আমি আকাশ দেখি (২য় পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ২৩ মে, ২০১৪, ১২:২২:৫১ দুপুর
এই লেখার প্রথম পর্ব দেখুন :
http://saab.com.bd/%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B6-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A6%BF-%E0%A7%A7%E0%A6%AE-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC/
অথবা
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/17235
খালি চোখে গ্রামের আকাশ হতে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি, মাঝারি মানের ডিএসএলাআর ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবি
আমি আমার দুরবীন দিয়ে খুব ভালভাবেই এন্ড্রমিডা গ্যালাক্সিকে দেখে থাকি । আমাদের মিল্কিওয়ের প্রতিবেশী গ্যালাক্সির নাম এন্ড্রমিডা । এটিতে মিল্কিওয়ের থেকে বেশী তারা থাকে । (১ লিখে ১২ টা শুন্য দিলে যে সংখ্যা হয় তার সম পরিমান সূর্যের মতো নক্ষত্র নিয়ে একটা গ্যালাক্সি গঠিত হয় । আমরা যে গ্যালাক্সিতে বাস করছি তার নাম মিল্কিওয়ে । )
এন্ড্রমিডা গ্যালাক্সির ছবি
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি যা গ্রীক দেবী হেরা-র বুকের দুধ হতে সৃষ্টি হয়েছে । তার শিশু ছেলে দেবতা হারকিউলিস-কে দুধ খাওয়ানোর সময় তার দুধ আকাশে পড়ে যেয়ে এই গ্যালাক্সি সৃষ্টি হয়েছে । প্রাচীন গ্রীক পুরাণে এই কথাই লেখা আছে ।
আমার এই দুরবীন দিয়ে সবচেয়ে বেশী ভাল দেখা যায় আমাদের চাঁদ মামাকে । চাঁদ মামা হলেন উপগ্রহ । কারণ গ্রহের চার দিকে যেসব তারা ঘুরে তাদের উপগ্রহ বলা হয় । চাঁদ পৃথিবীর চার দিকে ঘুরে ।
জোছনা রাতে চাদের ছবি
আল্লাহ চাদ সূর্য ও মহাকাশের বস্তুর ঘুরা সম্পর্কে সুরা ইয়াসীনের ৪০ নং আয়াতে বলেছেন :
لَا الشَّمسُ يَنبَغى لَها أَن تُدرِكَ القَمَرَ وَلَا الَّيلُ سابِقُ النَّهارِ ۚ وَكُلٌّ فى فَلَكٍ يَسبَحونَ
“ সূর্য নাগাল পেতে পারে না চাঁদের এবং রাত দিনের আগে হয় না । আকাশের সব কিছুই যারা যার কক্ষপথে সাঁতার কাটছে । “
চাঁদ মামাকে ইদানিং আমার ভাগ্নে- ভাগ্নি আর ভাইপো তাদের জন্য কেনা দুরবীন দিয়ে দেখে । তাদের বয়স খুবই কম । তারা কোথায় যেনো শুনেছে মানুষ মরে গেলে নাকি মানুষ আকাশের তারা হয়ে যায় আর মৃত মানুষরা নাকি পৃথিবীর লোকদের এভাবেই নাকি দেখে ।
আর কাজের বুয়ার কাছে শুনেছে,পৃথিবী একটা মহিষের শিংয়ের উপর আছে । পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে যখন এক শিং থেকে আরেক শিংয়ে যায়, তখন ভূমিকম্প হয় । আমার এক ভাই ভূতত্ববিদ । সে খুব সুন্দর ভাবে এসব বিষয় বুঝিয়ে বলে বুয়ার কথা ভুল । তারপরও তারা বলে মামা তোমার কথা ঠিক না । রুপকথার বইয়ের কথাগুলো আর বুয়ার কথাগুলো ঠিক ।
আমার তোলা চাদের কিছু অংশের ছবি
আমি মনে করি, তারা যখন বড় হবে, তখন তারা নিজেরাই তাদের অনুসন্ধিৎসু মন দিয়ে সব বিচার করবে । আমরা চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা বিজ্ঞানমনস্ক ও অনিসন্ধিসু মন নিয়ে বেড়ে উঠুক । কারণ আল্লাহ সুরা ক্বাফের ৬ নং আয়াতে বলেছেন :
أَفَلَم يَنظُروا إِلَى السَّماءِ فَوقَهُم كَيفَ بَنَينٰها وَزَيَّنّٰها وَما لَها مِن فُروجٍ
“ তারা কি তাদের উপরস্থিত আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে না আমি কীভাবে তা নির্মাণ করেছি এবং সুশোভিত করেছি ? তাতে কোন ছিদ্রও নেই। “ ( সুরা ক্বাফ : ৬ )
إِنّا أَرسَلنٰكَ بِالحَقِّ بَشيرًا وَنَذيرًا ۖ وَلا تُسـَٔلُ عَن أَصحٰبِ الجَحيمِ
নিশ্চয় আমি আপনাকে সত্যধর্মসহ সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে পাঠিয়েছি। আপনি দোযখবাসীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন না। ( সুরা বাকারা : ১১৯ )
চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ এবং সৌর জগতের পঞ্চম বৃহৎ উপগ্রহ। পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে চাঁদের কেন্দ্রের গড় দূরত্ব হচ্ছে ৩৮৪,৪০৩ কিলোমিটার (২৩৮,৮৫৭ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় ৩০ গুণ।
চাঁদের ব্যাস ৩,৪৭৪ কিলোমিটার (২,১৫৯ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের এক-চতুর্থাংশের চেয়ে সামান্য বেশি। চাঁদের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের ৫০ ভাগের ১ ভাগ।
চাঁদই একমাত্র আকাশের বস্তু যাতে মানুষ ভ্রমণ করেছে । যার মাটিতে মানুষ হেঁটেছে । প্রথম যে বস্তুটি চাঁদের কাছ দিয়ে উড়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল তা হল রাশিয়ার লুনা ১ নামক আকাশ যান ।এই ঘটনা ১৯৫৯ সালে ঘটে ।তারপর ১৯৬৬ সালে বাশিয়ার লুনা ৯ নামক আকাশ যান প্রথমবারের মত চাঁদের মাটিতে অবতরণ করে এবং লুনা ১০ আকাশ যান প্রথমবারের মত চাঁদের কক্ষপথ পরিক্রমণ করে।
আমেরিকাও রাশিয়ার সাথে পাল্লা দিতে অ্যাপোলো প্রকল্প শুরু করে। আমেরিকা ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো-১১ আকাশ যান চাঁদের উদ্দেশ্যে পাঠায় । এর মাধ্যমে প্রথমবারের মত চাঁদে মানুষ অবতরণ করে । নীল আর্মস্ট্রং, বুজ আলড্রন এবং মাইকেল কলিংস্ অ্যাপোলো-১১ আকাশযানে করে চাঁদে যান । নীল আর্মস্ট্রং এবং বুজ আলড্রন ছিলেন প্রথম মানুষ যারা চাঁদে হেঁটছেন ।
চাদ হতে পৃথিবীর ছবি,
পরে আরও ১০ জন লোক চাঁদে হেঁটেছেন । ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে ছয়টি আকাশযান চাঁদের মাটিতে অবতরণ করে। অ্যাপোলো অভিযানের পর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা চাঁদে মানুষ পাঠানোর সকল পরিকল্পনা ত্যাগ করে।
২০০৯ সালে প্রথম দিকে ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগীতায় চন্দ্রযান নামে একটি আকাশযান চাঁদে পাঠায় । কিন্তু প্রকল্পটিতে সফল হতে ব্যর্থ হয়। মহাকাশযান চাঁদে পৌঁছার পর পরেই তার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু অল্প সময়ে যে তথ্য পাঠিয়েছে তা মানব জাতিকে নতুন করে আশার আলো দেখিয়েছে । কারণ চাঁদে পানির অস্তিত্ব পাওয়ার তথ্য এটি দিয়েছে । এর ফলে মানুষ চাঁদে যেয়ে বাস করার মতো পানি সংগ্রহ করতে পারবে । এই তথ্য মানুষকে চাঁদে বাস করার ক্ষেত্রে আশার আলো দেখিয়েছে ।
( চলবে )
প্রয়োজনীয় কিছু ভিডিও-র লিংক :
মিল্কিওয়ের উপর ভিডিও যা দেখে আপনারা মিল্কিওয়ে সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন :
https://www.youtube.com/watch?v=sm-ucbDVyRU
৬৫০ কোটি বছরের মধ্যে কীভাবে পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি হলো বলা হয়েছে তা এই দুই মিনিটের ভিডিও দেখে ধারণা পাবেন :
https://www.youtube.com/watch?v=NYbTNFN3NBo
How big is the Universe? এই ভিডিও দেখে আমাদের মহাবিশ্বের বিশালতা সম্পর্কে ধারণা পাবেন :
https://www.youtube.com/watch?v=JvdL3R7fDL4
উপসংহার :
আশা করি আপনাদের আমার বিজ্ঞান বিষয়ক এই নতুন ধারাবাহিক পোস্ট ভাল লাগবে । আমি মনে করি আমার এসব লেখা পড়ে আপনারা মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে বর্তমান সময়ের সব তথ্য জানতে পারবেনই, বরং কীভাবে মানুষ আকাশকে জয় করেছে এবং আকাশের বিভিন্ন গ্রহে বসবাস করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সে সম্পর্কে জানতে পারবেন ।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার :
কুরআনে জোতির্বিজ্ঞান :
http://www.islam-guide.com/bqs/17astronomy.htm
যেভাবে আমি আমার দুরবীনটাকে আকাশ দেখার জন্য প্রস্তুত করি : http://www.veengle.com/s/Seben%20Telescope.html
http://www.martspics.com/Telescope%20Accessories.htm
আমি আকাশ দেখার জন্য যে সংগঠণ পরিচালনা করতাম :
Bangladesh Astronomical Union
http://bangladesh-astronomical-union.blogspot.com
মিল্কিওয়ের ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা
http://en.wikipedia.org/wiki/Milky_Way
http://www.dailygalaxy.com/my_weblog/2009/03/mystery-of-the.html
http://scienceline.org/2011/03/galaxies-get-hungry-too/
এন্ড্রোমিডা গ্রালাক্সির ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা :
http://www.wikihow.com/Find-the-Andromeda-Galaxy
চাদের ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা :
http://www.stargazing.net/david/moon/moonrise20050917.html
চাদ হতে পৃথিবীর ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা :
http://www.jaxa.jp/press/2008/10/20081009_kaguya_e.html
Girl Scout Ayah Syeed, 10, peers at the stars through George Mason University
http://articles.washingtonpost.com/2012-02-29/local/35443184_1_telescope-observatory-astronomy-students
বিষয়: বিবিধ
২০৭২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Society for Amateur Astronomers of Bangladesh এর সাথে আমি যুক্ত ।
যদি ঢাকায় থাকেন তাহলে আপনাকে আমাদের কার্যক্রমে স্বাগতম । আমরা আপনাদের আকাশ দেখানো এবং মহাবিশ্ব কীভাবে সৃষ্টি হলো - এসব বিষয়ে জানানোর জন্য শক্তিশালী দুরবীনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ।
আমার লেখাটা পড়ে আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমি আনন্দিত ।
আপনারা আমার লেখা পড়লে এবং এই বিষয়ে আরো লেখার উৎসাহ-অণুপ্রেরণা দিলে আমি এই বিষয়ে এই ব্লগ সাইটে আরো লেখা প্রদর্শন করবো ।
আগামী দিনে বাংলাদেশে জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এসব বিষয় পড়ানো হবে । এমনও হতে পারে বাংলাদেশ হতে চাঁদে অভিযানের জন্য মানুষ বহনকারী যান পাঠানো হতে পারে ।
সুতরাং এখন থেকেই আমাদের ছেলে-মেয়েদের এই বিষয়ে চর্চা করার জন্য উৎসাহ দিতে হবে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন