সবাইকে পবিত্র শবে মিরাজ - এর শুভেচ্ছা
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ০৬ জুন, ২০১৩, ০২:৪৮:৪৬ রাত
মান্যবর ব্লগারবৃন্দ ও মুসলিম ভাই ও বোনেরা !
আস সালামু আলাইকুম ।
আজ ২৬ রজব ১৪৩৪ হিজরি, ২৩ জৈষ্ঠ্য ১৪২০ বঙ্গাব্দ, ৬ জুন ২০১৩ খৃষ্টাব্দ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত হলো পবিত্র শবে মেরাজ । : http://www.islamicfoundation.org.bd/news/view/_149.html
মান্যবর ব্লগারবৃন্দ ও মুসলিম ভাই ও বোনেরা !
আমার হৃদয়ের অন্তস্হল হতে পবিত্র শবে মেরাজ উপলক্ষে শুভেচ্ছা ও সালাম গ্রহণ করুন ।
বিভিন্ন কারণে মুসলিমদের জীবনে শবে মেরাজ-এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম । কারণ :
১. মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অলৌকিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা এ হলো মিরাজ। মদিনায় আসার আগে মক্কায় অবস্থানের সময় ২৬ রজব দিবাগত রাতে তিনি বুরাক নামক বাহনে চড়ে প্রথমে বায়তুল মুক্কাদ্দাস যান । তারপর পৃথিবীর হতে মহাবিশ্বের সব স্তর ভেদ করে সিদরাতুল মুনতাহায় যান । অতপর রফরফ নামক বাহনে করে আল্লাহর দরবারে যান এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করেন। এই ঘটনাকেই মিরাজ গমণ বলা হয় ।
২. মিরাজ গমন করে মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর কাছ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান নিয়ে আসেন । এজন্য তিনি বলেছেন : নামাজ হলো বিশ্বাসীদের জন্য মিরাজ ।
৩. মিরাজ গমন করার মাধ্যমে মুহাম্মদ (সা.) অশুভ শক্তিকে দমন করার জন্য ও বিশ্বব্যাপী ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য দিক নির্দেশনা লাভ করেন । মিরাজ গমন করার মাধ্যমে মুহাম্মদ (সা.) ইসলামী সমাজ পরিচালনার বিধি বিধানও নিয়ে আসেন যা কুরআনের বনী ইসরাইল সুরায় আলোচিত হয়েছে।
সারা বিশ্বের মুসলিমদের কাছে তাই এ রাত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ।
সংগ্রামী মুসলিম ভাই ও বোনেরা ।
আপনারা অবগত আছেন যে আমাদের দেশ আজ অশুভ শক্তির রাহুর উপচ্ছায়ার করাল গ্রাসে আক্রান্ত । অসংখ্য মুসলিম ধর্মযাজক এই কয়েক মাসে শাহাদাত বরণ করেছেন । তৌহিদী জনতা নিগৃহিত নির্যাতিত । আমি আপনাদের এরাতে আল্লাহর দরবারে কায়মন বাক্যে ফরিয়াদ করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোদ করছি । এ রাতকে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করুন । এ উপলক্ষে নিজের পরিবারে ও মসজিদগুলোতে বিশেষ আলোচনা,দোয়া ও ইবাদত-বন্দেগির আয়োজন করুন । আপনারা নানা ধর্মীয় কর্মসূচির মাধ্যমে পবিত্র এ রাতকে পালন করুন । কারণ
১.রাসুল সা. নিজেই এমাসে দুয়া করতেন :
اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا رمضان
“হে আল্লাহ, তুমি আমাদেরকে রজব ও শাবানে বরকত দাও এবং রামাযান পর্যন্ত পৌঁছাও।” [মুসনাদ আহমদ, (১/২৫৯)।]
২. হাদিসে আছে :
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযানের পরে রজব ও শাবান ছাড়া অন্য কোন মাসে রোযা রাখেন নি।” (বাইহাকী)
সুতরাং এই মাসের পর সাবান মাস আসবে । তারপর রোজার মাস আসবে । এই মাস আর সাবান মাস হলো রোজার মাসকে পরিপূর্ণভাবে ইবাদত বন্দেগীর জন্য পালন করার জন্য প্রশিক্ষণের মাস । কারণ সবাই না খেয়ে থাকতে বা রোজা রাখতে অভ্যস্হ নয় । সুতরাং তাদের কথা চিন্তা করে বলা হয়েছে নফল রোজা রেখে অভ্যস্হ হতে যাতে রমজান মাসের সবগুলো রোজা রাখা সম্ভবপর হয় । এজন্য রাসুল সা. বলেন :
“জান্নাতে একটি নহর আছে যাকে বলা হয় রজব। যার পানি দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়েও মিষ্টি। যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোযা রাখবে তাকে সেই নহরের পানি পান করতে দেয়া হবে।”
( বাইহাকী, আত তারগীব ওয়াত তারহীব )
সুতরাং আমাদেরকে রজব ও সাবান মাসে বেশী বেশী নফল রোজা রাখতে হবে ।
উপরন্তু হাদিস দ্বারা প্রতি সোমবার, বৃহস্পতিবার এবং আরবী মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখ নফল রোজা রাখার কথা প্রমাণিত হয়েছে ।
আমাদেরকে প্রতিমাসে এক বার কুরআন খতম দিতে হবে । কারণ বিভিন্ন সহিহ হাদিসে মাসে এক বার কুরআন খতম করার জন্য রাসুল (সা.) আমাদেরকে বলেছেন । আবু দাউদ শরীফে কম করে হলেও তিনি ৭ বার এই কথা বলেছেন । যদি আমরা নিজেরা এই কাজে অসমর্থ হই , তাহলে অন্তত নিজের কর্মক্ষেত্র ও বাড়ির সবাইকে নিয়ে বসে বাংলা অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ কুরআন পড়তে পারি । তাহলে আমরা আজ এই বরকতময় রাত হতেই এই বরকতময় আমল করা শুরু করি ।
আমাদের পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে সর্বত্র নামাজ কায়েম করতে হবে -এটাই এই রাতের শিক্ষা ।
প্রিয় তৌহিদী জনতা ।
বিশ্ব মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামকে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সার্বজনীন জীবনব্যবস্থা হিসেবে রূপ দেয়ার জন্য হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিশ্বের পালনকর্তার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পেয়েছিলেন এই পবিত্র রাতে । এজন্য রাতটি প্রত্যেক মুসলমানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। রাসুল (সা.)-এর সব মুজিজার অন্যতম শ্রেষ্ঠ হলো পবিত্র মিরাজ । এ রাতে তিনি বায়তুল মোকাদ্দাসে সব নবীর ইমাম হয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালিন (নবীদের নেতা উপাধি লাভ করেন। আমরা সর্বশেষ ও সর্বশেষ্ঠ নবী ও সাইয়্যিদুল মুরসালিন ও সাইয়্যিদুল আম্বিয়ার উম্মত হয়ে গর্বিত । এ রাতটি নি:সন্দেহে তারই শ্রেষ্ঠত্বের গৌরবোজ্জ্বল নির্দশন বহন করে। সুতরাং মুহাম্মদ (সা.) –এর ত্যাগের আদর্শে উজ্জিবীত হয়ে তাদের বিধান কায়েমের জন্য আমরা আমাদের সম্পদ ও জীবন বিসর্জন দেওয়ার জন্য মুসলিম নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পরস্পর হাতে হাত কাধে কাধ মিলিয়ে শপথ গ্রহণ করি এবং সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় দন্ডায়মান হয়ে অশুভ শক্তির রাহুর উপচ্ছায়ার করাল গ্রাসে আক্রান্ত আমাদের এই পবিত্র দেশকে রক্ষা করি ।
প্রিয় ইসলামী ভাই-বোন-বন্ধু-স্বজন ।
মিরাজ শব্দ এসেছে আরবি ‘উরুযুন’ শব্দ থেকে। উরুযুন অর্থ সিঁড়ি আর মিরাজ অর্থ ঊর্ধ্বে গমন। সেজন্য মুহাম্মদ (সা.)-এর ঊর্ধ্বগমনকে মিরাজ বলা হয়।
রাসুল (সা.) পথহারা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে ও অশুভ শক্তিকে দমন করার জন্য একটানা ১২ বছর মক্কা শহরের অলি গলিতে মানুষকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেন । কিন্তু তার দাওয়াতে কিছু মানুষ ইসলাম কবুল করলেও অধিকাংশই চরম বিরোধিতা করা শুরু করে । ধীরে ধীরে বিরোধিতা তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করে। ইসলামবিরোধীরা তার অনুসারীদের করাত দিয়ে কেটে দুই ভাগ করে ফেলতো । মরুভূমির গরম বালিতে রেখে সিদ্ধ করতো । তারা ইসলামী মেয়েদের বর্শা দিয়ে হত্যা করতো । তারা ইসলামী লোকদের কটু কথা বলতো ।
তার সাথে সাথে ইসলামবিরোধীরা নানা রকম অমানবিক নির্যাতন শুরু করে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) ওপর। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সান্ত্বনা দেয়ার জন্য এ সময়ই রাসুলকে (সা.) তার সান্নিধ্যে নিয়ে যান।
তফসিরকারীরা বলেন, চোখের পলক সময় ব্যয়িত হয় এই অলৌকিক ঘটনা ঘটতে । বর্ণিত আছে, মিরাজ থেকে ফেরার পর দরজার কড়া নড়তে এবং অজুর পানি গড়াতে দেখেছেন রাসুল (সা.)।
"Glory be to Him Who made His servant (Prophet Muhammad) to go on a night from the Sacred Mosque (Masjid al-Haram) to the Farthest Mosque (Masjid al-Aqsa) of which We have blessed the precincts, so that We may show to him some of Our signs; surely He is the Hearing, the Seeing." (Qur'an, 17:1)
সুরা বনি ইসরাইলের প্রথম আয়াতে রাসুল (সা.)-এর মিরাজ গমনের বর্ণনা এসেছে এভাবে :
‘তিনি সেই পরম পবিত্র মহিমাময় সত্তা—যিনি তার স্বীয় বান্দাকে (সা.) এক রাতে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার পরিবেশকে করেছেন তিনি বরকতময়। যাতে তাকে নিজের কিছু কুদরত দেখান। নিশ্চয়ই তিনি সবকিছুরই শ্রোতা ও দ্রষ্টা।’
২৬ রজব রাসুল (সা.) ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ জিবরাইল (আ.) এসে রাসুলকে (সা.) মসজিদুল হারামে নিয়ে যান। সেখানে তার বুক বিদীর্ণ করে জমজম কূপের পানি দিয়ে সিনা মোবারক পরিস্কার করেন।
তারপর সেখান থেকে তিনি বুরাক নামক বাহনে চড়ে বায়তুল মোকাদ্দাসে এসে সব নবীর ইমামতি করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। তারপর তিনি বুরাকে চড়ে ঊর্ধ্বে গমন করতে থাকেন। তারপর তিনি মহাবিশ্বের প্রতিটি স্তর অতিক্রম করতে থাকেন। পথে মুসাসহ (আ.) –সহ অনেক নবী-রাসুলের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন ।সাথে জিব্রাইল (আ) থেকে তাকে সঙ্গ দেন ।
তারপর উর্ধ্বলোকের বায়তুল মামুরে গিয়ে জিবরাইল (আ.)- কে রেখে তিনি রফরফ নামের আরেকটি বাহনে চড়ে বিশ্বের স্রষ্টা মহান আল্লাহর দরবারে হাজির হন। হাদিস গ্রন্হে আছে, রাসুল (সা.) আল্লাহর এতটা কাছাকাছি গিয়েছিলেন যে, দুজনের মধ্যে ধনুক পরিমাণ ব্যবধান ছিল। সেখানে আল্লাহর সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর কথোপকথন হয়।
এক বর্ণনার মাধ্যমে জানা যায়, আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.)-এর কাছে জানতে চান, তিনি আল্লাহর জন্য কী উপহার এনেছেন। তখন রাসুল (সা.) তাশাহুদ ( নামাজের আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি …. দুয়াটা )পাঠ করেন এবং বলেন : এটি আপনার জন্য উপহার হিসেবে এনেছি।
আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ জীবন ও রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন বিধিবিধান রাসুল (সা.)-কে উপহার দেন। মিরাজ থেকে আসার পর এ ঘটনার বর্ণনা দেয়া হলে বিনা প্রশ্নে তা বিশ্বাস করেন হজরত আবু বকর (রা.) এবং সিদ্দিক উপাধী লাভ করেন ।
রাসুল (সা.) এর এই উর্ধ্ব গমন বিষয়ে কুরআন ও হাদিসে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা রয়েছে। এছাড়া মুফাসসিররাও এ সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য ও প্রমাণ পেশ করেছেন ।
মান্যবর ব্লগারবৃন্দ ও মুসলিম ভাই ও বোনেরা !
মানবতার মহান মুক্তির দুত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর অনুসারীদের সংখ্যা সারা বিশ্বে ১৭৫ কোটি । মানুষ্য সম্প্রদায়ের এক চতুর্থাংশ সদস্য তার অনুসারী ও তার মত-পথের অনুসারী । তার অনুসারীদের জন্য রয়েছে দিক নির্দেশনামূলক গ্রন্হ কুরআনিল কারিম যা বিশ্বের ১১২ টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে । তার অনুসারীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় বিশ্বের এক চতুর্থাংশ দেশ । এসব দেশের অধিকাংশই অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কান্ট্রিজ নামে সংঘবদ্ধ হয়েছে : সেই কুরআনের অমীয় বাণীর আলোকে ওয়া তাসিমুবি হাবলিল্লাহি জামিয়াও ওয়া লা তাফার্রাকু (তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধর ) ।
আমরা মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম - এর উম্মত । মুসলিম উম্মাহ-র গর্বিত সদস্য ও সদস্যা । মুসলিম কোনভাবেই আমেরিকাপন্থী হতে পারে না, মুসলিম কোনভাবেই হানাফী হতে পারে না, পারে না কওমী হতে, পারে না তাবলীগী হতে, পারে না দেওবন্দী হতে, পারে না আহলে হাদিস হতে, পারে না ওহাবী হতে, পারে না শিয়া হতে, পারে না সৌদি রাজতন্ত্রী পন্হী হতে, পারে না জামায়াত-শিবিরপন্হী হতে,পারে না ধর্মনিরোপেক্ষ হতে, পারেনা Islamist হতে, পারেনা Fundamentalist হতে,পারেনা মডারেট মুসলিম হতে, ....... । কারণ আল্লাহর রাসুল নিজেই বলেছেন"হুনা সুজ্জা ফিন্নার" অর্থাৎ যে বা যারা এই দলে (মুসলিম উম্মায়) বিভাজন সৃষ্টি করবে তার পরিনতি হবে হুনা সুজ্জা ফিন্নার অর্থাৎ বিভাজিত হয়ে এসব দলের নেতার পেছনে দলবদ্ধভাবে হেটে জাহান্নামে যাওয়াই তাদের পরিনতি ।
তাই, আসুন আমরা জাতি - গোত্র - লিঙ্গ - ভাষা-ভাষী নির্বশেষে নিজেদের সব সময় শুধুমাত্র মুসলিম বলেই পরিচয় দেই ।
কারণ আল্লাহ বলেছেন :
১. আল্লাহর পথে সংগ্রাম কর যেভাবে সংগ্রাম করা উচিত । তোমাদের তিনি মনোনীত করেছেন । তিনি তোমাদের ধর্মে তোমাদের জন্য কঠিন কোন বিধান দেননি । এ ধর্ম তোমাদের পিতা ইব্রাহিমের ধর্মের অনুরুপ । আল্লাহ পূর্বে তোমাদের নাম করণ করেছেন মুসলিম আর এ কিতাবেও করেছেন যাতে রাসুল তোমাদের জন্য সাক্ষী স্বরুপ হয় । সুতরাং তোমরা নামাজ কায়েম কর, যাকাত দাও ও আল্লাহকে অবলম্বন কর । তিনিই তোমাদের অভিভাবক । এক মহানুভব অভিভাবক । এক মহানুভব অভিভাবক ও এক মহানুভব সাহায্যকারী । সুরা হজ্জ :৭৮
২. বল, আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু বিশ্বজগতের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে । তার কোন অংশীদার নেই, আর আমাকে এ ব্যাপারেই তো আদেশ করা হয়েছে, আর মুসলিমদের মধ্যে আমিই প্রথম ।( সুরা আনয়াম : ১৬২ -১৬৩ )
মান্যবর ব্লগারবৃন্দ ও মুসলিম ভাই ও বোনেরা !
আমরা বাংলাদেশি মুসলিম । বাংলাদেশ আমাদের ইহজাগতিক ঠিকানা ও মৃত্যুর পর জান্নাত আমাদের শেষ ঠিকানা ।
বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি । বাংলা আমাদের মাতৃ ভাষা । আমাদের দেশে ইসলাম এসেছে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর যুগেই । ১২০৪ খৃষ্টাব্দে তুরস্ক হতে আগাত সেনানায়ক ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী এই ভুখন্ডে সর্বপ্রথম ইসলামী রাষ্ট্র স্হাপন করেন । শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ নিজেকেই শাহ-ই-বাঙালা উপাধি ধারণ করে বাঙ্গালী জাতির সর্দারে পরিনত হোন । ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ স্বাধীন সারভৌবম রাষ্ট্র স্হাপন করেন এই ভুখন্ডে । শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা রহ. এবং নুর কুতুবুল আলম রহ. স্হাপন করেন বিশ্বখ্যাত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় যাতে সারা বিশ্বের লোকরা ইসলামী ধর্মতত্বে জ্ঞান আহরোন করতে আসতেন । আমাদের এই দেশ অচিরেই পরিনত হয় বিশ্বের অন্যতম ধনী রাষ্ট্রে ও অন্যতম নৌ পরাশক্তিতে । তাই ইবনে বতুতা তার ভ্রমণ কাহিনীতে আমাদের এই দেশকে বলেছিলেন : পৃথিবীর বুকে স্বর্গ ।
আজ আমাদেরকে সেই স্বর্ণযুগে ফিরে যেতে হবে ।
যেহেতু আমরা মুসলিম জাতির সদস্য ও সদস্য এবং আমরা বাংলাদেশি, সেহেতু আমার মতে আমার দেশের বৈশিষ্ট্যগুলো হওয়া উচিত -
১. একক ও সভ্যতার ভিত্তিতে সুদৃঢ় চেতনার ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশী জাতি গঠন;
২. মনোগতভাবে উদার অপরাজেয় এক উন্নত বাংলাদেশী সামজ প্রতিষ্ঠা;
৩. একটি পরিপূর্ন নৈতিক ও বিনয়ী সমাজ গঠন;
৪. একটি সুচিন্তিত উদার ধৈর্যশীল ও সহিষ্ণু সমাজ গঠন;
৫. একটি বিজ্ঞানমনস্ক ও সুফলতা অর্জনকারী জাতি গঠন;
৬. গতিশীল সংস্কৃতি বাহকরূপে একটি গতিশীল সমাজ গঠন;
৭. একটি ন্যায়পরায়ন ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গঠন;
৮. সবদিক দিয়ে একটি সফল ইসলামী সমাজ গঠন।
৯. একটি বিজ্ঞানমনস্ক ও অগ্রসরমান সমাজ সৃষ্টি করা এর দৃষ্টি সর্বদা প্রসারিত থাকবে ভবিষ্যতের দিকে (অতীতের দিকে নয়) এবং এই দেশটি থাকবে নতুনের প্রতি উদগ্রীব।
১০. এই সমাজ শুধুমাত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্রেতা হবে না। বরং তার সাথে সাথে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর এই সভ্যতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নিত্য নতুন গবেষনা আবিষ্কার ও উন্নয়নের মাধ্যমে।
এগুলো এক বারে হবে না । ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে । এজন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্হাকে নতুন করে সাজাতে হবে এবং বাস্তবে রূপ দিতে হবে ।
আশ করি, আপনারা এই বিষয়ে চিন্তা করবেন ।
মান্যবর ব্লগারবৃন্দ ও মুসলিম ভাই ও বোনেরা !
আজ মুসলিম বিশ্ব অশুভ শক্তির রাহু গ্রাসে আক্রান্ত । আর আমাদের স্বদেশের আলিম সমাজ চরম বিভ্রান্ত ও জনতা আজ কষ্টের রাজ্যে বসবাস করছে । এজন্য আমাদের এই অবস্হাকে পরিবর্তনের জন্য সুদৃঢ় ঐক্য ও নতুন কর্ম পদ্ধতি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে । এজন্য আমাদের মেধা ও যোগ্যতার মাধ্যমে সর্বত্র স্হান করে নিতে হবে এবং আমাদের বেশী বেশী পড়াশোনায় মননিবেশ করতে হবে । অশুভ শক্তির রাহু গ্রাসে আক্রান্ত অবস্হা হতে বের আসার জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতে হবে ।
আমাদেরকে ইসলামের নীতিমালা মেনেই স্কুল ড্রেস পড়তে হবে । যে বা যারা ইসলামের নীতিমালা অনুযায়ী স্কুল ড্রেস পড়তে বাধা দেয় বা পড়তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বা ইসলামী নীতিমালা মেনে স্কুল ড্রেস প্রবর্তন করে না - তাকে বা তাদের প্রতিহত করার জন্য শক্তি সামর্থ্য অর্জন করার চেষ্টা করা আমাদের সবার কর্তব্য । অনথ্যায় অশুভ শক্তি আমাদের সমূলে বিনাস করবে । শুধু স্কুল ড্রেস নয় সর্বত্র ইসলামের নীতিমালা অনুসরণ করার কথা মদিনা সনদেই বলা আছে । মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে আমাদের দেশটাকে মদিনা সনদ অনুযায়ী পরিচালিত করতে হবে ।
মান্যবর ব্লগারবৃন্দ ও মুসলিম ভাই ও বোনেরা !
আল্লাহ বলেছেন : নিশ্চয়ই রাসুলের জীবনেই রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ ।আমরা আমরা আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে তার আদর্শ বাস্তবায়ন করার শপথ নেই ।
আপনাদের হায়াতুত তায়্যিবার জন্য মহান আল্লাহর কাছে দু,য়া করেই আজকের পোস্ট শেষ করছি ।
দ্বীন ইসলাম জিন্দাবাদ । বাংলাদেশ জিন্দাবাদ ।
নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার ।
কৃতজ্ঞতা : http://www.facebook.com/pages/Islamic-New-Year-Celebration/386930068065104
বিষয়: বিবিধ
৪৯২৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন