নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার গুরুত্ব ও তাৎপর্য (১ম পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০১:১০:১১ রাত





পটভুমি :

ইদানিং নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে এবং মেয়েদের ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা হচ্ছে । এই বিষয়টি শুধু সভ্যতা-সংস্কৃতি এবং দেশের উন্নায়ন-অগ্রগতি-প্রগতি-শান্তির প্রতিবন্ধকই নয়, বরং ইসলামবিরোধী । আমি এই বিষয়ে কুরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা করার চেষ্টা করছি । আশা করি আপনারা মনযোগ সহকারে আমার জনগুরুত্বপূর্ণ ইসলামবিষয়ক এই লেখাটা পড়বেন ।



সূচনা :


ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্হা । ইসলামেই আছে সব সমস্যার সমাধান । ইসলাম নারী আর পুরুষকে পরস্পরের পরিপূরক বলে মনে করে । এজন্য মানবতার মহান মুক্তির দুত ও বিশ্বজগৎসমূহের দয়া ও সাফায়াতের কান্ডারী মুহাম্মদ (সা.)-ই নারীকে মর্যাদায় আসনে অধিষ্ঠিত করেন । কারণ তার সময়ে খৃষ্টান ধর্মের লোকরাই নয় প্রায় সব ধর্মীয় সম্প্রদায় নারীদের মনে করতো শয়তানের দরজা মাত্র । নারীদের তখন বিন্দুমাত্র অধিকার ছিল না । তারা ছিল বড় যৌন দাসী । এপ্রসঙ্গে বিদায় হজ্জের ভাষণে তিনি বলেছেন : নারীর প্রতি পুরুষের যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি রয়েছে পুরুষের প্রতি নারীর অধিকার।

কিন্তু বর্তমানে কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের লোক প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন । এতে ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা প্রচারিত হচ্ছে এবং অনেকের মনে বদ্ধমূল ধারণা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, ইসলামে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণের অধিকার নেই।



কুরআন দৃষ্টিতে নারী – পুরুষ ও লিঙ্গ-সমতা প্রসঙ্গ :


১. কুরআনের দৃষ্টিতে নারী পুরুষের মতই স্বাধীন সত্তা।

এপ্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন : হে মানব সমাজ! তোমারা সেই প্রভুকে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে একই আত্মা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং সেই জোড়া থেকে বহু পুরুষ ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। (সুরা নিসা : ১)

২. নারী এবং পুরুষ যেন একই নদীর দুইটি ধারা।

আল্লাহ একই প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন নারী-পুরুষকে। তাই সৃষ্টিগত দিক থেকে নারী এবং পুরুষের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই এবং উভয়ই পরিপূর্ণ মানব সত্তা। দুনিয়া এবং আখেরাতে কোথাও নারী এবং পুরুষের জন্য আল্লাহ্ অসম আচরণ করবেন না।

আল্লাহ্ বলেন,পুরুষ ও নারীদের মধ্যে যে-ই সৎকাজ করে এবং ঈমানদার হয়, তাকেই এক অভিনব পবিত্র জীবন শক্তি দান করব এবং এই সকল লোককে তাদের ভাল কাজ অনুযায়ী আমি পুরস্কৃত করব। (সুরা নহল : ৯৭)।

৩.নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যারা এ পথ অনুসরণ করবে তাদেরকে সমানভাবে পুরস্কৃত করা হবে।

আল্লাহ বলেছেন :

নিশ্চয়ই মুসলমান পুরুষ ও নারীগণ, মোমেন পুরুষ ও নারীগণ, ভক্ত পুরুষ ও নারীগণ, সত্যবাদী পুরুষ ও নারীগণ, সহ্যকারী পুরুষ ও নারীগণ, বিনয়ী পুরুষ ও নারীগণ, দাতা পুরুষ ও নারীগণ, রোজা পালনকারী পুরুষ ও নারীগণ, এবং নিজেদের লজ্জাস্থান রক্ষাকারী পুরুষ ও নারীগণ, এবং আল্লাহ্কে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারীগণ - তাদের জন্য আল্লাহ্ ক্ষমা ও মহা পুরষ্কার রেখেছেন।” (সুরা আহজাব : ৩৫)।

নারী পুরুষের মতোই পরিপূর্ণ মানব সত্তা। সুতরাং ইসলামে নারী আর পুরুষের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই ।

অনেকে বলেন হাদীসে আছে : স্বামীর পদতলে স্ত্রীর বেহেস্ত । এটা কোন হাদীস নয়।এটা হলো নারী জাতিকে পুরুষের পদসেবায় নিয়োজিত রাখার একটি কূট ষড়যন্ত্র এবং নারীকে নিশক যৌন দাসীতে রুপান্তরের ব্যর্থ প্রয়াসের একটা খন্ডিত চেষ্টা মাত্র ।

ইসলামে নারীর মর্যদা :

১.ইসলামী বিধান মানার ক্ষেত্রে নারী আর পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই ।

নারী যদি কোনদিক দিয়ে অপূর্ণ থাকতো তাহলে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও তারতম্য থাকতো। যেমন : আল্লাহ তো এমন কোন বৈষম্য মূলক বিধান দেননি যে, পুরুষ একমাস রোজা রাখবে আর নারী অর্ধমাস রোজা রাখবে । এমনতো নয় যে, পুরুষ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে আর নারী পড়বে আড়াই ওয়াক্ত । এমনতো নয় যে, পুরুষ হবে দাতা আর নারী হবে গ্রহীতা । এমন তো নয় যে, নারী হবে তার লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী আর পুরষকে তার লজ্জাস্থানের হেফাজত করতে হবে না ! এই দিকটি লক্ষ্য করেই আল্লাহ সুরা নুরের ৩০ নং আয়াতে নারীদের লজ্জাস্হান হেফাজতের আগে পুরুষদেরকেই আগে লজ্জাস্হান হেফাজত করতে বলেছেন । এই বিষয়টি নিয়ে পুরুষরাই বেশী বাড়াবাড়ি করে থাকে ।

আমরা কুরআনে দেখছি রানী বিলকিস সাবা নামক বিশাল ও সমৃদ্দ রাজ্য শাসন করছেন । আমরা হাদিসের গ্রন্হে ও ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্তে দেখতে পাচ্ছি, উম্মে আমারা রা.-এর মতো অনেক নারী সাহাবী ইসলামের জন্য জিহাদ করছেন ও সম্মুখ যুদ্ধ অস্ত্র হাতে লড়াই করছেন । আমরা দেখতে পাই আয়েশা রা.-কে তেলোয়ার দিয়ে ইহুদীদের হত্যা করে মাথা বিচ্ছিন্ন করতে । ইসলামে নালি অবলা নয় । ইসলামে নারী ইসলামবিরোধীদের বিরোদ্ধে দুদর্শ ও সংগ্রামী যোদ্ধা ।

২. নারী মা।সেই দিক দিয়ে নারী মানব সভ্যতা রক্ষার কারিগর ।

আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর বাণী -

১.” মা যখন সন্তানের প্রত্যাশায় থাকেন, তখন গর্ভধারণের পুরো সময়টাই সে প্রতিদান ও সওয়াব পায় যেমন সওয়াব ও প্রতিদান পায় একজন রোজাদার, রাত-জাগরণকারী, আনুগত্যকারী এবং আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদকারী।“

২. মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত । (ইবনে মাজাহ, নাসায়ী )।

৩. একবার এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমার কাছে সদ্ব্যবহার পাবার যোগ্যতম ব্যক্তি কে? তিনি বললেন - তোমার মা। লোকটি আবার আরজ করলো, তারপর কে? তিনি বললেন - তোমার মা। পুনরায় সে আরজ করলো, তারপর কে? তিনি বললেন -তোমার মা । এরপর লোকটি আরজ করলো, তারপর কে? তখন তিনি বললেন -তোমার পিতা এবং তারপর পরম্পরাক্রমে অন্যান্য নিকট আত্মীয়।( বোখারী ও মুসলিম )

কুরআনের দৃষ্টিতে নারী হলো অফুরন্ত কল্যাণের কারণ :

ইসলামে নারীকে কল্যাণের কারণ বলা হয়েছে । অথচ অন্য ধর্মে বলা হয়েছে নরকের দরজা । কুরআনের দৃষ্টিতে নারীদের সাথে সদাচরণ করা প্রত্যেক পুরুষের জন্য ফরজ। আল্লাহর আদেশ - তোমরা নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন করো, এমনকি তোমরা যদি তাদের পছন্দ নাও করো! এমন তো হতে পারে যে, যা কিছু তোমরা পছন্দ করো না, তার মধ্যেই আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের জন্যে অফুরন্ত কল্যাণ নিহিত রেখেছেন। (সুরা নিসা : ১৯)।

ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর কর্মক্ষেত্র :

১.নারী পুরুষের মতোই সমান পড়ালেখার সুযোগ পাবে – এই কথা ইসলামে স্বীকৃত বিষয় । ইসলাম প্রত্যেক নর-নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন করাকে ফরজ বলে ঘোষণা করেছে। মুহাম্মদ (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন - তোমাদের কন্যাসন্তান থাকলে কিংবা বোন থাকলে তাদেরকে অবশ্যই ভাল খেতে দেবে, ভাল পরতে দেবে এবং সুশিক্ষা দেবে।

তিনি বলেছেন :” তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে শিক্ষা দাও কেননা তারা এমন যুগে বসবাস করার জন্য সৃষ্টি হয়েছে, যা তোমাদের যুগ নয়। “

বস্তুতই আমরা এখন এমন এক যুগে বসবাস করছি যে যুগে নারীকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রেখে সামাজিক, অর্থনৈতিক কোন মুক্তিই আসতে পারে না।

২. ইসলামে নারীদের সম্পদ অর্জন-রক্ষণ করার অধিকার স্বীকৃত । আর এই লক্ষ্যে নারী যে কোন কর্মকান্ডে অংশ নিতে পারে । প্রয়োজনে চাকুরী – ব্যবসা-বাণিজ্য-অধ্যাপনাসহ যাবতীয় সৃষ্টিশীল ও আয়বর্ধক কাজে অংশ নিতে পারবে । কারণ ইসলাম - সম্পত্তির মালিকানায়, অর্থোপার্জন, এবং অন্যান্য সকল নাগরিক অধিকার সমূহে নারী-পুরুষের সমান অধিকার দিয়েছে।

অর্থোপার্জনের ক্ষেত্রে নারীর অধিকার সম্পর্কে কুরআনের নির্দেশ - পুরুষ যা উপার্জন করেছে, তাতে তাদের অধিকার রয়েছে এবং নারীরা যা উপার্জন করেছে তাতে তাদের অধিকার রয়েছে। (সুরা নিসা : ৩২)।

হজরত জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে - একজন মহিলা সাহাবি তালাকপ্রাপ্ত হয়ে রসুল (সা.)-এঁর কাছে খেজুর বাগানের ডাল কেটে বিক্রি করার অনুমতি চাইলে রাসুল (সা.) বলেন, ক্ষেতে যাও, তারপর নিজের খেজুর গাছ কাট। এই টাকা দিয়ে তুমি দান-খয়রাত অথবা অন্য কোন ভাল কাজ করতে পারবে। উল্লিখিত হাদীস প্রমাণ করে যে, নারীর কৃষিকাজে অংশগ্রহণ করার অধিকার রয়েছে।

আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) -এর স্ত্রী খাদিজা (রা.) ছিলেন একজন ব্যবসায়ী এবং মহানবী (সা.) স্বয়ং স্ত্রীর পক্ষে সে ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। অতএব নারীদের ব্যবসা-বাণিজ্য করে জীবিকা নির্বাহের অধিকার রয়েছে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এঁর স্ত্রী নিজ উপার্জনে সংসারের খরচাদি চালাতেন। একদিন তিনি নবী করীম (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, আমি একজন কারিগর। আমি নিজ হাতের তৈরী করা পণ্য বিক্রি করি। এ ছাড়া আমার স্বামীর এবং আমার সন্তানদের জীবিকার অন্য কোন উপায় নেই। রসুল (সা.) বললেন, এভাবে উপার্জন করে তুমি তোমার সংসারের চাহিদা পূরণ করছ, নিশ্চয়ই তুমি বিরাট সওয়াবের অধিকারী হবে। সুতরাং, নারীর শিল্প স্থাপন এবং কারিগরী কাজে অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে।

৩.ইসলাম মেয়েদের প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীতে নারীদের কাজ করাকে গুরুত্ব দেয় ।কুরআন নারীদের যুদ্ধে যাবার অধিকার দিয়েছে। কুরআন বলছেন - তারাই বিশ্বাসী যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার পর সন্দেহ রাখে না এবং ধনপ্রাণ দিয়ে আল্লাহ্র পথে সংগ্রাম করে, তারাই সত্যনিষ্ঠ। (সুরা হুজুরাত : ১৫)। এ আয়াতের মাধ্যমে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবার অনুমতি দেয়া হয়েছে। কুরআন থেকে যুদ্ধে যাবার অনুমতি প্রাপ্তির পর পুরুষের পাশাপাশি বিশ্বাসী নারীরাও ঝাপিয়ে পড়েন রণাঙ্গনে।

উম্মে আম্মারা (রা.) ছিলেন একজন নারী সাহাবী। ওহুদের যুদ্ধে যোগদান করে তিনি অতুলনীয় বীরত্ব, দুর্দমনীয় সাহসিকতা ও অসাধারণ দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি ভোরবেলা শয্যা ত্যাগ করে উঠে যেতেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হতেন। এই যুদ্ধের প্রথম দিকে মুসলিম বাহিনী বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু পরে তাদের মধ্যে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। এই সময়ে তিনি রসুলে করীম (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁর প্রতিরক্ষার উদ্দেশে তীর, তলোয়ার চালাতে শুরু করে দিলেন। এই সময় শত্রুপক্ষের নিক্ষিপ্ত তীর ও বল্লমের আঘাতে তাঁর দেহ ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। স্বয়ং নবী করিম (সা.) তাঁর বীরত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা যুদ্ধের কথা উল্লেখ করেছেন। বলেছেন - আমি ডানে ও বামে তাকিয়ে দেখেছি উম্মে আম্মারা (রা.) আমাকে রক্ষা করার জন্যে প্রবল বিক্রমে যুদ্ধ করছে। তাঁর পুত্রকে আহত করেছিল যে ব্যক্তি, তাকে সামনে পেয়ে তিনি তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এবং ক্রমাগত তীর নিক্ষেপ করে করে তাকে হত্যা করে স্বীয় পুত্রের উপর আক্রমণের প্রতিশোধ নিয়েছিলেন। একজন অশ্বারোহী শত্রু সৈন্য তার উপর আক্রমণ চালালে তিনি ঢালের আড়ালে আত্মরক্ষা করেন এবং শত্রু সৈন্যটির ফিরে যাওয়ার সময় তার অশ্বের পা কেটে দিলেন। এই সময় তার পুত্র, মায়ের সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং মা ও পুত্র মিলে শত্রুকে সম্পূর্ণ নিধন করেন। নবী করীম (সা.) নিজে এই দৃশ্য অবলোকন করে স্বতঃস্ফুর্তভাবে বলে উঠলেন - আজ উম্মে আম্মারা তুলনাহীন সাহসিকতা ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছেন। ওহুদ ছাড়াও খায়বর, হুনাইন ও ইয়ামামার যুদ্ধেও তিনি যোগদান করেছিলেন। ইয়ামামার যুদ্ধে লড়াই করতে করতে তাঁর হাত কাটা গিয়েছিল এবং সর্বাঙ্গে বহুসংখ্যক ক্ষত দেখা দিয়েছিল।

বিয়ের দ্বিতীয় দিন খালিদ ইবনে সাঈদ ওয়ালিমার আয়োজন করলেন। লোকজন তখনো খাওয়া-দাওয়া শেষ করতে পারেনি। এমন সময় রোমানরা যুদ্ধের জন্য ব্যূহ রচনা শুরু করে। তুমুল যুদ্ধ শুরু হলে নববধূর সাজে সজ্জিতা উম্মু হাকীম তাঁর তাঁবুর একটি মোটা দন্ড নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে ঝাপিয়ে পড়েন এবং একাই শত্রুসেনাদের সাতজনকে হত্যা করেন। রোমানদের বিরুদ্ধে জেহাদে খ্যাতিলাভকারী বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব হাবীব ইবনে সালামকে এক যুদ্ধের সময় তাঁর স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, বলুন তো, আগামীকাল আপনি কোথায় থাকবেন? জবাবে তিনি বললেন, ইনশাল্লাহ্ শত্রুদের ব্যুহের অভ্যন্তরে অথবা জান্নাতে।’ জবাব শুনে স্ত্রীও পূর্ণ দৃঢ়তার সাথে বললেন, এ দুটি জায়গার যেখানেই আপনি থাকুন না কেন, আমি আশা করি আমার অবস্থানস্থলও তাই হবে। উল্লেখিত ঘটনা ছাড়াও ইয়ারমুকের যুদ্ধে আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা), হুনাইনের যুদ্ধে হারিসার বীরত্ব ইসলামের ইতিহাসে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শুধু সম্মুখ সমরে নয়, পরোক্ষভাবেও নারী যুদ্ধের সময় যুগিয়েছে অনুপ্রেরণা, আহতদের দিয়েছে সেবা, ক্ষুধার্তকে সরবারহ করেছে খাদ্য।

ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক লিখেছেন - খায়বরের যুদ্ধে নবী করীম (সা.) -এঁর সঙ্গে বিপুল সংখ্যক মহিলা সাহাবি যোগদান করেছিলেন। হাশর ইবনে জিয়াদের দাদী, আম্মা এবং আরও পাঁচজন মহিলাও এই যুদ্ধে যোগদান করেন। তাঁরা কি জন্যে এসেছেন জিজ্ঞেস করা হলে তাঁরা বললেন - হে রসুল! আমরা এসেছি এই উদ্দেশ্য নিয়ে যে, আমরা কবিতা পাঠ করব এবং এর সাহায্যে আমরা আল্লাহর পথে জিহাদের প্রেরণা যুগিয়ে সাহায্য করব। আমাদের সঙ্গে আহতদের চিকিৎসার ঔষধপত্র রয়েছে। তীর নিক্ষেপকারীদের হাতে আমরা তীর পরিবেশন করব এবং প্রয়োজন হলে ক্ষুধার্তদের ছাতু বানিয়ে খাওয়াব। উল্লেখ্য, জামালের যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ছিলেন স্বয়ং আয়েশা (রা.)।

মুসলিম ও বোখারী শরীফের বেশ কয়েকটি হাদীসেও নারীদের যুদ্ধে যাবার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। ইসলামের বিজয় পতাকা ওড়াতে যেই নারী বীরত্বের সাথে লড়াই করেছে, আত্মাহুতি দিয়েছে ।



নারীদের নেতৃত্ব প্রদান ও সংগঠণ করার অধিকার ইসলাম দিয়েছে :


রাসূল (সা.)-এঁর সময়ে এবং তৎপরিবর্তী কালে খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগে নারীদের স্বতন্ত্র সংগঠন ছিল। তারা নিজেদের সমস্যাদি নিয়ে আলোচনা করেছে, তাদের মধ্য থেকে নেত্রী নির্বাচন করেছে এবং রাসুল (সা.)-এর নিকট প্রতিনিধি প্রেরণ করেছে।

বর্ণিত আছে, হজরত যায়দ (রা.)-এর কন্যা হজরত আসমা (রা.) নারী নেত্রী হিসেবে রাসুল (সা.)-এঁর নিকট হাজির হয়ে বললেন, “আমার পশ্চাতে মুসলিম মহিলাদের যে দল রয়েছে, আমি তাদেরই প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত হয়েছি। তাদের সকলে আমার কথাই বলেছেন এবং আমি যে মত পোষণ করি, তারাও সে মতই পোষণ করেন।”

খুলাফায়ে রাশেদীনের সময় মহিলারা আলাদা জামাতে নামাজ পড়েছে। বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে এমন বর্ণনা রয়েছে -

হজরত আয়েশা (রা.) নামাজের আজান দিতেন, ইকামত বলতেন, মহিলাদের ইমামতি করতেন এবং তিনি তাদের মাঝখানে দাঁড়াতেন। জামাতের সাথে নামাজ এবং হজরত আয়েশা (রা.)-এঁর ইমামতি করা নারী সংগঠন এবং নারী নেতৃত্বের বৈধতাই প্রমান করে। আরো অনেক নারী সাহাবী এভাবে নামাজ পড়েছেন । [ এবিষয়ে আমার একটা লেখা আছে । আশা করি পড়ে দেখবেন সবাই । ]

[ এই লেখার ছবিটা ইন্দোনেশিয়ার এক কারখানার নারী পুরুষ শ্রমিকদের নামাজ পড়ার দৃশ্য প্রদর্শন করছে । আমাদের দেশে এমন দৃশ্য বিরল । কারণ আমাদের দেশে ইসলামের সঠিক শিক্ষার চর্চা নেই বল্লেই চলে । ]



চলবে (পরবর্তী পর্ব পড়ার জন্য আশা করি আমার সাথেই থাকবেন । )


বিষয়: রাজনীতি

৩৮৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File