সবাইকে শবে বরাতের শুভেচ্ছা
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ২৪ জুন, ২০১৩, ০২:১১:২১ রাত
সবাইকে শবে বরাতের শুভেচ্ছা । কাল দিবাগত রাত শবে বরাতে । হাদিসের পরিভাষায় এই রাতটিকে বলা হয় "লাইলাতুন্ নিসফু মিন সাবান" অর্থাৎ সাবান মাসের মাঝের রাত বা সাবান মাসের পনেরতম রাত । এই রাতটিকে আমরা শবে বরাত বলে থাকি । কারণ বাংলাদেশসহ সারা ভারত ও পাকিস্তানে প্রায় এক হাজার বছর রাষ্ট্র ভাষা ছিল ফার্সি ভাষা (ইরানি ভাষা) । ইংরেজরা ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ বা ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ফার্সি ভাষার পর রাষ্ট্রভাষা ইংরেজী চালু করে । ফার্সি ভাষায় শব শব্দের অর্থ রাত আর বরাত শব্দের অর্থ পবিত্রতা, মুক্তি । সুতরাং শবে বরাত শব্দের অর্থ হলো পবিত্রতার রাত বা মুক্তির রাত বা নাজাত লাভের জন্য নতুনভাবে উজ্জিবীত হওয়ার রাত ।
বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের সময় হতে শবে বরাত পালিত হয়ে আসছে । ফার্সি ভাষায় লিখিত বাংলাদেশের প্রাচীনতম ইতিহাস গ্রন্হ তবকাতে নাসিরী -তে বলা আছে, মুসলিম শাসকরা এদিন জাকজমকের সাথে পালন করতো । (বাংলা একাডেমির অনুবাদ : ১৫৮ পৃষ্ঠা । ) ফার্সি ভাষায় লিখিত বাংলাদেশের মোগল আমলের ইতিহাস গ্রন্হ বাহারিস্তানে গায়বিতে মির্যা নাথান বলেছেন : শবে বরাতে শাসকরা কামানের গোলা নিক্ষেপ করে জনগণকে শবে বরাতের সুসংবাদ দিতেন । আমার আম্মা শবে বরাতের জন্য শিউলী ফুলের বোটার রং মিশ্রীত করে সুস্বাদু হালুয়া রান্না করতেন । (বাংলা একাডেমীর অনুবাদ )
ইংরেজ আমল ও পাকিস্তান আমলে জাক জমকের সাথে শবে বরাত পালনের ইতিহাস পাওয়া যায় । সুতরাং আমরা কেন এই বরকতময় রাতকে অবহেলা করবো । এটা আমাদের বরকতময় ঐতিহ্য ।
এবার আমরা হাদিসের গ্রন্হগুলোতে দেখি শবে বরাত সম্পর্কে কি তথ্য রয়েছে -
১. আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন: এক রাতে আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে খুজে না পেয়ে তাকে খুজতে বের হলাম, আমি তাকে বাকী গোরস্তানে পেলাম। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন: 'তুমি কি মনে কর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার উপর জুলুম করবে?' আমি বললাম: 'হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধারণা করেছিলাম যে আপনি আপনার অপর কোন স্ত্রীর নিকট চলে গেছেন। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: 'মহান আল্লাহ তা'লা শা'বানের মধ্য রাত্রিতে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন এবং কালব গোত্রের ছাগলের পালের পশমের চেয়ে বেশী লোকদের ক্ষমা করেন।
মুসনাদে আহমাদ (৬/২৩৮), তিরমিঝি (২/১২১,১২২), ইবনে মাজাহ (১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৯)
২. রাসূল (সাঃ) বলেছেন- যখন শাবান চাঁদের ১৫-এর রাত আসবে তখন তোমরা জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করবে। আর পরদিন রোজা রাখবে । কেননা আল্লাহ এ রাতে সূর্যাস্তের পরই সর্বনিম্ন আসমানে নেমে আসেন এবং তার বান্দাদের ডেকে বলেন, ওহে আছো কোন ক্ষমা প্রার্থী? আমি তোমাকে ক্ষমা করব। আছো কোন রিজিক প্রার্থী? আমি তোমাকে রিজিক দেব। আছো কোন বিপদগ্রস্ত? আমি তোমাকে বিপদমুক্ত করব। আছো কোন তওবাকারী? আমি তোমার তওবা কবুল করব। এভাবে সুবহে সাদেক পর্যন্ত আল্লাহ আহবান করতে থাকেন (ইবনে মাজাহ)
৩. হযরতে সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ বিন আবী ক্বায়স রাদ্বিয়াল্লাহ তাআলা আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে যে, তিনি উম্মুল মুমিনীন সায়্যিদাতুনা আয়িশা(রাদ্বিয়াল্লাহ তাআলা আনহা) কে বলতে শুনেছেন, আমার মাথার তাজ, সাহিবে মিরাজ, মহানবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর পছন্দের মাস শাবানুল মুআজ্জাম ছিল কারণ এতে তিনি রোযা রাখতেন অতঃপর(এভাবে)এটাকে রামজানুর মুবারাকের সাথে মিলিয়ে দিতেন – সুবহানাল্লা
( আবু দাউদ শরীফ হাদিস নং ২৪৩১ ২য় খণ্ড ,)
৪. আলী ইবনে আবী তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "যখন শা'বানের মধ্য রাত্রি আসবে তখন তোমরা সে রাতের কিয়াম তথা রাতভর নামায পড়বে, আর সে দিনের রোযা রাখবে; কেননা সে দিন সুর্য ডোবার সাথে সাথে আল্লাহ তা'আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন: ক্ষমা চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি ক্ষমা করে দেব। রিযিক চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি রিযিক দেব। সমস্যাগ্রস্থ কেউ কি আছে যে আমার কাছে বিমুক্তি চাইবে আর আমি তাকে উদ্ধার করব। এমন এমন কেউ কি আছে? এমন এমন কেউ কি আছে? ফজর পর্যন্ত তিনি এ ভাবে বলতে থাকেন"।
হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৮) বর্ণনা করেছেন।
৫. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বহু সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি শা'বান মাসে সবচেয়ে বেশী রোযা রাখতেন। (এর জন্য দেখুনঃ বুখারী, হাদীস নং ১৯৬৯, ১৯৭০, মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৬, ১১৬১, মুসনাদে আহমাদ ৬/১৮৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪৩১, সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং ২০৭৭, সুনানে তিরমিঝি, হাদীস নং ৬৫৭)।
সুতরাং এসব হাদিস দ্বারা শবে বরাত পালন করা মুস্তাহাব বলে প্রমানিত হলো ।
ইবাদতগত কাজ ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, সুন্নাতে জায়িদা, মুস্তাহাব,নফল হয় তার গুরুত্বের বিচার করে । কিন্তু সব ধরনের ইবাদতগত কাজই গুরুত্বপূর্ণ ।
সুতরাং আমাদের উচিত শবে বরাত পালন করা ।
বিষয়: বিবিধ
২৮৩১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন