সারা বিশ্বে একই বার ও তারিখে রোজা ও ঈদ করার জন্য সৌদি আরবের ক্যালেন্ডার ব্যবহার করতে হবে

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ১৮ জুলাই, ২০১৫, ১২:৪১:৪৫ দুপুর



আমি বাংলাদেশের হিসেবে এক দিন আগে রোজা শুরু করি । কারণ বাংলাদেশেরটা ভুল বলে মনে করি ।

১৭ অক্টোবর ২০১৫ তারিখ শুক্রবার অনেক দেশের মুসলিমরা ঈদ করছেন । যেমন : সৌদি আরব । এই ব্যাপারটাকে অনেকে জ্যোর্তিবিজ্ঞানের বিভিন্ন উপাত্ত দিয়ে ভুল প্রমাণ করার বৃথা চেষ্টা করছেন । যেমন : নিচের স্ক্রীনশটটা



বাস্তবতা হলো যেসব দেশ সৌদি আরবকে অনুসরণ করে ঈদ করছেন তারা জ্যোর্তিবিজ্ঞান ও পঞ্জিকা বিজ্ঞান অনুযায়ী সঠিক কাজ করছেন ।

সৌদি আরবের ইতিবাচক দিক :

আমি সৌদি আরবের শাসক সম্প্রদায়ের কিছু নীতির বিরোদ্ধে সোচ্চার হলেও পঞ্জিকার ব্যাপারটিকে সমর্থন করি । আমি সাবেক বাদশাহ শহিদ ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজ-কে আমি হৃদয়ের অন্তস্হলে হতে শ্রদ্ধা করি ও ভালবাসি ।

সৌদি আরবের শাসক ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজ (শাসন কাল ১৯৬৪ - ১৯৭৫) সারা বিশ্বে একই বার ও তারিখে মুসলিমরা রোজা ও ঈদ পালন করা এবং মুসলিমদের শুধুমাত্র হিজরী ক্যালন্ডার বাস্তব জীবনে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম উদ্যোগ নেন ।

তিনি মুসলিম দেশগুলো নিয়ে শক্তিশালী সংগঠণ অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কান্ট্রিরিজ (ওআইসি)-র প্রধান উদ্যোক্তা ও পৃষ্ঠপোষক । তার রাজনৈতিক দর্শণ ছিল :

১। pan-Islamism,

২। anti-Communism,

৩। pro-Palestinian nationalism




https://www.youtube.com/watch?v=9T6WzsTcWrg




https://www.youtube.com/watch?v=fAyB94cGB88




https://www.youtube.com/watch?v=v1qLT5o9WHU

ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজ-এর কালজয়ী ভাষণ ও সাক্ষাৎকার

তিনি তার সব গঠণমূলক কাজগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেননি । কারণ তাকে শাহাদাত বরণ করতে হয় ।





নতুন চাঁদ দেখার জ্যোর্তিবিজ্ঞান সম্পর্কিত মানদন্ড ও নতুন চাঁদ দেখার জন্য দুরবীন ও রাডার ব্যবহার :

নতুন চাঁদ দেখার জ্যোর্তিবিজ্ঞান সম্পর্কিত মানদন্ড স্হান অনুযায়ী পরিবর্তনশীল । উপরন্তু নতুন চাঁদ দেখার যে মানদন্ড আছে তা গড় হিসেবে মাত্র । উপরন্তু এসব মানদন্ড হিসেব করে পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডার বানানো সম্ভব নয় । এজন্য জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দেশ ও স্হান অনুযায়ী মানদন্ড স্হির করে থাকেন । বাংলাদেশের সরকারী ক্যালেন্ডারগুলোতে এজাতীয় মানদন্ড রয়েছে । এতে দেখা যায় নতুন চাঁদের বয়স ১.৫ দিন বা ২ দিন হলেও হিজরী সনের তারিখ ১ তারিখ ধরা হয় না ।

এভাবে বিশ্বের সব দেশকে ক্যালেন্ডার বানানোর ক্ষেত্রে এভাবে অনেকগুলো মানদন্ড ব্যবহার করা হয় । নতুন চাদের বয়স ৯ ঘন্টা এমন নতুন চাঁদ খালি চোখে দেখা যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে । উপরন্ত খালি চোখে দেখার আগেই দুরবীন ব্যবহার করে নতুন চাঁদ দেখা সম্ভব । অনেক সময় যে এলাকায় খালি চোখে নতুন চাঁদ দেখা সম্ভব নয় , সেই এলাকায় দুরবীন দিয়ে দেখা সম্ভব । যেমন এই দুরবীন দিয়ে দেখা সম্ভব :




https://www.youtube.com/watch?v=Wra1X6m9tiE

আমি বেশ কয়েক বছর আগে সৌদি আরবের টিভিতে ঈদের নতুন চাঁদ দেখার উপর লাইভ টক শা-র অনুষ্ঠানদেখেছি । সেই অনুষ্ঠানে দুরবীন ব্যবহার করে সরাসরি নতুন চাঁদ দেখানো হচ্ছিল । আর কীভাবে নতুন চাঁদ দেখতে হয় তাও বর্ণণা করা হচ্ছিল । এই অনুষ্ঠানের ভিডিওটা পরবর্তীতে শেয়ার করবো ।



দুরবীন বিভিন্ন ধরনের হয় -

1. আলোক দুরবীন :http://bangladesh-astronomical-union.blogspot.com/2015/06/orbinar-203800-eq4-reflector-telescope.html

2. রেডিও দুরবীন । যেমন : রাডারও এক ধরনের দুরবীন । অনেক দেশ চাদ দেখার জন্য রাডারও ব্যবহার করে । যেমন : তুরস্ক । আর এই ক্ষেত্রেও বিশেষ মানদন্ড স্হির করেছে ।

মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া,সিঙ্গাপুর দুরবীন ব্যবহার করে । ব্রুনাই করে না । এজন্য অনেক সময় এদেশ এক দিন পর ঈদ করে ।



রেডিও দুরবীন বা রডার কীভাবে কাজ করে

বর্তমানে সৌদি আরবের মানদন্ড হলো : Conjunction before sunset of Makkah and moonset after sunset

( সংক্ষেপে : Ummul-Qura Calendar)

কিন্তু এর ফলে বিশ্বের সামান্য কিছু দেশ একই বার ও তারিখে রোজা ও ঈদ করতে পারে না বা পারবে না ।

যেমন : এবার সৌদি আরবের ক্যালেন্ডার অনুসরণ করায় দুইটা বার ও তারিখে ঈদ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ।











এই সমস্যা সৃষ্টির কারণ হলো :

১। ফিকহ শাস্ত্র মতে ফরজ নামাজের ওয়াক্তের আগে ঈদ ও রোজা শুরু করার খবর জানতে হবে । ভৌগলিক কারণে বিশ্বের অনেক দেশ আছে ও থাকবে যেগুলোতে সর্বপ্রথম নতুন চাঁদ দেখার খবর পাওয়ায় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে ও হবে ।

২। ইসলামী বার শুরু হয় মাগরিবের নামাজ পর হতে । অর্থাৎ আজ মাগরিবের নামাজের পর বাংলাদেশে ২ শাওয়াল ১৪৩৬ হিজরী রবিবার শুরু হবে । অথচ তখন ইংরেজী বা গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডারে শনিবার থাকছে । এই ক্যালেন্ডারে বার পরিবর্তন হয় রাত ১২ টার পর ।

অর্থাৎ ইসলামী বার ইংরেজী ক্যালেন্ডারের প্রথম দিনের প্রায় ৬ ঘন্টা এবং পরবর্তী দিনের ১৮ ঘন্টা মিলে হয় ।

এই সমস্যা দুর করারও উপায় আছে ।

শুদ্ধতম হিজরী পঞ্জিকা ও সৌদি আরব :

বর্তমানে সৌদি আরবের ক্যালেন্ডার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সামান্য সংশোধনী আনলে বিশ্বের সব দেশ একই বার ও তারিখে ঈদ করতে পারবে । এই ক্ষেত্রে আমার প্রস্তাব হলো :

"If the moon is born before 12:00 Universal Time (UT) then somewhere in Polynesian Island at sunset, the age of the moon will be 18 hours and the month begins at sunset of that day everywhere in the world, otherwise the month begins on the next day's sunset everywhere. ”

( সংক্ষেপে : Conjunction before 12:00 UT )

এব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা পরবর্তী কোন লেখায় দিবো ইনশাআল্লাহ ।





আমরা কেন আধুনিক বিজ্ঞানময় পদ্ধতি ব্যবহার করবো :


১।রাসুল সা. - এর যুগে চশমা ছিল না , ঘড়ি ছিল না । যদি থাকতো এসব ব্যবহারের কথা হাদিসে থাকতো । তার মানে এই নয় এসব ব্যবহার করা যাবে না । আমরা ইসলাম প্রচার করার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করি । ফেসবুক ব্যবহার করি । হাদিসে এসব ব্যবহার করার কথা নেই । তারপরও করি ।

আমরা বাংলাদেশি মুসলিমরাও সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, ইউরোপ,রাশিয়া,তুরস্কের মুসলিমদের মতো দুরবীন ব্যবহার করে নতুন চাঁদ দেখতে পারি এবং এসব দেশের মুসলিমদের সাথে একই বার ও তারিখে রোজা ও ঈদ করতে পারি । এব্যাপারে আমাদের দুরবীন ব্যবহার করা বৃদ্ধি করতে হবে ও সরকারকে এব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে । আলেম সমাজেকেও এব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে ।

২। ফিকহ শাস্ত্র মতে, মুসলিমদের সব কাজে হিজরী পঞ্জিকা ব্যবহার করা ফরজ । পঞ্জিকা শুদ্ধতম না হলে ইবাদত ও জাগতিক কাজে জটিলতা সৃষ্টি হয় ।

জেনে শুনে ইংরেজী বা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার এবং বঙ্গাব্দ বা অন্য কোন কুফরী ও শিরকী ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা ও অপরিহার্য ভাবা ও বাস্তব জীবনে ব্যবহার করা কবিরা গুনাহ ।

অনেকে এই বিষয়ের পক্ষে আমার কাছে কুরআন-হাদিস-ফিকহ হতে দলীল দাবি করতে পারেন । অবশ্যই আমার কাছে এসম্পর্কিত সব ধরনের দলীল-প্রমাণ-তথ্যাদি আছে ।

এই বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা অন্য কোন লেখায় দিবো ইনশাআল্লাহ ।



উপসংহার :

মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও সংহতির স্বার্থে এবং ইবাদতগুলো যথাযাথভাবে করার জন্য সৌদি আরবের চলমান পঞ্জিকা ব্যবহার করার পাশাপাশি নতুন চাঁদ দেখার জন্য ”জাতীয় (!) চাঁদ (!) দেখা কমিটি “ - কে ও জনসাধারণকে দুরবীন ও রাডার ব্যবহার করায় যত্মবান হতে হবে । আর সৌদি আরবকেও তার পঞ্জিকায় সামান্য সংশোধনী আনতে হবে ।

এই লক্ষ্যে আলেম সমাজকে এগিয়ে আসার পাশাপাশি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জ্যোতির্বিজ্ঞান ( Astronomy )-কে বহুল পঠিত বিষয়ে পরিনত করতে হবে ।

বিষয়: বিবিধ

২১৩১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

330531
১৮ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫২
ইসলামী দুনিয়া লিখেছেন : ধন্যবাদ না দিয়ে পারলাম না।
১৮ জুলাই ২০১৫ রাত ০৮:২৩
272751
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন : وَمَا عَلَيْنَا إِلاَّ الْبَلاَغُ الْمُبِينُ


পরিস্কারভাবে আল্লাহর বাণী পৌছে দেয়াই আমাদের দায়িত্ব। (সুরা ইয়াসীন : ১৭)
330584
১৯ জুলাই ২০১৫ রাত ০৩:৫৯
স্বপন২ লিখেছেন : ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজ ,সে হলো
ওহাবী। ওহাবীদের সাথে ভালবাসা।
১৯ জুলাই ২০১৫ সকাল ১০:০২
272857
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন : তিনি ওহাবীদের সর্দার হলেও তার কাজ-কর্মের মধ্যে ওহাবী হওয়া চিহ্ন পাওয়া যায় না । বুখারী শরীফের হাদিসে ওহাবীদের শয়তানের শিং হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে ।

তাঁর কাজ-কর্ম-চিন্তা-চেতনার মধ্যে ওহাবীদের চরিত্র প্রকাশ পায়নি । এক জন আদর্শ মুসলিমের মধ্যে যা যা বৈশিষ্ট্য ছিল তার মধ্যে সব বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ মাত্রায় ছিল । এজন্যই তিনি শাহাদাতবরণ করেন ।

তিনি যেহেতু পরিপূর্ণ মুসলিম । সেজন্য তার প্রতি মুসলিমদের ভালবাসা ও শ্রদ্ধা পোষন করতে হবে ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File