কোরআন পোড়ান ও ইসলাম অবমাননা সম্পর্কে আমার ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ১৩ জানুয়ারি, ২০১৬, ০২:১২:৪৫ রাত
১২ জানুয়ারী ২০১৬ তারিখটা ছিল আমার স্মরণীয় দিন । কারণ এই দিন আমি যা ধারণা করেছিলাম ও দেখেছিলাম তা বাস্তবে রূপ লাভ করেছে ।
এই দিন অনেকগুলো ঘটনা ঘটে । মিডিয়াগুলোতে ফোন করে খবরগুলোর সত্যতা জানার চেষ্টা করি । মিডিয়ার সাথে যুক্ত লোকরা অনেক কিছু লুকাতে চাইলেও আমার কাছে লুকাতে পারেনি । সমস্যাগুলো লুকিয়ে রেখে তো লাভ নেই । বরং সমস্যাগুলোর সমাধান খুজে বের করাই সঠিক কাজ ।
ঘটনাগুলো ছিল ২ টা মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়ার খবর, ১ জন মাদ্রাসার ছাত্রকে হত্যা ও ঢাকায় কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ।
আমি শুধু কোরআন পোড়ানো ও ইসলাম অবমাননা সম্পর্কে
আমার এই লেখায় আমার নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করবো মাত্র । অনেকেই দ্বিমত করতে পারেন ।
আজব হলেও সত্যি , কোরআন পোড়ানোর শাস্তি বাংলাদেশের পেনাল কোড ও কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর অনুযায়ী বড় জোর ছয় মাসের জেল হতে পারে ।
কোরআন পোড়ানোর ইতিহাস অনেক পুরাতন হলেও এই এক বিংশ শতাব্দিতে তা নতুন রূপ লাভ করে । ভারতের বর্তমান শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি : বিজেপি-র মাতৃ সংগঠণ বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ : আরএসএস প্রায়ই প্রকাশ্যে কোরআন পোড়ায় । এমন ছবি সর্বপ্রথম আমি ২০০১ সালে পত্রিকায় দেখি যা লেখাটার শুরুতেই দিয়েছি । তারপর আমেরিকায় ও আমেরিকার সৈন্যরা আফগানিস্হান ও ইরাকে উৎসব করে কোরআন পোড়ায় ।
http://www.islamicity.org/1024/dying-for-islam-in-india/
নেটে ও পত্রিকায় এখন কোরআন পোড়ানোর দেখে আর আহত হই না । কারণ কোরআন আমার মোবাইলে আছে । কম্পিউটারে আছে । প্রতিটা বইয়ের সেলফে আছে । বাড়ির ছোটদের প্রতি দিন সকাল-বিকাল একই হুজুর এসে ৫ বছর ধরে কোরআন পড়া শেখায় । বাড়ির ছোটরা টু-থ্রি-তে পড়লেও তারা কম করে হলেও তিন বার করে কোরআন পড়া শেষ করেছে ।
যারা কোরআন পোড়ানোর কারণে মর্মাহত হয়েছেন - তাদের বলছি :
জীবনের সর্বত্র কোরআনকে ধারণ করুন ।
কোরআন পোড়ানোর সাথে জড়িত ও তাদের মদদদাদা বা আশ্রয়দানকারীদের সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে বয়কট করুন ।
কোরআন পোড়ানোর সাথে যুক্ত লোকদের ও তাদের আশ্রয়দানকারীদের আর বন্ধু হিসেবে কখনোই ভাববেন না । কোন হুজুরও যদি বলে এরা বন্ধু, তাহলে সেই হুজুরকে পরিত্যাগ করুন ।
কোরআন পোড়ান প্রসঙ্গে বলছি : বাংলাদেশের মিডিয়া কখনোই কোরআন পোড়ানোর খবর প্রচার করে না বা করবে না । এবার হয়ত ভুলবশত কোন মিডিয়া প্রচার করে ফেলে ।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কোরআন অনেক অমুসলিমদের কাছে থাকে । তাদের অনেকেই নেশার ঘোরে অনেকেই অনেক কিছু করে । এসব ঘটনাকে আমি আমলে নেওয়ার পক্ষপাতি নই । আর কোন সম্প্রদায়ের এক জন অপরাধ করলে তার জন্য দায়ী অপরাধী লোক , পুরো সম্প্রদায় নয় ।
বাংলাদেশে অনেক লোক বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতির দারস্হ হয় । এই চিকিৎসা পদ্ধতি হলো টোটকা চিকিৎসা পদ্ধতি । বান-জাদু-টোনা ও বনাজি ঔষধ চর্চা করা হলো এই চিকিৎসা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য । এই চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে জড়িতদের বড় অংশ অমুসলিম । তারাও পর্যন্ত কোরআন পড়ে । কোরআনের মাধ্যমে তারা কুফরী কালামের চর্চা করে থাকে ।
যেমন : আমার এক বন্ধু এমন এক লোকের কাছে যায় ও বলে গুরু আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে দাও ।
আমি সাথে ছিলাম । আমি অবাক হলাম । যাকে গুরু বলছে - সে হিন্দু । কথা প্রসঙ্গে তার জ্ঞানের দৌড় কতটুকু জানার চেষ্টা করলাম । আমি যতই কথা বলি ততটুকু আমার বিস্ময়ের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছিলো । আমাকে বল্লেন সুরা জীন ৩০০ বার পড়ে জীন আয়ত্ব করেছি । আমার মনে ভয় ঢুকে গেলো । তখন এইচ এস সি পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবো যাবো অবস্হা আমার । অনেক কিছু কম জানি । তবে আমার বন্ধু একটা তদবীর পেলো । তাহলো : প্রতি দিন সকাল বিকাল ২০ বার চোখ বন্ধ করে “আইন গাইন ফে আমায় সব পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেয়” বলতে হবে । তাহলে কোন পরীক্ষায় ফেল করবে না । (আমার এই বন্ধু এটা এখন পর্যন্ত কোন পরীক্ষায় ফেল করেনি । অথচ আমি অনেক বার ফেল করেছি । ফেল করার ব্যাপারে আমার বিন্দু মাত্র আফসোস নেই । )
আমি রেগে গিয়ে বল্লাম : আইন গাইন ফে মানে কি ? আইন গাইন ফে কীভাবে পাশ করাবে ? পড়াশোনা না করলে আইন গাইন ফে কীভাবে পাশ করাবে ?
আমি উত্তর পেলাম : আইন হলো যে আলিম বা জ্ঞানী , গাইন মানে গায়েব যে জানে ...।
আমি বল্লাম জ্ঞানী বা অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেন কে ?
উত্তর পেলাম : আপনি যদি ভাবেন আল্লাহ , তাহলে আল্লাহ । আপনি যদি ভাবেন ইশ্বর, তাহলে ইশ্বর .....
আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো ।
আমার বন্ধুও আমাকে অনেকটা টেনে হিচড়ে বাড়িতে পৌছে দেয় । তারপর আমার বন্ধু যাওয়ার সময় আরবীতে লেখা নকশাদার একটা কাগজ দিয়ে যায় আর বলে তোর এটা কাজে লাগবে । আমি অবাক হলাম - এতে কোরআনের সুরা নমলের একটা আয়াত আছে যার বাংলা অনুবাদ অনেকটা এমন “ তুমি আমার আনুগত্য স্বীকার করে আমার কাছে চলে এসো । অহংকার করো না । ”
আমি আমার বন্ধুকে বল্লাম - এই আরবীর নিচে কিছু জায়গা ফাঁকা কেন ?
সে বল্লো : এই জায়গায় তুই তোর নাম ও তোর প্রিয়া-র নাম লিখবি । আর গলায় ৪০ দিন তাবিজ বানিয়ে ঝুলিয়ে রাখবি । তাহলেই কেল্লা ফতে !
আমি বল্লাম : আমি প্রেম বুঝি না ! প্রিয়া কে জানি না ? আমার প্রিয়া নেই ।
আমার কথা শুনে আমার বন্ধু গান ধরলো : ও প্রিয়া ও প্রিয়া তুমি কোথায় ????
আমিও কতক্ষণ হাসলাম । .........
আজও দেখা হলে আমি বলি কি রে প্রিয়া খুজে পেয়েছিস ।
সে বলে পেয়েছি তো , ঐ সেই তদবীর করেই তো পেলাম । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা ছাত্রীকে বাগিয়েছি রাবি-র ছাত্র হয়ে .....।
আমার এই বন্ধু এখনও এমন ধরনের তদবীর খুজে । আমার বন্ধুর স্ত্রীও স্বামী বশীকরণ তদবীর খোজে ।
আমার অভিমত হলো : উপরের ঘটনাগুলো আমাদের সমাজের খন্ডিত অংশ মাত্র । এগুলোও কোরআন অবমাননা । বাস্তবে এই অবমাননায় মুসলিমরাই অংশ নিচ্ছে । কিন্তু এই কোরআন অবমাননা দুর করা সম্ভব নয় । কোরআন অবমাননার এই চলমান ধারা ঠিক তখনই বন্ধ হবে যখন আমরা সমাজে কোরআনের শিক্ষাকে সঠিকভাবে প্রচার ও প্রসার করতে পারবো ।
বিষয়: বিবিধ
১৪১৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আলহামদুলিল্লাহ সুখপঠ্য একটি লিখা। আপনার এ লিখাটি এ্যাভয়েড না করে মনে হল - ভাল করেছি। ধন্যবাদ আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য।
আর সমাজে কিভাবে কোরআন কে সঠিক ভাবে প্রচার ও প্রসার করা যায় - তা নিয়ে আপনার লিখা কিংবা আপনার চিন্তার প্রতিফলন দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
কুচক্রিদের চালে পড়ে বিভ্রান্ত না হয়ে 'জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে কুরানী আইন মেনে চলা ও বাস্তবায়নের প্রচেষ্ট করা'ই কুরান কারীম কে যথার্থ মুল্যায়ণ!
জাযাকাল্লাহু খাইর!
মন্তব্য করতে লগইন করুন