১৪৩৭ ইসলামী নববর্ষ : সারা বিশ্বের মুসলিমরা হাঁসছে । গান গাইছে । নাঁচছে । আলোচনা সভা করছে ।
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ১৬ অক্টোবর, ২০১৫, ০৭:৫১:২৫ সন্ধ্যা
প্রতি বছর নববর্ষ গুটি কয়েক মুসলিম ছাড়া সব মুসলিমরা হাসেন , আনন্দ উৎসব করেন এবং আলোচনা সভা করেন । এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি ।
তবে শিয়া মতাবলম্বীদের বড় অংশ মহহরম মাস এলেই শোক পালনের নামে কিছু ভয়ানক কর্মকান্ড করে থাকেন । এই ব্যাপারটি অন্য এক দিন আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ ।
https://www.mzamin.com/details.php?mzamin=OTY5MjU=&s=MQ==
https://www.youtube.com/watch?v=A2_iCCJHXA8
ইসলামী নববর্ষ পালন ও হিজরী সনের তাৎপর্য বিষয়ক বাংলা ভাষায় গাওয়া একমাত্র গান ।
এবছর আমি কীভাবে ইসলামী নববর্ষ বা হিজরী সন পালন করলাম এবং বিগত বছরগুলোতে তা তুলে ধরছি ।
নতুন বছরের নতুন চাঁদ দেখা ও দুয়া পড়া :
আমি আমার দুরবীন দিয়ে প্রতি মাসেই আকাশের গ্রহ-নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করি । এটা আমার প্রতি দিনের তালিকাভুক্ত কাজ । কারণ মহাবিশ্বে মানুষ ছাড়া আরো বুদ্ধিমান প্রাণী আছে তার অনুসন্ধানরত সৌখিন বিজ্ঞানীদের সংগঠণের অন্যতম সদস্য ।
নতুন চাঁদ দুরবীন দিয়ে বা খালি চোখে দেখার পর দুয়া পড়ি :
اللهم أهله علينا بالأمن و الإيمان و السلامة و الإسلام ربى و ربك الله
(আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল-য়ুমনি ওয়াল ঈমানি, ওয়াসসালামাতি ওয়াল ইসলামি- রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।)
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য এই চাঁদকে সৌভাগ্য ও ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন। আল্লাহই আমার ও তোমার প্রতিপালক । [ তিরমিজি : ৩৪৫১ ]
এই দোয়ায় বলা হয়েছে, আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাস- ঈমানের মধ্যেই নিহিত আছে শান্তি। আর জীবনের নিরাপত্তা নির্ভর করে ইসলাম বা আল্লাহর দ্বীনের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণ সঁপে দেয়ার উপর।
ইসলামে দোয়া মানে নিছক প্রার্থনা বা কোনো মন্ত্র জপ করা নয়। বরং অন্তরের গভীর বিশ্বাস ও চেতনার বাচনিক উচ্চারণ হল দোয়া, যা ব্যক্তির কর্মশক্তিকে জোরদার করে, তার সাথে আল্লাহর সাহায্যের সংযোগ ঘটায়। নতুন চাঁদ দেখার দোয়া পাঠের মাধ্যমেও মু’মিন বান্দা আল্লাহ ও ইসলামের প্রতি তার বিশ্বাস, চেতনা ও সম্পর্কের প্রকাশ ঘটায়। এর মাধ্যমে নতুন মাস ও বছরকে স্বাগত জানায়, তার সৌভাগ্যকে বরণ করে নেয় নিজের মন, জীবন ও সমাজের জন্য।
মানব জীবনে সূর্য ও চাঁদের দিকে তাকিয়ে দেখার প্রভাব অনস্বীকার্য। এই যুক্তিতে নতুন চাঁদ দেখার মাঝেও বরকত আছে । এ কারণেই প্রিয় নবী (সা.) নতুন চাঁদকে বরণ করতেন, স্বাগত জানাতেন।
নতুন চাঁদ দেখে এই দুই দোয়া পাঠ করা সুন্নাত । কারো বিশ্বাসে যেন এই ফাঁকে শিরক ঢুকে না পড়ে, তাই দোয়ার শেষভাগে মু’মিনের সতর্ক উচ্চারণ: ‘হে চাঁদ“! আমার ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহ।’
যদি আমার দুরবীন দিয়ে বা খালি চোখে চাঁদ দেখার সুযোগ পাওয়া না যায় তাহলে আমি অন্যান্য মাধ্যমের মাধ্যমে চাঁদ দেখা যাওয়ার খবর বা ছবি বা ভিডিও দেখে থাকি এবং তারপরও আমি এই দুয়া পড়ি ।
এই ক্ষেত্রে আমি এসব ওয়েব সাইট ও পেজগুলোকে গুরুত্ব দেই । সেগুলো হলো :
১. http://moonsighting.com/
২. http://makkahcalendar.org/
৩. http://www.newmoonbd.com/
৪. https://www.facebook.com/IslamicNewYearCelebration
৫. https://www.facebook.com/SameDayEidCelebration
৬. নাসা ও আমেরিকান নৌ বাহিনীর প্রায় সব ওয়েব সাইট
৭. বাংলাদেশের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সব ওয়েব সাইট
কারণ হলো চাঁদ সম্পর্কে গবেষণা করা ও পঞ্জিকা প্রণয়ণ করা ফরজে কিফায়াহ । আমি নিজে এই কাজের সাথে সম্পৃত্ত হওয়ায় আমার কাছে এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ।
উপরন্তু এই ব্যাপারে মাযহাবের ঈমামদের বিশেষ দিক নির্দেশনা রয়েছে । (এব্যাপারে পরবর্তীতে আলোচনা করবো । )
নতুন চাঁদ দেখার পর রাস্তায় আনন্দ শোভা যাত্রা বা রোড শো-তে অংশ নেওয়া ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা :
দেশ বা দেশের বাহিরে থাকলে পশ্চিম আকাশে চাঁদ দেখার খবর পাওয়ার পর বা চাঁদ দেখার পর মাগরিবের নামাজ বা ঈশার নামাজ শেষ করার পর রাস্তায় লোকদের নিয়ে একত্রে হয়ে আনন্দ করি ও তাকবীর দেই এবং রোড শো বা শোভাযাত্রা করি । অনেক সময় আমরা বিশেষ শোভাযাত্রার আয়োজন করি । অনেকে তখন আতসবাজি নিক্ষেপ করে আনন্দ করে । কেহ জোড় তাকবীর ধ্বনি দেয় । কেহ পরস্পরকে বিশেষভাবে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে । আমরা রোড শো করার সময় কিছুক্ষণ পর পর ইসলাম প্রচার ও প্রসারমূলক স্লোগান ও বক্তব্য দেই । বিশেষ ব্যানার ও ফেস্টুন প্রদর্শণ করি যেগুলোতে কুরআন ও হাদিসের কথা লেখা থাকে ।
যেমন : ইন্দোনেশিয়ার অভিজ্ঞতা কিছু অংশ এই দুই ভিডিও হতে শেয়ার করছি ।
https://www.youtube.com/watch?v=134Q0jE_f_U
https://www.youtube.com/watch?v=C4LduQHwaSA
ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় সব মুসলিম হিজরী নববর্ষের দিন নেঁচে-গেয়ে আনন্দ করে
ফজর নামাজ শেষে বা দিনের বেলায় রাস্তায় বিশেষ র্যালি বের করি :
শোভাযাত্রা : এই দিনের গুরুত্ব প্রকাশক শোভাযাত্রা বা মিছিল অনুষ্ঠিত হয় । এসব শোভাযাত্রা বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও আলেমবৃন্দ নেতৃত্ব দান করেন ।
মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতার কিছু অংশ দুই ভিডিও হতে শেয়ার করছি :
1. http://www.youtube.com/watch?v=A-zjncGpVL0
2.
দিনের বেলায় হিজরী সনের তাৎপর্য়ের উপর আলোচনা সভায় অংশ নেই :
বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার কিছু অংশ কিছু ছবির মাধ্যমে তুলে ধরছি :
https://www.mzamin.com/details.php?mzamin=OTY5MjU=&s=MQ==
দুপুর ও বিকালের দিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেই :
বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার কিছু অংশ ছবির মাধ্যমে শেয়ার করছি :
হিজরী নববর্ষ ও হিজরী সনের তাৎপর্য নির্ভর গান সারা দিন বাজাই ও গাই :
যেমন : বাংলাদেশে থাকলে এই গানটা বাজাই
https://www.youtube.com/watch?v=A2_iCCJHXA8
ইসলামী নববর্ষ পালন ও হিজরী সনের তাৎপর্য বিষয়ক বাংলা ভাষায় গাওয়া একমাত্র গান ।
awBmd9aiNN0
মালয়েশিয়ায় অবস্হানকালে এই গানটা শুনি
মালয়েশিয়ায় হিজরী নববর্ষের দিনটিতে ও আগের দিনে মাগরিব নামাজ পড়ার সময়ের পর টিভিতে এই গানটি দিয়ে শুরু হয় । ব্যাপারটা অনেকটা আমাদের দেশে ঈদের আগের দিন টিভিতে “রমজানের ঐ রোজার শেষে” গান প্রচারের মতো । গানের কথাগুলোর বাংলা ভাবানুবাদ নিচে উল্লেখ করছি :
http://www.youtube.com/watch?v=awBmd9aiNN0
http://www.youtube.com/watch?v=lSEXCuc6ak0
বছর ঘুরে মহররম মাসের প্রথম দিন এলে মনে পড়ে যায়,
আমাদের নবী হিজরত করেছিলেন মক্কা থেকে মদীনায় ।
আনসার আর মুহাজিররা মিলে মিশে আস্থা ও বিশ্বাস দিয়ে,
তাদের জীবন ও সম্পদ বিসর্জন করে ইসলাম করেছিলেন প্রচার ।
আজ তাই আমরা হয়েছি মুসলমান, পেয়েছি সুমহান আদর্শ ইসলাম ।
তাই -
হিজরত হলো আত্মত্যাগ
হিজরত হলো সংগ্রাম
হিজরত হলো ভ্রাতৃত্ব
হিজরত হলো ঐক্য ।
এজন্য -
এসব দিনের চেয়ে আলাদা করে আমরা পহেলা মহররম করি উদযাপন ,
আমরা এই দিন বলে যাই সব বয়সের লোকদের কাছে
সাহস, ন্যায়পরায়ণতা ও ইসলামের ভ্রাতৃত্বের কথা
অন্য দিনের চেয়ে বেশী করে । ”
এই গানটা এত জনপ্রিয় যে দুই বছরের বাচ্চারাও গাইতে পারে ও গেয়ে নাচানাচি করে । যেমন :
http://www.youtube.com/watch?v=ZdsDVCaA6Vo
https://www.youtube.com/watch?v=JXkNHODxOxA
ভিয়েতনামের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিমরা হিজরী নববর্ষের দিন গান গেয়ে আনন্দ করে থাকে ।
ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ মাহফিল ও হাল্কায়ে জিকিরের অনুষ্ঠান আয়োজন করি :
যেমন :
http://www.youtube.com/watch?v=V1W4lr8N-Wo
এদিন বিশেষ দুয়াও পড়ে থাকি । যেমন :
হিজরী নববর্ষের দিনের প্রথম ভাগে এই দুয়া পড়ি
http://www.youtube.com/watch?v=TiwM3og9D5Q
হিজরী নববর্ষের দিনের শেষ ভাগেএই দুয়া পড়ি
http://www.youtube.com/watch?v=G66gJt13Uqc
আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে থাকি :
যেমন :
বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠণ এ দিনের তাৎপর্য আলোচনা করে বিশেষ অনুষ্ঠান , আলোচনা সভা ও দুয়া মাহফিল করে থাকে । যেমন : এই ভিডিওতে মালয়েশিয়ার প্রধান বিরোধী দল ”পার্টি কিদালান রাকায়াত (পিকআর)” -এর নেতা ও বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ আনোয়ার ইব্রাহিম হিজরী নববর্ষ উপলক্ষ্যে ওয়াজ করছেন । দেখুন ভিডিওটা
http://www.youtube.com/watch?v=M3bhsaOVN58
৬. টিভিতে রম্য টক শোতে অংশগ্রহণ করি :
http://www.youtube.com/watch?v=T7m0C9KRfXI (এই ভিডিও-র টক শোর ব্যক্তিটা আমি নই )
৭. পত্র-পত্রিকা ও ব্লগ সাইটগুলোত এবং ফেসবুকে শুভেচ্ছা বিনিময় ও লেখালেখি করি :
যেমন : আজকের এই লেখা সহ আরে ৫ টা লেখা লিখলাম ।
৯. গরিব – দু:খীদের সাহায্য করি ও মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান করি : এসম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হতে বিরত থাকলাম ।
১০. স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অভিভাষণ প্রদান :
http://www.youtube.com/watch?v=9xDyA_P0CfU
http://www.youtube.com/watch?v=hd3-vXC1gm8
উপসংহার :
http://www.youtube.com/watch?v=j5zmtrwWsYU
http://ctgnewsbd.com/?p=5451
আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিতে শিরকীপূর্ণ বাংলা ও কুফরী ইংরেজি নববর্ষ বরণ করার অনুষ্ঠান বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদ্যাপিত হলেও হিজরী নববর্ষকে সেভাবে পালন করা হয়নি। অথচ মুসলিম উম্মাহর সংস্কৃতি চর্চায় হিজরী সনের গুরুত্ব বেশি।
প্রতিটি জাতির নিজস্ব কৃষ্টি-কালচার বা সংস্কৃতি রয়েছে। এ সংস্কৃতি বাদ দিয়ে আসল পরিচয় নিশ্চিত করা যাবেনা। আমরা জাতিগতভাবে মুসলমান। শ্রেষ্ট জাতী হিসাবে আমাদের রয়েছে গৌরবোজ্জল আদর্শ। বিশ্বের দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়াতে আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
২২৭৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সবাইকে অনুরোদ করছি, দয়া করে অপ্রাসঙ্গিক ও বিষয়বহির্ভুত মন্তব্য করবেন না ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন