আমরা প্রেম করবো না, বিয়ে করবো তাড়াতাড়ি ( পর্ব :২ )

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ০৪ নভেম্বর, ২০১৩, ০৮:৫৩:৪৬ সকাল





পটভুমি :

অনেকেই প্রেম করছেন । সেই প্রেম তাদের কল্যাণ বয়ে আনছে না । এজন্য আমি আগের পর্বে তাড়াতাড়ি বিয়ে করার গুরুত্ব তুলে ধরেছিলাম । প্রেম করা ও প্রেম করে বিয়ে করার খরচ অনেক কম বলে অনেকে প্রেম করে বিয়ের দিকে ঝুকছে । বিষয়টি অবশ্যই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসার বিষয় । বৈধ বিষয়ে খরচ কম হওয়ার কথা । অথচ অবৈধ ব্যাপারে খরচ কম ।







http://www.bdtomorrow.com/blog/blogdetail/detail/1992/farabi1924/28873

বন্ধুরা ! আজকের পর্বের আলোচনার বিষয় : বিয়ের খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশী যুবকরা বিদেশী মেয়ে বিয়ের দিকে ঝুকছে ।

বিয়ের খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশী যুবকরা বিদেশী মেয়ে বিয়ের দিকে ঝুকছে । কারণ :

১.ইউরোপ আমেরিকায় শ্রমিক হিসাবে এসে অবৈধ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশীদের কাছে বিয়ে বিদেশী মেয়ে বিয়ে করা মানে বৈধতা পাওয়া ।

২. অনেক বৈধ ছেলে আছে... যারা বাংলাদেশে গিয়ে বিয়ে করার চিন্তা এখন আর করে না । কারন যারা বাংলাদেশে আয় করে তাদের হাতে প্রচুর অবৈধ টাকা তাই বিয়ে নিয়ে তাদের কোন চিন্তা নাই । সরকার জীনিস পত্রের দাম দফায় দফায় বাড়ালে কেউ কোন প্রতিবাদ করে না কারন তাদের হাতে আছে কালো টাকা । কালো টাকার মালিক ও ধনী লোকরা প্রবাসী ছেলেদের কাছে তাদের মেয়ে বিয়ে দেওয়ার সময় মনে করে ছেলে অনেক টাকা খরচ করবে । কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন ।

৩.ইউরোপের অনেক দেশের থেকে বাংলাদেশের জীবন যাত্রার ব্যয় অনেক বেশী। একটা ছেলে দেশে গিয়ে বিয়ে করতে চাইলে তাকে কমপক্ষে ১০ লক্ষ টাকা হাতে নিয়ে নামতে হবে। সিলেট বা চট্রগ্রাম হলে আরো বেশী। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এত টাকা কারো পক্ষে জমা করা সম্ভব হয় না।

৪.কিন্তু একটা বিদেশী মেয়ে বিয়ে করতে সর্বোচ্ছ এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়। চার্চে বা মসজিদে গিয়ে বিয়ে পড়ানো, রেজিস্ট্রেশন এবং বন্ধু বান্ধব নিয়ে ছোটখাট অনুষ্ঠান করা ছাড়া তেমন খরচ নেই।

এর ফলে উদ্ভুত ক্ষতিকর দিক :

আমাদের দেশে এমনিতেই ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা বেশী। তার উপর আবা ছেলেরা যদি দেশী মেয়ে বিয়ে না করে বিদেশী মেয়ে বিয়ের দিকে ঝুকে তাহলে অনেক দেশী মেয়ের অবিবাহিত থাকার সম্ভাবনা বেশী।

এব্যাপারে সরকারের করণীয় :

আফগানিস্তান ও ইরানে যেভাবে আইন করে বিয়ের খরচ কমানো হয়েছে আমাদের দেশেও এমন করা হোক। কারন সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মত বিয়ের কঠিন পদ্ধতি পৃথিবীর আর কোথাও নেই। সামাজিক ভাবে বিয়েকে কঠিন করা হয়েছে।

এব্যাপারে আলেমদের করণীয় :

আলেমরা মসজিদে জুমার খুতবায় ও ওয়াজ মাহফিলে কম বয়সে বিয়ে করার গুরুত্ব, ধর্ষণ, ইভটিজিং ও অন্যায়-অত্যাচারের বিরোদ্ধে প্রতিবাদের গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে পারেন। তারা এধরনের কাজ করলে আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের সম্মান ও মর্যাদা আরো বাড়িয়ে দিবেন ।

এজন্য আমরা যারা https://www.facebook.com/WeWillMarryEarly এই পেজে লাইক করেছি তাদের করণীয় :

১.বিয়ের খরচ কমাতে আইন প্রণয়ন করার জন্য জনমত গঠণ করবো ।

২. আমাদের পরিচিত যারা এখনও বিয়ে করেননি তাদের আমরা বোঝাবো এবং আমরা নিজেরা নিন্মোক্ত কাজগুলো করবো :

1.আমরা মসজিদে গিয়ে বিয়ে করবো ও বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করবো ।

2.বন্ধু বান্ধব নিয়ে ছোটখাট অনুষ্ঠান করে বিয়ের অনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবো । এক কাপ চা আর বিস্কুট দিয়েও বিয়ের অনুষ্ঠান করা যায় । প্রয়োজনবোধে আমরা সে দিকেই ঝুকবো । চির দিন কারো একই অবস্হা থাকে না ।

বিয়ের অনুষ্ঠা্নের নামে বেশী বেশী খরচ করা, এটা অপচয় ও ইসলামের আদর্শবিরোধী কাজ । আর বিয়েকে কেন্দ্র করে জামজমক প্রদর্শন করা উচিত নয় ।

3.বিয়ের খরচ আমরা বর - কনে উভয়েই বহন করবো । কারণ বিয়ে দুই জনের বিষয় । একে বারে ছেলের উপরই বিয়ের খরচের ব্যাপারটি বর্তাবে তা নয় । আমরা ছেলে-মেয়ে উভয়কেই গুরুত্ব দিচ্ছি । কারণ আমরা সামান্ত যুগে বসবাস করছি না । গণতান্ত্রিক যুগে বসবাস করছি । একটা বিয়েতে মেয়ে যদি খরচ করতে চায় বা বর-কনে পরস্পর যদি এব্যাপারে ইচ্ছা পোষণ করে তাহলে কারো আপত্তি থাকার কথা নয় । বর্তমান যুগে স্বামী - স্ত্রী কাজ করছে । দুই জনের উপার্জনে সংসার চলছে । আমরা আমাদের যুগকে অস্বীকার করতে পারি না । বিয়ে এক জনের ব্যাপার না । দুই জনের ব্যাপার হওয়ায় আমরা এমন দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে চালু করতে পারি ।

4.বিয়ের জন্য কেহ কোন পক্ষ হতে যৌতুক ও গিফট নিবো না । কারণ এটা ইসলামবিরোধী কাজ ।

আর গিফট সংস্কৃতি হতে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে । ইসলামে উপহার আদান-প্রদান সব সময়ই করা যায় । তা-ই বলে একটা উপলক্ষ্য করে আমাদের দেশে যে গিফট সংস্কৃতি চালু হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য । এটা এক ধরণের নিরব যৌতুক-এর মতো । যারা গিফট দেন তারা অনিচ্ছা সত্ত্বে ও সামাজিকতা রক্ষার জন্য দেন ।

ছেলে-মেয়ের বাবা-মা আর বর-কনে পরস্পরকে উপহার দেওয়ার কথা হাদিস গ্রন্হে পাওয়া যায় । অন্যদের বিয়েতে উপহার দেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করতে হাদিসে দেখা যায়নি । আর হাদিসে দেখা যায়, উপহার বলতে ছেলে-মেয়ের বাবা-মা আর বর-কনে পরস্পরকে বসবাস করার প্রয়োজনীয় উপকরণই দিয়েছে । অন্য কিছু নয় ।

5.বিয়েতে খুব কম দেনমোহর ধার্য করবো ।

6.যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি বিয়ে করবো ।

7.কখনো প্রেম করে সময় নষ্ট করবো না বা বিয়ের পূর্বে কোন না কোনভাবে কোন নোংড়ামী করবো না ।

কেন আমরা বিয়েতে কম খরচে করবো ও বিয়ের আগে প্রেম করা হতে বিরত থাকবো :







http://www.zawaj.com/rights-of-the-husband-and-wife-in-islam/

১. যে কোন ধরনের নোংড়ামী করলে । তার জন্য জান্নাতে যাওয়া কঠিন হয়ে যাবে এবং বৈবাহিক জীবন হতে সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়তা বিলীন হয়ে যাবে । অথচ ইসলামে বৈবাহিক জীবনটা গুরুত্বপূর্ণ । কারণ বৈবাহিক জীবনের মাধ্যমে ধর্ম চর্চা ও আধ্যাতিকতা অর্জিত হয় । বিয়ে একটা ব্রত বা সাধনা শুরু করার নাম । উপরন্তু জান্নাতই আমাদের শেষ ঠিকানা ।

২.বিয়ের আগে প্রেম ইসলাম অনুমোদন করে না ।



৩.সত্যিকার ইসলামী নিয়ম মেনে বিয়ে করলে বর্তমান বাজার দরে খরচ মাত্র ৩০ হাজার টাকা ।

৪.দেন মোহর কম ধার্য করা বিয়েতে আল্লাহর রহমত থাকে । কারণ রাসুল সা. ও আয়েশা রা. কম দেন মোহর ধার্য করা বিয়েকে সর্বোত্তম বিয়ে বলেছেন ।

৫.আমরা তাড়াতাড়ি বিয়ে করবো । কারণ বিয়ের ফলে শরীর,স্বাস্হ্য,মন ভালই থাকে না, বরং কাজ-কর্মে ধীরতা-স্হিরতা আশার সাথে সাথে ইসলামের প্রাথমিক ইবাদতগুলো সঠিক ও সাবলীলভাবে করা যায় । কারণ এব্যাপারে হাদিসে বলা আছে অবিবাহিত লোকের এক রাকাত নামাজে যে শোয়াব হয় তার বিরাশি গুণ ছোয়াব লাভ করে বিবাহিত লোক এক রাকাত নামাজ পড়লে ।



৬.বিয়ে মানেই আধ্যত্মিকতা । কারণ বিয়ের মাধ্যমেই আল্লাহর রহমত অর্জিত হয় । কারণ রাসুল সা. বলেছেন : হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন : কোন স্বামী যখন তার স্ত্রী দিকে তাকায় এবং স্ত্রী স্বামীর দিকে তাকায়, তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের দিকে করুণাময়ের দৃষ্টিতে তাকান ও তিনি তাদের দয়া করেন । তার স্বামী যখন স্ত্রীর হাত ধরে, তখন উভয়ের পাপসমূহ তাদের আঙ্গুলীর ফাঁক দিয়ে ঝড়ে পড়ে । ( বুখারী এবং তিরমিজি )

৭.মোটামোটি যার হাতে বিয়ে অনুষ্ঠান করার পরিমান টাকা হাতে থাকে এবং এক মাস থাকা ও খাওয়ার টাকা হাতে থাকে ও কর্মসংস্হানের ব্যবস্হা থাকে এবং তার বিয়ের বয়স হলেই বিয়ে করে ফেলা উচিত । এজন্য বাবা-মা উভয়েরই যদি কোন অনুমতি না থাকে বা তারা বিয়ে করতে বাধা দিলেও বিয়ে করা দোষণীয় কাজ হবে না । তবে শর্ত হচ্ছে উভয়ের বাবা-মা কাকে বিয়ে করা হচ্ছে-সেই সম্পর্কে জ্ঞাত থাকতে হবে ।এই কথা ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য প্রযোজ্য । তবে মেয়েদের জন্য এই ভিডিওটিতে দিক নির্দেশনা রয়েছে : http://www.dailymotion.com/video/xuq1ac_marriage-talk-with-the-mother-in-bengali_lifestyle এই ভিডিওটা মেয়েদের দেখা উচিত । না দেখলে অনেক কিছু মিস হয়ে যেতে পারে ।

উপসংহার :

তাড়াতাড়ি বিয়ে না করলে আমরা বিয়ের আগে অনৈতিক প্রেম ভালবাসার মায়া জালে আটকে যাবো । বিয়ের আগে এধরনের প্রেম ইসলামে অগ্রহণযোগ্য । আমরা জেনে শুনে অগ্রহণযোগ্য কাজ করে মৃত্যুর পর আমাদের শেষ ঠিকানা জান্নাতে যাওয়ার পথ রুদ্ধ করে দিতে পারি না ।





এজন্য আমাদের জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনী খুজে পাওয়ার জন্য কিছু দুয়া নামাজ শেষে পড়বো ও সামান্য হলেও পড়াশোনার ফাকে ফাকে আয় রোজগার করবো । তাহলে আল্লাহ মুসলিমদের মধ্য হতে কোন এক লোককে আমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিবেন যাদের আমাদের ভাল লাগবে এবং তাদেরকে সহযোগি হিসেবে জান্নাত পর্যন্ত পৌছতে পারবো এবং সুরা আরাফের ১৮৯ আয়াতে বর্ণিত শান্তি ও সুষমা এবং সুরা রুমের ২১ নং আয়াতে বর্ণিত ভালবাসা ও দয়া পাবো । তাহলে আজ হতেই সেসব দুয়াগুলো মুখস্হ করে পড়তে থাকবো । যেমন :

রাব্বানা হাবলানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া জুর্রিয়াতিনা কুর্রাতাইআইনি ওয়াআজয়ালনা লিল মু্ত্তাকিনা ইমামা । সুরা ফুরকান:৭৪

হে আমার প্রতিপালক । আমাদেরকে এমন জুরি ও সন্তান সন্তুতি দাও যাদের দিকে তাকালে আমাদের চোখ জুড়িয়ে যায় এবং আমাদেরকে আল্লাহভীরুদের অনুসরণযোগ্য কর ।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার :

১.আমার বর্ণমালা ব্লগসাইটের ব্লগার তায়িফ ভাই ।

২. https://www.facebook.com/WeWillMarryEarly

৩. http://www.zawaj.com/rights-of-the-husband-and-wife-in-islam/

৪. http://sethadamsmith.com/2013/11/02/marriage-isnt-for-you/

বিষয়: বিবিধ

৪১২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File