আমরা প্রেম করবো না, বিয়ে করবো তাড়াতাড়ি ( পর্ব : ১ )

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ১৬ অক্টোবর, ২০১৩, ১০:০৯:৪৪ রাত



পটভুমি :

আমার পরিচিত অনেকে প্রেম যমুনায় ডুব দিয়ে গান গাচ্ছেন :

"প্রেম যমুনার মাতাল ডিঙ্গায় আমায় পার করো না ।

ঘুরে ঘুরে আমি দিশেহারা হলাম তোমার দিওয়ানা ।

.....লুকোচুরি খেলো না দিয়ো না যাতনা ।

.....মান অভিমান ভুলে আমায় কাছে ডেকো না ।

( http://doridro.net/download/!Best%20Song%20Collection/!Best%20Song%20Of%202007/01.Balam%20-%20Lukochuri.mp3.html )

অথবা বাড়ির ছাদে উঠে গাচ্ছেন :

" চাই না মেয়ে তুমি অন্য কারো হও ।

পাবে না কেউ তোমাকে, তুমি কারো নও ।

এহৃদয় তোমারই .।

তোমাকে ছাড়া আমি বুঝি না কোনো কিছু যে আর ।

পৃথিবী জেনে যাক তুমি শুধু আমার ।

( http://doridro.net/download/Adhunik%20Bangla/Mixed%20Album/Hridoy%20-%20Mix/1.Chaina%20Meye.mp3.html )

অথবা পরিচিতা কেহ লাভ ক্রেজ ও নাইম্ফোম্যানিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন । তিনি একের পর এক ছেলের সাথে প্রেম করে যাচ্ছেন । আর বাবা-মাও দেখেও না দেখার ভান করছেন ।

অথবা কাউকে দেখছি : অফিস আওয়ারে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে যাচ্ছেন প্রেমিকার সাথে । অথচ নামাজ পড়েন ও অন্যান্য ইবাদত বন্দেগী ভাল ভাবেই করেন । বিয়ের কথা বল্লে বলেন : আরেকটু ঘুছিয়ে নেই ।

ব্লগ সাইটে ইসলামের মহান রক্ষকদেরও দেখছি লাভ ক্রেজে আক্রান্ত হয়ে কোন বিশ্ববিদ্যালয় ও বেগানা কোন মেয়েও বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকার আকুতি প্রকাশ করতে আর সেই বেগানা মেয়ের জন্য হাহুতাস করতে, অথচ সেই মেয়ে সেই ছেলেকে বিন্দুমাত্র চিনে না ।

এই ব্যাপারে অভিভাবক ও প্রেমিক-প্রেমিকা এবং মান্যবর ব্লগার ও পাঠক-পাঠিকাদের দৃষ্টি আকর্ষন করে আমার জন গুরুত্বপূর্ণ ধারাবাহিক লেখা উপস্হাপন করছি । আশা করি, আপনারা আমার জন গুরুত্বপূর্ণ এই লেখা মনযোগের সাথে পড়বেন এবং বাস্তব জীবনে কাজে লাগাবেন ।

বিয়ের বয়স আসলে কোন বয়সে হয় ? :

২২ হতে ২৪ বছরের মধ্যে পারিবারিক জীবন শুরু করে মা হওয়ার কথা বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন । কারণ এই বয়সটা মেয়েদের বিয়ে করার জন্য এবং প্রথম সন্তান জন্ম দেওয়ার আদর্শ সময় । আমার এই কথাকে সমর্থন করেছে বিখ্যাত যৌন বিজ্ঞানী ও পুলিশ কর্মকর্তা আবুল হাসানাতের... বিখ্যাত যৌন বিশ্বকোষ “যৌন বিজ্ঞান” বই । এই বইয়ের প্রথম খন্ডের ৪০৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে : মেয়েদের বিয়ের জন্য ২২-২৪ বৎসর বয়সই বিয়ের জন্য ভাল । এখানে অনেক যুক্তি দেখানো হয়েছে । দেহগত অনেক দিক আলোচনা করে এই বয়সের মধ্যে সন্তান ধারনের যুক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে ।



আমাদের দেশের কোন কিছুর সময়ের ঠিক নেই । “এই নয়টার ট্রেন কয়টায় ছাড়ে”র মতো আমাদের জীবন । আমাদের কোন কিছুর জন্য পরিকল্পনা করতে শেখানো হয় না । ক্লাস শুরুর আগে নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে কিছু বলতে বলা হয় না ।



ইসলামের দৃষ্টিতে জীবনসঙ্গী কেমন হবে ? :

এমন কাউকে বেছে নিতে হবে যে ভবিষ্যত ক্যারিয়ার গঠণে সাহায্যকারী হবে । এই বাক্যটাকে এমনভাবে বলা যায় “এমন কাউকে বেছে নিতে হবে যে ভবিষ্যত ক্যারিয়ার গঠণের জন্যই না জান্নাতে যাওয়ার জন্য সাহায্যকারী হবে ।” কারণ:

. ভাল চরিত্রের মেয়েরা ভাল চরিত্রের ছেলেদের জন্য (সুরা নুর : ২৬ )অর্থাৎ কুরআনের মূলনীতি ভাল লোকদের জন্য ভাল লোক বাছাই করতে হবে বা বাছাই করে দিতে হবে ।

. বিয়ে হচ্ছে দ্বীনের অর্ধেক । যে বিয়ে করলো সে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করলো । তার বাকী অর্ধেক হলো আল্লাহভীতি অর্জন করা ।( হাদিস : মেশকাত শরীফ)

. আল্লাহ তায়ালা দম্পতিদের সুখ-সম্ভোগ ও হাসি-তামসা দেখে খুশী হোন এবং তাদের কাজের জন্য আমল নামায় ছোয়াব লিখা হয় । তাদের জন্য হালাল রোজগারের ব্যবস্হা করেন । (হাদিস: কানজুল ইম্মাল )

. দম্পতিরা পরস্পরের দিকে তাকানোতে সবুজ বৃক্ষের দিকে তাকানোর মতো যার ফলে চোখের জ্যোতি বাড়ে ।হাদিস

. বিবাহিতের ২ রাকাত নফল নামাজ অবিবাহিতের চেয়ে ৮২ রাকাত হতে উত্তম ।হাদিস

. কোন স্বামী যখন তার স্ত্রী দিকে লক্ষ করে এবং স্ত্রী স্বামীর দিকে তাকায়, তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টি করেন ।তার স্বামী যখন স্ত্রীর হাত ধরে, তবে উভয়ের পাপসমূহ তাদের আঙ্গুলীর ফাক দিয়ে ঝরে পড়ে । হাদিস



আমরা হাদিস ও কুরআনের এধরনের অনেক উদৃতি খুজে পাবো । তবে আমাদের সমাজে বিবাহটা ছেলে মেয়ে দুই জনের জন্য সবচেয়ে কঠিন হালাল কাজ । আমাদের সমাজে ছেলে মেয়েরা বিনা বাধায় প্রেম করতে পারে এবং বাজে ভাবে চলাফেরা করতে পারে যাকে দোষণীয় মনে করা হয় না । কিন্তু ইসলামের সত্যিকার শিক্ষা অনুযায়ী বিয়ে সবচেয়ে সহজ হালাল কাজ ।

সুতরাং “এমন কাউকে বেছে নিতে হবে যে ভবিষ্যত ক্যারিয়ার গঠণের জন্যই না জান্নাতে যাওয়ার জন্য সাহায্যকারী হবে ।”

ইসলামের বিয়ে কেন করতে বলে ? :

ইসলাম কেন বেশী বয়সে বিয়ে করতে বলে না । কারণ :

. ১. ইসলাম মানুষকে আগে দুনিয়ার কল্যান এবং পরে আখেরাতের কল্যাণ দিতে চায় ।

. ২. ইসলাম মানুষকে খুব তাড়াতাড়ি সন্তান আর নাতি-নাতনী দিতে চায় । কারণ এগুলো তার জীবন উপকরণ ও নাজাতের মাধ্যম । সুরা নাহলের ৭২ আয়াত

. ৩. ইসলাম মানুষকে নাজাত দিতে চায় । “পরকালে আল্লাহ তায়ালা যখন কিছু বান্দা-বান্দিদের উচ্চ মর্যাদা দান করলে তারা তখন তারা বলবে হে আল্লাহ এমর্যাদা কীভাবে পেলাম, বলা হবে তোমাদের সন্তানের বরকতে ।” হাদিস

বেশী বয়সে বিয়ে কেন করা উচিত নয় ? :

এবার বলছি কেন বেশী বয়সে বিয়ে করা উচিত না । কারণ -

১. ৩০ হতে ৬০ বছর মধ্য বয়স । এতে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, স্ট্রোক, ডিপ্রেশন, শারিরিক সক্ষমতা কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়ে থাকে ।

“পুরুষের একান্ত কথা” ৮০ পৃষ্ঠা এবং মেয়েদের একান্ত কথা – ড. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ ।

২. বেশী বয়সে মেয়েদের বিয়ে করলে সন্তান জন্ম দানে সমস্যা, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, স্ট্রোক, ডিপ্রেশন, আর্থাইটিস, স্তন ক্যানসার, দীর্ঘস্হায়ী মাথা ব্যাথ্যা, শারিরিক সক্ষমতায় সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দেয় ।

“মেয়েদের একান্ত কথা” – ড. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ । মনোজগত সেন্টার, রোড ৪ বাড়ি ৫ ধানমন্ডি, ঢাকা ।

আমাদের সমাজে উচ্চ শিক্ষিত পরিবারগুলোতে একটা মেয়ে ২৮ বছর বয়সে পড়াশোনা শেষ করে । অনেক খুজাখুজির পর ৩০ বছর বয়সে ৪০ বছর বয়সের ছেলেকে বিয়ে করে । যেমন: বুয়েটের প্রাক্তন ছাত্রী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক,

অভিনেত্রী ও স্হপতি: অপি করিম । এধরনের লোকদের অবস্হা খুব একটা সুখকর হয়নি ।

আপনি হয়তো দেখবেন, এখন অটিস্টিক ও মানষিক প্রতিবন্ধি ছেলেমেয়ে জন্ম হচ্ছে যাদের বেশীর ভাগই এধরনের দম্পতিদের ।

আমাদের সমাজে উচ্চ মধ্যবিত্তদের ছেলেদের বাবা-মা ছেলেদের বিয়ে দিতে দেরী করে বা চায় না । কারণ তারা ভাবে ছেলে বাড়ি করবে, গাড়ি করবে আর আমাদের আগে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করুক । তারপর বিয়ে দিবো । কিন্তু এতে ছেলের অবস্হা ভাল হয় না । ছেলে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে । পরে বিয়ে হলে সুখী জীবন যাপন করতে পারে না । ছেলে মেয়ে হলে ছেলে-মেয়েদের সফলতা দেখে যেতে পারে না ।কারণ ৬০ বছর বা তার কাছাকাছি বয়সে ছেলেটি প্রচন্ড পেরেসানি ও বিভিন্ন রোগে ভুগে মারা যায় । আপনি আপনার আশে পাশে খবর নিন ।তারপর আমার কথার সত্যতা পাবেন ।

আমাদের এই সমাজকে ভাঙ্গতে হবে । নতুন করে গড়তে হবে এই সমাজকে ।

আমরা কেন তাড়াতাড়ি বিয়ে করবো :

তাড়াতাড়ি বিয়ে না করলে আমরা বিয়ের আগে অনৈতিক প্রেম ভালবাসার মায়া জালে আটকে যাবো । বিয়ের আগে এধরনের প্রেম ইসলামে অগ্রহণযোগ্য । আমরা জেনে শুনে অগ্রহণযোগ্য কাজ করে মৃত্যুর পর আমাদের শেষ ঠিকানা জান্নাতে যাওয়ার পথ রুদ্ধ করে দিতে পারি না ।

এজন্য আমাদের জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনী খুজে পাওয়ার জন্য কিছু দুয়া নামাজ শেষে পড়বো ও সামান্য হলেও পড়াশোনার ফাকে ফাকে আয় রোজগার করবো । তাহলে আল্লাহ মুসলিমদের মধ্য হতে কোন এক লোককে আমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিবেন যাদের আমাদের ভাল লাগবে এবং তাদেরকে সহযোগি হিসেবে জান্নাত পর্যন্ত পৌছতে পারবো এবং সুরা আরাফের ১৮৯ আয়াতে বর্ণিত শান্তি ও সুষমা এবং সুরা রুমের ২১ নং আয়াতে বর্ণিত ভালবাসা ও দয়া পাবো । তাহলে আজ হতেই সেসব দুয়াগুলো মুখস্হ করে পড়তে থাকবো :

১. রাব্বানা হাবলানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া জুর্রিয়াতিনা কুর্রাতাইআইনি ওয়াআজয়ালনা লিল মু্ত্তাকিনা ইমামা ।সুরা ফুরকান:৭৪

হে আমার প্রতিপালক । আমাদেরকে এমন জুরি ও সন্তান সন্তুতি দাও যাদের দিকে তাকালে আমাদের চোখ জুড়িয়ে যায় এবং আমাদেরকে আল্লাহভীরুদের অনুসরণযোগ্য কর ।

কৃহজ্ঞতা স্বীকার :

https://www.facebook.com/WeWillMarryEarly

চলবে .......

বিষয়: বিবিধ

৪৬২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File