কুরবানী আদায়কারী মহিলাদের ঈদুল আজহার নামাজ পড়া ওয়াজিব, অন্যথায় কুরবানী বাতিল হবে গণ্য হবে
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:৪৩:০৬ সকাল
২০১৫ সালে মিশরের এক ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়ছেন মহিলারা (ছবি আজদ সাইমুমের সৌজন্যে প্রাপ্ত )
কুরবানী আদায়কারী মহিলাদের ঈদুল আজহার নামাজ পড়া ওয়াজিব, অন্যথায় কুরবানী বাতিল হবে গণ্য হবে - এই কথা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত । যারা এই বিষয়টা জানেন না - তাদের উচিত সবাইকে জানানো ।
অনেকে বলবেন, মহিলাদের নামাজ পড়ার সুযোগ নেই । বাড়িতে তাদের কাজ আছে । সুতরাং নামাজ পড়বে না ।
আমার কথা নয়, হাদিস ও ফিকহের কথা - কুরবানী দেওয়ার আগে অবশ্যই কুরবানী দেওয়ার নিয়তকারীকে অবশ্যই দুই রাকাত ঈদের নামাজ পড়তে হবে ।
আমার কথা ভুল মনে হলে, দয়া করে আমার এই কথার বিপরীতে সহিহ হাদিস ও ইসলামী আইন শাস্ত্রের বই হতে উদৃতি প্রদর্শণ করুন ।
অনেক বাজে নিয়ম আগের থেকে চলে আসছে । তাই বলে বাজে নিয়ম ও বাজে কাজকে আমরা দিনের পর দিন গ্রহণ করে যাবে এবং অনেক সময় এই বাজে নিয়মকে ধর্মের অংশ হিসাবে প্রচার করার জন্য কুরআন হাদিস হতে পাল্টা প্রসঙ্গের সাথে সম্পৃত্ত নয় এমন উদৃতি প্রদর্শণ করবো - তা ইসলাম ধর্মের নীতি নয় ।
মেয়েদের নামাজ পরার সুযোগ প্রদানের গুরুত্ব:
মেয়েদের নামাজ আদায় করার জন্য বাংলাদেশের সব মসজিদে,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও কর্মক্ষেত্রে নির্দিষ্ট স্হানের ব্যবস্হা করতে হবে যাতে মেয়েরা কোন রকম সমস্যা ছাড়াই নামাজ আদায় করতে পারে । এই বিষয়টা কীভাবে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায় তা এখানে বলা আছে -
https://www.facebook.com/WomenWillPrayInTheMosquesRegularly
https://www.youtube.com/watch?v=A2zlTq21k_4
মহিলাদের মসজিদে নামাজ পড়ার বেপারে ইমাম আবু হানিফা কি বলেছেন?
বাংলাদেশে ঈদের নামাজে মহিলাদের অংশগ্রহণ :
মেয়েদের ঈদের নামাজ ও মসজিদে যেয়ে নামাজ পড়ার গুরুত্ব
নারী পুরুষ এক সঙ্গে হজ্জ্ব পালন করে অথচ তারা বাংলাদেশের অধিকাংশ মসজিদগুলোতে এক সঙ্গে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেনা। এমনকি মসজিদে নারীদের নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে অনেক হুজুর বাঁধা দেন বা নিরুৎসাহমূলক কথা বলেন । তবে ঢাকায় কিছু মসজিদে মেয়েদের জন্য নামাজ পড়ার আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে এবং ঈদের জামাতে অংশ নেয়ার জন্য মেয়েদের জন্য করা হয় আলাদা স্হান রাখা হয়।
ঈদের সময় সব টেলিভিশন চ্যানেল রিপোর্ট করে পুরুষদের ঈদ নামাজ নিয়ে । ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে ঈদুল আযহার সময় ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক Farzana Shova বাংলাদেশে মেয়েদের ঈদের নামাজ পড়ার উপর রির্পোট করেছেন । মেয়েদের নামাজের স্হানে পুরুষ ক্যামেরাম্যান ভেতরে প্রবেশে বিধিনিষেধ আছে বলে তিনি নিজেই ক্যামেরা অপারেশন করেছেন । বাংলাদেশে সম্ভবত এই প্রথম নারীদের ঈদের নামাজ নিয়ে রিপোর্ট হলো। https://www.youtube.com/watch?v=8ML9fv3lPKU&
https://www.facebook.com/video.php?v=705932309499250
মেয়েদের নামাজ পড়তে বাঁধা দেওয়া ইসলামবিরোধী কাজ :
মেয়েদের মসজিদ ও ঈদগাহে নামাজ পড়তে বাঁধা দেওয়া খারাপ কাজ । এতে কবিরা গুনাহ হয় ।
কারণ হাদিসে আছে :
১. আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল ওয়াহহাব (রহঃ) উম্মে আতীয়া (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে) যুবতী ও পর্দানশীন মেয়েদের নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের আদেশ করা হত।
আইয়ুব - (রহ) থেকে হাফসা (রা) সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত আছে এবং হাফসা (রা) থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েতে অতিরিক্ত বর্ণনা আছে যে, ঈদগাহে মাসিকচলা মহিলারা আলাদা থাকতেন।
[সহীহ বুখারি-দুই ঈদ]
২. আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা) বলেছিলেন:
"আমি রাসুল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি- তোমাদের স্ত্রীগণ যখন তোমাদের কাছে মসজিদে যাওয়ার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে তখন তাদেরকে বাধা দিও না।" তার ছেলে বেলাল বললেন: আল্লাহর কসম! অবশ্যই বাধাঁ দেব। অতঃপর তিনি তার কাছে গিয়ে তাকে ভৎসনা করলেন; তাকে কটু কথা বললেন; যা তার কাছ থেকে আমি (বর্ণনাকারী; সালেম বিন আব্দুল্লাহ বিন উমার) কখনও শুনিনি। আর বললেন: আমি বলছি রাসুল (সা.) এর কথা আর তুমি বলছ অবশ্যই বাধা দেব ?!
[মুসলিম শরীফ: হাদীস নং ৪৪২]
মুসনাদে আবি ইয়ালা হাদিসগ্রন্হে এসেছে, তখন তিনি ছেলেকে থাপ্পড় দিয়েছিলেন। [হাদীস নং ২০০৬]
কারণ রাসূল (সা.)- এর কথার উপর অন্য কারো কথা গুরুত্বপূর্ণ নয় । কারণ আল্লাহ বলেছেন :
يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا أَطيعُوا اللَّهَ وَرَسولَهُ وَلا تَوَلَّوا عَنهُ وَأَنتُم تَسمَعونَ
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ মান্য কর এবং শোনার পর তা থেকে বিমুখ হয়ো না। ( সুরা আনফাল : ২০)
مَن يُطِعِ الرَّسولَ فَقَد أَطاعَ اللَّهَ
যে রাসুলের হুকুম মান্য করলো সে আল্লাহর হুকুম মান্য করলো । ( সুরা নিসা : ৮০ )
সুতরাং মেয়েরা ছেলেদের মতো মসজিদে যাবে, সেখানে নামাজ পড়বে এবং সব ইবাদত ও দুনিয়ার প্রয়োজনীয় কাজ সেখানে করবে ।
মেয়েদের মসজিদে নামাজ ও ঈদের নামাজ পড়ার গুরুত্ব :
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মেয়েরা জুমার নামাজসহ বিভিন্ন নামাজ মসজিদে যেয়ে পড়ছে ।
বাংলাদেশের সব মসজিদে জুমার নামাজ কেন সব নামাজ পড়ার জন্য মেয়েদের জন্য মসজিদে আলাদা অংশ বানানোর জন্য জনমত গঠণ করতে হবে । কারণ :
১. মহিলারা তাদের প্রয়োজনে ও ইসলামের প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছে । ষাটের দশক হতে মহিলারা ঘরের বাহিরে কাজ করছে । প্রতি দিনই মহিলারা ঘর থেকে বের হচ্ছেন । শুধুমাত্র কিছু পীরের সমর্থক ছাড়া বাংলাদেশের সব পরিবারের মেয়েরাই ঘরের বাহিরে যায় । তাছাড়া ক্ষুদ্র ঋণ ও অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য প্রায় সাড়ে ছয় কোটি মহিলাকে ঘরের বাহিরে যেতে হয় । এমন কি তারা ধান গাছ লাগায় , পাট গাছ কাটে , ইট ভাঙ্গে, রাস্তা মেরামত করে । স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-অফিস-আদালত-হাট-বাজার সর্বত্র মেয়েরা বিচরণ করছে । তাহলে ইসলামের কাজ করার জন্য কেন মেয়েরা ঘর হতে বের হবে না ? নামাজ পড়ার জন্য কেন মসজিদে যাবে না ?
২. বাংলাদেশের মেয়েরা ধর্ম সম্পর্কে একে বারেই অজ্ঞ । তার উপর কিছু আজে বাজে ধর্মীয় বইয়ে বাজার সয়লাব । তা পড়ে মেয়েরা ইসলাম সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করে । মেয়েরা মসজিদমুখী হলে তারা অনেক বিষয় জানবে এবং সে সব বিষয় বাস্তব জীবনে অনুসরণ ও চর্চা করতে পারবে ।
৩ .এ যুগে মহিলারা অফিস করছেন, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় যাচ্ছেন, স্বামীর সাথে বাজার করছেন। সালাতের সময় হলে তারা তা আদায় করবেন কোথায়। তাদের জন্য মসজিদে উপস্থিত হয়ে সালাত আদায় করলে অন্যায় হবে?
৪. বয়স্ক মহিলারা মসজিদে উপস্থিত হয়ে ওয়াজ-নসিহত ও খুতবা শুনলে ভালো ছাড়া মন্দ কোথায়? মসজিদে মহিলাদের স্বতন্ত্র নামাজের স্থান থাকলে এবং পুরুষরা রাস্তায় তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে জামাতে নামাজই তো উত্তম হয়।
৫. শত শত এমনকি হাজার হাজার মহিলা মাদ্রাসা, কলেজ ও ভার্সিটির হলে বাস করছেন। তারা যদি নির্দিষ্ট সময়ে এক সাথে জামাতে নামাজ আদায় করেন তাহলে তাদের জীবনে নিয়মানুবর্তিতা অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে। অফিসের মহিলা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জামাতে নামাজের আওতায় আনা যায় তাহলে নামাজির সংখ্যা বাড়বে বৈ কমবে না। জামাতে নামাজ এমন একটি পন্থা যা মানুষের জীবনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।
কোনো কোনো কল-কারখানায় দেখা যায় পুরুষদের জন্য জামাতে নামাজের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু মহিলাদের জন্য সেখানে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা নেই। এটি হওয়া উচিত নয়।
https://www.youtube.com/watch?v=KtKlkjP8fMI
উপসংহার :
জাগতিক শিক্ষার এই চরম উৎকর্ষতার যুগে মহিলাদের ইসলামের শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করা ও ইসলামি ধ্যান-ধারণার প্রতি উজ্জীবিত করা উলামায়ে কেরামের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। প্রত্যেক মসজিদ মহিলাদের জন্য আলাদা স্থান তৈরি করে তাদের নামাজে আনার ব্যবস্থা করা দরকার। তবেই, আমাদের মুসলিম নারীসমাজ কুরআনের জ্ঞানে সমৃদ্ধ ও বলীয়ান হয়ে উঠতে পারবে।
বিষয়: বিবিধ
১৪২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন