রাষ্ট্রের উন্নয়নে রাষ্ট্রের রাজনীতিবিদ/নাগরিকগন এক ও অভিন্ন । শুধুমাত্র রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা, চিন্তা ভাবনার ভিন্নতার কারনে ৭১ থেকে অদ্যবদি বিতর্কে জড়িয়ে আছি, থাকবো,কিন্তু এভাবে কতদিন।
লিখেছেন লিখেছেন মহি১১মাসুম ১৭ জানুয়ারি, ২০১৩, ০১:২৭:৩৫ রাত
সন্মানিত সহ ব্লগারদের ব্লগ ও মতামত গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ি। আমার ভাবনায় আমাদের বিচ্ছিন্ন আলোচনার পাশাপাশি আমরা যদি সাপ্তাহিক অথবা ষান্মাষিক অথবা মাসিক বিতর্ক তৈরী করতে পারি,তাহলে আমাদের মধ্যে একধরনের যুক্তিশীল মন তৈরী হবে । তবে লক্ষ্য থাকা উচিত যুক্তিশীল তর্ক বিতর্কের মাধ্যমে ঐক্যে পৌঁছানোর চেষ্টা। যা নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের জন্য ইতিবাচক হবে।
আমার বিবেচনায়
নিন্মোক্ত প্রস্তাবটিতে আলোচনা শুরু করতে পারি কি?
প্রস্তাবনাঃ এক।
অর্জন বিসর্জনের ঘুরপাকে আমাদের রাজনীতি ।
আশারাখি আগামীদিন আমার দৃষ্টিকোন থেকে সমালোচনা উপস্থাপন করব।
আপনারাও আপনাদের যুক্তিশীল মতামত নিয়ে সক্রিয় উপস্থিতি নিয়ে হাজির হবেন ।
কারন দেশটা আমার আপনার সবার ।
অর্জন বিসর্জনের ঘুরপাকে আমাদের রাজনীতি ।
সম্প্রতি গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে পশ্চিমা বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রকে পিছনে ফেলে । এ ধরনের রিপোর্টে দেশের নাগরিক হিসেবে গর্ববোধ করাটাই স্বাভাবিক । কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদদের সীমাহীন দূর্ণীতি,অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত,ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায়ন ও অবৈধ পন্থায় ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার মানুষিকতা দেশের অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে পদে পদে । বাস্তবতাকেও অস্বীকার করার জো নেই,দেশের বড় বড় অর্জন গুলিও এসেছে রাজনীতিবিদদের রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে । রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বেই দেশের স্বাধীনতা অর্জন, স্বৈরাচারের পতন ও গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ফিরে আসা । আন্দোলনে জনগন ত্যাগ স্বীকার করে আন্দোলনকে সফল করেন আর রাজনীতিবিদরা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে জনগনের অর্জনকে ধূলিস্যাত করেন নির্দ্ধিধায় নির্লিপ্ত চিত্তে । রাজনৈতিক দল গুলি অর্জনের কৃতিত্ত্বের জন্য নিজ দলের বলে দাবী করেন আর বিসর্জনের দায় চাপিয়ে দিতে চান প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের ওপর । রাজনৈতিক দলগুলো জনগনের আন্দোলনের ফসলকে যদি বিলিয়ে না দিতেন,তাহলে গার্ডিয়ান পত্রিকা ভবিষ্যৎ নয়, বর্তমান সময়কেই স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হতেন ।
যেসব দেশ এগিয়েছে তাদের এগিয়ে যাওয়ার ভিত হচ্ছে অর্জনকে ধরে রেখে ভবিষ্যতের স্বপ্ন বিনির্মাণে এগিয়ে চলা । সম্ভাবনা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে আছে । আমরা কি পারি না এগিয়ে যেতে । কিনা ছিল বাংলাদেশের ।
মুক্তিযুদ্ধের আকাংখাকে ধারন করে ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোষ্টী নির্বিশেষে হাতে হাত মিলিয়ে শহীদদের রক্তস্নাত বাংলাদেশ মোকাবেলা করতে পারত দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র ও দারিদ্র্যকে ।
অর্জন গুলির বিসর্জনের দায় আমাদের দেশের কোন না কোন রাজনৈতিক দলের । এ নিয়ে যু্ক্তিতর্ক থাকতে পারে । তবে এ টুকু নির্দ্ধিতায় বলা যায় রাজনীতির বিভিন্ন পর্যায়ের অর্জন গুলি ধরে রেখে সামনে এগিয়ে যেতে সক্ষম হলে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতো অনেক আগেই ।
স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাত্তোর সময়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যর্থতা মোকাবেলায় সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল কর্মসূচী গ্রহন করেন । বাকশাল কর্মসূচীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু অপরাপর রাজনৈতিক দল সমূহকে বাকশালে বিলীন হতে বাধ্য করেন যা স্পষ্টতঃ স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থি ছিল । কিন্তু বাকশাল কর্মসূচী দিয়েও বঙ্গবন্ধু দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সক্ষম হননি । বাকশাল গঠন ও অপরাপর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কারনে জনগনের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ-বিক্ষোভ পুঞ্জিভূত হতে থাকে এবং এসব পুঞ্জিভূত ক্ষোভকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল -জাসদ আন্ডার গ্রাউন্ড রাজনীতির মাধ্যমে জনমত তৈরী ও সশস্র সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রস্তুতি নিতে থাকে । রাজনীতির এহেন পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর মাঝারী সারির কিছু উচ্চ বিলাসী সৈনিক অফিসার বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে খুন করেন এবং এখানেই বাকশাল শাসনের যবনিকা ঘটে । ক্যু,পাল্টা ক্যুর এক পর্যায়ে জাসদ নেতা কর্ণেল (অবঃ) তাহেরের সহযোগিতায় মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক শাসনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব ভার গ্রহন করেন ।
বাকশালের মাধ্যমে একদলীয় ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি । ধরুন বাকশালী শাসনের ইতি রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে সংগঠিত হলে রাষ্ট্র রাজনীতি আরেকটি অর্জনের পর্যায়ে যেত । কিন্তু রাজনীতিকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা না করে হত্যা খুনের মাধ্যমে সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় যা ছিল রাষ্ট্রের চেতনা পরিপন্থি । মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক খেতাব প্রাপ্ত বীর উত্তম মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মীয় লেবাস জড়িয়ে দেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধাচারনকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত ধর্মীয় রাজনীতিকে পুনরায় ফিরিয়ে আনেন । যা স্পষ্টতঃ মুক্তিযু্দ্ধের অর্জনের বিসর্জন । মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানও সামরিক ক্যুর মাধ্যমে জীবন দিতে হয়, যা অনাকাংখিত । মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সরকার সামরিক ক্যুর শিকার না হয়ে রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিদায় নিতে বাধ্য হলে দেশ রাজনৈতিক ভাবে এগিয়ে যেত ।
দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের, বাংলাদেশ আবারও সামরিক শাসক দ্বারা পরিচালিত হতে থাকে এবং দীর্ঘ নয় বৎসর আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জেনারেল এরশাদ সরকারের পতন ঘটে । জেনারেল এরশাদ সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের কৌশল হিসেবে ৮ম সংশোধনীর মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে ঘোষনা করেন ।
ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোষ্টী নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে ধর্মীয় লেবাস ও নিষিদ্ধ ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির জায়গাটা তৈরী করেছেন উর্দি পরিহিত সামরিক জান্তারা । বিষয়টা এমন না যে ওনারা ব্যক্তিগত জীবনে ধার্মিক, তাই রাষ্ট্রীয় পরিসরেও ধর্মটা নিয়ে এসেছেন । বাস্তবতা হচ্ছে সামরিক জান্তারা ওনাদের শাসনকে গ্রহনযোগ্য করার কৌশল হিসাবে সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসকে রাষ্ট্রে ব্যবহার করেছেন, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পরিপন্থি অর্থাৎ অর্জিত অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রকে সাম্প্রদায়িকতায় বিসর্জন ।
একমাত্র সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয় রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে । এরশাদ পতনে বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখেছিল গনতন্ত্রের, সু-রাজনীতির, সুশাসনের ।
সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল জনগনের স্বাধীন ভোটাধিকার প্রয়োগে বাঁধা, সরকারী সম্পদ লুটপাট, দলীয় স্বেচ্ছাচারীতা ও সুশাসনের লঙ্গন ইত্যাদি । সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ধারাবাহিক ভাবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনা করছে । কিন্তু জনগন এখনও লড়ছে স্বাধীন ভোটাধিকারের জন্য, সুশাসনের জন্য, দূর্ণীতিমুক্ত রাজনীতি দূর্ণীতিমুক্ত প্রশাসন ও দলীয় প্রভাবমুক্ত আইনী শাসনের জন্য ।
জনগনের রক্তস্নাত অর্জন গুলির ধারাবাহিক বিসর্জনে রাজনীতির প্রতি জনগন আগ্রহ হারাচ্ছে ও রাজনীতি বিমুখ জনগোষ্টীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে । এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে প্রবেশের মাধ্যমে টাকা পয়সা লগ্নি করে লুটেপুটে নিচ্ছে জনগনের সম্পদ।
আসুন, আর নয় অর্জন বিসর্জনের ঘুরপাকের রাজনীতি । আমাদের গর্বের ৭১ এবং ৯০ এর বড় দুটি রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামের অর্জনকে বিসর্জনের ছোবল থেকে মুক্ত করার দাবীতে সোচ্চার হই । বড় দল দুইটি আত্মপোলুব্ধিতে ফিরে না আসলে তৃতীয় শক্তি বিনির্মানে ভূমিকা রাখি ।
সমাপ্ত।
সংক্ষিপ্ত পরিসরেঃ
অর্জন-১ । ৭১ এ স্বাধীকার আন্দোলনের চুড়ান্তে স্বাধীনতা অর্জন ।
২ । ৯০ এ স্বৈরাচার পতনের মাধ্যমে গনতন্ত্রের যাত্রা ।
এর মাঝে ছোট খাট অর্জনতো আছেই ।
বিসর্জন-১ । সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল সরকার ।
২ । সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রের অসম্প্রদায়িক চরিত্র ধবংস করা এবং স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তি নিষিদ্ধ ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি ফিরিয়ে আনা ।
৩। সংবিধানের ৮ম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রের অসম্প্রদায়িক চরিত্র ধবংস করে রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে ইসলাম ধর্মকে স্বীকৃতি দান ।
বিষয়: রাজনীতি
১১৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন