নাস্তিকরা কীভাবে ও কেন ইসলাম ধর্মে আঘাত হানে ? (১ম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১২:০১:৫৫ রাত
সূচনা :
বিভিন্ন কৌশলে বর্তমানে বলা শুরু হয়েছে বিশ্বের সমস্যা সমাধানের জন্য সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরোপেক্ষতা ও নাস্তিকতা একান্ত প্রয়োজন । ক্ষেত্র বিশেষে বলা হয় সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরোপেক্ষতা ইসলামবিরোধী নয় । মূলত সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরোপেক্ষতার সমর্থকদের বিভিন্ন লেখার প্রেক্ষিতে এই পোস্ট লেখা । এজন্য এই পোস্ট এক দিনেই শেষ হবে না ।
বরং ধারাবাহিকভাবে লেখা হবে এবং প্রাসঙ্গিকতার কারণে লেখার সময় জিওফ্রে হইলার ও জিবিউগদানিউ ভেজনস্কি নামক সমাজতন্ত্র বিষয়ক বিশ্লেষকদ্বয়ের বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত প্রদর্শন করা হবে । আর বিভিন্ন সময় সোভিয়ত ইউনিয়ন হতে প্রকাশিত প্রগতি প্রকাশনের বিভিন্ন বই হতে উদৃতি দেওয়া হবে । আলোচিত বইগুলোর সাথে অনেকের পরিচয় থাকতে পারে । তবে আমার লেখায় উদৃতিগুলোর পৃষ্ঠা নম্বর সংস্করণের ভিন্নতার জন্য অনেক পাঠকের বইয়ের পৃষ্ঠা নম্বরের সাথে নাও মিলতে পারে
সামাজতন্ত্রের নামে নাস্তিকতার প্রবক্তা ভ্লাদিমির লেনিন
সমাজতন্ত্রে নাস্তিকতাকে কেন গুরুত্ব দেওয়া হয় :
বাংলাদেশের অনেক সংগঠণের আদর্শ সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরোপেক্ষতাবাদ । বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠণে সমাজতান্ত্রিক ধ্যান ধারণার লোকরা এখনও প্রবলতর । সুতরাং আমরা সমাজতন্ত্র প্রত্যয়টাকে আগে গুরুত্ব দিয়ে উপস্হাপন করবো ।
মূলত সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা হিসেবে আমরা জানি কার্ল মার্কস, ফেড্রিক এঙ্গেলস্ ও ভ্লাদিমর ইলিচ লেনিন -দের । তারা তাদের বিভিন্ন বইয়ে বলেছেন : পৃথিবীতে শ্রেণীতে শ্রেণীতে বিদ্বেষ-বিদ্রোহ-দ্বন্দ্ব-সংঘাতই সব সামাজিক ঘটনা ও দুর্ঘটনার একমাত্র কারণ । এর পিছনে কোন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন নেই ।
এসব দার্শনিকদের প্রবর্তিত মতবাদ হলো জড়বাদী নাস্তিকতাবাদী আদর্শ । তারা তাদের এই আদর্শের নাম দিয়েছেন দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ ।
এপ্রসঙ্গে কার্ল মার্কস বলেন : আমাদের কাছে এ জড় জগৎ ছাড়া আর কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই । ( কার্ল মার্কসের নির্বাচিত রচনাবলী :৫৩৬ পৃষ্ঠা ।)
কমিউনিস্ট পার্টির সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে বলা হয়েছে : পৃথিবী বস্তুর নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হয় । এজন্য কোন সার্বজনীন সৃষ্টিকর্তা বা খোদার প্রয়োজন নেই ।
মোট কথা সমাজতন্ত্রকে যারা আদর্শ হিসেবে যারা নেন তাদের কাছে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অগ্রহণযোগ্য বা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে তারা স্বীকার করেন না । কারণ তাদের শীর্ষগুরুর আদর্শই তাদের আদর্শ । তাদের শীর্ষগুরুর আদর্শ হলো : দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ । কিন্তু মুসলিমরা বিশ্বাস করে মৃ্ত্যুর পর আরেকটি জগত আছে । আর বর্তমান বস্তু জগতই মানুষের জন্য শেষ কিছু নয় ।
মার্কসবাদী লেনিনবাদী আদর্শের সমাজতন্ত্রী কর্মী লাকী আক্তার (বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক)
ধর্মের বিরোধীতা কেন ও কিভাবে এবং কোথায় ?
বাংলাদেশের নাস্তিক ব্লগার ও এক্টিভিস্টদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল দেখলে দেখা যায়, তাদের অধিকাংশের গুরু হুমায়ুন আজাদ, কার্ল মাকর্স , লেনিন, কমরেড মোফাখ্খার, কমরেড মোজাফ্ফর, মাও জে দং, কিম উল সুং, ফিডেল ক্যাস্ট্রো, পেট্রিস লুম্বুম্বা, স্ট্রালিন প্রভৃতি । অনেকে তাদের ধর্মবিশ্বাসের ঘরে লিখেছেন এথিস্ট, স্যাকুলার হিউমেনিজম, অজ্ঞেয়বাদী ইত্যাদি ইত্যাদি ।
আমরা এসব প্রত্যয় পর্যায়ক্রমে ব্যাখ্যা করবো ।
আমরা এখন চলে যাবো তাদের গুরুরা কিভাবে ধর্মে আঘাত হেনেছেন ।
লেনিন http://en.wikipedia.org/wiki/Vladimir_Lenin ধর্ম প্রসঙ্গ বইয়ে বলেছেন :
১.ধর্মের বিরোদ্ধে অমনীয় এবং সংঘবদ্ধ ভাবাদর্শগত সংগ্রাম প্রয়োজনীয় ।…. আমরার রাষ্ট্র হতে ধর্মকে সম্পূর্ণভাবে বিলীন করার জন্য চেষ্টা করে যাবো । …. আমরা মুখের কথা ও প্রকাশনার মাধ্যমে ধর্মের বিরোদ্ধে যুদ্ধ করে যাবো । ধর্ম অবৈজ্ঞানিক বলে সেটার বিরোদ্ধে আমরা আদর্শগত লড়াই চালিয়ে যাবো । ( ধর্ম প্রসঙ্গ : ৫ পৃষ্ঠা । )
২.ধর্ম জনগণের জন্য আফিমের মতো বিষয় । ( ধর্ম প্রসঙ্গ : ৮ পৃষ্ঠা । )
৩. অন্ধকারময় ধর্মের বিরোদ্ধে সংগ্রামে সমাজতন্ত্র বিজ্ঞানকে টেনে আনবে । সরকারী নথিপত্রে যে কোন নাগরিকের ধর্মের উল্লেখ প্রশ্নাতীতভাবে বর্জন করা হবে । ……. ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক সংস্হাকে কোন প্রকার সরকারী বৃত্তিদান করা চলবে না ।…. আমাদের প্রচারে নাস্তিকতাবাদের প্রচারও আবশ্যক ।
( ধর্ম প্রসঙ্গ : ১০ পৃষ্ঠা । )
৪. ধর্মের বিরোদ্ধে আমাদের লড়তে হবে । এটাই মার্কসবাদের অ-আ-ক-খ ।সুতরাং ধর্ম ধ্বংস হোক । ধর্ম,নিরিশ্বরতা চিরজীবি হোক । .....নিরীশ্বরবাদী মতাদর্শ প্রচারই হল আমাদের প্রধান কর্তব্য । … নেরাজ্যবাদী সে ব্যক্তি যে, ধর্মের সঙ্গে সংগ্রামে ভয় পায়, সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাসকে মেনে নেয় । ( ধর্ম প্রসঙ্গ : ২০ পৃষ্ঠা । )
৫. জনগণকো দেওয়া উচিত নিবীশ্বরবাদী প্রচারের অতি বিচিত্র সব মাল মসলা যাতে জাগিয়ে তোলা যায় ধর্মের ঘুম থেকে । ( ধর্ম প্রসঙ্গ : ৭৮ পৃষ্ঠা । )
লেনিন তার ধর্ম বইয়ে বলেছেন :
১. নাস্তিকতা মাকর্সবাদের অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মূলসূত্র । এটা মাকর্সবাদের সাথে স্বাভাবিক ও অবিচ্ছেদ্য অংশ ।
…….ধর্মরূপী প্রেতের কবল হতে বিবেক বুদ্ধির মুক্তি সাধনের জন্যই চেষ্টা কর্তব্য । ধর্ম বইয়ের ভুমিকার প্রথম লাইন ।
২.ধর্ম আধ্যাত্মিক নিপীড়নের এক রকম রূপ । ধর্ম সর্বত্র অপরের জন্য অবিরাম পরিশ্রম, দারিদ্র ও চির বঞ্চনার কবলে নিষ্পেষিত জনসাধারণের বুকের উপর জগদ্দল পাথরের মতই চেপে বসে আছে । ( ধর্ম : ১২ পৃষ্ঠা । )
( চলবে )
বিষয়: বিবিধ
২৫৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন