ওহাবী কারা ? আল্লাহ্ রাসুল (সা.) - এর দুষমণ ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর লোকদের ওহাবী বল্লে সোয়াব হয় ( ১ম পর্ব )
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ১৭ এপ্রিল, ২০১৫, ১০:৩৪:৪৯ রাত
ইয়া ওয়াহ্হাবু শব্দের অর্থ হে সৎকার্যে পুরুস্কারদাতা । এটা আল্লাহর গুণবাচক নাম । তিরমিজি শরীফের হাদিস বলা আছে যে বা যারা আল্লাহর গুণবাচক নামগুলো মুখস্হ করবে ও পড়বে সে জান্নাতে যাবে । আর এই হাদিসে বলা আছে ৯৯ টার অধিক আল্লাহর গুণবাচক নাম আছে । আর এই হাদিসে ৯৯ টা গুণবাচক নাম উল্লেখ করা হয়েছে ।
ওহাবী বা অহাবী বা ওয়াহাবী’ আরবি শব্দ । এর সঠিক উচ্চারণ-ওয়াহহাবী । ‘ওয়াহাবী’ শব্দের শাব্দিক অর্থ কোন ওয়াহাব নাম ধারীর সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি । ব্যবহারিক অর্থে আল-আরবের নজদ (বর্তমান রিয়াদ) প্রদেশের মোহাম্মদ ইবন আবদুল ওয়াহহাবের অনুসারীকে ওয়াহাবী বলে । উর্দু ভাষার শ্রেষ্ট ডিকশেনারী “ফিরুজুল লুগাতকাবীর”এর ১০২০ পৃষ্ঠায় ‘ওয়াহাবী’ শব্দের অর্থে লেখা আছে, “শেখ মোহাম্মদ ইবন আবদুল ওয়াহাবের দলের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ওয়াহাবী বলা হয়”। প্রফেসর এ,এম, ফয়েজ আহমদ চৌধুরী সাহেবের বাংলা ও উর্দু আভিধানের ৩০০ পৃষ্ঠায় লেখা আছে, “মোহাম্মদ ইবন আবদুল ওয়াহহাব নজদীর অনুসারী দলকে ওয়াহাবী বলা হয়”। বাংলা ভাষায় ওয়াহাবী শব্দ ও ‘ওহাবি’ বানানে স্বীকৃত । তাই, বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা আভিধান ১৭৮ পৃষ্ঠায় ‘ওহাবি’ অর্থে লেখা আছে, “ধর্ম-সংস্কারক নজদবাসী মোহাম্মদ ইবন আবদুল ওয়াহহাবের অনুসারী বা শিষ্য”। জন্মঃ শায়খ মোহাম্মদ আবদুল ওহাব নজদী ১৭০৩ খৃস্টাব্দ, ১১১৫ হিজরীতে আল-আরবের নজদের (বর্তমান রিয়াদ) ওয়াইনা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করে এবং ১২৮৮ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করে (ওনওয়ারুল মাজদ ফিতারী তারিখে নজদ ১ম খন্ড ৬ষ্ট পৃষ্ঠা রিয়াদে ছাপা)।
ওহাবি সর্দার সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহ (ফি নারী জাহান্নামা খালিদিনা ফিহা) এবং মুসলিমদের দুষমন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কর্ণধার বারাক মুরতাদ হোসেন ওবামা (লানাতুল্লাহ আলাইহি )
সৌদি আরবের নজদ প্রদেশের লোক মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব ৭ টি মূলনীতির উপর মুয়াহিদীন নামক সংগঠণ কায়েম করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালান ওসমানীয়া খিলাফতের শাসকদের বিরোদ্ধে । তার প্রবর্তিত নীতি গবেষক ও লেখকরা ওহাবী মতবাদ বলে অভিহিত করে থাকেন ।
মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাবের সমর্থক-নেতা-কর্মীরা ১৮০৩ সাল হতে ১৮০৯ সাল পর্যন্ত হজ্জ বন্ধ করে রাখে । ১৮১৩ সাল পর্যন্ত তারা মক্কা শরীফ দখল করে রেখে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে । এভাবে তারা সিরিয়া, ইরাক, জর্দান, ফিলিস্তিনের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপড়তা চালায় ব্রিটিশদের ও অন্যান্য অমুসলিমদের সহযোগীতায় । তারা রাসুল ( সা. ) -এর কবরকেও অপবিত্র করে । তারা ইমাম হোসাইনের মাযার-সহ অসংখ্য ধর্মীয় স্হাপনাসহ ঐতিহাসিক স্হাপনা ধ্বংস করে ফেলে । অসংখ্য ইসলাম ধর্মবিদ্যা বিশারদকে তারা হত্যা করেন । তারা প্রকাশ্যেই ইসলামবিরোধীতায় লিপ্ত হোন এবং ওসমানীয়া খিলাফতের শাসকের বিরোধীতা করে অন্তর্ঘাতমূলক তৎপড়তা চালাতে থাকেন অমুসলিম শক্তির মদদ ও সমর্থন নিয়ে । বর্তমানে তার বা তাদের উত্তর পুরুষ বা তাদের বংশধর বা মতবাদের সমর্থক হলো সৌদি শাসক সম্প্রদায় ।
সুতরাং কারো নামের খন্ডাংশ ব্যবহার করে অবশ্যই একটা দলের নাম করণ হতে পারে । এটা দোষনীয় কিছু নয় । ইয়াহিয়াহ্ শব্দের অর্থ জীবন্ত । কারো নাম ইয়াহিয়াহ্ রাখলেই সে মরে গেলেও জীবন্ত থাকতে পারে না । কোন দলের নাম ওহাবী রাখা হলেও তাদের আল্লাহর গুনবাচক নাম ওয়াহ্হাব হয়ে যায় না ।
ওহাবী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা ও ইসলাম ও আল্লাহর রাসুল সা. - এর দুষমন মুহাম্মদ ইবনে আব্দুর ওয়াহ্হাব
উপরন্তু ওহাবী বলে যারা পরিচিত তারা সৌদি আরব এবং মিসরি মুসলিম পরিচয় না দিয়ে সালাফি বলে পরিচয় দেয় এবং সাধারন মুসলিমদের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালায় । যেমন : মিসরে অত্যাচারি শাসক সিসির সাথে জোট বেধে সে দেশের স্বাধীনতাকামী মুসলিমদের সালাফিরা অত্যাচার করছে । মিসর ও ফিলিস্তিনে সৌদি আরবের ওহাবী শাসকরা মুসলিম হত্যার জন্য ইহুদি ও অত্যাচারি শাসকদের সাহায্য করছে এবং ইরাকে আইসিস নামক সন্ত্রাসীদের দিয়ে নারী নির্যাতন ও ইসলামের স্মৃতিবিজরিত স্হান ও মাজার ধ্বংস করছে । আর বাংলাদেশে তাদের অনুসারীরা ওহাবী নামে পরিচিত হলেও তারা আহলে হাদিস এবং জামায়াতে ইসলামীর সদস্য বলে পরিচয় দেয় । জামায়াতে ইসলামীর নেতা মওদুদির দৃস্টিভঙ্গি অনুসরণ করে জামায়াতের লোকরা । এজন্য দেওবন্দী আলেমরা তাদের মওদুদি বলে অভিহিত করে থাকেন ।
সুতরাং এসব বিন্দু মাত্র গালি নয় ।
তারা যদি নিজেদের সত্যিকার মুসলিম দাবি করে তাহলে তাদের উচিত সৌদি আরবের ইসলামবিরোধি কাজ এবং মওদুদির বিকৃত ধ্যান – ধারণা আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যাগ করা ।
ওহাবী ধর্ম ব্যবসায়ী ( সৌদি আরবের কুলাঙ্গার ও মুসলিম নামের কলংক )
ওহাবীদের বৈশিষ্ট্য চিত্রসহ প্রদর্শন করা হলো
আমি কখনোই অসার ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করি না ।
বরং এই সাইটে নারীদের হাত ধরা কুফরি, যৌন জিহাদ জায়েজ, নাস্তিকদের হত্যা করা ফরজ, অমুক নাস্তিক তমুক কাফির , মেয়েদের মাসিকের কাপড় ধোয়া কাপড়ের পানি খাওয়া জায়েজ , পানিতে মাছি পড়া পানিতে প্রতিশেধক আছে , পৃথিবীর চার পাশে সূর্য ঘুরে, চিত্রশিল্পি হওয়া ও এনিমশন ফ্লিম বানানো হারাম, রক্ত দান ও অঙ্গ প্রতিস্হাপন হারাম – এসব লেখা বহুল পরিমানে লেখা হয়
ওহাবী ও মওদুদীদের সাথে আমার শত্রুতা :
আমার এলাকার জামায়াতীরা আমার জানাজার নামাজ পড়েছে । যারা গালি দিচ্ছে তাদের মতে তাদের প্রিয় পাত্র হওয়ার উপায় হলো :
১. মওদুদি-ওহাবী-সালাফি মতবাদ গ্রহণ করা ।
ওহাবী খালাম্মা
২. তাদের কথা অনুযায়ী ও বাছাই করা তাদের মতবাদে বিশ্বাসী নিকাব পড়া কথিত সতী-পুত-পবিত্র কোন না কোন মেয়ে (খালাম্মা)বিয়ে করা ।
৩. সৌদি আরবের রাজাদের ইসলামের রক্ষক মনে করা ।
৪. মতিউর রহমান মাদানী, কাজী ইব্রাহিম, কামালুদ্দিন জাফরিকে পীরের মত ভক্তি করা ।
ওহাবী সর্দারদের একাংশ । তাদের পরিচয় নতুন করে দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না ।
৫. জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেওয়া ।
৬. ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতা-দের সাথে উঠা বসা করা ।
৭. বাংলাদেশের ধর্মনিরোপেক্ষ ও জাতীয়তাবাদী মতবাদে বিশ্বাসীর বিরোদ্ধে নিয়মিত গালি গালাজমূলক লেখা লিখা ।
বাংলাদেশি ওহাবী খাটাস আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ। বাংলাদেশের টিভিগুলোতে ওয়াজ করা বেশীর ভাগ হুজুরই ওহাবী ধর্ম ব্যবসায়ী ।
এই ভিডিওটা শুনুন তাহলে তার ভাল কাজ সম্পর্কে জানতে পারবেন :
https://www.facebook.com/video.php?v=313168588880696
শুনতে রুচিতে বাঁধবে।
# মেয়েদের নাকি আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন বাচ্চা দেয়ার জন্যে।
# আমাদের মা বোনেরা নাকি বাজারে যায় পর পুরুষের সাথে ধাক্কা খাওয়ার জন্য।
নারী সম্পর্কে খারাপ ইঙ্গিতকারী, ইসলামের ভুল ব্যাখ্যাকারী এরা ইমাম নামের কলংক।
এরা ভয়াবহ কুৎসিত ধরনের কথা বলবে মসজিদের খুৎবায় - তা আমরা সহ্য করবো কেন ?
( ভিডিওতে হুজুরটির হাতের ইশারা দেখুন , আজব হলেও সত্যি এই হুজুর জাকির নায়েকের পিস টিভিতে ওয়াজ করেন । )
তার বক্তব্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য ? তার এসব কুৎসিত কথা কি দেশের সংবিধানের পরিপন্থি নয় ?
তার বিরূদ্ধে কি আইন অনুযায়ি কোন ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন নয় কি ?
(আইন বিশেষজ্ঞরা মতামত দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো । )
ইমামের নাম - আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ।
খতিব, আল আমিন জামে মসজিদ
৪৬, শাহজাহান রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
সৌদি আরবের ওহাবী সুন্দরী । উল্লেখ্য সৌদি আরবের ওহাবী ধামড়ী-পাঠি-নিকাবী-তেজবী ধরণের ১৫ বছরের মেয়েগুলোকে দেখতে বাংলাদেশের ৪০ বছর বয়স্কা খালাম্মাদের মতো মনে হয় । এক একটা মটকি মানে তেলের ড্রাম । অথচ সহি হাদিসে মেয়েদের চিকন ও হাল্কা পাতলা গড়নের হওয়ার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম ও কম খাবার খাওয়ার পাশাপাশি শক্ত জুতা ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে । আল্লাহর দেওয়া মাটির নিচ হতে তোলা তেলের টাকায় দামী দামী চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে এসব ওহাবী মেয়ে এক একটা তেলের ড্রাম বা মটকি হয়ে যায় । আর এগুলো দেখতেও বিশ্রী । ওহাবী মেয়ে মানেই কুশ্রী । আর এজন্য তাদের বেশীর ভাগ মুখ ঢেকে রাখে আর ওহাবী ছেলে মানেই বদ ও যৌন উম্মাদ । বাংলাদেশের ওহাবী ও মওদুদী ছেলেগুলো বেকুব ধরনের হয় । তারা তাদের নেতাদের কথায় অহেতুক মারামারি খুনোখুনি করে । তারা এর পরিনাম কি তা জানে না । তাদের কোন লক্ষ্য উদ্দেশ্যও নাই ।
বাংলাদেশি ওহাবী ছেলে । ওহাবী ছেলেরা দেখতে বিশ্রী হলেও তারা কিন্তু দেখতে বেশ ।
ওহাবী ধর্মযাজক ও তার নুরানী ভেটকি এবং তার ধর্মীয় বয়ান । বড়ই সৌন্দর্য !!!!!!!
ওহাবী ছেলেদের একাংশ যারা তাদের জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য কি তা জানে না । শুধু ওহাবী নেতাদের কথা মতো মারামারি করতে ও নিকাবী মেয়েদের বিয়ে করার স্বপ্নে বিভোর হতে আর ইসলামী ব্যাংকে চাকুরী করার লোভ করতে জানে ।
বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য আমার সাথেই থাকুন । আমার লেখাগুলো পড়লে আপনাদের ক্ষতি হবে না । বরং সোয়াব হবে ।
চলবে
বিষয়: বিবিধ
১২৩৭০ বার পঠিত, ৪৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ওহাবি অর্থ কি
আল্লাহর পবিত্র নামের সাথে মানুষ মিলাইয়া যে নাম রাখে, তার পুরা নামই বলতে হবে।
যেমন আব্দুল গফুরকে আব্দুল গফুরই বলতে হবে। শুধু গফুর বললে শিরক হবে।
যেমন আব্দুচ্ছালামকে ছালাম বলা যাবে না।
আব্দুচ্ছাত্তারকে ছাত্তার বলা যাবে না।
আব্দুল্লাহকে আল্লাহ বলা যাবে না।
আব্দুল ওয়াহ্হাবকে ওয়াহ্হাব বলা যাবে না।
এখন যারা ওলামায়ে দেওবন্দকে ওয়াহাবি বলে ডাকে, তাদের কাছে প্রশ্ন:- আপনারা যে ওয়াহাবি বলে সম্মোধন করেন, এই সম্মোধনটা কার দিকে নেসবত করে করেন।
যদি এই নেসবতটা মহান রাব্বুল আলামিনের দিকে করে থাকেন, তাহলে
ﺍﻟﺤﻤﺪ ﻟﻠﻪ
কারণ ওয়াহাবী অর্থ আল্লাহ ওয়ালা।
আর যদি আপনারা এই পবিত্র নামকে কোন বান্দার দিকে তথা মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব নজদির দিকে নেসবত করেন, তাহলে আপনারা নিশ্চিত মুশরিক।
আল্লাহর পবিত্র নামে কাউকে ডাকাও যায় না, গালিও দেয়া যায় না।
যারা আল্লাহর পবিত্র নামকে গালি হিসেবে ব্যবহার করে অপমান করে, তারা আর যাই হোক মুসলমান হতে পারে না।
দয়া করে, বলবেন : আপনি কি ওহাবী ?
আপনি ওহাবী শব্দটার ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছেন বা এর বিকল্প শব্দ ব্যবহার করতে বলেছেন ।
আমি এর বিকল্প পাচ্ছি :
১। সৌদি রাজতন্ত্রের দালাল ।
২। ইহুদী-খৃস্টানদের তাবেদার মুসলিম ।
৩। লামাযহাবী / রাফাদানী / আহলে হাদিস ।
৪। যৌন জিহাদী ।
আপনি এর কোনটাকে বেছে নিতে চান বা আমাকে ব্যবহার করার জন্য অনুরোদ করতে বলবেন ?
“বাবু খুরূজিল ফিতনাহ মিন কিবালিল মাশরিক”।
অর্থাৎ মদিনার ‘পূর্ব দিক’ থেকে ফেতনা প্রকাশের বিবরণ।
এ শিরোনামের অধীনে উল্লিখিত একটি হাদিসের শেশাংশে আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন যে, সেখান থেকে (অর্থাৎ মদিনার পূর্ব দিকের নজদ থেকে) শয়তানের শিং প্রকাশ পাবে।
অথচ মজার ব্যাপার হল, আব্দুল ওহাবের পুত্র মুহাম্মদ (১৭০৩-১৭৮৬ইং) যে তামীম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তারা মদিনার পূর্ব দিকের নয়, বরং দক্ষিণ দিকে অবস্থিত নজদের অধিবাসী।
এখন আসছেন হাদিসের ব্যাখ্যায় !!!!! হাদিস ব্যাখ্যা শুধু ১৫০০ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত থেমে ছিল কি ?? আর আপনার কথিত ব্যাখ্যা তো মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মতিউর রহমান মাদানী আর কথিত সহীহ আকিদার হুজুররা লিখেন, তাই না ?????
জাবেরিয়া কাদেরিয়া হিজরী চার শতাব্দীর মধ্যকার বিষয় । তারপরও কি বিপর্যয়মূল দল বা উপদলের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে - তা কোন হাদিসে বলা আছে ???? বর্তমানে ভুয়া খলিফা ফিতনা , জামায়াত-শিবির ফিতনা --- এগুলো কি কম বড় ফিতনা ??? নিকাব ফরজ ফিতনা কম বড় ফিতনা ????? সালাফি ফিতনা কি কম বড় ফিতনা ???
বাংলাদেশ হতে অনেক মহিলা সৌদি আরবে কাজ করতে গিয়েছেন । ওহাবী সৌদি পুরুষরা আর সৌদি আরবের ওহাবীরা তাদের নিয়মিত ধর্ষন করে আর ওহাবী মহিলারা আমাদের মা-বোনদের নিয়মিত মার-ধর করে ।
আজ আমি আপনাদের এমন একটা ভিডিও দেখাবো যাতে বাংলাদেশী কাজের মেয়েকে নির্যাতন করছে সৌদি আরবের এক ওহাবী কুকুর ।
দেখুন ! কত নির্যাতনের শিকার হছে বিদেশে কাজের মেয়েরা ! সৌদি আরবে কাজের মেয়েকে এই সৌদি কুকুররা অমানুষের মত মারছে । সৌদি আরবের জামায়াত-শিবিরের লোকরা বা ওহাবীরা নির্দয়-নির্মম । তাদের দয়া-মায়া বলতে কিছু নেই ।
আসুন সবাই বলি । সৌদি আরবের উপর আর এসব কুত্তার বাচ্চাগুলোর উপরে আল্লাহ্র আজাব ও গজব পরুক।
বন্ধুরা ! শেয়ার করে সারা পৃথিবীকে জানিয়ে দেন সৌদি আরবের ওহাবী কুকুরদের নির্যাতন ও নিপীড়নের কথা । সৌদি আরবের বিরুদ্ধে প্রতিটা বাংলাদেশি মুসলিমই নয় বিশ্বের সব মুসলিমের জিহাদ করা ফরজ হয়ে গেছে । আর এই জিহাদ আমাদের করতে হবে সর্বক্ষেত্রে । এই ভিডিওটা কষ্ট করে দেখুন :
https://www.facebook.com/567513703272438/videos/vb.567513703272438/951672601523211/?type=2&theater;
http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/bloglist/2120/abdulmazed
===========================
ওয়াহাবি মতবাদের নামে পশ্চিমা বৃটিশদের পরিকল্পিত একটি মিশন বাস্তবায়িত হচ্ছে যা সম্পূর্ণরূপে ইসলাম বহির্ভূত। উক্ত মতবাদের ধারা উপধারা সকল কিছুই বৃটিশ ইহুদি খৃষ্টানদের সৃষ্ট। ঐ সকল বিধর্মী মূলত তাদের ইসলাম বিদ্ধেষী চিন্তাধারাকে ওয়াহাবীদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে। তাই আমরা এর মূলে থাকা বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)’র বিশেষ সংবাদদাতা শাহরিয়ার শহীদ রচিত "ইসলামে বিভ্রান্তি ও বৃটিশ গোয়েন্দার স্বীকারোক্তি" শীর্ষক গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত সংখিপ্ত করে (পর্যায়তক্রমে) করছি,
"হ্যামফায়ার একজন বৃটিশ গোয়েন্দা। ইসলামকে ধ্বংসের জন্য অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে বৃটিশ সরকারের নীল নকশা বাস্তবায়নের অন্যতম রূপকার হ্যামফায়ার। তিনি ১৭১০ সাল থেকে মিসর, ইরাক, ইরান, হিজায ও ইস্তামবুলে মিশনারির ছদ্মবেশে গোয়েন্দাগিরির মিশনে নিয়োজিত ছিলেন। হ্যামফায়ার ১৭১৩ সালে বসরার নজদে মুহাম্মদ বিন আবদ উল ওয়াহাব নজদি নামে একজন মুসলমান বিপথগামীকে হাত করে তাকে দিয়ে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে একটি নতুন মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন, সমসাময়িক ইতিহাসে তথাকথিত ‘ওয়াহাবি আন্দোলন’ নামে পরিচিত।
ওয়াহাবি আন্দোলন সংগঠনে হ্যামফায়ার একজন মুসলমানের ছদ্মবেশ ধারণ করে তৎকালীন অটোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্গত বিভিন্ন মুসলিম দেশের মনীষীদের সংস্পর্শে আসেন এবং ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে ব্যাপক ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। তার স্বোপার্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে অনিষ্ট সাধনের অপপ্রায়াস চালান। তার মিশনের কার্যকালে তিনি যেসব ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন বা যা প্রত্যক্ষ করেন তার আনুপূর্বিক বিবরণ লিখে রাখেন ডায়রিতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বপ্রথম জার্মানির সংবাদপত্র ইসপিগল এ তার ডায়রি-ও বিস্তারিত বিবরণ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। চলবে..................
(মূল ডায়রীর লিংক... http://en.wikipedia.org/…/Memoirs_Of_Mr._Hempher,_The_Briti…
“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদ ওয়া আলে মুহাম্মদ”।
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক, গোলাম আহমদ মোর্তজা রচিত “চেপে রাখা ইতিহাস” ১৮০ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে ‘প্রথমে ওহাবী জিনিসটা কি সে সম্পর্কে সামান্য
আলোচনা করছি।
আরবদেশে ১৭০৩ খ্রীষ্টাব্দে আব্দুল ওহাবের ছেলে মুহাম্মদের জন্ম হয়। আরব দেশের নিয়মানুযায়ী এ নাম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব বলে বর্ণিত হয়।
জন্মস্থানের নাম ছিল নজদ। এ ওহাবী আন্দোলনের নায়কের নাম আসলে মুহাম্মদ।
ইংরেজদের কারসাজিতে ছেলেদের পরিবর্তে বাপের নামেই ইতিহাস তৈরি হয়েছে, তাঁদের রাখা এ নাম হল ওহাব।
‘তিনি ১৭৯ নং পৃষ্ঠায় আরো লিখেছেন ‘ওহাবি নেতাদের “ওহাবী” বলা মানে তাঁদের
শ্রদ্ধা করা তো নয়ই বরং নিশ্চিতভাবে গালি দেয়াই হয়, যেহেতু সে মহান বিপ্লবীরাই
তাঁদেরকে “ওহাবী” নামে আখ্যায়িত করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।’
তিনি ১৮০ নং পৃষ্ঠায় আরো লিখেছেন ‘আরবদেশ যখন শিরিক, বিদয়াত ও অধর্মীয়
আচরণে ছেয়ে গিয়েছিল তখন তা রুখতে এ ওহাবের পুত্র মুহাম্মদ প্রতিবাদী দল গড়ে তোলেন।
ক্রমে ক্রমে তা রাজনৈতিক সংঘর্ষের রূপ নেয়। ১৭৪৭ সনে রিয়াদের শেখের সাথে সংঘর্ষ হয়।
১৭৭৩ সনে রিয়াদের শাসন দাহহাম আব্দুল ওহাবের পুত্র মুহাম্মদের কাছে ভীষণভাবে পরাজিত হন। আরববাসীরা এ ঘটনার পর দলে দলে তাঁর পতাকা তলে সমবেত হয়। অবশেষে ১৭৮৭ খ্রীষ্টাব্দে তিনি মারা যান।
‘জাস্টিস আব্দুল মওদূদ “ওহাবী আন্দোলন” পুস্তকের ১১৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন ‘ইবনে আব্দুল ওহাবের ধর্মীয় শিক্ষা ও মতবাদের আলোচনায় প্রথমেই বলে রাখা ভাল, আরবদেশে ওহাবী নামাঙ্কিত কোনো মাযহাব বা অস্তিত্ত নেই।
এ সংজ্ঞাটির প্রচলন আরবদেশের বাহিরে এবং এ মতানুসারীদের বিদেশী দুশমন, বিশেষত তুর্কীদের ও ইউরোপিয়দের দ্বারা ‘ওহাবী’ কথাটির অর্থ এবং তাদের মধ্যেই প্রচলিত।
কোনো কোনো ইউরোপীয় লেখক, যেমন নীবর Neibuhr আব্দুল ওহাবকে পয়গম্বর বলেছেন। এসব উদ্ভট চিন্তারও কোনো যুক্তি নেই।
‘ জাস্টিস আঃ মওদূদ আরো লিখেছেন ‘প্রকৃতপক্ষে ইবনে আব্দূল ওহাব কোনো মাজহাবও সৃষ্টি করেননি, চার ইমামের অন্যতম ইমাম হাম্বলের মতানুসারী ছিলেন তিনি।
তাঁর প্রযত্ম ছিল, বিশ্বনবী এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে ইসলামের যে রূপ ছিল সে আদিম সহজ সরল ইসলামে প্রত্যাবর্তন করা।’ {প্রগুক্ত ১১৬, চেপে রাখা ইতিহাস ১৮০}।
ভারত উপমহাদেশে ১৮২২ খ্রীষ্টাব্দের পূর্বে ‘ওহাবী’ নামটির কোনো অস্তিত্তই ছিল না। সর্বপ্রথম এটি ইংরেজদের প্ররোচনায় এ দেশে আমদানী হয়। যাতে লোহা দিয়ে লোহা কাটার পথ সুগম হয়ে যায়।
গোলাম মোর্তজা লিখেছেন ‘ব্রেলভীরসৈয়দ আহমদ শহীদ রহঃ নিহত হওয়ার
পর যেসব আন্দোলন, বিদ্রোহ বা সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছিল, সেগুলোকে বিকৃত করে তাঁদের নাম পাল্টে কোনোটাকে বলা হয়েছে সিপাহী বিদ্রোহ, কোনোটাকে বলা হয়েছে ওহাবী আন্দোলন, ফারায়েজী আন্দোলন, মুহাম্মদী আন্দোলন, আবার কোনোটাকে হিন্দু মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে।’ পৃষ্ঠা নং ১৭৯।
গোলাম মোর্তজা আরো লিখেন ‘দিল্লীর শাহ ওলীউল্লাহ থেকে শুরু করে তাঁর পুত্র, শিষ্য ও ছাত্রগণ এমনকি শহীদ সৈয়দ আহমদ এবং তাঁর অনুগামীদের সকলেই মুসলমানদেরকে শরীয়তের ওপর প্রত্যাবর্তন করার তাগিদ দিয়েছিলেন।
ফলে কবর বাঁধান বা কবরের ওপর সৌধ নির্মাণ করা থেকে ক্রমে মুসলমানরা বিরত
হতে থাকে। ইংরেজরা মুসলমান বিপ্লবীদের মতিগতি লক্ষ্য করে এবং এ আন্দোলন যে তাঁদের বিরুদ্ধে অব্যর্থ আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি করছে তা বুঝতে পেরেছিল। তাই তারা কতকগুলো দরিদ্র ও দুর্বলমনা আলেমকে টাকা দিয়ে ঘুরিয়ে তাদের মুখ দিয়ে বলিয়ে নিল-তোমরা যুগ যুগ ধরে যা করে আসছো, তাহা করতে থাকো।
এ বিপ্লবীরা আসলে ওহাবী; নবী, সাহাবী ও ওলীদের কবর ভাঙ্গার দল। ইংরেজ তাদের প্রচারে যোগ দিয়ে বলল, ১৮২২ সালে সৈয়দ আহমদ মক্কায় যান, ওখানে গিয়েইতিনি ওহাবী মতে দীক্ষা গ্রহণ করেন। অথচ এটা একেবারেই মিথ্যা কথা।
প্রত্যেক সক্ষম মুসলমানের জীবনে একবার মক্কায় গিয়ে হজ্ব করা অবশ্য কর্তব্য হিসেবেই
তিনি গিয়েছিলেন। তাঁর হজ্বে যাওয়ার পূর্বের এবং পরের কার্যাবলীর সাথে আরবের ‘ওহাবী’ আন্দোলনের কোনো যোগাযোগই ছিলনা।’
“চেপে রাখা ইতিহাস” গ্রন্থের ১৮০ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে ‘তারিখ হিসেব করলে দেখা যায়, আরবের মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাবের যখন মৃত্যু হচ্ছে তখন সৈয়দ আহমদ ব্রেলবীর বয়স মাত্র এক বছর। তাঁর সাথে এঁর কোনো যোগাযোগ ছিল না, তা সুস্পষ্টই প্রমাণ হয়।’
অবশেষে বলতে পারি, আরবের “মুহাম্মদী আন্দোলন” এর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা সেটির নাম পাল্টিয়ে “ওহাবী আন্দোলন” বলে প্রচার করার পেছনে যে অসৎ
উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে, সে একই উদ্দেশ্য রয়েছে এদেশের বিপ্লবী আলেমদের ওহাবী নামে আখ্যায়িত করার পেছনেও।
এর ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহ. বলেছেন:
প্রার্থিত জিনিস যদি এমন হয় যা মানুষের হাতে নেই। যেমন,
হিদায়াত, ইলম, রোগমুক্তি ও সুস্থতা- তাহলে যেন একমাত্র রবের কাছেই চায়। তখন আমি আমার উস্তাদকে বললাম: এ
হাদিস ও তার মর্ম আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়াকে নাজায়েয বলেছে। তিনি বললেন : বরং জায়েয। তখন বললাম : আপনার নিকট এর কি দলীল আছে? এতে শায়খ খুব রেগে গেলেন এবং চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন : আমার চাচী এভাবে বলেন: হে শায়খ সাদ! (ঐ মসজিদের নীচে কবরে শায়িতব্যক্তি,
তার নিকট সাহায্য চাইতে)। তখন আমি বললামঃ হে চাচী!
তোমাকে কি শায়খ সাদ কোনো উপকার করতে পারে? উত্তরে বললেন : আমি তার কাছে দোয়া করি এবং তখন তিনি আল্লাহর কাছে গিয়ে আমার জন্য শাফায়াত করেন। আমি তখন শায়খকে বললাম : আপনি জ্ঞানী মানুষ। সারা জীবন
কোরআন-কিতাব পাঠ করে কাটালেন। এরপরও কি আপনার আকিদাহ আপনার অজ্ঞ চাচীর কাছ থেকে নিবেন? তিনি তখন রেগে বললেন : তোমার মধ্যে ওহাবিদের চিন্তা-ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ওমরাহ পালন করতে যাও আর তাদের কিতাব
নিয়ে ফেরত আস। আসলে আমি ওহাবিদের সম্বন্ধে বলতে গেলে কিছুই জানতাম না, আমার উস্তাদের কাছ থেকে শুধু এতটুকু
শুনতাম যে, ওহাবিরা সমস্ত মানুষদের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা ওলী-আউলিয়া ও তাদের কারামত বিশ্বাস করে না।
তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালবাসে না।
এবং এ জাতীয় আরও বহু অপবাদ। তখন আমি মনে মনে বললাম, যদি ওহাবিরা বিশ্বাস করে শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে এবং সুস্থতা দানের মালিক শুধু তিনি। তাহলে অবশ্যই আমাকে তাদের সম্বন্ধে জানতে হবে। তারপর তাদের সম্পর্কে জানতে গিয়ে শুনলাম, একটি নির্দিষ্ট জয়গায়
তারা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একত্রিত হয়। তাফসির, হাদিস ও ফিকাহ নিয়ে আলোচনা হয়। সে মতে এক বৃহস্পতিবার আমি আমার ছেলেদের সহ আরো কিছু শিক্ষিত যুবকদের নিয়ে সেখানে গেলাম। একটা কক্ষে প্রবেশ করে দরসের জন্য অপক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর আমাদের সামনে একজন শায়খ আসলেন। সালাম জানিয়ে ডান দিক হতে শুরু করে সবার সাথে হাত মিলালেন। এরপর নির্ধারিত চেয়ারে বসলেন। আমি লক্ষ্য করলাম কেউ তাঁর সম্মানে দাঁড়াল না। আমি মনে মনে বললাম : এ শায়খ খুবই নম্র ও বিনিত লোক। নিজ সম্মানে অন্যদের দাঁড়ানোকে পছন্দ করেন না। কিছুক্ষণ পর তিনি সে খুতবা পড়ে দরস শুরু করলেন, যা নবী কারিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ খুতবা ও দরস দেয়ার সময় বলতেন। খুতবার পর অত্যন্ত প্রাঞ্জল ও বিশুদ্ধ আরবী ভাষায়
কথা বলতে লাগলেন এবং হাদিস সম্বন্ধে আলোচনা শুরু করলেন- হাদিসের সনদ সহিহ না দুর্বল তাও বলে দিলেন।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম যতবার
আসল ততবারই দরূদ পাঠ করলেন। আলোচনার শেষ ভাগে লিখিত প্রশ্নাবলী পেশ করা হল। তিনি কোরআন ও হাদিসের
দলীলসহ সবগুলো প্রশ্নেরই উত্তর দিলেন। উপস্থিত কতিপয় ব্যক্তিবর্গ তার সাথে আলোচনা করতে চাইলে কাউকে বিমুখ
করলেন না। দরসের শেষে বললেন : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাকে মুসলিম বানিয়েছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবাদের অনুসরণ করে চলার তাওফীক দিয়েছেন। কিছু লোক আমাদের সম্বন্ধে মন্তব্য করে বলে তোমরা ওহাবি। এটা হচ্ছে মানুষকে দেয়া নিকৃষ্ট উপাধি।
এরূপ করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন: ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻨَﺎﺑَﺰُﻭﺍ ﺑِﺎﻟْﺄَﻟْﻘَﺎﺏِ (ﺍﻟﺤﺠﺮﺍﺕ 11 ) অর্থাৎ, তোমরা একে অপরকে মন্দ উপনামে ডেকো না। (সূরা হুজুরাত, ৪৯: ১১ আয়াত)। অতীতে ইমাম শাফেয়ী রহ.- কে রাফেজি বলে আখ্যায়িত করা হলে তিনি এক কবিতার মাধ্যমে তার উত্তর দেন, যার সারমর্ম হল: যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর বংশীয়দের ভালবাসার নাম রাফেজি হয় তাহলে মানুষ ও জিন সকলে সাক্ষী থেকো, আমিও রাফেজি। শায়খের দরস শেষ হলে কিছু সংখ্যক যুবকের সাথে বের হয়ে আসলাম তারা তাঁর ইলম ও বিনম্র ব্যবহারে বিমুগ্ধ হয়ে পড়েছিল। তাদের একজন বলেই বসল, ইনি সত্যই শায়খ। ওহাবি বলার ইতিহাস তাওহিদের শত্রুরা তাওহিদপন্থীদের মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাবের
প্রতি সম্বন্ধযুক্ত করে ওহাবি নামে আখ্যায়িত করে। যদি তারা সত্যবাদিই হত তাহলে তাঁর মূল নাম মুহাম্মাদের সাথে সম্পর্ক করে বলত মুহাম্মাদী। কিন্তু আল্লাহ চাইলেন তাওহিদপন্থীরা তাঁর নাম ওহাব বা দাতা- এর সাথে সম্পর্কিত হউক। তাই
থেকে হয়ে গেল ওহাবি। যদি সূফী বলতে সূফ বা পশমী কাপড়
পরিধানকারী লোকদের সাথে সম্পর্কিত মানুষদের বুঝায়,
তাহলে ওহাবি মানে আল্লাহর নাম ওহাব -যিনি মানুষকে একত্ববাদ দান করেন- এর সাথে সম্পর্কিত লোকদেরবুঝাবে।
মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহেবের জীবনী
মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব সৌদি আরবের অন্তর্গত নজদ এলাকায় ওয়াইনাহ নামক স্থানে ১১১৫ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। ১০ বছরে পদার্পণ করার পূর্বেই পবিত্র কোরআন মুখস্থ করেন। নিজ পিতার - যিনি হাম্বলী মাযহাবের একজন বিশেষ
আলেম ছিলেন- নিকট হতে ফিকাহ শিখেন। তারপর বিভিন্ন ওস্তাদের নিকট হাদিস ও তাফসীর শাস্ত্রে শিক্ষা লাভ করেন। বিভিন্ন এলাকায় বিশেষত: মদিনা শরিফ গিয়ে কোরআন হাদিসের উপর বিশেষভাবে গবেষণার মাধ্যমে তাওহিদের জ্ঞান লাভ করেন। শৈশব থেকেই নিজ এলাকাতে যে সব শিরক বিদআত ও কুসংস্কার প্রচলিত ছিল সেগুলো খুব খেয়াল রাখেন। যেমন, কবরকে পবিত্র ও বরকতময় জ্ঞান করে পূজা করা, যা ছিল সত্যিকারের ইসলাম পরিপন্থী। মাঝে মাঝে শুনতেন তার এলাকার মেয়েরা পুরুষ খেজুর গাছের কাছে ওছীলা চেয়ে বলত : হে পালের গোদা, বছর পূর্ণ হবার পূর্বে যেন স্বামী পাই। এ ছাড়া হেজাজে দেখতে পান বিভিন্ন সাহাবি ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বংশধরদের কবর
পূজা করা হচ্ছে। মদিনা শরিফে শুনতেন, লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরে গিয়ে আল্লাহকে ছেড়ে তাঁর নিকট বিপদ মুক্তি চাচ্ছে। আল্লাহকে ছেড়ে তাঁকে ডাকাডাকি করছে। এ সবই ছিল কোরআন ও নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার বিপরীত। কারণ রাব্বুল আলামীন বলেন : ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺪْﻉُ ﻣِﻦْ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﻟَﺎ ﻳَﻨْﻔَﻌُﻚَ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻀُﺮُّﻙَ ﻓَﺈِﻥْ ﻓَﻌَﻠْﺖَ ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﺇِﺫًﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ ﴿ﻳﻮﻧﺲ 106 ﴾‘অর্থাৎ, আর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে ডেকো না, যা তোমার উপকার
করতে পারে না এবং তোমার ক্ষতিও করতে পারে না। অতএব তুমি যদি কর, তাহলে নিশ্চয় তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।(সূরা ইউনুস: আয়াত ১০৬)
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা ইবনে আব্বাসকে রা. বললেন : ﺇﺫﺍ ﺳَﺄَﻟْﺖَ ﻓَﺎﺳْﺄَﻝِ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﺍﺫﺍ ﺍﺳْﺘَﻌَﻨْﺖَ ﻓﺎﺳْﺘَﻌِﻦْ ﺑﺎﻟﻠﻪِ ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻭﻗﺎﻝ ﺣﺴﻦ ﺻﺤﻴﺢ ) অর্থাৎ, যখন চাইবে কেবল আল্লাহর কাছেই চাইবে আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে কেবল আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করবে। (তিরমিযি, হাসান সহিহ)। এতসব দেখে তিনি তার এলাকাবাসীদেরকে তাওহিদ ও এক আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার দিকে ডাকতে শুরু করলেন।
যুক্তি দিয়ে বললেন, তিনিই শ্রষ্টা এবং এবং তিনিই দাতা।
অন্যরা কারও কোনো কষ্ট দুর করতে সমর্থ নয়, এমনকি নিজেদেরও না। নেককারদের সাথে ভালবাসার অর্থ হল তাদের অনুসরণ করা, তাদেরকে আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী বানানো নয়। আল্লাহকে ছেড়ে তাদের কাছে কোনো জিনিস চাওয়া নয়। ১-তাঁর এ সব তাওয়াতি কর্মসূচী দেখে বাতিল পন্থীরা তাঁর বিরুদ্ধে খাড়া হয়ে গেল। তিনি তাওহিদের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন আর বিদআতীরা তার
বিরুদ্ধে খাড়া হল। এটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন একত্ববাদের দাওয়াত নিয়ে তৈরী হলেন তখন মক্কার কাফেররা আবাক হয়ে বলেছিল:
ﺃَﺟَﻌَﻞَ ﺍﻟْﺂَﻟِﻬَﺔَ ﺇِﻟَﻬًﺎ ﻭَﺍﺣِﺪًﺍ ﺇِﻥَّ ﻫَﺬَﺍ ﻟَﺸَﻲْﺀٌ ﻋُﺠَﺎﺏٌ ﴿ﺹ5 ﴾ অর্থাৎ, সে কি সমস্ত মাবুদকে এক মাবুদ বানাতে চায়, এটাত সত্যই খুব অবাক হওয়ার কথা। ( সূরা সোয়াদ : আয়াত ৫) তখন তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়ে গেল তুমুলভাবে। তাঁর সম্বন্ধে নানা ধরণের মিথ্যা কথার প্রচার শুরু হল- যাতে তাঁর দাওয়াত কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু মহান আল্লাহ দাওয়াতের হিফাযত করলেন। এ কাজের জন্য এমন এক দল লোক
তৈরী করে দিলেন, যারা সে দাওয়াতের কাজ নিয়ে ছড়িয়ে পড়ল সারা হেজাজসহ অন্যান্য ইসলামি দেশগুলোয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত অনেক লোকই তাঁর সম্বন্ধে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, তিনি পঞ্চম মাযহাবের প্রতিষ্ঠা করেছেন। আসলে তিনি হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। তারা বলে: ওয়াহাবিরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- কে ভালবাসে না। তাঁর উপর দরূদ পাঠ করে না। অথচ তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনী গ্রন্থ জাদুল মায়াদকে সংক্ষিপ্ত করেছেন। এ ধরণের আরো বহু অপবাদ দেয়া হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এসব
অপবাদের বিচার করবেন কিয়ামত দিবসে। যদি তারা তার বইপত্র পাঠ করত তাহলে দেখত- সেগুলো কোরআন, হাদিস
ও সাহাবাদের কথায় পূর্ণ। ২-হাদীসে আছে : ﺍﻟﻠّﻬُﻢَّ ﺑَﺎﺭِﻙْ ﻟَﻨَﺎ ﻓِﻰ ﺷَﺎﻣِﻨَﺎ ﻭَ ﻓِﻰ ﻳَﻤَﻨِﻨَﺎ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻭَﻓِﻰ ﻧَﺠْﺪِﻧَﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻫُﻨَﺎﻟِﻚَ ﺍﻟﺰِّﻻﺯِﻝُ ﻭَﺍﻟْﻔِﺘَﻦُ ﻭَ ﺑِﻬَﺎ ﻳَﻄْﻠَﻊُ ﻗَﺮْﻥُ ﺍﻟﺸًّﻴْﻄَﺎﻥِ (ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ) অর্থাৎ, হে আল্লাহ! বরকত দাও আমাদের শামে এবং ইয়ামানে। লোকেরা বলল : আমাদেরনজদে। তিনি বললেন : ওখান ভূমিকম্প ও বিভিন্ন ফেতনা হবে। সেখানে শয়তানের শিং উঠবে। ( বুখারি ও মুসলিম)। এ হাদিসের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইবনে হাজার আসকালানী ও অন্যান্য আলেমরা বলেছেন : হাদীসে যে নজদের কথা বলা হয়েছে তার অবস্থান ইরাকে। কারণ সেখান থেকেই ফিতনা শুরু হয়েছে। যেখানে হোসাইন রা. কে শহীদ
করা হয়। কিন্তু কিছু লোক মনে করে বর্ণিত নজদ হল হেজাজের নজদ। অথচ ইরাকে যে ধরণের ফিতনা প্রকাশ পেয়েছে সে রকম কোনো ফিতনা সৌদি আরবের নজদ
থেকে প্রকাশ পায় নি। হেজাজের নজদ থেকে প্রকাশ পেয়েছে সে তাওহিদ যার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিশ্ব জগতকে সৃষ্টি করেছেন, এবং সমস্ত রাসূলদের প্রেরণ করেছেন। ৩- কিছু ন্যায় পরায়ণ আলেম বলেছেন, তিনি হিজরী ১১ শতাব্দীর মোজাদ্দেদ। তারা তার সম্বন্ধে গ্রন্থ লিখেছেন। যেমন শায়খ আলী আল- তানতাভী রহ. যিনি বড় বড় ব্যক্তিত্বদের সম্বন্ধেও বহু বই লিখেছেন। শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব রহ. নামক বইতে তিনি লিখেছেন, হিন্দুস্তান ও অন্যান্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে একত্ববাদের ধ্যান-ধারণা পৌছেঁছে মুসলিম হাজীদের দ্বারা, যারা মক্কা থেকে এই সম্বন্ধে ধারণা নিয়েছেন। ফলে ইংরেজ ও ইসলামের অন্যান্য শত্রুরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করল। কারণ, একমাত্র তাওহিদই মুসলিমদেরকে নিজ
শত্রুদের বিরুদ্ধে একত্রিত করে । ফলে, তারা এমন অবস্থা সৃষ্টি করল, যে ব্যক্তিই তাওহীদের দিকে মানুষকে ডাকে তাকেই তারা ওহাবি নামে আখ্যায়িত করে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমরা যেন সে তাওহিদ থেকে সরে যায় যে তাওহিদ এক আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার শিক্ষা দেয়। তাওহিদ ও শিরকের দ্বন্দ্ব ১। তাওহদি ও শিরকের দ্বন্দ্ব বহু পুরাতন। নূহ আ.-এর যুগ থেকেই এর সূচনা। যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে মূর্তি পূজা ছেড়ে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে ডেকেছিলেন তখন থেকেই এটি শুরু হয়। তিনি সাড়ে নয়শত বছর পর্যন্ত তাদেরকে তাওহিদের দাওয়াত দেন। কিন্তু তারা তাঁকে অমান্য করে ও তাঁর বিরাদ্ধাচরণ করে। সে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন : ﻭَﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻟَﺎ ﺗَﺬَﺭُﻥَّ ﺁَﻟِﻬَﺘَﻜُﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺬَﺭُﻥَّ ﻭَﺩًّﺍ ﻭَﻟَﺎ ﺳُﻮَﺍﻋًﺎ ﻭَﻟَﺎ
ﻳَﻐُﻮﺙَ ﻭَﻳَﻌُﻮﻕَ ﻭَﻧَﺴْﺮًﺍ ﴿23 ﴾ ﻭَﻗَﺪْ ﺃَﺿَﻠُّﻮﺍ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ (ﻧﻮﺡ 24 ) আর তারা বলে, ‘তোমরা তোমাদের উপাস্যদের বর্জন করো না; বর্জন
করো না ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক ও নাসরকে’।বস্ত্তত তারা অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে। (সূরা নূহ: আয়াত ২৩ ও ২৪)
বুখারি শরিফে ইবনে আব্বাস রা. থেকে এই আয়াতের
তাফসিরে বলা হয়েছে: এঁরা ছিলেন নূহ আ.-এর সমপ্রদায়ের মধ্যে ভাল ও নেককার লোক। তারা মারা গেলে শয়তান তাদের গোত্রের লোকদের কাছে গোপনে বলল, তারা যেখানে বসতেন সেখানে তাদের প্রতিমূর্তি তৈরী কর এবং এগুলোকে তাঁদের নামে বিভূষিত কর। তারা তাই করল। কিন্তু তখনও পর্যন্ত তাদের ইবাদত করা হত না। যখন এরা মারা গেল তখন কেন যে মূর্তিগুলি বানান হয়েছিল মতা পরবর্তী লোকেরা ভুলে গেল। ফলে, তখন থেকেই মূর্তি ও পাথরের পূজা শুরু
হয়ে গেল। ২। এরপর থেকে (অর্থাৎ নূহ আ.- এর পর) যত
রাসূল আগমন করেছেন তাদের প্রত্যেকে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে ডাকতে শুরু করলেন এবং আল্লাহ ব্যতীত সকল বাতেল- অযোগ্য মাবুদদের ত্যাগ করতে বললেন। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআন ভরপুর।
আল্লাহ বলেনঃ ﻭَﺇِﻟَﻰ ﻋَﺎﺩٍ ﺃَﺧَﺎﻫُﻢْ ﻫُﻮﺩًﺍ ﻗَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﻗَﻮْﻡِ ﺍﻋْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣَﺎ ﻟَﻜُﻢْ
ﻣِﻦْ ﺇِﻟَﻪٍ ﻏَﻴْﺮُﻩُ ﺃَﻓَﻠَﺎ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ ﴿ :65ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ ﴾ অর্থাৎ, আর (প্রেরণ করলাম) আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হূদকে। সে বলল,
হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তোমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না? (সূরা আরাফ : আয়াত ৬৫)
অন্যত্র বলেন : ﻭَﺇِﻟَﻰ ﺛَﻤُﻮﺩَ ﺃَﺧَﺎﻫُﻢْ ﺻَﺎﻟِﺤًﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﻗَﻮْﻡِ ﺍﻋْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣَﺎ ﻟَﻜُﻢْ
ﻣِﻦْ ﺇِﻟَﻪٍ ﻏَﻴْﺮُﻩُ ( ﻫﻮﺩ : 61 ) অর্থাৎ, আর সামূদ জাতির নিকট
(পাঠিয়েছিলাম) তাদের ভাই সালেহকে। সে বলল, হে আমার কওম, তোমার আল্লাহর ইবাদত কর,
তিনি ছাড়া তোমাদের কোন (সত্য) ইলাহ নেই। (সূরা হূদ : আয়াত ৬১) আরও ইরশাদ হচ্ছে : ﻭَﺇِﻟَﻰ ﻣَﺪْﻳَﻦَ ﺃَﺧَﺎﻫُﻢْ ﺷُﻌَﻴْﺒًﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﻗَﻮْﻡِ ﺍﻋْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣَﺎ
ﻟَﻜُﻢْ ﻣِﻦْ ﺇِﻟَﻪٍ ﻏَﻴْﺮُﻩُ (ﻫﻮﺩ 84 ) অর্থাৎ, আর মাদইয়ানে আমি (পাঠিয়েছিলাম) তাদের ভাই শুআইবকে। সে বলল,
হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন (সত্য) ইলাহ নেই। (সূরা হূদ: আয়াত ৮৪)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন : ﻭَﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢُ ﻟِﺄَﺑِﻴﻪِ ﻭَﻗَﻮْﻣِﻪِ ﺇِﻧَّﻨِﻲ ﺑَﺮَﺍﺀٌ ﻣِﻤَّﺎ ﺗَﻌْﺒُﺪُﻭﻥَ ﴿ 26﴾ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻓَﻄَﺮَﻧِﻲ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺳَﻴَﻬْﺪِﻳﻦِ ﴿ﺍﻟﺰﺧﺮﻑ27 ﴾
অর্থাৎ, আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম স্বীয় পিতা ও তার কওমকে বলেছিল, তোমরা যেগুলুর ইবাদত কর, নিশ্চয় আমি তাদের থেকে সম্পূর্ণমুক্ত। তবে (তিনি ছাড়া) যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। অত:পর নিশ্চয় তিনি আমাকে শীঘ্রই হেদায়াত
দিবেন। (সূরা যুখরুফ : আয়াত ২৬ ও ২৭)
মুশরিকরা সকল নবীরই বিরোধিতা করত এবং অহঙ্কারের সাথে মুখ ঘুরিয়ে নিত। আর তাদের আনিত দাওয়াত উপেক্ষা করত। একে বাধাগ্রস্ত করার জন্য সকল শক্তি প্রয়োগ করত।
৩। আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি নবুয়ত পাওয়ার আগে নিজ জাতির কাছে আল আমীন তথা বিশ্বাসী বলে পরিচিত ছিলেন। এ নামেই সকলের কাছে সমাদৃত ছিলেন। কিন্তু যখনই তাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে ডাকলেন এবং বাপ দাদাদের অনুসৃত মূর্তি পূজা ত্যাগের আহ্বান জানালেন। তখনই তাঁর সত্যবাদিতা ও
আমানতদারীতার কথা ভুলে গেল। বরং উল্টো বলতে লাগল :
তিনি মিথ্যবাদী, যাদুকর। পবিত্র কোরআন তাদের বিরোধিতা করে বর্ণনা করছে : ﻭَﻋَﺠِﺒُﻮﺍ ﺃَﻥْ ﺟَﺎﺀَﻫُﻢْ ﻣُﻨْﺬِﺭٌ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮُﻭﻥَ ﻫَﺬَﺍ ﺳَﺎﺣِﺮٌ ﻛَﺬَّﺍﺏٌ ﴿4 ﴾ ﺃَﺟَﻌَﻞَ ﺍﻟْﺂَﻟِﻬَﺔَ ﺇِﻟَﻬًﺎ ﻭَﺍﺣِﺪًﺍ ﺇِﻥَّ ﻫَﺬَﺍ
ﻟَﺸَﻲْﺀٌ ﻋُﺠَﺎﺏٌ ﴿ﺹ 5: ﴾ অর্থাৎ, আর তারা বিস্মিত হল যে, তাদের কাছে তাদের মধ্য থেকেই একজন সতর্ককারী এসেছে এবং কাফেররা বলে, এ তো যাদুকর, মিথ্যাবাদী। সে কি সকল
উপাস্যকে এক ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? নিশ্চয় এ তো এক আশ্চর্য বিষয়। (সূরা সোয়াদ : আয়াত ৪ ও ৫) অন্যত্র বলেন :
ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻣَﺎ ﺃَﺗَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻠِﻬِﻢْ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝٍ ﺇِﻟَّﺎ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺳَﺎﺣِﺮٌ ﺃَﻭْ ﻣَﺠْﻨُﻮﻥٌ ﴿52 ﴾ ﺃَﺗَﻮَﺍﺻَﻮْﺍ ﺑِﻪِ ﺑَﻞْ ﻫُﻢْ ﻗَﻮْﻡٌ ﻃَﺎﻏُﻮﻥَ ﴿
ﺍﻟﺬﺭﻳﺎﺕ 53: ﴾ অর্থাৎ, এভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্য
থেকে যে রাসূলই এসেছে, তারা বলেছে, এ তো একজন যাদুকর অথবা উন্মাদ। তারা কি একে অন্যকে এ বিষয়ে ওসিয়ত করেছে? বরং এরা সীমালঙ্ঘনকারী কওম। (সূরা যারিয়াত: আয়াত ৫২ ও ৫৩)। এটিই হচ্ছে সকল নবী-রাসূলের
তাওহিদের প্রতি দাওয়াত দেয়ার পরের অবস্থা। এটিই তাঁদের মিথ্যাবাদী কওম ও অপবাদ দানকারীদের ভূমিকা। ৪। আমাদের বর্তমান সময়ে কোনো মুসলিম তার অপর মুসলিম ভাইদেরকে চরিত্র সংশোধন, সততা ও আমানতদারীতা রক্ষা করার প্রতি দাওয়াত দিলে তাকে কোনোরূপ বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয় না। কিন্তু যখনই তাওহিদ তথা এক
আল্লাহকে ডাকা ও বিপদ- মুসিবতে কেবল তাঁর নিকটই সাহায্য
প্রার্থনা করার প্রতি দাওয়াত দেয় এবং আল্লাহ ব্যতীত নবী, আওলিয়াদের দ্বারস্থ হতে নিষেধ করে _সকল নবীই
যা করে গিয়েছেন_ তখনই মানুষ তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়
এবং নানা অপবাদে জর্জরিত করে ফেলে। বলে ইনি ওহাবি, রাসূলের দুশমন ইত্যাদি- যাতে মানুষ তার দাওয়াত
থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর কোরআনে তাওহিদের বক্তব্য সম্বলিত কোনো আয়াত আসলে তাদের কেউ কেউ
বলে, এটি ওহাবিদের আয়াত। আর হাদিস যখন বলে : যখন সাহায্য চাইবে এক আল্লাহর কাছেই চাইবে, তখন কেউ কেউ
বলে, এ হল ওহাবিদের হাদিস। কোনো মুসল্লী বুকের উপর হাত বাঁধলে, আত্তাহিয়্যাতুতে তর্জনি নাড়লে _যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা করতেন_ বলে: এ তো ওহাবি হয়ে গেছে। আজ অবস্থাটা হয়ে গেছে এমন যে, কেউ একত্ববাদের কথা বললে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের অনুসরণ করলে তাকে ওহাবি বলা হয়। বিভিন্নভাবে তিরস্কার করা হয়। ৫। তাওহিদের প্রতি আহ্বানকারী দলকে অবশ্যই ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করতে হবে। যাঁকে তাঁর রব
বলেছেন : ﻭَﺍﺻْﺒِﺮْ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﻭَﺍﻫْﺠُﺮْﻫُﻢْ ﻫَﺠْﺮًﺍ ﺟَﻤِﻴﻠًﺎ ﴿ 10ﺍﻟﻤﺰﻣﻞ﴾ অর্থাৎ, তারা যা বলে তা তুমি সহ্য কর এবং তাদেরকে সুন্দরভাবে পরিত্যাগ কর। (সূরা মুযযাম্মিল: আয়াত ১০) অন্য ইরশাদ হচ্ছে : ﻓَﺎﺻْﺒِﺮْ ﻟِﺤُﻜْﻢِ ﺭَﺑِّﻚَ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻄِﻊْ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﺁَﺛِﻤًﺎ ﺃَﻭْ ﻛَﻔُﻮﺭًﺍ ﴿
ﺍﻟﺪﻫﺮ24: ﴾ অর্থাৎ, অতএব তোমার রবের হুকুমের জন্য ধৈর্য্য ধারণ কর এবং তাদের মধ্য থেকে কোনো পাপিষ্ঠ বা অস্বীকারকারীর আনুগত্য করো না। (সূরা দাহার : আয়াত ২৪)
৬। তাওহিদের দিকে দাওয়াত দেয়া হলে তা কবূল করা এবং দাওয়াত দানকারীকে ভালবাসা সকল মুসলিমের উপর ফরজ। কারণ, তাওহিদের দাওয়াত দেয়া ছিল রাসূলদের কাজ, আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এ কাজ করে গেছেন, লোকদের তাওহিদের প্রতি ডেকে গেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি নবীজীকে ভালবাসবে অবশ্যই সে তাঁর দাওয়াতকে ভলবাসবে। আর যে তাওহিদকে ঘৃণা করল সে যেন নবীকেই ঘৃণা করল। কোনো মুসলিমই কি এ কাজ করতে রাযী হবে?
মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুুল ওহাব নজদীর একটি চিঠি ও কিছু প্রশ্ন:
===================================
মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী তার একটি চিঠিতে লিখেছেন,
" আপনার কাছি বিষয়টি গোপন নয় যে, সুলাইমান ইবনে সুহাইম এর চিঠি আপনার কাছে পৌছেছে। বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। আপনার ওখানের কিছু বিজ্ঞ আলেম এগুলো সত্যায়ন করেছে এবং তা বিশ্বাসও করেছে। আল্লাহ তায়ালা অবগত রয়েছেন যে, লোকটি আমার নামে অপবাদ রটিয়েছে এবং আমার নামে এমন কথা বলেছে, যা আমি বলিনি। এর অধিকাংশের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
তার কিছু মিথ্যাচার হলো,
১.আমি চার মাজহাবের কিতাবসমূহ বাতিল করে দিয়েছি। আর আমি বলেছি, ছয় শ' বছর যাবৎ মুসলামনরা হকের উপর ছিলো না। আমি না কি ইজতেহাদের দাবী করেছি। সে এও বলেছে যে, আমি তাকলীদ করি না।
২. আমি না কি বলেছি যে, আলেমদের মতানৈক্য অভিশাপ।
৩. বুজুর্গদের ওসিলা করে যারা দুয়া করে তাদেরকে না কি আমি কাফের বলেছি।
৪. আমি না কি ইমাম বুসিরী রহ.কে কাফের বলেছি, তিনি রাসূল স. কে ইয়া আকরামাল খালকি (হে সবচেয়ে সম্মানিত সৃষ্টি) বলার কারণে।
৫.আমি না কি বলেছি, আমার পক্ষে যদি সম্ভব হতো তাহলে আমি রাসূল স. এর কবরের গম্বুজ ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতাম।
৬. আমার পক্ষে সম্ভব হলে আমি কা'বার মিজাব পরিবর্তন করে কাঠের মিজাব নির্মাণ করতাম।
৭.আমি না কি রাসূল স. এর কবর জিয়ারতকে হারাম বলেছি। আর আমি পিতা-মাতা ও অন্যান্যদের কবর জিয়ারতকে অস্বীকার করি।
৮. আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম খেলে আমি না কি তাকে কাফের বলেছি।
৯. "আমি না কি ইবনে ফারেজ ও ইবনে আরাবীকে কাফের বলেছি। "
১০. আমি না কি দালাইলুল খাইরাত ও রওজুর রয়্যাহিন নামক কিতাব দুটি পুড়িয়েছি। এবং রওজুর রয়্যাহিন এর নাম রেখেছি রওজুশ শায়াতিন।
"এসব মাসআলা সম্পর্কে আমার উত্তর হলো, আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, নিশ্চয় এগুলো মারাত্মক অপবাদ। "
[আদ-দুরারুস সুন্নিয়া, খ.১, পৃ.৩৩-৩৪]
মূল বইয়ের ডাউনলোড লিংক:
http://archive.org/download/WAQ41814/01_41814.pdf
http://www.waqfeya.com/book.php?bid=7836
এ সম্পর্কে তিনি তার বক্ষ্যমাণ কিতাব “আদ্দুরারুস সানিয়াহ” এবং “রাসাইলুস সাখসিয়াহ” প্রভৃতি গ্রন্থাবলীতে লিখেছেন :
“আদ্দুরারুস সানিয়াহ” কিতাবের সরাসরি লিংক থেকেও নিচের উদ্ধৃতিগুলো মিলিয়ে দেখা যেতে পারে: Clock in here
http://kl28.com/house_of_knowledge/page/AdDaduraru_AsSasaneiaiatu_Fy_AlAjwbt_AnNjdyt_13_page_34 ]]
ﻭﺃﻣﺎ ﻣﺬﻫﺒﻨﺎ : ﻓﻤﺬﻫﺐ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﺣﻨﺒﻞ ﺇﻣﺎﻡ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ، ﻭﻻ ﻧﻨﻜﺮ ﻋﻠﻰ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻤﺬﺍﻫﺐ ﺍﻷﺭﺑﻌﺔ ﺇﺫﺍ ﻟﻢ ﻳﺨﺎﻟﻒ ﻧﺺ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺇﺟﻤﺎﻉ ﺍﻷﻣﺔ ﻭﻗﻮﻝ ﺟﻤﻬﻮﺭﻫﺎ .
অনুবাদ, আমাদের মাযহাব হল আহলে সুন্নাহ’র ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের মাযহাব। চার মাযহাবের অনুসারিদের উপর আমরা কোন আপত্তি করিনা যদি তা কুরআন, সুন্নাহ, ইজমায়ে উম্মাহ ও জমহুর সাহাবার মতের বিরোধী না হয়।
[ সূত্র—আদ্দুরারুস সানিয়াহ ১/১৫৭, আর-রাসাইলুস সাখসিয়াহ১/৩০]
তিনি আরো লিখেন :
ﻓﻨﺤﻦ ﻭﻟﻠﻪ ﺍﻟﺤﻤﺪ ﻣﺘﺒﻌﻴﻦ ﻏﻴﺮ ﻣﺒﺘﺪﻋﻴﻦ ، ﻋﻠﻰ ﻣﺬﻫﺐ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﺣﻨﺒﻞ . ﻭﺣﺘﻰ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﻬﺘﺎﻥ ﺍﻟﺬﻱ ﺃﺷﺎﻉ ﺍﻷﻋﺪﺍﺀ : ﺃﻧﻲ ﺃﺩﻋﻲ ﺍﻻﺟﺘﻬﺎﺩ ﻭﻻ ﺃﺗﺒﻊ ﺍﻷﺋﻤﺔ .
অনুবাদ, আমরা আল-হামদুলিল্লাহ! ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের অনুসারি। বিদআতি নই। আর ঐ অপবাদ থেকেও আমি মুক্ত যা শত্রুরা প্রচার করেছে যে, আমি মুজতাহিদ এবং কোন ইমামের অনুসরণ করিনা।
[সূত্র—আদ্দুরারুস সানিয়াহ ১/২২, আর রাসাইলুস সাখসিয়াহ১/৩০]
তিনি আরও বলেন:
ﺃﺧﺒﺮﻛﻢ ﺃﻧﻲ – ﻭﻟﻠﻪ ﺍﻟﺤﻤﺪ – ﻋﻘﻴﺪﺗﻲ ﻭﺩﻳﻨﻲ ﺍﻟﺬﻱ ﺃﺩﻳﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻪ ﻣﺬﻫﺐ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﺍﻟﺬﻱ ﻋﻠﻴﻪ ﺃﺋﻤﺔ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ، ﻣﺜﻞ ﺍﻷﺋﻤﺔ ﺍﻷﺭﺑﻌﺔ ﻭﺃﺗﺒﺎﻋﻬﻢ ﺇﻟﻰ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ؛
অনুবাদ, আমি আপনাদের জানাচ্ছি যে,
আল-হামদুলিল্লাহ্, আমার আকিদাহ ও আমার দ্বীন, যা আমি পালন করি; তা-ই যা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআর। যার উপর প্রতিষ্ঠিত সকল মুসলমানদের ইমামগন এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাদের অনুসারিগণ অবিচল থাকবেন। [সূত্র—আদ্দুরারুস সানিয়াহ ১/২৮, আর রাসাইলুস সাখসিয়াহ১/১২৩]
আরও বলেন:
ﻓﻨﺤﻦ ﻣﻘﻠﺪﻭﻥ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺻﺎﻟﺢ ﺳﻠﻒ ﺍﻷﻣﺔ ﻭﻣﺎ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻻﻋﺘﻤﺎﺩ، ﻣﻦ ﺃﻗﻮﺍﻝ ﺍﻷﺋﻤﺔ ﺍﻷﺭﺑﻌﺔ : ﺃﺑﻰ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﺍﻟﻨﻌﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﺛﺎﺑﺖ، ﻭﻣﺎﻟﻚ ﺑﻦ ﺃﻧﺲ، ﻭﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺇﺩﺭﻳﺲ، ﻭﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﺣﻨﺒﻞ، ﺭﺣﻤﻬﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ .
অনুবাদ, আমরা কিতাব, সুন্নাহ এবং উম্মাহের সালফে সালিহীনের তাকলিদ করি। আর চার ইমাম তথা আবু হানীফা, মালেক, মুহাম্মদ এবং আহমাদ (রাহ) এর নির্ভরযোগ্য মতেরও। [সূত্র—আদ্দুরারুস সানিয়াহ ১/৫১, আর রাসাইলুস সাখসিয়াহ১/৭৯] ।
মাযহাবে ইমাম হাম্বলীর মুহাক্কিক শায়খ মুহাম্মদ ইবনে আব্দ আল-ওয়াহহাব আন-নজদিয়্যাহ (রহ) আরও বলেন:
ﻭﻧﺤﻦ ﺃﻳﻀﺎً : ﻓﻲ ﺍﻟﻔﺮﻭﻉ، ﻋﻠﻰ ﻣﺬﻫﺐ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﺣﻨﺒﻞ، ﻭﻻ ﻧﻨﻜﺮ ﻋﻠﻰ ﻣﻦ ﻗﻠﺪ ﺃﺣﺪ ﺍﻷﺋﻤﺔ ﺍﻷﺭﺑﻌﺔ، ﺩﻭﻥ ﻏﻴﺮﻫﻢ، ﻟﻌﺪﻡ ﺿﺒﻂ ﻣﺬﺍﻫﺐ ﺍﻟﻐﻴﺮ ؛ ﺍﻟﺮﺍﻓﻀﺔ، ﻭﺍﻟﺰﻳﺪﻳﺔ، ﻭﺍﻹﻣﺎﻣﻴﺔ، ﻭﻧﺤﻮﻫﻢ ؛ ﻭﻻ ﻧﻘﺮﻫﻢ ﻇﺎﻫﺮﺍً ﻋﻠﻰ ﺷﻲﺀ ﻣﻦ ﻣﺬﺍﻫﺒﻬﻢ ﺍﻟﻔﺎﺳﺪﺓ، ﺑﻞ ﻧﺠﺒﺮﻫﻢ ﻋﻠﻰ ﺗﻘﻠﻴﺪ ﺃﺣﺪ ﺍﻷﺋﻤﺔ ﺍﻷﺭﺑﻌﺔ
অনুবাদ, আমরা শাখাগত মাসআলায় ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের মাযহাবের অনুসারী। যারা অন্য ইমামগণের মাযহাব সংকলন না হওয়ায় সেগুলো ছেড়ে শুধু চার ইমামের যে কোন একজনের তাকলিদ করে আমরা তার উপর আপত্তি করিনা । ……আমরা বরং চার ইমামের যে কোন এক ইমামের তাকলিদ করতে বাধ্য করি। [সূত্র—আদ্দুরারুস সানিয়াহ ১/১৪২]
বাংলাদেশে এত বড় বিজ্ঞ লোক থাকা উচিৎ নয়। আমেরিকায় এলে, প্রচার ও প্রসার অনেক
বেড়ে যেত।
১. মওদুদি-ওহাবী-সালাফি মতবাদ গ্রহণ করা ।
ওহাবী খালাম্মা
২. তাদের কথা অনুযায়ী ও বাছাই করা তাদের মতবাদে বিশ্বাসী নিকাব পড়া কথিত সতী-পুত-পবিত্র কোন না কোন মেয়ে (খালাম্মা)বিয়ে করা ।
৩. সৌদি আরবের রাজাদের ইসলামের রক্ষক মনে করা ।
৪. মতিউর রহমান মাদানী, কাজী ইব্রাহিম, কামালুদ্দিন জাফরিকে পীরের মত ভক্তি করা ।
৫. জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেওয়া ।
৬. ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতা-দের সাথে উঠা বসা করা ।
৭. বাংলাদেশের ধর্মনিরোপেক্ষ ও জাতীয়তাবাদী মতবাদে বিশ্বাসীর বিরোদ্ধে নিয়মিত গালি গালাজমূলক লেখা লিখা ।
ভাল কথা আমি আপনাকে গালি দিতে চাই । এগুলো গালি বলাও ভুল হবে -
১। তৃতীয় বিশ্বের জঞ্জাল ।
২। স্টুপিড স্লেভ অব ওয়েস্ট ।
কিছু মনে করলেন না তো । !!!!!
বাংলাদেশের চিহিৃত এ সকল ধর্মনিরপেক্ষবাদী নাস্তিকদের বিরুদ্ধে লিখবেনাতো লিখবেকি আপনার মত আবালের বিরুদ্ধে ? তা এ সকল নাস্তিকদের পদলেহন আপনার কেমন চলছে আজকাল ?
ধর্মনিরোপেক্ষতা বা আর নাস্তিকতা কিছু লোকের আদর্শ । আমি তাদের সাথে আলোচনা ও বিতর্কে অংশ নিতে পারি । তাদের সাথে গায়ে পড়ে যুদ্ধ বা মারামারি করা আমার কাজ নয় । কারণ আমি বুদ্ধিবৃত্তিক ও সৃজনশীল কাজ করাকেই গুরুত্ব দেই ।
আমি কারো পদলেহন করি না ।
আমি লক্ষ করছি, নেটে আপনার মতো কি সৌদি বাদশাহর জারজ সন্তান ধরনের লোক সৌদি বাদশাহ, রাজতন্ত্র এবং অদ্ধকারাচ্ছন্ন ওহাবী মতবাদদের পক্ষে দালালী করতে । এধরনের দালালী করে কি পান আর কোন ধরনের সুবিধা পান - সেই প্রশ্ন আপনাদের মতো লোকদের আমি কখনোই করি না । কারণ কি কুলাঙ্গার সমাজে সব সময় থাকেই । আগে আমাদের দেশে দেখো যেতো, রাশিয়া বৃষ্টি হলে ঢাকায় কিছু লোক ছাতা ধরতো যাতে তাদের গুরু মার্কস - লেনিন এর মাথা বৃষ্টির পানি না লাগে । আপনার অবস্হাও এমনই ।
আপনার জামায়াতে ইসলামিকে ভালো না লাগতেই পারে সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু মুসলিম হিসেবে আপনি পর্দা ব্যবস্থার সমালোচনা করতে পারেন না।
দিনের পর দিন বাড়াবাড়ি রকমের কুসংস্কার-কুপমন্ডুকতা-ধর্মান্ধতা কোন বিবেকবান লোক মেনে নিতে পারে না এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন-কুপমন্ডুক-ধর্মান্ধ এক শ্রেণীর লোকদের আদর-আবদার রক্ষা করাও বিবেকবান লোকদের পক্ষে সম্ভব নয় ।
ইসলামে পর্দার সীমারেখা কি তা আমি আমার লেখায় তুলে ধরেছি ।
নিকাব আবশ্যিক কোন বিষয় নয় ।এটা জামায়াতে ইসলামীর মতো কিছু ধর্মান্ধ ও গোড়া দল ও গোষ্ঠী আমাদের নারী সমাজের উপর জোড় করে ও মগজ দোলাই করে চাপিয়ে দিচ্ছে । আমরা বিবেকবান লোকরা তা কোনভাবেই মেনে নিতে পারি না ।
নিকাব অবশ্যই আবশ্যিক বিষয়। এটা জামায়াতে ইসলামির বাপ দাদার সম্পত্তি নয়।
নিজেকে অনেক পন্ডিত মনে করেন। আসলে কিছুই হতে পারে নি। ভন্ডামি ছাড়েন।
অভিজিৎদের কাছ থেকে কত খেয়েছেন?
আমি কারো কাছ থেকে কোন হাদিয়া পাইনি । এটা হয়ত আপনারা পেয়ে থাকতে পারেন । কারণ জামায়াত-শিবিরকে সৌদি আরব সব সময়ই আর্থিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে । ইসলামী ব্যাংকের ৬৭% শেয়ার সৌদি আরবের ।
সৌদি আরব ইসলাম ও মানবতার দুষশন । সৌদি আরব নামে দেশটা ইহুদী - খৃস্টানরা প্রতিষ্ঠা করেছে ওসামানীয়া খিলাফতকে ধ্বংষ করে । এই দেশের দালালরা কখনোই বাংলাদেশের সুবিধা করতে পারিনি । যেমন : জামায়াত-শিবির ।
জাহান্নামী কারা ? জান্নাতী কারা ? - এই ব্যাপারে আমরা পরিপূর্ণভাবে বলা অধিকার রাখি না । তবে জান্নাতী ও জাহান্নামীদের বৈশিষ্ট্য কুরআন ও হাদিসে বলা আছে ।
মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। সুরা হুজরাত : ১২
হানাফী মাযহাবের হেদায়া-আলমগীরী-ফিরোজশাহী-কুদরী ... ইত্যাদি বইগুলোতে অনেক অযৌক্তিক ও কুরআনবিরোধী কথা আছে । সেগুলো আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয় । আর এজন্য আমি অযৌক্তিক ও কুরআনবিরোধী কথাগুলো নিয়ে গবেষণা করছি ।
এটা যদি আপনার ইসলামের উপর গবেষণার ধরন হয়, তবে আর বলার কিছু নেই। চালাইয়া যান।
১। আপনার পোস্ট পরে মনে হয়েছে আপনি কোন বিষয়ের উপর গবেষণা করছেন তা আপনি নিজেই জানেন না। যেমন একবার আমার কাছে মনে হয়েছে আপনি ইসলামী আকীদার () উপর গবেষণা করছেন কিন্ত আবার পরক্ষনেই মনে হয়েছে ইসলামী রাজনীতির উপর গবেষণা করছেন আবার------। গবেষণার অন্যতম প্রধান কাজ হল গবেষণার বিষয় নির্বাচন করে কাজ আগিয়ে নেওয়া।
২। আপনার পোস্টের আকেরটা প্রধান ভুল হল, ‘JUDGEMENTAL’ সমস্যা। যেটা এমনিই একটা সমস্যা, যার ফলে আপনি বিভিন্ন সমস্যায় পড়েছেন ও এমনি বিরূপ মন্তবের শিকার হয়েছেন।
আপনার এই পোস্টের একটি অন্যতম বড় ভুল হল(যা আমি আমার মন্তব্যে উল্লেখ্য করেছি।) যা আপনার গবেষণার বিষয়কে কোন ভাবেই প্রতিষ্ঠা করে না, তাকেই আপনি জোর করে প্রমান হিসাবে জাহির করতে চাচ্ছেন।
আমি গবেষণা করার ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছি বা গবেষণাধর্মী বই লেখার ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছি :
১। ওহাবী সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিশ্বাস ও কর্মকান্ড ।
২। ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম ।
৩। ইসলামী ক্যালেন্ডারকে বিশ্বব্যাপী বাস্তবায়ন করার গুরুত্ব ও তাৎপর্য ।
৪। মুসলিম নারী সমাজের অগ্রগতি ।
৫। মুসলিম দেশগুলো হতে ইসলামী আইন কেন বিলুপ্ত হলো ।
আমার লেখাটা অনেকগুলো পর্বে বিভক্ত । আমি পরবর্তী পর্বগুলোতে আরো তথ্য প্রদর্শন করবো ইনশাআল্লাহ ।
মনে হচ্ছে আপনি একজন জিনিয়াস ব্যাক্তি
ওরে বাপরে এই আধুনিক যুগেও যে কেউ সক্রেটিস এর যুগের মত এত গুল বিষয়ের উপর গবেষণা করতে পারে তা আমার চিন্তারও বাহিরে। মনে হচ্ছে আপনাকে শুধু জিনিয়াস বললে ভুল হবে!! আপনি তার থেকেও বড় মাপের কেউ।
তবে সমস্যা হল ‘ওহাবী সম্প্রদায়” বলতে আপনি ঠিক কি বলতে চাচ্ছেন তা বুঝতে পারি নাই।
কোন বিষয় উপর গবেযনা
দয়া করে এই লেখাটা পড়ুন :
গবেষণা পদ্ধতি শাস্ত্র সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা
————————————————— ডঃ রমিত আজাদ
বাংলা গবেষণা শব্দটি এসেছে সংস্কৃত গবেষ শব্দ থেকে। ঋগবেদে প্রাপ্ত এই শব্দটির অর্থ অন্বেষণ বা অনুসন্ধান। গবেষণা = গবেষ + অণ + আ । ইংরেজী Research শব্দটির ব্যুৎপত্তি ফরাসী recerche থেকে, যার অর্থ বিস্তারিত অনুসন্ধান। আবার Research মানে Re-search অর্থাৎ পুনরায় অনুসন্ধান, এভাবেও ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে। আমরা কোন কিছুর অনুসন্ধান করছি, প্রথমবার অনুসন্ধান করার পর পাওয়া গেলনা, তাহলে পুনরায় অনুসন্ধান করতে হবে, আবারও যদি না পাওয়া যায়, আবারও অনুসন্ধান করতে হবে, এভাবে যতক্ষণ পর্যন্ত পাওয়া না যায় ততক্ষণ পর্যন্ত অনুসন্ধান চলবে।
Method শব্দটির অর্থ পদ্ধতি, উপায়, প্রক্রিয়া, রীতি, কার্যপদ্ধতিইত্যাদি। Logy শব্দটির ব্যুৎপত্তি গ্রীক logos থেকে যার অর্থ কথা, শব্দ, আলোচনা, ইত্যাদি। জ্ঞানের অনেক শাখার নামের শেষেই এই Logy শব্দটি পাওয়া যায় (যেমন: Biology, zoology, sociology ইত্যাদি। জীব সংক্রান্ত আলোচনা – Biology, প্রাণী সংক্রান্ত আলোচনা -zoology, সমাজ সংক্রান্ত আলোচনা – sociology ইত্যাদি )। বাংলা ভাষায় এর অনুবাদ বিদ্যা বা শাস্ত্র হতে পারে। সেই হিসাবে Research Methodology -র বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘গবেষণা পদ্ধতিশাস্ত্র’।
কি নিয়ে আলোচনা করে এই শাস্ত্র তা তার নামেই বোঝা যাচ্ছে। এককথায় বলা যায় যে কি পদ্ধতিতে গবেষণা করা হয় মূলতঃ তা নিয়েই আলোচনা করা হয় এই শাস্ত্রে। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার আগে গবেষণা কি এবং গবেষণার গুরুত্ব কি এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা প্রয়োজন।
গবেষণা হলো নতুন তথ্য আবিষ্কার করে বর্তমান জ্ঞান বৃদ্ধি বা সংশোধনের নিমিত্তে পদ্ধতিগত অনুসন্ধানী প্রক্রিয়া। গবেষণার মাধ্যমে সত্যের অনুসন্ধান করা হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত সত্যকে না পাওয়া যায় ততক্ষণ পর্যন্ত অবিরাম এই খোঁজ চলতেই থাকে। সত্যকে জেনে সেই সত্যকে প্রকাশ করার সাহসিকতাই গবেষণা। সত্য খুঁজে না পেয়ে মিথ্যা বলা বা সত্য খুঁজে পেয়েও উদ্দেশ্যমূলকভাবে সত্যকে গোপন করে মিথ্যা প্রকাশ করা গবেষণা নয়। গবেষণার তিনটি ধাপ রয়েছে: প্রথমটি – প্রশ্ন উত্থাপন করা, দ্বিতীয়টি – প্রশ্নের উত্তর তথ্য সংগ্রহ, এবং তৃতীয়টি প্রশ্নের প্রাপ্ত উত্তরটি যথাযথভাবে উপস্থাপন করা। যেকোন গবেষণায় নতুনত্ব (novelty) থাকতেই হবে। অর্থাৎ ইতিপূর্বে মানবজাতির জানা ছিলোনা এমন সত্য আবিষ্কার এখানে থাকতেই হবে। নতুনত্ব (novelty) না থাকলে সেটাকে গবেষণা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া যায়না। গবেষণা হলো সেই নিয়মাবদ্ধ (systematic) পথ যেখানে চলে আমরা নিজেদেরকে শিক্ষিত করে তুলি।
ধর্মবিশ্বাস ও বিজ্ঞান উভয়ের মতেই এই জগৎের সর্বশেষ সন্তান হলো মানুষ। তাহলে জগতে যা ঘটার তার প্রায় সবটুকুই ঘটে গিয়েছে মানবজা্তির আগমনের আগে। একারণেই মানব জাতির জ্ঞানভান্ডার এত ক্ষুদ্র। জগৎ-সংসার সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করে মানুষ প্রথমে যেটা করতে পারে তা হলো ধারণা। কিন্তু ধারণার সাথে বাস্তবের মিল থাকবে এমন নিশ্চয়তা দেয়া অসম্ভব। বাস্তস সত্যটি কি এটা জানার একমাত্র পথটিই হলো গবেষণা। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল আমকে যাচাই করে দেবে সত্যের সাথে আমাদের ধারণার কতটুকু মিল বা অমিল আছে। একারণেই বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের বলেছেন, “সকল গবেষণাই হলো মানুষের ধারনার (idea) জগৎ ও প্রতিভাস (phenomena)-এর জগৎের মধ্যকার পার্থক্য (gap) কমিয়ে আনা।
মানবজীবনে গবেষণার গুরুত্ব:
মানবজীবনে গবেষণার গুরুত্ব কি বলার আগে আসুন আলোচনা করি মানব জীবনের উদ্দেশ্য কি? এই নিয়ে অনাদিকাল থেকেই দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা আলোচনা করে গেছেন ও যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে গেছেন। জ্ঞানগর্ভ আলোচনার সেই মহাসাগর সেঁচে যে দুটো মুক্তা তুলে আনা যায় তা হলো ১। মানবজীবনের দৈনন্দিন জীবনের আরাম-আয়েশগুলো বৃদ্ধি করা (অন্যকথায় মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর করা), ২। সৃষ্টির রহস্য উদঘাটন করা (জীবনের অর্থ খুঁজে বের করা)। এই মহান দুটি কর্তব্য সাধনে গবেষণার কোন বিকল্প নেই।
মনে করি কোন একটি এলাকায় কোন একটি অজানা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। মহামারীর আকার ধারণ করে তা বহু মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। আমাদের করণীয় কি? নিঃসন্দেহে এই ভয়াবহতার হাত থেকে সকলকে উদ্ধার করাই আমাদের কর্তব্য। এটা করতে হলে আমাদের প্রথমে রোগের কারণ খুঁজে বের করতে হবে, তারপর কি করে তা দমন করা যায় সেই উপায় আবিষ্কার করতে হবে। এই সব কিছু গবেষণা করেই করা সম্ভব। এক সময় আহত মানুষের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে তার গায়ে পশুর রক্ত দেয়া হতো, এতে রোগীর মৃত্যু হতো। তারপর মানুষের রক্ত দেয়া শুরু হলো। সেখানে দেখা গেলো কিছু মানুষ বেঁচে যায় আবার কিছু মানুষ মরে যায়। কেন? তবে আশার আলো দেখা গেলো যে কিছু মানুষ বেঁচে যাচ্ছে। অর্থাৎ মানুষের শরীরে মানুষের রক্ত দান করে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। এখন প্রয়োজন জানা যারা মারা যাচ্ছে তারা মারা যাচ্ছে কেন? অনেক অনুসন্ধানের পরে মানুষের ব্লাড গ্রুপ সম্পর্কে জানা গেলো । গবেষণার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। এই সেদিনও ডায়রিয়ায় গ্রামের পর গ্রাম নিস্চিহ্ন হয়ে যেত। কিন্তু বাঙালী ডাক্তারদের অক্লান্ত সাধনা গবেষনার ফলে আবিষ্কৃত ওরস্যালাইনের কল্যাণে আজ ডায়রিয়া জীবনবিনাশী কোন অসুখই নয়।
যেমন আমাদের রয়েছে বিদেশ নির্ভরতা ও স্বদেশ বিপর্যয়। কেন এই নির্ভরতা ও বিপর্যয়? পাশাপাশি এ’ থেকে উত্তরণের পথ কি? এইগুলো বুঝতে হলে ও উত্তরণ পেতে হলে প্রয়োজন যথাযথ গবেষণার। স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরেও আমরা বাংলাদেশীরা উন্নয়নের মুখ দেখতে পাচ্ছি না। অগ্রগতির ধারা অত্যন্ত শ্লথ। কেন? এটা বুঝতে হলেও প্রয়োজন গবেষনার। আবার অনেকে এর জন্য জাতীয় রাজনীতিকেই দায়ী করে থাকেন। সেক্ষেত্রে গতানুগতিক রাজনীতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে কি করে যুগপোযোগী রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা যায় সেটা আবিষ্কার করতে হলেও প্রয়োজন গবেষণার। এককথায় যেকোন সমস্যা formulate (সূত্রাকারে বা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা) করা, তার সমাধান খুঁজে বের করা ও তা প্রকাশ্যে উপস্থাপন করা এই পুরো পদ্ধতিটিই গবেষণা। গবেষণা ছাড়া উদ্ভুত যে কোন সমস্যা বোঝা যেমন সম্ভব না তেমনি তা সমাধান করাও সম্ভব না।
কি নিয়ে আলোচনা করে গবেষণা পদ্ধতিশাস্ত্রঃ
যে শাস্ত্র পাঠ করলে গবেষণা ও গবেষণা পদ্ধতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা যায় তাকেই গবেষণা পদ্ধতিশাস্ত্র বলে। গবেষণা যথেচ্ছভাবে করা যায়না, একটি নির্দিষ্ট নিয়মনীতি মনে তা করতে হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলতে পারি, চা তৈরী করতে গেলে চা পাতা, চিনি, পানি, কেতলি ও চুলা লাগে এটা আমরা জানি। এখন যদি আমরা চুলায় প্রথমে কেতলি রাখি, তারপর তা উত্তপ্ত হওয়ার পর সেখানে চায়ের পাতা ফেলি, তা পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পর চিনি দেই, চিনি গলে কটকটি হয়ে যাওয়ার পর সেখানে পানি ঢালি, তবে ঐ চা খাওয়ার যোগ্য হবে না। চা তৈরীর যথানিয়মে প্রথমে চুলায় কেতলি, তারপর পানি, পানি ফোটার পর চা পাতা ও চিনি দিয়ে প্রস্তুত করলেই পরিবেশনযোগ্য চা তৈরী হবে। অনুরূপভাবে যথানিয়মে গবেষণা করলেই গবেষণার ফলাফল পাওয়া যাবে ও প্রাপ্ত ফল মানবজাতির জন্য উপকারী হবে।
ছাত্র-ছাত্রীরা কেন গবেষণা পদ্ধতিশাস্ত্র অধ্যায়ন করবে?
ছাত্র-ছাত্রীরা কেন গবেষণা পদ্ধতিশাস্ত্র অধ্যায়ন করবে? – বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এমন প্রশ্ন দেখা দেয়না, কারণ স্কুল জীবন থেকেই গবেষণাগার দেখে তারা অভ্যস্ত। বিজ্ঞান ও গবেষণা এই দুটি শব্দ অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত এই ধারণা তাদের মধ্যে বদ্ধমূল। কিন্তু বাংলাদেশের মত দরিদ্র ও পশ্চাদপদ দেশে অ-বিজ্ঞান ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এমন প্রশ্ন ব্যপকভাবে প্রচলিত। তাদেরকে বলতে চাই সমস্যা নাই বা অজানা নাই এমন কোন জ্ঞানের শাখা আমাদের জগৎে নাই। সমস্যা থাকলেই তা সনাক্ত করা, তার কারণ ও সমাধান খুঁজে বের করা জরুরী, অন্যথায় সেই শাখার উন্নয়ন থমকে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞানের (বিজ্ঞান,অ-বিজ্ঞানযে কোন জ্ঞান) সর্বচ্চো বিদ্যাপিঠ, এর মূল উদ্দেশ্য দুইটি ১। জ্ঞান দান করা, ২। নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা। এই নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন গবেষণা। ব্যবসায় প্রশাসনের ছাত্র-ছাত্রীদের বলবো, অগ্র-পশ্চাৎ না ভেবে ব্যবসায় বিনিয়োগ করা সম্পুর্নই নির্বুদ্ধিতা। “উত্তম ব্যবসার সূত্রপাতই হয় উত্তম গবেষণার মধ্যে দিয়ে।” একারণেই গবেষণা পদ্ধতিশাস্ত্র অধ্যায়ন করা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অত্যন্ত জরুরী।
গবেষণা পদ্ধতিশাস্ত্র অধ্যায়নের পূর্বশর্তঃ
গবেষণা পদ্ধতিশাস্ত্র অধ্যায়নের আগে কয়েকটি বিষয়ে দখল থাকা জরুরী ১। দর্শন, ২। গণিত, ৩। পরিসংখ্যান, ৪। বিজ্ঞান ৫। ভাষাজ্ঞান
গবেষণা পদ্ধতিশাস্ত্র একাধারে দর্শন ও বিজ্ঞান:
বাংলা দর্শন শব্দটির ইংরেজী অনুবাদ Philosophy। ইউরোপীয় ভাষাগুলোতে এই শব্দটিই প্রচলিত আছে। দর্শন (philosophy) জ্ঞানের অন্যতম প্রাচীন একটি শাখা। ফিলোসফি শব্দটির প্রথম ব্যবহার করেছিলেন গ্রিক চিন্তাবিদ ও গণিতজ্ঞ পিথাগোরাস। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ অব্দের দিকে শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়। পিথাগোরাস নিজেকে প্রাজ্ঞ ভাবতেন না, বরং প্রজ্ঞার অনুরাগী ভাবতেন। তিনিই ফিলোসফি শব্দটি ব্যবহার করেন love ফোর wisdom তথা প্রজ্ঞার প্রতি অনুরাগ অর্থে। দর্শনের সংজ্ঞা হিসেবে এই বিষয়টিকেই গ্রহণ করা যায়। আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে দর্শন প্রজ্ঞার এমন একটি ধারা যা, মানুষের কিভাবে জীবন নির্বাহ করা উচিত (নীতিবিদ্যা); কোন ধরনের বস্তুর অস্তিত্ব রয়েছে এবং তাদের প্রকৃতি কি (অধিবিদ্যা); প্রকৃত জ্ঞান বলতে কোন জিনিসটিকে বোঝায় এবং কারণ প্রদর্শনের সঠিক নীতিগুলো কি কি (যুক্তিবিদ্যা); এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে।[২]
দর্শন শব্দটির ইংরেজি অনুবাদ philosophy । ফিলোসফি শব্দটি এসেছে প্রাচীন গ্রিক ভাষা থেকে। গ্রিক ভাষায় φιλοσοφία (philosophía) শব্দটি দুটি শব্দ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। শব্দ দুটি হল: φίλο (ফিলো: অনুরাগ, ভালোবাসা ) এবং σοφία (সোফিয়া: প্রজ্ঞা)। এ থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায়, দর্শনের সাথে মূল সম্পর্ক হচ্ছে প্রজ্ঞার, আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, প্রজ্ঞার প্রতি ভালোবাসার। জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা এক জিনিস নয়। ঘটনা ও তথ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ও নির্ভুল ধারণা থেকে জ্ঞান লাভ করা যায়, কিন্তু দার্শনিক (যিনি দর্শন চর্চা করেন তাকেই দার্শনিক বলা হয়) কেবল তথ্যগত জ্ঞানের উপর নির্ভর করেন না। দর্শনের প্রধান কাম্য বিষয় প্রজ্ঞা। প্রজ্ঞার অনুসন্ধান ও চর্চার মাধ্যমেই দর্শন বিকাশ লাভ করে। পিথাগোরাস সারা জীবন প্রজ্ঞার সাধনা করেছেন, কখনও জ্ঞানের গরিমা অনুভব করেননি। এজন্য তিনি দার্শনিক হিসেবে বিদগ্ধ। দর্শনের জন্য যে প্রজ্ঞা কাম্য তার মধ্যে রয়েছে, অন্তর্দৃষ্টি, দৃষ্টিভঙ্গির অভ্রান্ততা, বিচারের ভারসাম্য ও বিশ্লেষণের সামঞ্জস্য।
বিজ্ঞান (ইংরেজি: Science) হচ্ছে বিশ্বের যাবতীয় ভৌত বিষয়াবলী পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ, যাচাই, নিয়মসিদ্ধ, বিধিবদ্ধ ও গবেষণালদ্ধ পদ্ধতি যা জ্ঞানকে তৈরিপূর্বক সুসংগঠিত করার কেন্দ্রস্থল। ল্যাটিন শব্দ সায়েনটিয়া থেকে ইংরেজি সায়েন্স শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে জ্ঞান। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান শব্দটির অর্থ বিশেষ জ্ঞান। ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার ফলে কোন বিষয়ে প্রাপ্ত ব্যাপক ও বিশেষ জ্ঞানের সাথে জড়িত ব্যক্তি বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানবিদ কিংবা বৈজ্ঞানিক নামে পরিচিত হয়ে থাকেন।
সকল বিজ্ঞানই জ্ঞান কিন্তু সকল জ্ঞানই বিজ্ঞান নয়। বিজ্ঞান হলো বিশেষ জ্ঞান, বিশেষত্বটি কোথায়? বিজ্ঞানের জ্ঞানটি হলো সেই জ্ঞান যা ‘মেথড অব ইনভেস্টিগেশন’ নামক একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে অর্জিত। তথা জ্ঞানটি পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণিত। বিজ্ঞান প্রমাণ ছাড়া কোন কিছু গ্রহন করেনা।
গবেষণা পদ্ধতিশাস্ত্রে একদিকে যেমন রয়েছে প্রজ্ঞার প্রতি অনুরাগ রেখে গভীর দৃষ্টিকোন থেকে গবেষণার টপিকটি বোঝা, জানা ও অপরকে জানানো। আবার রয়েছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ব্যখ্যা বিশ্লেষণ পূর্বক প্রমাণ সহ তা উপস্থাপন করা। এই হিসাবে গবেষণা পদ্ধতিশাস্ত্র একাধারে দর্শন ও বিজ্ঞান।
গবেষণায় দর্শনের গুরুত্বঃ
পূর্বেই বলেছিগবেষণা পদ্ধতিশাস্ত্রে রয়েছে প্রজ্ঞার প্রতি অনুরাগ রেখে গভীর দৃষ্টিকোন থেকে গবেষণার টপিকটি বোঝা, জানা ও অপরকে জানানো। প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে চাই গবেষণা উত্তর প্রাপ্ত একটি বড় ডিগ্রীর নাম PhD বা Doctor of Philosophy । অর্থাৎ সেখানে গবেষক উল্লেখ করছেন What is his philosophy।
গবেষণায় বিজ্ঞানের গুরুত্বঃ
পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে লদ্ধ সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ জ্ঞানই হলো বিজ্ঞান। প্রাচীনকালে বিজ্ঞানে পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণের বিষয়টি বাধ্যতামূলকভাবে ছিলোনা। এটি প্রবর্তনের পুরো কৃতিত্বই মুসলিম বিজ্ঞানীদের। Islamic Golden Age -এ এটা প্রবর্তিত হয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন আল হাইয়াম (Al Hazen), আল বিরুনী, ইবনে সিনা, ওমর খৈয়ামের মত পলিম্যাথরা। মুসলিম বিজ্ঞানীদের পথ অনুসরণ করে ষোড়শ শতাব্দিতে ইউরোপে একটি মেথড চালু করেন Galileo Gallelei। এই মেথডের নাম Method of Investigation। মেথডটি নিম্নরূপ ১। পর্যবেক্ষণ (observation), ২। বৈজ্ঞানিক অনুমান (hypothesis), ৩। আইন/তত্ত্ব (law/theory), ৪। যাচাই (verification) ।
অর্থাৎ কোন একটি প্রাকৃতিক প্রতিভাস (Natural Phenomenon) প্রথমে পর্যবেক্ষণ করা হবে। উদাহরণ স্বরূপ নিলাম যে একটি হাতে ধরা পেন্সিল ছেড়ে দিলাম, আমি পর্যবেক্ষণ করলাম যে পেন্সিলটি নিচে পড়ে যায়। এখন মনে প্রশ্ন জাগলো যে, কেন পেন্সিলটি পড়ে গেল। এরপর আসে বৈজ্ঞানিক অনুমান (hypothesis), আমি মনে মনে একটি ব্যখ্যা অনুমান করলাম যে, পেন্সিলটি যেহেতু উপরে গেলনা, বা সামনে পিছনে ডানে বায়ে কোনদিকেই গেলনা, গেলো কেবল নিচের দিকে তাহলে পতনের কারণটি নিচেই কোথাও আছে। এর পরবর্তি ধাপ আইন/তত্ত্ব, সেই অনুযায়ী গবেষক তত্ত্ব তৈরী করতে পারে যে, নিচের পৃথিবী যে কোন অবজেক্টকে তার দিকে টানে। অনুরূপ একটি আইনও তৈরী করা যেতে পারে (স্যার আইজাক নিউটন ও রবার্ট হুক মহাকর্ষ আইন নামে এই আইন অনেক আগেই প্রতিষ্ঠা করেছেন)। ব্যাস অনেক সাবজেক্টই এই তৃতীয় ধাপটিতে এসে থেমে যায়। কিন্তু বিজ্ঞান এখানে থেমে থাকেনা। চতুর্থ অর্থাৎ যাচাই (verification) ধাপটিও বিজ্ঞানের জন্য বাধ্যতামূলক। আইনটি/তত্ত্বটি পরীক্ষার দ্বারা ১০০% প্রমাণিত হতে হবে। যদি তা না হয় তবে তাকে বিজ্ঞান বলা যাবেনা, আর যদি প্রমাণিত হয় তখন সেই জ্ঞানটি বিজ্ঞান। এবার বিজ্ঞান হিসাবে তার প্রচার-প্রসার করা যাবে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
গবেষণায় গণিতের গুরুত্বঃ
রাশিয়ার সাথে মহাকাশযুদ্ধে একের পর এক পরাজয়ের পর আমেরিকার বিজ্ঞানে ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশাল পরিবর্তন আসলো। এ প্রসঙ্গে চমস্কি বলেছেনঃ
“এই বিশাল পরিবর্তন ঘটলো অনেকটা ১৯৬০ সালের দিকে দেশে বিজ্ঞান ও গণিতে শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনের কারণে। স্পুটনিক স্ফুলিঙ্গের মতো কাজ করে যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বিজ্ঞান ও গণিত শিক্ষায় বেশ পরিমাণ সম্পৃক্ততার সৃষ্টি হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই এম, আই, টি-তে এমন সব ছাত্র আসতে শুরু করলো যারা অনেক বেশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এই সময়েই এম, আই, টি-তে পরিবর্তনের হাওয়া লাগে। চিরায়ত প্রকৌশল শিক্ষাব্যবস্থার অবক্ষয় শুরু হয়ে গেলো। যে প্রকৌশল বিভাগগুলো পিছনে পড়ে ছিলো তারা সাধারণত বিজ্ঞানশিক্ষাসূচীকে হুবুহু নকল করা শুরু করলো। সুতরাং বিদ্যুৎ প্রকৌশল বিভাগে আপনি কিভাবে বিদ্যুৎবর্তনী একত্র করতে হয় তা আর শিখবেন না, আপনি শিখবেন প্রয়োজনীয় পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিত যা পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিত বিভাগে শিখানো হয় তার থেকে খুব আলাদা নয়। একই কথা সত্য বিমান চালনা ও যন্ত্রকৌশল সম্পর্কেও। এটা তাই একটা বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেলো, প্রকৌশলভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় আর নয়।”
গণিত নিঃসন্দেহে বিজ্ঞান তবে গণিতের জন্ম প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের জন্মের অনেক আগে। এই কারণে গণিতকে অনেকে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞান বলে। ঐ দৃষ্টিকোণে গণিত হল আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞান আর প্রাকৃতিক বিজ্ঞান হল পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞান। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সাথে গণিতের মিল-অমিল উভয়ই রয়েছে। গণিত একদিক থেকে পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে, উভয়টিই একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে পদ্ধতিগত অধ্যয়ন করে। আর পার্থক্য হচ্ছে, পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানে পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণ করা হলেও গণিতে কোন কিছু প্রতিপাদন করা হয় আগের একটি সূত্রের (প্রায়োরি) উপর নির্ভর করে। এই আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞান, যার মধ্যে পরিসংখ্যান এবং যুক্তিবিদ্যাও পড়ে, অনেক সময়ই পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানে উন্নতি করতে হলে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞানের প্রসার আবশ্যক। কিভাবে কোন কিছু কাজ করে (প্রাকৃতিক বিজ্ঞান) তা বুঝতে হলে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞানের কাছে হাত পাতা ছাড়া উপায় নেই। ব্যবসা সংক্রান্ত গবেষণায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে () গণিতের কোন বিকল্প নেই। এ কারণে গবেষণায় গণিতের গুরুত্ব অপরিসীম।
বিজ্ঞান একটি প্রস্তাবিত মডেল নিয়ে কাজ করে। এই মডেলটি হতে পারে সিমুলেশন, গাণিতিক বা রাসায়নিক সূত্র । বিজ্ঞান এবং গণিত উভয়েই মডেল, অভ্যন্তরীণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে এবং falsifiable (disproof করতে সক্ষম) হতে হবে । গণিতে, একটি বিবৃতি () প্রমাণিত নাও হতে পারে, সেই পর্যায়ে তাকে বলা হয় অনুমান (); কিন্ত যখনই বিবৃতিটি প্রমাণিত হবে তখনই তা অমরত্ব পাবে। কিছু কিছু গণিতবিদ এই কাজে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন।
গাণিতিক কাজ এবং বৈজ্ঞানিক কাজ একে অপরকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সময়ের প্রযুক্তিগত ধারণা বিজ্ঞানে উদ্ভুত হয়েছিলো, এবং সময়হীনতা (timelessness) ছিলএকটি গাণিতিক বিষয়। কিন্তু আজ, Poincaré conjecture প্রমাণিত হয়েছে সময়কে গাণিতিক ধারণা হিসাবে ব্যবহার করে।
গাণিতিক পদ্ধতি ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান পদ্ধতি দ্বয়ের মধ্যে মিল-অমিল নিচের টেবিলে দেখানো হলো।
Mathematical method
১। বোঝা (Understanding)
২। বিশ্লেষণ (Analysis)
৩। সংশ্লেষ (Synthesis)
৪। (পর্যালোচনা / প্রসারিত করা)
Review/Extend
Scientific method
১। অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ থেকে চরিত্রায়ন (Characterization from experience and observation)
২। হাইপোথিসিস: প্রস্তাবিত ব্যাখ্যা (Hypothesis: a proposed explanation)
৩। সিদ্ধান্তগ্রহণ: হাইপোথিসিস থেকে ভবিষ্যদ্বাণী (Deduction: prediction from the hypothesis)
৪। টেস্ট এবং পরীক্ষা (Test and experiment)
গবেষণায় পরিসংখ্যানের গুরুত্বঃ
পরিসংখ্যান হলো সেই বিজ্ঞান যে অনিশ্চয়তার জগৎে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। আমরা বসবাসই করি মোটামুটিভাবে অনিশ্চয়তার জগৎে। আর ভবিষ্যৎ পুরোটাই অনিশ্চিত। অথচ নিয়তি এমনই যে আমরা প্রতিনিয়ত ভবিষ্যৎের দিকেই এগিয়ে চলছি। তাই এই যেকোন গবেষণার ভবিষ্যদ্বাণীতে পরিসংখ্যানের কোন বিকল্প নেই।
উপাত্ত সংগ্রহ, তার বিন্যাস ও উপস্থাপন ছাড়া গবেষণা করা সম্ভব না। আবার যেকোন হাইপোথিসিস তৈরি করে তা আবার টেস্ট করাও প্রয়োজন। এ’সবই পরিসংখ্যান। তদুপরি গবেষণার একটি শর্ত হলো বর্ণনা। বর্ণনা কোন একটি বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে সাহায্য করে। এই বর্ণনার ক্ষেত্রে বর্ণনামূলক পরিসংখ্যান (Descriptive Statistics) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গবেষণা পদ্ধতিশাস্ত্রের ইতিহাসঃ
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বিকাশের ইতিহাস ও বিজ্ঞানের ইতিহাস অবিচ্ছেদ্য। প্রাচীন মিশরীয় নথি ঘেটে জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত ও চিকিৎসা শাস্ত্রে প্রায়োগিক পদ্ধতির ব্যব হারের বর্ণনা পাওয়া যায়। খ্রীষ্টপূর্ব ৭ম শতাব্দীর , ব্যবিলনের রাজা Nebuchadnezzar একটি ইহুদি বন্দী ছিলো ড্যানিয়েল নামে। তিনি একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা সম্পন্ন করেছিলেন, যেখানে ছিলো হাইপোথিসিস , একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ (control group), একটি প্রয়োগ দল (treatment group), এবং একটি উপসংহার। পরীক্ষা শেষে ড্যানিয়েল এর অনুমান সত্য প্রমাণিত হয়।
খ্রীষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক থালেস (thales)প্রাকৃতিক ঘটনাবলি ( natural phenomena)র ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃত ধর্মীয় বা পৌরাণিক ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। দার্শনিক প্লেটো কর্তৃক বিকশিত deductive reasoning ছিলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি (scientific method) প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। যতদূর জানা যায় অভিজ্ঞতালদ্ধতা (Empiricism) অ্যারিস্টট্ল দ্বারা প্রাথমিকভাবে বিধিবদ্ধ হয়েছে। অ্যারিস্টট্ল বিশ্বাস করতেন যে, ধ্রুব সত্য (universal truth) কেবল মাত্র induction-এর মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। তবে সত্যিকার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বিকাশের ক্ষেত্রে অ্যারিস্টট্লকে কৃতিত্ব দেয়া যাবেনা। উনার লিখিত “On the Heavens” এবং “Physics”-এ সংশোধনযোগ্য ত্রুটি ছিলো।
গাণিতিক গবেষণায় ভারত উপমহাদেশের আর্যভট্ট, বরাহমিহির, ব্রহ্মগুপ্ত, ভাষ্কর ও শ্রীধরের নাম উল্লেখযোগ্য।
৬১০ খ্রীষ্টাব্দে নবীজি (সঃ)-র নবুওত প্রাপ্তির সাথে সাথে শুরু হয় ইসলামের স্বর্ণযুগ (Islamic Golden Age)। ইসলামিক ডক্ট্রাইনে প্রভাবিত ও উৎসাহিত হয়ে মুসলমানরা শুরু করে নতুন ধারার জ্ঞান চর্চা। সারা পৃথিবীর জ্ঞান সংগ্রহ করে তারা তা বিকশিত করতে শুরু করে। খ্যাতিমান মুসলিম দার্শনিক ও বিজ্ঞানী আল হাইয়াম (Alhazen) আলোকবিজ্ঞান ও শরীরবিজ্ঞান নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। আলোকবিজ্ঞান সংক্রান্ত তার বিখ্যাত গ্রন্থের নাম অপটিক্স (Optics ), যা ১০২১ সালে রচিত। এইভাবে তিনিই হয়ে ওঠেন বৈজ্ঞানিক মেথড (scientific method)-এর পথপ্রদর্শক। তিনি বুঝতে পারেন যে পরীক্ষা এবং পরিমাপের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের প্রয়োজন আছে, যা একটি উচ্চমান সম্পন্ন উপসংহারে পৌছাতে সাহায্য করবে। কোন তত্ত্বকে পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণে (empirically)-র বিষয়টি মুসলিম বিজ্ঞানীরাই প্রথম চালু করেন। এর ফলে অতীতের অনেক তত্ত্বই বাতিল হয়ে যায়। একই যুগের অন্যান্য মুসলিম polymathগণ গণিত, দর্শন, জ্যোতির্বিদ্যা ও রসায়ন ও জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অভূতপূর্ব অবদান রাখেন। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য নামগুলো হলো আল বিরুণী, আল খাওয়ারিজিমী, ওমর খৈয়াম, আল কিন্দি, ইবনে সিনা, তকি আল দ্বীন, ইবনে সাহিল, আল তুসি, প্রমূখ।
এর আরও কয়েক শতাব্দী পরে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ইউরোপের রজার বেকন, রেঁনে দেকার্ত, গ্যালিলিও, ও ফ্রান্সিস বেকনের নাম উল্লেখযোগ্য। বিজ্ঞান ও গবেষণায় নব্যযুগের সূচনা হয় স্যার আইজাক নিউটনের পদার্থবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে।
গবেষকের মূল্যায়নঃ
শিক্ষকদের অবহেলা করে যেমন শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব নয়, তেমনি গবেষকের মূল্যায়ন না করে গবেষণা সম্ভব নয়। মনে রাখতে হবে যে, যথেষ্ট মেধা ছাড়া গবেষণা করা অসম্ভব। যে দেশ বা প্রতিষ্ঠান গবেষণা করতে চাইবে তাকে পর্যাপ্ত নজর দিতে হবে গবেষকের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করনে। কেবলমাত্র তখনই মেধাবীরা এই পেশায় আসতে উৎসাহী হবে। পাশাপাশি একজন গবেষককে আরও যা দিতে হবে, তা হলো
১। গবেষকের অবাধ স্বাধীনতা, ২। সতীর্থ বিজ্ঞানীদের সাথে নিবীড় সম্পর্ক (cross-functional team work), ৩। বিজ্ঞান শিক্ষা ও গণিত শিক্ষার গভীর সম্পৃক্ততা (the power of mathematics and natural science).
উল্লেখ্য যে, উন্নত সবগুলো দেশই তার নিজ দেশ তো বটেই উপরন্তু পৃথিবীর সব দেশ থেকেই মেধাবী গবেষকদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের দেশে টেনে আনে।
বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন দেশে গবেষণাঃ
একটা কথা প্রচলিত আছে, ‘বুদ্ধিমান ব্যক্তি সেই যে নিজের লিমিটেশন বোঝে।’ অনুরূপভাবে বলবো বুদ্ধিমান দেশ সেই যে গবেষণার গুরুত্ব বোঝে। উন্নত যেকোন দেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই দেখা যাবে যখনই দেশটি গবেষণায় ব্যাপক মনযোগ দিয়েছে তখনই ঐ দেশটি তরতর করে উপরে উঠে গিয়েছে। উন্নত সবগুলো দেশই গবেষণা ও গবেষকের যথাযথ মূল্যায়ন করে থাকে। গএকথা সত্য যে এক্ষেত্রে কোন কোন দেশ ফলিত গবেষণায় (applied research) অধিক গুরুত্ব দেয়, কোন কোন দেশ মৌলিক গবেষণায় (basic research) অধিক গুরুত্ব দেয়, আবার কোন কোন দেশ যে কোন প্রকার গবেষণাকেই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে (যেমন রাশিয়া, জার্মানী, জাপান)। গবেষণায় যে সকল রাষ্ট্র বিপুল অর্থ ব্যায় করে থাকে এমন টপ টেন রাষ্ট্রের তালিকা নিচে দেয়া হলো।
(Expenditure in billion USD)
1 United States 405.3 2.7% 2011 [2]
2 China 296.8 1.97% 2012 [3]
3 Japan 160.3 3.67% 2011 [4]
4 Germany 69.5 2.3% 2011 [2]
5 South Korea 55.8 3.74% 2011 [4]
6 France 42.2 1.9% 2011 [2]
7 United Kingdom 38.4 1.7% 2011 [2]
8 India 36.1 0.9% 2011 [2]
9 Canada 24.3 1.8% 2011 [2] 1
0 Russia 23.8n1 1.0% 2011
এমন ৭২টি দেশের তালিকায় ভারত ও পাকিস্তানের নাম থাকলেও বাংলাদেশের নাম নেই।
উপসংহারঃ
উপসংহারে বলবো যে, গবেষণার উদ্দেশ্য প্রকৃত সত্য উদঘাটন। সেই গবেষণা সব সময়ই হতে হবে উচ্চমান সম্পন্ন ও উপকারী। একটি সার্থক গবেষণা কেবলমাত্র তখনই সম্ভব যখন গবেষণা পদ্ধতি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান থাকবে। গবেষণা পদ্ধতিশাস্ত্রই এই পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান দিতে সক্ষম।
গবেষণা সংক্রান্ত আপনার লেখা মন্তব্য হিসাবে পেয়ে আমার মনে হয়েছে মেঘ না চাইতে বৃস্টি। এই লেখা পরে মনে হয়েছে সম্ভবত এর লেখক এটা সধারন পাঠকের জন্য লিখেছে, কোন গবেষকের জন্য নয়। এই লেখা পরে যদি কেউ গবেষণা শুরু করে তবে, সে যে বিপদে পরবে তাতে কোন ভুল নাই। এই লেখাতে একজন গবেষণা শুরু করার পূর্বে যে, Key point গুল অবশ্যই জানবে তার কোন উল্লেখ নেই বা আলোচনা করে নাই।
যেমন সে তার লেখাতে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ গবেষণায় র্যাংকিং এর দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে। তার এই লেখে পড়ে এখন আমার মনে হছে যে, হয়ত বাংলাদেশে গবেষকদের মধ্যে অনেকেই হয়ত জানে না যে, নতুন কোন কিছু আবিষ্কার করার পর, কীভাবে সেটা নিজের বলে স্বীকৃত পতে হয় (প্যাটান রাইট প্রটেকশন)। ফলে হয়ত তার আবিষ্কার বিশ্বের অন্য কোন গবেষক জেনে এবং সে সেটা নিজের গবেষণা লব্ধ কাজ বল বিশ্ব স্বীকৃত পাছে। ফলে গবেষক বঞ্চিত হওয়ার সাথে সাথে বঞ্চিত দেশ।
গবেষণা সংক্রান্ত আপনার লেখা মন্তব্য হিসাবে পেয়ে আমার মনে হয়েছে মেঘ না চাইতে বৃস্টি। এই লেখা পরে মনে হয়েছে সম্ভবত এর লেখক এটা সধারন পাঠকের জন্য লিখেছে, কোন গবেষকের জন্য নয়। এই লেখা পরে যদি কেউ গবেষণা শুরু করে তবে, সে যে বিপদে পরবে তাতে কোন ভুল নাই। এই লেখাতে একজন গবেষণা শুরু করার পূর্বে যে, Key point গুল অবশ্যই জানবে তার কোন উল্লেখ নেই বা আলোচনা করে নাই।
যেমন সে তার লেখাতে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ গবেষণায় র্যাংকিং এর দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে। তার এই লেখে পড়ে এখন আমার মনে হছে যে, হয়ত বাংলাদেশে গবেষকদের মধ্যে অনেকেই হয়ত জানে না যে, নতুন কোন কিছু আবিষ্কার করার পর, কীভাবে সেটা নিজের বলে স্বীকৃত পতে হয় (প্যাটান রাইট প্রটেকশন)। ফলে হয়ত তার আবিষ্কার বিশ্বের অন্য কোন গবেষক জেনে এবং সে সেটা নিজের গবেষণা লব্ধ কাজ বল বিশ্ব স্বীকৃত পাছে। ফলে গবেষক বঞ্চিত হওয়ার সাথে সাথে বঞ্চিত দেশ।
আমি কারো কাছ থেকে লেখালেখি করার জন্য টাকা পাই না । উপরন্তু পড়াশোনা ও গবেষণাধর্মী লেখা লেখার জন্য প্রতি মাসে বই কিনতে আমার অনেক টাকা খরচ হয় ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন