শবে মিরাজ – এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ১৬ মে, ২০১৫, ০৭:৩১:০০ সকাল
(এই পোস্টটি স্টিকি করার জন্য মডারেটরদের বিনীতভাবে অনুরোদ করা হলো ।উল্লেখ্য আমার এই লেখাটাকে কোন বিভ্রান্তিকর তথ্য নেই । সহীহ হাদিস অনুযায়ী এই লেখাটা লেখা হয়েছে । )
১৬ মে ২০১৫ খৃস্টাব্দ দিবাগত রাতে পবিত্র শবে মেরাজ পালিত হবে। আমাদের বিশ্বাস অনুযায়ী অনুযায়ী, ইসলামী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৬ রজব দিবাগত রাতে ঊর্ধ্বকাকাশে ভ্রমণ করে মহানবী হয়রত মোহাম্মদ (স.) আল্লাহ তায়ালার সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন এবং আমাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আল্লাহর দরবার হতে উপহার স্বরুপ এনেছিলেন ।
গুরুত্ব ও তাৎপর্য
বিভিন্ন কারণে মুসলিমদের জীবনে শবে মেরাজ-এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম । কারণ :
১. মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অলৌকিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা এ হলো মিরাজ। মদিনায় আসার আগে মক্কায় অবস্থানের সময় ২৬ রজব দিবাগত রাতে তিনি বুরাক নামক বাহনে চড়ে প্রথমে বায়তুল মুক্কাদ্দাস যান । তারপর পৃথিবীর হতে মহাবিশ্বের সব স্তর ভেদ করে সিদরাতুল মুনতাহায় যান । অতপর রফরফ নামক বাহনে করে আল্লাহর দরবারে যান এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করেন। এই ঘটনাকেই মিরাজ গমণ বলা হয় ।
২. মিরাজ গমন করে মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর কাছ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান নিয়ে আসেন । এজন্য তিনি বলেছেন : নামাজ হলো বিশ্বাসীদের জন্য মিরাজ ।
৩. মিরাজ গমন করার মাধ্যমে মুহাম্মদ (সা.) অশুভ শক্তিকে দমন করার জন্য ও বিশ্বব্যাপী ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য দিক নির্দেশনা লাভ করেন । মিরাজ গমন করার মাধ্যমে মুহাম্মদ (সা.) ইসলামী সমাজ পরিচালনার বিধি বিধানও নিয়ে আসেন যা কুরআনের বনী ইসরাইল সুরায় আলোচিত হয়েছে।
সারা বিশ্বের মুসলিমদের কাছে তাই এ রাত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ।
এই মাসের পর সাবান মাস আসবে । তারপর রোজার মাস আসবে । এই মাস আর সাবান মাস হলো রোজার মাসকে পরিপূর্ণভাবে ইবাদত বন্দেগীর জন্য পালন করার জন্য প্রশিক্ষণের মাস ।
শবে মেরাজ হওয়ার কারণ :
বিশ্ব মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামকে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সার্বজনীন জীবনব্যবস্থা হিসেবে রূপ দেয়ার জন্য হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিশ্বের পালনকর্তার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পেয়েছিলেন এই পবিত্র রাতে । এজন্য রাতটি প্রত্যেক মুসলমানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। রাসুল (সা.)-এর সব মুজিজার অন্যতম শ্রেষ্ঠ হলো পবিত্র মিরাজ । এ রাতে তিনি বায়তুল মোকাদ্দাসে সব নবীর ইমাম হয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালিন (নবীদের নেতা উপাধি লাভ করেন। আমরা সর্বশেষ ও সর্বশেষ্ঠ নবী ও সাইয়্যিদুল মুরসালিন ও সাইয়্যিদুল আম্বিয়ার উম্মত হয়ে গর্বিত । এ রাতটি নি:সন্দেহে তারই শ্রেষ্ঠত্বের গৌরবোজ্জ্বল নির্দশন বহন করে।
মিরাজ শব্দ এসেছে আরবি ‘উরুযুন’ শব্দ থেকে। উরুযুন অর্থ সিঁড়ি আর মিরাজ অর্থ ঊর্ধ্বে গমন। সেজন্য মুহাম্মদ (সা.)-এর ঊর্ধ্বগমনকে মিরাজ বলা হয়।
রাসুল (সা.) পথহারা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে ও অশুভ শক্তিকে দমন করার জন্য একটানা ১২ বছর মক্কা শহরের অলি গলিতে মানুষকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেন । কিন্তু তার দাওয়াতে কিছু মানুষ ইসলাম কবুল করলেও অধিকাংশই চরম বিরোধিতা করা শুরু করে । ধীরে ধীরে বিরোধিতা তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করে। ইসলামবিরোধীরা তার অনুসারীদের করাত দিয়ে কেটে দুই ভাগ করে ফেলতো । মরুভূমির গরম বালিতে রেখে সিদ্ধ করতো । তারা ইসলামী মেয়েদের বর্শা দিয়ে হত্যা করতো । তারা ইসলামী লোকদের কটু কথা বলতো ।
তার সাথে সাথে ইসলামবিরোধীরা নানা রকম অমানবিক নির্যাতন শুরু করে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) ওপর। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সান্ত্বনা দেয়ার জন্য এ সময়ই রাসুলকে (সা.) তার সান্নিধ্যে নিয়ে যান।
তফসিরকারীরা বলেন, চোখের পলক সময় ব্যয়িত হয় এই অলৌকিক ঘটনা ঘটতে । বর্ণিত আছে, মিরাজ থেকে ফেরার পর দরজার কড়া নড়তে এবং অজুর পানি গড়াতে দেখেছেন রাসুল (সা.)।
সুরা বনি ইসরাইলের প্রথম আয়াতে রাসুল (সা.)-এর মিরাজ গমনের বর্ণনা এসেছে এভাবে :
‘তিনি সেই পরম পবিত্র মহিমাময় সত্তা—যিনি তার স্বীয় বান্দাকে (সা.) এক রাতে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার পরিবেশকে করেছেন তিনি বরকতময়। যাতে তাকে নিজের কিছু কুদরত দেখান। নিশ্চয়ই তিনি সবকিছুরই শ্রোতা ও দ্রষ্টা।’
যেভাবে শবে মেরাজ অনুষ্ঠিত হয় :
২৬ রজব রাসুল (সা.) ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ জিবরাইল (আ.) এসে রাসুলকে (সা.) মসজিদুল হারামে নিয়ে যান। সেখানে তার বুক বিদীর্ণ করে জমজম কূপের পানি দিয়ে সিনা মোবারক পরিস্কার করেন।
তারপর সেখান থেকে তিনি বুরাক নামক বাহনে চড়ে বায়তুল মোকাদ্দাসে এসে সব নবীর ইমামতি করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। তারপর তিনি বুরাকে চড়ে ঊর্ধ্বে গমন করতে থাকেন। তারপর তিনি মহাবিশ্বের প্রতিটি স্তর অতিক্রম করতে থাকেন। পথে মুসাসহ (আ.) –সহ অনেক নবী-রাসুলের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন ।সাথে জিব্রাইল (আ) থেকে তাকে সঙ্গ দেন ।
তারপর উর্ধ্বলোকের বায়তুল মামুরে গিয়ে জিবরাইল (আ.)- কে রেখে তিনি রফরফ নামের আরেকটি বাহনে চড়ে বিশ্বের স্রষ্টা মহান আল্লাহর দরবারে হাজির হন। হাদিস গ্রন্হে আছে, রাসুল (সা.) আল্লাহর এতটা কাছাকাছি গিয়েছিলেন যে, দুজনের মধ্যে ধনুক পরিমাণ ব্যবধান ছিল। সেখানে আল্লাহর সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর কথোপকথন হয়।
এক বর্ণনার মাধ্যমে জানা যায়, আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.)-এর কাছে জানতে চান, তিনি আল্লাহর জন্য কী উপহার এনেছেন। তখন রাসুল (সা.) তাশাহুদ ( নামাজের আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি …. দুয়াটা )পাঠ করেন এবং বলেন : এটি আপনার জন্য উপহার হিসেবে এনেছি।
আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ জীবন ও রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন বিধিবিধান রাসুল (সা.)-কে উপহার দেন। মিরাজ থেকে আসার পর এ ঘটনার বর্ণনা দেয়া হলে বিনা প্রশ্নে তা বিশ্বাস করেন হজরত আবু বকর (রা.) এবং সিদ্দিক উপাধী লাভ করেন ।
রাসুল (সা.) এর এই উর্ধ্ব গমন বিষয়ে কুরআন ও হাদিসে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা রয়েছে। এছাড়া মুফাসসিররাও এ সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য ও প্রমাণ পেশ করেছেন ।
উপসংহার :
শবে মেরাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্যের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষিত হয়েছে । অফিস আদালতে ঐচ্ছিক ছুটি ঘোষিত হয়েছে ।
আমাদের শবে মেরাজের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অনুধাবণ করার পাশাপাশি শবে মেরাজের শিক্ষাকে বাস্তবে রূপ দান করার চেষ্টা্ ও সাধনা করে যেতে হবে ।
বিষয়: বিবিধ
৪৫৮৯ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ মূসা (আঃ) এর সাথে আল্লাহর কথোপকথনের কথা ক্বুরআন শরীফে এসেছে । তবে আল্লাহকে চাক্ষুষ দেখেন নি তিনি ।
রাসূল (সাঃ) এর সাথে যে ধনুক দূরত্বের ব্যবধানে কথা হয়েছিল সেটা তো আরও বড় ঘটনা । ক্বুরআন শরিফের কোন সূরার কত নং আয়াতে এরকম বলা আছে যেমনটা বলা আছে মুসা (আঃ) এর সাথে আল্লাহর কথোপথনের ব্যাপারে?
মুসা(আঃ) এর সাথে আল্লাহ একাধিকবার কথা বলেছিলেন , একবার ফেরাউনের কাছে পাঠাবার সময় । সাথে ভাই হারুন (আঃ) কেও মুসা(আঃ) এর অনুরোধে নবীরুপে পাঠিয়ে । আরেকবার যখন বনী ইসরায়েলীদের রেখে এসেছিলেন ফেরাউনের হাত থেকে আল্লাহর রহমতে বেঁচে আসার ফলে এবং মুসা (আঃ) এর অবর্তমানে সামেরী তাদেরকে বিপথে নিয়ে গিয়েছিল গো-পূঁজার দ্বারা ।
ধনুক ব্যবধানের দূরত্বের ব্যাপারে ক্বুরআনে সেটা জিবরাইল (আঃ) এর কথা বলা আছে । যখন তিনি দিগন্তের কাছে ডানা মেলে ছিলেন এবং কাছে আসতে আসতে তাদের মধ্যে এমন দূরত্ব হল যে ধনুকের সমান ।
সুন্দর পোস্ট দিয়েছেন । আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে আনুন এবং সেভাবে চলতে সাহায্য করুন - আমিন।
তবে আমি আপনার এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটার উত্তর দিচ্ছি । আপনি প্রশ্ন করছেন : “ রাসূল (সাঃ) এর সাথে যে ধনুক দূরত্বের ব্যবধানে কথা হয়েছিল সেটা তো আরও বড় ঘটনা । ক্বুরআন শরিফের কোন সূরার কত নং আয়াতে এরকম বলা আছে । “
উত্তর : সুরা নজম - এর ৯ ও ১০ নং আয়াত ।
فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى
09
তখন দুই ধনুকের ব্যবধান ছিল অথবা আরও কম।
فَأَوْحَى إِلَى عَبْدِهِ مَا أَوْحَى
10
তখন আল্লাহ তাঁর দাসের প্রতি যা প্রত্যাদেশ করবার, তা প্রত্যাদেশ করলেন।
সুরা নজম : ৯- ১০ ।
এব্যাপারে আরো তথ্য অন্য কোন পোস্টে উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ ।
আপনাকে শবে মেরাজের শুভেচ্ছা । আশা করি নফল-ইবাদত ও তাসবিহ তাহলীল নিয়ে ব্যস্ত আছেন ।
আল্লাহু ইয়াফ্তা আলাইক ।
আল্লাহর রাসূল ও নবীদের কাছে আল্লাহর বানী নিয়ে আসতেন জিবরাইল (আঃ) । এখানে জিবরাইল (আঃ)ই আল্লাহর বানী নিয়ে এসেছিলেন রাসূল(সাঃ) এর কাছে । এবং ধনুকের সমান দূরত্ব বলা হয়েছে রাসূল (সাঃ) ও জিবরাইল (আঃ) এর দূরত্বকেই যখন জিবরাইল (আঃ) নবীজীর একেবারে কাছে আসলেন ।
মেরাজের ঘটনা হয়েছিল সপ্তম আসমানে । এবং সূরা নাজমে যে ঘটনা বলা হয়েছে সেটা জিবরাইল (আঃ) যখন ওহী নিয়ে আসেন সে সময়ের , মানে পৃথিবীতে ।
আমি কোন ভিত্তিহীন কথা লিখি না । নারী-পুরুষের বেহায়াপনা-বেলেল্লাপনা-অশ্লীলতা-ব্যভিচার মানে নারী-পুরুষের বেহায়াপনা-বেলেল্লাপনা-অশ্লীলতা-ব্যভিচার নয় ।
আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের বেহায়াপনা-বেলেল্লাপনা-অশ্লীলতা-ব্যভিচার সহজলভ্য হওয়ায় আমরা প্রায়ই নারী-পুরুষের অবাদ মেশামেশা কথাটাকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে থাকি ।
নারী-পুরুষের অবাদ মেলামেশা কথাটা বিপরীত কথা হলো পরস্পর নারী-পুরুষ বির্জিত সমাজ ।
বাস্তবে কি আমরা এমন সমাজ গঠণ করতে পারবো । আমার অফিসে নারী-পুরুষ এক সাথে কাজ করে । পাশের টেবিলে নারী কর্মী ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ও পেছনের চেয়ারে নারী ।
আমরা কি তাদের উপেক্ষা করতে পারবো ?
আমার এই লেখা " নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার গুরুত্ব ও তাৎপর্য (১ম পর্ব)http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/64528" -তে কোথায় ভুল তথ্য আছে আমাকে জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো ।
আমি লাইক কমেন্টের জন্য লেখালেখি করি না । আমি মূলত ইসলামের প্রসার ও প্রচারের জন্য লেখালেখি করি ।
পরিশেষে এতটুকু বলছি : এই সাইট কেন এরকম দশটা সাইটে আমার লেখা কেউ না পড়লেও আমি লেখে যাবো । কারণ আল্লাহ আমাকে লেখার ক্ষমতা দিয়েছেন । সেহেতু আমাকে হাসরের মাঠে আল্লাহ ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে আমি আমার লেখালেখির ব্যাপারটি তুলে ধরবো ।
আল্লাহ আমাকে বেশ কিছু সাইট ও কম করে হলেও ৩০ টা ফেসবুক পেজ পরিচালনা করার সুযোগ দিয়েছেন । আলহামদুলিল্লাহ । এসব পেজের কোন প্রচার ও প্রচারণা আমি বা আমরা করি নাই । তারপর এগুলোর লাইক ও কমেন্ট সংখ্যা আশানুরূপ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন