নিকাব ও বোরকা পড়া সেই আর্কিটেক্ট

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ০৩ নভেম্বর, ২০১৫, ১০:৩০:৫৬ রাত







বিনীত অনুরোদ :

যে বা যারা আমার এই লেখাটাকে সামান্য হলেও ভাল মনে করেন অথবা লেখায় দেওয়া নেকাব পড়া বোনটাকে ভালবাসেন বা তার কষ্টকে বুকে ধারণ করেন এবং যে বা যাদের মনে সামান্যতম হলেও আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল সা-এর প্রতি মহব্বত রাখেন , তাকে বা তাদের অনুরোদ করছি এই দুই ফেসবুকে পেজে যুক্ত হোন এবং নির্যাতিত ও নিপীড়িত ভাই-বোনদের সাহায্য করুন ।

তাদের সাথে সরাসরি দেখা করুন এবং তাদের কর্মসূচীতে অংশ নিন । অন্যথায় আজ আপনি যদি নিবর থাকেন , তাহলে ভবিষ্যতে আপনিও নির্যাতিত বা নির্যাতিতা হবেন :


https://www.facebook.com/PrivateUSAB/photos/a.776328189153529.1073741829.773046412815040/841181962668151

https://www.facebook.com/hujur.hoye/photos/a.384410528418669.1073741828.384087918450930/441268182732903

এক নিকাবী বোনের সংগ্রামী জীবন

সময়টা ২০১২ সালের গোড়ার দিকে । CUET Admission Test ' 2012 দিস্তি ।

মূল ৫০০ নম্বরের ৩ ঘন্টার MCQ এক্সাম দেয়ার পর প্রচন্ড ক্লান্ত । এরপরে আবার ও আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য বিকেলে আলাদা ড্রয়িংআর ডিজাইনিংএর উপর ২ ঘন্টার এক্সাম দিতে বসেছি।। প্রশ্ন দেখে মাথা ঘোরপাক খাচ্ছিল।।

একটা ড্রয়িং ছাড়া বাকি : পোস্টার ডিজাইনিং, কন্সেপ্ট স্কেলিং, হিউম্যান ফিগার, টপিক্যাল ড্রয়িং কোনটাই আইডিয়া কমন পড়ে নিয়ে ।।তবুও কোন মতে মাথা খাটাচ্ছিলাম।।

আমার ঠিক পাশের সিটে একটা মেয়ে বসেছিল।

মাথাটার মাথায় হিজাব স্টাইলে ওড়না বাঁধা । কাল রঙের ওড়না পড়েছে । তার পরনে ছিল বোরকা । চোখ মুখ ঢাকা।

মেয়েটার খাতার দিকে থাকালাম।

অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে তাড়াহুড়া করে আকঁছিল মেয়েটা !!

ড্রয়িং দেখে আমি বিস্ময়ে হতবাক !!

সে হাত!! "শিল্পীর সুনিপুণ ছোয়া " যাকে বলে আরকি।।

এই মেয়ের ড্রয়িং এর কাছে আমার কাকের টেঙ - বকের টেঙ কিছুই না।

মেয়েটিকে দেখে কেমন জানি নার্ভাস হয়ে গেলাম আর টেনশনে পরে গেলাম ।।

এক্সাম শুরু হওয়ার আগে মেয়েটা বার বার মোবাইল চ্যাক করছিল।।তাড়াহুড়া করছিল !

আমি তো অবাক !

মেয়েটির মুখে নেকাপ জাতীয় কিছু একট। পড়া ছিল, খেয়াল করিনি । মেয়েরা কীভাবে যেন প্যাচিয়ে নেকাপ পরে তা দেখার কৌতুহল হয় । আর ভাবি তাদের কি গরম লাগে না । এত ঢাকাঢাকির কি দরকার ??

এই মেয়ে একবার নেকাপ খুলেছে শুধু। তাও স্যার খাতায় সাইন করার সময় প্রবেশ পত্রের সাথে চেহারা মিলাতে চাইলে মেয়েটা নেকাপ খুলে।।

মাশাল্লাহ !! মেয়েটা দেখতে ভীষণ কিউট ছিল !! তো এক্সামের সময় শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগেই মেয়েটা বের হয়ে গেল এক্সাম হল থেকে।।

মেয়েটা বাইরে দাঁড়িয়ে কেমন জানি পাইচারা করছিল চিড়িয়াখানার বাঘের মত !

এর পর আমি বের হয়ে মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বল্লাম :

”বাহ !

আপ্নি তো ভালই আঁকেন।। তো এত্ত তাড়াহুড়া করে বের হয়ে গেলেন কেন ?? শেষে ভালমত শেষ করেননি দেখি।।

আইডিয়া গুলা ভাল ছিল আপ্নার।। ওমা!! “

আমার কথার কোন উত্তর না দিয়ে মেয়েটা সামনে এগিয়ে গেলো : “

আমিতো অবাক ! প্রশংসা করলাম ! গুনগান গাইলাম!

তাও শোনে না। মেয়েরা তো এইরকম করার কথা না।

ওরা তো প্রশংসা একটু পাইলেই হয় !! দুত্তেরি।।

আর কিছু না বলে হাঁটতে লাগলাম। “

সামনের ম্যাকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিল্ডিং পেরিয়ে মাঝে মোড়ে গেলাম।। হঠাৎ পেছন থেকে মেয়েটার ডাক :

”এক্সকিউজ মি ভাইয়া। শুনুন।। “

: ওডি। এত্তক্ষন আই ডাহিদ্দি তে ন-- উনে!! এহন আরে ডাহহের!!! [ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা ] ( মনে মনে)..

--- জ্বি হ্যা বলুন।।

বালিকা : আমাকে একটু হেল্প করা যাবে??

আমি : হুম বলুন। চেষ্টা করব।

বালিকা : (ভীত স্বরে) - আমাকে একটু গেইট টা পার করে দিবেন।

আমি : হুম। এইটা আর কি।

আমিও তো অইদিকেই যাচ্ছি।।

আসুন।

বালিকা : গেইটে আমার হাসবেন্ড দাঁড়িয়ে আছে।। আমাকে নিতে এসেছে।। কিন্তু আমি যাব না। আমি অন্য দিকে, উনি না দেখে মত বের হতে চাই। প্লিজ একটু হেল্প করবেন।

আমি : বুকের মাঝখানে টুড়ুৎ করে উঠল!

বলে কিহ!!

যাহ গেল!

এইটার ও বিয়ে হয়ে গেছে !!

বাংলা সিনেমার নায়ক শাকিব খানের মতো হিরোগিরি দেখিয়ে গেইট পার করে দিয়ে মেয়েটার কাছে সিনেমার মত হিরো হওয়া যাবে না !! লাভ নাই!! ( মনে মনে) ।

আচ্ছা। আসুন।। আমি তো চিনিনা। ওইদিকে বোলান্টিয়ার ভাইয়ার কাছে জিগেস করে দেখি অন্যদিকে কোন দিকে যাইতে পারে কিনা।

আমি হাঁটছি। মেয়েটাও হাটঁছে।

ওইদিকে আমার আব্বু ফোন দিতেছে।।

বাইরে গেইটে দাঁড়িয়ে।

একদিকে আব্বু আরেকদিকে এই অপরিচিত মেয়েটা।

ভাবলাম : যাক! সাহায্য করি। এর উচিলায় অন্তত যদি আজকে চান্স পাই।।

খারাপ না ২১৯৭ তম হয়েছিলাম ১০০০০ বাঘা বাঘা জিনিয়াস স্টুডেন্ট এর মাঝে।

মেয়েটির চোখে-মুখে টেনশন এর চাপ।।

আমি : আপ্নি কি খুব টেনশনে আছেন? কি সমস্যা?? বলা যাবে?? ( আগেই ক্লিয়ার শুনে নি! কিনা কি আবার!! )

আজকাল তো ছেলে ধরা ও আছে আবার!! (মনে মনে)

আপ্নি হাসবেন্ড এর সাথে যাচ্ছেন না কেন ??

মেয়ে চুপ।।

থেমে গেল

কয়েক মিনিট পর।।

আমার হাসবেন্ড চাই না যে আমি আর পড়ালিখা করি, আর কন্টিনিউ করি।। কিন্তু আমার সপ্ন : ছোটবেলা থেকেই, যে আমি আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ব।।

আমি আজ অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে এক্সাম দিতে এসেছি।।

আমার স্বামী আমাকে বকা দিবে। শ্বশুড় শ্বাশুড়ী ও চাই না আমি পড়ি।।

টর্চার করবে আমাকে ।।

তারা জেদ আছে।।

তাই আমাকে নিতে এসেছে।

তাই আমি যাচ্ছি না।

আপ্নি আমাকে গেইট্টা পার করে একটু গাড়িতে তুলে দিলেই হবে।। আমি চলে যাব।।

ঘটনা বুঝতে আর দেরী হল না!

খুব খারাপ লাগছিল তখন শুনে!

মানুষ কেন এমন করে! একজনের সপ্ন!! জোর চাপা দিয়ে এইভাবে মেরে ফেলতে চাই!

আমি : আপ্নার হাসবেন্ড কি করেন?

বালিকা : - ব্যবসায়ী ।

আমি : কথাটা শোনার বুকের ভেতর তখন কেমন জানি মোছড় মেরে উঠল!

হায়!

কেন যে ইঞ্জিনিয়ারিং টিঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাচ্ছি । এরচেয়ে ব্যবসা করলেই তো ভাল ছিল!

এত্ত সুন্দর বউ ব্যবসায়ীর !!!

এরপর মেয়েটাকে কোন দিকে জানি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চুয়েট এরিয়া পার করে দিয়ে টেক্সিতে তুলে দিলাম। সাথে চুয়েট এর এক বোলান্টিয়ার ভাইয়া ও ছিল।।

যাওয়ার সময় বালিকা অনেক ভাবে ধন্যবাদজ্ঞাপন করল।

এরপর কি আর আমি বের হলাম গেইট দিয়ে।।

আব্বুর বকা শুন্তে হল।।

এতক্ষন কি!!

কি করিস ভেতরে।।

সবাই বের হয়েছে কত্ত আগে।।

শুনেও না শোনার মত হাটঁতে আছি আর ভাবছি :

মেয়েদের জীবনটা কি দু:সহনীয় হয় মাঝে মাঝে। একটা মেয়ের এত্ত দিনের সপ্ন একজন মনুষ্যত্বহীন লোক কিভাবে চাপা দিয়ে দিতে চাই!

মেয়েদের জীবনটাই ওইরকম।

ডিপেন্ডণ্ট অলওয়েজ।

বিয়ের আগে ছোট বেলায়-- বাবা মার অধীনে থাকতে হয়।।

এরপর বড় হলে প্রেম করলে বয়ফ্রেন্ডের কথা শুন্তে হয়।।

এরপর বিয়ে করলে স্বামীর গোলাম হয়ে থাকতে হয়!!

কোন কোন পুরুষ-তো মেয়েদের সম্পত্তি ভাবা শুরু করে।

অনেক দিন পর মেয়েটার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাইলাম আজ এফ বিতে !

প্রোফাইলে হাসি ভরা মুখে ছবি আর সাথে কিউট ২ টো বেবি।।

কথা হল মেসেজে তার সাথে।

অনেক কষ্টে নাকি আমাকে বের করেছে।। তাকে তানভীর নাম বলেছিলাম।

তানভীর ব্রিহান সে তো অনেক টাফ ।।

এর পর সব চেয়ে ভাল লাগল যা জেনে : সে এখন Khulna University তে আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিংনিয়ে পড়ছে।। চুয়েট এ চান্স না পাইলে ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সে ঠিকই সুযোগ করে নিয়েছে।। চুয়েট এ চান্স না পাওয়ার কারন তার ১ম এর ৫০০ নম্বরের এমসিকিউ এক্সাম খারাপ হয়েছিল।।

যাই হোক! এত্ত কিছুর মাঝে সে যে নিজেকে এইভাবে প্রস্তুত করে নিয়েছে এইটাই অনেক।।

এইটা দেখে খুব খুশি লাগল।

মেয়েটির সাথে মজা করছিলাম যে তোমার দোয়ায় ওইদিন আমি ২১৯৭ তম পজিশনে এসেছিলাম চুয়েটে।

ওকে জিগেস করলাম তো তোমার এখন ভবিষ্যৎ ইচ্ছে কি?? আর কি করতে চাও?? এখন্তো তোমার হাসবেন্ড ঠিক।।সব ঠিক।।

বালিকা : আমার নিজেকে নিয়ে আর কোন চাওয়া নেই। এখান থেকে পাশ করে ভাল আর্কিটেক্ট হব আল্লাহ চাইলে ।

আমার একটাই ইচ্ছে-চাওয়া এখন : আমার ২ টা মেয়েকে নিয়ে।।

আমি যে অবস্হার মধ্য দিয়ে এসেছি,আমার সাথে যা হয়েছে, আমি বেঁচে থাকতে কোনদিন তাদের সাথে ওই রকম হতে দেব না।

তাদের সপ্ন ভাঙতে দিব না।

তাদের পড়ালিখার জন্য আমি দূরদুরান্তে পাঠাব।।

কোন চাপ -ভোগান্তি পোহাতে যেন না হয়।

মেয়েটির এমন উত্তর শুনে খুব ভাল লাগল।।

মেয়ে হলে এমনি হওয়া উচিত।।

আমার লাইফে নিজের দেখা সবচেয়ে সাহসী আর স্মরনীয় ঘটনা ছিল এইটাই।।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার :

Tanvir Brihan

https://www.facebook.com/tanvir.brihan.1/posts/821398751308123

বিষয়: বিবিধ

২৬৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File