আমি কেন বাংলাদেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোকে পছন্দ করি না ? (১ম পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০২:৩৭:১২ রাত

পটভুমি :

বাংলাদেশে নিবন্ধিত ১২ টা ইসলামী রাজনৈতিক দল আছে । তার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন আইনগতভাবে বাতিল হয়েছে । এখন শুধু আপিল বিভাগ হতে চুড়ান্ত রায় ঘোষণা হওয়া মাত্র বাকি ।

অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেছেন , আমি কেন ইসলামী দলগুলোকে পছন্দ করি না ? উত্তরটাকে একটু ভিন্নভাবে বলতে বলি । যেমন : বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলোকে জনসাধারণ কেন পছন্দ করে না ? বা ইসলামী দলগুলোর ভোটের পরিমাণ একত্রে কোনভাবেই ৯ % হতে ১২ % - এ সীমাবদ্ধ থাকে ?

তখন অনেকেই বলেন : আপনি অন্য সব ইসলামী দলের কথা বাদ দিন । কারণ তাদের তেমন কোন জনসমর্থন বা শক্তি সামর্থ্য নেই । শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলামীর কথা বলুন । কেন আপনি জামায়াতে ইসলামী পছন্দ করেন না ?

তখন আমি বলি, এক সময় এই দলের ছাত্র উইং-এর বড় ধরনের কর্মী ছিলাম । তখন সব কিছুর থেকে ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রতিটা কাজকেই গুরুত্ব দিতাম । তখন তারা আমার সাবেক কার্যক্রমকে বিচার করে তারা বলেন , "আপনি একজন সপথের কর্মী হয়ে ইসলামী আন্দোলনের বিরোধীতা করেন কেন ? আপনার উপর সাক্ষাৎ শয়তান ভর করেছে । আপনার সাথে আর কোন কথা হতে পারে না । "

তখন অনেককে বলেন, "জামায়াতে ইসলামী পছন্দ না হলে অন্য ইসলামী দল করেন । আর ভাল না লাগলে নতুন কোন ইসলামী দল বানান । "

বিষয়টা কতটুকু পতিক্রিয়াশীল হলে আমাকে এধরনের পরামর্শ দেওয়া হয় - তা বলাই বাহুল্য । সত্যিকার ইসলামী সংগঠণ ও গণতান্ত্রিক মানষিকতা সম্পন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী হলে অবশ্যই আমার অভিমত শতভাগ সময় নিয়ে জানার চেষ্টা করতো এসব ইসলামী দলগুলোর লোক । বাস্তব অবস্হা হলো । এসব দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনাবোধের বিন্দুমাত্র চর্চা নেই । তারা মনে করে," জিহাদ করে রাষ্ট্র দখল করে ইসলাম কায়েম করতে হবে । গণতন্ত্রকে শ্রেফ মন্দের ভাল হিসেবে গ্রহণ করেছি মাত্র । " আজও জামায়াত-শিবিরের এক কর্মী ফেসবুকে এমন মন্তব্য করেছে ।

গণতন্ত্র কি রাষ্ট্র পরিবতর্নের মধ্যকার বিষয় । গণতন্ত্র আমাদের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই প্রয়োগের বিষয় । আপনি আপনার বাড়ির সামনের রাস্তায় গৃহ নির্মান সামগ্রি ফেলে রাখবেন কি না বা কত দিনের জন্য রাখবেন - এজন্য প্রতিবেশীদের সাথে আলোচনা করবেন বা তাদের মতামত নিবেন - এটা এক ধরনের গণতান্ত্রিক মানষিকতা । গণতন্ত্রের অনেক ধরনের আছে । ইসলামেরও গণতন্ত্রের আলাদা ব্যাখ্যা আছে । যেটাকে মওদুদী থিওডেমেক্রেসী বলেছেন ।

আপাতত গণতন্ত্রের ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না । সবচেয়ে গুরুতর ব্যাপার হচ্ছে, আমার এক আত্মীয়া আমাকে বল্লেন, ফেসবুকে জামায়াতের লোকরা তার ছবি ব্যবহার করে ফেসবুক একাউন্ট বানিয়ে জামায়াতের আটককৃত নেতাদের মুক্তির কথা প্রচার করছে এবং ইদানিং ফেসবুকে কোন স্যাটাস দিলেই তাকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করা হচ্ছে ।

আমি কিছু স্যাটাস পড়লাম । আমি যা লিখি, অনেক সময় আমার লেখা শেয়ার করে তাতে তার নিজস্ব কিছু মতামত জুড়ে দেয় সে । উপরন্তু তার অনেক স্যাটাসই চরম ফ্যামিনিস্ট ধরনের বলে মনে হয় । স্বভাবতই অনেকে তার উপর ক্ষিপ্ত হতে পারেন । কিন্তু তাই বলে গালি গালাজ । তাও এমন সব গালি যা কুলি মুজুররাও ঝগড়ার সময় ব্যবহার করে না । হায় আমি নিজে অবাক হলাম ।

ইসলামী দলগুলোকে অপছন্দের প্রধান একটা কারণ :

বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার হয়েছে রাসুল সা. -এর জীবনকালেই । ১২০৪ সাল হতে বাংলাদেশের একটা অংশে ইসলামী রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হলে ইসলাম প্রচার প্রবলতর হয় । কিন্তু সেই সময় হতে ইসলামের সুফীবাদী ও হানাফী মাযহাবের ধারাটাই বাংলাদেশে প্রবলতর ছিল । কিন্তু পেট্রো ডলারের হাত ধরে বাংলাদেশে ওহাবী বা সালাফী নামক যুদ্ধাংদেহী মতবাদ বাংলাদেশে বিস্তার ঘটে ।

এই বিষয়ে এই সাইটেই জহির আহমেদ সালাফি মতবাদ বা ওহাবী মতবাদ সম্পর্কে বলেন :

বর্তমান সময়ে মুসলিম উম্মাহর এক মারাত্মক ফিতনার নাম মোনাফিক্ব সৌদি সরকারের পৃষ্টপোষকতায় দালাল সালাফিরা। সৌদি রাজপরিবারের অনৈসলামিক জীবন,বদমাসি, বিলাসিতা চোখের সামনে হতে দেখলেও সালাফিরা জিবনে এইগুলো নিয়ে একটু টু শব্দও করেনা!

সালাফি গুগল শাইখরা কোরআন সহিহ-হাদিসের কথা শুনায় কারন, সহিহ শব্দটি শুনলে কেউ কিছু বলতে পারেনা আর এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তরুন প্রজন্মকে ধোঁকায় ফেলে সৌদি রাজপরিবারের দালালি করে যাচ্ছে। কিন্তূ, যখনই আরব স্প্রিঙের লিডং্যে থাকা মুসলিম ব্রাদারহুড মিশরের সেকুলার সরকারকে ধাক্কা দিল; কম্পনের মাত্রাটা সৌদি সরকারের চোখে রিখটার স্কেলে ৮/৯ এর উপরে দেখাল। তখনি বেরিয়ে আসলো সালাফিদের আসল চেহারা। যেখানে ইসলাম প্রতিষ্টায় ব্রাদারহুডের কর্মিরা জান দিচ্ছে তখন এই সালাফিরা ফতোয়া দিল মুসলিম ব্রাদারহুডের কর্মিরা নাকি ফিতনা শুরু করে দিছে। এটা নাকি ঠিক হচ্ছেনা!! তরুন প্রজন্মকে আরো আশ্চর্য করল যখন সৌদি সরকার মিশরের সেকুলার সরকারকে মিলিওন ডলারের সাহায্য ঘোষনা দিল!

সারা বিশ্বে মুসলমানদের উপর এত নির্যাতন দেখে এরা মুসলমানদের পক্ষে একটা কথাও বলেনা! উলটো ইস্রাইল,আমেরিকাকে সাপোর্ট করে। সৌদি প্রিন্স তালাল ৯/১১ এ আমেরিকাকে ১০মিলিওন ডলার সাহায্য প্রদান করে অথচঃ প্রতিবছর আফ্রিকাসহ বিশ্বের অনেক মুসলমান পাথর, মাটি খেয়ে খাদ্যাভাবে মারা যায় এদিকে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপই নেই।

রাজপরিবারের অনৈসলামিক জীবন,বদমাসি, বিলাসিতা চোখের সামনে হতে দেখলেও সালাফিরা জিবনে এইগুলো নিয়ে একটু টু শব্দও করেনা!!

ইসলাম বলতে এদের কাছে যেন শুধু কবর পুজা না করা,রাফইয়ুল ইয়াদাইন,জোরে আমিন বলা, ইমামদের সমালোচনা ঐ পর্যন্তই!!

অনলাইনে উনাদের অনুসারি অনেক ভাই আছেন পারলে ২/১টা ভীডিও দেখান যেখানে এরা সৌদি সরকারের অনৈতিকতা নিয়ে কথা বলছে!!

http://www.bdtomorrow.com/blog/blogdetail/detail/5006/zrtalib/30146

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী দলগুলোকে অপছন্দ করার প্রধান কারণ রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ওহাবী ও সালাফি মতবাদকে জনগনের মধ্যে বিস্তার ঘটানোর চেষ্টা করা ।

সালাফি ও ওহাবী মতবাদ নিয়ে বিন্দুমাত্র মন্তব্য জামায়াত-শিবির সহ্য করে না : সালাফি মতবাদ বা ওহাবি মতবাদ এতটাই জামায়াত-শিবিরের উপর প্রবলতর যে তারা অনেক সময় তাদের পত্রিকা বা ব্লগে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত লেখা পর্যন্ত মুছে ফেলে বা ড্রাফট করে ফেলে । তারেক রমাদানের লেখা একটা লেখার ক্ষেত্রেও এমন ঘটেছিল ।

মুরশিকে উচ্ছেদ করার পর জামায়াত-শিবিরের লোকরা ফেসবুকে বেশ কিছু পেজ বানায় , তাতে যে বা যারা সৌদি আরব আর সালাফি মতবাদ নিয়ে মন্তব্য করতো , তাদের জামায়াত-শিবিরের লোকরা গালিগালাজ করতো । এর মধ্যে তারাও আমাকে ছেড়ে দেয়নি । তারা ব্লগার আহমদ মুসা ও হাসানের নেতৃত্বে আমাকে গালিগালাজ করেছিলো । এক সময় আমাকে এসব পেজ বা গ্রুপ হতে বহিস্কার করেছিলো ।

এবার আমরা দেখবো তারেক রমাদানের লেখায় কি এমন জিনিস ছিল যাতে তার লেখাটা নয়াদিগন্ত হতে ফেসবুক বা অনত্র জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের শেয়ার করা বারন ছিল ।

তাহলে আসনু আমরা এক নজর লেখার উপর চোখ বুলাই ।

ড. তারেক রমাদানের লেখাটার শিরোনাম : মিসর : সেনা অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় পর্ব

http://www.dailynayadiganta.com/welcome/post/9450 এই লিংকে লেখাটা ছিল ।

গত দুই বছর আমাকে প্রায়ই এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে যেÑ ‘কেন আমি মিসর সফর করছি না?’ এর কারণ হলো এর আগে মোবারক সরকারের আমলে ১৮ বছর আমার মিসর সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। সুইজারল্যান্ড ও ইউরোপীয় বিভিন্ন কর্মকর্তার মাধ্যমে যতটুকু জানতে পেরেছিলাম তাতে মিসরে সেনাবাহিনী নতুন করে দেশটির রাজনীতিতে আসেনি, মিসরের রাজনীতির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল সেনাবাহিনী এবং তারা মুহূর্তের জন্যও মিসরের রাজনৈতিক অঙ্গন পরিত্যাগই করেনি। মিসরের বিপ্লবের ব্যাপারে কখনোই আমি অতিরিক্ত আগ্রহ প্রকাশ করিনি অথবা মিসরের বিপ্লব তিউনিসিয়ার চেয়ে কোনো অংশে বেশি এ কথা বিশ্বাস করিনি। এই দুই দেশের জনগণই স্বৈরতন্ত্রের অধীনে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত ছিল। দুই দেশের জনগণ তাই বিদ্রোহ করেছিল আত্মমর্যাদা, সামাজিক সুবিচার ও স্বাধীনতার জন্য। তাদের এই জাগরণ, বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব ও সাহস তাই অভিনন্দনযোগ্য। কিন্তু সাধারণ জনগণকে বোঝানোর জন্য রাজনৈতিক, ভূ-কৌশলগত ও অর্থনৈতিক প্রসঙ্গের সরলীকরণ সম্পূর্ণরূপে যুক্তিহীন। তিন বছর আগে প্রকাশিত একটি বই এবং পরে বিভিন্ন সিরিজ লেখার মাধ্যমে আমি পাঠকদের কিছু জটিল সমস্যা এবং সেগুলোর ভূ-কৌশলগত ও অর্থনৈতিক ভিত্তির ব্যাপারে সজাগ করার চেষ্টা করছিলাম। এ সমস্যা ও তার মূল ভিত্তিগুলো সর্বদাই মূল ধারার রাজনীতি ও মিডিয়া-বিশ্লেষণ থেকে বাদ পড়ছিল এবং সেখানে ‘আরব বসন্তের’ ফলে উদ্ভূত জনগণের আবেগ-উচ্ছ্বাসকে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করার ওপর জোর দেয়া হয়েছিল। মিসরের সামরিক বাহিনী রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন করেছে বিষয়টি এমন নয়। আসলে সামরিক বাহিনী রাজনীতির অঙ্গন পরিত্যাগই করেনি। মোবারক সরকারের পতন ছিল মূলত একটি সামরিক অভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থান বেসামরিক সরকারের আড়ালে সামরিক বাহিনীর নতুন অফিসারদের রাজনীতির অঙ্গনে আগমনের সুযোগ করে দেয়। ২৯ জুন ২০১২ সালে প্রকাশিত এক লেখায় আমি একজন উচ্চপদস্থ সেনাকর্মকর্তার বরাত দিয়ে উল্লেখ করেছিলাম যে, প্রেসিডেন্টের নির্বাচন হচ্ছে ণস্থায়ী এবং এটি সর্বোচ্চ ছয় মাস থেকে এক বছরের জন্য (লেখাটির শিরোনাম ছিল An Election for Nothing)। এই পুরো প্রক্রিয়া পর্যবেণ করছিল আমেরিকা প্রশাসনÑ গত ৫০ বছরব্যাপী যাদের মিত্র ছিল মিসরের সেনাবাহিনী, মুসলিম ব্রাদারহুড নয়। জুলাইয়ের ৫ তারিখের ‘ÔInternational Herald Tribune এবং ৬ তারিখের ‘Le Monde নিশ্চিত করে যে, ৩০ জুনের অনেক আগেই প্রেসিডেন্ট মুরসিকে মতাচ্যুত করার পরিকল্পনা করা হয়। প্রেসিডেন্ট মুরসি ও সেনাপ্রধান জেনারেল আবদুল ফাতাহ আল সিসির এক আলাপ থেকে জানা যায়, সামরিক অভ্যত্থান ও মুরসিকে বন্দী করার পরিকল্পনা এই তথাকথিত জনপ্রিয় সরকারবিরোধী আন্দোলনের কয়েক সপ্তাহ আগেই করা হয়েছিল। ‘জনগণের ইচ্ছানুসারে’ এই মতাচ্যুতি বলে সামরিক অভ্যুত্থানকে কেবল বৈধতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘চতুর কৌশলের’ মাধ্যমে আসলে জনগণকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামানো হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে, সেনাবাহিনী জনগণের অধিকার ও দাবিদাওয়ার বিষয়ে সচেতন এবং সামরিক ক্যু হচ্ছে জনগণের অধিকার ও দাবিদাওয়া পূরণের জন্য অত্যাবশ্যকীয়ভাবে গৃহীত দ্বিতীয় পদপে। তা হলে মিসরের এই সামরিক অভ্যুত্থানে আমেরিকা প্রশাসনের তাৎণিক প্রতিক্রিয়াকে কিভাবে বিশ্লেষণ করা যায়? যেখানে ‘সামরিক অভ্যুত্থান’ শব্দটি সচেতনভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে (যদি শব্দটি ব্যবহার করা হতো, তাহলে মিসরের নতুন প্রশাসন আমেরিকার আর্থিক সাহায্য থেকে বঞ্চিত হতো)? সরকারের এ অবস্থান কৌতূহলোদ্দীপক। এরা এমন শব্দ ব্যবহার করেছে যাতে অভ্যুত্থানকারীদের রাজনীতিক, অর্থনৈতিক ও আইনগত সব সুবিধা দেয়া যায়। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন অবশ্যই আমেরিকার নীতি অনুসরণ করে বলবেÑ ‘সেনাবাহিনী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের ডাকে সাড়া দিয়েছে।’ এগুলো খোঁড়া যুক্তি। রহস্যজনকভাবে মুরসির পতনের পর লোডশেডিং, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ঘাটতি আকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এটি এই কারণে যে, যাতে প্রমাণ করা যায় জনগণ এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় মৌলিক উপায় উপাদান থেকে মুরসির শাসনামলে বঞ্চিত হচ্ছিল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টে এটি এসেছে যে, সেনা প্রশাসন কিছু কিছু জায়গায় মুরসিবিরোধী আন্দোলনকারীদের কোনো বাধা না দিয়ে বরং সহিংস কার্যকলাপে সহায়তা করে। মনে হয় যেন এটি কোনো পূর্বপরিকল্পনার অংশবিশেষ। সশস্ত্রবাহিনী হেলিকপ্টার থেকে তোলা এমন সব ছবি আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোকে সরবরাহ করেছে, যেখানে চিত্রিত হয়েছে জনগণ তাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছে (Le Monde-এর মতে)। আসলে কোনো কিছুই পরিবর্তন হয়নি। আরব বসন্ত বা মিসর বিপ্লব যাই বলি না কেন, সব কিছুই চলছে জেনারেল আবদুল ফাতাহ আল সিসির নিয়ন্ত্রণে। আবদুল ফাতাহ আল সিসি যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিণপ্রাপ্ত এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেনাপ্রধানের সাথে তিনি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রা করে চলছেন। জুলাই ৬-৭ তারিখের International Herald Tribune থেকে জানা যায়, জেনারেল সিসি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সরকারের সাথে সমভাবে ঘনিষ্ঠ। বর্তমানে ও মুরসির শাসনামলে তিনি তাদের সাথে যোগাযোগ রা করেছেন। আল সিসি আগে উত্তর সিনাই অঞ্চলে সেনা গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্ব পালন করেন এবং সেই সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ও ইসরাইলের সাথে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাও পালন করেন। এ কথা বলা তাই অযথার্থ হবে না যে, যুক্তরাষ্ট্র কখনোই ইসরাইলের মতো মিসরের উন্নয়নে প্রকৃত ভূমিকা পালন করেনি। এত সব ঘটনার পরও মুরসি, তার মিত্র এবং সংগঠন হিসেবে মুসলিম ব্রাদারহুড অতি সরলীকরণ, অনভিজ্ঞ আচরণ ও অন্যান্য যে ভুল করেছে, তাতে আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না। গত তিন বছরজুড়ে আমি লিবার্টি অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির এবং মুসলিম ব্রাদারহডের চিন্তা ও কর্মকৌশলের ত্রুটি-বিচ্যুতির সমালোচনা করে যাচ্ছি। (গত ২৫ বছরব্যাপী আমার সব বিশ্লেষণ ও মন্তব্য ছিল মুসলিম ব্রাদারহুডের কর্মকৌশল ও পলিসির বেশ খানিকটা সমালোচনামূলক)। তাদের সব কৌশল ছিল স্থূল। আমার সব লেখা (মার্চ ২০১২ থেকে ডিসেম্বর ২০১২ পর্যন্ত লেখা সব বই অথবা আর্টিকেল) ছিল মুরসির গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা ও কৌশলের ওপর কেন্দ্রীভূত। সরকারে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে অথবা জাতীয় সংলাপে বসার আহ্বান জানানোর মাধ্যমে বিরোধীদের সাথে সম্পর্ক তৈরির জন্য মুরসি যা করতে পারেননি, তার পুরো দায়ভার মুরসির ওপর চাপানো ঠিক হবে না। কারণ তার সব আহ্বান ও চেষ্টাকে বিরোধীদের প থেকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। অবশ্য এসবের অনেক কারণও আছে। সেগুলো হচ্ছে রাষ্ট্রপরিচালনায় ব্যর্থতা, জনগণের দাবি বুঝতে না পারা, এমনকি তার নিজের উপদেষ্টাদের কিছু পরামর্শের প্রতি কান না দেয়া, মুসলিম ব্রাদারহুডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে অতিরিক্ত সম্পর্ক বজায় রাখা, ত্বরিত গৃহীত এবং অবিবেচনাপ্রসূত কিছু সিদ্ধান্ত (যেগুলোকে তিনি পরে ভুল বলে স্বীকার করেছেন)। এসব বিষয় অকুণ্ঠচিত্তে সমালোচনাযোগ্য। আরো মৌলিকভাবে বলতে গেলে, মুরসির সবচেয়ে বড় ভুল হচ্ছে তার বিভিন্ন পদক্ষেপে রাজনৈতিক দর্শনের অনুপস্থিতি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার নির্ণয়ের অভাব, দুর্নীতি ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরাজয় এবং সামাজিক ও শিা বিষয়ে অব্যবস্থাপনা। অর্থ ছাড়ে আইএমএফের স্বেচ্ছাকৃত দীর্ঘসূত্রতা ও অতিরিক্ত শর্তারোপ মিসরকে একটি কঠিন পরিস্থিতিতে দাঁড় করিয়েছে। মুরসি ভেবেছিলেন আইএমএফ তাদের অর্থ সাহায্য দেবে। মুরসির পতনের পরই কেবল আইএমএফ অর্থ ছাড়ের েেত্র এত দিনের ‘অলঙ্ঘনীয় বাধাগুলো’ দূর করেছে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের সামরিক শাসকদের অস্ত্রের মুখে পদচ্যুতির পরই কেবল আইএমএফের এ ঘোষণা এলো। প্রেসিডেন্ট মুরসি, তার সরকার ও মুসলিম ব্রাদারহুডের অনেক ক্ষেত্রে অর্বাচীনতা বিস্ময়কর। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে মোবারক সরকারের বিরোধিতার সম্মুখীন এবং সামরিক স্বৈরশাসনের নির্যাতনের স্বীকার হয়েও কিভাবে তারা কল্পনা করল যে, তাদের পূর্বশত্রুরা গণতন্ত্রকে আহ্বান জানিয়ে মুরসিকে মতাসীন করবে? তারা কি তাদের পূর্ব ইতিহাস, ১৯৯২ সালের আলজেরিয়ার ঘটনা এবং এমনকি অতি সাম্প্রতিক ফিলিস্তিনের ইতিহাস থেকে কিছুই শিা নেয়নি? আমি মুরসি ও মুসলিম ব্রাদারহুডের পরিকল্পনা ও দ্ব্যর্থবোধক কলাকৌশলের েেত্র আনাড়িপনা ও অনভিজ্ঞতার সমালোচনা করে আসছিলাম এবং এখনো করছি। (সশস্ত্রবাহিনীর সাথে আপস, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগাযোগ, অর্থনীতি ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে আত্মসমর্পণ) এত কিছুর মধ্যেও তাদের রাজনৈতিক সচেতনতার অভাব স্তম্ভিতকর। সালাফিদের বিশেষত আল নূর পার্টির সাথে সেনাবাহিনীর হাত মেলানো দেখে অনেক পর্যবেকই হকচকিত হয়েছে। ‘গণতন্ত্রপন্থী’ সালাফিদের মুরসি বিরোধিতা একধরনের প্রহসন। চরমপন্থী সালাফিদের মুসলিম ব্রাদারহুডের মিত্র হিসেবে পরিচিত করতে পশ্চিমা মিডিয়া ছিল ব্যাকুল। অথচ এরা প্রকৃতপে উপসাগরীয় দেশগুলোর শেখদের মিত্র। উপসাগরীয় এসব দেশ মধ্যপ্রাচ্যে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। আর এটি করা হয়েছিল মূলত মুসলিম ব্রাদারহুডের ধর্মীয় বিশ্বস্ততা নষ্ট করার জন্য এবং মুসলিম ব্রাদারহুডকে (ধর্মীয়) চরমপন্থা অবলম্বনে বাধ্য করার জন্য। মুরসির পতন ঘটানোর সময় তারা শুধু বিশ্বাসঘাতকতাই করল না, বরং বিশ্ববাসীর সামনে তাদের কূটকৌশল ও কৌশলগত মিত্রদের হাজিরও করল। এটি কোনো বিস্ময়কর ব্যাপার নয় যে, মিসরের এই সামরিক অভ্যুত্থানকে প্রথম স্বাগত জানিয়েছে আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও কাতার যারা প্রত্য ও পরোভাবে সব সময় সালাফিদের সাহায্য করত এবং এখনো করে। বাহ্যত কারো কাছে মনে হতে পারে যে, সৌদি আরব ও কাতার মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন করে। কিন্তু বাস্তবে এসব দেশ এ অঞ্চলে আমেরিকার প্রধান কৌশলগত মিত্র। এ অঞ্চলে আমেরিকার প্রধান কৌশল হচ্ছে বিভিন্ন ইসলামপন্থী ধারাগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি, পারস্পরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি ও তাদের অস্থিতিশীল করে রাখা। ঠিক একই কৌশল বজায় রাখা হয় সুন্নিভুক্ত বিভিন্ন রাজনীতিবাদী ইসলামপন্থী দলগুলো এবং সুন্নি ও শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন অতিমাত্রিক করার জন্য। রাজনীতিবাদী আরিক ইসলামপন্থী উপসাগরীয় সালাফি, তাদের গণতন্ত্র অস্বীকৃতি, সংখ্যালঘুদের অসম্মান, নারীর প্রতি বৈষম্য ও শরিয়া হিসেবে পরিচিত কঠোর ইসলামি নীতিমালা প্রয়োগ প্রভৃতির সাথে যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কারণ তারা (সালাফিরা) পশ্চিমাদের আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রা করে। এসব উপসাগরীয় দেশের নির্যাতন ও পশ্চাৎপদ জাতীয় মূলনীতি যত দিন শুধু নিজ দেশের সীমার মধ্যে বিদ্যমান থাকবে এবং পশ্চিমাদের সাম্রাজ্যবাদ ও শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না; তত দিন এসব নিয়ে পশ্চিমাদের কোনো মাথাব্যথাও থাকবে না। লাখ লাখ লোক এই তথাকথিত Second Revolution--এর জন্য মুরসিবিরোধী বিােভ করে এবং সেনাবাহিনীর কাছে আবেদন জানায়। আর সেনাবাহিনী এতে দ্রুত সাড়া দেয়। সেনাবাহিনী এখন জনগণের হাতে মতা প্রত্যাবর্তন করার প্রতিজ্ঞা করছে। বিরোধী দলের নেতা আল বারাদিই এতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছেন এবং তার প্রভাব দ্রুতগতিতে বেড়ে চলছে। ২০০৮ সাল থেকেই তিনি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখছেন সাইবার দুনিয়ার ভিন্ন মতাবলম্বী ও ৬ এপ্রিল আন্দোলনের সাথে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলার প্রমাণ আমি আমার বইয়ে উল্লেখ করেছি। তিনি নানা চাতুর্যপূর্ণ কৌশলের মাধ্যমে তার দৃশ্যায়ন বৃদ্ধি করেছেন, যদিও তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ছিলেন (এবং ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হবেন না)। তিনি মিসরের রাজনীতিতে এখন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের বন্দী করা, তাদের ঘনিষ্ঠ টিভি স্টেশনগুলো বন্ধ করা ও মুসলিম ব্রাদারহুডের ওপর যে নির্যাতন তার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। সামনের দিনগুলোয় এই সামরিক শাসিত রাষ্ট্রটির ‘সুশীল চরিত্র’ আরো বিস্তারিতভাবে জানা যাবে। মনে রাখা দরকার, গত কয়েক দশকব্যাপী সামরিক বাহিনী দেশটির প্রায় ৪০ শতাংশ অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং আমেরিকা থেকে প্রাপ্ত অর্থসহায়তার (১.৫ বিলিয়ন ডলার) বড় অংশ তারা ভোগ করে। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকারকে অপসারণ করা হয়েছে। এ ঘটনাকে ব্যাখ্যা করার জন্য অভ্যুত্থান ভিন্ন অন্য কোনো শব্দ নেই। জনগণের টিকে থাকার জন্য উন্নততর জীবনব্যবস্থা, ন্যায়বিচার ও স্বীয় মর্যাদাবোধের অধিকার দাবি নিঃসন্দেহে যৌক্তিক। আর এ জন্য তারা নিজেদের অজ্ঞাতসারেই সর্বোচ্চ পর্যায়ের মিডিয়া ক্যু ও সামরিক ক্যুর অংশীদার হয়েছে। মিসরের পরিস্থিতি ভয়াবহ। পশ্চিমা সরকারগুলোর নীরবতা আমাদের অনেক কিছু জানান দিচ্ছে। আসলে ‘আরব বসন্তের’ কিছুই এখানে নেই, বরং বিপ্লবের সুবাস টিয়ার গ্যাসের ঝাঁঝ আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিচ্ছে। বর্তমান সময়ে একজন লেখক প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে প্রচলিত অনেক সত্যকে বিশ্বাস করে না। তাকে ‘ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিক’ আখ্যা দিয়ে সহজেই প্রত্যাখ্যান করা হয়। সে েেত্র তার বিশ্লেষণের ভিত্তিকে মূল্যায়ন করা হয় না। আমাদের কী তা হলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, বর্তমান গ্লোবাল বিশ্বে রাষ্ট্রের জাতীয় নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, নতুন ধারার যোগাযোগ প্রযুক্তি, রাজনৈতিক পরিকল্পনা, বিদ্বেষপরায়ণ কৌশল, তথ্য বিকৃতি, মানব শোষণের বিষয়গুলো সব অতীতের কোনো ঘটনা? কিছু ভ্রমগ্রস্ত লোক আছে যারা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইসরাইল, আরব ও আফ্রিকার স্বৈরতান্ত্রিক দেশের ঐন্দ্রজালিক মতায় বিশ্বাস করে, যা প্রকৃতপে তাদের নেই। ‘ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিক’ আখ্যাটি আধুনিক কালের একটি অপমান কৌশল, যা উদ্ভাবন করা হয়েছে তাদের জন্য যারা এসবকে অস্বীকার করে। ষড়যন্ত্র বলতে আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকায় যা দেখেছি আমাদের আজ তা অবশ্যই ভুলে যেতে হবে (সালভাদর অ্যালেন্দির গুপ্তহত্যা এবং থমাস সানকারার এলিমিনেইশন হতে)। আমাদের অবশ্যই উপো করতে হবে সেই মিথ্যাচার, যা ইরাকে আক্রমণ ও গাজায় গণহত্যার জন্য দায়ী ছিল। শেখদের রাজ্যগুলোর চরমপন্থী সালাফিদের সাথে পশ্চিমাদের যে আঁতাত সে সম্পর্কে কিছুই বলা যাবে না। ইসরাইলের স্বার্থে আঞ্চলিক অস্থিরতা ও সর্বশেষ ঘটে যাওয়া মিসরের সামরিক অভ্যুত্থানের ব্যাপারে আমাদের চোখ অবশ্যই বন্ধ রাখতে হবে। আমাদের থাকতে হবে ‘কচি খোকা’ ও ‘সরল বিশ্বাসী’ হয়ে, যদি আমরা এটি ল করতে না পারি যে, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন’ এবং ‘রাশিয়া ও চায়না’ এই দু’প সর্বসম্মতভাবে সিরিয়ার বিষয়ে তাদের ‘অনৈক্যের ব্যাপারে ঐকমত্য’ হয়েছে, যার ফলে প্রতিদিন কেবল বৃহত্তর শক্তিগুলোর কৌশলগত ও অর্থনীতিক স্বার্থের জন্য ১৭০ জন সিরিয়ান মুসলিম নাগরিক জীবন বলি দিচ্ছেন। আমাদের আবশ্যিক দায়িত্ব হচ্ছে সব বিষয়ে অতি সরলীকরণ বাদ দিয়ে প্রকৃত তথ্যের অনুসন্ধান করা। ঘটনার অতি সরলীকরণ পাঠের মাধ্যমে বিপরীত মেরুকরণকে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ বলা হয় না, বরং বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে, ঐতিহাসিক তথ্য ও প্রকৃত ঘটনাবলি এবং দ্বান্দ্বিক স্বার্থের সঠিক বিশ্লেষণকেই বলা হয় ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’। এখানে যে ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয়েছে, তা ভুল বা অযথার্থ হতে পারে। কিন্তু পর্যাপ্ত তথ্য ও প্রতিপাদনযোগ্য প্রমাণ এগুলো নিশ্চিত করছে। যারা আমাদের এ বিশ্লেষণকে সমালোচনা বা চ্যালেঞ্জ করবে, আমরা পরে তাদের জন্য শুধু বিরোধিতা ও অতি সরলীকৃত স্লোগান থেকে দূরে থেকে তথ্যভিত্তিক কাউন্টার অ্যানালাইসিস উপস্থাপন করব। যখন জনগণ একটি সামরিক অভ্যুত্থানকে তার প্রকৃত নামে ডাকতে অস্বীকার করে, যখন সব মিডিয়া তাদের চোখ ফিরিয়ে রাখে; তখন সচেতন বিবেক হয় বাকরুদ্ধ। ড. তারিক রামাদান ১৯৬২ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জন্মগ্রহণকারী এক মিশরীয় চিন্তাবিদ। তার পিতা সাইদ রামাদান একসময় মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রথম সারির নেতা ছিলেন। জামাল নাসের তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করেন। তার মাতা ওয়াফা আল বান্না মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল বান্নার জ্যেষ্ঠ কন্যা। তারিক দর্শন শাস্ত্র ও ফরাশি সাহিত্য নিয়ে মাস্টার্স লেভেলে পড়াশুনা করেন। পিএইচডি করেন আরবি ও ইসলামী শিক্ষা বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব জেনেভোয়। অগণতান্ত্রিক সরকারের সমালোচনার জন্য ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিউনিশিয়া মিশর সৌদি আরব লিবিয়া ও সিরিয়ায় তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। তারিক রামাদান মুভমেন্ট অব সুইস মুসলিম নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ধর্মসংক্রান্ত বিষয়ে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। তিনি ব্রাসেলস ভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক ইউরো-মুসলিম নেটওয়ার্কের প্রেসিডেন্ট।

উপসংহার :

বাংলাদেশে আহলে হাদিসদের অধিকাংশই জামায়াতের সমর্থক ও নেতা । মিশরে সালাফী বা আহলে হাদিসদের দল আন নুর পার্টি সেনা বাহিনীকে সাহায্য করে । আহলে হাদিসরা সেনা বাহিনীর সাথে মিলে মুরশীর লোকদের হত্যা করছে । মিশরের মতো দেশে ইসলাম ধর্মই এখন রাষ্ট্রীয় বিভাজকের ভুমিকা নিচ্ছে । ইদানিং রাজতন্ত্রপন্হী মাদখালী সালাফী বা মাদখালী ওহাবীরাও জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে । তারা সে দেশের নারী সমাজকে সিরিয়ায় যৌন জিহাদে অংশ নিতে উদ্ভুদ্ধ করছে । ধর্মের ব্যাখ্যা কতটা নিচে নামলে এমন হতে বিবেকবান মানুষ ভাবলেও কম্পিত হয়ে উঠে । নিন্দুকেরা বলে থাকেন সৌদি আরবে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে । আর সে দেশের মেয়েরা যৌন জিহাদ করার চেয়ে তো আর ভাল কিছু করতে পারবে না । তাই মরিয়া হয়ে সৌদি আরব মেয়েদের যৌন জিহাদে উদ্ভুদ্ধ করছে । সৌদি আরবের চরম ভোগবাদী সমাজ যদি সেখানে নামাজ কালামকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, কিন্তু সেখানে বিয়ে খুবই কঠিন বিষয় নারী পুরুষের জন্য । এজন্য যুব সমাজের একটা বড় অংশ অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হচ্ছে । তার উপর রাষ্ট্রীয়ভাবে জনগণকে অকর্মন্য করে রাখা হয়েছে । সৌদি আরবকে শ্রেফ নামাজ কালামের জন্য আর বিশুদ্ধ ইসলাম তথা ওহাবী মতবাদের জন্য আদর্শ ইসলামের দেশ মনে করে ইসলামী দলগুলো তাহলে এদেশের লোকরা কখনোই ইসলামী দলগুলোর কার্যক্রমকে মেনে নিবে না । বাস্তবে হচ্ছেও । টেলিভিশনে ওহাবী মতবাদ প্রচারকরা প্রায়ই প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছেন । আর এসব ওহাবী মতবাদ প্রচারকদের অধিকাংশই জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃত্ত ।

বিষয়: বিবিধ

৪৮০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File