জামায়াত - শিবিরের শক্তির উৎস কি ? পর্ব - ১
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ০৮ নভেম্বর, ২০১৪, ০১:০৫:৪৫ রাত
জামায়াতের শক্তির উৎস সম্পর্কে আমরা বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকরা তেমন কিছুই জানি না । এটা ইসলামের ইতিহাসের প্রাথমিক যুগের গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়েরই মতো । আমরা জানি না কেন জামায়াত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে শক্তিশালী । আজ ফেসবুকে এই ব্যাপারে একটা স্যাটাস লিখলাম । তা আজ এই ব্লগে শেয়ার করছি ।
সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে জামায়াতের অবস্হান মজবুত হওয়ার কারণ :
সীমান্তবর্তী ৩১টি জেলাতে অন্যান্য অঞ্চলের তুলনার জামায়াত -শিবিরের জনসমর্থন বেশি । এর অনেক কারণ আছে । যেমন :
১. সীমান্তবর্তী ৩১টি জেলা দেশের দুরবর্তী স্হান হওয়ায় সরকার গুরুত্ব দিতে পারে না ।
২. সীমান্তবর্তী জেলা দুরবর্তী স্হান হওয়ায় উন্নায়ন কম হয় । উন্নায়ন কম যেখানে হয় সেখানে বিরোধী দল শক্তিশালী থাকে । যেমন : মালয়েশিয়া । এর তেরেঙ্গানু ও কেদাহ প্রদেশ থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী । অন্য অঞ্চল হতে কম উন্নত । এসব এলাকায় মালয়েশিয়ার ইসলামপন্হী রাজনৈতিক দল শক্তিশালী ও এই দল কয়েক দশক ধরে এই এলাকা শাসন করছে ।
৩. দেশের সীমান্তবর্তী ও দরিদ্র এলাকা হওয়ায় মানুষকে প্রভাবিত করা সহজ । আর জামায়াতও বিদেশ হতে টাকা এনে নাম মাত্র উন্নায়ন প্রকল্প চালু করে মানুষের মগজ দোলাই করছে ।
জামায়াতী ড্রেস কোড অনুযায়ী পোষাক পড়া জামায়াতের মহিলা কর্মীদের একাংশ
৪, সীমান্তবর্তী অনেক এলাকায় আহলে হাদিস বা ওহাবী মতবাদে বিশ্বাসী লোক বেশী । যেমন : চাপাইনবাবগঞ্জ, নওগা, ঠাকুরগাও ও রাজশাহী । এই মতবাদ মওদুদী মতবাদ-এর অনুরূপ । জামায়াত মওদুদ মতবাদ দ্বারা পরিচালিত হয় ।
৫. সীমান্তবর্তী অনেক জেলার লোকদের বড় অংশ গোড়া ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধার্মিক । এই কারণেও সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে জামায়াত শক্তিশালী ।
৬. জামায়াত বাংলাদেশকে দখল করার জন্য দুর্গম সীমান্তবর্তী এলাকাকে বেছে নিয়েছে । যেমন : সাতক্ষীরা । জামায়াত এই জেলায় দুই দশক ধরে রাজত্ব করছে । এই জেলার আওয়ামী লীগে ভোট দেওয়া লোকরাও জামায়াত করে । কারণ জামায়াত না করলে তারা না খেয়ে মারা যাবে । এই জেলার অর্থনীতি পুরাটাই জামায়াত দখল করে নিয়েছে । সাতক্ষীরার মতো দুর্গম জেলাকে জামায়াত দখল করে পর্যায়ক্রমে তালেবানী স্টাইলে বাংলাদেশটা দখল করতে পারবে ।
মওদুদী মত অনুযায়ী এমন স্হানকে দারুল আমান বলা হয় । দারুল আমান মূলত জিহাদ করার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত । জামায়াত যেহেতু জিহাদী বা সন্ত্রাসী নীতির মাধ্যমে দেশ দখল করে মওদুদী মতবাদ প্রচার ও প্রসার করতে চায় – এজন্য জামায়াত সীমান্তের দুর্গম জেলাগুলোকে বেছে নিয়েছে । শোনা যায়, এবার সাইদীকে চাদে দেখার পর জামায়াত-শিবিরকে এক হাত দেখানোর জন্য ভারত হতে সরকার সৈন্য সংগ্রহ করেছিল । তারপরও এই জেলা হতে জামায়াতকে সমূলে উৎপাটন করা যায়নি ।
বাংলাদেশী মুসলিম মেয়েদের পোষাক পড়ার ধরণ যাতে আছে নিজস্ত সংস্কৃতি ও ধর্মের নীতিমালার সম্মিশ্রন
৭. সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে চোরাচালান ও অবৈধ অর্থ লেনদেন হয় । জামায়াত যেহেতু মওদুদী মতবাদে বিশ্বাস করে সেহেতু চোরাচালান ও অবৈধ অর্থ লেনদেন করা জায়েজ বলে জামায়াত – শিবির বিশ্বাস করে । কারণ এতে সংগঠণ শক্তিশালী হবে ।
http://www.youtube.com/watch?v=8TBesWLI604
জামায়াতী গান বা ওহাবী সংগীত বা সালাফী গান
৮. সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজার ও বান্দরবানে জামায়াতের প্রভাব রয়েছে । কারণ সেখানে নির্যাতিত রোহিঙ্গা জাতির মুসলিমরা জামায়াতকে সাহায্য করে । জামায়াত তাদের অবৈধভাবে বাংলাদেশী বানিয়ে ভোট ব্যাংক তেরী করেছে ।
http://www.youtube.com/watch?v=b5hlO6YC7g4
বাংলাদেশী মুসলিমদের গান যাতে আছে ধার্মিকতা ও সংস্কৃতি
http://www.youtube.com/watch?v=2imrWCIeI2Y
বাংলাদেশী মুসলিমদের গান যাতে আছে ধার্মিকতা ও সংস্কৃতি
৯. সীমান্তবর্তী প্রতিটা জেলার আশে পাশে ভারতের সন্ত্রাসী , স্বাধীনতাকামী সংগঠণ, চোরাকারবারী ও বিরোধী দলগুলো শক্তিশালী । ভারতের এসব গোষ্ঠী তাদের নিজেদের স্বার্থে জামায়াতকে পরীক্ষিত বন্ধু মনে করে । যেমন : তৃণমূল কংগ্রেস , কমিউনিস্ট পার্টী অব ইন্ডিয়া, ত্রিপুরা, কামতাপুর লিবারেশন আর্মী, জামায়াতে ইসলামী হিন্দ, উলফা, দার্জিলিং মুক্তি মোর্চা .... ইত্যাদি ।
ভারতের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রায় সব মুসলিম নেতা জামায়াতে ইসলামী হিন্দের নেতা । এটা মূলত জামায়াতে ইসলামী ভারতীয় অংশ । তৃণমূল কংগ্রেসের জামায়াত নেতা ইমরান আহমেদ জামায়াতকে বাচানোর জন্য ভারতের নকশালপন্হি কমিউনিস্টদের সাথে মিলে অবৈধ অর্থ বাংলাদেশে পাঠান বলে আমরা জেনেছি । এজন্য ভারত ও বাংলাদেশ সরকার চিন্তিত ।
উপসংহার :
কাউকে বা কোন গোষ্ঠীকে হেও করা আমার উদ্দেশ্য নয় । আমি আমার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরলাম মাত্র ।
আমি মনে করি, বাংলাদেশের প্রতিটা রাজনৈতিক দলের উচিত স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্নভাবে রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালানো ও তাদের উচিত বাংলাদেশের জনগণের প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসকে শ্রদ্ধা করা । কারণ বাংলাদেশের মানুষ ধার্মীকতা পছন্দ করে । কিন্তু তারা উগ্র ও যুদ্ধাংদেহী কোন মতবাদকে মনে প্রাণে কখনোই গ্রহণ করেনি । কিন্তু সীমান্তবর্তী জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নাগরিক এর ব্যতিক্রম ।
জামায়াতের অতীত কার্যক্রমও প্রশ্নবিদ্ধ ও নিন্দনীয় । বিশেষ করে ১৯৭১ সালে জামায়াতের বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধীতার প্রসঙ্গটি ।
জামায়াত-শিবিরের লোকদের সংস্কৃতি ও ধর্ম বিশ্বাসের সাথে বাংলাদেশের সাধারণ মুসলিমদের সংস্কৃতি ও ধর্ম বিশ্বাসের পার্থক্য রয়েছে । এই পার্থক্যের কারণে জামায়াত - শিবির কখনোই সফল হতে পারবে না ।
আমি মনে করি, সরকার ও বিজ্ঞজনদের কর্ম তৎপড়তাই এই অবস্হাকে পরিবর্তন করতে পারে ।
বিষয়: বিবিধ
২৬৬৩ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কাউকে হেয় করা না করা আল্লাহর কাজ তবে নিজেকে হেয় করা যার যার কাজ৷
সিলেটের জকিগন্জ-কানাইঘাট থেকে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই এলাকায় মাদ্রাসার সংখ্যা বেশি। এছাড়া ফরিদ সাহেবের ব্যক্তি ইমেজ ও ভাল। এই একটি এলাকা ছাড়া বৃহত্তর সিলেট থেকে জামায়াত কোন সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানেও আসতে পারেনি। আর জামায়াত শক্তিশালী হলেও সেটা দোষনীয় নয়। এ কারণে আপনি একটি জেলার বেশিরভাগ মানুষকে গোড়া ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধার্মিক বলতে পারেন না। এটা অশালীন এবং অশোভন। আপনার বক্তব্যের প্রতিবাদ করছি।
আমি এক সময় শিবির করতাম । ঢাকায় শিবিরের অনেক দায়িত্বশীল ছিল সিলেট জেলার । তাদের ধার্মিকতাও ছিল চোখে পড়ার মতো । আর কুসংস্কার ও গোড়ামীও কম ছিল না ।
যেহেতু আমি আমার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছি মাত্র । এতে আপনাদের মনক্ষুন্ন হওয়ার কারণ আমি দেখছি না ।
আমার দাদুর বাড়ি কুমিল্লা । এজন্য আমাদের প্রায়ই আজে বাজে কথা শুনতে হয় । কারণ :
১. ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি তোলন ।
২. ফারুক-রশীদ-ডালিম ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাষ্ট কাল রাত্রীর জন্ম দেন ।
৩. খন্দকার মোশতাক আহমদ ১৫ অগাষ্ট ১৯৭৫ সালের পর রাষ্ট্রপতি হন ।
তারা সবাই ছিলেন কুমিল্লার ।
সব জায়গাতেই ভাল খারাপ লোক আছে । ভাল মন্দ মিলেই মানুষ ।
বিষয়টা এভাবে দেখলেই তো হয় ।
সিলেট জেলা শহরের চার ভাগরে এক ভাগ ছেলে শিবির করতো । এটা ১৯৯৫ সালে আমার করা পরিসংখ্যান । আর এসব শিবির ধনী লোকের ছেলে । সুতরাং আমি বলতেই পারি - সিলেটে জামায়াত - শিবির শক্তিশালী ।
এবার মেয়র নির্বাচনে শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে মনোনায়ন দিলে তিনি ৭০ % ভোট পেয়ে নির্বাচিত হতেন । কিন্তু বাস্তব অবস্হা হলো শিবির জামায়াতের নেতাদের বলির পাঠা হয়েই থাকবে ।
৯৫ সালে আপনি যাদের কথা বলছেন তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন ছাত্রাবাস-মেসে অবস্থান করা মফস্বল থেকে আগত ছাত্র, যারা শিবিরের বিভিন্ন পৃষ্ট-পোষকতা পেয়ে আসছিল। এরা স্থানীয় নয়। আর বিএনপি জামায়াত জোট যাকে মনোনয়ন দিয়েছে তিনিই পাশ করেছেন মেয়র নির্বাচনে সিলেট সদর থেকে। এখানে কথা বলার কোন অবকাশ নেই।
আমার পর্যবেক্ষণ অন্ধের মতো হাতি দেখার মতো ছিল না ।
আমি কাউকে অসম্মান করি নাই । সাইদী সাহেব এক বার সিলেটের লোকদের নিয়ে মন্তব্য করে বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছিলেন । যাক আমি সেই প্রসঙ্গে যাব না ।
সিলেট আজও অনুন্নত । অন্য সব এলাকার চেয়ে সাক্ষরতা আর দারিদ্রতা দিক দিয়ে সুবিধাজনক অবস্হায় নেই ।
এসব তথ্যও মনে হয় অসম্মানজনক !!!
বিএনপি জামাত জোটরের ধরণ আর শিবিরের ছাত্রাবাস-মেস নিয়ে আমি বেশ কয়েকটা লেখা দিবো । সেখানে সিলেটের লোকদের উপর তথ্য থাকবে । সেগুলো পড়ার জন্য অগ্রীম দাওয়াত আপনাকে দেওয়া হল ।
আশা করি আমার সাথেই থাকবেন ।
আমার পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।
দূর্গম বলতে কি বুঝালেন? গাড়ি চলেনা নাকি মাইলের পর মাইল হাটতে হয়?
কমেন্ট দেখলাম আপনি ছাত্রশিবিরের কর্মী ছিলেন বলেছেন। ঠিকই আছে তা না হলে... জগাখিচুড়ি চিন্তাভাবনা এভাবে ঢালপালা গজাইতো কেমনে?
সমালোচনা গঠনমূলক করার পরামর্শ রইলো
সামক্ষীরা জেলার বড় অংশ সুন্দরবনের মধ্যে পড়েছে । এই জেলা ঢাকা হতে দুরবর্তী । উপরন্তু এই জেলা ভারতের সীমান্তবর্তী । এই জেলার অনেক এলাকায় ভাল রাস্তা - ঘাট নেই । এসব কারণে দুর্গম বলেছি ।
আমি কোন ভুল ও বানোয়াট তথ্য উপস্হাপন করি নাই ।
আমার পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন