বলা নেই । এই কাজ ইতিহাসে কখনো ঘটেনি । এমন কি শিয়া ও কাদিয়ানীরা পর্যন্ত এমন কাজ করার সাহস পাননি । বর্তমানে কাদিয়ানীরা তাদের মসজিদের নাম দিচ্ছে আহমদিয়া জামে মসজিদ । অথচ মুসলিমরা তাদের মসজিদকে বলে জামে মসজিদ ।
ওহাবীদের হাব-ভাব-চাল-চলন-কথা-বার্তা রহস্যময় ও ঘোলাটে । এদের কর্মকৌশল সন্ত্রাসী সংগঠনের মতো । তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবনবোধের মধ্যে ভুল রয়েছে । তারা সাধারণ মুসলিমদের বন্ধু মনে করে না । তারা সাধারণ মুসলিমদের বিদাতী বলে থাকে । অনেককে তারা মাজার পুজারী পর্যন্ত বলে গালি দিয়ে থাকে । তারা অমুসলিমদের যতটা না গালি দেয় । তার চেয়ে বেশি গালি গালাজ করে সাধারণ মুসলিমদের ।
তাদের বিভিন্ন কর্মকান্ডই নয়, তাদের ধর্মগ্রন্হগুলোতেও ভুল ও পরস্পরবিরোধী তথ্য থাকে । এর সামান্য বিবরণ রয়েছে : https://www.youtube.com/watch?v=BiR6o9hil_o
ওহাবী ধর্মযাজকদের পরস্পরবিরোধী কথাবার্তা সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে প্রায়শই বিভ্রান্ত সৃষ্টি করে থাকে । যেমন : এই ভিডিওটাতে এসম্পর্কে সামান্য হলেও ধারণা পাওয়া যায় -
https://www.youtube.com/watch?v=Gn6i8z1END0
ভিডিওটা দেখলাম – একটা হাদিসকে বিকৃতভাবে উপস্হাপন করা হচ্ছে ।হাদিসের অনুবাদ করেছেন – “চাঁদ দেখে রোজা রাখো, চাঁদ দেখে ইফতার করো ..”
আমি তাদের সবাইকে প্রশ্ন করছি : হাদিসের বর্ণিত হিলাল শব্দের অর্থ কি চাঁদ ?
তবে ভিডিওটাতে এসব লোকদের মধ্যে মুরাদ বিন আমজাদ সঠিক কথা বলছেন । কিন্তু জ্ঞান চর্চা করার ক্ষেত্রে গালি-গালাজ বা অবজ্ঞামূলক শব্দ চর্চা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয় । আর ইসলামসম্মত নয়ও ।
বাংলাদেশে ইদানিং আহলে হাদিস জামে মসজিদ নাম দিয়ে উপাসনালয় তেরী হচ্ছে সাধারণ মুসলিমদের জনবহুল এলাকায় বিশেষত দরিদ্র এলাকায় । এসব উপাসনালয়গুলো মূলত সৌদি আরবের ওহাবী মতবাদ উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয় ।
এসব উপাসনালয়ের কারণে সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে অনৈক্য ও বিভেদ বৃদ্ধির পাশাপাশি ধর্ম নিয়ে প্রচন্ড ঝগড়া ও বাদানুবাদের সৃষ্টি হচ্ছে । এসব উপাসনালয়ে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা এক দল সন্ত্রাসী লোক উপস্হিত থাকে । তাদের কার্যক্রমও রহস্যময় । ইদানিং তারা ধর্মনিরোপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোতে প্রবেশ করছে ও অশুভ কার্যক্রম পরিচালনা করছে । আগে এরা ইসলামী রাজনৈতিক ও সমাজসেবামূলক সংগঠণগুলোকে তাদের আদর্শ ও মতবাদ প্রচার করার জন্য ব্যবহার করতো । পাড়ায়-মহল্লা-গ্রামে-গঞ্জে তারা সাধারণ মুসলিমদের বিভ্রান্ত করার জন্য দলীয় ও সাংগঠনিক কমিটি বানাচ্ছে । রাজনৈতিকভাবে তারা সফলও হচ্ছে অনেক এলাকায় । ঢাকার মরহুম মেয়র হানিফকে ব্যবহার করে তারা পুরান ঢাকায় শক্তিশালী দুর্গ গড়ে তোলছে । ধর্মনিরোপেক্ষ দলগুলোর লোকদের মধ্যে তারা তাদের মতবাদ সঠিকভাবে প্রবেশ করাতে পেরেছে বলে মনে হচ্ছে ।
মুসলিমদের কিছু লোক এসব উপাসনালয়ে যায় । এক সময় তারা বাংলাদেশের সাধারণ মুসলিমদের বিদাতী-মাজারপুজারী-মাযহাবী বলে গালি গালাজ করার পাশাপাশি মুসলিমদের ইবাদত বন্দেগী নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে থাকে । এমন কি মুসলিমদের নামাজ পর্যন্ত ভুল বলে সমাজে প্রচার করতে থাকে । এর ফলে মুসলিম সমাজেই নয় অনলাইনে বিবাদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে ।
আমি মনে করি, এসব উপাসনালয় ও এসব উপাসনালয়ের পুরোহিতদের এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনা এখন সময়ের দাবী হয়ে দাড়িয়েছে ।
বিষয়: বিবিধ
২৫৫০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ওহাবীরা কোন মাযহাব অনুসরণ করে না বলে দাবি করে । শাফেয়ী মাযহাবের অনেক কিছুর সাথে মিল থাকা অস্বাভাবিক নয় ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন