সাদা শাপলা ফুল Nymphaea nouchali বাংলাদেশের জাতীয় ফুল
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ০৩ জুন, ২০১৫, ০৯:২৯:০৯ রাত
আমাদের এলাকায় একটা কথা চালু আছে যার বাড়িতে শাপলা ফুল চাষ করা হয় এবং মৌমাছির বাসা থাকে, তাদের ভাগ্য ভাল হয় এবং বিপদ আপদ কেটে যায় ।
বাস্তবে খুব কম লোকই শাপলা ফুল চাষ করে । কিন্তু আমি নিজে শাপলা ফুল চাষ করেছি । এই বিষয়ে আমার মজার অভিজ্ঞতা এই লেখায় শেয়ার করেছি ।
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হলো সাদা শাপলা ফুল । এর বৈজ্ঞানিক নাম Nymphaea nouchali । আমি আমার লেখায় এই ফুল সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি । শহরের অনেক ছেলে-মেয়ে এই ফুল কখনো ছুঁয়ে দেখেনি । তাদের জন্য আমার এই লেখাটা উপকারী হতে পারে ।
আজ আমার ভাই ও বোনের ছোট্ট ছেলে-মেয়েরা বাড়ির বাহিরে বেড়াতে যাওয়ার জন্য আবদার করলো । আমি সকালেই আমাদের বাড়ির কাছে সদ্য চালু হওয়া বিরুলিয়া ব্রীজের কাছে নিয়ে গেলাম । বিরুলিয়া ঢাকার বোটানিক্যাল গার্ডেনের হতে মাত্র তিন কিলোমিটার দুরবর্তী স্হান । এখানে প্রাচীণ কালের অনেক নিদর্শণ আছে দিগন্ত বিস্তৃত গোলাপ ফুল ও গ্লাডিউলাস ফুল – সহ বিভিন্ন ফুলের বাগান আছে । আর ধানক্ষেত আর বিভিন্ন সব্জি বাগানের কথা বাদই দিলাম ।
https://www.youtube.com/watch?v=LS0FUMBdiWE
আমি উদ্ভোদনের অপেক্ষায় থাকা বিরুলিয়া ব্রীজের কাছে গরান চটবাড়ি এলাকায় রাস্তার পাশের খালে লাল শাপলা দেখলাম । সাদা শাপলা এখন এখানে খুব একটা পাওয়া যায় না । তারপরও লোকদের কাছে সাদা শাপলা ফুলের অবস্হান জানতে চাইলাম । কারণ আমি কথা দিয়েছিলাম আমার ভাই-বোনের ছেলে-মেয়েদের বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা দেখাবো । তারা মনিপুর স্কুলে ক্লাস ওয়ান ও ক্লাস ফাইভে পড়ে । তারা এই ফুল না দেখেই ড্রইং পরীক্ষায় এঁকেছিলো । আজ তারা সরাসরি সাদা শাপলা ফুল দেখতে চায় । আমি পড়লাম সমস্যায় । কারণ সবাই লাল শাপলা জোগাড় করে দেওয়ার কথা বল্লো । কিন্তু তারপরও আমার ভাল লাগছে । আমি আমার অতীতের স্মৃতি চারণ করতে লাগলাম । আর যাওয়ার সময় লাল শাপলার কয়েকটা কন্দ-সহ গাছ নিলাম আমাদের দালানের রুফ গার্ডেনে বড় চাড়ি বা হাফ ড্রামে লাল শাপলার কন্দগুলো লাগানোর জন্য । এর ফলে আমাদের বাড়ির ছাদে ছোট খাট একটা শাপলা পুকুর তেরী হবে । আর কয়েক মাস পর গ্রাম হতে সাদা শাপলা ফুলের কন্দ আনবো । আর তাদের দিয়েও ছোট খাট একটা শাপলা পুকুর বানাবো ।
ছোট বেলায় আমরা গ্রামে যেতাম । এই ধরুন সময়টা ১৯৮৫ হতে ৯৫ হবে । বর্ষায় দেখেছি শাপলা ফুলে ফুলে সাদা হয়ে আছে ধানের ক্ষেতগুলো । শরতের সকালে দেখতাম মামা-রা সেখানে মাছ ধরতো ডিংগি নৌকায় করে । যতদুর চোখ যায় শুধু সাদা শাপলা । শাপলা ফুলের কি সুন্দর ঘ্রাণ ! হালকা কুয়াশা । মৌমাছি শাপলা ফুলে ফুলে ঘুরছে । তখন এসব দৃশ্য দেখে কোন অনুভতি হতো না । এখন ওই সব স্মৃতি মন্থন করে আফসোস করি । নৌকা চলছে । আমি আর আমার বোন – দুই জনই হাত দিয়ে টেনে ধরছি শাপলা । একটার পর একটা উঠে আসতো । ছোট মামা নিষেধ করতেন । মামা মাছ ধরা শেষে তুলে নিতেন কিছু ঢ্যাঁপ ।
ঢ্যাপ হলো শাপলার ফল । বাড়ি এনে ওগুলো দিয়েছি খালাকে । ঢ্যাঁপ থেকে মুড়ি বানানোর দায়িত্ব ছিল তার। তবে বানানোর কারিগরী বিষয়গুলো আমার আজো মনে আছে। ঢ্যাঁপ এর ভেতর থাকে ছোট ছোট কালো রংয়ের বীজ । ঢ্যাঁপ কচি থাকলে বীজ গুলোর রং থাকে লাল । ওগুলো বের করে ছাই দিয়ে ঘষে বীজের গায়ের পিচ্ছিল আস্তরন ছাড়ানো হত। এরপর ও গুলো শুকানো হত রোদে। ঠিকমত শুকিয়ে গেলে চাল থেকে যেভাবে মুড়ি বানানো হয় ঠিক সেভাবেই ওই বীজগুলো দিয়ে বানানো হত ঢ্যাঁপের মুড়ি। মুড়ির সাথে খেঁজুরের গুড় মেখে বানানো হতো মোয়া, ঢ্যাঁপের মোয়া ! আহ্ আর কি পাব ওই সব ! যদিও আম্মা প্রতি বর্ষায় গ্রাম হতে ঢ্যাঁপ ও শালুক আনানোর ব্যবস্হা করেন ।
https://www.youtube.com/watch?v=NuZGne7ZNSE
সাদা শাপলা ফুলের উপর সুন্দর টা ভিডিও
https://www.youtube.com/watch?v=_E3IeW0vpAs
সাদা শাপলা ফুল বিভিন্ন সময় অনুযায়ী পাপড়ি বন্ধ করে ও খুলে । এই দৃশ্যটি এই ভিডিওতে আছে
https://www.youtube.com/watch?v=oZW94injtsk
Water lily : Nymphaeaceae শাপলা ফুলের উপর সুন্দর গান
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল সাদা শাপলা এবং এর বিভিন্ন জাত :
শাপলা Nymphaeaceae পরিবারের এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ । এ পরিবারভূক্ত সকল উদ্ভিদই শাপলা নামে পরিচিত। বিশ্বে শাপলার প্রায় ৮০ টি প্রজাতি আছে । এদের সাধারণ নাম শালুক, শাপলা, শুঁধি।
শাপলা ফুল অনেক রঙের হয় । আবার অনেক জাতের হয় । যেমন : সাদা শাপলা ফুলের অনেকগুলো জাত আছে । বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হিসেবে সাদা শাপলা ফুলের “ Nymphaea nouchali “ -প্রজাতিকে বেছে নেওয়া হয়েছে । কারণ এই প্রজাতির শাপলা ফুল বাংলাদেশের খাল-বিল-হাওর-বাওর-পুকুর-নদী-নালাতে বেশি দেখা যায় ।
সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হলেও এটি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ইয়েমেন, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার প্রভৃতি দেশের পুকুর ও হ্রদে দেখা যায়। তবে শ্রীলংকার জাতীয় ফুল হলো নীল শাপলার ……. প্রজাতি ।
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল Nymphaea nouchali প্রজাতির সাদা শাপলার বৈশিষ্ট্য :
সাদা শাপলা একসময় বাংলাদেশের হাওর, বিল বা উন্মুক্ত জলাশয়ে অত্যন্ত সুলভ ছিল। বর্তমানে জলাশয়ের পরিমাণ কমে যাওয়ায় এই উদ্ভিদ দুর্লভ হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ ছাড়াও এই ফুল থাইল্যান্ড ও মায়ানমারে পুকুর ও বাগান সাজাতে চাষ করা হয়।
শাপলার অন্যান্য প্রজাতিগুলোর বৈশিষ্ট্য প্রায় একই রকম। তবে রঙের হেরফের কারণে এদের ভিন্ন ভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। নিচে এরূপ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রজাতির সাধারণ পরিচয় তুলে ধরা হলো :
১. এই জাতের সাদা শাপলার মাঝখানের গর্ভকেশর গুলো হলুদ রঙের হয়।
২. এই ফুলে ৪ থেকে ৫ টি বৃতি ও ১৩ থেকে ১৫ টি পাপড়ি থাকে।
৩.ফুলগুলো দেখতে তারার মত মনে হয়।
৪.সবুজাভ বৃতিগুলো ১১ থেকে ১৪ সেমি লম্বা হয়ে থাকে।
৫.স্বাদু পানিতে জন্মানো এই ফুলের হালকা গোলাপি রং এর বৃন্ত অনেক লম্বা। এই বৃন্ত সবজী হিসেবেও খাওয়া হয়। ৬.পূর্ণবিকশিত শাপলা ফুলের গর্ভাশয়ে গুড়ি গুড়ি বীজ থাকে। এই বীজ ভেজে একধরনের খৈ বানানো হয় যার নাম “ঢ্যাপের খৈ”।
শাপলা ফুল দিনের বেলা ফোটে। এই ফুল সরাসরি কাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকে। ফুলের কাণ্ড বা ডাঁটা পানির নিচে মূলের সাথে যুক্ত থাকে এবং এই মূল জলাশয়ের তলদেশের ভূমিতে যুক্ত থাকে। এর পাতাগুলো পানির উপর ভেসে থাকে। পাতার আকার প্রায় গোল, তবে এর একটি পার্শ্ব বিভক্ত থাকে। পাতার রঙ সবুজ, পাতার প্রান্ত ঘিরে ধারালো খাঁচ থাকে। পাতার ব্যাস প্রায় ১৫-২০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এর ফুলগুলো অফুটন্ত অবস্থায় গম্বুজের মতো দেখায়। এর বাইরের দিকের রঙ সবুজাভ ধূসর। ফুটন্ত অবস্থায় এর ভিতরের সাদা পাপড়িগুলো ছড়িয়ে পড়ে। পাপড়িগুলো ৭-১০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এই উদ্ভিদের ফুল প্রায় সারা বছরই দেখা যায়। তবে বর্ষা ও শরৎ এই ফুল ব্যাপকভাবে দেখা যায়। এর ফল প্রায় গোলাকার অর্থাৎ ঈষৎ লম্বাটে।
শাপলার ব্যবহার :
একসময় বাংলাদেশের খাল-বিলে একসময় অসংখ্য শাপলা দেখা যেতো, তবে আজকাল আর সেভাবে চোখে পড়ে না। অপরিকল্পিতভাবে জলাশয় ভরাট, গরু ও মহিষের খাদ্যের যোগান দিতে শাপলা দিন দিন কমতে শুরু করেছে।
১. প্রাকৃতিক সৌন্দর্য :
অনুপম সৌন্দর্যের এই ফুলটি আপনা আপনি ডোবা, খাল, গভীর পুকুর ও জলাশয়ে আপন মনে ফুটতে দেখা যায়। প্রস্ফুটিত শাপলা দেখতে অনেকটা আলোকরশ্মি বিচ্ছুরিত নক্ষত্রের মতো। শাপলা ফোটে রাতের স্নিগ্ধতায় আর দিনের আলোতে আস্তে আস্তে বুজে যায়। একটির শাপলার স্থায়িত্ব এক নাগাড়ে সাতদিন পর্যন্ত।
২. শাপলার ফল বা ডেপ ও খই খাবার হিসেবে ব্যবহার :
শাপলার ফলগুলো হয় সবুজ গোলাকার আর পাকলে ফেটে যায়। ফলের মধ্যে অনেকগুলো কোষ থাকে। কোষগুলোর মধ্যে থাকে কালে ও বাদামী রঙের অসংখ্য বীজ। বীজগুলো আকারে খুবই ছোট। এই বীজ রোদে শুকিয়ে গরম বালু দিয়ে আগুনে ভেজে খই তৈরি করা যায়। গ্রাম অঞ্চলে শাপলা ফলের খই অনেক জনপ্রিয়।
৩. শাপলা তরকারী হিসেবে ব্যবহার :
তাছাড়াও শাপলার ডাটা তরকারি হিসেবেও সমাদৃত। গ্রাম বাংলার দুরন্ত কিশোর-কিশোরীরা হাঁটু, কোমর, বুক ও গলা সমান পানিতে নেমে সাঁতার কেটে এগুলো তুলে আনে। সবাই মনের আনন্দে ভাগাভাগি করে খায় এবং কিছু বাড়ি নিয়ে তরকারি হিসেবে রান্নার যোগান দেয়। ইলিশ ও চিংড়ি মাছের সাথে রান্না করলে অতুলনীয় স্বাদ পাওয়া যায়।
৪. শাপলা খেলনার উপকরণ :
আবার গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা শাপলা ফুল দিয়ে খোঁপা ও গলার মালা, হাতের চুড়ি ইত্যাদি নানা রকম সাজগোজের উপকরণ হিসেবে খেলাধুলা করে।
৫. ঔষধ হিসেবে শাপলার ব্যবহার :
শাপলা শুধুই যে সৌন্দর্যের প্রতীক তা কিন্তু নয়, এর ওষুধি গুণসম্পন্ন উপকারিতাও রয়েছে। বীজ খই ছাড়াও ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। রক্ত দোষ ও বহুমূত্র রোগে শাপলা উপকারী।
সাধারণত ফুল ও রাইজোম মানবদেহের বিভিন্ন রোগে যেমন- স্নিগ্ধ কারক, শীতল কারক, পিত্ত প্রশমক, হৃদযন্ত্রের শক্তি কারক ও পিপাসা নিবারক। তাছাড়া প্রসাবের জ্বালা পোড়া, আমাশয় ও পেট ফাঁপায় উপকারী। রোগ অনুসারে নিচের পদ্ধতি অবলম্বনে অনেক উপকারে আসবে যেমন-
প্রসাবের জ্বালা পোড়া ও পিত্তাধিক্য রোগে শাপলা ফুলের শুকনো অংশ ১০-১৫ গ্রাম পাঁচ গ্রাম ধনিয়া আধা চূর্ণ করে, দুই কাপ পানিতে মিশিয়ে জ্বাল করে ছেঁকে নিয়ে প্রয়োজন মত চিনি সহ দিনে ২ বার ১৫-২০ দিন খেলে উপকার হবে।
হৃদযন্ত্রের দুর্বলতায় ও হৃদকম্পে রোগের জন্য শাপলা ফুল ১০ গ্রাম, সাথে পাঁচ গ্রাম গোলাপ ফুল মিশিয়ে দুই কাপ পানিতে জ্বাল করে ছেঁকে নিয়ে প্রয়োজন মত চিনি মিশিয়ে প্রতিদিন ২ বার এভাবে ১ মাস নিয়মিত খেলে বিশেষ উপকারে আসবে।
পিপাসা নিবারনের জন্য শাপলা ফুলের শুকনো অংশ ১০-১২ গ্রাম এক কাপ পানিতে জ্বাল করে ছেঁকে নিয়ে প্রয়োজন মত চিনি মিশিয়ে দিনে ২ বার এভাবে ১ মাস খেলে উপকার হবে।
বাড়ির ছাদে কিংবা বারান্দায় ছোট্ট শাপলা পুকুর করার পদ্ধতি :
শাপলা জলজ উদ্ভিদ। শাপলা প্রাকৃতিক পরিবেশ ও চাষাবাদ – উভয়ভাবেই উৎপাদিত হয়। অম্লক্ষারবিহীন জলেই এটি ভাল জন্মে। তবে ১৫° সেলসিয়াল তাপমাত্রার নীচে এটি জন্মে না। জলজ উদ্ভিদ হিসেবে এটির শিকড়পানিতে কাদার নীচে প্রবেশ করে। শাপলা ফুল সরাসরি কাণ্ড ও মূলের সাথে যুক্ত থাকে। মূল যুক্ত থাকে মাটির সঙ্গে এবং পাতা পানির উপর ভেসে থাকে। কিছু পাতা পানির নীচে থাকে। মূল থেকেই নতুন পাতার জন্ম নেয়। পাতাগুলো গোল এবং সবুজ রঙের হয় কিন্তু নীচের দিকে কালচে রঙের হয়ে থাকে। ভাসমান পাতাগুলোর চারদিক ধারালো হয়। কাগজের ন্যায় হালকা পাতাগুলোর আকার ১৫ থেকে ২৬ সেন্টিমিটার এবং এদের ব্যাপ্তি প্রায় ০.৯ থেকে ১.৮ মি। ফুলগুলো যখন পূর্ণাঙ্গভাবে বিকশিত হয়, তখন এর ব্যাস প্রায় ১৫ সে.মি হয়। শাপলা ফুল দিনের বেলায় সঙ্কুচিত হয় এবং রাতে পূর্ণাঙ্গভাবে ফুঁটে।
কখনো কি শুনেছেন যে ঘরের বারান্দা কিংবা ছাদে শোভা পাচ্ছে পুকুর? তাও আবার শাপলা ফোটা পুকুর?
নিজের ছাদেই দারুণ শাপলা পুকুর তৈরি করেছেন ঢাকা শহরে অনেকেই । যা কিনা মৌসুমের সময় ছেয়ে থাকে ফুলে ফুলে। কিন্তু তারা কীভাবে করলেন এই কাজ ? কীভাবে পুকুরের শাপলাকে তুলে আনলেন বাড়ির ছাদে ? খুব সহজেই নাকি গড়ে উঠেছে এই শাপলা পুকুর।
আমি নিজে তিনটা শাপলা লাগিয়েছিলাম কয়েক বছর আগে শীতে একদম শুকিয়ে যায়, মনে হয় মরে গেছে, কিন্তু মাটিতে কন্দটা থেকে যায়। আমি শুধু তখন সামান্য পানি দিয়ে রাখি যেন কন্দটা না মরে। আর বর্ষাতে তো ফুল ফোটে।
কীভাবে আপনার বাড়ির ছাদে ফুটবে শাপলা ? :
গরু পানি খায় এমন একটা মাটির চারি নিন। চারিটি যেহেতু নিচে গোলাকার, তাই একে গাড়ির পুরনো টায়ারের উপর বসিয়ে দিন। এবার আর নড়বে চরবে না।
-তাতে কাদামাটি দিয়ে ভরাট করুন ১/৪ ভাগ। বাকিটা অংশটা পানি দিয়ে ভরে দিন।
-এই কাদামাটিতে লাগান শাপলা। (নার্সারিতে খুঁজলেই পেয়ে যাবেন)
-রোদের মাঝেই রাখুন, একটা খোলা পুকুর যেভাবে থাকে।
-পানিতে ছেড়ে দিতে পারেন ছোট মাছ, দেখতে সুন্দর লাগবে।
-পানি কমে গেলে মাঝে মাঝে পানি দিয়ে দেবেন।
ব্যস, এর বেশী আর কিছুই করতে হবে না।
https://www.youtube.com/watch?v=j59kYnIFH8I
আমার বাড়ির ছাদে শাপলা ফুলের জন্য বড় হাফ ড্রাম তেরী করে রেখেছিলাম । এখন সেটাতে শাপলা নেই । তবে শেয়ার করার ইচ্ছা আছে । আগের ছবি পেলে শেয়ার করবো ।
আমার বাড়ির ছাদে লাগানো লাল শাপলা ফুলের ভিডিও শেয়ার করছি ।
আমিএকটা প্লাস্টিকের বাউলে ২৮ এপ্রিল ২০১৩ লাল শাপলা ফুলের কন্দ লাগিয়েছি । এই বাউলটা ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের এবং ৮ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট্য । কন্দটা যোগার করেছি আশুলিয়ার এক বাড়ি ডোবা থেকে । মালিক তিনটা কন্দ দিল । বল্লেন, আরো নিতে চাইলে পরে আসেন ।
প্রথমে দুই ইঞ্চি মাটি বাউলের ভিতর দেই । তারপর শাপলা ফুলের কন্দটা লাগাই । মাটি যাতে সরে না যায় বা কন্দটা নাড়াচারা না করতে পারে - এজন্য সিরামিকের টাইলসের ভাঙ্গা টুকরা ও ইট ব্যবহার করি । মাত্র ২৫ দিনে আমার এই লাল শাপলা ফুল গাছটা কেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তা এই ভিডিও দেখলেই বুঝতে পারবেন ।
লাল শাপলা বা রক্ত কমল (বৈজ্ঞানিক নাম: Nymphaea rubra) শাপলা পরিবারের একটি জলজ উদ্ভিদ। এটি বাংলার প্রজাতি। পাতা এবং বোঁটা লালচে সবুজ। ফুল ডাবল, ১০-২০ সেমি চওড়া, অনেকগুলি পাপড়ি এবং পাপড়ির রঙ লাল। রাতে ফোটে।
গোলাকার ফলে অনেকগুলো ছোট ছোট বীজ হয়। বীজ খাওয়া যায়। গোঁড়ার কন্দ থেকে চাষ করা হয়। কন্দ হলো কচুর মতো দেখতে এক ধরনের কান্ড । একে অনেকে শালুকও বলে । শালুক খাওয়া যায় ।
বিদেশী জাতের শাপলাগুলো ছোট চারি ( গরুকে ভাতের মার ও পানি খাওয়ানোর মাটির তেরী বড় পেয়ালা )-তে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকে । শাপলা ফুলসহ এগুলো সাইজ ও রঙ অনুসারে ২,৫০০-৬,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ঢাকার আগারগাও-এর নার্সারীগুলোতে আছে । দামাদামি করে কিনতে পারেন ।
শাপলা ফুল ছাদে লাগানোর কোন টিপস প্রয়োজন নেই । শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল যা খুব সহজেই হয়। শুধু সামান্য মাটি ও পানিতে রাখতে হবে, পাশাপাশি যেন রোদও পায়।
https://www.youtube.com/watch?v=8mGFS2zTybA
ছাদে বা কম স্হানে শাপলা ফুল চাষ করার নিয়ম সম্পর্কিত ভিডিও
http://www.gardenista.com/posts/a-garden-transformed-in-eugene-or
শাপলা ফুলের বাগানসহ বাড়ি
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল- সাদা শাপলা – এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি :
প্রচলিত নাম- শাপলা
ইংরেজী নাম- Water Lily, White Water Lily,
বৈজ্ঞানিক নাম- Nymphaea nouchail Burm.F
পরিবার- Nymphaeaceae
অন্যান্য নাম- গুলে নিলুফর, থারো আংগৌবা (মনিপুরী), ভেলাম্বাল (তামিল), कुमुद কুমুডা (সংস্কৃত), শালুক (বাংলা), নিরাম্বল (মালয়ালম ভাষা), কান্নাইদিলি (কান্নাদা), নাল (আসামি ভাষা)।
কৃতজ্ঞতা :
১.https://fakhrul78.wordpress.com/2015/05/03/natonal-flower-of-bangladesh/
২. http://www.priyo.com/2014/09/05/103464.html
৩. ছাদে/ব্যালকনিতে বাগান করেন ? তারা যোগাযোগ করুন : আরবান রুফ গার্ডেনারস সোসাইটিতে : http://www.urgsbd.com
https://www.facebook.com/urgs.bd
৪. http://www.sachalayatan.com/ronygaffar/50110
৫. Nymphaea nouchali or white water lily or Sada Shapla
http://weloveourbangladesh.blogspot.com/2011/01/white-water-lily-or-sada-shapla-is.html
বিষয়: বিবিধ
১২৫৮৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন