দেরিতে বিয়ে করলে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ০৯ নভেম্বর, ২০১৩, ০১:৪৪:২৯ রাত
বেশী বয়সে বিয়ে করা এখন সাধারণ বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে । এর প্রধান কারণ হল পুঁজিবাদী সমাজ অর্থনীতিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। যেকোন বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবার সময় তারা মূলত সে বিষয়ের অর্থনৈতিক দিকের কথা চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত দেয়। প্রাণীবিজ্ঞানগত ও শরীরগত দিক তারা বেশি গুরুত্ব দেয় না।বিয়ের ক্ষেত্রেও তারা অর্থনৈতিক দিক বেশি গুরুত্ব দেয় যেখানে তাদের বেশি গুরুত্ব দেবার কথা ছিল প্রাণীবিজ্ঞানগত ও শরীরগত দিককে। ফলে যা হবার তা হচ্ছে,মানুষ দেরি করে বিয়ে করে যৌন রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাচ্ছে,স্বামী/স্ত্রীর অক্ষমতার কারণে ডিভোর্স এর ঘটনা বেশি হচ্ছে।
"Late Marriage" এর কারণে নারী-পুরুষ উভয়ই তাদের বিবাহিত জীবনে নানা ধরনের ঝামেলার মুখোমুখি হয়। যেমন :
১)পুরুষরা সাধারণত যেসব সমস্যায় পড়েন :
বর্তমানে পুরুষরা নারীদের থেকে অনেক বেশি "Late Marriage" করছে।কারণ একটাই সেটা হল "ক্যারিয়ার"। বেশিরভাগ পুরুষই এখন ৩০-৩৭ এই বয়সের মধ্য বিয়ে করছে ,ফলে অনেকেই বিবাহিত জীবনে নানান ধরনের ঝামেলার মুখে পড়ছে।
ক)পুরুষ সবচেয়ে বেশি 'Fertile ' থাকে যখন তাদের বয়স ২৪-২৫ বছর হয়।[১ ]
পুরুষ প্রজনন তন্ত্র ও পুরুষ শুক্রাণু । পুরুষের বীর্য নির্দিষ্ট পরিমান সুস্হ ও সাভাবিক শুক্রাণু না থাকে তাহলে সেই পুরুষ সন্তান জন্ম দান করতে সক্ষম হয় না । এই অবস্হাকে বলা হয় unfertility বা অনুর্বরতা । এধরণের পুরুষদের বলা হয় অনুর্বর পুরুষ বা undertile male, যদিও তাদের দেখতে সুস্হ ও সাভাবিক মনে হয় । বাংলাদেশে এমন পুরুষের সংখ্যা ২০ %
বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুরুষের Fertility বা উর্ভরতা কমতে থাকে যদিও নারীদের তুলনায় ধীরে কমে। বয়স্ক পুরুষ তার স্ত্রীর " Miscarriage ( loss of an embryo or fetus before the 20th week of pregnancy)" এ অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।
(অপরিনত অবস্হায় মানবভ্রুণ বা শিশু ভুমিস্ট হওয়াকে Miscarriage বলা হয় । মানবভ্রুণ বা শিশুর বয়স মায়ের গর্ভে ২০ সপ্হাহ হওয়ার আগেই গর্ভ হতে বের হলে Miscarriage হয় । )
পূঁজিবাদী সমাজে নারীদের বয়স বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে সন্তান জন্ম দানের ক্ষমতা হ্রাস পাবার বিষয়টাকে যতটা গুরুত্বের সাথে দেখা হয়,পুরুষদের ক্ষেত্রে ততটা গুরুত্বের সাথে দেখে না।
এই সম্পর্কে Dr. Harry Fisch বলেন,""Not only are men not aware of the impact their age has on infertility, they deny it. They walk around like they're 18 years old," [২]
২০০২ থেকে ২০০৬ এর মাঝে "Miscarriage" এর সম্ভাবনা নিয়ে এক গবেষণায় দেখা যায় যাদের বয়স ৩০-৩৪ বয়স তাদের "Miscarriage" হবার সম্ভাবনা ১৬.৭% ,যাদের বয়স ৩৫-৩৯ তাদের ১৯.৫% এবং যাদের বয়স ৪০ এর উপর তাদের ৩৩%।[৩]
এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত হস্তমৈথুনের কারণে তো পুরুষের infertility বাড়েই।আর দেরিতে বিয়ে হবার কারণে অনেকেই বিকল্প হিসেবে হস্তমৈথুন কে বেছে নিয়েছে।
খ)পুরুষ যদি দেরি করে সন্তান গ্রহণ করে তাহলে সেই সন্তানের মাঝে জেনেটিক্যাল এবনরমালিটি দেখার সম্ভাবনা থাকে।আর এই সম্ভাবনা বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়তে থাকে।একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যাদের বয়স ৪৫-৪৯ তাদের সন্তানের Schizophrenia রোগ হবার দ্বিগুণ ঝুঁকি আছে তাদের তুলনায় যাদের বয়স ২৫ বা তার কম।[৪]
গ)পুরুষের যৌন ক্ষমতাকে আপনি প্রাসের গতিবেগের মত ভাবতে পারবেন।মানে পুরুষের যৌন ক্ষমতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং এক পর্যায়ে তা সর্বোচ্চ হয়ে আবার কমতে শুরু করে।এই জন্য পুরুষের জন্য বিয়ে করার সবচেয়ে ভাল সময় হল ১৮-২৭ এর মধ্যে।সাধারণত ৩০ এর পর পুরুষের দেহে যৌন হরমোন টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন প্রতি বছরে ২% করে কমতে থাকে।[৫]
বড়ই দুঃখের বিষয় এইদেশের বেশিরভাগ পুরুষ ৩০ এর পর বিয়ে করে এবং যৌনতা বিষয়ক সমস্যায় ভুগে আর কলিকাতা হারবালের সাহায্য নেয়।তাছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ২০-২৫ বছরের একজন পুরুষ সংগমের পর মাত্র আধ ঘন্টার মধ্যেই পুনরায় সংগম করার জন্য প্রস্তুত হয়।এক সংগমের পর আরেক সংগমের জন্য প্রস্তুত হওয়ার বিরতিকে 'Refractory Period" বলে।আর এই 'Refractory Period" এর সময় বয়স বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়।[৬]
এর মানে একজন ২০ বছরের পুরুষ একদিনে যতবার সংগম করতে পারে একজন ৩০ বছরের পুরুষ ততবার সংগম করতে সক্ষম নয়।
ঘ)বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুরুষের স্পার্ম কোয়ালিটি দুর্বল হতে থাকে।জার্মানির বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বের করেছেন যে বয়স বাড়ার সাথে সাথে একজন পুরুষের স্পার্মের পরিমাণ কমতে থাকে (মানে স্পামাটোজেনেসিস কমতে থাকে) ,স্পার্মের motility (ability to move toward its destination, an awaiting egg) কমতে থাকে এবং স্পার্ম গাঠনিকভাবে দুর্বল হতে থাকে।[৭]
Embryologist Yves Menezo এই বিষয়ে মত দেন যে বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্পার্মে Genetic Defects সৃষ্টি হয়।[৮]
এছাড়া পুরুষের যৌনাঙ্গও দুর্বল হতে থাকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে কারণ যৌনাঙ্গের পেশীসমূহ দুর্বল হতে থাকে। তাই এক কথায় বলা যায় যে সকল পুরুষ ২০-২৬/২৭ বয়সে বিয়ে করে তারা বায়োলজিকাল দিক থেকে পূর্ণ সুখ লাভ করতে পারবে।
২)নারীরা সাধারণত যে ধরনের ঝামেলার মুখোমুখি হয়ঃ
ক)নারীরা দেরিতে বিয়ে করার ফলে যে সমস্যা সবচেয়ে বেশি ভুগেন তা হল " Miscarriage ( loss of an embryo or fetus before the 20th week of pregnancy)" . (অপরিনত অবস্হায় মানবভ্রুণ বা শিশু ভুমিস্ট হওয়াকে Miscarriage বলা হয় । মানবভ্রুণ বা শিশুর বয়স মায়ের গর্ভে ২০ সপ্হাহ হওয়ার আগেই গর্ভ হতে বের হলে Miscarriage হয় । )
একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে,যাদের বয়স ২০-২৫ তাদের Miscarriage এর ঝুঁকি হল ১০ পার্সেন্ট,যাদের বয়স ২৬-৩০ তাদের ২০ পার্সেন্ট। [৯]
খ) নারীদের 'Fertility rate' ' (সন্তান জন্ম দানের ক্ষমতা) বয়স বাড়ার সাথে সাথে হ্রাস পায়।অর্থাৎ বয়স বাড়ার সাথে সাথে নারীদের 'Infertility rate' বাড়তে থাকে।তার মানে ২০-২৫ বয়সের নারী্রা যতটুকু Fertile, ২৬-৩০ বয়সের নারীরা তত Fertile হবে না।বেশিরভাগ নারীদের 'Fertility rate' সর্বোচ্চ হয় ২৪ বছর বয়সে।[৯]
আর এইজন্য নারীদের 'Fertility rate' যখন উপরে উঠতে থাকে মানে তখন তাদের বিয়ে করার সবচেয়ে ভাল সময় হয়,অর্থাৎ যখন তাদের বয়স ১৭-২৪ হয়। তাছাড়া নারীদের এই সময় কনসিভ করাও সহজ কারণ এই সময়ে তাদের ব্লাড প্রেসারের ঝামেলা ,ডায়াবেটিস এবং Gynecological প্রবলেম যেমন Fibroids,endometrisis এর সম্ভাবনা কম থাকে ।
গ)বয়স বাড়ার সাথে সাথে নারীদের ডিম্বাণুর Quality খারাপ হতে থাকে।এই সম্পর্কে Connie Matthiessen বলেন, "As you get older, your ovaries age along with the rest of your body, and your eggs become less viable. For that reason, younger women's eggs are less likely than older women's to have genetic abnormalities that result in Down syndrome and other birth defects." [৯]
এখন অনেককে দেখা যায় পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় প্রভাবিত হয়ে ২৬-২৭ বছরে বিয়ে করে এবং কনসিভ করতে করতে বয়স গিয়ে দাঁড়ায় ত্রিশের কোঠায়। এই কারণেই মানব সমাজের একটা বিরাট অংশ আজকে জেনেটিকালি দুর্বল হচ্ছে। মানে প্রাণীবিজ্ঞানগত ও শরীরগত দিক থেকে দুর্বল হচ্ছে।
নারীদের মনে রাখা উচিত যে সুস্থ ও সবল মানব শিশু জন্মদানে তাদের ভূমিকাই বেশি। বর্তমানে দেরি করে সন্তান নেয়ার ফলে যেসব অসুবিধা পৃথিবীতে দেখা যাচ্ছে তা এক কথায় ফুটিয়ে তুলেছেন The New Republic এর, science editor Judith Shulevitz।তিনি বলেন,"“For we are bringing fewer children into the world and producing a generation that will be subtly different—‘phenotypically and biochemically different,’ as one study I read put it—from previous generations.”[১০]
উপসংহার :
আসলে দেরিতে বিয়ে করার শারীরিক অপকারিতার থেকে আত্মিক অপকারিতা বেশি।আমরা আসলে ইসলামের আলোকে লেখাটা লিখি নাই।
আমরা এই লেখা দিয়ে এটা বুঝাতে চেয়েছি যে এই পুঁজিবাদী সমাজ একটা জাহেল সমাজ,এই সমাজ না বিজ্ঞান মানছে না ইসলাম মানছে যদিও বিজ্ঞান ইসলামের প্রতিটি বিধানের সাথে একমত।
মুসলিমরা জীবনের কোন সিদ্ধান্ত নেবার সময় বিজ্ঞানকে সামনে রেখে সিদ্ধান্ত নেয় না,সিদ্ধান্ত নেয় আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি সামনে রেখে।
আর এই জন্যই অনেক মুসলিম নিজেকে পবিত্র রাখার জন্য দ্রুত বিয়ে করতে চাইছে কিন্তু এই পুঁজিবাদী সমাজ তাতে বাধা দিচ্ছে।
তাই আমাদের সবারই উচিত দেরি করে বিয়ে করার আত্মিক ও শারীরিক উপকারিতা এই সমাজের কাছে তুলে ধরা,সমাজের কাছে তুলে ধরতে না পারলেও অন্তত পরিবারের কাছে তো খুলে বলা যায়ই।
উৎস :
[১]www.sophisticatededge.com › Health and Fitness › Pregnancy › Fertility
[২]http://www.webmd.com/infertility-and-reproduction/features/age-raises-infertility-risk-in-men-too
[৩]http://www.theguardian.com/society/2008/jul/07/health.children
[৪]http://www.webmd.com/infertility-and-reproduction/features/age-raises-infertility-risk-in-men-too
[৫]http://www.askmen.com/daily/austin_150/155_fashion_style.html
[৬]Seminars in Reproductive EndocrinologyVolume 9, Number 3, August 1991Sherman J. Silber, M.D.
[৭]Human Reproduction Update,2004[৮]The Guardian
[৯]http://www.babycenter.com/0_age-and-fertility-getting-pregnant-in-your-20s_1494692.bc [১০]http://www.catholicworldreport.com/Item/2278/should_we_bring_back_young_marriage.aspx
কৃতজ্ঞতা :
ডা. ফরহাদ হোসেন মিঠু
ডা. মো: খাইরুল ইসলাম মামুন https://www.facebook.com/WeWillMarryEarly
আমরা প্রেম করবো না, বিয়ে করবো তাড়াতাড়ি
বিষয়: বিবিধ
৪৯৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন