ধর্ষণ হতে রক্ষা পাওয়ার উপায় ( ১ম পর্ব )

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ০১ নভেম্বর, ২০১৩, ০৫:৫৪:২৮ বিকাল



পটভুমি :

২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে একটা খবর পত্রিকায় দায়সারাভাবে প্রকাশ হচ্ছিল । প্রথমে খবরের শিরোনামটা অনেকটা ছিল এমন : জীবন দিয়ে সম্ভ্রম রক্ষা করেন ডাক্তার সাজিয়া আফরিন ইভা । খবরটি হতে আমরা বুঝতে পারছি কর্মক্ষেত্রে কর্মজীবী আপুরা এক শ্রেণী মানুষরুপী পশু হতে মোটেও নিরাপদ নয় । তার মৃত্যুর এক বছর হতে চল্লো ।

যখন খবরটি শুনলাম আমি ভীষণ মর্মাহত হলাম । আমি আমার পরিবারের লোকদের সাথে খবরটি শেয়ার করলাম ।

সাজিয়া আফরিন ইভা আপু কর্তব্যরত অবস্হায় নিজের কর্মক্ষেত্রে সম্ভ্রম অক্ষুন্ন রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতে যেয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন । তিনি সিলেট মেডিক্যাল কলেজ হতে এমবিবিএস ডিগ্রী লাভ করেন ২০০৮ সালে । তিনি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে এফসিপিএস কোর্সে (পার্ট-২) পড়ছিলেন । পড়ার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকের কাজ করতেন ।





এই খবর আমাদের পরিবারের আরো অনেককেই দু:খ দেয় । আমি রাত জেগে "মেয়েরা কীভাবে কর্মক্ষেত্রে আত্মরক্ষা করবে" শিরোনামে একটা লেখা লেখার চেষ্টা করি । আমাকে আমার পরিবারের সবাই বলেছে, শুধুমাত্র একটা লেখা লিখে সমাধান সম্ভব নয় । এজন্য অনেক লেখা লেখতে হবে । ফেসবুকে "মেয়েরা কীভাবে কর্মক্ষেত্রে আত্মরক্ষা করবে" শিরোনাম দিয়ে পেজ বানানো যেতে পারে । যেখানে ভিডিও ও ছবির মাধ্যমে মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল দেখানো হবে এবং এই পেজে কর্মজীবী মেয়েদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেওয়া হবে । পেজটার শিরোনামও ইতোমধ্যে ঠিক করা হয়েছিল : Self-defense techniques for girls and women to escape from rape পরে এই পেজটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে : মেয়েদের-জন্য-আত্মরক্ষা-কৌশল । এর লিংকটা হলো : http://www.facebook.com/SelfdefenseTechniquesForFemales

সবাইকে এই পেজে লাইক করার জন্য অনুরোদ করা হলো । এই পেজে মেয়েরা কীভাবে কর্মক্ষেত্রে আত্মরক্ষা করবে - তার বিভিন্ন কৌশল ভিডিও ও ছবির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে এবং এসম্পর্কে মেয়েদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেওয়া হবে ।

আমাদেরকে অবশ্যই কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের নিরাপত্তাতা নিশ্চিত করার কথা বলতে হবে । এই ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে ।

এই খবরটা গুরুত্বপূর্ণ । এই খবরটাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে । বিরোধী দলগুলোকেও এব্যাপারে কোন সোচ্চার হতে দেখা যায়নি । অথচ আমরা দেখেছি ইয়াসমিন নামক এক মেয়েকে ধর্ষণের জন্য টানা পাচ দিন দেশে হরতাল অবরোধ হতে । আর একটা বড় শীর্ষস্হানীয় এনজিও-র হাসপাতালে এই অপকর্ম ঘটায় এই এনজিও-ও বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে । যার ফল হলো হাতে গোনা দুই একটা পত্রিকা দায়সারাভাবে খবরটি ছাপে । আর প্রত্যেকটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াও ছিল নিরব । এমনকি তাদের নিউজ স্ক্রুলেও খবরটি আসেনি ।

আর ব্লগ সাইটগুলোও এই বিষয়কে গুরুত্ব দেয়নি । যে দুই একজন পোস্ট দিয়েছে তারাও অক্ষ্যাত ব্লগার । পোস্টগুলো প্রকাশ করার জন্য রহস্যজনক কারণে বেশ কিছু ব্লগার পোস্টগুলোকে ডিলিট করার জন্য মন্তব্য করতে থাকে । আর একটা ব্লগে নির্যাতিতাকে বাজেভাবে উপস্হাপনের জন্য চেষ্টা করা হয় । আর এমনও বলা হচ্ছিলো : মেয়েদের কি দিন এর শিফট এ কাজ দেয়া যায় না। অর্থাৎ দোষ নির্যাতিতার ।

কিন্তু অন্য সময় এইসব ব্লগার কোন হাসপাতালে কোন বয়োবৃদ্ধ রোগী মারা গেলে "ডাক্তারদের কাছে ডে নাইট বলে কোন ব্যাপার নেই । তারা মানুষের সেবার জন্য নিবেদিত ।" পোস্ট লিখে ব্লগ সাইটগুলোকে মাতিয়ে তুলতো ।

সমস্যার গোড়ায় কেহ প্রবেশ করছেন না । আপুর ব্যপারে যা হয়েছে তা হলো তার নিরাপত্তা সুরক্ষিত করা হয়নি । দুর্বত্ত ও লম্পট ধরণের লোকদের এনজিও-তে কম বেতনে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে ক্রমাগত অপকর্ম ঘটছে । উপরন্তু আমাদের ডাক্তার সাজিয়া আপু আত্মরক্ষা কৌশল জানতেন না ।

খবরটি হতে আমার বুঝতে পারছি কর্মক্ষেত্রে কর্মজীবী আপুরা এক শ্রেণী মানুষরুপী পশু হতে মোটেও নিরাপদ নয় । আর আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রও এসব মানুষরুপী পশুদের বিরোদ্ধে যথাযথ ব্যবস্হা নিচ্ছে না। নিন্দা ও ধিক্বার জানাই এক শ্রেণীর এনজিও-র প্রতি যারা নারী অধিকারের কথা বলে । অথচ তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতেই নারীরা নিরাপদ না ।

আসুন আমরা ডাক্তার সাজিয়া আফরিন ইভা আপুর জন্য দুয়া করি :

হে চিরন্জীব । হে চিরস্হায়ী আল্লাহ । আপনার করুণা বর্ষণ কর

ডাক্তার সাজিয়া আফরিন ইভা আপুর প্রতি । তার কবরকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দাও ও তাকে জান্নাতের বাসিন্দা কর এবং তার হত্যাকারীর দুনিয়া ও আখিরাত ধ্বংষ করে দাও ।

সূচনা :

আপুদের বলছি । আপনি যথেষ্ট সতর্কভাবে চলাফেরা করুন না কেন তারপরেও আপনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে ধর্ষকদের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন । তারা আপনার সম্ভ্রমহানী করার করার চেষ্টা করবে ।

ধর্ষণ হতে যেভাবে রক্ষা পাবেন :

যদি আপনি ধর্ষকদের আক্রমণের শিকার হয়ে পড়েন, তাহলে আপনাকে আপনার সম্মান রক্ষার জন্য নিন্মোক্ত সাবধানতা অবলম্বণ করতে হবে :

১.যদি কোন ধর্ষক আপনাকে আপনার সম্ভ্রমহানি করার উদ্যোগ নেয়,তখন ভয়ে বিহবল হয়ে পড়বেন না । মাথা ঠান্ডা রাখুন । শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার দিন : বাঁচাও বাঁচাও । কে আছো বাঁচাও । আমার সর্বনাশ……….।

২.ধর্ষকের সাথে শক্তি প্রয়োগ করতে যাবেন না । সে আপনার চেয়ে শক্তিশালী হতে পারে।

৩.নাকের উপরে জোরে ঘুষি মারুন । কয়েক সেকেন্ডের জন্য ধর্ষক থমকে যাবে। এই সময়ে তার হাত হতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিন এবং পালান। অবশ্যই চিৎকার করতে করতে পালিয়ে যাবেন ।

ধর্ষক যদি দাড়ানো অবস্হায় থাকে আপনি ওড়না দিয়ে ধর্ষকের গলা পেচিয়ে ধর্ষককে কাবু করতে এই পেজের ১ ও ১০ নং কৌশল ব্যবহার করতে পারেন । কৌশলগুলো পাবেন এই পেজে : http://www.facebook.com/SelfdefenseTechniquesForFemales

৪.ধর্ষকের শরীরে যতটা সম্ভব নিজের দাঁত, মাথা, পা, হাত, হাঁটু, নখ ব্যবহার করুন ।

কারণ আপনি নিজেও আক্রান্ত হতে পারেন চুলে, চোখে, নাকে, গলায়, কাধের হাড়ে, পাঁজরে, কিডনীতে, পাকস্থলীতে, মেরুদন্ডে অথবা হাঁটুতে । আপনার নিজের আত্মরক্ষার্থে আপনি আপনার দাঁত, মাথা, পা, হাত, হাঁটু, নখ ধর্ষকের উপর ব্যবহার করুন ।

ধর্ষক যদি দাড়ানো অবস্হায় থাকে ১১ নং কৌশলের মাধ্যমে চুল মাটিতে ফেলে দিয়ে তাকে কাবু করুন । ১২ নং কৌশলের মাধ্যমে ধর্ষকের গলার পেছনের দিক বরাবর আঘাত করতে পারেন ।১৪ নং কৌশলের মাধ্যমে নাক বরাবর আঘাত করতে পারেন । ১৬ এবং ১৭ নং কৌশলের মাধ্যমে গলার হার বরাবর ধর্ষককে আঘাত করে কাবু করতে পারেন ।

কৌশলগুলো পাবেন এই পেজে : http://www.facebook.com/SelfdefenseTechniquesForFemales

৫.হাতের কাছে তালা, লাঠি বা বোতল এ জাতীয় কিছু থাকলে ধর্ষকের মাথায় আঘাত করুন।

চাবি থাকলে ধর্ষকের চোখে চাবি ছুঁড়ে মারুন ।

ধর্ষক যদি দাড়ানো অবস্হায় থাকে তাহলে ১৮ অথবা ১৯ নং কৌশল ব্যবহার করে চুল ধরে নিচে ফেলে দিবেন । অথবা ২০ নং কৌশল ব্যবহার করে ধর্ষকের গলা মচকে দিয়ে ধর্ষককে কাবু করতে পারেন ।

কৌশলগুলো পাবেন এই পেজে : http://www.facebook.com/SelfdefenseTechniquesForFemales

৬.পায়ে হাই হিল থাকলে ওটা খুলে নিন। দৌড়াতে সুবিধা হবে । ধর্ষকের মাথায় এটা দিয়ে আঘাত করুন ।

৭.ধর্ষকের দূর্বল অঙ্গে আঘাত করুন । ধর্ষকের সবচেয়ে দুর্বল অঙ্গ প্রজননতন্ত্র ও গলার উপরের উচু হারটা । ধর্ষকের প্রজননতন্ত্রে জোড়ে লাথি মারুন । যত জোরে সম্ভব । এতেই কাবু হয়ে যাবে সে । এবার পালান ।

ধর্ষকের দূর্বল অঙ্গে আঘাত করে কাবু করার জন্য ৪ নং কৌশল ব্যবহার করুন ।

কৌশলগুলো পাবেন এই পেজে : http://www.facebook.com/SelfdefenseTechniquesForFemales

উপসংহার :

নিজেকে শারিরীক ও মানসিক ভাবে শক্তিশালী করে তৈরি করে নিন, যেন যে কোন ধরনের বিপদ হতে নিজেই উদ্ধার পেতে পারেন । এজন্য আত্নরক্ষার কিছু সহজ কৌশল শিখে নিন । আর আমাদের এই পেজের সাথেই থাকুন আর আমার সাথে থাকুন ।

মনে রাখবেন :

১.প্রতি ২ মিনিটে ১ টা মেয়ে সম্ভ্রম হারায় ।

২.সম্ভ্রম হারানোর ফল খুবই খারাপ । আপনি মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়বেন । পোস্ট স্ট্রোমাটিক স্টেস ডিসঅডার ছাড়াও সেক্সচুয়াল্লি ট্রান্সমিডেট ডিজিজ ছাড়াও আপনার মনে পুরুষদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে যাবে ।

৩.৭৫% সম্ভ্রমহারা মেয়ের তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয় ।

৪.৪৫ % ধর্ষকের আছে মারাত্মক সব রোগ । আপনি তাদের দ্বারা সম্ভ্রম হারালে সেসব রোগে আপনি আক্রান্ত হবেন ।

৫.৬২ % সম্ভ্রমহানীর ঘটনা কখনোই সম্ভবহারারা সারা জীবন কারো কাছেই প্রকাশ করেন না ।

সুতরাং ধর্ষণ হতে বাঁচুন । আত্মরক্ষা কৌশল শিখুন । কারণ : বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত

Women who learn self-defense have higher self-esteem.

তাহলে Stand and speak out.

আমরা আপনাদের সাথে আছি । আজই আমাদের এই পেজে লাইক করুন এবং আমাদের সাথেই থাকুন ।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার :

১. পিপলস্ এন্ড স্টুডেন্টস্ ডায়ালগ

২. ড. শাহ দ্বীন মালিক

৩. ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম

লেখক :

মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম

http://www.facebook.com/fakhrul78

বিষয়: বিবিধ

৩৫৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File