আধুনিক তুরস্ক, রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান এবং আমার দৃষ্টিভঙ্গি ও দর্শন
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ২৯ নভেম্বর, ২০১৩, ১২:৫৩:৩০ রাত
পটভুমি :
এই লেখায় মূলত আমার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দর্শনকে তুলে ধরা হবে । এই লেখাটি বড় হওয়ায় বেশ কয়েকটি পর্বে তা তুলে ধরা হবে ।
আমার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে । অন্য কোন লেখায় তা আমি তুলে ধরবো ।
আমার দৃষ্টিতে ধর্ম রাজনীতির অন্যতম উপাদান ও চালিকা শক্তি ।
আমার মতে বাংলাদেশের জন্য মডেল হতে পারে বর্তমানের তুরস্ক এবং বাংলাদেশের জন্য আদর্শ রাজনৈতিক দল হতে পারে বর্তমান তুরস্ক শাসনকারী রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান -এর নেতৃত্বাধীন জাস্টিস এন্ড ডেভালপমেন্ট পার্টি ।
তুরস্কের সংসদে বর্তমান শাসক দলের প্রভাবশালী চারজন সংসদ সদস্যা
তুরস্কের শাসক দলের শীর্ষ নেতা রেসিপ তাইপ এরদুগান ও তার আরব বংশোদ্ভুত স্ত্রী ইমিনি
সূচনা :
আধুনিক ও ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্কে নতুন করে ইসলামী আদর্শের পূণর্জাগরনের ক্ষেত্রে সাঈদ বদিউজ্জামান নূরসী, আদনান মেন্দেরেস ও নাজিমুদ্দিন আরবাকান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
সাঈদ বদিউজ্জামান নূরসী http://en.wikipedia.org/wiki/Said_Nurs%C3%AE
নাজিমুদ্দিন আরবাকান
নাজিমুদ্দিন আরবাকান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন : http://www.bdtomorrow.com/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/14283
বর্তমান সময়ে রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান এবং আব্দুল্লাহ গুলসহ অনেকে ইসলামী আদর্শকে আধুনিক তুরস্কে নতুনভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন ।
১৮৫৬ সালের মানচিত্র যাতে দেখা যাচ্ছে ইরানের উল্লেখযোগ্য অংশ হতে আলজেরিয়া এবং ইউরোপের অস্ট্রিয়ার উল্লেখযোগ্য অংশ হতে আরব উপদ্বীপ পর্যন্ত সরাসরি ওসমানিয়া খিলাফতের অধীন ছিল । তার বাহিরেও ওসমানিয়া খিলাফতের অনেক আশ্রিত রাজ্য ছিল । এমনকি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রও তখন ওসমানিয়া খিলাফতকে কর দিতো ।
http://ottomansouvenir.com/General/maps_of_ottoman_empire.htm
ওসমানিয়া খিলাফত ও ধর্মনিরোপেক্ষ তুরস্ক এবং কামাল আতাতুর্ক :
আফ্রিকা, ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল শাসন করা হতো ওসমানীয় খেলাফতের আওতায় এই তুরস্ক থেকে। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর ওসমানীয় খেলাফত সৌদি আরব, ব্রিটিশ, ফ্রান্স, আমেরিকা ও রাশিয়ার চক্রান্তে একেবারে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
ওসমানিয়া খিলাফাত ধ্বংসকারী বর্তমান সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ (ফি নারী জাহান্নামা খালিদিনা ফিহা )
খিলাফাত ধ্বংসকারী মক্কার উসমানিয়া সমর্থিত শাসক হুসাইন বিন আলী (ফি নারী জাহান্নামা খালিদিনা ফিহা )
এই দুই শয়তান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন : http://www.bdtomorrow.com/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/27711
অবৈধ-অপবিত্র ও হারাম দেশ সৌদি আরব সম্পর্কে জানতে দেখুন : http://www.bdtomorrow.com/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/13231
ইসলাম ও মানবতার দুষমণ এবং ইসলামবিনাসী শক্তির তাবেদার সৌদি রাজপরিবারের ইতিহাস
http://www.bdtomorrow.com/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/27711
প্রথম মহাযুদ্ধে ধর্মনিরোপেক্ষ কামাল পাশা দখলদার বাহিনীকে বিতারিত করতেও সফল ভূমিকা রাখেন ফলে তুরস্কের সাধারণ মানুষের মধ্যে তার গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।
সৌদি আরব, ব্রিটিশ, ফ্রান্স, আমেরিকা ও রাশিয়ার সহযোগিতায় মোস্তফা কামাল পাশা রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তুরস্ক থেকে ইসলামী এবং মুসলিম ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে উৎখাতে ঘৃনিত চেষ্টা চালাতে শুরু করেন। মোস্তফা কামাল পাশা খেলাফত ব্যবস্থার সমাপ্তি ঘোষনা করেন এবং তুরস্ককে জাতীয়তাবাদী ধর্মনিরোপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষনা করেন। তিনি নিজেকে ঘোষনা করেন কামাল আতাতর্ক বলে । আতাতর্ক শব্দের অর্থ তুরস্ক ও তুর্কিদের পিতা ।
শয়তান কামাল আতাতুর্ক
শয়তান কামাল আতাতুর্ক সম্পর্কে জানতে দেখুন : http://www.bdtomorrow.com/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/5166
তিনি ইউরোপের শিক্ষা ব্যবস্থার অনুকরনে তুরস্কে ধর্মনিরোপেক্ষ শিক্ষা চালু করেন। এক সময়ের সুনামধন্য আরবী ভাষা শিক্ষা ও চর্চা বন্ধ করেন। আরবী আযান এবং আরবী ভাষায় কুরআন-হাদীস পাঠ নিশিদ্ধ করেন। তুর্কী মুসলমানদের হজ্ব আদায়ের উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মুসলিম মহিলাদের হিজাব ব্যবহার বে-আইনী ঘোষনা করেন। ১৯২২ সাল থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত মোস্তফা কামাল পাশার এই নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল। মুসলমানদের স্মৃতি বিজরিত এবং গৌরবময় জনপদ তুরস্কের ইতিহাসে কলংকলেপন কারী এই শাসক ১৯৩৮ সালে মৃত্যুবরন করেন।
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে পরাজয়ের পর তুরস্কের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় এবং মুসলিম সমাজে যে বিপর্যয় নেমে আসে তাতে অনেক ক্ষতি হলেও সেই হারানো ঐতিহ্য উদ্ধারে মুসলমানরা বসে থাকেনি। সাঈদ বদিউজ্জামান নূরসী তার সংগ্রামী জীবনে ইসলামী আদর্শের পূনঃপ্রতিষ্ঠায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মোস্তফা কামাল পাশা তুরস্কের মাটি এবং মানুষের অন্তর থেকে থেকে ইসলামী আদর্শ ও সংস্কৃতিকে স্ব-মূলে উৎখাত করার চেষ্টা করলেও তিনি শতভাগ সফল হতে পারেননি।
ইসলামী আদর্শের সেনাপতি আদনান মেন্দারেস :
১৯৪৬ সালে কামাল পাশার দলকে পরাজিত করে ক্ষমতায় আসেন দেশপ্রেমিক নেতা এবং ইসলামী আদর্শের প্রতি আন্তরিক ব্যক্তিত্ব আদনান মেন্দারেস। তিনি শাসক হিসাবে মোস্তফা কামাল পাশার চাইতে তুরস্কের মানুষের কাছে অনেক ইতিবাচক গ্রহনযোগ্যতা পান।
ক্ষমতায় এসে কামাল পাশার ধর্ম বিদ্বেষী নীতি পরিহার করে তিনি জনগনকে ইচ্ছামত ধর্ম পালনের সুযোগ দেন। ধর্ম এবং ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রমের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। আদনান মেন্দারেস তার কাজের জন্য ২য় বারের মতো ক্ষমতায় আসেন এবং দক্ষতার সাথে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভূমিকা রাখেন। কিন্তু মোস্তফা কামাল পাশার গড়ে তোলা তুরস্কের সামরিক বাহিনী আদনান মেন্দারেসের শাসন ব্যবস্থা দির্ঘদিন মেনে নিতে পারেনি।
কামাল পাশার চিন্তাধারার দল রিপাবলিকান পিপলস্ পার্টি সাধারণ নির্বাচনে পর পর ২য় বার আদনান মেন্দারেসের কাছে হেরে যাওয়ায় তারা অন্যপন্থায় ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করে। এই দলটির কারসাজিতে ১৯৬০ সালের ২৭ মে তুরস্কে সামরিক উত্থান ঘটে। প্রেসিডেন্ট জামাল বায়ার, প্রধানমন্ত্রী আদনান মেন্দারেসসহ অনেক মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের লোকদের জেলে নেয়া হয়।
তার ফাসির কারণ সম্পর্কে জানতে দেখুন :
http://archiveislam.com/prime-minister-of-turkey-adnan-menderes.html
বিভিন্ন ধর্মীয় কর্মকান্ড পরিচালনায় অনুমোদন, ইসলামের প্রসারের সুযোগ প্রদান এবং তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ শাসন ব্যবস্থার বিরোধীতার অজুহাতে সামরিক আদালতে প্রহসনমূলক বিচার করে প্রধানমন্ত্রী আদনান সেন্দারেস, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীকে ফাঁসি দেয়া হয় এবং ১৯৬১ সালে ১৭ সেপ্টেম্বর তা কার্যকর করা হয়।
আদনান মেন্দারেস সম্পর্কে আরো জানতে দেখুন :
http://en.wikipedia.org/wiki/Adnan_Menderesচলবে ..................
বিষয়: বিবিধ
৫৯৩১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন