সৌদি আরবে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী নারীদের উপর চলছে অত্যাচার ( নিউজপোস্ট )
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ২১ জানুয়ারি, ২০১৩, ০২:৫৭:১১ রাত
মান্যবর ব্লগারবৃন্দ !
আমি যে নিউজপোস্ট দিয়েছি, তা বিন্দুমাত্র মিথ্যা নয় । কারণ অ্যামেনিস্ট ইন্টারন্যাসনাল, গ্লোবাল ভয়েস, ইউটিউব ও বিভিন্ন ফোরামে আমার নিউজের সব তথ্য আছে । প্রতি পাচ লাইন অন্তর অন্তর সূত্র উল্লেখ করেছি । উপরন্তু টুইটারে সৌদি একটিভিস্টদের একাউন্ট আছে আর ইউটিউবে তারা ক্রমাগত তথ্য আপলোড করছেন । সুতরাং কোনভাবে এই খবরের বস্তুনিষ্টতাকে চ্যানেল করার সুযোগ নেই । আর যারা আরবী জানেন, তাদের দয়া করে সৌদি অনলাইন একটিভিস্টদের সাথে কথা বলে এ্রই খবরটির সত্যতা যাচাই করার অনুরোদ করছি ।
মূল খবর :
শনিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০১৩ তারিখ সৌদি আরবের বুরাইদা শহরে কারাগারে আটক বন্দীদের আত্মীয়রা বিক্ষোভ সমাবেশ করতে সক্ষম হয়। কারাগারে আটক এসব লোকদের বিরোদ্ধে কোন অভিযোগ আনা হয়নি ।
এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী সবাই ছিল নারী এবং শিশু । পুলিশ তাদের দ্রুত ঘিরে ফেলে । গ্রেফতার করে । কারণ সৌদি আরবে জনসম্মুখে সকল প্রকার বিক্ষোভ কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ । নিরঙ্কুশ ক্ষমতাধারী রাজতান্তিক শাসন ব্যাবস্হায় নির্মমভাবে সব ধরণের সভা সমাবেশ দমন করা হয়।
এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিগত দুই বছর সৌদি আরবের বিভিন্ন প্রান্তে বন্দীদের পরিবারের সদস্যরা এই ধরনের কয়েকটি বিক্ষোভ সমাবেশ করতে সক্ষম হয় । এবং অবস্থান ধর্মঘট আয়োজন করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি,
মানবাধিকার সংস্থার অ্যামেনিস্টি ইন্টারন্যাশনালের সূত্রমতে সৌদি আরবে বিনা অভিযোগে ৩০,০০০ নাগরিক কারাগারে বন্দী আছে । [ উৎস : https://www.youtube.com/watch?v=urILE3ttfYs ]
যাদের অনেকে ৯/১১-এর পর “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের” প্রেক্ষাপটে গ্রেফতার করা হয়েছে। [ উৎস : https://www.amnesty.org/en/news-and-updates/report/saudi-arabia-human-rights-abuses-name-fighting-terrorism-20090722 ]
ছদ্মনামের একটি একটিভিস্ট গ্রুপ @ই৩টেকাল ( যার বাংলা অর্থ “আটক” এবং টুইটার একাউন্ট https://twitter.com/e3teqal ) ইন্টারনেটে তথ্য প্রদান করে : যখন নারী ও শিশুদের গ্রেফতার করা হয়, তখন তাদের উপর শক্তি প্রয়োগ করা হয়
عاجل تم توثيق الاعتداء على النساء والأطفال أثناء النقل بالقوة من قبل
أحد المارة الكرام
@ই৩টেকাল: জরুরী: নারী ও শিশুদের জোর করে সেখান থেকে সরানোর সময় তাদের উপর হামলা চালানো হয় ।
উৎস : https://twitter.com/e3teqal/status/287606686812868608
এই একটিভিস্ট গ্রুপ তাদের টুইটার একাউন্টে এই লিংকে একটি ভিডিও প্রদর্শন করছে যাতে দেখা যাচ্ছে সৌদি পুলিশ বিক্ষোভরত মহিলাদের ঘিরে রেখেছে এবং নির্যাতন করছে । ভিডিওটি এই লিংকে :
https://twitter.com/ImaQh/status/287660109809741825 ।
যখন নারী এবং শিশুদের গ্রেফতার করা হয়, তখন তাদের পুরুষ আত্মীয়রা বুরাইদার কাছে আল সাফরা কারাগারের দিকে এগিয়ে যায় । খবরে প্রকাশ, সেখানে তাদের আটকে ফেলা হয় । দাঙ্গা পুলিশ তাদের ঘিরে রাখে । কিন্তু তারপরও সারারাত ধরে তারা সেখান অবস্থান করতে থাকে ।
কাসিম প্রদেশের যুবরাজ সকালবেলা কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে বুরাইদা শহরে ছেড়ে দেবার আদেশ জারি করেন । এদের মধ্যে কয়েকজনকে রিয়াদে স্থানান্তর করতে বলেন (যাদের মধ্যে অন্তত একজন শিশুও ছিল ) আর অবশিষ্টদের বুরাইদা শহরে আটক রাখা হয়।
ঠিক দুপুর ২.০৬ মিনিটে উক্ত প্রতিবাদে অবস্থান গ্রহণ করা একজন টুইট করেন:
نحن اﻵن محاصرون وعدد الرجال قرابة الخمسين والنساء عشر نساء..ﻻ
تنسونا من الدعاء والمناصرة بالميادين
@মা৪৪আউ: আমাদেরকে ঘিরে রাখা রাখা হয়েছে। পুরুষের সবাই পঞ্চাশ উর্ধ্ব এবং নারীদের সবার বয়স প্রায় দশ বছর, আমাদের জন্য প্রার্থনা করুন এবং আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসুন।
একটি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে এক বয়স্ক মহিলা “গ্রেফতার হবার আগে পাঁচ মিনিট কেঁদেছিলেন“।
উৎস : https://www.youtube.com/watch?v=sJFDq_S2CA0
ওই দিন পরে, আর বিক্ষোভ করব না এই মুচেলেকা প্রদান করার পর কিছু বিক্ষোভকারীদের মুক্তি প্রদান করা হয়, যাদের মধ্যে একজন টুইট করেছে:
شيخ طاعن بالسن بكاء بكاءًا شديدًا لمّا قال له المحقق : ماذا تريد ؟ رد
عليه : لا أريد أبنائي، فقط أريد بناتي !
@মাজেদ০৬: অত্যন্ত বৃদ্ধ এক ব্যক্তি প্রচুর কেঁদেছেন। যখন জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাকে প্রশ্ন করা হয়, “তুমি কি চাও”? তিনি উত্তর প্রদান করে, “আমি আমার ছেলেদের ফেরত পেতে চাই না, আমি কেবল আমার মেয়েদের ফেরত চাই”।
গতকাল ৯ জানুয়ারিতে সকালে বুরাইদা শহরের মূল বিক্ষোভ স্থল থেকে গ্রেফতারকৃত তিনজন নারীকে আদালতে হাজির করা হয় । বিচার গোপনে পরিচালনা করা হয় । বিচারক উৎসাহ দিচ্ছিলেন : প্রতিটি নারীকে একজন পুরুষ সঙ্গ প্রদান করবে। আদালতের নিরাপত্তা বাহিনী। একটিভিস্ট এবং গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের আত্মীয়দের আদালতে প্রবেশ করতে দেয়নি।
সরকারি আইনজীবী বলেন, বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নারীদের চাবকানো উচিত:
المدعي العام ابراهيم الدهيش طالب القاضي بسجن المعتقلات
وجلدهن وكان حريصا على ذلك
@আবদুল্লাহ ১৪০৬: সরকারি কৌসুলি ইব্রাহিম আল-দিহিশি, বিচারকের কাছে আটককৃতদের কারাদণ্ড প্রদানের দাবী করেন এবং তাদের চাবকানোর বিষয়ে তিনি উৎসাহ প্রদান করেন।
قالت احدى المعتقلات والله لو تحكمون بخمس عشر سنه لن نعتذر
فنحن نطالب بحق مشروع
@আবদুল্লাহ ১৪০৬ : আটককৃত একজন বলেন: আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি যদি আপনি আমাদের ১৫ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন, তারপরেও আমরা ক্ষমা প্রার্থনা করব না। আমরা আমাদের বৈধ অধিকার দাবী করছি।
বিচারক নারীদের দোষী সাব্যস্ত করেন, কিন্তু তাদের পাঁচদিন আটকে রাখাকে তিনি যথেষ্ট মনে করেছেন। রিয়াদের স্থানান্তর করা বিক্ষোভকারীসহ বাকীরা বিচার ছাড়াই কারাগারে আটক রয়েছে।
এদিকে শাসক সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যেও ভিন্নমতের সুর রয়েছে ।
ভিন্ন মতাবলম্বী রাজপরিবারের সদস্যা বাসমা বিনতে সউদ বিন আব্দুল আজিজ a n b চ্যানেলের আলামাতুল ইসতিফহাম অনুষ্ঠানে সাক্ষাতকারে বলেন: সৌদি আরবের অধিকাংশ গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা নেই এবং মাত্র ৫% মানুষ ধনি এবং মধ্যবিত্ত।
ভিন্নমতাবলম্বী সৌদি রাজকুমারি বাসমা বিনতে সৌদ বিন আব্দুল আজিজ অভিযোগ করেছেন, তার দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে, দারিদ্র বেড়েছে এবং মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। লন্ডনে বসবাসরত প্রিন্সেস বাসমা বিনতে সৌদ বিন আব্দুল আজিজ ব্রিটিশ গণমাধ্যমকে বলেছেন, সৌদি আরবে যা ঘটছে সে ব্যাপারে তিনি আর চুপচাপ থাকবেন না।
তিনি সৌদি সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, ক্ষমতাসীন রাজ পরিবার ক্ষমতা ও সম্পদ কুক্ষিগত করে রেখেছে এবং সাধারণ জনগণকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের খুব কম অংশই ভোগ করতে দেয়া হচ্ছে। প্রিন্সেস বাসমা বলেন,"সৌদি আরবে রাজ পরিবারের ২,০০০ সদস্য রয়েছে যারা কোটিপতি। এদের কাছেই সব সম্পদ ও ক্ষমতা কুক্ষিগত। দেশের কোন নাগরিক এ ব্যাপারে টু শব্দটি উচ্চারণের সাহস পায় না। কারণ, সমালোচনা করলে তাদের যতটুকু ভোগ করতে দেয়া হয়েছে, তাও কেড়ে নেয়া হবে"।
সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহ'র ভাতিজি বাসমা বিনতে সৌদ বলেন, "আপনি যদি দারিদ্রের কারণে চুরি করেন, তবে আপনার হাত কেটে ফেলা হবে। কিন্তু আপনি যদি কোটিপতি হন, তবে আপনাকে কেউ কিচ্ছু বলবে না"। রাজ পরিবারের সদস্যদের সাত খুন মাফ করে দেয়া হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
৪৭ বছর বয়সী এ সমাজকর্মী আরো বলেন, "আমাদের দেশে এমন অনেক মন্ত্রী রয়েছেন যারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন না। কারণ, সেখানে কোন কাজের জন্যই জবাবদিহীতার কোন বালাই নেই"।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্হার প্রতিবেদন হতে প্রাপ্ত তথ্য :
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বহুবার সৌদি সরকারকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করেছে। সৌদি আরব বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে মহিলাদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সৌদি আইনে মহিলাদের গাড়ি চালাতে বাধা নেই বরং ওহাবি আলেমরা ধর্মীয় ফতোয়ার মাধ্যমে তাদের গাড়ি চালানোর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছেন।
এ ছাড়া, কোন সৌদি নারীকে বিদেশ সফরে যাওয়ার আগে পিতা, স্বামী, ভাই বা ছেলের লিখিত অনুমতি নিতে হয়।
চাকুরি করতে চাইলে এমনকি শারিরীক চিকিৎসার জন্য অস্ত্রোপচারের আগেও নারীদেরকে তাদের কোন পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হয়।
নারীর নাম সিমা, তাকে গাড়ি চালানোর অপরাধে জুলাই মাসে জেদ্দা থেকে গ্রেফতার করা হয় । সেদেশের এক আদালত গাড়ি চালানোর অপরাধে তাকে ১০ দোররা মারার আদেশ দেন।
রিপোর্টে আরো বলা হয়, একই ধরনের অপরাধের জন্য আরো দুই নারীকে এ বছরের শেষ দিকে একই ধরণের সাজা দেওয়ার কথা রয়েছে ।
খবরের মূল উৎস :
সরকারি আইনজীবীরা বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী সৌদি নারীদের চাবকানোর উপায় খুঁজছে
http://bn.globalvoicesonline.org/2013/01/13/34829/
কৃতজ্ঞতা স্বীকার :
১. অ্যামেনিস্টি ইন্টারন্যাশনাল
২.হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
৩.গ্লোবাল ভয়েস
৪.ইউটিউব
৫.টুইটার
ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড :
বিষয়: বিবিধ
১৮৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন