যেসব কারণে ব্লগ সাইটগুলোকে ও ব্লগারদের জনসাধারণ সন্দেহের চোখে দেখে
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ০১ অক্টোবর, ২০১৩, ১০:১৩:৫৫ রাত
এবছরের ফেব্রুয়ারী মাস হতে বেশ কিছু ব্লগ সাইট বন্ধ হয়ে যায় । এর কারণ আমি অনুসন্ধান করতে বাধ্য হই । কারণ তখন আমার পরিচিত অনেকেই বলতে শুরু করেন " ব্লগ সাইট মানেই নাস্তিকদের আখড়া । ব্লগাররা নাস্তিক । আমি নাস্তিক কি না । নাস্তিক হলে কেমন নাস্তিক । আমি কোন ধরণের লেখা লিখছি । "
তাদের অনেকে আমাকে নেট ব্যবহার করা হতে বিরত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেন । কারণ আমার অনেক লেখার বিষয়বস্তু ভাল লাগেনি বলে কিছু লোক আমাকে হুমকি প্রদান করেন । কিন্তু তারপরও আমি অপরিচিত অনেকের সাথেই সৌজন্য সাক্ষাৎ করি । কারণ :
১। তারা আমার সাথে দেখা করার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন ।
২। আর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তারা আমার লেখার ভক্ত বলে বলার চেষ্টা করতে থাকেন ।
৩। অনেক বিষয় জানার জন্য আমার সাথে দেখা করতে চান ।
৪। আমি ইসলামের অনেক বিষয়ে লিখে থাকি । সেগুলোর বেশীর ভাগেই প্রচলিত প্রথা ও নিয়মের বিরোধীতা করে লেখা । আমি কেন এমন লেখা লিখছি - তা জানার জন্য তারা আমার সাথে দেখা করতে চান ।
৫। ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত হওয়ার জন্য দেখা করতে চান ।
৬। ইসলামী দলগুলোর সমালোচনা করি কেন - তা বিস্তারিত জানার জন্য আমার সাথে দেখা করতে চান ।
৭। আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা আসলে কি - তা জানার জন্য দেখা করতে চান ।
আমি এপ্রসঙ্গে " আমার লেখা ও দৃষ্টিভঙ্গি " http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/3466 শিরোনামের পোস্টটাতে আমার ব্যক্তিগত অনেক তথ্য উপস্হাপন করেছি । যারা আমার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তাদের আগে এই লেখাটা পড়ার অনুরোদ করছি ।
এই লেখাটাতে আমি বাংলাদেশর চলমান ও প্রভাবশালী ধর্মীয় আন্দোলন ও উপদলীয় মতবাদ, যেমন : মওদুদী দর্শন, ওহাবী মতবাদ, আহলে হাদিস মতবাদ , সালাফী মতবাদ , মাহদী মতবাদ , জাফরি মতবাদ, খিলাফত রাষ্ট্র কায়েমের কথিত আন্দোলনের মতবাদ, পীরবাদ, মাজার পুজা ও সূফী মতবাদ প্রসঙ্গ আলোচনা করিনি । অনেকেই এসব মতবাদের ব্যাপারে জানতে চান । আর আমি এধরনের মতবাদের কোনটার সাথে সম্পৃত্ত কি না - জানতে চান ।
আমি বিনীতভাবে ভাবে বলছি : এধরনের কোন মতবাদের সাথে আমি সম্পৃত্ত নই । কিন্তু আজব হলেও সত্যি মওদুদী দর্শন, ওহাবী মতবাদ, আহলে হাদিস মতবাদ , সালাফী মতবাদ , মাহদী মতবাদ , জাফরি মতবাদ, খিলাফত রাষ্ট্র কায়েমের কথিত আন্দোলনের মতবাদ - এর অনুসারিরা ইন্টারনেটে ইসলাম বিষয়ক লেখা লিখে যাচ্ছেন । তাদের প্রায় লেখাই ইসলামকে যুদ্ধাংদেহী ও মানবতাবিরোধী ধর্ম ও আদর্শ হিসেবে উপস্হাপন করা হয় । অপর দিকে আমি মূলত ইসলাম শান্তির ধর্ম ও ইসলাম উন্নায়ন - অগ্রগতি - প্রগতি - সংহতির পক্ষের ধর্ম হিসেবে উপস্হাপন করার চেষ্টা করি ।
এবার আসছি মূল প্রসঙ্গে : যেসব কারণে ব্লগ সাইটগুলোকে ও ব্লগারদের জনসাধারণ সন্দেহের চোখে দেখে । অনেকগুলো কারণে ব্লগ সাইটগুলোকে ও ব্লগারদের জনসাধারণ সন্দেহের চোখে দেখে থাকে । কারণ হিসেবে আমি যা পেয়েছি :
১। ব্লগ ও ফেসবুকের সাথে যুক্ত জনপ্রিয় ব্যক্তিদের অর্ধেকই নাস্তিক ভাবাপন্ন । তাদের লেখা ও তাদের ব্যক্তিগত জীবন নাস্তিকতার উপর প্রতিষ্ঠিত । আমরা দেখেছি নাস্তিকতার অভিযোগে অনেক ব্লগারকে গ্রেফতার হতে । বিচারের মুখোমুখি হতে ।
২। ব্লগ ও ফেসবুকের সাথে যুক্ত ৩০ % লোক জামায়াত-শিবির, আহলে হাদিস , হিজবুত তাহরীর , জসিমুদ্দীন রহমানী, আনোয়ার আওলাকী, চরমোনাই পীরের মতবাদ প্রচার করে । এই লক্ষ্যে তারা তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে থাকে । আমরা দেখেছি এক ব্লগার ফেসবুকে নিরীহ এক সিভিলিয়নকে হত্যার হুমকি দিতে ।
৩। দেশ ও বিদেশীর কায়েমী স্বার্থবিরোধীর স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বেশ কিছু ব্লগার দেশের শান্তি ও আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্ন করার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম চালান । এই লক্ষ্যে তারা কুরুচীপূর্ণ গালি গালাজ ও ফটোশপে এডিটকৃত ছবি ও ক্যারিকেচার ব্যবহার করে থাকেন ।
৪। ফেসবুকে ও ব্লগ সাইটগুলো অসুস্হ জীবনবোধ চর্চা করে এমন লোকও কম নয় । এসব লোক অশ্লীল বার্তা পাঠিয়ে মেয়ে ব্লগারদের হেস্তনেস্ত করছে । যৌন হয়রানী করছেন । বাস্তব জীবনে সম্মানহানি করছেন । তাদের অনেকেই হত্যার হুমকি পর্যন্ত দিয়ে থাকেন ।
ব্লগ সাইটগুলোতে যদি জ্ঞানের বিশুদ্ধ জ্ঞানের চর্চা না হলে কি হতে পারে :
১। ব্লগ সাইটগুলোতে যদি ক্রমাগত উপরোক্ত কাজগুলো হতে থাকে - তাহলে সরকার দেশ ও জাতির কল্যাণের স্বার্থে সমুদয় ব্লগ সাইট ব্ন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন ।
২। ব্লগ সাইটগুলোতে যদি ক্রমাগত নাস্তিকতা এবং যুদ্ধাংদেহী ও মানবতাবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গিধারণকারী কথিত ইসলামী মতবাদ প্রচার করা অব্যহত রাখে, তাহলে দেশের যুব সমাজের মধ্যে নাস্তিকতা ও অসুস্হ জীবনবোধ বিস্তার লাভ করবে ।
আমাদের সমাজের জন্য বিকৃত যৌনচার যেমন ক্ষতিকর ঠিক তেমনি মুতা বিয়ে, হিল্লা বিয়ে ও যৌন জিহাদের বিস্তারও ক্ষতিকর ।
সিরিয়া মুসলিম মহিলাদের যৌন জিহাদে অংশ নিতে বা ইসলামী বেশ্যা (!)হওয়ার জন্য পাকিস্তানের দেওবন্দী ও ওহাবী সংগঠণ লস্কর - ই - জাম্বীর ফতোয়া ।
মওদুদী দর্শনে বিশ্বাসী, ওহাবী - সালাফী - আহলে হাদিসদের মতে যৌন জিহাদ হলো জিহাদ আন নিকাহ । সুতরাং এটা ইবাদত । হায় মানবতা ! হায় ইসলাম !
তারপরও কি জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রী সংস্হার মেয়েদের চৈতন্যদয় হবে ? জামায়াতী ব্লগার ডঃ আবুল কালাম আজাদ -এর মতে , এই http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/4038/drazad/27462 অস্থায়ী বা সাময়িক বিয়ের অনেক নিয়ম কানুন ও বাধা-নিষেধ আছে। এটা শুধু মাত্র একটা যৌন-লেনদেন নয়।
আমার প্রশ্ন হলো :
১. সেই নিয়ম-কানুন ও বাধা নিষেধগুলো কি কি ?
২. "এটা শুধু মাত্র একটা যৌন-লেনদেন নয়।" এই কথা দিয়ে আপনি প্রমাণ করলেও এতে যোদ্ধা বা সন্ত্রাসীদের সাথে যৌনতা সংঘঠিত হয় । দয়া করে বলুন : যৌন - লেনদেনের বাহিরের আর কি কি বিষয় এই নিকাহুল মুত'আ-য় আর কি কি বিষয় রয়েছে ?
"
মান্যবর ইসলামী বোনেরা! আপনারা যৌন জিহাদে অংশ নিবেন কি ? আর যদি না করেন তাহলে আপনারা কেন প্রতিবাদী হচ্ছেন না ? সুতরাং ব্লগ সাইট ও ব্লগারদের সন্দেহের চোখেই দেখাটা যৌক্তিক নয় কি ?
৩। সমাজের তরুণ সমাজের মধ্যে জ্ঞান-দক্ষতা-মেধা-সৃষ্টিশীলতা অজর্ন করার প্রচেষ্টা রুদ্ধ হবে ।
কারণ তরুণ সমাজের একটা বড় অংশ কুসংস্কার - কুপমন্ডুকতা - অসুস্হ জীবনবোধের প্রতি ঝুকে পড়ছে । উপরন্তু তাদের এদিক পরিচালিত করার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ও এদেশীয় কিছু সংগঠণ পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে ।
আমাদের মনে রাখতে হবে : জ্ঞানই আমাদের শেষ ঠিকানা । আর http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/243 মুসলিমদের এগিয়ে যেতে হবে মেধা ও যোগ্যতার মাধ্যমে ।
পরিশেষ যেসব ব্লগার সুস্হ জীবনবোধের চর্চা , মেধা -যোগ্যতা- দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জনকে পাথেয় হিসেবে নিতে চান , তারা নাস্তিকতা ও কথিত ইসলামী দর্শনগুলোর সাথে সম্পৃত্ততা পরিত্যাগ করুন । কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম ও শান্তি প্রতিষ্ঠার আদর্শ । ইসলামের ভাবাদর্শ মানব জাতিকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্হানের ভিত্তিকে বসবাস করার আহবান জানায় । আমাদেরকে অবশ্যই সমাজে শান্তিবিঘ্ন হয় এমন কথা, কাজ ও মনোভাব হতে দুরে থাকতে হবে ।
বিষয়: বিবিধ
৩৬২৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন