হেফাজতে ইসলাম - এর ফ্যাশন হাউজ দখল
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ২৩ জুন, ২০১৩, ০২:১৪:৪২ রাত
সুচনা :
যে কাজ জামায়াতে ইসলামী, হিজবুত তাহরীর এবং চরমোনাই পীর-এর সমর্থকরা করতে পারেনি, সেই কাজ হেফাজতে ইসলাম করলো । কোন হুমকি ধমকি ছাড়ই হেফাজতে ইসলাম একের পর এক ফ্যাশন হাউজ দখল করে নিচ্ছে ও পরোক্ষভাবে মডেলদের হেফাজতী পোষাক পড়ে মডেলিং করার কথা বলে যাচ্ছে । বিষয়টি অনেক নাস্তিকের কাছে অসহ্য বলে পরিগণিত হচ্ছে ।
হেফাজতী পোষাক কি ? :
ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী বানানো পোষাককে বলা হয় হেফাজতী পোষাক বা হিজাবী পোষাক ।
পোষাক পড়ার ক্ষেত্রে ইসলামের নীতিমালা অনুযায়ী মেয়েদের তিনটি নিয়ম মেনে চলতে হয় : ১. ওড়না বা আচল দিয়ে মাথা ও বুক ঢেকে রাখা এবং মুখ ও হাতের তালু ছাড়া সমগ্র শরীর ঢেকে রাখা । ২.দৃষ্টিকে নত করা। ৩.এমন ভাবে হাটা, চলা ফেরা যাতে তার দৌহিক সৌন্দর্য্য প্রকাশ না পায় অন্য পুরুষের সামনে।
নাস্তিক সম্প্রদায় এসব নীতিমালাকে হেফাজতী দৃষ্টিভঙ্গি বলে অভিহিত করেছে ।
উল্লেখ্য হেফাজতী পোষাক অনেক আগের থেকেই বাংলাদেশে সীমিত পরিসরে প্রচলিত ছিল ।
হেফাজতী পোষাক কেন গুরুত্ব পাচ্ছে ?:
গেলো কয়কদিন আগে বাংলাদেশের চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে । কিন্তু নাস্তিক মহলের মতে, এই নির্বাচনে জনগণকে হেফাজত রায় দিয়েছে । কারণ বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিএনপি-র পার্থী জয়লাভ করেছে । বাস্তবে তারা জয়ী হতো মাত্র ১ টি আসনে ।
শুধু ৪ সিটি নির্বাচনের ফলাফলেই নয়, ঈদ ফ্যাশনেও প্রভাব বিস্তার করেছে হেফাজতে ইসলাম। বিশেষত নারীদের পোশাকের ডিজাইনে এ প্রভাব স্পষ্ট। ঈদকে সামনে রেখে কোনও-কোনও ফ্যাশন হাউস হেফাজতি ১৩ দফা বাস্তবায়নে নেমেছে। রাজধানী ঢাকার ব্যস্ত সড়কগুলোর পাশে থাকা বিজ্ঞাপনি বিলবোর্ডই এর বড় সাক্ষি। শাহবাগ রূপসী বাংলা হোটেল মোড়ে এমনই একটি বিলবোর্ডে শোভা পাচ্ছেন হেফাজতি সাজে সজ্জিত দুই নারী-মডেল। বিজ্ঞাপনটি ফ্যাশন হাউস ‘নগরদোলা’র।
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের নারী সমাজকে যে-চেহারায় দেখা যাবে, তারই অনুসরণে এই সাজ।
হেফাজতী পোষাক সম্পর্কে নারী নেত্রী ও নাস্তিকদের অনুভতি :
ফ্যাশন হাউসগুলো ব্যাপারটিকে ব্যবসায়িক কৌশল হিসেবে দেখলেও দেশের নারী অধিকার আন্দোলনের নেত্রীরা বলছেন ভিন্ন কথা।
নারীনেত্রী মাহবুবা হক কুমকুমের মতে, এ ধরনের ফ্যাশন আগেও ছিল— নারীদের পোশাকের লম্বা হাতা, বড় ওড়না ইত্যাদি। হেফাজতে ইসলামের উত্থানে কিছু-কিছু ফ্যাশন হাউস ওইদিকেই বেশি করে ঝুঁকছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কেননা মৌলবাদীদেরও অনেক ফ্যাশন হাউস আছে। আবার প্রগতিশীলদের দ্বারা পরিচালিত অনেক ফ্যাশন হাউসও মুনাফার লোভে তালেবানি পোশাক বিক্রি করে। তিনি বলেন, হেফাজতি প্রভাবে নারীদের বোরখা পরতেও উদ্বুদ্ধ করবে অনেক ফ্যাশন হাউস। হিজাব পরতে বলবে। এ ব্যর্থতা আমাদের তথাকথিত প্রগতিশীল রাজনীতিকদের। তারা ধর্মেও আছেন, জিরাফেও আছেন।
ইসলাম সংখ্যালঘুদের ধর্ম বলে অভিমত ব্যক্তকারিনী ,অভিনেত্রী ও নারীনেত্রী রোকেয়া প্রাচী বলেন : ফ্যাশন হাউসগুলোর দায়িত্বশীলরা এটিকে আদর্শিকভাবে নিয়েছেন কি না— তা প্রশ্নসাপেক্ষ। তবে এটি শুধু হেফাজতে ইসলামের প্রভাবেই হয়নি। তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞাপনের বিষয়টি যদি ক্রেতা-বিক্রেতা সম্পর্কিত হয়, তাহলে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু এতে যদি রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকে, তাহলে আমরা প্রতিবাদ করব।
হেফাজতি পোষাক সম্পর্কে হেফাজতের হুজুরদের অভিমত :
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন : এটি খুবই স্বাভাবিক যে, এতে হেফাজতের আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ৪ সিটি নির্বাচনেও প্রমাণিত হয়েছে হেফাজতের ব্যাপক প্রভাবের বিষয়টি।
ফ্যাসন হাউজগুলো অভিমত :
এদিকে হেফাজত কিংবা নারীনেত্রীদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন সংশ্লিষ্ট ফ্যাশন হাউসগুলো। প্রচারিত বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে নগরদোলার ব্যবস্থাপক যাওয়াদ আরিফ জানান, প্রায় এক মাস আগে আমাদের এই বিজ্ঞাপনটি ছাড়া হয়। অনেক মেয়েই এখন হিজাব পরেন, বোরখা পরেন। তাদের কাছে পণ্যটির প্রচারণার জন্য এভাবে বিজ্ঞাপনের আয়োজন। অন্য কোনও হাউস এমন আয়োজন করতে পারেনি। এটা বাজার ধরার কৌশল।
উপসংহার :
আশা করা যায়, অদুর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সব মেয়ে বা মহিলই শালীন পোষাক পড়াকে তাদের ভুষণ হিসেবে গ্রহণ করবেন এবং তারও হেফাজতের ১৩ দফা বাস্তবায়নে হুজুরদের একাত্ম হয়ে সুখী-সমৃদ্ধশালী-আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলার মহৎ কাজে অংশ নিবেন ।
- See more at: http://www.dainikamadershomoy.com/index.php/today-s-news/first-page/item/18387-%E0%A6%88%E0%A6%A6-%E0%A6%AB%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B6%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%93-%E0%A6%B9%E0%A7%87%E0%A6%AB%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%A4.html#sthash.7mBHgctG.VNYdUJsc.dpuf
বিষয়: বিবিধ
৬৩০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন