জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ২৯ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:৪২:৪৫ রাত
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ :
১.কারো অনুভতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য এই পোস্ট লেখা হয়নি ।
২.অনুগ্রহ করে কেহ আমাকে কাফের ফতওয়া দিবেন না । কারণ আমি মুসলিম । আমার দৃষ্টিভঙ্গি এই পোস্টে স্পষ্ট করেছি ।
৩.এই পোস্টের প্রতিটা বাক্য ও শব্দ আমার নিজস্ব নয় । আমি শুধু বাক্য ও শব্দগুলো জোড়াতালি দিয়েছি । তবে উপসংহারটা আমার নিজস্ব । আমার পোস্টের বাক্যগুলোর সত্যতা যাচাই করার জন্য বিভিন্ন লিংক দিয়েছি যেগুলোতে আপনারা ঢুকে সত্যতা যাচাই করতে পারেন ।
পটভুমি : আজ বন্ধুমহলে জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো । তার প্রেক্ষিতে সবাই যা বল্লো তাকে নেটের বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে সন্নিবেশিত করায় এই পোস্ট সৃষ্টি হলো । আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে ।
সূচনা :জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রাচীনতম দল যা ১৯৪১সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । বাংলাদেশের রাজনীতিতে ও নীতি-নির্ধারণে জামায়াতের ভুমিকা অপরিসীম । ইদানিং সময়ে শাহবাগ আন্দোলন ও মাওলানা দিলওয়ার হোসেন সাইদীকে চাদে দেখা যাওয়ার পর হতে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার আলোচনা জোড়ালো হচ্ছে । অনেকে এই দলকে জার্মানির হিটলারের দল নাৎসি পার্টির সাথে তুলনা করছেন । সুতরাং আমরা এই পোস্টে দেখবে জামায়াত নিষিদ্ধ হলে
জামায়াত নিষিদ্ধ করার তৎপড়তার ধরণ :
১.২০০৯ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ ও সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মওলানা জিয়াউল হাসানের জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল চেয়ে করা রিট আবেদনটি পুনরুজ্জীবিত করেছেন। বর্তমানে এ রিটের চূড়ান্ত শুনানি চলছে আদালতে। রায় কী হয় সেটা দেখতে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
http://www.newsevent24.com/2013/04/16/%E0%A6%8F%E0%A6%95-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7-%E0%A6%B9%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%A6/
২. আইনি প্রক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের কাজ চলছে। এ ব্যাপারে আদালতে রিট করা হয়েছে। এর মাধ্যমে যদি দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়, তাহলে ভালো।
নইলে বর্তমান সরকারের আমলেই প্রয়োজনে আইন করে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হবে।
http://www.dainikamadershomoy.com/index.php/today-s-news/first-page/item/10981-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7-%E0%A6%B9%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B%E0%A7%87.html
এব্যাপারে আইনপ্রতিমন্ত্রীর অভিমত :
জামায়াত নিষিদ্ধ করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। যথাযথ আইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই জামায়াত নিষিদ্ধ করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “জামায়াত নিষিদ্ধ এখন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার মাত্র। আপনারা অপেক্ষা করুন, দেখতে পাবেন।”
http://www.gonojagoronmoncho.com/2013-03-23-14-37-05/359-2013-04-15-19-32-12.html
জামায়াত নিষিদ্ধ হলে জামায়াত কি করবে ? :
১.নিষিদ্ধ করা হলে জামায়াতে ইসলামী আইনি লড়াইয়ে যাবে। তারা নিষেধাজ্ঞা চ্যালেঞ্জ করে প্রথমে যাবে হাইকোর্টে। সেখানে সন্তোষজনক রায় না পেলে সুপ্রিম কোর্টে যাবে। এ কথা বলেছেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। অনলাইন আউটলুক ইন্ডিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে একথা বলেন তিনি। তার সাক্ষাৎকারটি নেন প্রণয় শর্মা।
http://www.mzamin.com/details.php?nid=NDU5MDg=&ty=MA==&s=MTk=&c=MQ==
২. সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট আইনজীবি ড. শাহদীন মালিকও বলেছেন, এক জামায়াত নিষিদ্ধ হলে দশ জামায়াতের জন্ম হতে পারে। জামায়াত কর্মীরা যে দলেই ঢুকবে সেটিকেই জামায়াতে পরিণত করবে।
http://www.newsevent24.com/2013/04/16/%E0%A6%8F%E0%A6%95-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7-%E0%A6%B9%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%A6/
৩. জামায়াত সন্ত্রাসের মাত্রা বাড়িয়ে দিবে ।
যেসব কারণে জামায়াত নিষিদ্ধ হবে :
১.আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে ডিজিটাল যুগের সূচনা করলেও এর সকল প্রকার সুবিধা নিচ্ছে জামায়াত শিবির। জামায়াত শিবিরের তথ্য প্রযুক্তি আন্দোলনের কাছে সরকার চরমভাবে মার খেয়েছে। বাঁশের কেল্লাকে একবার বন্ধ করার কারণেই এখন তারা দেশে-বিদেশে শত শত বাঁশের কেল্লা সৃষ্টি করে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে।
২. দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সামপ্রদায়িক গোষ্ঠী জামায়াত-শিবির ও বিএনপি কাজ করছে।
৩.এরা মুক্তিযুদ্ধের দুশমন। এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ।
৪.তারা ধর্মীয় লেবাসে ধর্ম ব্যবসায়ীদের দিয়ে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আমরা ইতোমধ্যে ধর্ম ব্যবসায়ী জামায়াত-শিবির ও বিএনপিকে দমনে করতে সচেষ্ট হয়েছি।
http://www.dainikamadershomoy.com/index.php/today-s-news/first-page/item/10981-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7-%E0%A6%B9%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B%E0%A7%87.html
৫. গত ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণার পরই কিছু ব্লগার কাদের মোল্লার ফাঁসি ও জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নেয়। এরপর সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন এসে তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
সম্প্রতি দলের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের জের ধরে পুলিশের সাথে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষ, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড আখ্যা দিয়ে সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও মহাজোটের নেতারা জামায়াত-নিষিদ্ধের জোরালো দাবি তোলে। এরপর সরকার আসামি পক্ষের মতো রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সমান সুযোগ রেখে ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে। এ সময় ব্যক্তির পাশাপাশি অভিযুক্ত দলের বিচারের বিষয়টিও যোগ করে।
http://www.newsevent24.com/2013/04/16/%E0%A6%8F%E0%A6%95-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7-%E0%A6%B9%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%A6/
জামাত নিষিদ্ধ হলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যেসব লাভ হবে :
১. জামায়াত নিষিদ্ধ হলে এই দলটি আন্ডারগ্রাউন্ডে যাবে, তখন এরা আর জনসমাবেশ করতে পারবে না। পারবে না কোনো মিছিল করতে। তবে দলটি নিষিদ্ধ হলেও যে বিলীন হয়ে যায়নি, তা তারা অবশ্যই জানান দিতে চাইবে। আর যেহেতু তারা কোনো মিছিল-মিটিং করতে পারবে না, তাই তারা তাদের অস্তিত্বের জানান দিতে নানা ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারে।
জামায়াতে ইসলামীর মহিলা কর্মীদের পোষাক । এই পোষাক মূলত সৌদি আরবের মেয়েদের পোষাক
২. ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হওয়ার পরে তারা কিন্তু বিলীন হয়ে যায়নি; বরং তারা গোপনে তাদের কর্মতত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছিল এবং অপেক্ষায় ছিল এমন একদিনের জন্য, যেদিন তারা আবার রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। বাস্তবে হয়েছিলও তাই। নিষিদ্ধ ঘোষণা করা ছাড়াই দেশ স্বাধীনের পর অনেক দল বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। আবার অনেক বড় বড় দল এখনও বেঁচে আছে বেঁচে না থাকার মতো, কিন্তু জামায়াতের বেলায় তা হয়নি; বরং জামায়াত নবগঠিত হওয়ার পরে এমনভাবে সুসংগঠিত হয়েছে, যা কি-না ১৯৭১ সালের আগে পূর্ব পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর যে কার্যক্রম ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই এখন যদি আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতে ইসলামীকে বন্ধ করেও দেয়, তাহলে তারা সেই ১৯৭১-পরবর্তী অবস্থায় যে পলিসি নিয়েছিল, সেই একই পলিসি আবারও গ্রহণ করতে পারে। আর এই পলিসির মাধ্যমে তারা যদি নতুন করে আবার ফিরে আসে, তাহলে বর্তমানে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার জন্য যে সময়, যে চিন্তা, যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে তার সবই বিফলে পর্যবসিত হবে।
৩. বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী একটি বড় সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী দল। এদের সাংগঠনিক ভিত্তি অনেক মজবুত। তাছাড়া বর্তমানের বাংলাদেশ যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশ নয়। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ যত পার্সেন্ট ভোট পায়, বঙবন্ধু শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ তার চেয়ে অনেক বেশি ভোট পেত। তাই জামায়াত নিষিদ্ধ করতে হলে আওয়ামী লীগের এবং জামায়াতে ইসলামীর অতীত এবং বর্তমান সব দিক বিবেচনা করেই তা করতে হবে।
৪. ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে বাংলাদেশের বিখ্যাত সব দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় অনেক গুরুত্বের সঙ্গে বাংলাদেশে সফররত যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ব্যারোনেস সৈয়দা ওয়ার্সির কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে নিজের এবং তার দেশের স্পষ্ট মনোভাব ছাপা হয়েছে। এখানে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করাই সমাধান নয়। সেটিকে রাজনৈতিক এবং আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করা যেতে পারে। আবার তিনি এ কথাও বলেছেন, যে আদর্শের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল মোকাবিলা করা হবে, সে আদর্শ জনগণ ঠিক করবে। ব্যারোনেস সৈয়দা ওয়ার্সি কোনো দলের নাম সরাসরি মুখে না বললেও তিনি যে জামায়াতে ইসলামীর কথা বলেছেন তা পরিষ্কার। এই ধারণা যদি সত্যিই হয়, তাহলে বহির্বিশ্বের দৃষ্টিতে আওয়ামী সরকার হয়ে পড়বে একটা ফ্যাসিবাদী এবং অগণতান্ত্রিক সরকার। এটা অবশ্যই আমাদের দেশের জন্য এবং সরকারের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।
৫. অনেকে বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধ হলে কিছুই হবে না। ধীরে ধীরে তারা নাৎসি বাহিনীর মতো বিলীন হয়ে যাবে। যারা জামায়াতকে নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে তুলনা করে এমন চিন্তা করেন যে, সরকার যদি জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ করে দেয়, তাহলে তা এডলফ হিটলারের নাৎসি বাহিনীর মতো একদিন ইতিহাসের অতলে হারিয়ে যাবে, তাদের অবশ্যই একটা কথা বুঝতে হবে যে, জামায়াতে ইসলামী আর নাৎসি বাহিনী এক নয়। নাৎসি বাহিনী ছিল একটা জাতীয়তাবাদী দল আর জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির মূল ভিত্তি হলো ধর্ম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের পতনের অন্যতম কারণ ছিল তার সেনাবাহিনীর কিছু জেনারেলের বিশ্বাসঘাতকতা এবং তার দলীয় কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাওয়া। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী হলো ধর্মভিত্তিক দল। তারা রাজনীতি করে ধর্মকে সামনে রেখে। তাই তারা দুঃসময়ে চুপ করে থেকে অবশ্যই তাদের সময়মত জ্বলে ওঠার চেষ্টা করবে। ইতিহাসও ওই একই কথা বলে। নাৎসি বাহিনীর বিলীন হয়ে যাওয়ার সঙ্গে যারা জামায়াতের পরিণতির কথা ভাবেন, তাদের একটি কথা বুঝতে হবে যে, নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে গোটা বিশ্ব ক্ষেপে গিয়েছিল। আমেরিকা, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য আর ফ্রান্সের মতো শক্তিশালী সব দেশই নাৎসি বাহিনী ধ্বংস করার পেছনে একযোগে কাজ করেছিল। এদের সঙ্গে ছিল জার্মানির বেশিরভাগ মানুষ। জামায়াত নিষিদ্ধকরণের জন্য কি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমেরিকা, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ জাতিসংঘও এক কাতারে দাঁড়াবে? এরা যদি আওয়ামী লীগের পাশে এসে দাঁড়ায়, তারপরও বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন আওয়ামী লীগের অবশ্যই দরকার হবে।
৬. জামায়াতের বর্তমান প্রধান শরিক দল হলো বিএনপি। তাই জামায়াত বন্ধ হয়ে গেলে এরা যদি সবাই কৌশলগত কারণে বিএনপিতে যোগ দেয়, তাহলে তা দিলেও দিতে পারে। আর যদি তা জামায়াত করে, তাহলে তা আওয়ামী লীগের জন্য হবে সবচেয়ে হতাশার। বর্তমানে জামায়াত আর বিএনপি এক জোট হলেও তারা কিন্তু সব আন্দোলন এক সঙ্গে করে না। সরকারের বিরুদ্ধে অনেক আন্দোলন বিএনপি করেছে জামায়াত ছাড়া। আবার জামায়াতও অনেক আন্দোলন করেছে বিএনপির সমর্থন ছাড়া। কিন্তু জামায়াত যদি বিএনপির সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়, তাহলে বর্তমানে জামায়াতের যে শক্তি আছে তা বিএনপির শক্তির সঙ্গে এক হলে দুই দলের যে সম্মিলিত শক্তি হবে তা সামাল দেয়া আওয়ামী লীগের জন্য আগামীতে বড় ধরনের একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
৭. আওয়ামী লীগে একটা গ্রুপ রয়েছে, যারা মুসলমানের সন্তান, তবে নিজেদের মুসলমান পরিচয় দিতে ঘৃণা করে। অন্যান্য ধর্মের প্রতি তাদের কোনো অভিযোগ না থাকলেও এদের যাবতীয় আক্রোশ হলো ইসলাম ধর্মের প্রতি। আওয়ামী লীগের এই গ্রুপটা শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, এরা বাংলাদেশ থেকে সব ইসলামী দলই উঠিয়ে দিতে চায়। আওয়ামী লীগ যদি এদের মনোবাসনা পূরণের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে, তাহলে জামায়াত হয়তো এমন এটি দল গঠন করে ফেলবে, যেখানে ইসলামের নাম থাকবে না। তবে তারা তাদের দল পরিচালনা করবে ইসলামী দলের মতো।
জামায়াতে ইসলামী সমর্থক ধর্মযাজক যাদের দৃষ্টিতে জন্মদিন, মিলাদ, মিলাদুন্নবী সা., শবে বরাত, শবে মেরাজ, হিজরী নববর্ষ ও আশুরা পালন করে
জামায়াত নিষিদ্ধ করতে গেলে অবশ্যই কিছু বাধা আসবে। শুধু জামায়াত নয়, যে কোনো দল নিষিদ্ধ করতে গেলেই বড়-ছোট নানা ধরনের বাধাবিপত্তি আসবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে কি জনস্বার্থের বিরোধী কোনো দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যাবে না? দেশের ক্ষতি করে এমন কোনো দল নিষিদ্ধ করতে গেলে যত বাধাই আসুক না কেন সেই দলের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এমন কী উপায় আছে, যার মাধ্যমে জামায়াত নিষিদ্ধ করা সম্ভব! সম্প্রতি বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান আইনজীবী বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর সাম্প্রতিক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করেই আইনের মাধ্যমে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব। যদি নাশকতার ওপর ভিত্তি করে জামায়াত নিষিদ্ধ হয়, তাহলে শুধু জামায়াত নয়, আওয়ামী লীগও ওই একই আইনে ফেঁসে যাবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তার দলীয় হাজার হাজার কর্মী লগি, লাঠি, বৈঠার নামে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে যেভাবে পিটিয়ে পিটিয়ে মানুষ মেরেছিল ইউটিউবে সার্চ দিলে তার ভিডিও এখনও দেখা যায়। হাজারখানেক মানুষের সামনে বড়াইগ্রাম উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যানকে যেভাবে আওয়ামী লীগের নেতারা পিটিয়ে পিটিয়ে মেরেছে তার ভিডিওটা যদি আমাদের আইনজীবী এখনও না দেখে থাকেন, তাহলে তার প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ সময় করে একদিন ভিডিওটা দেখে নেবেন। ইউটিউব সার্চ দিয়ে বাংলাদেশে সংঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অন্ততপক্ষে এক হাজার ঘণ্টার ভিডিওচিত্র পাওয়া যাবে। আর ওই ভিডিওচিত্র দেখে দেখে যদি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা শুরু হয়, তাহলে জামায়াতকে নিষিদ্ধের আগে অন্য আরও কিছু দল নিষিদ্ধ জরুরি হয়ে পড়বে। কারণ ইউটিউবের ভিডিওগুলোতে জামায়াতের চেয়েও ওইসব দলেরই বেশি প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। বিএনপি যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে না তা কিন্তু নয়। তবে ইউটিউবে বিএনপির সন্ত্রাসের যে পরিমাণে ভিডিও রয়েছে, আওয়ামী লীগ আর জামায়াতের সন্ত্রাসের ভিডিও তার চেয়ে অনেক বেশি রয়েছে। তাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে দল নিষিদ্ধ করা শুরু হলে বিএনপিকে অন্তত প্রথম অথবা দ্বিতীয় দফায় বন্ধ করা যাবে না। তাহলে জামায়াত বন্ধের উপায় কী? আমার মতে, জামায়াত যদি বন্ধই করতে হয়, তাহলে আমাদের আজ থেকে ৪২ বছর আগে চলে যেতে হবে। সেই ৪২ বছর আগে আমরা যখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ শুরু করেছিলাম, তখন এই জামায়াত আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তি এই অভিযোগে জামায়াত বন্ধ করাটাই একমাত্র সহজ উপায়। কিন্তু তারপরও শান্তি নেই। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তি হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ আর বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে যুগের পর যুগ যে সখ্যের ইতিহাস গড়ে তুলেছে বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষ দূরে থাক, গোটা পৃথিবীর ছয়শ’ কোটি মানুষ মিলেও সে ইতিহাস কোনো দিনও বিলীন করতে পারবে না।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/04/11/195978#.UX6T91KdlYU
যে কারণে বাংলাদেশের জনগণ অপছন্দ করে :
১.জামায়াত ইসলামী সিরিয়ার ইমাম ইবনে তাইমিয়া, সৌদি আরবের মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাবের দৃষ্টিভঙ্গিকে অনুসরণ করে । উপরন্তু জামায়াত কুরআন-হাদিসের সরাসরি অনুসরণ করার চেষ্টা করে । অপর দিকে বাংলাদেশের মুসলিমরা স্মরণাতীত কাল হতে হানাফি মাযহারের অনুসারী ।
http://www.facebook.com/pages/Anjuman-E-Rahmania-Ahmadia-Sunnia-Trust/121173284657608?ref=stream
২.বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম হিন্দু হতে ধর্মান্তরিত হওয়ায় তারা কবর পুজা, মাজার পুজা, পীর পুজা, মোমবাতি প্রজ্জলোন, মঙ্গল প্রদীপ ব্যবহার ও নারী-পুরুষের অবাদ মেলামেশায় বিশ্বাসী । এজন্য প্রায়ই জামায়াতের লোকদের সাথে তাদের সংঘাত হয় । ইদানিং হেফাজতে ইসলাম নামক সংগঠণের সাথে জামায়াতের লোকরা মিলে চট্টগ্রামের মাজার পুজারীদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা সংঘঠিত করেছে । উপরন্তু তারা মাজার পুজারীদের প্রধান পুরোহিতদের হত্যার হুমকি দিয়েছে ।
http://www.facebook.com/BHANDARI.TARIQAH/posts/592819067396206
http://www.facebook.com/BHANDARI.TARIQAH/posts/592494247428688
৩.জামায়াতে ইসলামী সৌদি আরবের মতো কঠোর পর্দা প্রথায় বিশ্বাসী । আর এই লক্ষ্যে জামায়াত তাদের দলের মহিলা কর্মিদের জন্য কালো আবআয়া,খিমার ও নিকাবকে বাধ্যতামূলক করেছে ।
http://www.facebook.com/EID.E.MILADUNNOBI.SM
৪.জামায়াতের প্রধান শীর্ষগুরু আবুল আলা মওদুদী (চট্টগ্রামের জামায়াতবিরোধী মাজারপুজারীদের কাছে আলু মধু বউদুধী নামে পরিচিত । উল্লেখ্য তাদের নেতা নাম হলো আহমদ রেজা বেরলভী আলা হযরত যিনি ছিলেন মুলত ব্রিটিশের দালাল ।)-র গুরুর বইগুলোতে রাসুল সা.-এর শানে বেয়াদবীমূলক কথা রয়েছে এবং সাহাবী আজমাইন এবং অলী আউলিয়া কেরাম সম্পর্কে বেয়াদবীমূলক কথা রয়েছে । উপরন্তু তারা মাজার ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে ।
http://www.facebook.com/dailySunniBarta
৫. জামায়াতের লোকরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও গোড়ামীধারণকারী ধার্মিক । তারা জন্মদিন, মিলাদ, মিলাদুন্নবী সা., শবে বরাত, শবে মেরাজ, হিজরী নববর্ষ ও আশুরা পালন করে না । অথচ এসব পালন করাই হলো এদেশের মুসলিমদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য । জামায়াত সমর্থক ধর্মযাজকরা এসব উৎসবের অসারতাপ্রমাণ করে বই লিখে জনসাধারণকে বিনামূল্যে বই বিতরণ করেই ক্ষ্যান্ত হচ্ছেন না, বরং তারা টিভি চ্যানেলের টক শোগুলোতে এসব উৎসব পালন হতে দুরে থাকার জন্য জনগণকে উপদেশ দিয়ে থাকেন ।
http://www.facebook.com/EID.E.MILADUNNOBI.SM
উপসংহার :
জামায়াত একটি প্রাচীন রাজনৈতিক দল হওয়ায় বাংলাদেশের জনসাধারণ জামায়াতের নেতা-কর্মীদের কাছ হতে দায়িত্বশীল ভুমিকা আশা করে । আশা করা যায়, মাজারপুজারী জনসাধারণের ধর্মীয় অনুভতিকে শ্রদ্ধা করে কবর পুজা-মাযার পুজা নিরবিচ্ছিন্ন রাখায় ভুমিকা রাখলে, যুদ্ধপরাধীদের দল হতে বহিস্কার, মেয়েদের কঠোর পর্দাকে শিথিল করলে, নতুনভাবে দলকে এক বিংশ শতাব্দীর আলোকে গড়ে তোল্লে, প্রতিপক্ষের সাথে আপোষ রফায় পৌছতে পারলে জামায়াত তার সাময়িক সমস্যা কাটিয়ে উঠবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন ।
বিষয়: বিবিধ
৬২৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন