বাংলাদেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোকে কেন ঘৃণা করতে হবে (১ম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ১৪ জুলাই, ২০১৫, ০৯:১৩:৪৬ রাত
পটভুমি :
বাংলাদেশে নিবন্ধিত ১২ টা ইসলামী রাজনৈতিক দল আছে । তার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন আইনগতভাবে বাতিল হয়েছে ।
http://www.ec.org.bd/Bangla/RegisteredPoliticalPartyBng.php
অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেছেন , আমি কেন ইসলামী দলগুলোকে পছন্দ করি না ? উত্তরটাকে একটু ভিন্নভাবে বলতে বলি । যেমন : বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলোকে জনসাধারণ কেন পছন্দ করে না ? বা ইসলামী দলগুলোর ভোটের পরিমাণ একত্রে কোনভাবেই ৯ % হতে ১২ % - এ সীমাবদ্ধ থাকে কেন? – এসব প্রশ্নের উত্তর আগে দিন তো ।
তখন অনেকেই বলেন : আপনি অন্য সব ইসলামী দলের কথা বাদ দিন । কারণ তাদের তেমন কোন জনসমর্থন বা শক্তি সামর্থ্য নেই । শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলামীর কথা বলুন । কেন আপনি জামায়াতে ইসলামী পছন্দ করেন না ?
তখন আমি বলি, এক সময় এই দলের ছাত্র উইং- ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মী ছিলাম । তখন সব কিছুর থেকে ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রতিটা কাজকেই গুরুত্ব দিতাম । তখন তারা আমার সাবেক কার্যক্রমকে বিচার করে তারা বলেন , "আপনি একজন সপথের কর্মী হয়ে ইসলামী আন্দোলনের বিরোধীতা করেন কেন ? আপনার উপর সাক্ষাৎ শয়তান ভর করেছে । আপনার সাথে আর কোন কথা হতে পারে না । "
তখন অনেককে বলেন, "জামায়াতে ইসলামী পছন্দ না হলে অন্য ইসলামী দল করেন । আর ভাল না লাগলে নতুন কোন ইসলামী দল বানান । "
ইসলামী দলগুলোর জঙ্গীবাদী মানষিকতা :
সত্যিকার গণতান্ত্রিক মানষিকতা সম্পন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী হলে অবশ্যই আমার অভিমত শতভাগ সময় নিয়ে জানার চেষ্টা করতো এসব ইসলামী দলগুলোর লোকেরা । বাস্তব অবস্হা হলো : এসব দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনাবোধের বিন্দুমাত্র চর্চা নেই ও মানুষের কথা শোনার মানষিকতাও দলের নেতা-কর্মীদের নেই । তারা মনে করে," জিহাদ করে রাষ্ট্র দখল করে ইসলাম কায়েম করতে হবে । গণতন্ত্রকে শ্রেফ মন্দের ভাল হিসেবে গ্রহণ করেছি মাত্র । " আজও জামায়াত-শিবিরের অনেক কর্মী ফেসবুক ও বাস্তব জীবনে এমন মন্তব্য করে যাচ্ছে ।অন্য সব ইসলামী দলগুলোর নেতা-কর্মীরাও এমন মনোভাব পোষণ করে । তারা প্রকাশ্যেই বলেন “ গণতন্ত্র কুফরী মতবাদ । জিহাদ বা সশস্ত্র সংগ্রামই ইসলাম কায়েম ও খিলাফত কায়েমের একমাত্র পথ ।”
আমি শিবিরের এক প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম : আমি বলেছিলাম জ্ঞান অর্জন ও চবিত্র গঠণের জন্য এবং সমাজ বিপ্লবের জন্য শিবিরের সাথী হতে চাই । আমার এই উত্তর গ্রহণ করা হয়নি । শিবিরের নেতাদের মতে সঠিক হলো : দ্বীন কায়েম করার জন্য আল্লাহর রাস্তার জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করার জন্য শিবিরের সাথী হতে হবে ।
এজন্য আমাকে তথন সাথী বানানো হয়নি । সাথী হলো শিবিরের সন্ত্রাসীদের তৃতীয় ধাপ । শিবিরের কর্মীদের মোটামোটি ৪ টা ধাপ পার হতে হয় । ধাপগুলো হলো :
১. সমর্থক ২. কর্মী ৩. সাথী ৪. সদস্য ।
যে বা যারা সদস্য হয় তাদের গোলাম আজম - নিজামী - সাইদীর কাছের লোক হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় ও তাদের কাছ হতে বিশেষ জ্ঞান লাভ করা যেতো ।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আসলে কেমন ? :
গণতন্ত্র কি শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় দর্শণ পরিবর্তন বা ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া মাত্র ? উত্তর হলো : না । গণতন্ত্র আমাদের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই প্রয়োগের বিষয় । আপনি আপনার বাড়ির সামনের রাস্তায় গৃহ নির্মান সামগ্রি ফেলে রাখবেন কি না বা কত দিনের জন্য রাখবেন - এজন্য প্রতিবেশীদের সাথে আলোচনা করবেন বা তাদের মতামত নিবেন - এটা এক ধরনের গণতান্ত্রিক মানষিকতা । গণতন্ত্রের অনেক ধরনের আছে । ইসলামেরও গণতন্ত্রের আলাদা ব্যাখ্যা আছে । জামাযাতের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদী তার এক বইয়ে গণতন্ত্রের একটা ধরণ থিওডেমেক্রেসী-র কথা বলেছেন । আপাতত গণতন্ত্রের বিভিন্ন ধরণ বা ভাগের ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না ।
ইসলামী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের অসহিষ্ণু মানষিকতা :
সবচেয়ে গুরুতর ব্যাপার হচ্ছে, আমার এক আত্মীয়া আমাকে বল্লেন, ফেসবুকে জামায়াতের লোকরা তার ছবি ব্যবহার করে ফেসবুক একাউন্ট বানিয়ে জামায়াতের আটককৃত নেতাদের মুক্তির কথা প্রচার করছে এবং ইদানিং ফেসবুকে তাদের শাস্তি দাবি করে কোন স্যাটাস দিলেই তাকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করচ্ছে জামায়াত-শিবির সমর্থকরা । আবার নাস্তিক ও আওয়ামী লীগের দালাল বলেও অমূলক কথা বলে যাচ্ছে ।
আমি তাকে নিয়ে করা কিছু স্যাটাস পড়লাম । আমার ক্ষেত্রেও জামায়াত শিবিরের লোকরা এমন করে থাকে । জামায়াত-শিবিরের লোকরা এমন সব গালি গালাজ সাধারণ লোকদের করে থাকে যেগুলো কুলি মুজুররাও ঝগড়ার সময় ব্যবহার করে না ।
ইসলামী দলগুলোকে অপছন্দের প্রধান কারণ :
১. ইসলামী দলগুলোর ইসলাম হলো ঘৃণা প্রচারের মতবাদ :
বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার হয়েছে রাসুল সা. -এর জীবনকালেই । ১২০৪ সাল হতে বাংলাদেশের একটা অংশে ইসলামী রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হলে ইসলাম প্রচার প্রবলতর হয় । কিন্তু সেই সময় হতে ইসলামের সুফীবাদী ও হানাফী মাযহাবের ধারাটাই বাংলাদেশে প্রবলতর ছিল ।সুফীবাদী ও হানাফী মাযহাবের ইসলামের এক ধারাটা হলো প্রেম ও ভালবাসা নির্ভর জনগণের মুক্তির মতবাদ ।
অপর দিকে ইসলামী দলগুলোর ইসলাম হলো ঘৃণা প্রচারমূলক যুদ্ধাংদেহী মতবাদ যা সালাফী মতবাদ বা ওহাবী মতবাদ নামে পরিচিত । সৌদি আরবের পেট্রো ডলারের হাত ধরে বাংলাদেশে ওহাবী বা সালাফী নামক যুদ্ধাংদেহী মতবাদ বাংলাদেশে বিস্তার ঘটে ।
ইসলামী দলগুলোর লোকরা সাধারণ মুসলিমদের বাজে চোখে দেখে :
ইসলামী দলগুলোকে সাধারণ মানুষরা সন্দেহের চোখে দেখে ।এজন্য ইসলামী দলগুলো বিশেষত জামায়াতের লোকরা সাধারণ মানুষদের তাগুত বা শয়তানের অনুসারী বা মুনাফিক বলে থাকে ।
জামায়াতের বিরোধীতা করেন তার সাথে মুনাফিক হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই । বাংলাদেশের জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ নিচের কারণগুলোর জন্য জামায়াতের বিরোধীতা করে থাকে :
১। ১৯৭১ সালে জামায়াত বাংলাদেশের জন্মের বিরোধীতা করার পাশাপাশি এদেশের জনগণের উপর নির্যাতন-নিপীড়ণের ক্ষেত্রে প্রধান সহায়ক ভুমিকা পালন করে । এজন্য একটি বারের জন্য হলেও জামায়াত জনগণের কাছে ক্ষমা চায়নি ।
২। জামায়াতের ধর্ম সম্পর্কিত মতবাদের সাথে জনগণ বিরুপ মনোভাব পোষন করে । কারন জামায়াত ওহাবী মতবাদ ও মওদুদী মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত । অপর দিকে বাংলাদেশের মুসলিমরা হানাফী মাযহাব অনুসরণকারী ও সুফীবাদী মুসলিম ।
৩। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী ও জামায়াতের লোকদের গড়া সাহিত্য ও ইসলাম বিষয়ক বইগুলোতে চরম ইসলামবিরোধী ও ইসলামের সাথে গুরুত্বপূর্ণ লোকদের সম্পর্কে গর্তিত কথা ও উক্তি রয়েছে । যেগুলো জনগনের ধর্মানুভতিতে আঘাত হেনে যাচ্ছে ।
৪। জামায়াতের রাজনৈতিক মতবাদ এবং সংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি এদেশের জনগণের জন্য ক্ষতিকর । কারণ জামায়াত আরব সংস্কৃতি প্রবেশ করানোর চেষ্টারত । অপর দিকে বাংলাশেদের মুসলিমদের রয়েছে সমৃদ্ধ কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি । ি
সালাফি মতবাদ বা ওহাবী মতবাদ সম্পর্কে জনসাধারণের অভিমত :
এই বিষয়ে এই সাইটেই জহির আহমেদ
বর্তমান সময়ে মুসলিম উম্মাহর এক মারাত্মক ফিতনার নাম মোনাফিক্ব সৌদি সরকারের পৃষ্টপোষকতায় দালাল সালাফিরা। সৌদি রাজপরিবারের অনৈসলামিক জীবন,বদমাসি, বিলাসিতা চোখের সামনে হতে দেখলেও সালাফিরা জিবনে এইগুলো নিয়ে একটু টু শব্দও করেনা!
সালাফি গুগল শাইখরা কোরআন সহিহ-হাদিসের কথা শুনায় কারন, সহিহ শব্দটি শুনলে কেউ কিছু বলতে পারেনা আর এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তরুন প্রজন্মকে ধোঁকায় ফেলে সৌদি রাজপরিবারের দালালি করে যাচ্ছে।
কিন্তূ, যখনই মুসলিম ব্রাদারহুড মিশরের সেকুলার সরকারকে ধাক্কা দিল; কম্পনের মাত্রাটা সৌদি সরকারের চোখে রিখটার স্কেলে ৮/৯ এর উপরে দেখাল। তখনি বেরিয়ে আসলো সালাফিদের আসল চেহারা। যেখানে ইসলাম প্রতিষ্টায় ব্রাদারহুডের কর্মিরা জান দিচ্ছে তখন এই সালাফিরা ফতোয়া দিল মুসলিম ব্রাদারহুডের কর্মিরা নাকি ফিতনা শুরু করে দিছে। এটা নাকি ঠিক হচ্ছেনা!! তরুন প্রজন্মকে আরো আশ্চর্য করল যখন সৌদি সরকার মিশরের সেকুলার সরকারকে মিলিওন ডলারের সাহায্য ঘোষনা দিল!
সারা বিশ্বে মুসলমানদের উপর এত নির্যাতন দেখে এরা মুসলমানদের পক্ষে একটা কথাও বলেনা! উলটো ইসরাইল,আমেরিকাকে সাপোর্ট করে। সৌদি প্রিন্স তালাল ৯/১১ এ আমেরিকাকে ১০মিলিওন ডলার সাহায্য প্রদান করে অথচঃ প্রতিবছর আফ্রিকাসহ বিশ্বের অনেক মুসলমান পাথর, মাটি খেয়ে খাদ্যাভাবে মারা যায় এদিকে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপই নেই।
রাজপরিবারের অনৈসলামিক জীবন,বদমাসি, বিলাসিতা চোখের সামনে হতে দেখলেও সালাফিরা জিবনে এইগুলো নিয়ে একটু টু শব্দও করেনা!!
ইসলাম বলতে এদের কাছে যেন শুধু কবর পুজা না করা,রাফইয়ুল ইয়াদাইন,জোরে আমিন বলা, ইমামদের সমালোচনা ঐ পর্যন্তই!!
অনলাইনে উনাদের অনুসারি অনেক ভাই আছেন পারলে ২/১টা ভীডিও দেখান যেখানে এরা সৌদি সরকারের অনৈতিকতা নিয়ে কথা বলছে!!
http://www.bdtomorrow.com/blog/blogdetail/detail/5006/zrtalib/30146
জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী দলগুলোকে অপছন্দ করার প্রধান কারণ রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ওহাবী ও সালাফি মতবাদকে জনগনের মধ্যে বিস্তার ঘটানোর চেষ্টা করা ।
সালাফি ও ওহাবী মতবাদ নিয়ে বিন্দুমাত্র মন্তব্য জামায়াত-শিবির সহ্য করে না :
সালাফি মতবাদ বা ওহাবি মতবাদ এতটাই জামায়াত-শিবিরের উপর প্রবলতর যে তারা অনেক সময় তাদের পত্রিকা বা ব্লগে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত লেখা পর্যন্ত মুছে ফেলে বা ড্রাফট করে ফেলে । তারেক রমাদানের লেখা একটা লেখার ক্ষেত্রেও এমন ঘটেছিল ।
মুরশিকে উচ্ছেদ করার পর জামায়াত-শিবিরের লোকরা ফেসবুকে বেশ কিছু পেজ বানায় , তাতে যে বা যারা সৌদি আরব আর সালাফি মতবাদ নিয়ে মন্তব্য করতো , তাদের জামায়াত-শিবিরের লোকরা গালিগালাজ করতো । এর মধ্যে তারাও আমাকে ছেড়ে দেয়নি ।
তারা ব্লগার আহমদ মুসা ও ব্লগার হাসান-এর নেতৃত্বে আমাকে গালিগালাজ করেছিলো । এক সময় আমাকে এসব পেজ বা গ্রুপ হতে বহিস্কার করেছিলো ।
এবার আমরা দেখবো তারেক রমাদানের লেখায় কি এমন জিনিস ছিল যাতে তার লেখাটা নয়াদিগন্ত হতে ফেসবুক বা অনত্র জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের শেয়ার করা বারন ছিল ।
তাহলে আসনু আমরা এক নজর লেখার উপর চোখ বুলাই ।
ড. তারেক রমাদানের লেখাটার শিরোনাম : মিসর : সেনা অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় পর্ব
http://www.dailynayadiganta.com/welcome/post/9450 এই লিংকে লেখাটা ছিল ।
গত দুই বছর আমাকে প্রায়ই এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে যে ‘কেন আমি মিসর সফর করছি না?’ এর কারণ হলো এর আগে মোবারক সরকারের আমলে ১৮ বছর আমার মিসর সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। সুইজারল্যান্ড ও ইউরোপীয় বিভিন্ন কর্মকর্তার মাধ্যমে যতটুকু জানতে পেরেছিলাম তাতে মিসরে সেনাবাহিনী নতুন করে দেশটির রাজনীতিতে আসেনি, মিসরের রাজনীতির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল সেনাবাহিনী এবং তারা মুহূর্তের জন্যও মিসরের রাজনৈতিক অঙ্গন পরিত্যাগই করেনি।
মিসরের বিপ্লবের ব্যাপারে কখনোই আমি অতিরিক্ত আগ্রহ প্রকাশ করিনি অথবা মিসরের বিপ্লব তিউনিসিয়ার চেয়ে কোনো অংশে বেশি এ কথা বিশ্বাস করিনি। এই দুই দেশের জনগণই স্বৈরতন্ত্রের অধীনে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত ছিল। দুই দেশের জনগণ তাই বিদ্রোহ করেছিল আত্মমর্যাদা, সামাজিক সুবিচার ও স্বাধীনতার জন্য। তাদের এই জাগরণ, বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব ও সাহস তাই অভিনন্দনযোগ্য। কিন্তু সাধারণ জনগণকে বোঝানোর জন্য রাজনৈতিক, ভূ-কৌশলগত ও অর্থনৈতিক প্রসঙ্গের সরলীকরণ সম্পূর্ণরূপে যুক্তিহীন।
তিন বছর আগে প্রকাশিত একটি বই এবং পরে বিভিন্ন সিরিজ লেখার মাধ্যমে আমি পাঠকদের কিছু জটিল সমস্যা এবং সেগুলোর ভূ-কৌশলগত ও অর্থনৈতিক ভিত্তির ব্যাপারে সজাগ করার চেষ্টা করছিলাম। এ সমস্যা ও তার মূল ভিত্তিগুলো সর্বদাই মূল ধারার রাজনীতি ও মিডিয়া-বিশ্লেষণ থেকে বাদ পড়ছিল এবং সেখানে ‘আরব বসন্তের’ ফলে উদ্ভূত জনগণের আবেগ-উচ্ছ্বাসকে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করার ওপর জোর দেয়া হয়েছিল। মিসরের সামরিক বাহিনী রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন করেছে বিষয়টি এমন নয়।
আসলে সামরিক বাহিনী রাজনীতির অঙ্গন পরিত্যাগই করেনি। মোবারক সরকারের পতন ছিল মূলত একটি সামরিক অভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থান বেসামরিক সরকারের আড়ালে সামরিক বাহিনীর নতুন অফিসারদের রাজনীতির অঙ্গনে আগমনের সুযোগ করে দেয়। ২৯ জুন ২০১২ সালে প্রকাশিত এক লেখায় আমি একজন উচ্চপদস্থ সেনাকর্মকর্তার বরাত দিয়ে উল্লেখ করেছিলাম যে, প্রেসিডেন্টের নির্বাচন হচ্ছে ণস্থায়ী এবং এটি সর্বোচ্চ ছয় মাস থেকে এক বছরের জন্য (লেখাটির শিরোনাম ছিল An Election for Nothing)। এই পুরো প্রক্রিয়া পর্যবেণ করছিল আমেরিকা প্রশাসন গত ৫০ বছরব্যাপী যাদের মিত্র ছিল মিসরের সেনাবাহিনী, মুসলিম ব্রাদারহুড নয়। জুলাইয়ের ৫ তারিখের ‘ÔInternational Herald Tribune এবং ৬ তারিখের ‘Le Monde নিশ্চিত করে যে, ৩০ জুনের অনেক আগেই প্রেসিডেন্ট মুরসিকে মতাচ্যুত করার পরিকল্পনা করা হয়।
প্রেসিডেন্ট মুরসি ও সেনাপ্রধান জেনারেল আবদুল ফাতাহ আল সিসির এক আলাপ থেকে জানা যায়, সামরিক অভ্যত্থান ও মুরসিকে বন্দী করার পরিকল্পনা এই তথাকথিত জনপ্রিয় সরকারবিরোধী আন্দোলনের কয়েক সপ্তাহ আগেই করা হয়েছিল। ‘জনগণের ইচ্ছানুসারে’ এই মতাচ্যুতি বলে সামরিক অভ্যুত্থানকে কেবল বৈধতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘চতুর কৌশলের’ মাধ্যমে আসলে জনগণকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামানো হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে, সেনাবাহিনী জনগণের অধিকার ও দাবিদাওয়ার বিষয়ে সচেতন এবং সামরিক ক্যু হচ্ছে জনগণের অধিকার ও দাবিদাওয়া পূরণের জন্য অত্যাবশ্যকীয়ভাবে গৃহীত দ্বিতীয় পদপে। তাহলে মিসরের এই সামরিক অভ্যুত্থানে আমেরিকা প্রশাসনের তাৎণিক প্রতিক্রিয়াকে কিভাবে বিশ্লেষণ করা যায়? যেখানে ‘সামরিক অভ্যুত্থান’ শব্দটি সচেতনভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে (যদি শব্দটি ব্যবহার করা হতো, তাহলে মিসরের নতুন প্রশাসন আমেরিকার আর্থিক সাহায্য থেকে বঞ্চিত হতো)? সরকারের এ অবস্থান কৌতূহলোদ্দীপক। এরা এমন শব্দ ব্যবহার করেছে যাতে অভ্যুত্থানকারীদের রাজনীতিক, অর্থনৈতিক ও আইনগত সব সুবিধা দেয়া যায়। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন অবশ্যই আমেরিকার নীতি অনুসরণ করে বলবে ‘সেনাবাহিনী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের ডাকে সাড়া দিয়েছে।’ এগুলো খোঁড়া যুক্তি। রহস্যজনকভাবে মুরসির পতনের পর লোডশেডিং, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ঘাটতি আকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এটি এই কারণে যে, যাতে প্রমাণ করা যায় জনগণ এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় মৌলিক উপায় উপাদান থেকে মুরসির শাসনামলে বঞ্চিত হচ্ছিল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টে এটি এসেছে যে, সেনা প্রশাসন কিছু কিছু জায়গায় মুরসিবিরোধী আন্দোলনকারীদের কোনো বাধা না দিয়ে বরং সহিংস কার্যকলাপে সহায়তা করে। মনে হয় যেন এটি কোনো পূর্বপরিকল্পনার অংশবিশেষ।
সশস্ত্রবাহিনী হেলিকপ্টার থেকে তোলা এমন সব ছবি আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোকে সরবরাহ করেছে, যেখানে চিত্রিত হয়েছে জনগণ তাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছে (Le Monde-এর মতে)। আসলে কোনো কিছুই পরিবর্তন হয়নি। আরব বসন্ত বা মিসর বিপ্লব যাই বলি না কেন, সব কিছুই চলছে জেনারেল আবদুল ফাতাহ আল সিসির নিয়ন্ত্রণে। আবদুল ফাতাহ আল সিসি যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিণপ্রাপ্ত এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেনাপ্রধানের সাথে তিনি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রা করে চলছেন। জুলাই ৬-৭ তারিখের International Herald Tribune থেকে জানা যায়, জেনারেল সিসি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সরকারের সাথে সমভাবে ঘনিষ্ঠ। বর্তমানে ও মুরসির শাসনামলে তিনি তাদের সাথে যোগাযোগ রা করেছেন।
আল সিসি আগে উত্তর সিনাই অঞ্চলে সেনা গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্ব পালন করেন এবং সেই সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ও ইসরাইলের সাথে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাও পালন করেন। এ কথা বলা তাই অযথার্থ হবে না যে, যুক্তরাষ্ট্র কখনোই ইসরাইলের মতো মিসরের উন্নয়নে প্রকৃত ভূমিকা পালন করেনি। এত সব ঘটনার পরও মুরসি, তার মিত্র এবং সংগঠন হিসেবে মুসলিম ব্রাদারহুড অতি সরলীকরণ, অনভিজ্ঞ আচরণ ও অন্যান্য যে ভুল করেছে, তাতে আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না। গত তিন বছরজুড়ে আমি লিবার্টি অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির এবং মুসলিম ব্রাদারহডের চিন্তা ও কর্মকৌশলের ত্রুটি-বিচ্যুতির সমালোচনা করে যাচ্ছি। (গত ২৫ বছরব্যাপী আমার সব বিশ্লেষণ ও মন্তব্য ছিল মুসলিম ব্রাদারহুডের কর্মকৌশল ও পলিসির বেশ খানিকটা সমালোচনামূলক)। তাদের সব কৌশল ছিল স্থূল।
আমার সব লেখা (মার্চ ২০১২ থেকে ডিসেম্বর ২০১২ পর্যন্ত লেখা সব বই অথবা আর্টিকেল) ছিল মুরসির গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা ও কৌশলের ওপর কেন্দ্রীভূত। সরকারে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে অথবা জাতীয় সংলাপে বসার আহ্বান জানানোর মাধ্যমে বিরোধীদের সাথে সম্পর্ক তৈরির জন্য মুরসি যা করতে পারেননি, তার পুরো দায়ভার মুরসির ওপর চাপানো ঠিক হবে না। কারণ তার সব আহ্বান ও চেষ্টাকে বিরোধীদের প থেকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। অবশ্য এসবের অনেক কারণও আছে। সেগুলো হচ্ছে রাষ্ট্রপরিচালনায় ব্যর্থতা, জনগণের দাবি বুঝতে না পারা, এমনকি তার নিজের উপদেষ্টাদের কিছু পরামর্শের প্রতি কান না দেয়া, মুসলিম ব্রাদারহুডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে অতিরিক্ত সম্পর্ক বজায় রাখা, ত্বরিত গৃহীত এবং অবিবেচনাপ্রসূত কিছু সিদ্ধান্ত (যেগুলোকে তিনি পরে ভুল বলে স্বীকার করেছেন)। এসব বিষয় অকুণ্ঠচিত্তে সমালোচনাযোগ্য। আরো মৌলিকভাবে বলতে গেলে, মুরসির সবচেয়ে বড় ভুল হচ্ছে তার বিভিন্ন পদক্ষেপে রাজনৈতিক দর্শনের অনুপস্থিতি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার নির্ণয়ের অভাব, দুর্নীতি ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরাজয় এবং সামাজিক অব্যবস্থাপনা। অর্থ ছাড়ে আইএমএফের স্বেচ্ছাকৃত দীর্ঘসূত্রতা ও অতিরিক্ত শর্তারোপ মিসরকে একটি কঠিন পরিস্থিতিতে দাঁড় করিয়েছে। মুরসি ভেবেছিলেন আইএমএফ তাদের অর্থ সাহায্য দেবে। মুরসির পতনের পরই কেবল আইএমএফ অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে এত দিনের ‘অলঙ্ঘনীয় বাধাগুলো’ দূর করেছে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের সামরিক শাসকদের অস্ত্রের মুখে পদচ্যুতির পরই কেবল আইএমএফের এ ঘোষণা এলো। প্রেসিডেন্ট মুরসি, তার সরকার ও মুসলিম ব্রাদারহুডের অনেক ক্ষেত্রে অর্বাচীনতা বিস্ময়কর।
দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে মোবারক সরকারের বিরোধিতার সম্মুখীন এবং সামরিক স্বৈরশাসনের নির্যাতনের স্বীকার হয়েও কিভাবে তারা কল্পনা করল যে, তাদের পূর্বশত্রুরা গণতন্ত্রকে আহ্বান জানিয়ে মুরসিকে মতাসীন করবে? তারা কি তাদের পূর্ব ইতিহাস, ১৯৯২ সালের আলজেরিয়ার ঘটনা এবং এমনকি অতি সাম্প্রতিক ফিলিস্তিনের ইতিহাস থেকে কিছুই শিা নেয়নি? আমি মুরসি ও মুসলিম ব্রাদারহুডের পরিকল্পনা ও দ্ব্যর্থবোধক কলাকৌশলের েেত্র আনাড়িপনা ও অনভিজ্ঞতার সমালোচনা করে আসছিলাম এবং এখনো করছি। (সশস্ত্রবাহিনীর সাথে আপস, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগাযোগ, অর্থনীতি ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে আত্মসমর্পণ) এত কিছুর মধ্যেও তাদের রাজনৈতিক সচেতনতার অভাব স্তম্ভিতকর। সালাফিদের বিশেষত আল নূর পার্টির সাথে সেনাবাহিনীর হাত মেলানো দেখে অনেক পর্যবেকই হকচকিত হয়েছে। ‘গণতন্ত্রপন্থী’ সালাফিদের মুরসি বিরোধিতা একধরনের প্রহসন।
চরমপন্থী সালাফিদের মুসলিম ব্রাদারহুডের মিত্র হিসেবে পরিচিত করতে পশ্চিমা মিডিয়া ছিল ব্যাকুল। অথচ এরা প্রকৃতপে উপসাগরীয় দেশগুলোর শেখদের মিত্র। উপসাগরীয় এসব দেশ মধ্যপ্রাচ্যে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। আর এটি করা হয়েছিল মূলত মুসলিম ব্রাদারহুডের ধর্মীয় বিশ্বস্ততা নষ্ট করার জন্য এবং মুসলিম ব্রাদারহুডকে (ধর্মীয়) চরমপন্থা অবলম্বনে বাধ্য করার জন্য। মুরসির পতন ঘটানোর সময় তারা শুধু বিশ্বাসঘাতকতাই করল না, বরং বিশ্ববাসীর সামনে তাদের কূটকৌশল ও কৌশলগত মিত্রদের হাজিরও করল। এটি কোনো বিস্ময়কর ব্যাপার নয় যে, মিসরের এই সামরিক অভ্যুত্থানকে প্রথম স্বাগত জানিয়েছে আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও কাতার যারা প্রত্য ও পরোভাবে সব সময় সালাফিদের সাহায্য করত এবং এখনো করে। বাহ্যত কারো কাছে মনে হতে পারে যে, সৌদি আরব ও কাতার মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন করে। কিন্তু বাস্তবে এসব দেশ এ অঞ্চলে আমেরিকার প্রধান কৌশলগত মিত্র। এ অঞ্চলে আমেরিকার প্রধান কৌশল হচ্ছে বিভিন্ন ইসলামপন্থী ধারাগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি, পারস্পরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি ও তাদের অস্থিতিশীল করে রাখা।
ঠিক একই কৌশল বজায় রাখা হয় সুন্নিভুক্ত বিভিন্ন রাজনীতিবাদী ইসলামপন্থী দলগুলো এবং সুন্নি ও শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন অতিমাত্রিক করার জন্য। রাজনীতিবাদী আরিক ইসলামপন্থী উপসাগরীয় সালাফি, তাদের গণতন্ত্র অস্বীকৃতি, সংখ্যালঘুদের অসম্মান, নারীর প্রতি বৈষম্য ও শরিয়া হিসেবে পরিচিত কঠোর ইসলামি নীতিমালা প্রয়োগ প্রভৃতির সাথে যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কারণ তারা (সালাফিরা) পশ্চিমাদের আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রা করে। এসব উপসাগরীয় দেশের নির্যাতন ও পশ্চাৎপদ জাতীয় মূলনীতি যত দিন শুধু নিজ দেশের সীমার মধ্যে বিদ্যমান থাকবে এবং পশ্চিমাদের সাম্রাজ্যবাদ ও শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না; তত দিন এসব নিয়ে পশ্চিমাদের কোনো মাথাব্যথাও থাকবে না। লাখ লাখ লোক এই তথাকথিত Second Revolution--এর জন্য মুরসিবিরোধী বিােভ করে এবং সেনাবাহিনীর কাছে আবেদন জানায়। আর সেনাবাহিনী এতে দ্রুত সাড়া দেয়। সেনাবাহিনী এখন জনগণের হাতে মতা প্রত্যাবর্তন করার প্রতিজ্ঞা করছে। বিরোধী দলের নেতা আল বারাদিই এতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছেন এবং তার প্রভাব দ্রুতগতিতে বেড়ে চলছে।
২০০৮ সাল থেকেই তিনি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখছেন সাইবার দুনিয়ার ভিন্ন মতাবলম্বী ও ৬ এপ্রিল আন্দোলনের সাথে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলার প্রমাণ আমি আমার বইয়ে উল্লেখ করেছি। তিনি নানা চাতুর্যপূর্ণ কৌশলের মাধ্যমে তার দৃশ্যায়ন বৃদ্ধি করেছেন, যদিও তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ছিলেন (এবং ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হবেন না)। তিনি মিসরের রাজনীতিতে এখন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের বন্দী করা, তাদের ঘনিষ্ঠ টিভি স্টেশনগুলো বন্ধ করা ও মুসলিম ব্রাদারহুডের ওপর যে নির্যাতন তার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। সামনের দিনগুলোয় এই সামরিক শাসিত রাষ্ট্রটির ‘সুশীল চরিত্র’ আরো বিস্তারিতভাবে জানা যাবে। মনে রাখা দরকার, গত কয়েক দশকব্যাপী সামরিক বাহিনী দেশটির প্রায় ৪০ শতাংশ অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং আমেরিকা থেকে প্রাপ্ত অর্থসহায়তার (১.৫ বিলিয়ন ডলার) বড় অংশ তারা ভোগ করে। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকারকে অপসারণ করা হয়েছে। এ ঘটনাকে ব্যাখ্যা করার জন্য অভ্যুত্থান ভিন্ন অন্য কোনো শব্দ নেই।
জনগণের টিকে থাকার জন্য উন্নততর জীবনব্যবস্থা, ন্যায়বিচার ও স্বীয় মর্যাদাবোধের অধিকার দাবি নিঃসন্দেহে যৌক্তিক। আর এ জন্য তারা নিজেদের অজ্ঞাতসারেই সর্বোচ্চ পর্যায়ের মিডিয়া ক্যু ও সামরিক ক্যুর অংশীদার হয়েছে। মিসরের পরিস্থিতি ভয়াবহ। পশ্চিমা সরকারগুলোর নীরবতা আমাদের অনেক কিছু জানান দিচ্ছে। আসলে ‘আরব বসন্তের’ কিছুই এখানে নেই, বরং বিপ্লবের সুবাস টিয়ার গ্যাসের ঝাঁঝ আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিচ্ছে। বর্তমান সময়ে একজন লেখক প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে প্রচলিত অনেক সত্যকে বিশ্বাস করে না। তাকে ‘ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিক’ আখ্যা দিয়ে সহজেই প্রত্যাখ্যান করা হয়। সে ক্ষেত্রে তার বিশ্লেষণের ভিত্তিকে মূল্যায়ন করা হয় না। আমাদের কী তা হলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, বর্তমান গ্লোবাল বিশ্বে রাষ্ট্রের জাতীয় নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, নতুন ধারার যোগাযোগ প্রযুক্তি, রাজনৈতিক পরিকল্পনা, বিদ্বেষপরায়ণ কৌশল, তথ্য বিকৃতি, মানব শোষণের বিষয়গুলো সব অতীতের কোনো ঘটনা? কিছু ভ্রমগ্রস্ত লোক আছে যারা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইসরাইল, আরব ও আফ্রিকার স্বৈরতান্ত্রিক দেশের ঐন্দ্রজালিক মতায় বিশ্বাস করে, যা প্রকৃতপে তাদের নেই। ‘ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিক’ আখ্যাটি আধুনিক কালের একটি অপমান কৌশল, যা উদ্ভাবন করা হয়েছে তাদের জন্য যারা এসবকে অস্বীকার করে। ষড়যন্ত্র বলতে আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকায় যা দেখেছি আমাদের আজ তা অবশ্যই ভুলে যেতে হবে (সালভাদর অ্যালেন্দির গুপ্তহত্যা এবং থমাস সানকারার এলিমিনেইশন হতে)। আমাদের অবশ্যই উপো করতে হবে সেই মিথ্যাচার, যা ইরাকে আক্রমণ ও গাজায় গণহত্যার জন্য দায়ী ছিল।
শেখদের রাজ্যগুলোর চরমপন্থী সালাফিদের সাথে পশ্চিমাদের যে আঁতাত সে সম্পর্কে কিছুই বলা যাবে না। ইসরাইলের স্বার্থে আঞ্চলিক অস্থিরতা ও সর্বশেষ ঘটে যাওয়া মিসরের সামরিক অভ্যুত্থানের ব্যাপারে আমাদের চোখ অবশ্যই বন্ধ রাখতে হবে। আমাদের থাকতে হবে ‘কচি খোকা’ ও ‘সরল বিশ্বাসী’ হয়ে, যদি আমরা এটি ল করতে না পারি যে, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন’ এবং ‘রাশিয়া ও চায়না’ এই দু’পক্ষ সর্বসম্মতভাবে সিরিয়ার বিষয়ে তাদের ‘অনৈক্যের ব্যাপারে ঐকমত্য’ হয়েছে, যার ফলে প্রতিদিন কেবল বৃহত্তর শক্তিগুলোর কৌশলগত ও অর্থনীতিক স্বার্থের জন্য ১৭০ জন সিরিয়ান মুসলিম নাগরিক জীবন বলি দিচ্ছেন। আমাদের আবশ্যিক দায়িত্ব হচ্ছে সব বিষয়ে অতি সরলীকরণ বাদ দিয়ে প্রকৃত তথ্যের অনুসন্ধান করা। ঘটনার অতি সরলীকরণ পাঠের মাধ্যমে বিপরীত মেরুকরণকে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ বলা হয় না, বরং বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে, ঐতিহাসিক তথ্য ও প্রকৃত ঘটনাবলি এবং দ্বান্দ্বিক স্বার্থের সঠিক বিশ্লেষণকেই বলা হয় ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’।
এখানে যে ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয়েছে, তা ভুল বা অযথার্থ হতে পারে। কিন্তু পর্যাপ্ত তথ্য ও প্রতিপাদনযোগ্য প্রমাণ এগুলো নিশ্চিত করছে। যারা আমাদের এ বিশ্লেষণকে সমালোচনা বা চ্যালেঞ্জ করবে, আমরা পরে তাদের জন্য শুধু বিরোধিতা ও অতি সরলীকৃত স্লোগান থেকে দূরে থেকে তথ্যভিত্তিক কাউন্টার অ্যানালাইসিস উপস্থাপন করব। যখন জনগণ একটি সামরিক অভ্যুত্থানকে তার প্রকৃত নামে ডাকতে অস্বীকার করে, যখন সব মিডিয়া তাদের চোখ ফিরিয়ে রাখে; তখন সচেতন বিবেক হয় বাকরুদ্ধ।
ড. তারিক রামাদান ১৯৬২ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জন্মগ্রহণকারী এক মিশরীয় চিন্তাবিদ। তার পিতা সাইদ রামাদান একসময় মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রথম সারির নেতা ছিলেন। জামাল নাসের তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করেন। তার মাতা ওয়াফা আল বান্না মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল বান্নার জ্যেষ্ঠ কন্যা। তারিক দর্শন শাস্ত্র ও ফরাশি সাহিত্য নিয়ে মাস্টার্স লেভেলে পড়াশুনা করেন। পিএইচডি করেন আরবি ও ইসলামী শিক্ষা বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব জেনেভোয়।
অগণতান্ত্রিক সরকারের সমালোচনার জন্য ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিউনিশিয়া মিশর সৌদি আরব লিবিয়া ও সিরিয়ায় তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। তারিক রামাদান মুভমেন্ট অব সুইস মুসলিম নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ধর্মসংক্রান্ত বিষয়ে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। তিনি ব্রাসেলস ভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক ইউরো-মুসলিম নেটওয়ার্কের প্রেসিডেন্ট।
উপসংহার :
বাংলাদেশে আহলে হাদিসদের অধিকাংশই জামায়াতের সমর্থক ও নেতা । মিশরে সালাফী বা আহলে হাদিসদের দল আন নুর পার্টি সেনা বাহিনীকে সাহায্য করে । আহলে হাদিসরা সেনা বাহিনীর সাথে মিলে মুরশীর লোকদের হত্যা করছে । মিশরের মতো দেশে ইসলাম ধর্মই এখন রাষ্ট্রীয় বিভাজকের ভুমিকা নিচ্ছে । ইদানিং রাজতন্ত্রপন্হী মাদখালী সালাফী বা মাদখালী ওহাবীরাও জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে । তারা সে দেশের নারী সমাজকে সিরিয়ায় যৌন জিহাদে অংশ নিতে উদ্ভুদ্ধ করছে । ধর্মের ব্যাখ্যা কতটা নিচে নামলে এমন হতে বিবেকবান মানুষ ভাবলেও কম্পিত হয়ে উঠে । নিন্দুকেরা বলে থাকেন সৌদি আরবে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে । আর সে দেশের মেয়েরা যৌন জিহাদ করার চেয়ে তো আর ভাল কিছু করতে পারবে না । তাই মরিয়া হয়ে সৌদি আরব মেয়েদের যৌন জিহাদে উদ্ভুদ্ধ করছে । সৌদি আরবের চরম ভোগবাদী সমাজ যদি সেখানে নামাজ কালামকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, কিন্তু সেখানে বিয়ে খুবই কঠিন বিষয় নারী পুরুষের জন্য । এজন্য যুব সমাজের একটা বড় অংশ অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হচ্ছে । তার উপর রাষ্ট্রীয়ভাবে জনগণকে অকর্মন্য করে রাখা হয়েছে । সৌদি আরবকে শ্রেফ নামাজ কালামের জন্য আর বিশুদ্ধ ইসলাম তথা ওহাবী মতবাদের জন্য আদর্শ ইসলামের দেশ মনে করে ইসলামী দলগুলো তাহলে এদেশের লোকরা কখনোই ইসলামী দলগুলোর কার্যক্রমকে মেনে নিবে না । বাস্তবে হচ্ছেও । টেলিভিশনে ওহাবী মতবাদ প্রচারকরা প্রায়ই প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছেন । আর এসব ওহাবী মতবাদ প্রচারকদের অধিকাংশই জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃত্ত ।
বিষয়: বিবিধ
৫০৯৩ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অন্যান্ন দেশের গণতান্ত্রিক ইসলামী রাজনীতির ব্যাপারে সৌদীর কঠোর মনোভাব অবশ্যই নিন্দনীয়। তবে তার জন্য সৌদির সকল ইসলামী খেদমত ই বাতিল হয়ে যায় না। বর্তমান পৃথিবীতে কোন রাষ্ট্র যদি কিছুটা হলেও কুরআনের আইন দ্বারা পরিচালিত হয় তবে তা একমাত্র সৌদী আরব। তাই সৌদীর কতিপয় অগ্রহনযোগ্য কাজের জন্য এ দেশে ইসলামী হুকুমত কায়েমের আন্দলনে রত জামায়াতে ইসলামকে ওহাবী/সৌদীয়ান ট্যাগ দেয়া নিতান্তই আবলামী ও মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
জামায়াতে ইসলামী কোন ফেরকাবাজিতে বিশ্বাসী - এই ব্যাপারে আমার নিজের অভিজ্ঞতা আছে । চরমোনাই পীরের দলের ছাত্র সংগঠণ ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনকে দখল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এই দলে শিবিরের লোক ঢুকায় জামায়াতের নেতারা । পুরানা পল্টনে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হেড কোয়ার্টার নোয়াখালী টাওয়ার দখল করার চেষ্টা করে ইসলামী ছাত্র শিবির ।
তারপর পরিকল্পিতভাবে শিবির ছাত্র দল ও ছাত্র লীগে প্রবেশ করে নাশকতামূলক কাজ করে থাকে । খেলাফত মজলিস ও ইসলামী ঐক্যজোট দল দুইটাকে খন্ড খন্ড করার পেছনে জামায়াতের হাত ছিল । হেফাজতে ইসলামীর সাথে চরমোনাই পীরের দলের খারাপ সম্পর্ক হওয়ার পেছনেও জামায়াত জড়িত ।
উপযুক্ত প্রমাণ ও তথ্য সহকারে আমি পরবর্তী পোস্টগুলোতে এই বিষয়টা তুলে ধরবো ।
১. ওহাবী বলে কোন শব্দই নেই।
২. তারা যে মহান মুজাদ্দিদকে গালি দিতে চেয়েছে তার নাম হল মুহাম্মদ কিন্তু তারা বাবার নাম হল আব্দুল ওয়াহ্হাব। এতএব তাদের এ ওহাবী শব্দের সাথে সে ব্যাক্তির কোন সম্পর্কই নেই। আল্লাহর পবিত্র নামের সাথে মানুষ মিলাইয়া যে নাম রাখে, তার পুরা নামই বলতে হবে। যেমন আব্দুল গফুরকে আব্দুল গফুরই বলতে হবে। শুধু গফুর বললে শিরক হবে। যেমন আব্দুচ্ছালামকে ছালাম বলা যাবে না।
আব্দুচ্ছাত্তারকে ছাত্তার বলা যাবে না।
আব্দুল্লাহকে আল্লাহ বলা যাবে না।
আব্দুল ওয়াহ্হাবকে ওয়াহ্হাব বলা যাবে না।
এখন যারা ওয়াহাবি বলে ডাকে, এই সম্মোধনটা কার দিকে নেসবত করে করে ? যদি এই নেসবতটা মহান রাব্বুল আলামিনের দিকে করে, তাহলে
ﺍﻟﺤﻤﺪ ﻟﻠﻪ কারণ ওয়াহাবী অর্থ আল্লাহ ওয়ালা। আর যদি এই পবিত্র নামকে কোন বান্দার দিকে তথা মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব নজদির দিকে নেসবত করে, তাহলে তারা নিশ্চিত মুশরিক। আল্লাহর পবিত্র নামে কাউকে ডাকাও যায় না, গালিও দেয়া যায় না। যারা আল্লাহর পবিত্র নামকে গালি হিসেবে ব্যবহার করে অপমান করে, তারা আর যাই হোক মুসলমান হতে পারে না।
৩. তাদের মাঝেওতো কিছু আরবী জানা লোক রয়েছে। তবে তারা এতবড় একটি জিহালতি কিভাবে করতে পারল ? আসলে ভুলটা তারা করেনি। শের্ক-বেদাত এর বিরুদ্ধে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব (র.) এর এ তাওহিদী আন্দোলনকে সর্বপ্রথম ওহাবী আন্দলন বলে নাম করণ করেছে ইউরোপিয়ান ঐতিহাসিকগণ। কোন মুসলিম করলে এতবড় ভুল হত না। আসলে আল্লাহ পাক ই চেয়েছিলেন যেন মিথ্যা বাদীদের মিথ্যার অসাড়তা এভাবেই যেন প্রকাশ হয়ে পড়ে, তাই তারা এতবড় ভুল করে একটি ইসলামী আন্দলনকে আল্লাহ পাকের নামে নাম করন করে। ১৪০০ বছরের ইসলামের ইতিহাসে ইসলামি কোন আন্দলনকে আল্লাহর নামে নামকরন করার কোন ইতিহাস নেই। আর এ খৃষ্টান ঐতিহাসিকদের পদলেহন করে ও তাদের অন্ধ তাকলীদ করে আজ অবধী শিয়া এবং মাজার ব্যাবসায়ীরা তাদের বাদে বাদ বাকী মুসলিম বিশ্বকে ওহাবী বলে গালি দিতে গিয়ে আল্লাহকেই গালি দিয়ে যাচ্ছে ।
ওহাবী বা অহাবী বা ওয়াহাবী’ আরবি শব্দ । এর সঠিক উচ্চারণ-ওয়াহহাবী । ‘ওয়াহাবী’ শব্দের শাব্দিক অর্থ কোন ওয়াহাব নাম ধারীর সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি । ব্যবহারিক অর্থে আল-আরবের নজদ (বর্তমান রিয়াদ) প্রদেশের মোহাম্মদ ইবন আবদুল ওয়াহহাবের অনুসারীকে ওয়াহাবী বলে । উর্দু ভাষার শ্রেষ্ট ডিকশেনারী “ফিরুজুল লুগাতকাবীর”এর ১০২০ পৃষ্ঠায় ‘ওয়াহাবী’ শব্দের অর্থে লেখা আছে, “শেখ মোহাম্মদ ইবন আবদুল ওয়াহাবের দলের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ওয়াহাবী বলা হয়”। প্রফেসর এ,এম, ফয়েজ আহমদ চৌধুরী সাহেবের বাংলা ও উর্দু আভিধানের ৩০০ পৃষ্ঠায় লেখা আছে, “মোহাম্মদ ইবন আবদুল ওয়াহহাব নজদীর অনুসারী দলকে ওয়াহাবী বলা হয়”। বাংলা ভাষায় ওয়াহাবী শব্দ ও ‘ওহাবি’ বানানে স্বীকৃত । তাই, বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা আভিধান ১৭৮ পৃষ্ঠায় ‘ওহাবি’ অর্থে লেখা আছে, “ধর্ম-সংস্কারক নজদবাসী মোহাম্মদ ইবন আবদুল ওয়াহহাবের অনুসারী বা শিষ্য”। জন্মঃ শায়খ মোহাম্মদ আবদুল ওহাব নজদী ১৭০৩ খৃস্টাব্দ, ১১১৫ হিজরীতে আল-আরবের নজদের (বর্তমান রিয়াদ) ওয়াইনা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করে এবং ১২৮৮ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করে (ওনওয়ারুল মাজদ ফিতারী তারিখে নজদ ১ম খন্ড ৬ষ্ট পৃষ্ঠা রিয়াদে ছাপা)।
ওহাবি সর্দার সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহ (ফি নারী জাহান্নামা খালিদিনা ফিহা) এবং মুসলিমদের দুষমন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কর্ণধার বারাক মুরতাদ হোসেন ওবামা (লানাতুল্লাহ আলাইহি )
সৌদি আরবের নজদ প্রদেশের লোক মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব ৭ টি মূলনীতির উপর মুয়াহিদীন নামক সংগঠণ কায়েম করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালান ওসমানীয়া খিলাফতের শাসকদের বিরোদ্ধে । তার প্রবর্তিত নীতি গবেষক ও লেখকরা ওহাবী মতবাদ বলে অভিহিত করে থাকেন ।
মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাবের সমর্থক-নেতা-কর্মীরা ১৮০৩ সাল হতে ১৮০৯ সাল পর্যন্ত হজ্জ বন্ধ করে রাখে । ১৮১৩ সাল পর্যন্ত তারা মক্কা শরীফ দখল করে রেখে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে । এভাবে তারা সিরিয়া, ইরাক, জর্দান, ফিলিস্তিনের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপড়তা চালায় ব্রিটিশদের ও অন্যান্য অমুসলিমদের সহযোগীতায় । তারা রাসুল ( সা. ) -এর কবরকেও অপবিত্র করে । তারা ইমাম হোসাইনের মাযার-সহ অসংখ্য ধর্মীয় স্হাপনাসহ ঐতিহাসিক স্হাপনা ধ্বংস করে ফেলে । অসংখ্য ইসলাম ধর্মবিদ্যা বিশারদকে তারা হত্যা করেন । তারা প্রকাশ্যেই ইসলামবিরোধীতায় লিপ্ত হোন এবং ওসমানীয়া খিলাফতের শাসকের বিরোধীতা করে অন্তর্ঘাতমূলক তৎপড়তা চালাতে থাকেন অমুসলিম শক্তির মদদ ও সমর্থন নিয়ে । বর্তমানে তার বা তাদের উত্তর পুরুষ বা তাদের বংশধর বা মতবাদের সমর্থক হলো সৌদি শাসক সম্প্রদায় ।
সুতরাং কারো নামের খন্ডাংশ ব্যবহার করে অবশ্যই একটা দলের নাম করণ হতে পারে । এটা দোষনীয় কিছু নয় । ইয়াহিয়াহ্ শব্দের অর্থ জীবন্ত । কারো নাম ইয়াহিয়াহ্ রাখলেই সে মরে গেলেও জীবন্ত থাকতে পারে না । কোন দলের নাম ওহাবী রাখা হলেও তাদের আল্লাহর গুনবাচক নাম ওয়াহ্হাব হয়ে যায় না ।
ওহাবী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা ও ইসলাম ও আল্লাহর রাসুল সা. - এর দুষমন মুহাম্মদ ইবনে আব্দুর ওয়াহ্হাব
উপরন্তু ওহাবী বলে যারা পরিচিত তারা সৌদি আরব এবং মিসরি মুসলিম পরিচয় না দিয়ে সালাফি বলে পরিচয় দেয় এবং সাধারন মুসলিমদের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালায় । যেমন : মিসরে অত্যাচারি শাসক সিসির সাথে জোট বেধে সে দেশের স্বাধীনতাকামী মুসলিমদের সালাফিরা অত্যাচার করছে । মিসর ও ফিলিস্তিনে সৌদি আরবের ওহাবী শাসকরা মুসলিম হত্যার জন্য ইহুদি ও অত্যাচারি শাসকদের সাহায্য করছে এবং ইরাকে আইসিস নামক সন্ত্রাসীদের দিয়ে নারী নির্যাতন ও ইসলামের স্মৃতিবিজরিত স্হান ও মাজার ধ্বংস করছে । আর বাংলাদেশে তাদের অনুসারীরা ওহাবী নামে পরিচিত হলেও তারা আহলে হাদিস এবং জামায়াতে ইসলামীর সদস্য বলে পরিচয় দেয় । জামায়াতে ইসলামীর নেতা মওদুদির দৃস্টিভঙ্গি অনুসরণ করে জামায়াতের লোকরা । এজন্য দেওবন্দী আলেমরা তাদের মওদুদি বলে অভিহিত করে থাকেন ।
সুতরাং এসব বিন্দু মাত্র গালি নয় ।
তারা যদি নিজেদের সত্যিকার মুসলিম দাবি করে তাহলে তাদের উচিত সৌদি আরবের ইসলামবিরোধি কাজ এবং মওদুদির বিকৃত ধ্যান – ধারণা আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যাগ করা ।
ওহাবী ধর্ম ব্যবসায়ী ( সৌদি আরবের কুলাঙ্গার ও মুসলিম নামের কলংক )
ওহাবীদের বৈশিষ্ট্য চিত্রসহ প্রদর্শন করা হলো
আমি কখনোই অসার ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করি না ।
বরং এই সাইটে নারীদের হাত ধরা কুফরি, যৌন জিহাদ জায়েজ, নাস্তিকদের হত্যা করা ফরজ, অমুক নাস্তিক তমুক কাফির , মেয়েদের মাসিকের কাপড় ধোয়া কাপড়ের পানি খাওয়া জায়েজ , পানিতে মাছি পড়া পানিতে প্রতিশেধক আছে , পৃথিবীর চার পাশে সূর্য ঘুরে, চিত্রশিল্পি হওয়া ও এনিমশন ফ্লিম বানানো হারাম, রক্ত দান ও অঙ্গ প্রতিস্হাপন হারাম – এসব লেখা বহুল পরিমানে লেখা হয় ।
এই ঐতিহাসিক ‘ভুল’ অথবা ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ অভিধাটি সারাবিশ্বে আজও পাকাপোক্তভাবে বিদ্যমান। ফলে দেখা যায়, বর্তমান বিশ্বের যে দেশেই ইসলামী সংস্কারবাদী আন্দোলন তথা নিখাদ তাওহীদের দিকে প্রত্যাবর্তনের আহবানকারী আন্দোলন পরিদৃষ্ট হয়, সেখানেই বিরুদ্ধবাদীরা তাদেরকে পথভ্রষ্ট ও বিচ্ছিন্ন দল হিসাবে দেখানোর জন্য ‘ওয়াহ্হাবী’ ট্যাগ লাগিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালায়।
বর্তমান ওবামা প্রশাসনের কাউন্টার টেরোরিজম উপদেষ্টা Quintan Wiktorowicz তাঁর সাম্প্রতিক গবেষণা পেপার Anatomy of the Salafi Movement-এ লিখেছেন, ‘সালাফী মতবাদের বিরোধীরা প্রায়ই এ মতবাদকে বহিরাগত প্রভাবজাত মতবাদ হিসাবে চিহ্নিত করার জন্য ‘ওয়াহ্হাবী’ বলে সম্বোধন করে। তাদের উদ্দেশ্য এই মতাবলম্বীদেরকে ‘মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাবের অনুসারী’ হিসাবে পরিগণিত করা। সাধারণতঃ যেসব দেশে সালাফীগণ সংখ্যায় স্বল্প এবং স্থানীয় অধিবাসীরা ধীরে ধীরে তাদের মতবাদের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে, সেসব দেশে তাদেরকে ‘ওয়াহ্হাবী’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।১২
অনুরূপভাবে A. J. Arberry, George Rentz প্রমুখ প্রাচ্যবিদের গবেষণায় এবং স্বীকৃত কয়েকটি বিশ্বকোষে এই ষড়যন্ত্রের কথা স্বীকার করা হয়েছে।১৩
প্রকৃতপক্ষে এ আন্দোলনের বিশেষ কোন নাম ছিল না। তবে সালাফে ছালেহীনের অনুসৃত পথের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের আহবানকারী হিসাবে এটি পরবর্তীতে ‘সালাফী আন্দোলন’ নামে খ্যাতি লাভ করেছে।
১০. এটি একটি অপপ্রয়োগ (misnomer)। কেননা আন্দোলনের উদ্গাতা মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাবের নামেই যদি এই নামকরণ করা হয়ে থাকে, সে হিসাবে বড় জোর একে ‘মুহাম্মাদী আন্দোলন’ বলা যেত। কিন্তু অযৌক্তিকভাবে তাঁর পিতার নামানুসারে ‘ওয়াহ্হাবী আন্দোলন’ নামকরণ করা হয়েছে। মাসউদ আলম নাদভীর মতে, প্রথম এ ভুলটি করেন John Lewis Burkhardt (১৭৮৪-১৮১৭ খৃঃ) নামক এক ইউরোপীয় পর্যটক। এরপর তা বিভিন্ন লেখকদের মাধ্যমে জনসমাজে প্রচার পায় (দ্রঃ মাসঊদ আলম নাদভী, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব : মুছলিহুন মাযলূমূন ও মুফতারা আলাইহ, উর্দূ থেকে আরবী অনুবাদ: আব্দুল আলীম আল-বাসতুভী (রিয়াদ : ১৪২০ হিঃ) পৃঃ ১৯৪; এ.জেড.এম শামসুল আলম, প্রবন্ধ : ‘মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব ও ওয়াহ্হাবী মতবাদ’, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, ঢাকা : ৪৪ বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা, এপ্রিল-জুন ২০০৫, পৃঃ ২১০।
১১. হাসান বিন আব্দুল্লাহ আলে শায়েখ, প্রবন্ধ : আল-ওয়াহ্হাবিয়াহ ওয়া যাঈমুহা মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব, গৃহীত : ফরীদ ওয়াজদী, দায়েরাতু মা‘আরিফিল ক্বারনিল ইশরীন (বৈরূত : দারুল মা‘রিফাহ, ৩য় প্রকাশ), পৃঃ ৮/৮২১।
আলোচনা করছি।
আরবদেশে ১৭০৩ খ্রীষ্টাব্দে আব্দুল ওহাবের ছেলে মুহাম্মদের জন্ম হয়। আরব দেশের নিয়মানুযায়ী এ নাম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব বলে বর্ণিত হয়।
জন্মস্থানের নাম ছিল নজদ। এ ওহাবী আন্দোলনের নায়কের নাম আসলে মুহাম্মদ।
ইংরেজদের কারসাজিতে ছেলেদের পরিবর্তে বাপের নামেই ইতিহাস তৈরি হয়েছে, তাঁদের রাখা এ নাম হল ওহাব।
‘তিনি ১৭৯ নং পৃষ্ঠায় আরো লিখেছেন ‘ওহাবি নেতাদের “ওহাবী” বলা মানে তাঁদের
শ্রদ্ধা করা তো নয়ই বরং নিশ্চিতভাবে গালি দেয়াই হয়, যেহেতু সে মহান বিপ্লবীরাই
তাঁদেরকে “ওহাবী” নামে আখ্যায়িত করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।’
তিনি ১৮০ নং পৃষ্ঠায় আরো লিখেছেন ‘আরবদেশ যখন শিরিক, বিদয়াত ও অধর্মীয়
আচরণে ছেয়ে গিয়েছিল তখন তা রুখতে এ ওহাবের পুত্র মুহাম্মদ প্রতিবাদী দল গড়ে তোলেন।
ক্রমে ক্রমে তা রাজনৈতিক সংঘর্ষের রূপ নেয়। ১৭৪৭ সনে রিয়াদের শেখের সাথে সংঘর্ষ হয়।
১৭৭৩ সনে রিয়াদের শাসন দাহহাম আব্দুল ওহাবের পুত্র মুহাম্মদের কাছে ভীষণভাবে পরাজিত হন। আরববাসীরা এ ঘটনার পর দলে দলে তাঁর পতাকা তলে সমবেত হয়। অবশেষে ১৭৮৭ খ্রীষ্টাব্দে তিনি মারা যান।
‘জাস্টিস আব্দুল মওদূদ “ওহাবী আন্দোলন” পুস্তকের ১১৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন ‘ইবনে আব্দুল ওহাবের ধর্মীয় শিক্ষা ও মতবাদের আলোচনায় প্রথমেই বলে রাখা ভাল, আরবদেশে ওহাবী নামাঙ্কিত কোনো মাযহাব বা অস্তিত্ত নেই।
এ সংজ্ঞাটির প্রচলন আরবদেশের বাহিরে এবং এ মতানুসারীদের বিদেশী দুশমন, বিশেষত তুর্কীদের ও ইউরোপিয়দের দ্বারা ‘ওহাবী’ কথাটির অর্থ এবং তাদের মধ্যেই প্রচলিত।
কোনো কোনো ইউরোপীয় লেখক, যেমন নীবর Neibuhr আব্দুল ওহাবকে পয়গম্বর বলেছেন। এসব উদ্ভট চিন্তারও কোনো যুক্তি নেই।
‘ জাস্টিস আঃ মওদূদ আরো লিখেছেন ‘প্রকৃতপক্ষে ইবনে আব্দূল ওহাব কোনো মাজহাবও সৃষ্টি করেননি, চার ইমামের অন্যতম ইমাম হাম্বলের মতানুসারী ছিলেন তিনি।
তাঁর প্রযত্ম ছিল, বিশ্বনবী এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে ইসলামের যে রূপ ছিল সে আদিম সহজ সরল ইসলামে প্রত্যাবর্তন করা।’ {প্রগুক্ত ১১৬, চেপে রাখা ইতিহাস ১৮০}।
ভারত উপমহাদেশে ১৮২২ খ্রীষ্টাব্দের পূর্বে ‘ওহাবী’ নামটির কোনো অস্তিত্তই ছিল না। সর্বপ্রথম এটি ইংরেজদের প্ররোচনায় এ দেশে আমদানী হয়। যাতে লোহা দিয়ে লোহা কাটার পথ সুগম হয়ে যায়।
গোলাম মোর্তজা লিখেছেন ‘ব্রেলভীরসৈয়দ আহমদ শহীদ রহঃ নিহত হওয়ার
পর যেসব আন্দোলন, বিদ্রোহ বা সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছিল, সেগুলোকে বিকৃত করে তাঁদের নাম পাল্টে কোনোটাকে বলা হয়েছে সিপাহী বিদ্রোহ, কোনোটাকে বলা হয়েছে ওহাবী আন্দোলন, ফারায়েজী আন্দোলন, মুহাম্মদী আন্দোলন, আবার কোনোটাকে হিন্দু মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে।’ পৃষ্ঠা নং ১৭৯।
উত্তরে আমি বলছি বা আমি একটু সংশোধনী আনছি “ হাদিস বর্ণিত শয়তানের শিং আব্দুল ওয়াহ্হাব নজদী (র.) এর মুসলিমদের প্রতি বিপর্যকর আন্দলন ও সত্যিকার ইসলাম” - শিরোনামে আমার লেখাটা পড়ুন ।
উল্লেখ্য আমি এই লেখাটা আপনার লেখাটা পড়ে ইনশাআল্লাহ লিখবো ।
কিন্তু যখনই জামাতে ইসলামকে সমর্থন করার কথা উঠে তখনই তারা মাওলানা মৌদুদীর প্রসঙ্গ টেনে এনে ঐক্যের পথে বাধা সৃষ্টি করে। অথচ তারা যেভাবে মুরব্বি চেতনায় উদ্ভুদ্ধ থাকে জামাত কখন সেভাবে মৌদুদীর নামটাও উচ্চারন করেনা তাদের কোন সভা-সমাবেশ বা সেমিনারে। জামাতের বাইশ দফার মাঝে কোথাও মৌদুদীর নামও উল্যেখ নেই। জামাতের মূল লক্ষ্য হলো দেশে কুরআনের আইন চালু করা। তাদের মুলনীতির বা মেনুফেষ্টার কোথাও মৌদুদীর নামও নেই। জামাতের প্রথম মূলনীতি দেশে আল্লাহর সারভোভৌমত্ব তথা আল্লাহর আইন চালু করার উল্লেখ থাকায় আওয়ামি নাস্তিক কোর্ট জামাতকে এ দেশের সংবিধান অস্বিকারকারী হিসেবে নিষিদ্ধ করার ঘোষনা দিয়েছে, তারপরেও কেউ যদি বলে যে জামাত ইসলামী দল নয়, তবে তার ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানের মাত্র সহজেই অনুমেয়। জামাতের মূলনীতি গুলো হলো – ১. দেশের সার্বভৌমত্বের মালিক আল্লাহ। ২. দেশের আইন আলকুরআন ও আস্সুন্নাহর ভিত্তিতে রচিত হবে। ৩. রাষ্ট্র ইসলামী আদর্শ ও নীতিমালার উপর সংস্থাপিত হবে। ৪. রাষ্ট্র মা‘রুফ প্রতিষ্ঠা করবে এবং মুনকার উচ্ছেদ করবে। ৫. রাষ্ট্র মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সাথে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য সম্পর্ক মজবুত করবে। ৬. রাষ্ট্র সকল নাগরিকের মৌলিক প্রয়োজন পূরণের গ্যারান্টি দেবে। ৭. রাষ্ট্র শারীয়াহর নিরিখে নাগরিকদের সকল অধিকার নিশ্চিত করবে। ৮. আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। ৯. স্বীকৃত মাযহাবগুলো আইনের আওতায় পরিপূর্ণ দীনী স্বাধীনতা ভোগ করবে। ১০. অমুসলিম নাগরিকগণ আইনের আওতায় পার্সোনাল ল’ সংরক্ষণ ও পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে। ১১. রাষ্ট্র শারীয়াহ কর্তৃক নির্ধারিত অমুসলিমদের অধিকারগুলো নিশ্চিত করবে। ১২. রাষ্ট্রপ্রধান হবেন একজন মুসলিম পুরুষ। ১৩. রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হবে। ১৪. রাষ্ট্রপ্রধানকে পরামর্শ প্রদানের জন্য একটি মাজলিসে শূরা থাকবে। ১৫. রাষ্ট্রপ্রধান দেশের শাসনতন্ত্র সাসপেন্ড করতে পারবেন না। ১৬. সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে রাষ্ট্রপ্রধানকে পদচ্যুত করা যাবে। ১৭. রাষ্ট্রপ্রধান তাঁর কাজের জন্য মাজলিসে শূরার নিকট দায়ী থাকবেন এবং তিনি আইনের ঊর্ধ্বে হবেন না। ১৮. বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বাধীন হবে। ১৯. সরকারী ও প্রাইভেট সকল নাগরিক একই আইনের অধীন হবে। ২০. ইসলামবিরোধী মতবাদের প্রচারণা নিষিদ্ধ হবে। ২১. দেশের বিভিন্ন অঞ্চল একই দেশের বিভিন্ন প্রশাসনিক ইউনিট বলে গণ্য হবে। ২২. আলকুরআন ও আস্সুন্নাহর পরিপন্থী শাসনতন্ত্রের যেই কোন ব্যাখ্যা বাতিল বলে গণ্য হবে।
মাওলানা মওদুদী (রহ) এর ব্যপারে জামায়াত এর দৃষ্টিভংগি-১
নিজের ব্যপারে মাওলানা মওদুদীর অবস্থানঃ " পরিশেষে একটি কথা পরিষ্কার করে দিতে চাই, ফিকাহ ও ইলমে কালামের বিষয়ে, আমার নিজস্ব একটি তরিকা রয়েছে। আমার ব্যক্তিগত অনুসন্ধান, গবেষণার ভিত্তিতে আমি এটি নির্ণয় করেছি। গত আট বছর যারা "তারজামানুল কুরআন পাঠ করেছেন তারা একথা ভালোভাবেই জানেন। বর্তমানে এই সংগঠনের আমীরের পদে আমাকে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। কাজেই একথা পরিষ্কার ভাবে বলে দিতে হচ্ছে যে- ফিকাহ ও ইলমে কালামের ব্যপারে, ইতিপূর্বে আমি যা লিখেছি এবং ভবিষ্যতে যা লিখবো অথবা বলবো তা জামায়াতে ইসলামীর আমীরের ফয়সালা হিসেবে গন্য হবে না। বরং তা হবে আমার ব্যক্তিগত মত। এইসব বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত রায়কে,
জামায়াত এর অন্যান্য আলেম বা গবেষক দের উপর চাপিয়ে দিতে আমি চাইনা! এবং আমি এও চাই না যে, জামায়াত এর পক্ষ থেকে, আমার উপর এমন সব বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে যে, যার ফলে ইলমের ক্ষেত্রে, আমার গবেষণা করার এবং মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়া হবে। জামায়াতের সদস্যদের কে আমি আল্লাহর দোহাই দিয়ে অনুরোধ করছি যে,
ফিকাহ ও কালাম শাস্ত্র সম্পর্কিত আমার কথাকে, আপনারা কেউ অন্যের সম্মুখে প্রমান স্বরুপ পেশ করবেন না। অনুরুপ ভাবে আমার ব্যক্তিগত কার্যাবলীকেও, যেগুলোকে আমি নিজের অনুসন্ধান ও গবেষণার পর জায়েয মনে করেছি, অন্য কেউ যেন প্রমান স্বরুপ গ্রহন না করে, এবং নিছক আমি করেছি বলেই যেন বিনা অনুসন্ধান এ তার অনুসারী না হন।
এ ব্যপারে প্রত্যেকের পুর্ন স্বাধীনতা রয়েছে। উপরন্তু এ ব্যপারে আমার বিপরীত মত পোষন করার এবং নিজেদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রত্যেকের রয়েছে" -
(জামায়াতে ইসলামীর কার্যবিবরনী-১মখন্ড, ২৮ পৃষ্টা)
এর পরেও দেওবন্দী ওলামাগণ যদি জামাতকে ইসলামী দল নয় বলে গলাবাজি করেন তবে তারা যে আসলে ইসলামি রাষ্ট্র পরিচালনায় জামাতের সফলতা-দক্ষতায় নিজেদের নিদারুন অপারগতায় হিংসুক হয়েই এ মিথ্যার ফুলঝুরি ছোটান এটা বুঝতে বেশি জ্ঞানের প্রয়োজন হয় বলে মনে করি না।
জামায়াতে ইসলামী ও মাওলানা মওদুদী (রঃ) : ইকামাতে দ্বীনের উদ্দেশ্যে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করা উচিত কিনা তা যোগদানকারীর বিবেচনার বিষয়। এ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মওলানা সাইয়েদ আবুল আল মওদূদী (রঃ)। তিনি দুনিয়ায় এখন না থাকলেও যেহেতু তার তাঁর সাম্পর্কে নানা কথা প্রচলিত আছে,সেহেতু বর্তমান জামায়াতে ইসলামের সাথে মরহুমের কি সম্পর্ক সে বিষয়ে কিছু যরুরী কথা পেশ করছিঃ
একঃ মাওলানা সাইয়েদ আবুল আল মওদুদী (রঃ) আজীবন একথার উপর জোর দিয়েছেন যে,আল্লার রাসূল (সঃ) ছাড়া আর কোন ব্যক্তিকে অন্ধভাবে মানা উচিত নয়। একমাত্র রাসূলই ওহী দ্বারা পরিচালিত হবার করণে নির্ভূল। অন্য কেউ ভূলের ঊর্ধে নয়। সুতারাং মাওলানা আবুল আল মওদুদী (রঃ)কোন কথাকেই রাসূলের কষ্টি পাথরে যাচাই না করে আমি মানতে রাজি নই। কুরআন ও সুন্নার বিচারে তার মাতামত যতটুকু গ্রহনযোগ্য মনে হয় আমি ততটুকু গ্রহন করি। এটাই জামায়াতে ইসলামের নীতি। ১৯৪১ সালে যখন তিনি জামায়াতের আমীর নির্বাচিত হন তখনি তিনি নিন্মরূপ ঘোষনা দেনঃ “ পরিশেষে একটি কথা পরিষ্কার করে দিতে চাই। ‘ফিকাহ’ ও ইলমে কালামের বিষয়ে আমার নিজস্ব একটি তরীকা আছে। আমার ব্যক্তিগত অনুসন্ধান গবেষনার ভিত্তিতে আমি এটি নির্নয় করেছি। গত আট বছর যারা তারজুমানুল কুরআন’ পাঠ করেছেন তারা এ কথা ভালভাবেই জানেন। বর্তমানে এ জামায়াতের আমীর পদে আমাকে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। কাজেই এ কথা আমাকে পরিষ্কারভাবে বলে দিতে হচ্ছে যে,ফিকাহ ও কালামের বিষয়ে ইতিপূর্বে আমি যা কিছু লিখেছি একং ভবিষ্যতে যা কিছু লিখব অথবা বলবো তা জামায়াতে ইসলামীর আমীরের ফয়সালা হিসেবে গন্য হবে না বরং হবে আমার ব্যক্তিগত মত। এসব বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত রায়কে জামায়াতের অন্যান্য আলেম ও গবেষকদের উপর চাপিয়ে দিতে আমি চাই না এবং আমি এও চাইনা যে,জামায়াতের পাক্ষ থেকে আমার উপর এমন সব বিধি- নিষেধ আরোপ করা হবে যার ফলে ইলমের ক্ষেত্রে,আমার গবেষনা করার এবং মতামত প্রকাশ করার স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়া হবে। জামায়াতের সদস্যদেরকে (আরকান) আমি আল্লার দোহাই দিয়ে নির্দেশ দিচ্ছি যে,ফিকাহ ও কালাম শাস্ত্র সম্পর্কিত আমার কথাকে আপানারা কেউ অন্যের সম্মুখে প্রমান স্বরূপ প্রকাশ করবেন না। অনুরূপভাবে আমার ব্যক্তিগত কার্যাবলীকেও—- যেগুলোকে আমি নিজের অনুসন্ধান ও গবেষনার পর জায়েয মনে করেছি—-অন্য কেউ যেন প্রমান স্বরূপ গ্রহন না করেন এবং নিছক আমি করেছি এবং করেছি বলেই যেন বিনা অনুসন্ধানে তার অনুসারী না হন। এব্যপারে প্রত্যেকের পূর্ন স্বাধীনতা রয়েছে। যারা যারা ইলম রাখেন,তারা নিজেদের গবেষনা অনুসন্ধান মুতাবিক আর যারা ইলম রাখেন না,তারা যারা ইলমের উপর আস্থা রাখেন,তার গবেষনা অনুসন্ধান মুতাবিক কাজ করে যান। উপরোন্তু এ ব্যপারে আমার বিপরীত মত পোষন করার এবং নিজেদের মত প্রকাশ করার স্বাধীনতা প্রত্যেকের রয়েছে। আমরা প্রত্যেকেই ছোটখাট এবং খুঁটিনাটি ব্যপারে বিভিন্ন মতের অধিকারী হয়ে পরস্পরের মুকাবিলায় যুক্তি প্রমান পেশ করে এবং বিতর্কে অবতীর্ন হয়েও একই জামায়াতের অন্তর্ভূক্ত থাকতে পারি—যেমন সাহাবেয়ে কেরাম রাযিয়ল্লাহ আনহু ছিলেন।
দুইঃ জামায়াতে ইসলামীতে হানাফি মাযাহাব ও আহালে হাদীসের অনুসারী ব্যক্তির সমাবেশ রয়েছে। এ জামায়াতে আহালে সুন্নাহ আল জামায়াতের যে কোন মাযহাবের লোক শামিল হতে পারে। জামায়াতে ইসলামী একটি জামায়াত হিসেবে কোন এক মাযাকহাবের ফেকাহ মানতে বাধ্য করে না। যরা জামায়াতে যোগ দান করে তারা তাদের মাযহাবের অনুসরন করে। মাওলানা মওদূদী হানাফি মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু জামায়াতের মধ্যে আহলে হাদীসের লোকও রয়েছে।
তিনঃ জামায়াতের সবাই ইসলাম সম্পর্কে অতীত ও বর্তমান সকল লেখকের বই থেকে স্বাধীন ভাবে মতামত গ্রহন করার পূর্ন স্বাধীনতা রয়েছে। প্রচীন ও আধুনিক তাফসীর,হাদীস ও ফেকহ ইত্যাদি থেকে জ্ঞান অর্জন করতে গিয়ে প্রত্যেকের স্বাধীনভাবে আপন মতামত স্থির করার অধিকার রয়েছে। মওলানা মওদুদী (রঃ)চিন্তার স্বাধীনতার উপর এত গুরুত্ব দিয়েছেন বলেই তাকে অন্ধভাবে অনুসরনের কোন আশংকা নেই।
চারঃ জামায়াতে ইসলামী মওলানা মওদুদী (রঃ)-কে ফেকাহ বা আকায়েদের ইমাম মনে করে না। তাঁর ইজতেহাদকে মেনে নেয়াও জামায়াতের কোন নীতি নয়। জাময়াতে ইসলামীর নিকট মওলানা মওদুদী (রঃ)তিনটি কারনে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। (ক) এ যুগে মওলানা মওদুদীর সাহিত্য ইসলামকে একমাত্র পূর্ণংগ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে পেশ করে দ্বীন ইসলামের সঠিক মর্যাদা বহাল করেছেন। ইসলাম সুধু ধর্মীয় ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ বলে সমাজে যে ভূল ধারনা ছিল তা তাঁর লেখা বিপুল সংখ্যক বই পুস্তকের মাধ্যমে মানুষ বুঝতে শিখেছে। এ উপমহাদেশে ইসলামের এ ব্যপক ধারনা এমন স্পষ্ট ছিল না। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের সকল ক্ষেত্রেই আল্লার দাসত্ব ও নবীর আনুগত্য করা যে ইসলামের দাবী একথা উপমহাদেশের মানুষের নিকট তিনিই স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। কুরআন ও সুন্নাহ যে গোটা মানব জীবনের জন্য একমাত্র সঠিক ব্যপক হেদায়াত একথা তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। (খ) দ্বীন ইসলামকে বাস্তবে মানব সমাজে কায়েম করা যে মুসলমানের প্রধান দ্বায়ীত্ব একথা মওলানা মওদুদী (রঃ) অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে পেশ করেছেন। শুধু তা-ই নয়,এ শতাব্দীতে তিনিই ইকামাতে দ্বীনের ডাক দিয়ে এ উপমহাদেশে পয়লা বাতিলের বিরূদ্ধে জামায়াতবদ্ধ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। ইকামাতে দ্বীনের এ ডাকে যারা সাড়া দিয়েছেন এবং দিচ্ছে তারা আন্দোলনের গুরুত্ব অনুভব করেই যামায়াতবদ্ধ হওয়া ফরয মনে করছে। তিনি ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য এ জাতীয় আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বলেই গোটা উপমাহাদেশে ইসলাম আজ একটি বিপ্লবী আন্দোলনে পরিনত হয়েছে। এমনকি আধুনিক শিক্ষিত ও ছাত্র মহলে পর্যন্ত ইসলামী জাগরনের সাড়া পরে গেছে। (গ) মুসলিমদেরকে বিজ্ঞান সম্মত পন্থায় সুসংগঠিত করার জন্য মওলানা মওদুদী (রঃ) যে সাংগঠনিক প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন তা এ যুগে অতুলনীয়। আধুনিক যুগে বাতিল পন্থিদের মযবুত সংগঠনের সাথে পাল্লা দিয়ে মুসলমানদেরকে একটা সুশৃঙ্খল শক্তিতে পরিনত করার জন্য তিনি যে সাংগঠনিক কাঠামো ও কর্ম কৌশল দান করেছেন এর ফলে তার দুনিয়া থেকে চলে যাওয়া সত্বেও সংগঠন কোন দিক দিয়ে দুর্বল হবার আশংকা নেই। জামায়াতে ইসলামী মাওলানা মওদূদী (রঃ)-কে অতি মানব বা এমন কোন সত্তা মনে করে না যা অন্ধভক্তির সৃষ্টি করতে পারে। ধর্মীয় ক্ষেত্রে ভক্তির বাড়াবাড়ি খতম করার জন্য সারা জীবন তিনি যে চেষ্টা করে গেছেন তার ফলে তার মধ্যে বহু দুষ্প্রাপ্য গুনের সমাবেশ থাকা সত্বেও মাওলানাকে জামায়াত কোন প্রকার অতি ভক্তি মর্যাদা দেয়নি। অবশ্য মাওলানা মওদূদী (রঃ)-কে এ যুগের শ্রেষ্টতম ইসলামী চিন্তাবিদ,সাহিত্যিক ও মুজাহিদ হিসেবে এবং আধুনিক জাহিলিয়াত বা ইসলাম বিরোধি মতবাদের বলষ্ট প্রতিরোধকারী ব্যক্তিত্ব বলে দুনিয়ার চিন্তাশীল মহল অকুন্ঠভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ সত্বেও জামায়াতে ইসলাম মাওলানার ব্যক্তিত্বকে মানুষের কাছে বড় করে তুলে ধরা ইসলামী আন্দোলনের জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন নি। মাওলানা এ বিষয়ে এত সজাগ ছিলেন যে,মাওলানার জন্ম দিবস পালন করতে তিনি অনুমতি দেননি। তার ইন্তেকালের পরও উপমহাদেশের কোথাও তার জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালন করা হচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশ,ভারত,পকিস্তান ও শ্রীলংকায় জাময়াতি ইসলামী প্রকাশ্য সংগঠন হিসেবেই আছে। কিন্তু কোথাও মাওলানা মওদূদী (রঃ)- এর ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরা হচ্ছে না। মাওলানা মওদূদী (রঃ)আধুনিক যুগের সমস্যা ও মানব রচিত বিভিন্ন সমাধানের বিশ্লেষন করে কুরআন ও হাদীসের আলোকে ঐসব সমাধানের ত্রুটি স্পষ্টভাবে ধরিয়ে দিয়ে ইসলামের সমাধান যেরূপ যোগ্যতার সাথে পেশ করেছেন তাতে আমাদের মতো আধুনিক শিক্ষিত লোকের পক্ষে ইসলামকে বুঝা সহজ হয়েছে। এজন্য মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর রচিত ইসলামী সাহিত্য ছাড়া আধুনিক যুগে ইসলামী আন্দোলন করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তাই জামায়াতে ইসলামী তাঁর বই থেকে ফায়দা হাসিল করতে বাধ্য হচ্ছে। মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর প্রচার যদি উদ্দেশ্য হতো তাহলে তাঁর জন্ম ও মুত্যু দিবস অবশ্যই পালন করা হতো মাওলানা মওদূদী (রঃ) যাকে একমাত্র নেতা হিসেবে জীবনের সর্বক্ষেত্রে মেনে চলার শিক্ষা দিয়ে গেছেন সেই বিশ্ব নবীই জামায়াতে ইসলামীর আসল নেতা। মাওলানা মওদূদী (রঃ)যখন জামায়াতের আমীর ছিলেন তখন তাঁর প্রতি কখনও অতিভক্তি দেখান হয়নি। তার প্রকৃত মর্যাদা একমাত্র আল্লাহ পাকই দিতে পারেন। দুনিয়ায় তার মর্যাদা বাড়াবার কোন দায়ীত্ব জামায়াত গ্রহন করেনি। পাঁচঃ প্রায় সাত বছর আরব দুনিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশের বড় বড় ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামায়ে কেরামের সাথে আমার সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছে। আমি তাদের সবাইকে মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর অত্যন্ত ভক্ত পেয়েছি। মাওলানা মওদূদী (রঃ)-কে এ যুগের শ্রেষ্টতম ইসলামী চিন্তাবিদ বলেই সবাই স্বীকৃতি দিয়েছেন। পাক-ভারত- বাংলার বাইরে কোন ইসলামী ব্যক্তিত্বই মাওলানার লেখা সম্পর্কে কোন আপত্তি তুলেনি। অথচ মাওলানার সাহিত্য আরবী ও ইংরেজী ভাষায় ব্যপক অনুবাদ হয়েছে। বিশ্বের বড় বড় ইসলামী চিন্তাবিদও মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর সাহিত্যে ইসলামের একই ধরনের ব্যক্ষ্যা পড়ে আমার এ ধারনা সৃষ্টি হয়েছে যে,আমাদের দেশের যে কয়েকজন আলেম মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর বিরূদ্ধে ফতোয়া দিয়েছেন তারা সম্ভবত মাওলানার সাহিত্য ভালভাবে পড়েননি। অখন্ড ভারত বনাম পাকিস্তান আন্দোলনকে কেন্দ্রকরে এ শতাব্দীর ত্রিশ ও চল্লিশ দশকে মাওলানা মওদূদীর বলীষ্ট ইসলামী রাজনৈতিক চিন্তাধারা বহু বড় বড় ওলামার রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধী ছিল। তাদের পক্ষ থেকেই এসব ফতোয়া প্রচরিত হয়েছে। সুতারাং রাজনৈতিক কারনেই ফতোয়া দেয়া হয়েছে বলে মনে হয়। এসব ফতোয়ার কোন মযবুত দ্বীনি ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না।
লেখক
(অধ্যাপক গোলাম আযম)
আমি তুরস্কের শাসক দল একেপি-এর দৃষ্টিভঙ্গি ও মেনিফেস্টোকে কেন সমর্থন করি ? “ ২। তুরস্কের শাসক দল একেপি-এর মতো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে সৃষ্টি হওয়া প্রয়োজন কেন ? ।
এই দলের ওয়েব সাইট : https://www.akparti.org.tr/english
এই দল সম্পর্কে জানার জন্য এই লিংকটা দেখতে পারেন : https://en.wikipedia.org/wiki/Justice_and_Development_Party_(Turkey)
দেখুন : আমরা কেহই ভবিষ্যতের কথা বলতে পারি না । আপনি বলতে পারতেন, আপনি কোন কোন বিষয়ে লিখবেন এবং আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি ।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।
না জানলে আমার কাছ হতে জেনে নিতে পারেন ।
তবে তুরস্কের অপর একটা রাজনৈতিক দল যা অবিকল জামায়াতে ইসলামীর মতো যার নামক Saadet পার্টি বা ফেলাসিটি পার্টি https://en.wikipedia.org/wiki/Felicity_Party - এটা জামায়াতের গণবিরোধী-জনবিচ্ছিন্ন-যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধী নেতাদের নিয়ে তুরস্কের রাস্তা ঘাট মাতিয়ে রাখে । এরা তুরস্কে বড় বড় গায়েবানা জানাজার নামাজও আয়োজন করেছে । এই দল মূলত একে পার্টি হতে বের হয়ে যাওয়া বা ভিন্ন মতাবলম্বী দল । সংসদে এটার কোন আসন নেই । জনসমর্থন মাত্র ৫ % । এরা দাবি করে তারা একে পার্টির বা এরদুগানের গুরু নাজিমুদ্দীন আরবাকানের প্রধান অনুসারী ও অনুগামী ।
কাফের ছাড়া কেউ বলতে পারেনা ইসলামী দলগুলোর বিরোধীতা করতে। তাও রমজান মাসে।
কোনো ইসলামী দলের দোষ থাকলে তার নেতাদের সেই ভূল থেকে আসার পরামর্শ দেয়া যেতে পারে। কিন্তু বিরোধীতা করার কথা শুধু ইসলামের দুশমন শয়তানরাই করতে পারে।
@ফখরুল পাগলা, আওয়ামী লীগের বিরোধীতা করা যাবে? নাকি তোমার পাগলামি ফতোয়াতে আওয়ামীলীগ করা উচিত কারন হাসিনা অলি?
আমি প্রতিটা ইসলামী দলের নেতাদের পরামর্শ দিয়েছি । মৌখিক এবং লিখিত । ২০০৪ হতে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ।
রমজান মাস বলে লেখালেখি বাদ দিতে হবে বা জনগণকে সচেতন করার কাজ বাদ দিতে হবে - এমন কথা কোন কিতাবে আছে ।
রমজান মাস আল্লাহভীতি অর্জনের মাস । এসব ইসলামী সংগঠণ রমজান মাসে মুসলিমদের আল্লাহভীতি তো দুরে থাকে মুসলিমদের দু:খ-কষ্ট দুর করার জন্য কি করছে । স্লোগানবাজি আর ইফতার পার্টি ছাড়া তো তাদের কোন কাজের তালিকা হাজির করতে পারবেন বলে মনে হয় না ।
আমার লেখার ক্ষেত্র জনগণকে সচেতন করা এবং আমি কোন বিষয়ে লিখবো ও কীভাবে লিখবো - এটা আমার নিজস্ব ব্যাপার ।
প্রগতিশীল নামধারী নাস্তিক, বে-ঈমান, বে-নামাযি, লম্পট, চরিত্রহীন, চোর-বাটপার, পতিতা গমণকারী, নাস্তিকদের দালাল, ইসলামের শত্রু, মোনাফেক, কাফির, সমকামিতায় বিশ্বাসী পশু, গরু-ছাগলদের কাছ থেকে ইসলাম জানতে এবং বুঝতে চাই না -মনে রাখবেন
আমি চিন্তার ক্ষেত্রে স্বাধীন ।
আমার হাত বাধা নেই ।
আমার মস্তিস্ক কারো কাছে বন্ধক দেইনি ।
আমি আমার অভিমতকে তুলে ধরার জন্য,জনমত গঠণ করার জন্য ও জনসচেতনা বৃদ্ধির জন্য লেখালেখি করি ।
কে আমার লেখা বুঝলো না - সেটা দেখা আমার দায়িত্বে আওতায় পড়ে না । কারণ সবার জ্ঞানের পরিধি সমান নয় ।
ক্রমাগত অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ব্লক করা হলো ।
আমি কি লিখবো আর কোন বিষয়ে লিখবো ও কীভাবে লিখবো - তা আমার একান্ত নিজস্ব বিষয় ।
আমি আমার লেখালেখির ক্ষেত্রে স্বাধীন ।
আমি চিন্তার ক্ষেত্রে স্বাধীন ।
আমার হাত বাধা নেই ।
আমার মস্তিস্ক কারো কাছে বন্ধক দেইনি ।
আমি আমার অভিমতকে তুলে ধরার জন্য,জনমত গঠণ করার জন্য ও জনসচেতনা বৃদ্ধির জন্য লেখালেখি করি ।
কে আমার লেখা বুঝলো না - সেটা দেখা আমার দায়িত্বে আওতায় পড়ে না । কারণ সবার জ্ঞানের পরিধি সমান নয় ।
ক্রমাগত অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ব্লক করা হলো ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন