ইসলামী ফ্যাশন শো-এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:৪৮:০২ দুপুর

সূচনা :











অনেকের ধারণা ইসলাম “ফ্যাশন ও অধুনিকতা”কে অগ্রাজ্য করে থাকে । কিন্তু এই ধারণা ভুল প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন অনকে ফ্যাশন ডিজাইনার ও মডেলবৃন্দ। তারা মুসলিম পরিবারের নারীদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, শালিন পোষাক পরার মাধ্যমেও ফ্যাশন করা যায়, পন্য প্রচার করা যায় এবং ইসলামী মূল্যবোধ-সংস্কৃতি প্রচার ও প্রসার করা যায় ।



ইসলামী ফ্যাশন শোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :

১। শালীন পোষাক জনপ্রিয়করণ

২। শালীন পোষাক ও ইসলামী বিষয়াদি এবং পন্য প্রচার ও পরিচিয় ঘটানো

৩। ইসলামী মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি প্রচার

৪। ইসলাম প্রচার ও প্রসার ঘটানো

৫।অশালীন পোষাকের বাজারকে সংকুচিতকরণ













ইসলামী ফ্যাশনের অর্থনীতি :

ইসলামী ফ্যাশনের বাজার অনেক বড় । শুধু মাত্র ২০২০ সালেই ইসলামী ফ্যাশনের বাজার ৩২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে ।

গত বছর তা ছিল প্রায় ২২৪ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলমানদের মধ্যে পোশাকে শালীনতার পাশাপাশি আধুনিকতা সংযোজনের আবেদন বাড়ছে। এ কারণে ইসলামী ফ্যাশনের বাজারও দিন দিন বড় হচ্ছে ও সব দেশেই ফ্যাশনেবল ইসলামী পোশাকের কদর বাড়ছে।

ধীরে ধীরে একটি বৈশ্বিক ইসলামী ফ্যাশন স্ট্যান্ডার্ডের দিকে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা, বিশেষ করে নারীরা। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১২ সালে ইসলামী ফ্যাশনের পেছনে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে তুরস্কের ভোক্তারা, ২৫ বিলিয়ন ডলার। এর পরপরই রয়েছে ইরান, ২১ বিলিয়ন ডলার। পরবর্তী অবস্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়া, মিসর, সৌদি আরব, পাকিস্তানের ভোক্তাদের ব্যয় যথাক্রমে ১৭, ১৬, ১৫ ও ১৪ বিলিয়ন ডলার।

মোট বিক্রির দিক থেকে পোশাকের সর্বোচ্চ ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্রের পরপরই রয়েছে ইসলামী পোশাকের বাজারটি। মার্কিন ভোক্তারা বছরে গড়ে ৪৯৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক কেনে। এদিকে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার মুসলিমরা গত বছর পোশাক ও জুতা বাবদ ব্যয় করেছে ২১ বিলিয়ন ডলার। ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর বাজারেও ফ্যাশনেবল ইসলামী পোশাকের চাহিদা রয়েছে। এছাড়া অনেক অমুসলিম ভোক্তার মধ্যে ইসলামী পোষাকে চাহিদাটি সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে । এক সময় তারাও ইসলামী পোষাকের প্রধান ক্রেতা হবে ।

http://www.arabianbusiness.com/islamic-fashion-market-set-be-worth-327bn-by-2020-604854.html

ইসলামী ফ্যাশনের ক্ষেত্রে অগ্রগামী দেশসমূহ :

ইসলামী ফ্যাশনের ক্ষেত্রে বড় উদাহরণ সৃষ্টি করেছে ইন্দোনেশিয়া,তুরস্ক, মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত, কাতার ও বসনিয়া ।



আর বাংলাদেশও এই ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই । বাংলাদেশে বহু প্রতিকুলতা সত্বেও অনেক ফ্যাশন হাউজ , ফ্যাশন ডিজাইনার ও মডেল এগিয়ে যাচ্ছেন ।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ ইন্দোনেশিয়া।

ইসলামী আধুনিকতার নানা বিষয়ের পথিকৃৎ হিসাবে তারা নিজেদের গড়ে তুলছেন। বর্তমানে সেখানে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মুসলিম নারীদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা পোশাক। ইসলামী পোশাকের চাহিদা ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে এই দেশটি। বিশেষ করে অভিজাত মহলের বাজারে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই পোশাকে রয়েছে জমকালো ও সূক্ষ্ম কারুকাজ।

প্রতি বছর ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত ইসলামী ফ্যাশন মেলায় নারীদের এই পোশাক ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। বিশ্বের বিখ্যাত ডিজাইনাররা তাদের ব্যতিক্রমী ডিজাইন নিয়ে হাজির হন।

ইন্দোনেশীয় মুসলিম পোশাক শিল্প কনর্সোটিয়ামের হিসাব অনুযায়ী শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়াতেই এই শিল্পের বাজার গত বছর ছিল ৪০ কোটি ৮০ লক্ষ মার্কিন ডলার। ইসলামী ফ্যাশনের স্থিতিশীল বাজারের কারণে বহু অমুসলিম ডিজাইনারও ইসলামী পোশাক ডিজাইনে এগিয়ে এসেছেন।

ইন্দোনেশিয়ায় ইসলামী ফ্যাশনের এই বিশাল বাজার গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হল সেখানে নানাধরনের স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী বস্ত্রের সম্ভার। বাটিক, টাই ডাই,বুননের কাজসহ নানাধরনের কাপড় ডিজাইনারদের সৃজন প্রতিভাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। আধুনিক সৃজনশীলতার পরিচয় পাওয়া যায় এইসব হিজাবের ডিজাইনে। ইন্দোনেশিয়ার রৌপ্য কুটিরশিল্পের অবদান রূপার প্রজাপতি ব্রোঞ্জের অলংকরণসহ নানা ধরনের পোশাক এতে স্থান পেয়েছে।

http://www.bdallnews24.com/article/13072/#sthash.wW4iivLA.dpuf

বাংলাদেশে ইসলামী ফ্যাশন মডেল :

বাংলাদেশের সফল ইসলামী ফ্যাশন মডেল ও ইসলাম প্রচারক সাইফুর রহমান খান । তিনি সাইফুরস্ কোচিং সেন্টারের প্রধান নির্বাহী এবং তাবলীগ জামায়াতের বাংলাদেশ অংশের গুরুত্বপূর্ণ মুরব্বী ও ইসলাম প্রচারক ।





তার বিস্তারিত পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করছি । কারণ অন্য এক লেখায় তার ইসলামী ফ্যাশন - এর মডেল হওয়ার কারণ ও তার ইসলাম প্রচারের ধরণ তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ । অভিভাবক মহলে কাছে, তিনি মূলত বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও কোচিং সেন্টারগুলোকে ইসলামীকরণের কাজের প্রধান অগ্রদুত হিসেবে বিবেচিত ।

ইসলামী ফ্যাশন শো-এর তাৎপর্য :

১। ইসলাম মানুষকে পুত-পবিত্র ও মার্জিত জীবন যাপন করতে বলে । অশালীনভাবে পোষাক পরা ও শরীরের ব্যক্তিগত অঙ্গ প্রদর্শণ ইসলামে করিবা গুনাহ হিসেবে বিবেচিত ।

এপ্রসঙ্গে রাসুল সা বলেছেন : ‘যে দেখে ও দেখায় উভয়ের উপর আল্লাহ-র অভিশাপ বর্ষিত হয়।”

২। ইসলামে বেআব্রু ভাবে চলাফেরা করা গর্হিত কাজ ।

আল্লাহ বলেছেন ‘হে মেয়েরা । তোমরা অন্ধকার যুগের মেয়েদের মতো নিজেদের প্রদর্শণ করে বের হবে না।’

ইসলামী ফ্যাশন বেআব্রু হয়ে চলাফেরাকে অগ্রাজ্য করে থাকে ।

৩। ইসলামী ফ্যাশন পোষাকের ক্ষেত্রে অমুসলিম দৃষ্টিভঙ্গিকে অগ্রাজ্য করে থাকে । কারণ অমুসলিমদের ফ্যাশন হলো শুধু মাত্র জাগতিক উদ্দেশ্যে পণ্য প্রচার ও বিক্রি ও অশ্লীলতা বিস্তারের পাশাপাশি অমুসলিম সংস্কৃতি ও ইসলাম অবমাননা প্রচার ও প্রসার করা । অমুসলিমদের ফ্যাশন শো-এর মাধ্যমে মুসলিম মেয়েরা মুতগাইরাত রাইয়াহ্ ও ছেলেরা দাইয়ুস-এ পরিনত হয় । হাদিসে বলা আছে, মুতগাইরাত রাইয়াহ্ ও দাইয়ুস সম্প্রদায় জান্নাতে যাবে না । তাদের মৃত্যুর পর তাদের কবর আজাব হবে ও হাশরের মাঠে তাদের অমুসলিমদের সাথে রাখা হবে এবং পরবর্তীতে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে । আর তারা মারা গেলেও তাদের গুনাহ সদগায়ে জারিয়া রূপে তাদের আমল নামায় লেখা হবে ।

উপরোক্ত কারণগুলো হতে আমরা উপনীত হতে পারি যে ইসলামী ফ্যাশন শো বেশী বেশী অনুষ্ঠিত হলে হিন্দুয়ানী মুসলিম (আড়ং-এর সাথে জড়িত সবাই), খৃস্টানী মুসলিম (বিবি রাসেল) , ইহুদীয়ানী মুসলিম (প্রথম আলোর সাথে জড়িত প্রায় সব ফ্যাশন হাউজ ) গুলো ইসলামী বিরোধী তৎপড়তা ও অশ্লীলতা-ব্যবিচার ছড়ানোর হার তুলনামূলক ভাবে কমে যাবে এবং ইসলামী সংস্কৃতি ও ইসলামী মূল্যবোধের বিস্তার ঘটবে ।



ইসলামী ফ্যাশন ম্যাগাজিন :

ইসলামী ফ্যাশন ম্যাগাজিন-এর ক্ষেত্রে তুরস্কের আলা এবং মালয়েশিয়ার হিজবেস্টিয়া আলোড়ন সৃস্টি করেছে । ইন্দোনেশিয়াতে ৮৭ টা ইসলামী ফ্যাশন ম্যাগাজিন বের হয় ।

ইসলামী ফ্যাশন ও ব্লগিং বা হিজাব ব্লগিং :

ইসলামী ফ্যাশনের উপর ব্লগিং সাইট অসংখ্য । ইসলামী ফ্যাশনকে জনপ্রিয় করার জন্য এসব ব্লগিং কাজ করে যাচ্ছে । ইসলামী ফ্যাশন ব্লগিংকে হিজাব ব্লগিংও বলা হয় । হিজাব ব্লগিং - এর ক্ষেত্র বিশাল । বিস্তারিত জানার জন্য আমার এই লেখা পড়ুন : http://www.bd-monitor.net/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/34592 হিজাব ব্লগিং, হিজাব পার্লার, হিজাব সেলুন কি এবং কেন ? ।



ইসলামী ফ্যাশন ও ইসলামী ফ্যাশন- শোর প্রতিবন্ধকতাসমূহ :


ইসলামী ফ্যাশন ও ইসলামী ফ্যাশনের ক্ষেত্রে বাঁধা সৃষ্টি করছে অমুসলিমদের একটা বড় অংশ এবং ধর্মান্ধ ও কুসংস্কারাচ্ছ কিছু মুসলিম । তারপর ইসলামী ফ্যাশন ও ইসলামী ফ্যাশন শো এবং ইসলামী পোষাক ও পণ্যের বাজার বিশ্বময় বিস্তার লাভ করেছে ।

ইসলামী ফ্যাশন ও ইসলামী ফ্যাশন- শোর সাথে যুক্ত হওয়ার পরিনাম :

ইসলামী ফ্যাশন ও ইসলামী ফ্যাশন- শোর সাথে যুক্ত সবাই দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত হবে এবং আল্লাহ তাদের সবাইকে জান্নাতের বাসিন্দা করবেন । আর এজন্য তাদের সবাইকে আল্লাহভীরু মসলিম হওয়ার পাশাপাশি ইসলাম প্রচার ও প্রসার করতে হবে ।

উপসংহার :

আমাদের ইসলামী ফ্যাশন ও ইসলামী ফ্যাশন শো এর উপর নিয়মিত অধ্যয়ন করতে হবে । এসব ক্ষেত্রের সাথে সম্পৃত্ত হওয়া এখন সময়ের দাবী হয়ে দাড়িয়েছে ।

বিষয়: বিবিধ

২২৬৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

339720
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:২২
কুয়েত থেকে লিখেছেন : খুবই ভালো লাগলো ইসলামই শ্রেষ্ট সকল ক্ষেত্রে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:২৮
281064
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন : ইসলামেই সব সমস্যার সমাধান রয়েছে । ইসলাম উন্নায়ন-অগ্রগতি-প্রগতি-শান্তি-সংহতি বিরোধী নয় । ইসলাম সর্বকালের সর্ব যুগের । ইসলামকে বুঝতে হলে শিরা ‍উপশিরা দিয়ে নিজের যুগকে বুঝতে হবে এবং কুরআন ও হাদিসের মূলনীতিগুলোকে তার সাথে সাথে গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে । অন্যথায় আমরা ইসলামকে খন্ডিতভাবে চর্চা করবো । এর ফলও আমাদের জন্য কল্যাণকর হবে না বা হয় না ।

আমার এই লেখাটা পড়ার জন্য আপনাকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দান করুন ।
339906
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:০৮
হতভাগা লিখেছেন : লোক দেখানো কাজ ইসলাম পছন্দ করে না । ফ্যাশনের নামে পরপুরুষ ও মহিলাদের সামনে আগমন ঘটে এবং হাটার ঢংও শরিয়ত অনুমোদন করে না ।
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:৪০
281409
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন : শরিয়াত আপনার প্রোফাইল পিকটা প্রদর্শণ করা সমর্থন করে কি ? - দয়া করে এই বিষয়ে আলোচনা করুন ।

জামায়াতী দিগন্ত টিভি ঠিকই কিন্তু পরপুরুষের সামনে মেয়েদের চেহারা প্রদর্শণই নয় তাদের রং ঢং-ও দেখিয়েছে । এব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করুন ।







https://www.youtube.com/watch?v=UpRv4N1YUsA


জামায়াতী মেয়ের চেহারা দেখুন


https://www.youtube.com/watch?v=6lC1USsMrWY


জামায়াতী ধর্মব্যবসায়ী তারিক মনোয়ারের বেগানা মেয়ে নিয়ে গান করার দৃশ্য দেখুন
https://www.youtube.com/watch?v=dkGBD72j2f8



জামায়াতী চিত্র পরিচালক হাসানুল বান্না তার অহনীশ ফ্লিম নামক কোম্পানী করে ইসলামী সর্ট ফ্লিম ও ইসলামী এড বানানোর নামে কিছু মেয়েকে পরপুরুষ ও মহিলাদের সামনে রংচং মাখিয়ে ভালভাবেই উপস্হাপন করে যাচ্ছে । এব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করুন ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File