নিকাব ও বোরকা পরা সেই প্রেমিকা ( ২য় পর্ব )
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:৪৯:৩১ রাত
এক দিন আমার কর্মস্থল আমার দেশ অফিসে চলে আসেন আমার আজওয়াজ ফৌজিয়া ।সবে মাত্র চাকুরীতে জয়েন করেছি । এরই মাঝে কর্ম স্হলে আমার নাম ডাক ছড়িয়ে পড়লো । দেখার প্রথম দিনেই ও আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয় । ফেসবুকে অনেক আগের থেকে আমার জানা শোনা । এরপর আমরা সার্কিট হাউজ মসজিদের ইমামের হাতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলাম । তবে আমরা বিয়ের রেজিস্ট্রি করিনি।
আমার আজওয়াজ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রী সংস্হার নেত্রী। বোরকা ও নিকাব ছাড়া এই দলের মেয়েরা একে বারেই চলতে পারে না ।
প্রথম পর্ব পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন ।
ফেসবুকে ছাত্রী সংস্হার ললনাদের অনুসন্ধানী চোখ দিয়ে প্রোফাইল দেখে মনে হলো ইসলামী ছাত্রী সংস্হার মেয়েরা অত্যন্ত চালাক প্রকৃতির । তাদের থাকে বেশ কয়েকটা ফেসবুক একাউন্ট ও ইমেইল একাউন্ট ।
তারা ফেইসবুকে তাদের আসল নাম গোপন করে আইডি খুলে যেমনঃ দারুচিনি দ্বীপের কন্যা, মায়াবী চোখ, শেষ বিকেলের কন্যা ইত্যাদি।
প্রোফাইল পিকচারে আসল ছবি জীবনেও দেখা যায় না,সবসময় জীন- পরীর ছবি দেয়।
সারাদিন অফলাইন হয়ে একটিভ থাকে, সারাদিন কারো না কারো সাথে চ্যাটিং করে।
এই ধরণের মেয়েরা খুব বন্ধুত্বপূর্ণ হয়, তাই বলে মনে করবেন না যে এরা সিঙ্গেল, এদের অনেকের কিন্তু বয়ফ্রেন্ড থাকে।
ঐ যে বললাম এরা অত্যন্ত চালাক হয় । তাই ফেইসবুকে খুঁজে খুঁজে ভালো মানুষের সাথে ঠিকই এরা বন্ধুত্ব করে ফেলে।
আমার মনে হতো এদের মতো ভাল মেয়ে হয় না । তাই আমি ছেলেদের বলতাম : “ সর্বোপরি আমি একটাই কথা বলবো ভ্রাতাবৃন্দ, যদি তোমাদের এমন কোন মেয়ে আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকে তাহলে এদের পায়ে পড়েন আর বিয়ে করে ফেলেন । কারণ এদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, সারা জীবন পায়ের উপর পা তুলে খেয়ে পরে চলে যাইতে পারবেন।”
যাক , তিন –চারদিন অপেক্ষা করলে এক দণ্ড সুযোগ পাই আমার আজওয়াজ ফৌজিয়া রেজার সাথে দেখা করার । তার সাথে দেখা করার অর্ধেকটা সময় কাটতো জবাব দিতে দিতে, পথে কেন দেরি হলো। তারপর একটু বসার ও হাটার জায়গা। তিনি নিকাব খুলবেন।তবেই আমি তার নিষ্পাপ চেহারাটা দেখার সুযোগ পেতাম । প্রায় মাথার কাপড় খুলে ফেলতেন । দেখতাম ঘামে ভেজা কুচকুচে কালো চুল। সিল্কি, স্ট্রেইট। পবিত্র মুখ, লজ্জায় লাল টুকটুক। আমার ভেতরটা ভেঙেচুরে যেত। অবশ হয়ে যেত সব।
এরই মাঝে মাঝে কাপা কাপা কণ্ঠে-“আস সালামু আলাইকুম”। ঠিক কেয়ামতের আগের সময়টা যেন। ইসরাফিলের বাঁশির মতোই তার এ সালামে আমি কেঁপে যেতাম।
মানুষটার এই সালামের মধ্যে ছিল আহ্বান, আমি যেন সব কিছু ছেড়েছুড়ে তাকে নিয়ে বনে বাঁদাড়ে পালিয়ে যাই। তার সালামের উস্কানি আমাকে ফকির করে তুলতো। যেন এই জনারন্য এই কোলাহাল আমাদের জন্য বরাদ্দ হয়নি কভু। আমরা গহীণ বনে কুঁড়ে ঘর পেতে শাকসবজি কুড়িয়ে খাব। আর পাশাপাশি বসে একই প্রেমের সন্ধান করবো। প্রেমিক-প্রেমিকা ছিলাম না আমরা। আরেকজনের প্রেমে পড়েছি দু’জন। তাই আমরা ছিলাম বন্ধু, ভাই ও বোন, কিশোর-কিশোরী সাথী, কমরেড, সৈনিক, ফকির-ফকিরানী।
বেশির ভাগ সময়ে আমরা মসজিদ খুঁজতাম। যেন সত্যিই পালাতে পারি, অন্তত কিছু সময়ের জন্য। আমার কিরআতের সুরে যেন তিনি তন্ময় থাকেন। সিজদার সময় যে স্পর্শ, আমাদের কাতর করতো, আমরা মরার মতো পড়ে থাকতাম। একবার মসজিদে, দুবার ঘরের জায়নামাজে সুযোগ পেয়েছিলাম।
[ আমার আজওয়াজের এলাকাটাও দারুন । এখানে বিখ্যাত ধর্মীয় স্হাপনা আছে । যেমন : কাকরাইল মসজিদ, সিদ্ধেশ্বরী জামে মসজিদ, সার্কিট হাউজ জামে মসজিদ, কাকরাইল গির্জা, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, রমনা পার্ক মন্দির।
সার্কিট হাউজ জামে মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছেই আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই । সে প্রসঙ্গ পরে আনবো । ]
[ এই এলাকাতে আছে অনেক নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । হাবিবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী ডিগ্রি কলেজ, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ (১৯৫১), সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী বয়েজ হাইস্কুল (১৯৩৩), উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ (১৯৫৬), মগবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয়। ]
একটা মসজিদ অবশ্য সাক্ষী। সিদ্ধেশ্বরী বয়েজ স্কুল মসজিদ। বউয়ের সাথে দেখা করার আগে আমি নামাজ পড়তাম। দেখা হবে ভাবতেই উত্তেজিত হয়ে পড়তাম। উত্তেজনা মানে এ ভাবনা, উনার পবিত্র মুখটা দেখতে পাবো। কিভাবে সহ্য করবো এই পবিত্রতা, এই সৌন্দর্য আর বেহেশতি সুবাস! আমি মসজিদে ঢুকে পড়তাম। মোসলমান তো আর কিছুই যে পারি না। তাই মেঝেতে কপাল ঠেকিয়ে বলতাম- মাবুদ এত সুখ, এত প্রেম, এত প্রশান্তি কিভাবে সামাল দেব! বেশির ভাগ নামাজের কারণ ছিল ভয় কাটানোর ও সাহায্য প্রার্থনার। এই মেয়েটা আমাকে যেই পবিত্রতার দিকে টানতেছে, আমার খুব ভয় করতো, যদি উপযুক্ত নই বলে আল্লাহ আমাকে কবুল না করে!
এরপর দেখা পেতাম। সালাম শুনতাম। প্রেমের আবিষ্টতা আমাবে অবশ করে ফেলতো। তাই ফেরার সময় সালাম বিনিময়ের মাঝে ভুল করে বসতাম। তিনিই শিখিয়ে ছিলেন বিদায়ের বেলায় বলতে হয় : “ইয়া আজওয়াজ মা সালাম”। এটা ছেলে পক্ষের বলা নিয়ম।
উনি বলতেন, “ইয়া আজওয়াজ মা সালামা”। আমি ভুল করে উনারটাই বলতাম। উনি হাসতেন। আমি লজ্জা পেতাম।
তারপর যখন ফিরতাম আমর পা টলে যেত। মনে হতো গলা পর্যন্ত শরাব গিলেছি। আমি এক মাতাল তরুণ, বেঘোর নেশায় উন্মত্ত। আমার পা চলতো না। আমি আবার মসজিদটায় ঢুকে পড়তাম। আমার মধ্যে তখনই অনুভূতিটা গাঢ় হতে শুরু করলো…নামাজের মধ্যে এক আশ্চর্য আবিষ্টতার লেনদেন রয়েছে। আমার প্রায় সময়েই মনে হতো আমি আর উনি আল্লাহর তালুতে লুটোপুটি খাচ্ছি!
লোকাল বাসে ঝুলে বা বসে বাসায় ফেরার পথে আমার ভুল হয়ে যেত। ঘুমিয়ে পড়তাম। কাজীপাড়া ছাড়িয়ে দশ নম্বর চলে যেতাম। ওইখানে অনেক বেশি মানুষ দৌঁড়ঝাপ করে নামতো। তাই ঘুম ভাঙতো। কাঁচা ঘুম নিয়ে রাস্তায় নামতেই আমি কেমন যেন বেভুলা হয়ে পড়তাম।
কিভাবে সম্ভব হলো…আমি জীবনের এই প্রথম পার্কের বেঞ্চে বসেছি, ফুল কিনেছি, এক সাথে বসে তেতুল খেয়েছি! আমার হাতে ছিল বউয়ের জিলবাব (নিকাব ও মাথার কাপড়কে একত্রে জিলবাব বলা হয় ।)। তিনি খোলামুখে তাকিয়ে আছেন। আলতো করে চিমটি দিয়েছেন। চিমটিতে ব্যথা পাইনি, আবার চিমটি কাটতে বললে বুঝে যাবেন তাই আর চিমটি খাওয়ার কথা বলতে পারিনি।
উনি কবি মানুষ। প্রেমের প্রতিটি অনুভূতিকে তিনি শব্দের মায়াজালে আটকে রাখতে পারেন। আমি ক্ষুদ্র সাংবাদিক, ব্যর্থ রাজনীতিক। তাই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম শুধু। উনি যখন আমাকে ছেলেটা বলতেন, ঠিক তখনই আমার তালগোল পাকিয়ে যেত। দখল করতে করতে উনি আমার মাঝে অস্তিত্বহীনতার যে উপলব্ধি সঞ্চার করেছেন তাতে করে কত আগেইতো খোমেনী ইহসান থেকে আমি ফৌজিয়া রেজায় রূপান্তরিত হয়ে গেছিলাম! তবে ছেলে বললেন কেন!
অনেক দিন আমাদের সাক্ষাৎ নাই। কথা নাই। কেউ আমাকে বলে না তোমার হাতটা অনেক সুন্দর। তুমিই প্রকৃত আজওয়াজ (সঙ্গী)। তোমাকে দেখতে চেয়ে দেখতে না পেয়ে মাথা নষ্ট হয়ে যায়। বা টিপ্পনি কাটেন না এই কথা বলে যে, কালো শার্ট-প্যান্ট পরে দেশি কালো মুরগি কিনেই কি না আমাদের প্রথম সংসার যাপন হয়েছে।
অনেক দিনের বিরতিতে আমার মধ্যে ছেলে সুলভ অনুভূতি কাজ করে। পৌরুষ দেখিয়ে নিজের বউকে রাজপ্রসাদ ভেঙে নিয়ে আসতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আমি কখনোই তার অনুমতি ছাড়া কিছুই করতে পারি না। কারণ স্ত্রী, প্রেমিকা ও কমরেডের চেয়েও তার একটা বড় পরিচয় আমার ক্বলবের মধ্যে লেখা আছে। তিনি আমার তাসাউফের শিক্ষক। আমার মুর্শিদা কেবলা হযরত ফৌজিয়া রেজা ফকিরানী। মহান আল্লাহর এক পবিত্র দরবেশ নারী। জান্নাত ছাড়া হয়তো তার সাক্ষাত পাবো না।
মাবুদ দুনিয়াকে ক্ষণিকের করে তোল আপন কুদরত লীলায় !
আজ আমরা যা শিখলাম :
”ইসলামী প্রেম বিদ্যা ( ! ) “ অনুযায়ী প্রেমিককে বিদায় দেওয়ার সময় বলতে হয় : , “ইয়া আজওয়াজ মা সালামা” । প্রেমিকাকে বলতে হয় : “ইয়া আজওয়াজ মা সালাম”।
ইসলামী প্রেম বিদ্যা (!) অনুযায়ী প্রেমিকের সামনে মুখ খোলা খারাপ কিছু নয় ।
আর নিকাব ও বোরকা পরে প্রেম করার অনেক সুবিধা আছে ।
আপনারা হয়ত আরো অনেক কিছু জানেন, তাই না ?
চলবে ……
বিষয়: বিবিধ
২৭৮০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন