সর্ব শক্তিমান আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন এবং তার কিছু নেগাবান ফেরেশ্তা আমাদের সাহায্য করছেন

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ১৬ জুলাই, ২০১৫, ০৩:৫৪:৫৭ দুপুর



সর্ব শক্তিমান আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন এবং তার কিছু নেগাবান ফেরেশ্তা আমাদের সাহায্য করছেন । যত দিন আল্লাহ আর তার নেগাবান ফেরেশ্তারা আমাদের পৃথিবীতে রাখতে চাইবেন তত দিন আমরা পৃথিবীতে থাকবো । আর তত দিন কোন শক্তিই আমাদের বিলীন করতে পারবে না ।

আমার এই কথা কি কুরআন-হাদিস দ্বারা সমর্থিত ?

উত্তর : হাঁ ।

আজ আমি এই লেখায় কুরআন-হাদিস হতে দলীল প্রমাণ প্রদশন করবো ।









কিরামান কাতিবিন ( كاتبين كراماً) বা হিসাব লেখার ও রক্ষাকারী ফেরেস্তা :


আল্লাহতালার নির্দেশে ফেরেশতারা আল্লাহতালার সমস্ত সৃষ্টি ও মাখলুকাতের কার্য্য পরিচালনা করে চলেছেন। প্রত্যেক মানুষের সাথে সর্বক্ষণ ২জন হিসাব লেখার ফেরেস্তা থাকে এবং ডানে-বামে সামনে ও পেছনে ২জন রক্ষাকারী ফেরেস্তা থাকে ।

এই বিষয়ে কুরআনের কিছু আয়াত উল্লেখ করছি :

প্রমাণ - ১ :

لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِّن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللّهِ إِنَّ اللّهَ لاَ يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنْفُسِهِمْ وَإِذَا أَرَادَ اللّهُ بِقَوْمٍ سُوءًا فَلاَ مَرَدَّ لَهُ وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَالٍ

আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুসরণকারী রয়েছে সকলের অগ্রে এবং পশ্চাতে, আল্লাহর নির্দেশে তারা ওদের হেফাযত করে। আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আল্লাহ যখন কোন জাতির উপর বিপদ চান, তখন তা রদ হওয়ার নয় এবং তিনি ব্যতীত তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।

[সুরা ১৩ রা’দ: ১১]

প্রমাণ - ২ :

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ

16

আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী।

إِذْ يَتَلَقَّى الْمُتَلَقِّيَانِ عَنِ الْيَمِينِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيدٌ

17

যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল গ্রহণ করে।

مَا يَلْفِظُ مِن قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ

18

সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।

[সুরা ৫০ ক্বাফ: ১৬-১৮]

প্রমাণ - ৩ :

وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ

10

অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে।

كِرَامًا كَاتِبِينَ

11

সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ।

يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ

12

তারা জানে যা তোমরা কর।

‘অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। তারা জানে যা তোমরা কর।

[সুরা ৮২ ইনফিতার: ১০-১২]

প্রমাণ - ৪ :

إِن كُلُّ نَفْسٍ لَّمَّا عَلَيْهَا حَافِظٌ

04

প্রত্যেকের উপর একজন তত্ত্বাবধায়ক রয়েছে।

অথবা

এমন একটি নফস নাই যাহার উপর একজন রক্ষক না আছে

[সূরা তারেক :৪ ]

সুরা তারেকের ৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যা :

প্রত্যেক নফসের উপর রক্ষক নিয়োজিত করা হইয়াছে উহাকে বিপদ আপদ হইতে রক্ষা করিবার জন্য এবং পরিপূর্ণতার দিকে অগ্রসর করাইয়া দেওয়ার জন্য। তিনি ছাড়াও তদুপরী এই রক্ষাকারী শক্তিগুলি শুধু ফেরেস্তা নয়, তাহাছাড়া আরও অনেক প্রকার অদৃশ্য শক্তি ও ব্যবস্থা দ্বারা মানবীয় নফস সুনিয়ন্ত্রিত করিয়া রাখিয়াছেন। এই জন্য ফেরেস্তা শব্দ ব্যবহার না করিয়া একজন হেফাজতকারী শব্দ ব্যবহার করিয়াছেন, কারণ নফস এত সুবিন্যস্ত ও সুক্ষভাবে পরিচালিত যে ইহার রক্ষণ-জ্ঞান ফেরেস্তা তো দূরের কথা মানুষের ধারণায় আসাও দুষ্কর।

কাদেরকে ডানে ও বামে সালাম দিয়ে আমরা প্রতিদিন আমাদের নামাজগুলো শেষ করি ? :

আমরা নামাজের শেষে বলি ‘আসসালামুআলাইকুম ওয়ারহমতুল্লাহ’ অর্থাৎ, তোমাদের উপর আল্লাহর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক। এই ‘তোমাদের’ বলতে কাদেরকে বুঝানো হচ্ছে? অবশ্যই আল্লাহর রহমতের রূহসমূহ এবং রহমতের ফেরেস্তাসমূহকে।

মানুষ ও জ্বীন, হোক সে একা বা লোকালয়ে, সর্বদা ও সবসময় আল্লাহর আজ্ঞাবাহীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে আছে।

তাঁরা আল্লাহর হুকুমে তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্বগুলো যথাযথভাবে পালন এবং পরিচালনার করে যাচ্ছেন। ‘কিরামান কাতিবিন’ বা হিসাব লেখার ও রক্ষাকারী ফেরেস্তারা তো আল্লাহর হুকুমে আমাদের প্রতিটি চিন্তা ও কাজের সরাসরি সাক্ষী, যা আখিরতে বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করে দেওয়া হবে ।

মৃত্যুর পূর্বে ৪ জন ফেরেস্তা যেভাবে জানিয়ে দেয় মৃত্যুর আগাম সংবাদ

হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, যখন মানুষের অন্তিমকাল উপস্থিত হয় এবং রূহ বের হবার সময় ঘনিয়ে আসে, তখন চারজন ফেরেশতা তার কাছে উপস্থিত হয়। সর্বপ্রথম এক ফেরেশতা উপস্থিত হয়ে বলবেন “আসসালামু আলাইকুম” হে অমুক! আমি তোমার খাদ্য সংস্থানের কাজে নিযুক্ত ছিলাম। কিন্তু এখন পৃথিবীর পূর্ব থেক পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত অন্বেষণ করেও তোমার জন্য এক দানা খাদ্য সংগ্রহ করতে পারলাম না। সুতরাং বুঝলাম তোমার মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে হয়ত এখনই তোমাকে মরণ সুধা পান করতে হবে। পৃথিবীতে তুমি আর বেশীক্ষণ থাকবে না।

অত:পর দ্বিতীয় ফেরেশতা এসে সালাম করে বলবেন হে আল্লাহর বান্দা! আমি তোমার পানীয় সরবরাহের জন্য নিযুক্ত ছিলাম, কিন্তু এখন তোমার জন্য পৃথিবীর সবৃত্র অন্বেষণ করেও এক ফোঁটা পানি সংগ্রহ করতে পারলাম না। সুতরাং আমি বিদায় হলাম।

অত:পর তৃতীয় ফেরেশতা এসে সালাম করে বলবেন হে আল্লাহর বান্দা! আমি তোমার পদযুগলের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত ছিলাম, কিন্তু পৃথিবীর সর্বত্র ঘুরেও তোমার জন্য একটি মাত্র পদক্ষেপের স্থান পেলাম না। সুতরাং আমি বিদায় নিচ্ছি।

চতুর্থ ফেরেশতা এসে সালাম করে বলবেন হে আল্লাহ বান্দা! আমি তোমার শ্বাস-প্রস্বাস চালু রাখার কাজে নিযুক্ত ছিলাম। কিন্তু আজ পৃথিবীর এমন কোন জায়গা খুঁজে পেলাম না যেখানে গিয়ে তুমি মাত্র এক পলকের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করতে পার। সুতরাং আমি বিদায় নিচ্ছি।

উপসংহার :

সর্ব শক্তিমান আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন এবং তার কিছু নেগাবান ফেরেশ্তা আমাদের সাহায্য করছেন । যত দিন আল্লাহ আর তার নেগাবান ফেরেশ্তারা আমাদের পৃথিবীতে রাখতে চাইবেন তত দিন আমরা পৃথিবীতে থাকবো । আর তত দিন কোন শক্তিই আমাদের বিলীন করতে পারবে না ।

আমার এই কথা কুরআন-হাদিস দ্বারা সমর্থিত । যেহেতু আমার কথা কুরআন হাদিস দ্বারা সমর্থিত, সেহেতু আমি ইসলাম অপব্যাখ্যাকারী নই এবং ইসলামবিরোধী নাস্তিকও নই । যারা আমার বিরোদ্ধে আজে বাজে কথা বলছে তারাই দুষ্কৃতিকারী ও উগ্রবাদী । তারা হীনস্বার্থে আমার এই কথাটা সর্বত্র তুলে ধরে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে ।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার :

১.তাফসিরে বায়ানুল কুরআন

২.আয়ারহলিকুরআন ডট কম

বিষয়: বিবিধ

২৭৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File