বাংলাদেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোকে কেন ঘৃণা করতে হবে (২য় পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ১৫ জুলাই, ২০১৫, ১০:৩৭:৫১ সকাল
এর আগের পর্বে জামায়াতে ইসলামীর সন্ত্রাস ও অশুভ কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেছি । আজ আহলে হাদিস বা ওহাবী সম্প্রদায়ের সন্ত্রাস নিয়ে আলোচনা করবো । ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোকে বাংলাদেশের লোকরা যে কারণে ঘৃণা করে তার সবচেয়ে বড় কারণ আহলে হাদিস বা ওহাবী সম্প্রদায়ের কার্যক্রম ।
সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের গোড়ায় আহলে হাদীস বা ওহাবীদের নাম আসে কেন ? :
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের আড়ালে। জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে নিষিদ্ধ ঘোষিত দুই সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জে এম বি) এবং জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জে এম জেবি) এ সম্প্রদায়ের অনুসারীদের নিয়েই গড়ে উঠে। তাদের কর্মকা-ও পরিচালিত হয়েছে আহলে হাদিস অধ্যূষিত বিভিন্ন এলাকায়। এ দু’টি সংগঠনের শীর্ষ দু’নেতা শায়খ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই আদর্শিকভাবে আহলে হাদিস মতবাদে বিশ্বাসী এবং তারা সবাই ছাত্র জীবনের ইসলামী ছাত্র শিবির করতেন । জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে আরেক কারাবন্দী নেতা ড. আসাদুল্লাহ আল গালিবও একই মতবাদের অনুসারী ছিলেন । তিনি বাংলাদেশ আহলে হাদিস আন্দোলনের আমির।
(যায় যায় দিন, ৭ই আগস্ট ২০০৬ইং সোমবার )
জেএমবি-র ৬৩ জেলায় এক যোগে বোমা বিস্ফোরণ :
শায়খ আব্দুর রহমানের প্রতিষ্ঠিত জে এম বির পরিচালনায় ১৭ই আগস্ট ২০০৫ইং গোটাদেশে একই দিনে ৬৩টি জেলায় ৩০০স্থানে প্রায় সাড়ে পাঁচ শত বোমা বিস্ফোরিত হয়েছিল। ঘটনাস্থলে বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে তারা স্বীকারোক্তিও দিয়েছিল।
এরপর থেকে ৩০শে মার্চ ২০০৭ ইং শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলাভাইকে ফাঁসি দেয়া পর্যন্ত কয়েকটি বছর পত্র-পত্রিকায় প্রায় প্রতিদিনই হেড লাইনে তাদের সন্ত্রাসের খবর স্থান পেতো ।
সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করার পেছনে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য :
সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের মতো একটি ঘৃণ্য কাজে আহলে হাদীস নেতারা জড়িত থাকবেন কেন ? হাদীসের মতো পবিত্র শব্দ ও ইসলামের নামে কলঙ্কময় অধ্যায় তাদের মাধ্যমে কেন রচনা হবে ? ইসলামের পবিত্র বিধান জিহাদকে তাদের মনগড়া সূত্রে কেন কলুষিত করবে ? কেন তারা ধর্মের নামে হানাহানি-মারামারিতে লিপ্ত হবে ? আহলে হাদিসদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড কতটুকু ইসলামসম্মত - এসব প্রশ্ন অনেকেরই মধ্যে উদয় হয়েছে ।
সারধাণ জনগণ মনে করে, ” আহলে হাদিস সম্প্রদায় শান্তির ধর্ম ইসলামের কলঙ্ক। তারা ইসলাম, দেশ ও জাতির দুশমন। ঐ সব নেতাগণ ইসলামের চরম শত্রুদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই এ ধরণের কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছে। হয়ত তারা নিজেরাও জানে না যে, তারা কেমন ভয়ঙ্কর পথে পা বাড়াচ্ছে।”
বর্তমানে জনগণের মধ্যে বদ্ধমূল হয়েছে আহলে হাদীস মতবাদ মানেই জঙ্গিবাদ। আহলে হাদিস সম্প্রদায় যে ইসলামের অপব্যাখ্যা ও অবমূল্যায়নে আত্মনিয়োগ করেছে এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য সন্ত্রাসকে সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছে ।
ইসলামে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের স্থান নেই :
একটি সর্বকালীন ও সার্বজনীন মতাদর্শ, চিরশান্তি ও পরম মানবতার ধর্ম ইসলাম। ঐক্য, সৌহার্দ্য, সাম্য-মৈত্রী, সহিষ্ণুতা, শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতীক এই ধর্ম। নাশকতামূলক কার্যক্রম ইসলাম সমর্থন করে না। অস্থিতিশীল পরিবেশ ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা ইসলামে কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ইসলাম ধর্মে আত্মঘাতী হামলা সম্পূর্ণ অবৈধ ও মহাপাপ। জিহাদের নামে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ অশ্লিলতা গর্হিত ও ঘৃণ্য অপকর্মের শামিল।
ইসলাম কোন প্রকার সন্ত্রাসকে সমর্থন করে না। গায়ের জোরে কাউকে মুসলমান বানানোর একটি মাত্র ঘটনাও ইসলামের ইতিহাসে নেই।
ইসলাম সহিষ্ণুতার কথা বলে। যারা পাথর ছুঁড়ে মারে তাদের কে ফুলের মালা আর যারা পথে কাঁটা পুঁতে তাদের জন্য ফুল বিছিয়ে দেয়া ইসলামের আদর্শ। দীর্ঘ ১৩টি বছর মক্কায় আবু জাহেল- আবু লাহাবদের সন্ত্রাস সহ্য করেছেন। সহ্য করেছেন ১০ বছর মদীনায় তাদের আক্রমণ ও অপবাদের ঝড়। এমনকি মক্কা বিজয়ের ঐতিহাসিক দিনে যখন রাসূল (সা.) দশ হাজার সাহাবী নিয়ে জন্মভূমি মক্কায় প্রবেশ করলেন, সেদিন চিরশত্রু পৌত্তলিকদের সমুচিত শাস্তি প্রদানের অপূর্ব সুযোগ গ্রহণ করেন নি। ভীতসন্ত্রস্ত শত্রু মক্কাবাসীদেরকে কোন ভর্ৎসনা পর্যন্ত করলেন না। রাসূল (সা.) অত্যন্ত শান্ত কণ্ঠে বরং নিঃশর্ত মুক্তি ঘোষণা করলেন “আজকের দিনে তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই, তোমাদের অনুতাপের কোনো কারণ নেই, যাও তোমরা আজ মুক্ত।” রহমতে আলমের কণ্ঠে ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার আনন্দে প্রায় দুই হাজার লোক ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নেয়। ক্ষমার মাধ্যমে তিনি মানবতার সেবা করেছেন। তলোয়ারের মাধ্যমে নয়। নয় প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার মাধ্যমে।
ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার কেন ? :
ইসলাম শান্তির ধর্ম। অশান্ত বিশ্বে শান্তির শ্বেত কপোত ওড়াতেই ইসলামের অভ্যুদয়। ইসলাম বর্তমানে বর্ধিঞ্চু ধর্ম । বিশ্বব্যাপী ক্রমাগত তার অনুসারীদের সংখ্যা বেড়েই চলছে । একটি কুচক্রীমহল ইসলামের নামে কালিমা লেপন করতে গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। যার অংশ হিসেবে ইসলামী বেশভূষাধারী কিছু লোক দিয়ে বোমা হামলা, আত্মঘাতি হামলা ও জঙ্গী কর্মকান্ড চালানো হচ্ছে ।
ইসলামের সূচনালগ্ন থেকে অদ্যাবধি বিজ্ঞ আলেম সমাজ এধরনের কোনো বিধ্বংসী কাজে কখনোই সমর্থন দেননি। হঠাৎ করে ইসলাম কায়েম ও ইসলামী চেতনার বিস্তারের নামে যা করে যাচ্ছে তা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের ভীতির সঞ্চার করছে।
প্রকৃতপক্ষে এসব কিছুর পরিকল্পনা এসেছে বিধর্মীদের কাছ থেকে। তারা কিছু দাড়ি টুপি ওয়ালাদের হাতে বোমা ও সন্ত্রাসী কার্মকান্ড তুলে দিয়ে তাদের ক্রীড়নকের ভূমিকা পালন করিয়েছে। এসব কর্মকান্ডের পর নিজেরাই বিজ্ঞাপন বিলি করে স্বীকৃতির মাধ্যমে নাটকীয়ভাবে ধরা দিয়ে আপন উদ্দেশ্যে তারা অনেকটা সফলও হয়েছে। এদেরই ষড়যন্ত্রের ফলশ্রুতিতে আজ আলেম সমাজ ও ইসলামের প্রতি মানুষের একটা চরম বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। বিনা তদন্তেই ইসলাম ধর্মকে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। মুসলমানদেরকে উগ্র মৌলবাদী আর সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। পরিকল্পিত ভাবে জিহাদের কথা উচ্চারণ করে কলঙ্কিত করা হচ্ছে জিহাদের বিধানকে। আর এসব কার্যক্রমের কারণেই মুসলমানদেরকে বিশ্বব্যাপাী বিধর্মীরা একতাবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসী ট্যাগ লাগিয়ে দিয়ে হত্যা করছে।
অনেক স্থানে সিনেমার টিকেটে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা হয়। কোথাও যাত্রা, মেলার ঘোষণা, ‘বিসমিল্লাহ’ দিয়ে আরম্ভ হয়। কয়েক বছর পূর্বে কুকুরের মাথায় টুপি ও মুখে দাড়ি দিয়ে উপহাসমূলক ছবি ছাপানো হয়েছিল। এ সবই হল ইসলাম ও আলেম ওলামাদেরকে অবমাননা ও হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে। আর একই উদ্দেশ্যে নবাব সিরাজুদৌলার বিশ্বাস ঘাতক সেনাপতি মীর জাফরের উত্তরসূরীরা দাড়িটুপি পরে ইসলামকে কলুষিত ও ওলামাদেরকে ষড়যন্ত্রের বিষোদগার বানানোর চক্রান্ত শুরু করেছে।
প্রসঙ্গক্রমে একটি হাদিস তুলে ধরছি : “ জনৈক ব্যক্তি সা’দ (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহ তায়ালা কি বলেন নি যে, “ তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যতক্ষণ না ফিতনা (বিপর্যয়) ও ফাসাদ (ঝগড়া) দূরীভূত হয় এবং দ্বীন আল্লাহর জন্য হয়।” তখন তিনি বললেন , আমরা লড়াই করেছি যতক্ষণ না ফিতনা ফাসাদ নির্মূল হয়েছে; আর তুমি ও তোমার সাথীগণ লড়াই করতে চাও ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টির জন্য।” (দুররে মনসূর ২/৩১৭, বুখারী শরীফে ইবনে উমর (রা.) থেকেও এমন একটি উক্তি আছে। হা.নং ৪৫৯৩ ও ৪৬৫০)
এতে বুঝা যায় যে, কুরআন-সুন্নাহর সার্বিক নির্দেশনা ছাড়া ও মনগড়া রাজত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইন হাতে তুলে নেয়া এবং স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ অবস্থানে জিহাদ করার নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ফাসাদ ও সন্ত্রাসের অন্তর্ভূক্ত । এ সবই জিহাদের নামে জিহাদকে কলুষিত করা ও ইসলামকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র মাত্র।
পশ্চিমারা মুসলমানদেরকে জঙ্গীবাদী, সন্ত্রাসী, বিচ্ছন্নতাবাদী বলার কারণ :
মুসলমানদেরকে জঙ্গীবাদী, সন্ত্রাসী, বিচ্ছন্নতাবাদী ইত্যাদি বলে অভিহিত করা হচ্ছে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে ।
অমুসলিমদের নিকট ইসলাম সম্পর্কে এটি হচ্ছে সবচেয়ে মারাত্মক ভুল ধারণা। এটি বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ইসলাম সর্ম্পকে অপপ্রচারের ফলাফল। কোন অস্ত্রধারী যখন ইহুদীবাদের নামে মসজিদে আক্রমন চালায়, যখন কোন খৃষ্টান ক্যাথলিক অস্ত্রধারী গ্রুপ আয়ারল্যান্ডের শহরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়, যখন খৃষ্টান ধর্মের আর্থোডিক্স সমপ্রদায়ের সার্বীয় হিংস্র মিলেশিয়েরা বসনিয় নিরপরাধ মুসলিম নাগরিকদের উপর বর্বর হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুট-তরাজ এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তখন এসকল জঘণ্য কার্যক্রমকে তো সে ধর্মের প্রতিটি অনুসারীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয় না বা সে ধর্মকেও দায়ী করা হয় না ? অথচ অত্যন্ত দুঃখ জনক হলেও সত্য যে বর্তমানে পৃথিবীর কোথায় হিংসাত্মক কোন ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে ইসলাম ও মুসলানদেরকে সন্ত্রাসী, জঙ্গীবাদী, বিচ্ছন্নতাবাদী ইত্যাদি বলে প্রচার মাধ্যমগুলো দোষারোপ করতে শুরু করে।
বর্তমানে যেসব রাষ্ট্রকে ইসলামী রাষ্ট্র বলা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে সেগুলো হয়ত কোন কোনটি ইসলামী ভিত্তির উপর আদৌ প্রতিষ্ঠিত নয়। বরং সে সকল দেশের একনায়ক রাষ্ট্রশক্তি এবং রাজনৈতিক নেতারা ইসলামকে তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করছে। আর এই কাজে অগ্রগামি মধ্যপাচ্যের রাজতান্ত্রিকি শাসকবৃন্দ এবং সৌদি আরব ।
আহলে হাদিস বা ওহাবীদের দাবি :
আহলে হাদিস বা সালাফী বা ওহাবীদের দাবি : “ কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ বা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ফরজ এবং মুসলিমদের রাজত্ব বিশ্বময় করা অপরিহার্য । বিশ্বজুড়ে ক্বিতাল ফি সাবিলিল্লিহর আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছি আমরা আহলে হাদিসরাই । "
আমি শেষ বাক্যটাকে একটু পরিবর্তন করে বলছি : পুরো বিশ্বজুড়ে ধর্মের নামে সন্ত্রাস করে যাচ্ছে সালাফীরা বা আহলে হাদিস সম্প্রদায়ভুক্ত সন্ত্রাসীরা ।
আহলে হাদিস বা সালাফী বা ওহাবী সম্প্রদায়ের উত্থান :
আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের স্বার্থক উত্থান হয় ব্রিটিশ ভারতে । প্রথমে তারা নিজেদের তরিকায়ে মোহাম্মদীয়া-র অনুসারী বলে পরিচয় দিতো । পরে জনসাধারণ প্রতিবাদ করলে এবং ওহাবী বলে আক্ষায়্যিত করলে তারা ব্রিটিশ সরকারের কাছে আহলে হাদিস পরিচয়ের জন্য আবেদন করে । সেই থেকে তারা আহলে হাদিস নামের অধিকারী হয়েছে ।
আহলে হাদিস বা সালাফী বা ওহাবী সম্প্রদায়ের প্রাথমিক কার্যক্রম :
১ শিরক - বিদাত নিয়ে দাংগা- হাঙ্গামা সৃষ্টি :
আহলে হাদিস বা সালাফী বা ওহাবী সম্প্রদায়ের তাদের আন্দোলনকে জোড়দার করার জন্য মুসলিম সমাজে শিরক-বিদাত প্রসঙ্গকে সামনে নিয়ে আসে । যেমন : পীর মুরিদী, মাজার পুজা, সুফিবাদ ও ফকিরী । মুলত শিরক-বিদাতের প্রসঙ্গ উপস্হাপন করে তারা প্রথমে জনগণের মধ্যে দৃষ্টি আকর্ষন করেছিলো ।
২ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অবিশ্বাস ও মতভেদ সৃষ্টি :
আহলে হাদিস বা ওহাবী বা সালাফী সম্প্রদায় সুসংঘবদ্ধ দল । তারা প্রতিটি দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দলের মধ্যে প্রবেশ করে দলাদলি ও বিশৃঙ্খলা বিস্তার করে যাচ্ছে । যদি আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে পাচটি পরিবার কোথায় জায়গা কিনে সেখানে তারা আলাদা একটা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে । তারপর তারা সেখানে মুসলিমদের মধ্যে অনৈক্য বিস্তার মূলক কাজ শুরু করে । যেমন : সর্বপ্রথম নামাজের মধ্যে জোড়ে আমিন বলা ও নামাজ শেষে সম্মিলিতভাবে মুনাজাতের বিরোদ্ধে আপত্তি জানায় এবং ১২ তাকবীরের মাধ্যমে ঈদের নামাজ শুরু করার দাবি জানায় । অনেক সময় মসজিদে অবস্হানরত তাবলীগ জামাত, চরমোনাই পীরের লোক ও দাওয়াতী ইসলামীর লোকদের সাথে কথা কাটাকাটির মধ্যে জড়িয়ে পড়ে । এভাবে এলাকাগুলোতে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বিবাদ-বিস্মাদ ছড়িয়ে পড়ে ।
৩ মসজিদদে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার ও এলক্ষ্যে দুভেদ্য দুর্গের মতো উপসনালয় বানানো :
ক্ষেত্র বিশেষে তারা মসজিদকে সন্ত্রাসের কর্মকান্ড ও গুজব ছড়ানের জন্য হিসেবে ব্যবহার করে । যেমন : মাওলানা সাইদীকে চাদে দেখা যাওয়া [ বাস্তবে তা অসম্ভব ] এবং জেএমবি-র বোমা হামলার সময় মসজিদকে তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার করেছিলো । কয়েক বছর আগে সাইদীকে চাদে দেখা যাওয়ার প্রচার করে পর বগুড়া, চাপাইনবাবগঞ্জ ও ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলার আহলে হাদিস সম্প্রদায়ভুক্ত জামায়াতের সমর্থকরা সন্ত্রাসের চুড়ান্ত বহিপ্রকাশ ঘটায় । এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকা মহিলারা পর্যন্ত পুলিশ ফারি ধ্বংস করেছে । পুলিশদের তারা আগুনে পুড়িয়ে মারা চেষ্টা করেছে । যেমন : বগুড়ার এক পুলিশ ফারি ।
৪ মধ্যপ্রাচ্যের অত্যাচারী ও অমুসলিম শক্তির তাবেদার শাসকদের প্রতি সমাজে জনমত সৃষ্টি :
বেশীর ভাগ আহলে হাদিস বা সালাফী সৌদি রাজতন্ত্রের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত । কারণ তারা সৌদি আরব হতে টাকা পয়সা এনে মসজিদ-মাদ্রাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেছেন । প্রতিটা আহলে হাদিস অধুষ্যিত এলাকায় সৌদি আরবের টাকায় গড়া আলিশান মসজিদ রয়েছে । যদি এলাকাগুলো দারিদ্র পীড়িত ।
সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর সুতিকাগাড় মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে ছড়ানো :
সৌদি আরবের মদিনায় মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্হিত ।এটা ওহাবী মতবাদ প্রচারের প্রধান কেন্দ্র ।
বাংলাদেশের লোকরা আল আজহার, দেওবন্দ, নদওয়া-তে পড়াকে গুরুত্ব দিতো এবং এখনও দেয় । কারণ এসব প্রতিষ্ঠানগুলো হানাফী মাযহাব অনুযায়ী ইসলাম বিষয়ক পড়াশোনা হয় এবং এসব প্রতিষ্ঠান সুন্নী মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব করে । অথচ হাল আমলে প্রতিষ্ঠা হওয়া ওহাবী মতবাদ নির্ভর মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পড়ে আসাকে গুরুত্ব দেয় আহলে হাদিস সম্প্রদায় । আর বেশীর ভাগ আহলে হাদিসভুক্ত ধর্ম ব্যবসায়ী নামের শেষে মাদানী শব্দ ব্যবহার করে । যদিও তাদের অনেকেই মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছরের কোর্স করেনি বা চার বছর মদিনায় থাকেননি । মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলাদেশ খুব একটা উপকৃত হয়নি । বড় বড় সন্ত্রাসীর জন্মও দিয়েছে এই মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় । যেমন : শায়খ আব্দুর রহমান জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা । তিনি মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় হতে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নেন । তিনি ছিলেন শিবিরের সাথী পর্যায়ের নেতা । তার নেতৃত্বে ও তার নির্দেশে বাংলাদেশে এক যোগ ৬৩ জেলায় বোমা হামলা হয়েছিলো । তিনি গোলাম আজমের রিকমন নিয়েই মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান । এক সময় মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য গোলাম আজম বা জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের রিকমন নিতে হতো । তাদের রিকমন ছাড়া কেহ মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারতো না ।
সন্ত্রাস করে কোন মহৎ কিছু অর্জন করা যায় না :
সন্ত্রাস করে বা বোমা হামলা করে কোন কিছুই অর্জিত হয় না বা কোন মহৎ কিছুই অর্জিত হয় না । ব্রিটিশ ভারতে আহলে হাদিসরা ও আর উগ্র হিন্দুরা সন্ত্রাস করে কিছুই অর্জন করতে পারেনি । তবে যারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করেছে , তারা যা চেয়েছে তাই অর্জন করেছে । স্যার সৈয়দ আহমদ মুসলিম সমাজে আধুনিক ও বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা এবং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় চেয়ে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে । মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরি ইসলাম প্রচার করতে চেয়েছে - ইসলাম প্রচার করার সুযোগ পেয়েছে । নবাব আব্দুল লতিফ, সলিমুল্লাহ, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক মুসলিম লীগ সংগঠণ বানিয়ে পাকিস্তান চেয়েছে এবং মুসলিমদের মধ্যে নেতৃত্ব দাবি করেছে - তারা পেয়েছেও । তারা এসব করেছে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে ।
উপসংহার :
প্রতিটি মুসলমানকে ইসলামী দলগুলোর সন্ত্রাস ও গোষ্ঠী স্বার্থে ইসলামকে ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
প্রতিটা মুসলিমের উচিত কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা দলের কথায় সরাসরি বিশ্বাস না করে ইসলামের মূল উৎস থেকে ইসলামকে বিশ্লেষণ করা ও নিজের বিবেককে কাজে লাগানো আর গভীর ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে, ইসলাম সম্পর্কে বর্তমানে মিডিয়াতে কি বলা হচ্ছে আর কুরআন ও হাদীসে ইসলামের মূল শিক্ষা কী দেয়া হয়েছে ।
বিষয়: বিবিধ
২৭০৯ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লোকেরা তাদের গুণ, সৌন্দর্য, উপকার করার ক্ষমতা, মেধা-কর্মদক্ষতা দেখে ভালবাসে ।
আর যাদে ঘৃণা করার প্রয়োজন তাদের ব্যাপারে সবাই সতর্ক করে দেয় । যেমন : স্কুলে যাওয়ার সময় বাবা-মা ছেলে-মেয়েদের বলে দেয় খারাপ ছেলে-মেয়েদের সাথে খেলাধুলা করো না - চলাফেরা করো না ।
আমি আমার লেখায় বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেছি । এসব দেখে কি কেহ তাদের ভালবাসার কোন বিষয় খুজে পাবে কি ? পাওয়া সম্ভব কি ?
বিকৃত মস্তিস্কের মানুষরূপী কোনো শংকর প্রানী শুধু এরকম অদ্ভুত কথাবার্তা বলতে পারে।
আমার কাছে এই হাদিসটা গুরুত্বপূর্ণ ।
আপনি কি করে বোমাবাজ-সন্ত্রাসী-ধর্ষণকারী-মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী-জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের ভালবাসতে বলেন ?
আল্লাহ কি আমাদের এমন লোকদের ভালবাসতে বলেছেন । যদি বলে থাকেন কুরআন ও হাদিস হতে রেফারেন্স দিন ।
উপরের লেখাটি আপনার প্রবন্ধের হেডিং। আপনার হেডিং এ কি বুঝে নিব, বাংলাদেশের সকল ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোকে ঘৃণা করা উচিত?
উত্তর : হা ।
আমি এই পর্ব ও এর আগের পর্বগুলোতে কারণ উল্লেখ করেছি । আর অদুর ভবিষ্যতে আরো অনেক কারণ তুলে ধরা হবে ।
জামাতে ইসলাম খারাপ, কারন তারা নেকাবী
জেএম বি খারাপ, কারন তারা জঙ্গি
তাবলীগ খারাপ, কারন তারা নেকাবী
আসলে আপনার উদ্দেশ্য কি?
আমার উদ্দেশ্য জনগণকে সচেতন করা যাতে আমাদের দেশটা আধুনিক-বিজ্ঞানমনস্ক-প্রগতিশীল-জ্ঞাননির্ভর হয়ে উঠে এবং আমাদের দেশ বিশ্বের দরবারে উন্নতম প্রভাবশালী দেশ হিসেবে পরিচিত হয় । এলক্ষ্যে যে সব বিষয় প্রতিবন্ধক তা আমি আমার লেখার মাধ্যমে তুলে ধরছি ।
আমার এই লেখা কেন অন্য কোন লেখাতে ভুল ও অসত্য তথ্য যদি পান, আমাকে জানিয়ে দিন । আমি সংশোধন করবো ইনশাআল্লাহ ।
পাগলেরা বুঝেনা তাদের নিয়ে সবাই হাসাহাসি করছে।
তবে আপনাকে শুধু একটা কথা বলছি - করিতে পারিনা কাজ, সদা ভয় সদা লাজ, সংকল্প সদা টলে, পাছে লোকে কিছু বলে !! - এই নীতিতে আমি চলি না ।
যারা আমাকে নিয়ে হাসে । তারা ভাল কাজ করছে । কারণ হাসলে শরীর ও মন দু্ইটাই ভাল থাকে ।
এই কথাটাই ত বলি। নিজে অথর্ব হয়ে দিনরাত জামাত-শিবিরের পিছনে লেগে থাকেন। আপনার খিস্তি খেউড় যে নিজের পাগলামী প্রকাশ করে সেটা বুঝলে আজ দুনি্যা জুড়ে একটা হাস্যকর বদ্ধ উন্মাদ হইতেন না
খিস্তি খেউর কে বা কারা করছে আমার পোস্টের মন্তব্যগুলো পড়লেই বোঝা যাবে । তবে মাঝে মধ্যে বাধ্য হয়ে জবাব দেই মাত্র ।
ক্রমাগত অপ্রাসঙ্গিক ও লেখার সাথে সম্পর্কহীন মন্তব্য করায় আপনাকে সাময়িকভাবে ব্লক করা হলো ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন