কুরআন ও হাদিসের আলোকে শাহবাগী আলেমদের বৈশিষ্ট্য ও পরিনতি
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ০৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০৫:৫৬:০৭ সকাল
পটভুমি :
কাল রাতে (৬ এপ্রিল ২০১৩) আমি দুইটা ব্যতিক্রমধর্মী টক শো দেখলাম । সেখানে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের নামাজের জামাতের ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ এবং ৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবিরকে নাতির বয়সি একটা ছেলে নাস্তানাবুদ করেছিলো । ছেলেটা হলেন মুফতি মো: সাখাওয়াত হোসেন ।
প্রথম টক শো-টা ৭১ টিভিতে রাত সাড়ে আটটায় প্রচারিত হয়েছিল । তাতে মাওলানা ফরিদুদ্দীনকে মুফতি মো: সাখাওয়াত হোসেন নাস্তিকদের পৃষ্ঠপোষক বলে আক্ষায়িত করায় তিনি প্রচন্ড রেগে যান । কথায় আছে না, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন । এই অনুষ্ঠানের উপস্হাপিকা ছিলেন মিথিলা ফারজানা । আর আলোচক ছিলেন বামপন্ত্রী সংগঠণ জাসদের নেত্রী শিরিন আক্তার এবং জনৈকা শাহবাগি মহিলা । দুইজনই বেআব্রু ছিলেন । তারা হুজুরদের দেখে মাথায় ওড়না দেননি বা ঘোমটা দেননি । আর হুজুররাও তাদের ওড়না দিতে বলেননি ।
২য় টক শো-টা মাছরাঙ্গা টিভি-তে রাত সাড়ে ১১ টায় প্রচারিত হয়েছিল । মুফতি মো: সাখাওয়াত হোসেন এই অনুষ্ঠানে শাহরিয়ার কবিরকে বাম নাস্তিক মুর্তাদ বলে আক্ষায়িত করছিলেন । আর তিনিও রেগে যাচ্ছিল । উপরন্তু ইসলাম সম্পর্কে শাহরিয়ার কবিরের জ্ঞানের দৌড়ও প্রকাশ পেয়ে গেলো ।
আমার ধারণা ছিল শাহরিয়ার কবির অন্তত দুই - একটা কুরআনের উদৃতি রেফারেন্সসহ দিতে পারবেন । তিনি দিতে পারছিলেন না । কথায় আছে না অল্প বিদ্যা ভয়ংকরি । তিনি কুরআন হাদিস সম্পর্কে নাকি অগাদ জ্ঞান অর্জন করেছেন শুধুমাত্র বাংলা ইংরেজি বই পড়ে বা অনুবাদ পড়ে । কুরআন হাদিস চর্চা করতে গেলে আরবী জানতে হয় । তিনি আরবী ভাষায় সামান্যতম দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজনবোধ করেননি । অথচ তিনি হুজুরদের চেয়ে বেশী ইসলামী জ্ঞানের অধিকারী বলে দাবি করেছিলেন ।
আমাদের এলাকার লোকরা বলছিলো শাহবাগি আলেম নাতির বয়সি একটা বাচ্চা ছেলের কাছে রাগান্নিত হয়ে হেরে গেলো।
আমি বল্লাম শব্দটা শাহবাগি আলেম না হয়ে হবে সরকারি আলেম বা দরবারি আলেম ।
তারা বল্লেন : ঐ একই তো কথা ।
সূচনা :
আলেম শব্দটি আরবী ভাষার ইলম শব্দ হতে এসেছে । ইলম শব্দের অর্থ জ্ঞান । জ্ঞান শব্দটির ব্যাপ্তী বিশাল ও ব্যাপক । দুনিয়া ও আখেরাত কেন, মহাজগতের মধ্যে এমন কিছুই নেই যা এর আওতায় পড়ে না । জ্ঞান অর্জন করতে হয় পড়া-লেখা, চিন্তা ও গবেষণা করে । মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) - এর কাছে প্রেরিত প্রথম বাণী সুরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত ( সুরা ৯৫ : ১ হতে ৫ আয়াত) -এ এর প্রমাণ পাওয়া যায় ।
ইলম বা জ্ঞানের কোন সীমা নির্ধারন করা সম্ভব নয় । জ্ঞানের রাজ্যের অতি সামান্যই আমরা অর্জন করতে পারি ।
জ্ঞানের শাখা প্রশাখা :
জ্ঞানের কোন শাখা প্রশাখারও শেষ নেই । আগে চিকিৎসা বিদ্যার জ্ঞান এককভাবে ছিল । এখন তা হাজারো ভাগে বিভক্ত ।
এখন বাংলাদেশে ডাক্তার হিসেবে পরিচিত হতে গেলে গেলে প্রায় ৬ টা ডিগ্রী অর্জন করতে হয় । আর এজন্য এইচ এস সি - তে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে পাশ করার পর মেডিক্যাল কলেজে ৬ বছর পড়ার পর আরো ৬ বছর পড়াশোনা করতে হয় । অর্থাৎ ভাল ডাক্তার হতে গেলে জীবনের ২৪ বছরই পড়াশোনার মধ্যে থাকতে হয় । তাহলেই মানুষের সেবা করাটা সার্থক হয় ।
সুতরাং জ্ঞানের এক শাখারই যদি এঅবস্হা, তাহলে কুরআন – হাদিসের জ্ঞানের অবস্হাও হবে আরো মারাত্মক । কারণ কুরআন-হাদিসের জ্ঞান জনগণের কাছে ভুলভাবে বিতরণ করলে বা জ্ঞান লুকিয়ে রাখলে আল্লাহ আখেরাতে তো কঠোর শাস্তি দিবেনই না, বরং দুনিয়াতেই অপমানিত ও লাঞ্চিত করবেন ।
জ্ঞানের উৎস কুরআন :
হাজারো ধরণের জ্ঞানের আধার হচ্ছে কুরআন । সুরা ইয়াসীনের ২ নং আয়াত হচ্ছে তার প্রমাণ । সুরা আর রহমানের ৫ নং আয়াতের অর্থ হচ্ছে চন্দ্র – সূর্য সুবিদিত হিসাব মতো চলছে । গ্রহ নক্ষত্রের ঘুরার হিসেব এবং এগুলো নিয়ে গবেষণার নিয়ম যাদের জানা নেই তাকে সার্বিক বিবেচনায় আংশিক জ্ঞানী বলাই ভাল । এই কথা পড়ার সাথে সাথে আলোচিত লোকদের মধ্য হতে কিছু লোকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে পারে । কারণ, কম জ্ঞানীদের ধৈর্য কম থাকারই তো কথা ।
জ্ঞান বা ইলম অর্জন করা সবার জন্য অপরিহার্য :
আমরা সবাই সব জ্ঞান অর্জন করতে পারব না এবং পারার কথাও না । সেজন্যই তো রাসুল (সা.)বলেছেন “সকল মুসলিম নর-নারীর জন্য জ্ঞান অন্বেষণ ফরজ” । আরও বলেছেন, জ্ঞান অর্জনের মেয়াদ দোলনা হতে কবরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত । অথচ মুসলিমগণ এসকল নির্দেশনার অর্থই অনুধাবন করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন । তাই মানার প্রশ্ন অবান্তর ।
এতে করে আল্লাহ ও মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)- এর হুকুম মানা হলো কিনা তা ভেবে দেখতে হবে । যদি তা না হয় তাহলে এর জন্য দায়ী কে ? অজ্ঞদের দায়ী করা যায় না, কারণ তারা তো অজ্ঞ । এজন্য আলেমরাই দায়ি ।
আলেম দুই প্রকার :
আলেমদের মধ্যে কিছু আছেন সার্টিফিকেটধারী এবং কিছু আছেন সার্টিফিকেটবিহীন । সার্টিফিকেটধারীদের মধ্যে কেউ কেউ বর্তমান সময়কার জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি আয়ত্ব করাকে গ্রহণযোগ্য বলেছেন এবং চর্চা করাও শুরু করেছেন । যেমন : ইউসুফ কারযাভী ।
তবে সার্টিফিকেটবিহীন মধ্যেও অনেকে বিশ্বব্যাপী ইসলামের কথা ও গবেষণা অমুসলিমদের কাছে তুলে ধরছেন । যেমন : জাকির নায়েক ।
কুরআনে কাদের আলেম বলা হয়েছে ?:
এখন আমরা দেখবো কুরআন-এ কাদের আলেম বা জ্ঞানী ব্যক্তি বলা হয়েছে বা কোন ধরণের গুণাবলী থাকলে আলেম বা জ্ঞানী হওয়া যাবে –
১. কুরআন তিলাওয়াত এবং তিলাওয়াতের হক আদায়কারী (২:১২১)
২. কুরআন তিলাওয়াত করেন ধীরে ধীরে সুস্পষ্টভাবে (৭৩:৪)
৩. কুরআন তিলাওয়াত করেন এবং বুঝে-শুনে করেন (৬১:১১)
৪. কুরআন তিলাওয়াত করেন এবং আমল করেন (৪৭:১২)
৫. কুরআন তিলাওয়াত করেন এবং নিজেকে পরিশুদ্ধ করেন (২:১৫১)
৬. কুরআন তিলাওয়াত করেন এবং সেটা নিয়ে ভাবনা করেন (২৮:৭২,৪৩:৫১,৫১:২১)
৭. কুরআন তিলাওয়াত করেন এবং তা সদা সর্বদা স্মরণের মাধ্যমে অনুস্মরণ করেন (১০:৩,১১:২৪,১১:৩০,১৬:১৭,২৩:৮৫,৩৭:১৫৫,৪৫:২৩)
৮. কুরআন তিলাওয়াত করেন এবং তা হতে জ্ঞান আহরণ করেন
(২:৪৪,২:৭৬,৬:৩২,৭:১৬৯,১০:১৬,১১:৫১,১২:১০৯,২১:১০,২১:৬৭,২৩:৮০,২৮:৬০,৩৭:১৩৮)
৯. কুরআন তিলাওয়াত করেন এবং তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন (৬:৫০,১০:২৪)
১০. কুরআন তিলাওয়াত করেন এবং তা নিয়ে গবেষণা করেন (৪৭:২৪)
উপরোক্ত দশটা বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্রথম পাঁচটা বৈশিষ্ট্য প্রায় সব আলেমের রয়েছে । বাকীটা বর্তমানে এক এক রকম পরিত্যক্ত হয়েই আছে । ইদানিং মাদ্রাসা সমূহে বিজ্ঞান চর্চা শুরু হয়েছে । একুশ শতাব্দীর পা বুঝা যাব তারা কতধুর এগয়িছেনে । তবে ততক্ষণে অমুসলিমগণ কি আর বসে থাকবে । মহাবিশ্বের সকল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব নয় । কিন্তু জানার চেষ্টা তো অব্যহত রাখতে হবে ।
গবেষণালব্দ এই জ্ঞানকে কুরআন সুন্নাহর আলোকে গ্রহণ করে নিতে হবে ।
শাহবাগী আলেম কারা ? :
সার্টিফিকেটধারী কিছু আলেম ধর্ম ব্যবসা, গালিগালাজ, ধর্মের নামে ভিক্ষাবৃত্তি এবং ইসলামবিনাশী শক্তি , পশ্চিমা ইহুদী – খৃষ্টান- হিন্দু সাম্রজ্যবাদী ও ইসলামবিনাশী শক্তির উপর পূর্ণ আস্হা ও বিশ্বাস রাখে এমন মুসলিম নামধারীদের কাছে নত হচ্ছেন এবং তাদের থেকে মাসোহারা নিচ্ছেন । নুন খাচ্ছেন । তাদের গুণ গাচ্ছেন । মানুষদের বিভ্রান্ত করছেন । তারাই মুলত সরকারি আলেম বা দরবারি আলেম । বর্তমানে তাদের শাহবাগি আলেম হিসেবে পরিচিত হচ্ছেন ।
শাহবাগি আলেমদের চেনার উপায় ও তাদের পরিনতি :
শাহবাগি আলেমদের চেনার উপায় ও তাদের পরিনতি হাদিস গ্রন্হে বর্ণণা করা হয়েছে । যেমন :
১.রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট সৃষ্টি হলো সরকারী আলেম
وإن أبغض الخلق إلى الله عالم السلطان
উৎস : কানযুল উম্মাল, জামউল জাওয়ামি'
২.কিয়ামতে যাদের দ্বারা জাহান্নামকে প্রজ্জ্বলিত করা হবে তারা হল তিন ব্যক্তি। এদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.) ঐ আলেমের কথা উল্লেখ করেছেন যে নিজ জ্ঞান দ্বারা মানুষের প্রশংসা ও তাদের গুণকীর্তন আশা করে ছিল (আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি আশা করেনি)…।”
(হাদীছটি বিস্তারিতভাবে জানার জন্য দেখুন সহীহ মুসলিম:ইমারত অধ্যায়, হা/৪৭৭১, তিরমিযী:ইলম অধ্যায়, হা/২৬৫৫-৫৬, ই.ফা.বা)
৩. আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা “জুব্বুল হুযন” থেকে পানাহ চাও। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, “জুব্বুল হুযন” কী? তিনি বললেন, জাহান্নামের একটি উপত্যকা, যা থেকে বাঁচার জন্য স্বয়ং জাহান্নাম দৈনিক চারশো বার পানাহ চায়। বলা হলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! তাতে কারা প্রবেশ করবে? তিনি বললেন, এটা ঐসকল আলেমের জন্য তৈরী করা হয়েছে যারা লোক দেখানোর জন্য আমল করে। আর আল্লাহ্’র নিকট সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট আলেম তারাই, যারা (ইসলামবিরোধি) শাসক শ্রেণীর সংশ্রবে আসে।”
(সুনান ইবনু মাজাহ, হা/২৫৬, ই.ফা.বা)
৩. হুযাইফা ইবনু ইয়ামান (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা রাসুলুল্লাহ (সা.) -কে কল্যাণের বিষয়াবলী জিজ্ঞেস করতো। কিন্তু আমি তাঁকে অকল্যাণের বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম এ ভয়ে যে, অকল্যাণ আমাকে পেয়ে না বসে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্’র রাসূল আমরা তো অন্ধকার ও
অকল্যাণের মাঝে ছিলাম। এরপর আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে এ কল্যাণের মধ্যে নিয়ে আসলেন। এ কল্যানের পর আবারও কি অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে এর মধ্যে কিছুটা ধুম্রজাল থাকবে। আমি প্রশ্ন করলাম, এর ধুম্রজাল কিরূপ?
তিনি বললেন, এক জামা’আত আমার তরীকা ছেড়ে অন্য পথ ধরবে। তাদের থেকে ভাল কাজও দেখবে এবং মন্দ কাজও দেখবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে কল্যাণের পর কি আবার অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী এক সম্প্রদায় হবে। যে ব্যক্তি তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে, তাকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে ছাড়বে। আমি বললাম, হে আল্লাহ্’র রাসূল !তাদের কিছু স্বভাবের কথা আমাদের বর্ণনা করুন।
তিনি বললেন, তারা আমাদেরই লোক (অর্থাৎ তারা মুসলিম দাবীদার হবে) এবং আমাদের ভাষায়ই কথা বলবে (অর্থাৎ তারা কুরআন এবং হাদিস দিয়ে কথা বলবে)। আমি বললাম, যদি এমন অবস্থা আমাকে পেয়ে বসে, তাহলে কী করতে হুকুম দেন? তিনি বললেন, মুসলিমদের জামা’আত ও ইমামকে আঁকড়ে থাকবে।
আমি বললাম, (এই সকল দল ছাড়া) যদি তখন মুসলিমদের কোন জামা’আত ও ইমাম না থাকে? তিনি বললেন, তখন সকল দল ত্যাগ করো, সম্ভব হলে কোন গাছের শিকড় কামড়িয়ে পড়ে থাকবে, যতক্ষণ না সে অবস্থায় তোমার মৃত্যু উপস্থিত হয়।
(সহীহ বুখারী:কিতাবুল ফিতনাহ, হা/৬৬০৫, ই.ফা.বা)
বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন যে কোন সুস্থ্য ব্যক্তিই অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন যে, মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে, মুসলিম উম্মাহর মাঝে ক্রমবর্ধমান ভাঙ্গন কে উস্কে দেয়ার পিছনে ইয়াহুদী-খৃষ্টানরা না যতটুকু দায়ী, তার চেয়ে অধিক দায়ী হচ্ছে মুসলিম সমাজের শাহবাগি আলেমরা ।
শাহবাগি আলেমরা যেসব কাজ করে থাকে :
শাহবাগি আলেমরা সমাজে কুরআন হাদিসের চর্চা করা সাথে এসব কাজগুলোও করে থাকে :
১. তারা মুসলিম সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে । অথচ আল্লাহ বলেছেন :
“তোমরা দ্বীন প্রতিষ্ঠা কর এবং এ ব্যাপারে পরস্পর দলাদলি-বিচ্ছিন্নতা করো না।” (সূরা শুরা ৪২:১৩)
“নিশ্চয় যারা স্বীয় দ্বীনকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে গেছে; হে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তাদের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই।” (সূরা আল আনআম ৬:১৫৯)
“তোমরা একনিষ্ঠভাবে তাঁর অভিমুখী হয়ে শুধুমাত্র তাঁকেই ভয় করো, আর সালাত কায়েম করো এবং এমন মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেয়ো না, যারা তাদের দ্বীনে মতভেদ সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত হয়ে আছে।” (সূরা রুম ৩০:৩১-৩২)
“আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হয়ো না, তাহলে তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বিনষ্ট হয়ে যাবে৷ আর তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন।” (সূরা আনফাল ৮:৪৬)
২. তারা মুসলিম সমাজে ইসলামবিরোধিদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে আহবান জানায় । অথচ আল্লাহ বলেছেন :
আর যারা আল্লাহ্, তাঁর রাসূল এবং মু’মিনদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই আল্লাহ্’র দল এবং তারাই বিজয়ী” (সূরা মায়িদাহ ৫:৫৬)।
৩. তারা তাদের ভুল ধরিয়ে দিলে ভিত্তিহীন কথা বলে । আর বলে আমরা এতগুলো সার্টিফিকেট অর্জন করেছি, অমুক আমার পীর, আমি অমুকের খলিফা । আমি ৪০ হাজার ছেলেকে হাদিস পড়িয়েছি । আল আজহারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বই পড়ানো হয় । ১০১ টা বই লিখেছি । এসব বলে বড়াই করেন । অথচ রাসুল (সা.) অহংকার করতে নিষেধ করেছেন ।
এধরণের কথা যারা বলে আখেরাতে তাদের পরিনতি ভাল হবে না ।
মেরাজ রজনীতে রাসুলুল্লাহ (সা.) একদল লোককে পেলেন। তাদের দূরাবস্থার দিকে দৃষ্টি মেলেন। আগুনের কাচি দিয়ে তাদের ঠোঁট করা হচ্ছে ছিন্ন ভিন্ন। গজবের প্রচন্ডতায় তারা কেবলই হচ্ছে উদ্বিগ্ন। জিব্রাইল আ. কে রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করেন- এরা কারা? উত্তর দিলেন- আপনার উম্মতের বক্তারা। তারা অন্যকে উপদেশ দিতো খুব। নিজে বেআমলীতে দিয়ে দিতো ডুব। জাবানিয়া ফেরেশতারা এই আলেমদের দিকে আগে ছুটে আসবেন। কাফেরদের আগে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে নাশবেন। তারা বলবে- কেন আমাদের দোজখে ফেলা হচ্ছে কাফেরদেরও আগে? এর কারণটি জানতে বড় ইচ্ছে জাগে। ফেরেশতারা বলবেন জাহিল ও আলিম সমান নয়। ইলিম থাকাই নাজাতের প্রমাণ নয়।
(এই মুহুর্তে হাদিসটির রেফারেন্স দিতে পারছি না বলে দু:ক্ষিত । ইমাম গাজ্জালি রহ. এর কোন বই হতে খুব সম্ভবত সংগ্রহ করেছিলাম ।)
কাফেররা তো না জেনে অবাধ্য ছিলো। ভুল দেবতাই তাদের অরাধ্য ছিলো। কিন্তু আলেম জেনে বুঝে কেন পাপিষ্ট হবে? এ কারণে সে ঘোরতর শাস্তি দ্বারা পিষ্ট হবে।
হাদীসে আছে- কোনো কোনো জান্নাতী কোনো কোনো দোজখীর দ্বারে যাবে। তারা তাদেরকে শাস্তি ও লাঞ্চনায় দেখতে পাবে। তারা তাদেরকে বলবে- তোমরা এখানে পড়ে আছো কোন অপরাধে? কেন তোমরা বিপন্ন লাঞ্চনার অবসাদে? অথচ আমরা জান্নাত পেলাম তোমাদের কথা মেনে মেনে। আমরা আমল করতাম তোমাদের ওয়াজ থেকে জেনে জেনে। তারা বলবে- আমরা ওয়জ করলেও আমলে ছিলাম গাফিল। ফলে আজও ভীষণ শাস্তির মাঝে হয়ে আছি কাহিল।
(এই মুহুর্তে হাদিসটির রেফারেন্স দিতে পারছি না বলে দু:ক্ষিত । ইমাম গাজ্জালি রহ. এর কোন বই হতে খুব সম্ভবত সংগ্রহ করেছিলাম ।)
শাহবাগি আলেমরা হলেন দায়িত্বহীন আলেম :
হাদীসে বর্ণিত আছে- কিয়ামতের দিন আলেমের আযাব হবে সবচে কঠিন। তাকে করা হবে ভয়াবহতায় অন্তরীন। সে হচ্ছে ঐ আলেম, জ্ঞান যার উপকারে আসেনি।
আম্মার বিন ইয়াসির রা. বলেন- হুজুর সা. আমাকে পাঠালেন কায়েস গোত্রে। দ্বীনী ইলিম তাদেরকে শেখাবো- সেই সূত্রে। সেখানে যখন গোলাম, তাদেরকে বর্বরতায় নিমজ্জিত পেলাম। দেখলাম বন্য উটের মতো তারা দুনিয়া নিয়ে হন্য। পাশবিকতা তাদের কাছে হয়ে আছে বরেণ্য। উট-ছাগলের ফিকির ছাড়া কিছুই নেই তাদের মাথায়। অর্থাৎ দুনিয়াপূজা বিরাজ করছে চুলের গোড়া থেকে পায়ের পাতায়। পার্থিব মাতলামী ছাড়া তাদের যেহেনে আর কিছুরই স্থান নেই। জাহেরী লাভালাভ ছাড়া তাদের কাছে কোনো কিছুরই মান নেই। প্রত্যেকেরই অস্তিত্ব দুনিয়ার গভীরে ডুবন্ত। কামনা-বাসনার পেছনে উন্মাদের মতো সবাই ছুটন্ত।
আম্মার বিন ইয়াসীর রা. বলেন- সেখান থেকে আমি ফিরে এলাম এবং নবীয়ে পাকের সা. সান্নিধ্যের তীরে এলাম- হুজুর সা. জিজ্ঞেস করলেন- কি করে এসেছো? যখন তুমি তাদের সাথে মেশেছো?
আত তারগীব গ্রন্থে বর্ণিত আছে- কোনো কোনো লোককে জাহান্নামে নিক্ষেপ করলে তার থেকে দুর্গন্ধ ছড়াবে। যা অত্যন্ত ভয়াবহ পর্যায়ে গড়াবে। জাহান্নামীরা তাতে অতিষ্ঠ হয়ে যাবে। ক্রমাগত সেই গন্ধ চারদিকে বয়ে যাবে। লোকেরা এদের অধিক নিকৃষ্ট মনে করবে। এ আযাব তাদের জন্য নির্দিষ্ট বলে ধরবে।
জাহান্নামীরা তাকে বলবে- হে হতভাগা! কোন বদআমলে তোর এ দূর্যোগ? তোর দুর্গন্ধে আমাদের ও হচ্ছে বাড়তি দূর্ভোগ। কেন তোমরা এতো ভয়াবহ যাতনায় মথিত, যার কারণে আমরাও যেনো দ্বিগুণ আযাবে পতিত?
তারা বলবে- আমরা নিজে আলেম হয়ে ছিলাম। কিন্তু ইলিম দ্বারা উপকৃত না হয়ে জালিম রয়েছিলাম। ওমর রা. বলেন- এ উম্মতের মুনাফেক আলেমদের নিয়ে আমি ভীত। এদের নিয়ে আমার আতংক চরম পর্যায়ে উপনীত। কেউ প্রশ্ন করলো- হুজুর! মুনাফেক আলেম কারা? কী কী গুণ লালন করে তারা? তিনি বললেন- সে আলেম কেবলই মুখে। মুখ দিয়েই ইলিম ফুঁকে। কিন্তু জাহিলের মতো তার অন্তর। আমলে খুবই গাফিল, খুবই মন্থর। বক্তৃতার বাহার খুবই চমকদার। কথার ভঙ্গিও খুব চমৎকার।
শাহবাগি আলেমরা দুনিয়াদার :
ইমাম গাযালী রহ. বলেন- যে আলেম দুনিয়াপূজারী, জাহেলের চেয়েও সে অপদার্থ ।সে আল্লাহর দৃষ্টিতে ঘৃণ্য এবং বান্দার চোখে তুচ্ছ, নগন্য। দুনিয়ায় তার আত্মা অস্থির তৃপ্তিহীন, তার ইলিম নিবীর্য দীপ্তিহীন। তার মধ্যে না আছে কোনো প্রাণ, না আছে জীবনের সুঘ্রাণ। তার চিন্তার বিচরণ অন্ধকারের কারাগারে, তার রুহ বেঁচে থাকে না শুকরির হাহাকারে। সে মরবে আর আযাবের গর্তে পড়বে। তাকে গ্রেপ্তার করা হবে মন্দভাবে, শেকলাবদ্ধ করা হবে প্রচন্ডভাবে। তার শাস্তি হবে এতোই ভীষণ ভয়ানক, যে তার জন্য থাকবেনা আশ্বাসের কোনো নেয়ামক। কে দেবে তাকে আশ্রয়? যেদিকে সে তাকাবে, সবই দেখবে অসহ। বাতাসও তার জন্য হয়ে যাবে ভয়াবহ। দুনিয়াতেও সে হবে অপমানে ধিকৃত, তার অকৃতকার্যতাও সর্বজন স্বীকৃত। অপরদিকে আল্লাহওয়ালা আলেম দুনিয়াতেও উচ্চতর মাকামে আসীন আখেরাতেও হবে মর্যাদার সুউচ্ছ সোপানে সমাসীন। সেইসব আলেম খোদার সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করে অনন্য হয়ে উঠেন। ফলত জমিনে আসমানে তারা বরণ্য হয়ে ফুটেন। সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে তারা অনন্তের দিকে ছুটেন। কর্মের কোলাহলে নিয়তের সমুদ্র সেচে রেযায়ে মাওলার মনি-মুক্তো তরা লুটেন।
ভাল আলেম কারা ? :
সেই সব আলেমের জীবনের দিকে তাকালে জ্বলজ্বল করে বহু বৈশিষ্ট্য ।
। দুনিয়া থেকে তারা চলে গেলেও সেগুলোর আলো থাকে অবশিষ্ট। আখেরাতই হয় তাদের
উদ্দিষ্ট। তাদের আত্মাও সে দিকেই থাকে নিবিষ্ট। এর বিপরীত সব কিছুকে পায়ে মাড়িয়ে করেন নিপিষ্ট। কারণ এর মধ্যে তারা দেখেন কেবলই অনিষ্ট। দীপ্তিমান হন তারা ঈমানী নূরে। তাদের দৃষ্টি থাকে ক্ষুদ্রগন্ডির চেয়ে অনেক দূরে।
তারা আপন ইলিম দ্বারা দুনিয়া উপার্জন চাননা। দুনিয়ার ঘৃণা থেকে কখনো সরে যান না। এর ক্ষণস্থায়িত্বের অনুভূতিকে দিলে বসান। এর প্রতি আসক্তিকে মন থেকে খসান। তারা একে জানেন দুশ্চরিত্র রূপে। সে প্রতারক, ফেলে দেয় মৃত্যুকূপে। তাদের কাছে দুনিয়ার প্রকৃতিই ধরা দেয় কুৎসিত বরণে। সে ব্যস্ত আছে সুস্থজনের প্রশান্তি হরণে। অপরদিকে আখেরাতের আজমত তাদের দিলে হয় পাহাড়ের মতো অটল, দুনিয়ার উপর এর অগ্রাধিকারের নীতিতে তারা থাকেন অবিচল।
আখেরাতের নেয়ামতের স্থায়িত্বেই তাদের প্রতীতি। দুনিয়ার সবকিছুই নিছক প্রতিকী। আখেরাতের কল্যাণই তাদের চাই। দুনিয়ার ধন-মাল পাই বা না পাই। তাদের কাছে আখেরাতের নেয়ামতের নিশ্চয়তা অবধারিত। দুনিয়ার মোনাফেকির পর্দা অপসারিত। আখেরাত ও দুনিয়াকে দুই সতীনের মতো তারা দেখেন।
উপসংহার :
দুনিয়াকে ঘৃণা করলোনা, এর পুতিগন্ধময় মোহ থেকে সরলোনা; তারা তো জালেম। তারা আলেম হয় কীভাবে? এমন লোকই আলেমদের আজমতের প্রদীপ নিভাবে।
দাদু । ভুল হলে মাফ করবেন । আর মিথ্যা কিছু লিখলে বা বলে থাকলে আমাকে খুজে বের করে প্রকাশ্যে প্রহার করুন । দয়া করে ইলম গোপন করবেন না । কুরআনে ইলাম গোপন করার শাস্তি কঠোর । কুরআন তেলোয়াত বাদ দিয়ে
মঙ্গল প্রদিপ, মোমবাতি প্রোজ্জল করে আর ফানুস উড়িয়ে অনুষ্ঠান শুরু ও শেষ যারা করে আর যাই হোক তারা মুসলিম হতে পারে না ।
এসব যথাক্রমে হিন্দু খৃষ্টান আর বৌদ্ধদের সংস্কৃতি । আপনি শাহবাগিদের এসব হতে বিরত করতে পারেননি । আপনি
মিথিলা ফারজানাদের মাথায় ওড়ানা পড়িয়ে দিতে পারেননি । মুন্নি সাহার বুকে ওড়না দিতে বলতে পারেননি ।এই ব্যর্থতা শুধুমাত্র আপনারই উপরই বর্তায় । কারণ আমরা মাত্র আপনার নাতির বয়সি ছাত্র মাত্র । আমরা আপনাদের আমল দেখেই তো শিখবো । মানুষকে আর বিভ্রান্ত করবেন না ।
আমার ভুল ক্ষমা করবেন । কারণ আল্লাহ বলেছেন : ফাবিমা রাহমাতিম মিনাল্লাহি লিনতালাহুম ফাজ্জান গালিজাল কালবি লান ফাদদু মিন হাওয়ালিক ফাঅফু আনহুম ফাইজা আজামতা ফাতাওয়াক্কাল আলাল্লাহ ।
ওয়ামা আলাইনা ইল্লাহ বালাগুল মুবীন ।
বিষয়: বিবিধ
৫৪৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন