সৌদি আরবের ইয়েমেন আক্রমণ, মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুড ও মুরশী উৎখাত এবং শিয়াদের উপর দমণ-নিপীড়নের ফল সৌদি আরবের অনিবার্য পতন ( ১ম পর্ব )
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ২৩ মে, ২০১৫, ১০:২৩:৩৬ রাত
সৌদি আরবে মসজিদের ভেতর কুরআন শরীফের উপর বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন নামাজীর শরীরের রক্ত- মাংসের টুকরা পড়ে আছে !!
২২ মে ২০১৩ তারিখ জুমার নামাজের সময় সৌদি আরবের কাতিফে শিয়া মুসলমানদের উপর নামাজরত অবস্থায় ওহাবী মতাবলম্বী সন্ত্রাসীদের বোমা হামলার পরে তোলা ছবি।
সৌদি আরব ইয়েমেনের ওপর তাদের বিমান হামলা চালিয়েছে ঠুনকো অজুহাতে । অজুহাত বৈধ ( সৌদি অনুগত ) শাসককে সুরক্ষা দেওয়া ।
কিন্তু সৌদি আরব ঠিকই মিশরের বৈধ শাসক মুরশীকের উৎখাত করেছে ও তার দলকে পর্যুদুস্ত করে মিশরকে অস্হিতিশীল রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করেছে । শিয়া মুসলমানদের মসজিদগুলোতে আত্মঘাতি হামলা চালানো হচ্ছে খোদ সৌদী আরবের প্রদেশগুলোর প্রাণকেন্দ্রগুলোতেই ।
সৌদি আরব ও পাশবর্তী দেশগুলোর মুসলিমদের মতাদর্শ :
সৌদি আরব ওহাবী মতাবর্শী দেশ হলেও মাত্র জনসংখ্যার ২২ % ওহাবী । তারাও অনেক উপদলে বিভক্ত । সবচেয়ে বড় প্রভাবশালী দলটা হলো মাদখালী সালাফী । বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী ও আহলে হাদিস সম্প্রদায়ও মাদখালী সালাফী মতবাদ অনুসরণ করে । অথচ বাংলাদেশের মুসলমানদের ৯৯% হানাফী মাযহাব অনুসরণকারী সুফীবাদী মুসলিম ।
সৌদি আরবের চারপাশের দেশগুলোর মুসলিমরা ওহাবী মতবাদে বিশ্বাসী নয় । মিশরের জনগণ মালেকী ও হানাফী মাযহাব অনুসরণকারী সুফীবাদী মুসলিম ।
বাহরাইন, ইয়েমেন ও ইরাকের অধিকাংশ মুসলিম শিয়া ।
ওমানের অধিকাংশ মুসলিম ইবাদী মতাবলম্বী ( খারেজী বলে সাধারণ মুসলিমদের কাছে পরিচিত , শিয়া-সুন্নী-ওহাবী মতাবদের বাহিরে আলাদা গ্রুপ ) ।
কাতারের মুসলিমদের বড় অংশ হানাফী মাযহাব অনুসরণকারী হলেও শাসকরা ওহাবী ।
আরব আমিরাতের সাতটা রাজ্যে বিভিন্ন মাযহাবের মুসলিমরা বাস করলেও শাসকরা ধর্মনিরোপেক্ষ,কিন্তু বাহ্যিকভাবে সৌদি আরবের ওহাবী মতবাদকে সমর্থন করে ।
সৌদি আরব ১৯২৪ সালে ওসমানিয়া খিলাফত হতে আমেরিকা,ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড-এর সহায়তায় মক্কা-মদিনা দখল করে নেওয়ার অপর এই দুই পবিত্রস্হানের রক্ষক বলে দাবি করে । আর মুসলিমদের বড় অংশ সৌদি আরবকে পবিত্র এই দুই স্হানের রক্ষক মনে করে । কিন্তু ইসলামের সত্যিকার মর্মবাণীর বিরোদ্ধ ওহাবী মতবাদ সম্পর্কে মুসলিমদের বোধোদয় হওয়ায় সাধারণ মুসলিমদের বড় অংশ সৌদি আরবকে পছন্দ করে না ।
আজব হলেও সত্যি, সৌদি আরবের ইয়েমেন সংলগ্ন মুসলিমদের বড় অংশ শিয়া এবং পশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশগুলোর সংখ্যাগরিষ্ট জনগণ শিয়া । ধারণা করা হয়, সৌদি আরবের মোট জনসংখ্যার ৪০ % শিয়া ।
সৌদি আরবের ইয়েমেন আক্রমনের যুক্তি :
সৌদি আরবের দাবি, ইরানের সহায়তায় শিয়া মুসলমান হুথি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের রাজধানী সানা দখল করেছে। দেশটির বৈধ প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বু মনসুর আল হাদি তার শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত প্রাচীন রাজধানী এডেন থেকে সৌদির রাজধানী রিয়াদে পালিয়ে গেছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের বাস্তব অবস্হা :
ওহাবী মতাবলম্বী সৌদি আরব কখনোই চায় না তাদের সীমান্ত ঘেঁষে ইরানের মতাদর্শী শিয়া মতাবলম্বী রাষ্ট্র গড়ে উঠুক। তবে এ ক্ষেত্রে তারা সব সময়ই ভুলে যায়, ২০০৩ সালে আমেরিকার সহায়তায় এরই মধ্যে তাদের সীমান্তঘেঁষা ইরানের মতাদর্শী একটি রাষ্ট্র হয়েছে-যার নাম ইরাক।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো : সৌদি সেনাবাহিনীর অর্ধেক সেনা সদস্যই ইয়েমেনের বিভিন্ন উপজাতি গোষ্ঠী থেকে এসেছেন। পারিবারিকভাবে সৌদি সেনারা খুবই ঘনিষ্ঠভাবে ইয়েমেনের সঙ্গে যুক্ত এবং ইয়েমেনের শিয়া বিপ্লব সৌদি রাজপরিবারের জন্য বড় একটি আঘাত।
ইয়েমেনে সৌদি বোমা হামলা কি শিয়া মুসলমানদের বিপ্লব বন্ধ রুখতে পারছে ? মোটেই না । তারা সৌদি আরবের মূল ভুখন্ডে আঘাত হানছে সৌদি আরবের হামলার পাল্টা জবাবে ।
যত দিন যাচ্ছে ওহাবী মতাবলম্বী সৌদি আরবের ভুরাজনৈতিক অবস্হা জটিল হয়ে পড়েছে ।
যেমন :
১। উত্তরে শিয়া-নেতৃত্বাধীন ইরাকি সরকারকে সহায়তা করছে শিয়া মুসলিম ইরানিয়ান রেভ্যুলশনারি গার্ড, যেখানে প্রতিপক্ষ ওহাবী সন্ত্রাসী সংগঠন ও যৌন জিহাদী সম্প্রদায় আইএস যার নেতা ভুয়া খলিফা বাগদাদী ।
২। উত্তর-পশ্চিমে আলাউইত শিয়া প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সহায়তা করছে ইরানিয়ান রেভ্যুলশনারি গার্ড, যেখানে প্রতিপক্ষ ওহাবী সন্ত্রাসী গ্রুপ আইসিস , আল-নুসরা এবং ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’ নামের অন্যান্য ধর্মনিরোপেক্ষ সন্ত্রাসী দল ।
আসাদের বাহিনীর পাশে আরো আছে লেবাননের শিয়া হিজবুল্লাহ। এ ছাড়া আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারত থেকে আসা শিয়া মুসলমানরাও ।
সৌদি আরবের দাবি, ইয়েমেনের শিয়া মতাবলম্বী হুথিদের সহায়তা করছে ইরান।
এরই মধ্যে ইয়েমেনের যুদ্ধ আরব দেশগুলোকে বিভক্ত করেছে। লেবাননের সাবেক সুন্নি প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি সৌদি আরবের হস্তক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এটি বাদশাহ সালমানের সাহসী ও বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত। হারিরি শুধুমাত্র সুন্নিই নন, তিনি একই সঙ্গে সৌদি আরবের নাগরিক।
কিন্তু ইয়েমেনে সৌদি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেছে লেবাননের শিয়া সংগঠন হিজবুল্লাহ। তাদের মতে, এটি সৌদি আরবের ‘বেহিসেবি অভিযান’। সৌদি আরবের সমালোচনায় তারা বেশ সতর্কতার সঙ্গেই শব্দ বেছে নিয়েছে। ঠিক এই শব্দগুলোই ২০০৬ সালে সৌদি আরব হিজবুল্লাহর প্রতি ব্যবহার করেছিল।
ওই সময় হিজবুল্লাহ তিন ইসরাইলি সেনাকে আটক করে। এর জবাবে ওই বছরের শেষদিকে লেবাননে বোমা হামলা চালায় ইসরাইল।
আমেরিকা সৌদি আরবকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দিচ্ছে না । একই সঙ্গে ইরানের সঙ্গে পরমাণু আলোচনাও আমেরিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তাই বাদশাহ সালমানকে আমেরিকার মৌখিক সমর্থনের মানে হলো, তাদের ওহাবী মতাবলম্বী সৌদি আরবের সহযোগী রাষ্ট্রগুলোকে শান্ত রাখা আর একই সঙ্গে ইরানের সঙ্গেও সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখা।
কিন্তু আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে চুক্তির যতই সম্ভাবনা দেখা দেবে, ততই মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সহযোগীরা এটি নস্যাৎ করার চেষ্টা করবে।
সাধারণ মুসলিমদের কাছে দৃশ্যমান, আমেরিকার অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সৌদি আরবের ওহাবী সন্ত্রাসীরা উত্তরের মহাশত্রুকে (ইসরাইল) বাদ দিয়ে আরেক আরব জাতির ওপর হামলে পড়েছে। এর কারণও আছে :
সৌদি আরবের সাথে ইসরাইলের দুরত্ব জলপথে ৬ কিলোমিটার । স্হলপথে জর্দানের মধ্য দিয়ে ৪ কিলোমিটার । সৌদি আরব যদি চায় তাহলে জল ও স্হলপথেই ইসরাইল আক্রমন করে ফিলিস্তিনী মুসলিমদের রক্ষা করতে পারে ।
সৌদি হামলা শুনলেই অনেক মুসলমানের মনে হতে পারে, এটি হয়তো ইসরাইলের ওপর হামলা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন ।
ইতিহাস হয়তো বলবে, ইয়েমেনের ওপর হামলা মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নি ও শিয়াদের মধ্যে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায়। আরবরা বিশ্বাস করে নিজেদের মধ্যেই যুদ্ধ হলে, তা পশ্চিমা বিশ্ব ও ইসরাইলকে সন্তুষ্ট করবে। তবে এটিও সত্য যে, এই অঞ্চলের নিজেদের শক্তিশালী সামরিক শক্তি প্রমাণ করায় ওহাবীদের এটিই শেষ সুযোগ।
১৯৯০ সালে সাদ্দামের কুয়েত আক্রমণের সময় সৌদি আরব খৃস্টানশক্তি আমেরিকার কাছে নিজেদের রক্ষায় সহায়তা চেয়েছিল (যা ছিল ওসামা বিন লাদেনের রাগের কারণ) । ওসামা বিন লাদেনের আদর্শ ওহাবি সন্ত্রাসীদের মতো । তালিবান ও আইসিসের মতাদর্শও ওহাবী মতবাদ ।
৯/১১ হামলার ১৫ থেকে ১৯ জনই ছিল সৌদি আরবের সন্ত্রাসী । ভুললে চলবে না ওসামা বিন লাদেন, যিনি ছিলেন ইয়েমেনি উপজাতি গোষ্ঠীর।
১৯৯০ সালে কুয়েতে সাদ্দামের আগ্রাসনকে সমর্থন দিয়েছিল ইয়েমেন। অকৃতজ্ঞতার জবাবে ১০ হাজার ইয়েমেনিকে দেশ থেকে বের করে দেয় সৌদি আরব। এখন কি সৌদি আরব আশা করে, ইয়েমেনিরা তাদের সমর্থনে মিছিল মিটিং করে যাবে বা সৌদি আরবের হয়ে লড়বে বা সৌদি আরবের আগ্রাসনকে সমর্থন করবে ?
কেন করবে ? কারণ তাদের একটাই প্রশ্ন :
সৌদি আরবের ইয়েমেন আক্রমন কি ইয়েমেনকে আজ্ঞাবহ ওহাবী রাষ্ট্র পরিনত করার প্রাথমিক পদক্ষেপ ?
ওহাবী মতবাদের কিছু নমুনা
ওহাবীরা কেন অভিশপ্ত ? - তার প্রমাণ এই হাদিস
সৌদি আরবে মসজিদের ভেতর কুরআন শরীফের উপর বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন নামাজীর শরীরের রক্ত- মাংসের টুকরা পড়ে আছে !!
২২ মে ২০১৩ তারিখ জুমার নামাজের সময় সৌদি আরবের কাতিফে শিয়া মুসলমানদের উপর নামাজরত অবস্থায় ওহাবী মতাবলম্বী সন্ত্রাসীদের বোমা হামলার পরে তোলা ছবি।
জামায়াত-শিবির, আহলে হাদিস ও সৌদি আরব সমর্থক মুসলিম ভাইদের কাছে প্রশ্ন : রাসুল(স।) এর জীবদ্দশায়, এমন কোনো ঘটনা কি আছে যাতে তিনি যুদ্ধের ময়দান ছাড়া চুরি করে, পেছন থেকে ও কাপুরুষের মতো গোপনে নিরস্ত্র মানুষের উপর হামলা করে কাউকে হত্যা করার নির্দেশ রাসুল ( সা) দিয়েছিলেন ?
চলবে .....
বিষয়: বিবিধ
২৫১৯ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার অনুমান ঠিক হলো, এখানেও জামাত শিবির! মোহাম্মদ ফখরুল পোস্ট করবে, আর সেখানে জামাত শিবির শব্দদ্বয় থাকবে না তা কি করে হয়! পৃথিবী উলটে গেলেও ফখরুল সাহেবের জামাত শিবিরিও নামক এলার্জি কখনোই যাবে না! এগিয়ে যাও বাপু, যার যার কর্মের হিসেব তাকেই দিতে হবে!
১। মানুষকে সচেতন করা ।
২। অন্ধ দলপ্রীতি ও আদর্শপ্রীতি দুর করা ।
৩। সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য তুলে ধরা ।
আমি পত্রিকার নিবন্ধ লিখতে বসিনি । আমি ব্লগপোস্ট লিখছি । এতে আমার নিজস্ব অভিমত থাকবেই ।
আমি জামায়াত-শিবির সম্পর্কে যে সব তথ্য দেই তার স্বপক্ষে তথ্য-প্রমাণ আছে ।
আমি মাদখালী সালাফী মতবাদের কথা বলেছি । এই ভিডিওটা সবচেয়ে বড় প্রমাণ জামায়াতের অনেক বড় বড় নেতা মাদখালী সালাফী মতবাদ হৃদয়ে ধারণ করে । কিন্তু জনগণ তাদের এই মতবাদপ্রীতি সম্পর্কে কিছুই জানে না । যেমন : দেখুন - এই ভিডিওটা :
আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাইদির
৬৮ বছরের সমস্ত নামাজই নাকি বাতিল!
এজন্য সাইদী নাকি ৬৮ বছরের নামাজ নতুন করে পড়ছেন মাদখালী সালাফী মতবাদ অনুযায়ী ।
https://www.facebook.com/721158897915050/videos/vb.721158897915050/943456415685296/?type=2&theater;
দয়া করে বলবেন কি - চার খলিফা রা. কি রাজা ছিলেন ? আর তারাই বা কেন তাদের ছেলেদের বংশানুক্রমিক রাজা হিসেবে বা শাসক হিসেবে মনোনীত করেননি ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন