মেয়েদের যত সমস্যা (১ম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১২:৪৬:৫৫ রাত
অনেকেই বলেন, আমি মেয়েদের নিয়ে কেন লিখি ? উত্তর অনেক ভাবেই দিতে পারি । কুরআন ও হাদিসের আলোকে দিতে পারি । কিন্তু দিতে আগ্রহী নই । কারণ আমার কাছে অনেক মেয়ে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চায় বলেই মেয়েদের নিয়ে লিখি । মেয়ে বলতে সব বয়সের ও সব ধর্মের মেয়েদের কথা বলছি ।
আমি আমার পেশাগত কারণে বিভিন্ন চরিত্রে ক্ষেত্র বিশেষে অভিনয় করতে হয়েছে । কখনো শিক্ষক, কখনো সাংবাদিক, কখনো এনজিও কর্মী, কখনো তথ্য ব্যবস্হাপনা ……. । এসব পেশাগত পরিমন্ডলে বিচরণ করতে যেয়ে বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের বা নারীদের সংস্পর্শে আসতে হয়েছে । সুতরাং তাদের অনেক সমস্যা কাছ থেকে দেখতে হয়েছে । অনেক সময় তাদের অনেক সমস্যা দেখতে যেয়ে অনেক হাস্যরসাত্মক ঘটনাও দেখতে হয়েছে ।
একবার আমার এক কলিগ অসুস্হ । তিনি সন্তান সম্ভবা । তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলো । তার স্বামী আসলেন । আমরা বল্লাম তাকে আমরা লেবার রুমে নিয়েছি । তার স্বামী বলেন, আমার স্ত্রী কি লেবার । তাকে আপনারা লেবার রুমে নিয়েছেন । এই নিয়ে হাসপাতালের কর্মীদের সাথে তিনি ঝগড়ায় মেতে উঠলেন । পরে যখন কলিগের স্বামী লেবার রুমের বিষয়টি বুঝতে পারলেন, তখন তিনি ভীষণ লজ্জিত হলেন । এবং মাস ছয়েক পরে আমাদের কলিগ তার সন্তানকে নিয়ে অফিসে আসলেন তিনিও তার স্বামীর সেই সময়কার ঘটনা শুনে লজ্জিত হলেন ।
আসলে আমাদের সমাজকে দোষ দিয়ে লাভ নেই । আমাদের সমাজে এমন লোকের সংখ্যাই তো বেশী যারা মনে করে মেয়েদের কোন বিষয়ে ছেলেদের জ্ঞান অর্জনের বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নেই বা মেয়েদেরও ছেলেদের কোন বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজন নেই । ধরুণ আপনি কোন মহিলার স্বামী । আপনি যদি আপনার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর খাদ্যাবাস কেমন হওয়া উচিত ও তাকে তার এই অবস্হায় কোন কোন কাজ করা উচিত নয় – তার সামান্যতম জ্ঞান-গম্যি রাখেন, তাতে শুধু আপনারই নয়, সমাজেরই উপকার হয় ।
অনেক সময় আমি নিজেও লেখতে যেয়ে বিব্রতবোধ করি, কারণ আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের ব্যবধান অনেক । তার উপর মৌলবাদী ও ধর্মান্ধ দৃষ্টিভঙ্গী সমাজে প্রবলতর হওয়ার পাশাপাশি অসহিষ্ণু ও গোড়ামীপূর্ণতাও দিন দিন বাড়ছে । আজ আমি এমন একটা বিষয়ের মুখোমুখি হলাম ।
এক হিন্দু মহিলা আমার সাথে তার ছেলেকে নিয়ে সমস্যা শেয়ার করলেন । তিনি বলছেন, আমি অনেক ভাল ছিলাম । আমাকে কোন চিন্তা করতে হতো না এক মাত্র ছেলেটাকে নিয়ে । ইদানিং তার কর্মকান্ডের কারণে আমার স্বামীর সাথে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে ।
আমি বল্লাম : বিষয়টা খুলে বলুন ।
তিনি বল্লেন : ছেলেটাকে অনেক কষ্টে পড়াশোনা করিয়েছি । কয়েক বছর গান-বাজনা-গ্রুপ থিয়েটার করে সময় কাটায়। রাত করে বাড়ি ফিরে ।
আমি বল্লাম : গান-বাজ ও মঞ্চ নাটক করা তো খারাপ কিছু নয় !!! পড়াশোনা তো শেষ করেছে – নিশ্চয় ? আয় রোজগারও তো করছে , তাই না ।
তিনি বল্লেন : সব ঠিক আছে । কিন্তু ওর বাবা চান না সে গান-বাজনা করুক । সরকারী চাকুরী করুক । এজন্য ওর বাবা ১০ লাখ টাকা ঘুষ পর্যন্ত রেডি করে রেখেছেন । (এই কথা শুনে আমার হাসি পেলো । তবে হাসি সম্বরন করলাম । )
আমি বল্লাম : আপনার ছেলে সরকারী চাকুরীর গুরুত্ব বুঝতে পারবে । তিনি ঠিকই চাকুরী যোগাড় করে নিতে পারবে । এবং মেধা জোড়েই ভাল চাকুরী পাবে । ঘুষের প্রয়োজন হবে না ।
: তা বুঝলাম বাবা । কিন্তু চাকুরীর বয়স তো থেমে থাকে না ।
: তার আরো বেশ কয়েক বছর আছে সরকারী চাকুরী পাওয়া ।
তিনি বল্লেন : গান-বাজনা করে রাত বিরাতে বাড়ি ফেরার কারণে ওর বাবা চিৎকার চেচামেচি করে পাড়া মাৎ করেন । আর বাড়ির পরিবেশটাও ঘুমোট করে ফেলেন । আর আমি কারো পক্ষ নিতে চাই না । বাধ্য হয়ে মাঝে মধ্যে কারো না কারো পক্ষ নেই ।
কখনো যদি বলি, অমল রাত করে এসেছে, ওকে একটু বিশ্রাম নিতে দাও । সকালে না হয়, তোমার যা বলা আছে বলো ।
তখন আমার স্বামী ভীষণ রাগ করেন । আর সব রাগ আমার উপর ঝাড়েন ।
আর যদি ছেলেকে বলি, কি দরকার নাটক-ফাটক করার । নাটক-ফাটক করে কি পেট ভরে । এত এত নাটক করছো, এখন পর্যন্ত টিভিতে চেহারাটাও দেখাতে পারলে না । আমার হয়েছে জ্বালা ।
এই ধরনের কথা বল্লে ছেলে ভীষণ রাগ করে । ….. ( তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন ।) আমি কি করবো বুঝতে পারছি না , বাবা !!
আমি বল্লাম : ছেলেটাও আপনার । স্বামীটাও তো আপনার । আর আপনি নিজেও একজন পৃথক ব্যক্তি । আপনার নিজস্ব ব্যক্তিত্ব আছে । আপনার নিজস্ব স্বত্তা আছে । সুতরাং বিষয়টা এভাবে দেখুন ।
তিনি বল্লেন : বুঝলাম না ।
আমি বল্লাম : যখন আপনার স্বামী ছেলের সাথে ঝগড়া করা শুরু করে , তখন আপনি জোড় দিয়ে বলবেন, “তোমরা কি করছো না করছো, তা তোমাদের বাপ-বেটার কারবার । এতে আমি নেই । দয়া করে চিৎকার চেচামেচি করে তোমরা পাড়া মাৎ করো না । মানুষকে ঘুমাতে দাও । আর নিজেরাও ঘুমাও । “
এভাবে প্রতিটা ক্ষেত্রে নিজের মতো চলবেন । ….
তিনি বল্লেন : বাবা । বাঁচালে । তুমি অনেক বড় হও ।
তার এই কথা শুনে হাসলাম । তারপর আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বল্লাম । যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে আমি আপনাকে পরামর্শ দিবো, সেটা আপনি রাখলেও পারেন, আর না রাখলেও সমস্যা নেই । তবে অদুর ভবিষ্যতে আপনার উপকারই হবে ।
তিনি বল্লেন : বলো । বাবা ।
আমি বল্লাম : বলবো !!!
তিনি বল্লেন : বলো ..
ঠিক এসময় আমার আম্মা ডাক্তারের চেম্বার হতে বের হলেন । আম্মা বল্লেন কি কথা বলছিস্ রে …
আমি কি বল্লাম না । চুপ করে রইলাম । আমিও তো অমলের মতো । ও না হয় নাটক-ফাটক করে বেড়ায় । আর আমি ব্লগ লিখি আর জামায়াত-শিবির, আহলে হাদিস মার্কা লোকদের গালি খাই ।
তিনি আম্মাকে বল্লেন : ভাবী ডায়াবেটিক্সটা তাহলে কন্ট্রলে আছে ।
আম্মা বল্লেন : কিছুটা কমেছে । তবে ভাত খাওয়া কমাতে হবে । আর হাঁটা চালিয়ে যেতে হবে ।
আম্মাকে তিনি বল্লেন : আপনি অনেক ভাগ্যবান । আপনার ছেলেরা অফিস যাওয়ার সময়টাতে আপনাকে চেক আপের জন্য নিয়ে আসে । মাঝে মধ্যে মেয়েরা । কখনো ছেলের বৌ-রা ।
আমার তো শুধু একটা ছেলে । কবে ভাল একটা চাকুরী পাবে । ঘর-সংসার করবে ।
আম্মা বল্লেন : না । আপনিও ভীষণ ভাগ্যবতী । এই বয়সে স্বাস্হ্যটাকে ধরে রেখেছেন । ছেলেটাও তো মেধাবী ।
তিনি : তিনি একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লেন ।
“ আসি তাহলে । আবার দেখা হবে “ বলে আমি বিদায় নিলাম । আম্মাকে রিক্সায় তুলে দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম ।
মনে হয় , অফিসে যেয়ে আমি আমার নিজের মতোই চলতে পারবো ।
দিন শেষে দেখলাম : পারলাম না । বোয়াল মাছ, কাতল মাছ মার্কা বসদের ঝাড়ি খেলাম । আর এক গাদা উটকো কাজ শেষ করে অফিস হতে ফিরে লিখতে বসলাম । এবার অবশ্যই নিজের মতো লিখলাম ।
আরো জানার জন্য পড়ুন :
জামায়াতী ও হেফাজতী মহিলার ড্রেস এবং বেপর্দা মায়ের সন্তান
http://www.bd-monitor.net/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/57152
স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের আপুদের প্রতি অনুরোদ (১ম পর্ব)
http://www.bd-monitor.net/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/69689
দেরিতে বিয়ে করলে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে
http://www.bd-monitor.net/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/30588
বিষয়: বিবিধ
১৯০৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনারা যদি আমার পরামর্শ কাজে লাগবে মনে করেন, তাহলে আমি আপনাদের সেবায় নিবেদিত থাকবো ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন