বাংলাদেশে মুসলিম জনসংখ্যার হার ৯০.৪ % এবং হিন্দু ক্রমাগত কমার কারণ
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ১২ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:১০:১৬ রাত
সুচনা : বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ হলেও ইদানিং টিভি চ্যানেলগুলোর টকশোতে দেখতে পাচ্ছি, অনেক লোক মুসলিম জনসংখ্যার হারকে সঠিকভাবে উপস্হাপন করছেন না এবং হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়িয়ে বলার চেষ্টা করছেন । এই বিষয়টির সত্যতা জানার জন্য আমি চেষ্টা করি ।
পরিসংখ্যানে হিন্দু জনসংখ্যা ক্রমহ্রাসমান :
২০০১ ও ২০১১ সালের শুমারির জেলাভিত্তিক তথ্য পাশাপাশি রাখলে দেখা যায়, ১৫টি জেলায় হিন্দু জনসংখ্যা কমে গেছে।
বরিশাল বিভাগের কোনো জেলাতেই হিন্দুদের সংখ্যা বাড়েনি। বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা—এই ছয়টি জেলায় ২০০১ সালের আদমশুমারিতে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল আট লাখ ১৬ হাজার ৫১ জন। ২০১১ সালের শুমারিতে সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ৬২ হাজার ৪৭৯ জনে।
খুলনা বিভাগের বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা—পাশাপাশি এই তিন জেলায় হিন্দুদের সংখ্যা আগের চেয়ে কমেছে। বিভাগের নড়াইল ও কুষ্টিয়া জেলার প্রবণতা একই।
ঢাকা বিভাগের মধ্যে এ তালিকায় আছে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলা।
অন্যদিকে রাজশাহী বিভাগের পাবনা জেলায়ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে হিন্দু বাড়েনি।
স্বাধীনতার আগের দুটি ও পরের পাঁচটি শুমারির তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মোট জনসংখ্যার তুলনায় হিন্দুদের সংখ্যা ও হার কমেছে। ১০ বছরে ৯ লাখ হিন্দু কমেছে ।
মুসলমানদের সংখ্যা ও হার সব সময়ই বেড়েছে।
বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর হার মোটামুটি একই ছিল বা আছে।
১৯৪১ সালে বাংলাদেশে হিন্দু ছিল জনসংখ্যার ২৮% (উৎস : Census of India 1941,
), ১৯৫১ সালে ২২%, ১৯৬১ সালে ১৮.৮%, ১৯৭৪ সালে ১৩.৫%, ১৯৮১ সালে ১২.১%, ১৯৯১ সালে ১০.৫%, ২০০১ সালে ৯.২%, ২০১১ সালে ৮.৫% ।
সূত্র: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো
অপর দিকে বাংলাদেশে ১৯৫১ সালে ৭৬.৯%, ১৯৬১ সালে ৮০.৪%, ১৯৭৪ সালে ৮৫.৪%, ১৯৮১ সালে ৮৬.৭%, ১৯৯১ সালে ৮৮.৩%, ২০০১ সালে ৮৯.৭%, ২০১১ সালে ৯০.৪% মুসলিম ছিল । সুতরাং ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মুসলিম জনসংখ্যার হার ৯০.৪ % এরও বেশী ।
সূত্র : বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো
হিন্দু কমার কারণ :
হিন্দুর উপর অত্যাচার
১.সাম্প্রদায়িক আবহ ।
২.জামায়াতে ইসলামীর মতো বেশ কিছু রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ।
৩.শাসক দলগুলোর সন্ত্রাস ।
৪.হিন্দুদের নিরবে দেশত্যাগ ।
৫.হিন্দুদের প্রজনন হার কম ।
৬.ভারতকে তীর্থভুমি ও পবিত্রস্হান মনে করা ।
৭.শত্রু সম্পত্তি আইন।
দুর্গা পুজায় অংশ নেওয়া শাড়ি পড়া হিন্দু মহিলা ও বালিকা
৮.হিন্দু মেয়েদের হিন্দু ধর্মত্যাগ ।
৯.ভারতের রাজনৈতিক অস্হিরতার প্রভাব ।
১০.নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ।
১১.নিরাপত্তার অভাববোধ ।
১২.বাংলাদেশে ধর্মকর্মে আনন্দ না পাওয়া ।
১৩.হিন্দু নেতৃত্বের বিশ্বাসঘাতকতা ।
১৪.হিন্দু পারিবারিক আইন ।
১৫.বিভিন্ন বর্ণে বিভাজিত হিন্দুসমাজ ।
উপসংহার :
বাংলাদেশ একটি এমনই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ যার মুসলিম জনসংখ্যা এতটাই ক্রমবর্ধমান যে অদুর ভবিষ্যতে হিন্দু জনসংখ্যা বিলীয়মান হয়ে যাবে । উপরন্তু বাংলাদেশ ভু-রাজনৈতিকভাবে দুর্বলতম অবস্হানে থাকায় টেকসই মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকার জন্য মুসলিম পরিচয়কেই গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরতে হবে । কারণ বর্তমান বিশ্বে ধর্মকেই রাষ্ট্রের অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে ফরেন পলিসি বিশারদবৃন্দ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরে থাকেন । যেমন : সামুয়েল ফিলিপ্স হান্টিংটন, ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা ও বার্নাড লুইস । তবে ইসলাম বহুজনিকতা ও ভিন্ন ধর্মের প্রতি সহণশীলতাকে গুরুত্ব দিলে বাস্তবতা হচ্ছে হিন্দু জনসংখ্যা ক্রমহ্রাসমান । সুতরাং এই দিক বিবেচনা করে এক বিংশ শতাব্দির উপযোগি দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে আমাদের দেশের সামাজিক, সংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পরিমন্ডল সৃষ্টি করতে হবে ।
এক বিংশ শতাব্দীর প্রগতিশীল শাড়ি পড়া বাংলাদেশি মুসলিম মহিলা
বাংলাদেশের নীতি নির্ধারণি মহল তালেবানী দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিচালিত আফগানিস্হান বা ওহাবী দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিচালিত সৌদি আরব-কে আদর্শ হিসেবে না নিয়ে উন্নায়ন ও অগ্রগতির স্বার্থে এক বিংশ শতাব্দির তুরস্ককে http://www.akparti.org.tr/english/ মডেল হিসেবে নেয় – সে দিকে আমাদের নজর রাখতে হবে ।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার :
১. বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো
http://www.bbs.gov.bd/Home.aspx
Census of India 1941,
২. http://en.wikipedia.org/wiki/Hinduism_in_Bangladesh
৩. http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-09-22/news/291536
৪. http://www.facebook.com/hindugrandalliance/posts/383048801768928
৫. http://en.wikipedia.org/wiki/Hinduism_in_Bangladesh
6. http://www.akparti.org.tr/english/
বিষয়: বিবিধ
৫৫৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন