ঈদুল আজহার গুরুত্ব ও তাৎপর্য

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৪:৪১:১৫ বিকাল



ঈদুল আজহার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম । এজন্য শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতেও ঈদুল আজহার প্রসঙ্গ রয়েছে ।

ঈদুল আজহা বিষয়ক বিভিন্ন ভাষায় রচিত কবিতা ও সংগীত অসংখ্য । বাংলা ভাষায় কয়েকটা গান ও কবিতা লিখা হয়েছে ব্রিটিশ আমলে । কিন্তু ঈদুল আজহার বিরোদ্ধে নাস্তিক ও অমুসলিমদের অসংখ্য লেখা নেটে পেলাম ।




https://www.youtube.com/watch?v=urvaiIQZfvI

তবে আজব হলেও সত্যি ঈদুল আজহার উপর স্বার্থক বাংলা গান রচনা করেছেন, সুর ও কন্ঠ দিয়েছেন কয়েক জন হিন্দু । ঠিক তেমনি বাংলা ভাষায় কুরআন স্বার্থকভাবে অনুবাদ করেছেনও হিন্দু পরিবারে জন্ম নেওয়া ভাই গিরীশ চন্দ্র সেন । আমি নিয়মিত তার কুরআনের বাংলা অনুবাদ করা পড়ে থাকি । কারণ আমার কাছে তার অনুবাদ শুদ্ধতম মনে হয়েছে ।

এজন্য আমি হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইদের কৃতজ্ঞতা জানাই । কারণ আল্লাহ কৃহজ্ঞতা জ্ঞাপন কারীকে পছন্দ করেন ।

এই লেখায় আমি শুধু মাত্র কিছু গান ও একটা কবিতা শেয়ার করার পাশাপাশি ঈদুল আজহার গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরবো ।

ঈদুল আজহার উপর গান :




English Eid Ul Adha 08 Song

https://www.youtube.com/watch?v=54abq3Xi138




https://www.youtube.com/watch?v=Ml8upyONzMY

What Is Eid Al-Adha?




https://www.youtube.com/watch?v=RTgUlDERqFU

কুরবানীর ঈদ/ ঈদুল আজহা / ঈদুল আধহা/ ঈদুজ্জোহা/ বকরি ঈদ :

কুরবানীর ঈদ যা কিনা আরব দেশগুলিতে, "Eid-al-Adha", নামে পরিচিত।

ঈদ শব্দের অর্থ উৎসব; এবং "zuha", শব্দটি এসেছে "uzhaiyya", শব্দটি থেকে, যার অর্থ কুরবানী/ বলিদান/sacrifice.

অর্থাত এটি হচ্ছে বলিদান বা কুরবানীর উৎসব।

এই পবিত্র উৎসব মক্কায় হজ যাত্রার শুরু ও শেষ হিসেবে চিন্তিত । কারণ এই উৎসব মক্কায় হজের সাথে সম্পৃত্ত । যদিও মক্কা শহরের এক অথবা দুই দিন পর বাংলাদেশসহ কিছু দেশ ধর্মীয় বিধি লংগন করে পালন করে থাকেন ।

ঈদুল আজহা পালন করার কারণ :

আল্লাহ ইব্রাহিম (আ) -এর কাছে তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটি, কুরবানী হিসেবে প্রার্থনা করেন।

ইব্রাহিম (আ) সম্মত হলে, আল্লাহ পাক, আদেশ করেন যে, যেহেতু ইব্রাহিম এর একমাত্র পুত্র, ইসমাইল (আ)-কেই তার সবচেয়ে প্রিয় । অতএব ইসমাইলকেই কুরবানী দিতে হবে।

তখন ইব্রাহিম (আ) কুরবানী দেওয়ার উদ্দেশ্যে পুত্র ইসমাইল কে নিয়ে মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছে চোখের জলে ভাসতে ভাসতে শেষ বারের মতো পুত্রের কপাল চুম্বন করে অস্ত্র তোলেন কুরবানী দেওয়ার উদ্দেশ্যে।

কিন্তু গলা কেটে ফেলার ঠিক আগের মুহুর্তে ফেরেশতা জিব্রাইল এসে উদ্যত অস্ত্র ধরে ফেলেন এবং একটি মেষ প্রদান করে বলেন যে, ইব্রাহিমের কুরবানী আল্লাহর দরবারে ইতিমধ্যেই গৃহীত হয়েছে।

আল্লাহ ইব্রাহিমের প্রতিজ্ঞা পালনে খুশী হয়েছেন এবং বলেছেন পুত্রের পরিবর্তে, এই মেষটি কুরবানী দিতে।

কুরআনে বলা হয়েছে :

رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ

100

হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান কর।

فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيمٍ

101

সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম।

فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانظُرْ مَاذَا تَرَى قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِن شَاء اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ

102

অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন।

فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ

103

যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল।

وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ

104

তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইব্রাহীম,

قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ

105

তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।

إِنَّ هَذَا لَهُوَ الْبَلَاء الْمُبِينُ

106

নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা।

وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ

107

আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু।

وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآخِرِينَ

108

আমি তার জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে,

سَلَامٌ عَلَى إِبْرَاهِيمَ

109

ইব্রাহীমের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক।

كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ

110

এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।

إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُؤْمِنِينَ

111

সে ছিল আমার বিশ্বাসী বান্দাদের একজন।

وَبَشَّرْنَاهُ بِإِسْحَقَ نَبِيًّا مِّنَ الصَّالِحِينَ

112

আমি তাকে সুসংবাদ দিয়েছি ইসহাকের, সে সৎকর্মীদের মধ্য থেকে একজন নবী।

( কুরআন : সুরা নং - ৩৭ : সুরা আস্সাফ্ফাত : আয়াত ১০০-১১২ । )

কুরআনে বর্ণিত এই ঘটনার কারণে পশু কুরবানী দেওয়া ও ঈদ পালন করা অাবশ্যক ।

কুরবানীর গোস্ত বিতরণ করা উৎসবের অংশ :

ইসলামের বিধি মতে, মুসলিমরা কুরবানীর পশুর গোস্ত এক তৃতীয়াংশ মাত্র নিজেদের জন্য রেখে দেন, এক তৃতীয়াংশ আত্মীয় পরিজন, প্রতিবেশীদের দিয়ে এবং এক তৃতীয়াংশ গরীবদের দান করে দেন।

পশু কুরবানী দেওয়ার আগে কুরবানী দাতা ও অন্যসব মুসলিমদের দুুই রাকাত নামাজ পড়া ওয়াজিব । আর কুরবানীদাতাদের এই নামাজ না পড়লে কুরবানী বাতিল বলে গণ্য হয় ।

মুসলিমরা এদিন নতুন বা পরিষ্কার জামাকাপড় পরে একে অন্যের সাথে শুভেচ্ছা জ্ঞাপক কোলাকুলি করে, শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং ঈদ মুবারক বা আপনার উৎসব পালন মহিমান্বিত হোক বলে থাকেন (বিভিন্ন ভাষায় এটা বিভিন্ন ভাবে বলা হয় । যেমন : মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর,ব্রুনেই,থাইল্যান্ড,কামে্বাডিয়া ও ভিয়েতনামে বলা হয় : সালামাত হারি রায়া হাজি বা সালামাত হারি রায়া ইদিল আজহা । )

কুরবানী ঈদের উপর স্বার্থক কবিতা :

কুরবানী

..........কাজী নজরুল ইসলাম

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

দুর্বল! ভীরু ! চুপ রহো, ওহো খামখা ক্ষুব্ধ মন !

ধ্বনি উঠে রণি' দূর বাণীর, -

আজিকার এ খুন কোরবানীর !

দুম্বা-শির রুম্-বাসীর

শহীদের শির সেরা আজি !- রহমান কি রুদ্র নন ?

ব্যাস ! চুপ খামোশ রোদন !

আজ শোর ওঠে জোর "খুন দে, জান দে , শির দে বৎস" শোন !

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

খন্জর মারো গদ্র্দানেই,

পন্জরে আজি দরদ নেই,

মর্দানী'ই পর্দা নেই,

ডরতা নেই আজ খুন্-খারাবীতে রক্ত-লুব্ধ-মন !

খুনে খেলবো খুন-মাতন !

দুনো উনমাদনাতে সত্য মুক্তি আনতে যুঝবো রণ ।

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

চ'ড়েছে খুন আজ খুনিয়ারার

মুসলিমে সারা দুনিয়াটার !

'জুলফেকার' খুলবে তার

দু'ধারী ধার শেরে-খোদার , রক্তে-পূত-বদন !

খুনে আজকে রুধবো মন

ওরে শক্তি-হস্তে মুক্তি, শক্তি রক্তে সুপ্ত শোন্ ।

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

এ তো নহে লহু তরবারের

ঘাতক জালিম জোরবারের

কোরবানের জোরজানের

খুন এ যে, এতে গোদ্র্দ ঢের রে, এ ত্যাগে 'বুদ্ধ' মন !

এতে মা রাখে পুত্র পণ !

তাই জননী হাজেরা বেটারে পরা'লো বলির পূত বসন !

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

এই দিনই 'মিনা'-ময়দানে

পুত্র-স্নেহের গর্দানে

ছুড়ি হেনে 'খুন ক্ষরিয়ে নে'

রেখেছে আব্বা ইবরাহীম সে আপনা রুদ্র পণ !

ছি ছি ! কেঁপোনা ক্ষুদ্র মন !

আজ জল্লাদ নয় , প্রহ্লাদ-সম মোল্লা খুন-বদন !

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

দ্যাখ্ কেঁপেছে 'আরশ' আসমানে

মন-খুনী কি রে রাশ মানে ?

ত্রাস প্রাণে ? তবে রাস্তা নে !

প্রলয় বিষাণ 'কিয়ামতে' তবে বাজবে কোন্ বোধন ?

সে কি সৃষ্টি-সংশোধন ?

ওরে তাথিয়া তাথিয়া নাচে ভৈরব বাজে ডম্বরু শোন্ !-

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

মুসলিম-রণ-ডঙ্কা সে,

খুন দেখে করে শঙ্কা কে ?

টঙ্কারে অসি ঝঙ্কারে,

ওরে হুঙ্কারে , ভাঙি গড়া ভীম কারা, ল'ড়বো রণ-মরণ !

ঢালে বাজবে ঝন্-ঝনন্ !

ওরে সত্য মুক্তি স্বাধীনতা দেবে এই সে খুন-মোচন !

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

জোর চাই, আর যাচনা নয়,

কোরবানী-দিন আজ না ওই ?

কাজ না আজিকে জান্ মাল দিয়ে মুক্তির উদ্র্ধরণ ?

বল্ - "যুঝবো জান ভি পণ !"

ঐ খুনের খুঁটিতে কল্যাণ-কেতু, লক্ষ্য ঐ তোরণ,

আজ আল্লার নামে জান্ কোরবানে ঈদের পূত বোধন ।

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

(কুরবানীর ঈদ এলেই এক শ্রেণীর নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেসী গরু জবাই বন্ধের পক্ষে নানারকম যুক্তি তুলে ধরে। কবি নজরুল বেঁচে থাকতে এক কাঠ মোল্লাও কোরবানীর নামে "পশু-হত্যা" বন্ধের দাবি জানিয়েছিলেন। তার ঐ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কবি একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারি কবিতা লেখেন। সেই কবিতাটিই এখানে দেয়া হলো )

[ সৌদি আরবের মক্কা শহরের গণণাকৃত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয সালাতের পর একবার উচ্চ স্বরে তাকবীর বলা ওয়াজিব। নারীদের আস্তে বলা ওয়াজিব। তাকবীর হচ্ছে : আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলাহ ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লহিল হামদ । বাংলাদেশের কথিত জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির হিসেব অনুযায়ী ঈদুল আজহা কেন অন্য সব ইসলামী উৎসব ও কর্মকান্ড করা ইসলামবিরোধী ও ইসলামের ঐক্য-সংহতিবিরোধী বলে গণ্য হবে । ]

উপসংহার :

আল্লাহর প্রিয়পাত্র ও প্রাত্রী বা আল্লাহভীরু মুসলিম হওয়ার চেষ্টা ও সাধানা করাই কুরবানীর ‍ঈদের মূল মর্মবাণী । আশা করি আমরা সবাই ইসলামের সত্যিকার মর্মবাণী প্রচার করার জন্য সচেষ্ট হবো ।

বিষয়: বিবিধ

১৭২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File