মওদুদী দর্শণ, মওদুদীবাদ ও মওদুদী মতবাদ কি এবং কেন ? (১ম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ১১ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৯:০৩:২৬ সকাল
লোকমান বিন ইউসুপ “প্রসঙ্গ মওদুদীবাদ: আমাকে কি কেউ দয়া করে মওদুদীবাদটা বুঝিয়ে দিতে পারবেন? ”শিরোনামের এই লেখায় বলেছেন :
“ ১২ বছর একটানা শিবিরের সাথী সদস্য জীবন কাটিয়েছি। মাগাড় মওদুদীবাদটা বুঝিতে পারলাম না। ৫/৭ টা ফিকাহর কিতাব , পুরো কুরআন মোটামুটি ভাবে অর্থসহ পড়ার ও পুরো মেশকাত শরীফ , রাহে আমল এনতেখাবে হাদীস , হাদীস শরীফ , রিয়াদুস সালেহীন সহ কয়েকখানা হাদীস গ্রন্থও পড়েছি ।
মিযান মুনশায়েব, হেদায়াতুননাহু, সিফাতুল মাসদার সহ আরবী গ্রামার নিয়েও পড়া আছে। সাধারন সাহিত্য ইসলামী সাহিত্য উপন্যাস গোয়েন্দা সিরিজ সহ হাজারের উপর বই পড়েছি। সাথে মওদুদীর বই গুলো ভূল ধরার নিয়তে পড়েছি। মাগাড় শেষ পর্যন্ত মওদুদীর প্রেমে না পড়লেও মওদুদীর বইয়ের প্রেমে পড়েছি। ইসলামী কোন বিষয়ের রেফারেন্স বই পড়লেও সাথে মওদুদী কি বলেছেন সেটিও দেখি। নাইলে কেন যেন খালি খালি লাগে।
কম্পিউটার এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র হওয়ার সুবাধে প্রোগ্রামিং , ডাটাবেজ , রেডিও এন্ড টেলিভিশন ইঞ্জিনিয়ারিং, সিগনাল প্রসেসিং, ডিজিটাল কমিউনিকেশন, রাডার এন্ড স্যাটেলাইট ইঞ্জিনিয়ারিং , জিএসএম, টেলিফোনী সহ অনেক লেটেস্ট টেকনোলজি নিয়ে পড়েছি। জীবনের প্রথম পরীক্ষায় যেহেতু স্টার মার্ক নিয়ে পাশ করেছিলাম সেহেতু ব্রেনটাকেও খারাপ বলা যাবেনা। মোটামুটি মেধা থাকায় একটা নেটওয়ার্কিং কোম্পানীতে প্রথম সিস্টেম এন্ড সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দিই। তারপর একবছর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের লেকচারার ছিলাম। তারপর আড়াই বছর ধরে আছি একটা প্রাইভেট ব্যাংকের আইটি সেকশানে ।
ইসলামও বুঝলাম , আধুনিক বিজ্ঞানও বুঝলাম। মাগাড় মওদুদীবাদ বুঝতে পারলামনা!!! তাইলে মওদুদীবাদটা কি আরো কঠিন কিছু!
এটা কি বাকশাল? “
মওদুদী দর্শন, মওদুদী মতবাদ ও মওদুদীবাদ নিয়ে লোকমান বিন ইউসুপের মতো অনেকের মনে প্রশ্নের উদয় হয়েছে ।
কারণ চলমান জামায়াত-শিবিরের চলমান রাজনীতি ও সন্ত্রাসের উৎসমুখ ও তার ধরণ জানার জন্য মওদুদী দর্শন, মওদুদী মতবাদ ও মওদুদীবাদ এর সাথে পরিচিত হওয়ার প্রয়োজন আছে । এই জন্য আমি নতুন একটা ধারাবাহিক নিবন্ধ লেখা শুরু করলাম ।
আজ আমি তেমন কোন তথ্য দিবো না শুধু মাত্র লোকমান ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তরে যা বলেছি তা উল্লেখ করে আজকে লেখা শেষ করবো ।
লোকমান ভাইয়ের এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলাম :
আমি এই অংশের সাথে দ্বিমত পোষণ করছি : "মাগাড় শেষ পর্যন্ত মওদুদীর প্রেমে না পড়লেও মওদুদীর বইয়ের প্রেমে পড়েছি। ইসলামী কোন বিষয়ের রেফারেন্স বই পড়লেও সাথে মওদুদী কি বলেছেন সেটিও দেখি। নাইলে কেন যেন খালি খালি লাগে।"
কারণ মানুষ প্রেম পড়লে প্রেমিকের ভুলগুলোও বা খারাপ দিকগুলোও তার কাছে সঠিক মনে হয় ।
প্রেম সম্পর্কে আমি লেখা লিখবো । প্রেমের কারণে মানুষ কতটা বিভ্রান্ত হয় তাও তুলে ধরবো । আর প্রেমের ধরণ কত ধরনের হয় -তাও তুলে ধরবো ।
তিনি যেসব বই পড়েছেন - আমিও ঠিক সেভাবে বই পড়েছি । তবে আমি কোন লেখকের প্রেমে পড়িনি । লেখকের প্রেমে পড়লে ভাল পাঠক হওয়া যায়, কিন্তু সেই লেখকের উপর ভাল গবেষক হওয়া যায় না । কারণ সে নিজের মনের অজান্তে সেই লেখকের ভক্ত-অনুরক্ত-গুণমুগ্ধ হয়ে পড়ে ।
পাঠকের কাছে তখন লেখকের সব কিছুই ভাল লাগে এবং পাঠক একটা সময় লেখককে দেবতা বা ফেরেশ্তার আসনে স্হান দিতে শুরু করে । যেমন : আমার এক লেখায় হুমায়ুন আহমদের একটা ঘটনা ছবির মাধ্যমে উপস্হাপন করায় তার অনেক ভক্ত ভীষণ রেগে যান ।
মুর্তি পুজা ক্ষতিকর । কিন্তু তার চেয়ে বেশী ক্ষতিকর কোন ব্যক্তির ভাবমূর্তির পুজা । কারণ সেই ব্যক্তি পাঠক বা ব্যক্তির সৃষ্টিশীলতা নষ্ট করে দেয় । এজন্য গোড়া মওদুদীবাদীরা শুধুমাত্র মওদুদীর বইকেই সঠিক ইসলামী সাহিত্য মনে করে এবং তারা তাদের লেখায় তার বইয়ের উদৃতিই ব্যবহার করে বা কপি পেস্ট করে থাকে ।
যেমন : সোনার বাংলাব্লগে দেখেছি অনেকে অবিকল মওদুদীর একটা বইয়ের কয়েক পৃষ্ঠা হুবহু কপি করে ছাপিয়ে দিয়েছে নিজের নামে । তবে কয়েকটা লাইন নিজের মতো করে লিখেছে । অনেকে আরেক ধাপ অগ্রসর হয়ে সৌদি আরবের ওহাবী সাইট ইসলাম হাউজের লেখাগুলো কপি করতো ।
মওদুদী দর্শন ও ওহাবী মতবাদ বলে দুইটা বিষয় অবশ্যই আছে ।
জামায়াতী চ্যানেল দিগন্ত টিভি-র সংবাদ পাঠিকা এখন বিএনপি-র চ্যানেল বাংলাভিশন-এ এভাবে খরব পড়েন । এই ভাবে খবর পড়াটা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদবিরোধী মূল্যবোধ বিরোধী । কারণ বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্হা ও বিশ্বাস-এর উপর ভিত্তি করে স্হাপিত হয়েছে । ইসলামী মূল্যবোধ এভাবে শাড়ি পড়া অনুমোদন করে না ।
পরিশেষে বলছি আমি গোড়ামী-উগ্রতা-চরমপন্হার বিরোধী । দিগন্ত টিভি-র সংবাদ পাঠিকাদের কথিত ড্রেস কোড ছিলো গোড়ামী-উগ্রতা-চরমপন্হার বড় উদাহরণ । এক্ষেত্রে মধ্যমপন্হা কি তাও আমি উপস্হাপন করেছি ।
গোড়ামী-উগ্রতা-চরমপন্হা কখনো ভাল ফল বয়ে আনে না - তার বড় উদাহরণ নাদিরা আশরাফ নামক সংবাদ পাঠিকার বর্তমান পোষাক পড়ার ধরণ । অথচ সে জামায়াতের নেতাদের সুপারিশ নিয়ে দিগন্ত টিভি-তে চাকুরী করতে এসেছিলো ।
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=639442929431865&set=a.639442919431866.1073741852.199798446729651&type=1&theate
সৌজন্যে : তাহুর, মুহাজ্জাবাহ,অরিন্দম স্টুডিও এবং হিজাব ফর পিচ ডট কম : http://www.facebook.com/tahoorstudio
টিভি যদি নাদিয়া আশরাফকে এই মন্তব্যে দেওয়া ছবিগুলোর মতো পোষাক পড়ে খবর পড়ার সুযোগ দিতো, তাহলে তাকে বাংলাভিশনে বেআব্রুভাবে দেখা যেতো না । দিগন্ত মেয়েদের উপর যে পোষাক জোড় করে চাপিয়ে দিয়েছিলো তাকে মওদুদীবাদ বা মওদুদী দর্শন বলা হয় । বিস্তারিত এই মন্তব্যে লিখছি না । আমি বেশ কিছু সংবাদ পাঠিকার সাথে কথা বলেছি, তাদের যদি এমন পোষাক পড়তে বলা হয় - তাহলে তারা সাদরে তা পড়বেন । কিন্তু আমরা মেয়েদের মতামত ও মন বোঝার চেষ্টা করি না । এজন্য আমি নতুন একটা টিভি চ্যানেল বানানোর স্বপ্ন দেখি যেখানে দেশ-মাটি-মানুষ-দেশীয় মূল্যবোধ গুরুত্ব পাবে ।
মওদুদী দর্শন অনুযায়ী চাপিয়ে দেওয়া বা জোড় করে নাদিয়া আশরাফকে চাপিয়ে দেওয়া পোষাকটা হলো :
বর্তমান গণমাধ্যম নারীকে যেভাবে উপস্হাপন করে তার ধরণ হিসেবে নাদিয়া আশরাফকে যে ধরণের সাজ পোষাকের আশ্রয় নিতে হয়েছে :
এঘটনা হতে বুঝতে পারবেন : মওদুদী দর্শন ও মতবাদ কি এবং কেন ? এবং গণমাধ্যমের পুজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নারীর পোষাককে কীভবে নির্ধারণ করে দেয় ?
এই দুই দৃষ্টিভঙ্গিই আমাদের চিরায়ত মূল্যবোধ ও ধর্মবিরোধী । আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
লোকমান ভাই আমার এই উত্তর পেয়ে লিখলেন :
// দিগন্ত মেয়েদের উপর যে পোষাক জোড় করে চাপিয়ে দিয়েছিলো তাকে মওদুদীবাদ বা মওদুদী দর্শন বলা হয় ।//
যাক ! একটা পাওয়া গেল ।
আল্লাহ যা চাপিয়ে দিয়েছেন তা আল্লাহবাদ ।
উপসংহার :
মওদুদী দর্শন মূলত মানুষের উপর জোড় করে মওদুদীর দৃস্টিভঙ্গিকে জোড় করে চাপিয়ে দেওয়ার মতো বিষয় । অপর দিকে ইসলাম শান্তির ধর্ম । ইসলাম স্হানীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে অস্বীকার করে না । ইসলাম পোষাক পড়ার নীতিমালা দিয়েছে । কিন্তু কোন নির্দিষ্ট পোষাককে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উপর চাপিয়ে দেয়নি । কিন্তু মওদুদী দর্শন মানুষের উপর জোড় করে নির্দিষ্ট পোষাক চাপিয়ে দেয় । এজন্য আমারা দেখি, জায়ামাতের মহিলা ও ছাত্রী শাখার মহিলাদের নির্দিষ্ট পোষাককে ড্রেস কোড হিসেবে বেছে নিতে ।
আপডেট : দিগন্ত টিভি-তে আওয়ামী চ্যানেল-এর সংবাদ পাঠিকা সামিয়া ইসলাম দিগন্ত টিভি চালু হওয়ার পর সংবাদ উপস্হাপিকা হিসেবে দিগন্ত টিভি-তে যোগ দেন। তিনি চ্যানেল আইয়ে যে সব শাড়ি পড়ে সংবাদ পড়তেন সেসব শাড়ি পড়েই দিগন্ত টিভি-তে আসতেন । সংবাদ পড়ার আগে তিনি বোরকা ও ওড়না চ্যানেল আইয়ে পড়া শাড়িগুলোর উপর পড়তেন । প্রথম প্রথম তার কষ্ট হতো । কিন্তু তিনি আজ পর্যন্ত এই বোরকা আর ওড়না পোষাক দুইটাকে আপন করে নিতে পারলেন না ।
আর এটা তার পক্ষে সম্ভবও নয় । এর কারণ আমি এই লেখায় ব্যাখ্যা দিয়েছি : http://www.bdtomorrow.com/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/33215 [ বোরকা ও নিকাব কীভাবে স্বাস্থ্যগত ও ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষতি ঢেকে আনে ? (১ম পর্ব) ]
এজন্য আমি সংবাদ পাঠিকা ও উপস্হাপিকাদের বিনীত অনুরোধ করছি : দয়া করে আপনারা এভাবে শাড়ি পড়ে সংবাদ পড়ুন ও উপস্হাপনা অনুষ্ঠান করুন ।
এতে আপনাদের গুনাহ কিছুটা হলেও কমবে । কারণ ইসলাম ধর্মের নিয়ম হলো , কোন মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হলে তাকে অবশ্যই :
১।ওড়না বা অন্য যে কোন কাপড় দিয়ে মাথার চুল প্রতিটা ঢেকে রাখতে হবে ।
২।ওড়না দিয়ে বা অন্য কোন কাপড় দিয়ে বুক, পিঠ, গলা ঢেকে রাখতে হবে ।
৩।মুখ ও হাতের তালু ছাড়া সমগ্র শরীর ঢেকে রাখতে হবে ।
এই পোষাকের নীতিমালা শুধুমাত্র স্বামী - সন্তান- বাবা- ভাই ও অন্যান্য কিছু আত্মীয়ের সাথে বাড়িতে থাকার সময় শিথিলযোগ্য । জনসাধারণের সামনে অবশ্যই এই পোষাক পড়ার নীতিমালা মেনে চলা প্রতিটা মুসলিম মেয়ের জন্য ফরজ । এই নীতিমালা কোন মেয়ে মেনে না চল্লে সে নিজেই জাহান্নামে যাবে না, বরং তার কারণে স্বামী - ছেলে - বাবা- ভাই জাহান্নামে যাবে ।
যদি কোন সংবাদ পাঠিকা ও উপস্হাপিকা আরো তথ্য জানতে চান : তাহলে আমাকে বার্তা পাঠাতে পারেন অথবা ফেসবুকে নক করতে পারেন ।
বিষয়: বিবিধ
৭৯৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন