গোলাম আজম
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ২৪ মে, ২০১৫, ০৯:৫৯:১০ রাত
পটভুমি :
আমার লেখার শিরোনামগুলো অনেক বড় হয় । কিন্তুে এই লেখার শিরোনাম বড় করলাম না । তবে এক লোকের ফেসবুক স্যাটাসে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই । কিন্তু তিনি তার উত্তর না দিয়ে তিনি আমাকে ব্লক করেন ও তার সমর্থকরা আমাকে গালি গালাজ করা অব্যহত রেখেছে ।
বাংলাদেশের মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে এই লেখাটা আমি লিখে যাবো ইনশাআল্লাহ ।
ইতিহাস আবেগ,ধর্মীয় উম্মাদনা ও পিতৃস্নেহ দিয়ে বিচার হয় না । ইতিহাস তথ্য - উপাত্ত দিয়ে বিবেচিত হয় ও পঠণ-গবেষণার বিষয় হয় ।
সবাইকে এই দিকটি বিবেচনা করে লেখাটি পড়ার অনুরোদ করছি ।
সূচনা :
সূচনা বা ভুমিকা দিচ্ছি না ।
গোলাম আজম কে ? :
বাংলাদেশের কিছু লোকের কাছে ইসলামী চিন্তাবিদ বলে পরিচিত এক লোকের নাম গোলাম আজম । তার বাহিরে তার কিছু পরিচয় আছে । যেমন :
১. গোলাম আযম ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর আমির ছিল। দলীয় প্রধান হিসেবে গোটা দেশে মুক্তিযুদ্ধকালে তার দলের যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ভার তার ওপর বর্তায়।
২. গোলাম আযম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী শান্তি কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং শীর্ষ নেতাদের একজন ছিলো। শান্তি কমিটির নেতৃত্বে সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ভার তার ওপর বর্তায়।
৩. জামাতে ইসলামী পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর যাবতীয় তৎপরতাকে রাজনৈতিক সমর্থন দিয়েছিলো। এসব তৎপরতায় গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট এবং বাস্তভিটা থেকে উচ্ছেদের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ অন্তর্ভূক্ত। এসব অপরাধের সমর্থন গোলাম জামাতের দলীয় প্রধান হিসেবেই অনুমোদন করেছে।
৪. জামাতে ইসলামী রাজাকার বাহিনী এবং এর অধীনস্থ বিশেষ ঘাতক সংস্থা আল-বদর গঠন করে। এসব বাহিনী পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহযোগী বাহিনী হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে অভিযুক্ত। যেহেতু শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদন ও আদেশক্রমেই রাজাকার এবং আল-বদর বাহিনীর সৃষ্টি, তাই তখনকার আমির গোলাম আযমকে সেই অনুমোদন ও আদেশের দায় নিতেই হবে। এখানে এটা উল্লেখ করা দরকার যে রাজাকার বাহিনীকে (আল-শামস ও আল-বদর) ব্যবহার করে জামাতে ইসলামী তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নির্মূল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ চালাচ্ছে এমন অভিযোগ তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোই সেসময় করেছিলো। গোলাম আযম ও তার দল এসব সমালোচনাকে ইসলাম ও পাকিস্তান বিরোধী বলে পাল্টা বিবৃতি দিয়ে নিজেদের কর্মকান্ডকে নায্য বলে দাবি করে।
৫.আল-বদর বাহিনী সুনির্দিষ্টভাবে গঠিত হয়েছিলো জামাতের ছাত্রসংগঠন পূর্ব পাকিস্তানী ইসলামী জামাতে তালাবা বা ইসলামী ছাত্র সংঘের (বর্তমানে ইসলামী ছাত্র শিবির)সদস্যদের নিয়ে। বিজয়ের আগে বুদ্ধিজীবি হত্যার জন্য এই আল-বদর সদস্যরা অভিযুক্ত। রাজাকার ও আল-বদর বাহিনীর প্রশিক্ষণ শিবিরগুলোতে গিয়ে তাদের উৎসাহ প্রদান এবং তাদের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করার দায়ে গোলাম অভিযুক্ত।
গোলাম আজম সম্পর্কিত তার অভিযোগগুলোর পক্ষে কিছু প্রমাণ :
১. প্রসঙ্গ আমির হিসেবে দলীয় দায়:
১৯৭১ সালে প্রকাশিত যাবতীয় পত্র-পত্রিকায় গোলাম আযমকে পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর আমির বলে সম্বোধন করা হয়েছে এবং সে ওই পদবীতেই যাবতীয় বক্তৃতা ও বিবৃতি দিয়েছে যার একটির ছবি নীচে দেওয়া হলো :
জামাতে ইসলামী দলীয়ভাবে কি ধরণের মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তার প্রমাণ হিসেবে তুলে দেওয়া যেতে পারে একটি ভিডিও ফাইল। ব্রিটেনভিত্তিক চ্যানেল ফোর প্রযোজিত ‘ওয়ার ক্রাইমস ফাইল’ নামের তথ্যচিত্রটি থেকে নেওয়া এই ফুটেজে সিলেটে জামাতের একটি জনসভার কর্মকান্ড এবং তারপর সংঘটিত একটি হত্যাকান্ডের বর্ণনা শোনা যাক প্রত্যক্ষদর্শীর মুখে। প্রসঙ্গত এ হত্যাকাণ্ড জামাত রাজাকার বা আলবদরের সামরিক লেবাসে ঘটায়নি:
https://www.youtube.com/watch?feature=player_embedded&v=uqzL72DXF3Y
২. প্রসঙ্গ শান্তি কমিটির নেতৃত্বের দায়:
১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল নুরুল আমিনের নেতৃত্বে খাজা খয়েরউদ্দিন এবং গোলাম আযমসহ ১২ জন রাজনৈতিক নেতা পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করে এবং সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক সমর্থন দেওয়ার আশ্বাস দেয় এবং এ জন্য ‘সর্বদলীয় নাগরিক কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব দেয়। এ বিষয়ে ৫ এপ্রিল প্রকাশিত পূর্বদেশ পত্রিকায় লেখা হয় প্রতিনিধিদল টিক্কা খানকে ‘অবিলম্বে সমগ্র প্রদেশে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সামরিক আইন প্রশাসনকে সম্পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস এবং জনগণের মন থেকে ভিত্তিহীন ভয় দূর করার উদ্দেশ্যে ঢাকায় নাগরিক কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়।’ টিক্কা খান তাদের ‘শুধু বক্তৃতা বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে দেশের অখন্ডতা রক্ষায় ফলপ্রসু কাজ করতে নির্দেশ দেন।’ …‘বৈঠক শেষে নেতৃবৃন্দ রেডিওতে ভাষণ দিয়ে সামরিক কর্তৃপক্ষকে সহায়তার প্রতিজ্ঞা করেন’ সে প্রতিজ্ঞা পালন করেছিল গোলাম আযম।
টিক্কা চেয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের এসব দল একই প্লাটফর্মে থেকে সামরিক বাহিনীকে সার্বিক সহযোগিতা করবে। ( http://www.scribd.com/doc/78590082/19710405-Po-Nurul-Amin-and-Others-Call-on-Mla )সেটা ধাক্কা খায় শান্তি কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে জামাতের সঙ্গে নেজামে ইসলামী, মুসলিম লীগের তিনটি অংশ (কাউন্সিল, কাইয়ুম ও কনভেনশন) এবং পিডিপির সংঘাতে।বিশেষ করে মৌলভী ফরিদ আহমদ (নেজামে ইসলামী প্রধান) ও নুরুজ্জামান (পাকিস্তান পিপলস পার্টির পূর্ব পাকিস্তান প্রধান) জামাতের নেতৃত্বে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এ কারণে ৬ এপ্রিল পাকিস্তান অবজারভার সম্পাদক হামিদুল হক চৌধুরীকে নিয়ে টিক্কা খানের সঙ্গে আবারও দেখা করে গোলাম আযম এবং আগের প্রস্তাবনাটি আরেকটু ঘষামাজা করে ‘নাগরিক শান্তি কমিটি’ গঠনের অনুমোদন চায়। মূলত হামিদুল হক চৌধুরীর মধ্যস্থতাতেই জামাতের সঙ্গে অন্য দলগুলোর মতপার্থক্য ভুলে রাজনৈতিক সমঝোতা হয় সর্বদলীয় শান্তি কমিটি গঠনে।
( ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র সংঘ [ ১৯৭১ সালে আল বদর নাম ধারণ করে বুদ্ধিজীবি ও জনগণকে হত্যাকারী দল ও বর্তমানে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির হিসেবে পরিচিত ] কোন ধরনের কাজ করেছিলো ও এই দুই দলের নেতা-কর্মীরা কোথায় অবস্হান করেছিলো - এসব তথ্য আমাদের সবার জানা আবশ্যক । )
বিনীত অনুরোদ : দয়া করে এক বার পাকিস্তানের টিভি চেনেলের এই ভিডিওটা দেখুন :
https://www.youtube.com/watch?v=ZoHq6j_auKk
চলবে.............
বিষয়: বিবিধ
১৯৩৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন