ব্লগার বানুর দৃষ্টিতে বোরকা ও আমার অভিমত

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ১৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:৪৩:৫১ দুপুর



পটভুমি :

ব্লগার বানু আমার লেখা পোস্ট : মেয়েদের লুঙ্গি পড়া প্রসঙ্গ - তে বোরকা সম্পর্কে ভুল একটা হাদিস দিয়ে একটা মন্তব্য লিখেছেন । মন্তব্যটা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় শেয়ার করছি । তার অনেক পোস্টে প্রসন্নভাবে ইসলাম সম্পর্কে উস্কানীমূলক বক্তব্য থাকে । আমার পর্যবেক্ষণ : এসব পোস্ট তিনি সামান্য হলেও পড়াশোনা করে দেন । কিন্তু তার পোস্টে অনেকেই মন্তব্য করার নামে গালি গালাজমূলক শব্দ ও বাক্য লিখে থাকেন বা অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য লিখেন । আমার মনে হয় তার এধরনের পোস্টগুলোতে মন্তব্য লেখার সময় যথেষ্ঠ পড়াশোনা করেই মন্তব্য লিখা উচিত । পরিশেষে, সবাইকে বলছি : পোস্টগুলোতে মন্তব্য লিখুন । কিন্তু গালি গালাজ করবেন না । ব্যক্তি আক্রমন করবেন না । গালি গালাজ করা বা অশালিন কথা বলা হলো হাদিসের দৃষ্টিতে মুনাফিকের কাজ । আর কুরআন বলা হয়েছে : কাওলান কারিমা বা উত্তম কথা বলতে । সুতরাং আমরা কেন গালি গালজ করবো । ব্লগ সাইটে লেখালেখি ভাল কাজ । কারণ এতে জ্ঞান অর্জন করা যায় । আর আল্লাহ বলেছেন : ফাসতাবিকুল খাইরাতি , তোমরা ভাল কাজে সহযোগি হও ।

আমার পোস্ট মেয়েদের লুঙ্গি পড়া প্রসঙ্গ -তে ব্লগার বানুর মন্তব্য :

যথার্তই!!! আল্লা এবং নবী ভক্ত ঈমানদার মুসলিম পুরুষদের ললুপ "কুনজর-কুদৃষ্টি" থেকে নারী জাতিকে হেফাজত করার জন্য প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের উপর বোরকা বাধ্যতামুলক করা হয়েছে।

বাই দ্যা ওয়ে ; হেজাবের বিষয়ে ইসলাম ধর্মের পরিপুর্ণ নির্দ্দেশে বলা হয়েছে প্রত্যেক নারীকে মোটা কাপর দিয়ে শরীর, মাথা এবং মুখমন্ডল ঢেকে রাখতে হবে। কিন্তু নারীদের মুখমন্ডল ঢাকার বিষয়টি নিয়ে আপনি সম্ববত নিজেই বিব্রত। তাই নেকাব(veils) প্রসঙ্গটি সুকৌশলে চেপে গেছেন। অবশ্য এই জামানায় সভ্য-ভব্য-সুশিক্ষিত নারীদের নিয়ে ইসলাম ধর্মের এত টানা-হেঁছড়া আপনি হজম করতে পারছেন্না, তাই হয়তো। যাক, ধন্যবাদ আপনাকে।

A'isha radi Allahu anha used to say: "When (the Verse): 'They should draw their veils over their necks and bosoms,' was revealed, (the ladies) cut their waist sheets at the edges and covered their faces with the cut pieces." (Hadith - Sahih Bukhari 6:282

Narrated Aisha: May Allah have mercy on the early immigrant women. When the verse "That they should draw their veils over their bosoms" was revealed, they tore their thick outer garments and made veils from them. (Abu Dawood, Book 32, Number 4091)

:: আমার উত্তর ::

আপনি বলেছেন : আল্লা এবং নবী ভক্ত ঈমানদার মুসলিম পুরুষদের ললুপ "কুনজর-কুদৃষ্টি" থেকে নারী জাতিকে হেফাজত করার জন্য প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের উপর বোরকা বাধ্যতামুলক করা হয়েছে।

আমার অভিমত : আপনি প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের উপর বোরকা বাধ্যতামুলক করা হয়েছে বলেছেন ,তাহলে আপনি কুরআন হতে আরবী এবারতসহ প্রমাণ উপস্হাপন করুন । বোরকা বাধ্যতামূলক বা ফরজ হলে তা কুরআনে উল্লেখ থাকতো ।

আপনি লিখেছেন :

হেজাবের বিষয়ে ইসলাম ধর্মের পরিপুর্ণ নির্দ্দেশে বলা হয়েছে প্রত্যেক ঋতুবতি নারীকে মোটা কাপর দিয়ে শরীর, মাথা এবং মুখমন্ডল ঢেকে রাখতে হবে।

আমার অভিমত : মূখমন্ডল ঢেকে রাখতে হবে কুরআনে কোন সুরায় আছে কত নাম্বার আয়াতে আছে ? তার রেফারেন্স আপনার কাছে চাচ্ছি ।

মুখমন্ডল ঢাকার ব্যাপারে বেশ কিছু হাদিসে সাহাবীদের অভিমত রয়েছে । তাও তাদের ব্যক্তিগত অভিমত । এজন্য ইসলামি আইনজ্ঞদের এই বিষয়ে মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে ।

আর এটা বাধ্যতামূলক বিষয়ও নয় ।

মুসলিম নারীরা মুখমন্ডল ঢাকবে কি ঢাকবে না সে নিয়ে আমার নিজের কোন চিন্তা নেই । কারণ আমি মেয়ে না ।

মেয়েদের মধ্যে যারা এসব পড়তে চাইবে যখন খুশি পড়বে বা মুখ ঢেকে নিজেকে আড়াল করবে । আর যারা এসব পড়তে না চাইলে পড়বে না । এটা তাদের ইচ্ছাধীন বিষয় । এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার । তবে আমি মুখমন্ডল না ঢাকার পক্ষে । কারণ :

১। মেয়েদের ওড়না দিয়ে মাথা,গলা ও বুক ঢেকে সুরা নুরের ৩১ নং আয়াতে রাখার কথা বলা হয়েছে ।

২। “হে নবী! তোমার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মু’মিনদের নারীদেরকে বলে দাও তারা যেন তাদের ওড়নার প্রান্ত তাদের ওপর টেনে নেয়৷ এটি অধিকতর উপযোগী পদ্ধতি, যাতে তাদেরকে চিনে নেয়া যায় । (সুরা আহযাব, ৫৯)

এই আয়াতে জিলবাব বলে একটা শব্দ আছে । যার বাংলা অনুবাদ হলো চাদরের মতো বড় ওড়না যা দিয়ে মাথা,গলা ও বুক ঢেকে রাখা যায় । এটা বোরকা নয় । বোরকা আরবী শব্দও নয় ।

এই আয়াতে স্পষ্টভাবে যেখানে বলা হচ্ছে- তারা যেন তাদের ওড়নার কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে।

তাদের সহজে যেন চেনা যায় এই বক্তবব্যের মাধ্যমে তাদের মুখমন্ডল খোলা রাখার অনুমতিই দেয়া হয়েছে। কারন মুখমন্ডল খোলা না রাখলে চেনার প্রশ্নই আসে না।

আপনি লিখেছেন :

ঢাকার বিষয়টি নিয়ে আপনি বিভ্রত । তাই নেকাব(veils) প্রসঙ্গটি সুকৌশলে চেপে গেছেন। অবশ্য এই জামানায় সভ্য-ভব্য-সুশিক্ষিত নারীদের নিয়ে ইসলাম ধর্মের এত টানা-হেঁছড়া আপনি হজম করতে পারছেন না ।

আমার অভিমত : বোরকা ভিন্ন জিনিস । আগেই বলেছি । এটা কি তা আপনি ভাল করেই জানেন । নিকাবের বাংলা অর্থ হলো মুখোশ । অর্থাৎ যা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা যায় । ইংরেজীতে নিকাবকে মাক্স বলা হয় ।

এই জামানায় সভ্য-ভব্য-সুশিক্ষিত নারীদের নিয়ে ইসলাম ধর্মের এত টানা-হেঁছড়া আমি ভাল করেই হজম করতে পারছি । কারণ এজন্য আমাকে বেশ কয়েকটা ভাষা শিখতে হচ্ছে । কুরআন হাদিস পড়তে হচ্ছে । হিন্দু ও খৃষ্টান ধর্ম পড়তে হচ্ছে । আর সভ্য-ভব্য-সুশিক্ষিত নারীদের সাথেও মিশতে হচ্ছে বা তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে ।

পরিশেষে আপনি যে হাদিস দিয়েছেন, আপনি তার ভুল অনুবাদ দিয়েছেন । ভেইল বা বোরকার কথা হাদিসে নেই ।

হাদিসটায় খিমার শব্দ ব্যবহার হয়েছে । যার অর্থ হেডকভার, ওড়না বা বড় চাদর জাতীয় কাপড় । এই কাপড় দিয়ে মেয়েদের মাথা,গলা ও বুক ঢাকার কথা বলা হয়েছে । আপনার দেওয়া এই হাদিসটাতে মূলত সুরা নুর-এর :৩১ নং আয়াত নাযিল হওয়ার পরবর্তী সময়ের কথা বলা হয়েছে ।

এই হাদিসটা বাংলাদেশ ইসলামি ফাউন্ডেশন হতে প্রকাশিত বোখারি শরীফের ৮ম খন্ডে ৪৩৯৮ নং হাদিস হিসেবে দেওয়া হয়েছে । আমি এই হাদিসটার স্ক্যান কপি দিয়েছি যা আমার এই পোস্টে দেখতে পাবেন । প্রয়োজনে http://www.quraneralo.com/bukhari/ এই লিংক হতে ডাইনলোড করে বোখারী শরীফের এই হাদিসটা দেখতে পারেন । তবে তা প্রচলিত নিয়মে সন্নিবেশ করলে বোখারী শরিফের ৬ষ্ঠ খন্ডের ৬০ নং অনুচ্ছেদের ২৮২ নং হাদিস হয় ।

এই হাদিসটাই সামান্য কয়েকটা শব্দের পার্থক্য ছাড়াই আবু দাউদ শরীফের ৩২ অধ্যায় বা পোষাক খন্ডে বর্ণিত হয়েছে আর এই বইয়ে এই হাদিসটার নাম্বার দেওয়া হয়েছে ৪০৯১ ।

আমি এই হাদিসের শুদ্ধতম বাংলা অনুবাদ দিচ্ছি । আশা করি, আপনার অনুবাদটার সাথে তুলনা করবেন । আপনাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই । নেটে অসংখ্য ওয়েব সাইট আছে । খুব কমই সঠিক তথ্য প্রদর্শন করে ।

হাদিসটা হলো :

আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত,

يرحم الله نساء المهاجرات الأول، لما أنزل الله : وليضربن بخمرهن على جيوبهن شققن مورطهن فاختمرن بها.

আল্লাহ তাআলা প্রাথমিক যুগের মুহাজির মহিলাদের প্রতি রহম করুন। যখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত,” তারা গ্রীবা ও বক্ষদেশকে যেন ওড়না দ্বারা আবৃত করে (সূরা নূর : ৩১)

“وليضربن بخمرهن على جيوبهن “

নাযিল করলেন, তখন তারা নিজে চাদর ছিঁড়ে ওড়না ওড়না হিসেবে ব্যবহার করতো ।

সুতরাং আপনার দেওয়া অনুবাদ দুইটা ভুল প্রমাণিত হলো । কারণ আপনি ওড়নার বদলে বোরকা বা veil ব্যবহার করেছেন :

A'isha radi Allahu anha used to say: "When (the Verse): 'They should draw their veils over their necks and bosoms,' was revealed, (the ladies) cut their waist sheets at the edges and covered their faces with the cut pieces." (Hadith - Sahih Bukhari 6:282

Narrated Aisha: May Allah have mercy on the early immigrant women. When the verse "That they should draw their veils over their bosoms" was revealed, they tore their thick outer garments and made veils from them. (Abu Dawood, Book 32, Number 4091)

আপনাকে ধন্যবাদ ।



ওড়না সম্পর্কিত বোখারী শরীফের একটা হাদিসের বাংলা অনুবাদসহ স্ক্যান কপি । সৌজন্যে : ইসলামী ফাউন্ডেশন



সেলোয়ার , কামিজ ও ওড়নাকে ইসলামী নীতিমালা অনুযায়ী পোষাক পড়া মহিলা



বুদ্ধিজীবি শাহ আব্দুল হান্নান-এর ভক্ত এবং হিজবুত তাহরীর সমর্থক মেয়েরা সাধারণত ঘরের বাহিরে যাওয়ার সময় এমন পোষাক পড়ে থাকেন ।



জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রী সংস্হা সমর্থকরা সাধারণত ঘরের বাহিরে যাওয়ার সময় এমন পোষাক পড়ে থাকেন ।



অপবিত্র মেয়েদের পোষাক ।

তারা গ্রীবা ও বক্ষদেশকে যেন ওড়না দ্বারা আবৃত করে (সূরা নূর : ৩১)

“وليضربن بخمرهن على جيوبهن “ এর ব্যাখ্যা :


“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেনো তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেনো যা সাধারনত: প্রকাশ মান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে এবং তারা যেনো তাদের মাথার উড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে

সুরা নুর, আয়াত-৩১

http://www.quraanshareef.org/index.php?sid=24&&ano=64&&st=30&&arabic=

And tell the believing women to reduce [some] of their vision and guard their private parts and not expose their adornment except that which [necessarily] appears thereof and to wrap [a portion of] their headcovers over their chests

http://quran.com/24%28%E0%A6%86%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%A4

“তারা যেন বক্ষদেশে নিজদের ওড়না ফেলে রাখে” । আয়াতের এই অংশে কুরআনে “খিমার” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে । এই আরবি শব্দটির অর্থ “কাভার বা ঢাকনা”।

কোন কিছু ঢাকতে যা ব্যবহার করা হয়। সেক্ষেত্রে টেবিল ক্লথ, জানালার পর্দা, চাদর, ওড়না, পোশাক যেকোন কিছু হতে পারে।

আয়াতটির মধ্যে আরো একটি শব্দ হচ্ছে “ جُيُوبِهِنَّ” শাব্দিক অর্থ হচ্ছে “জামার কলার” ।

“খিমার অর্থ “ওড়না” এবং جُيُوبِ”هِنَّ অর্থ “জামার কলার” হলে ” وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ” এর শাব্দিক অর্থ হবে

“তারা যেনো জামার কলারের উপর ওড়না ফেলে রাখে” ।

তাহলে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, বাংলা অনুবাদকারি এই আয়াতাংশের অনুবাদ “তারা যেনো মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে” করলেন কেনো ?

এপ্রসঙ্গে তাফসীর গ্রন্হ রুহুল মা’য়ানী-র তথ্য –

সেই যুগের মেয়েরা ওড়না মাথায় দিয়ে পিঠের দিকে ওড়নার দুই প্রান্ত ঝুলিয়ে রাখতো । এর ফলে তাদের বুক, গলা, কান ইত্যাদি দেখা যেতো ।

তাই কুরআনে "তাদের মাথার ওড়না জামার কলারের উপর ফেলতে বলা হয়েছে" এবং তাতে ওড়না বুকের উপরেই পরবে। সেজন্যই হয়ত বাংলা অনুবাদকারি শাব্দিক অনুবাদ না করে একটু বিশ্লেষন করে অনুবাদ করেছেন ।

অনেকে এই আয়াতের শাব্দিক অনুবাদ পড়ে বলবেন : কুরআনে কেবল “বুক” ঢাকার কথা বলা হয়েছে মাথা বা চুল নয়। কারন আয়াতে চুল-شعر বা رأس -মাথা শব্দগুলো

ব্যবহার করা হয়নি। কেবল জামার কলার এর উপর অর্থাৎ বুকের উপর ওড়না রাখতে বলা হয়েছে।

ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় কুরআন নাযিল হওয়ার অনেক আগে থেকেই মহিলারা মাথায় কাপড় দিতো ও মুখ ঢাকতো যা সৌন্দর্য ও আভিজাত্য প্রকাশের প্রতিক বা পোষাক বলে বিবেচিত হতো । এটা কোন ধর্মের নিয়ম ছিলোনা । এটা ছিলো তাদের সংস্কৃতির একটি অংশ।

অতএব,কুরআনের ব্যাখ্যা মেনে নিলে দাড়ায় যে মাথায় কাপড় অনেক আগে থেকেই মেয়েরা দিতো এবং কুরআনে বলা হয়েছে বুকের উপর ওড়না টা রাখার অর্থাৎ বুক ঢাকার কথা ।



সুরা নুরের ৩১ নং আয়াতের

وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا”

“তারা যেনো যা সাধরনত: প্রকাশমান তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” - এই অংশের ব্যাখ্যা :


প্রকাশমান বলতে বোঝানা হয়েছে হাতের তালু, মুখ মন্ডল, পায়ের পাতা অর্থাৎ যে সব অঙ্গ সাধারন কাজ কর্মে বের হয়ে যায়।

এব্যাপারে হাদিসে প্রমান পাওয়া যায় :

১।

عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها أَنَّ أَسْمَاءَ بِنْتَ أَبِىْ بَكْرٍ دَخَلَتْ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَعَلَيْهَا ثِيَابٌ رِقَاقٌ فَأَعْرَضَ عَنْهَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَقَالَ يَا أَسْمَاءُ إِنَّ الْمَرْأَةَ إِذَا بَلَغَتِ الْمَحِيْضَ لَمْ تَصْلُحْ أَنْ يُرَى مِنْهَا إِلاَّ هَذَا وَهَذَا. وَأَشَارَ إِلَى وَجْهِهِ وَكَفَّيْهِ-

আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, আসমা বিনতে আবী বকর (রাঃ) পাতলা কাপড় পরিহিত অবস্থায় রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট প্রবেশ করলেন। রাসূল (ছাঃ) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললেন, হে আসমা! নারী যখন যৌবনে পদার্পণ করে তখন তার এটা ওটা ব্যতীত প্রকাশ করা বৈধ নয়। তিনি চেহারা ও দু’কব্জির দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন।

[ আবু দাঊদ হা/৪১০৬; মিশকাত হা/৪৩৭২, সনদ ছহীহ। ]

২।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما قَالَ كَانَ الْفَضْلُ رَدِيْفَ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَجَاءَتِ امْرَأَةٌ مِنْ خَثْعَمَ، فَجَعَلَ الْفَضْلُ يَنْظُرُ إِلَيْهَا، وَتَنْظُرُ إِلَيْهِ فَجَعَلَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم يَصْرِفُ وَجْهَ الْفَضْلِ إِلَى الشِّقِّ الآخَرِ-

আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, (বিদায় হজ্জের দিন তার ভাই) ফযল রাসূল (ছাঃ)-এর পিছনে সওয়ারীতে বসে ছিল। অতঃপর খাছ‘আম গোত্রের একটা মহিলা আসল। ফযল তার দিকে তাকাতে শুরু করল এবং মহিলাটিও ফযলের দিকে তাকাচ্ছিল। অতঃপর নবী করীম (ছাঃ) ফযলের মুখমন্ডল অন্যদিকে ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন।

[ বুখারী হা/১৫১৩; মুসলিম হা/১৩৩৪, আবুদাঊদ হা/১৮১১; নাসাঈ হা/২৬১৩। ]

এ হাদীছ প্রমাণ বহন করে যে, মহিলাটির মুখ খোলা ছিল।

৩।

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ شَهِدْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم الصَّلاَةَ يَوْمَ الْعِيْدِ فَبَدَأَ بِالصَّلاَةِ قَبْلَ الْخُطْبَةِ بِغَيْرِ أَذَانٍ وَلاَ إِقَامَةٍ ثُمَّ قَامَ مُتَوَكِّئًا عَلَى بِلاَلٍ فَأَمَرَ بِتَقْوَى اللهِ وَحَثَّ عَلَى طَاعَتِهِ وَوَعَظَ النَّاسَ وَذَكَّرَهُمْ ثُمَّ مَضَى حَتَّى أَتَى النِّسَاءَ فَوَعَظَهُنَّ وَذَكَّرَهُنَّ فَقَالَ تَصَدَّقْنَ فَإِنَّ أَكْثَرَكُنَّ حَطَبُ جَهَنَّمَ. فَقَامَتِ امْرَأَةٌ مِنْ سِطَةِ النِّسَاءِ سَفْعَاءُ الْخَدَّيْنِ-

জাবির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ঈদের দিনে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছালাতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি খুৎবার পূর্বে আযান, ইক্বামত ব্যতীত ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর লোকদেরকে উপদেশ, নছীহত করলেন। অতঃপর মহিলাদের নিকট এসে ওয়ায-নছীহত করে বললেন, হে মহিলারা! তোমরা ছাদাক্বা কর, ……… দু’গাল লালচে কালো দাগ মিশ্রিত একজন মহিলা নারীদের মধ্যে হ’তে দাঁড়িয়ে বলল, কেন হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)?...।

[মুসলিম হা/৮৮৫।]

অতএব, কুরআন আর মতে আমরা পাচ্ছি, মেয়েদের পর্দা হলো :

১।মাথায় বুকে ও মাথায় কাপড় দেয়া বা মুসলিম মেয়েদের মুখ ও হাতের তালু ছাড়া সমগ্র শরীর ঢেকে রাখা ।

২।দৃষ্টিকে নত করা ।

৩।এমন ভাবে হাটা, চলা ফেরা যাতে তার দৌহিক সৌন্দর্য্য প্রকাশ না পায় অন্য পুরুষের সামনে ।



বোরকা কুরআনে নেই :


يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاء الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا

“হে নবি! আপনি আপনার পত্নিগনকে ও কন্যগনকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগনকে বলুন, তারা যেনো তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে । ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবেনা। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।”

এখানে চাদরের কিয়দংশ টেনে নিতে বলা হয়েছে।

কুরআনে কোথাও বোরখার কথা বলা হয়নি । বোরকার কাপরের রং বা আকারের কথা বলা হয়নি।

বলা হয়নি পা পর্যন্ত লম্বা কাপড় পরতে হবে বা কালো কাপড়ের বোরখা পরতে হবে। বলা হয়নি হাত মোজা-পা মোজা পরতে হবে। চোখের সামনে ২ পার্টের কাপড় ঝুলাতে।

আসল ব্যপার হচ্ছে মার্জিত থাকা যাতে করে সমাজে কোন রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। কিন্তু তার পরও বোরকা ও নিকাব জনপ্রিয় ।

বোরকা, নিকাব ও হাত মোজা- পা মোজা পড়ার কারণ :

যারা তাদের বোনদের বা স্ত্রীদের বোরকা, নিকাব ও হাত মোজা- পা মোজা পড়ার কারণ হিসেবে বলেন : বর্তমান দুনিয়ার অবস্থা খারাপ । যতই দিন যাচ্ছে বিপর্যয় ও বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা ইভটিজিং বেড়ে যাচ্ছে । ধর্ষণ বেড়ে গেছে ।শিক্ষাঙ্গনে পরিমল ছাত্রীধর ও ধর্ষক লীগ । নোংড়ামীর চিত্রায়ন । তাই মেয়েদের বেশী বেশী পর্দা করাতে হবে ।

তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, মেয়েরা বাড়ির ভিতরে থাকলেই পৃথিবীতে শান্তি নেমে আসবে ।তাদের প্রতিভা বিকাশের প্রয়োজন নেই । মানুষ সভ্যতায় কোন অবদানের প্রয়োজন নেই ।বড় জোড় সন্তান জন্ম দান আর স্বামীর সেবা করাই যথেষ্ঠ ।

জামানা খারাপের দোহাই দিয়ে বোরকা, নিকাব ও হাত মোজা- পা মোজা পড়তে বোন ও স্ত্রীদের পড়ানো কতটা গ্রহণযোগ্য ?

জামানা খারাপের দোহাই দিয়ে বোরকা, নিকাব ও হাত মোজা- পা মোজা পড়তে বোন ও স্ত্রীদের পড়ানো গ্রহণযোগ্য নয় । কারণ :

১. পৃথিবী কখন কোন অবস্থায় যাবে তা আল্লাহ ছাড়া আর কেহ জানেন না ।

এই রকম বোরখা, নিকাব, হাত মোজা ও পা মোজা পড়ার পরিস্থিতি আসার কথা কি আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করে দিতেন না ? কারণ আল্লাহ বলেছেন :

আমরা এই গ্রন্হে কোন কিছুই বাদ দেই নাই…..

( সুরা আনয়াম :৩৮)

আর সত্য ও ন্যায়ের দিকে তোমার প্রতিপালকের বাণী সম্পূর্ণ । আর তার আয়াত পরিবর্তনকারী কেহ নেই । তিনি সব শোনেন সব জানেন । (সুরা আনয়াম : ১১৫ )

এটি করুণাময় দয়ালু কাছ থেকে অবতীর্ণ একটি গ্রন্হ যার আয়াতগুলো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে । (সুরা হামীম আস সিজদা : ২ )

অথচ আমরা কুরআনে দেখছি একটা ওড়না দিয়ে মাথা, বুক ঢাকতে বলা হয়েছে । অথচ হাতমোজা, পা মোজা সহ মুখ ঢাকা-র উপযোগী বোরকার পড়ার জন্য বাধ্য করা বা জনমত গঠণ করা কি সীমালংঘন নয় ?

২. আল্লাহ সব কিছু জানেন । ইসলাম সহজ ও যুক্তির ধর্ম । ইসলামে এমন কিছু নাই যা মানুষের জন্য কষ্টকর । আমরা ওযু করতে না পারলে অন্য বিকল্প ব্যবস্হার আশ্রয় নেই । অসুস্হ থাকলে বা সফরে থাকলে রোজা কাজা করি । এজন্যই আল্লাহ বলেছেন :

আল্লাহ তোমাদের বিশেষভাবে নির্বাচিত করেছেন, আর তোমাদের প্রতি ধর্ম সম্পর্কে কোন প্রকার কাঠিন্য করেন নাই ।( সুরা হজ্জ: ৭৮ )

৩. কিছু লোক তাদের বিশেষ উদ্দেশ্যে বা ব্যক্তিস্বার্থে ভুল ব্যাখ্যা উপস্হাপন করছে ।অথচ আল্লাহ বলেছেন,

হে আদম সন্তান ! আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি পোশাক । যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে । আর অবর্তীণ করেছি সাজ সজ্জার বস্ত্র । আল্লাহভীতির পোশাক সর্বোত্তম । (সুরা আরাফ : ২৬)

৪. ইসলাম বিবেক বুদ্ধি প্রয়োগের ধর্ম । এজন্য সুরা মূলকের প্রথম দিকে জান্নাত যাওয়ার জন্য বিবেক বুদ্ধি খাটানোর কথা বলা আছে । এজন্য মানুষের সাভাবিক বিবেক বুদ্ধিকে ব্যব হার করতে বলে ইসলাম । যে মেয়েটা সাংবাদিক, যে মেয়েটা সিভিল ইন্জিনিয়ার তার জন্য অবশ্যই বোরখা, নিকাব, হাত মোজা ও পা মোজা কতটুকু পরিধেয় পোষাক হতে পারে ?

৫. ইসলাম নৈতিকতাকে গুরুত্ব দেয় ।আমরা দেখি, কুরআনের আয়াতকে বিকৃত করা হচ্ছে অনুবাদের মাধ্যমে বা ব্যাকেট দিয়ে বেশ কিছু শব্দ অনুবাদে ঢুকিয়ে বিশ্লেষন মুলক অর্থ দেয়া হয় । আর কুরআনের অর্থকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য রাসুল সা. ও তার সাহাবীদের বানী ও কর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে ।তাদের এই অধিকার কোরআনের আয়াতের অর্থ নিজেদের মত করে করার কে দিয়েছে ?

এজন্য আল্লাহ বলেছেন :

যারা আমার আয়াতগুলোকে বিকৃত করে তারা আমার অগোচর নয় ।শ্রেষ্ঠ কে ? যাকে জাহান্নামে ফেলা হবে সে, না যে কিয়ামতের দিন নিরাপদ থাকবে সে ? তোমাদের যা ইচ্ছা কর, তোমরা যা কর তিনি তা দেখেন । (সুরা হামীম আস সিজদা : ৪০-৪১)

কাওকে তো মাতাব্বরি করতে বলা হয়নাই ধর্মের ব্যপারে।

একটা ওড়না দিয়ে মাথা, বুক বলা হয়েছে যেখানে ,সেখানে হাতমোজা-পা মোজা স হ চোখের উপর ২ পার্টের বোরকার ফতোয়া দেয়া কি সীমালংঘন নয় ?

এ দায়িত্ব কি ওলামাদের দেয়া হয়েছে? পর্দার ব্যপারে এসব বাড়তি পোষাক চাপিয়ে দেয়া দূঃসাহসিক সীমালংঘন।

আল্লাহ তা’য়ালা সর্ববিষয়ে জ্ঞাত আছেন। ইসলাম সহজ-সুন্দর ধর্ম। ইসলামে এমন কিছু নাই যা মানুষের জন্য বহন করতে কষ্টকর হবে।

তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে কোন জটিলতা করেননি ।

সুরা হজ্জ :৭৮

মানুষের সাভাবিক বিবেক বুদ্ধিকে ব্যবহার করতে বলে ইসলাম। নৈতিকতাই প্রধান ব্যপার। ইন্টার্নেটের ওয়েব সাইট ও প্রকাশিত বইগুলোতে কোরআনের আয়াত গুলোতে দেখা যায় ব্রাকেটের ভিতর বিশ্লেষণ মুলক অর্থ (বোরকা, হাত মুজা, পা মুজা, মুখ ঢাকা ) দেয়া হয় । তাদের এই অধিকার কে দিয়েছে কোরআনের আয়াতের অর্থ নিজেদের মত করে করার ?

পোষাকের ব্যপারে কোরআনের মূল নীতি হচ্ছে মার্জিত থাকা। একজন সুস্থ মানুষ কিভাবে মার্জিত থাকতে হয় ভালো ভাবেই জানেন। এ জন্য কোরআনের আয়াতের অতিরীক্ত ব্যখ্যা দেয়া কোন প্রয়োজন নেই।

কুরআনের আয়াত অনুযায়ি হাতের পাতা, পায়ের পাতা এবং চেহারা বের হলে কোন অসুবিধা নেই। পর্দা রক্ষার জন্য বোরখা পরিধান করতে হবে এমন কোন ইঙ্গিত দেয়া হয়নি। বোরখার রং বা হুল কতটুকু হবে সে ব্যপারেও কিছু বলা হয়নি।

কিন্তু কিন্তু কিছু লোক বোরখা পড়ে পর্দা করতে হবে নিম্ন রুপ:

বাইরে বের হতে বোরখা পরিধান করতে হবে। সে বোরখা হবে পা পর্যন্ত লম্বা এবং কালো কাপড়ের । নিচের পার্ট ঢোলা-ঢালা পায়ের পাতা পর্যন্ত। উপরের পার্ট প্রায় হাটুর নিচে চলে যায় ঝুল। এরপর মুখ ঢাকার জন্য নেকাব। বাকি থাকে চোখ। চোখ ঢাকার জন্য জরজেটের ২টা পার্ট, ঝুল প্রায় বুক পর্যন্ত।

আর এজন্য তারা সাহাবী আব্দুল ইবনে আব্বাস-সহ বেশ কিছু সাহাবীর ব্যক্তিগত অভিমতকে প্রয়োগ করার জন্য গুরুত্ব দেন । এমন কি শুধুমাত্র এক চোখ খুলে চলাফেরা করার কথাও বলেন । ইবনে আববাস রা-এর বাণী" ويبدين عينا واحدا ‘কেবল একটা চোখ খোলা রাখবে’। এক চোখ খোলা রাখার অবকাশ দেওয়া হয়েছে, কেবল পথ দেখার যরূরী প্রয়োজনে। যদি প্রয়োজন না হ’ত তাহ’লে এক চোখ খোলা রাখার অনুমতিও দেওয়া হ’ত না। "

অর্থাৎ মেয়েদের বোরকা পড়লেই চলছে না । নিজের ভাল একটা চোখকে অন্ধ করে ফেলতে হবে ।

এপ্রসঙ্গে জাকির নায়েক এই ভিডিওতে সুন্দর একটা কথা বলেছেন । আপনার তা দেখতে পারেন : http://www.youtube.com/watch?v=5PkeQ_9XBO8

আল্লাহ তা’য়ালা সব বিষয়ে জ্ঞাত। যুগের অবস্থা কখন কেমন হবে তা আল্লাহ তা’য়ালা ভালো করেই জানেন। যদি এমন করে বোরখা পড়ার প্রয়োজন হতো তাহলে তিনি কুরআনে উল্লেখ করেই দিতেন।

কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি ইসলামের হুকুম বানানোর : যে এটা অপরিহার্য বা ফরজ । এটি সীমালংঘনেরই নামান্তর।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে অনেক কিছুই তো দেয়া নেই কুরআনে। কথা হলো সারা কোরআন বহুবার রয়েছে আল্লাহ মানুষকে সবচেয়ে বুদ্ধিমান বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তৈরি করছেন। এজন্য মানুষকে স্বাভাবিক বিবেক বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে বলা হয়েছে। স্বাভাবিক বুদ্ধি সম্পন্ন লোক কখনও উপরোক্ত ফর্মুলায় পর্দা করার কথা বলবেন না।

এবার আসি কুরআন অনুযায়ি মহিলা কিভাবে পর্দা রক্ষা করতে পারি। এ ব্যপারটা অনেকটা ব্যক্তিগত। কে কিভাবে পর্দা রক্ষা করবেন তা নিজের ব্যপার। ব্যপারটা জায়গা ভেদে আলাদা হয়।

প্রথম কথা হচ্ছে ” ইন্নামাল আ’মালু বিন্নিয়াত”। সব কিছু নিয়তের উপর নির্ভর করে ।

অর্থাৎ, ইচ্ছেটা ঠিক হতে হবে। আমি এমন ভাবে পোষাক পরিধান করবো বা বডি ল্যাংগুয়াজ আমার এমন হবে যাতে করে অনর্থক বিশৃংখলা সৃষ্টি না হয় সমাজে।

মূল কথা হলো যে কোন পোষাক পড়েই মার্জিতভাবে থাকা। এবং একজন সুস্থ মানুষ জানেন কিভাবে মার্জিত থাকতে হয়।

আগা থেকে মাথা পর্যন্ত বোরখা জড়িয়ে যদি নিয়ত খারাপ হয় তাহলে কোন ফায়দা নেই । ইদানিং বড় ধরণের অপরাধীরা বোরকা পড়ে অপরাধ করে থাকেন ।

নিজেদের যোগ্যতা ও মেধাকে বিকষিত করার চেয়ে কিছু সংগঠণ যদি পর্দা করার জন্য বোরখা পরা আর ছেলেদের সাথে সাভাবিক কাজের সময়ও বিকৃত স্বরে কথা বলা বা বাপের বয়সি শিক্ষকের সাথেও কথা বলা হতে বিরত থাকতে বলে, তাহলে বলছি :

কোন দরকার নেই ঐ রকম পর্দার যা একটা মেয়ের প্রতিদিনের চলা ফেরা কে ব্যঘাত ঘটায় এবং দুর্বল করে দেয় মানসিক, শাররিক ভাবে এবং তার প্রতিভাব বিকাশকে রুদ্ধ করে ।

নিয়ত কে শক্ত করতে হবে। পর্দার দায়িত্ব কেবল মেয়েদের নয়। কিছু সংগঠণ ও কিছু লোক বলেছেন : মেয়েরা বেশী বেশী কাপড় পড়লে বা ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাকলে দুনিয়ায় শান্তি মিলবে। কারণ খারাপ ছেলেরা প্রবলতর । খারাপ ছেলে তো রাসুলের (সা.) যুগেও ছিল । স্বয়ং রাসুল (সা.) -এর যুগে মসজিদে নববী-তে নামাজ পড়তে যেয়ে মহিলা ধর্ষিত হয়েছে এমন ঘটনাও ঘটছে । তারপর রাসুল (সা.) মসজিদে মহিলাদের নামাজ পড়া নিষিদ্ধ করেননি ।

ইসলামটাকে নষ্ট করে ফেলছে এ ধরনের সংগঠণ ও লোকরা । ইসলামটাকে পুরুষদের জন্য বানিয়ে ফেলছে।

আপনাদেরকে একটা অনুরোধ করবো:

কোন সংগঠন, লোক বা তাদের বই পড়ে ইসলামকে চিনবেন না । নিজেরা অনেক পড়াশোনা করুন । গবেষণা করুন । কুরআন পড়ুন । কুরআন নিয়ে গবেষণা করুন । ইসলাম কারো বাপ-দাদার সম্পত্তি না যে , যা মন চায় তাই ফতোয়া দিবে।

আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে :

মুসলিম মেয়েদের মুখ ও হাতের তালু ছাড়া সমগ্র শরীর ঢেকে রাখতে হয় । অন্যথায় অপবিত্রা মেয়েদের মতো পেটের অধিকাংশ স্হান অনাবৃত রেখে ও চুল অনাবৃত রেখে শাড়ি পড়লে বা বুক ও মাথা অনাবৃত রেখে ওড়না পড়লে কবিরা গুনাহ হবে ।

ইসলামের নীতিমালা অনুযায়ী পোষাক পড়ার জন্য এই পেজগুলো ভিজিট করা যেতে পারে :

http://www.facebook.com/SalwarKameezHijab

https://www.facebook.com/SareeHijab

http://www.facebook.com/pages/%E0%A6%AC%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6/506620052704626

https://www.facebook.com/WeWillMarryEarly

উপসংহার :

তিনি নেট হতে একটা হাদিস উপস্হাপন করেছে । আমি বলবো কপি পেস্ট করেছেন । হাদিসটার আরবী এবারত তুলে দেননি । উপরন্তু হাদিসটা ইংরেজি অনুবাদটা ভুল । আমি হাদিসেটার আরবী এবারত ও বাংলা অনুবাদ দিয়েছি । বাংলাদেশ ইসলামী ফাউন্ডেশন হতে এই হাদিসের বইটা প্রকাশ হয়েছে । হুজুররাও বলছেন ইসলামী ফাউন্ডেশনের বাংলা অনুবাদ সঠিক আর আমার দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক । তবে কিছু হুজুর আমার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করেছেন । আর কিছু হুজুর বলেছেন বিষয়টা যেভাবে আছে সেভাবেই থাকুক । কিন্তু আমি তাদের সাথে একমত নই ।

আমাদের মেয়েদের অবশ্যই ইসলামের নীতিমালা অনুযায়ী পোষাক পড়তে হবে । কিন্তু তাদের উপর অতিরীক্ত পোষাক চাপিয়ে দিয়ে তাদের প্রতিভা ও মেধা প্রকাশের পথকে রুদ্ধ করে দেওয়া হবে বা পোষাকের নামের পশ্চাৎপদ দৃষ্টিভঙ্গিকে সমাজে বিস্তার ঘটানোকে কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না ।

বিষয়: বিবিধ

৭০২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File